হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-১২

0
749

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১২
#জান্নাত_সুলতানা

-“তা হলে এই কথাই থাক। কি বলেন ভাইজান? ”
আয়ানের বাবা সাদনানের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“হুম এটাই ভালো হবে। এতো দূরে যেহেতু তাই এখান থেকে একবারে বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে যাক। তার পর আপনারা ঢাকা চলে এলে। মাইশা মামনিকে তখনই না হয় নিয়ে যাবেন।
সবাই সায় দিলো আজ্জম মির্জার কথায়।দিবে নাই বা ক্যান? একে তো এমপি মহোদয় তার উপর এতো সুন্দর বৃদ্ধি ফেলে দেওয়া যায় নাকি? উঁহু একদম নয়।

——————————–

সামনে সাপ্তাহে বিয়ের তারিখ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে গায়ে হলুদ শুক্রবার সন্ধায় বিয়ে।বর, বউ একবাড়িতে থেকে বিয়ে হবে বলে সবাই ঠিক করেছেন। যেহেতু আয়ানরা সবাই এখানেই আছে।আর তাদের সে রকম কোনো কাছের কোনো মানুষ চট্টগ্রাম থাকে না। তাই ওখানে এতো দূরে যাওয়ার কোনো কারন নেই। যা কাছের কিছু বন্ধু আছে তাই তারা আর দ্বিমত পোষণ করেননি। আর এমনিতেও কিছু দিন পরতো ঢাকাতে একবারেই চলে আসবে। প্রিয়তা আর সাদনানের রেজিস্ট্রার করা হয়নি এটা প্রিয়তার আঠারো বছর হলে করা হবে। আর বড় করে অনুষ্ঠান করে বউ তোলে নিবি। বড় করে অনুষ্ঠান করতে হবে না?এমপির ছেলে বিয়ে করেছে। আর সেটা বড় করে সবাইকে নিমন্ত্রণ করে সবাইকে জানেতে হবে না।
সামনে মাসে প্রিয়তাদের ফাস্ট ইয়ারে ইয়ার চেন্জ পরীক্ষা। তার মাস তিনেক পর প্রিয়তার কাগজ কলমে আঠারো পূর্ণ হবে। তখন রেজিস্ট্রার করা হবে বলেই। প্রিয়তার বাবার বাণী।

———————————–

সওদাগর বাড়িতে বিয়ের ধুম লেগেছে। লাগার ওই কথা বংশের প্রথম মেয়ে আবার থেকেছেও সব সময় এখানে । ছোট্ট থেকে বড় হয়েছে এখানে। যতো হক বংশের বড় মেয়ে আবার বংশের প্রথম মেয়ে। কোনো রকম কোনো কমতি রাখতে চায় না শফিক। বোনের স্বামীর যেনো বুঝতেই না পারে মেয়েকে শশুর বাড়ি থেকে বিয়ে দিচ্ছে। শফিক নিজের মতো করে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। মফিজের কোনো রকম কোনো অভিযোগ নেই। মেয়েকে তো তিনি ভালো করে সময়ও দেয়নি তাই এসবে তিনি কোনো রকম দ্বিমত পোষণ করেননি হাসি মুখে মেনে নিয়েছে।সারা জীবন টাকার পিছনে ছুটতে ছুটতে বউ মেয়ের দিকে খেয়াল দিতে বেমালুম ভুলে বসেছিলেন।টাকা পয়সা কখনো কোনো খামতি রাখেননি। তবে টাকা পয়সা হলেই তো সব হয় না। আবার টাকা পয়সা না থাকলেও হয় না। তবে তিনি ঠিক করেছে আর বিদেশ যাবে না। ওখানে যে ছোট্ট খাটো বিজনেস আছে সেটা দেশে নিয়ে আসবে। এটা অবশ্য কাউকে এখনো জানাননি।

আজ সওদাগরের বাড়ি সবাই বিয়ের শপিং করতে যাবে। যদিও গহনা সব আয়ান আগে থেকে নিজের উপার্জন করার টাকা থেকে অল্প অল্প করে জমিয়ে গহনা বানিয়ে রেখেছে। আবার আয়ানের মাও অনেক গহনা বানিয়ে রেখে দিয়েছিলেন একমাত্র ছেলের বউ আর মেয়ের জন্য নিজ হাতে দিবে বলে তবে তা আর হলো কই। সব শখ আহ্লাদ পূরণ করবার আগেই চলে গেলো না ফেরার দেশে।
-“আব্বা আমার একটা জরুরি কাজ পরে গেলো। আপনারা সবাই কি এদিকটা সামলে নিতে পারবেন?”
সাদনান চাইলো বাবার পানে
আলতো করে মাথা ঝাঁকি বলল
-“হুম পারবো বাবা। তুমি চিন্তা মুক্ত থাকতে পারো।”
আজ্জম ছেলের কথায় মুচকি হাসলো। তিনি জানেন তার ছেলে থাকতে কোনো রকম কোনো ঝামেলা হবে না। এই যে এতো বড় ব্যবসা ছেড়ে তিনি রাজনৈতিক কাজে বিভিন্ন জায়গায় হুটহাট করে চলে যান। ছেলের ব্যবসায় হাত দেওয়ার পর আজ্জম কখনো অফিস গিয়েছে কিনা সন্ধেহ।
বেশি কিছু না ভেবে তিনি আলতো করে ছেলের কাঁধে চাপর মারলো
-“আমি কাল গায়ে হলুদের আগে এসে যাব আব্বা। ”
-“সাবধানে থাকবে।”
বাবাকে সাবধানের সহিতে আদেশ করলেন।
আজ্জম মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে পড়লো।

——————————-

-“ভাই আর কতখন দাঁড়িয়ে থাকবো?”
আধঘন্টা অপেক্ষার পর বিরক্ত হয়ে বলল রাহান। আয়ানও বিরক্তি নিয়ে গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন চাপছে। সাদনান গাড়ির দরজা খুলে বসে ছিল। রাহানের কথায় সাদনান গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়া ওর মাকে ডাকলো
-“মা আসবা না-কি চলে যাবো?”
সুফিয়া, সালেহা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো
-“এতোখন লাগে মা? আমরা সবাই শপিং এ যাচ্ছি বিয়ে বাড়ি নই। যে তোমাদের এতো সাজুগুজু করতে হবে?”
-” আব্বা আপনি কি আমাদের একবার লক্ষ করেছেন?”
সাদনান এতোখন ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তবে ওর মার কথা শুনে সুফিয়া, সালেহার পানে চাইলো।সত্যি ওনারে কেউ সাজেনি এমনিকি বাড়িতে যে সব সময় যে সমস্ত কাপর পড়ে থাকে তেমন পড়েই এসছে।সাদনান মার পানে দৃষ্টি দিলো

-“তো এতোখন কি করছিলে?”
শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করলো মাকে।

-“আপনি ভিতরে গিয়ে দেখে আসবেন?”
বলেই তিনি গাড়িতে বসে পড়লো।

সাদনান বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।রাহান,আয়ান কিছু বুঝলো না। ফেলফেল করে চেয়ে রইলো।
বেশ অনেকটা সময় পর আয়ানের ফোনে কল এলো। আয়ান ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সাদনান বলল
-“আমি সারা আর মাইশাকে পাটাচ্ছি। তোমরা সবাই কে নিয়ে যাও। আমি ওকে নিয়ে আসছে।”

-“আচ্ছা। ”
শটকাট জবাব দিয়ে কলটা কাটলো। ততক্ষণে মাইশারাও চলে এসছে। আয়ান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“প্রিয়তাকে নিয়ে ভাই পরে আসছে। আমাদের সবাইকে যেতে বলেছে। ”
সবাই আর কোনো বাক্য প্রয়োগ করলো না । আয়না আর রাহাত গিয়ে অন্য গাড়িতে বসলো। সালেহা আর সুফিয়া গিয়ে আয়নাদের গাড়িতে পিছনে বসে পরলো।

রাহান গিয়ে আরেকটা গাড়িতে ডাইভিং সিটে বসে পড়লো। মাইশা গিয়ে পিছনে বসলো। সারা যেই না পিছনে বসতে যাবে অমনি আয়ান গিয়ে মাইশার পাশে বসে পরলো। মাইশা কটমট করে চাইলো। আয়ান কেবলা মার্কা একটা বেটকি দিলো। মাইশা সারার পানে দৃষ্টি দিলো মেয়েটা মিটমিট করে একটা চোখ টিপ দিয়ে সামনের দরজাটা খুলে রাহানের পাশে বসে গেলো।
রাহান আলতো করে মাথা কাত করে আয়ান এর দিকে তাকি বিজয়ী হওয়ার হাসি হাসলো। যেনো কোনো যোদ্ধে জয়ী হয়েছে। রাহান হাসিটা দিয়ে বামে তাকাতেই একটা ফাঁকা ঢুক গিলে নিলো। সারা রাহানের দিকে অগ্নিমূর্তির নয় চেয়ে। যেটার মানি পরে তোমায় দেখে নিবো।
রাহান হে হে করে দাঁত বেড় করে হাসলো।পিছন থেকে আয়ান আর মাইশা কেবলার মতো চেয়ে রইলো।

——————————–

-“কি সমস্যা বলবেন প্লিজ। ”
অনুরোধে সুরে বলল সাদনান।প্রায় আধঘন্টা ধরে একই প্রশ্ন করে যাচ্ছে। ভিতরে রাগ থাকলেও ক্যান যেনো তা বহিঃপ্রকাশ করতে পারছে না।কিন্তু ক্যান?হয়তো ভালোবাসার কাছে এসব রাগ অভিমান তুচ্ছ।

-“আপনি ক্যান বাবাকে বলেননি আমাদের বিয়ের ডেটটাও ঠিক করে নিতে?”
ছিঃ কি বেহায়া আবদার। তবে কন্ঠে বেশ অভিমানের ছোঁয়া।সাদনান আলতো করে জড়িয়ে ধরলো মেয়েটাকে।

-“আপনি কি জানেন আপনি দিন কি দিন আমার চায় বেশি বেহায়া হয়ে যাচ্ছেন? ”
ভ্রুু কুচকে প্রশ্ন করলো সাদনান। মেয়েটার দিক থেকে কোনো রকম উত্তর এলো না।তবে মাথাটা তোলে চাইলো স্বামী নামক ব্যাক্তিটার দিকে। পা দুটি উঁচু করে সাদনানের পায়ের উপর রাখলো। সাদনানের চাই প্রিয়তা কিছু টা খাটো। খাটো তো হবেই কই ছ’ফুট আর কোথায় পাঁচফিট দুই। পা দুটি উঁচু করে আলতো করে সাদনানের গোলাপি ঠোঁট জোড়ার উপর চুমু খেলো। সাদনানের চোখ রসগোল্লানেয় ধারণ করলো।

নিজের কাজ হাসিল করে আবার আগের অবস্থানে ফিরে গেলো।

-“হ্যাঁ, আমি আপনার ভালোবাসায় উন্মাদ। তবে সেটা যদি হয় বেহায়া তবে আমি মরবার পরও বেহায়া থাকতে চাই। যদি সেই বেহায়া পানায় আমি আপনাকে নিয়ে বেহেশতে থাকার নসিব হয় তবে আমি সত্যি বেহায়া হয়েই থাকতে চাই ”

বাক্যটা প্রয়োগ করতে দেড়ি হয়েছে কিনা সন্ধেহের। সাদনান ঝরের বেগে মেয়েটাকে দু বাহু ধরে মেঝে হতে কিছু টা শূন্যে তুলে নিলো।ঝাঁপিয়ে পরলো শ্যাম্য রমনীটার কালচে গোলাপি ঠোঁট জোড়ার উপর চিকন পাতলা ঠোঁট জোড়া মূহুর্তের মধ্যে মুখে পুড়ে নিলো। রমনীটা ছোট্ট ছোট্ট হাত দুটো দিয়ে মানবটার গলা জড়িয়ে ধরলো।
মেয়েটাও সাদরে গ্রহন করলো স্বামীর নামক ব্যাক্তিটার পবিত্র ভালোবাসার ছোঁয়া।

#চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে