হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-১১

0
761

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১১
#জান্নাত_সুলতানা

-“বাবা?”

মাইশা উপর থেকে দৌড়ে এসে দরজা দাঁড়ানো ব্যাক্তিটাকে জড়িয়ে ধরলো।ব্যাক্তিটাও তার মেয়েকে জড়িয়ে নিলেন।তার পর ব্যাক্তিটা বাম হাতটা বাড়িয়ে প্রিয়তাকেও জড়িয়ে নিলো।প্রিয়তা যেনো এতোখনে হুস এলো। আর বাকিরা সবাই অবাক নয়নে চেয়ে আছে। মাইশা নিজেক ধাতস্থ করলো।
-“বাবা তুমি আসবে বলোনি ক্যান? কালও কথা হয়েছে তোমার সাথে আমার। ”
-“খুশি হননি আম্মা? ”
জিজ্ঞেস করলো মফিজ মেয়েকে।
মাইশা মাথা ঝাঁকি হ্যাঁ বুঝালো।আবারও জড়িয়ে ধরলো বাবাকে।
হ্যা, রাস্তা সাদনানের সাথে দেখা হওয়া মানুষটা মাইশার বাবা মফিজুল ইসলাম। তিনি মুচকি হাসলেন আলতো করে মেয়ের মাথায় হাত রাখে।ততক্ষণে আয়ানও চলে এসছে। মফিজ এগিয়ে গিয়ে বোনের মেয়ে আর ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন। আয়ান, আয়নাও মামাকে জড়িয়ে ধরে।এভাবে সকলের সাথে কুশল বিনিময় করে। সুফিয়া বেগম চুপটি করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। ওনি জানতেন আজ মফিজ আসবে ওনি সবাইকে বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মফিজুল ইসলাম না করাতে আর কাউকে জানায়নি।একমাত্র মেয়ের বিয়ে আর সেটা কি তিনি বাবা হয়ে বাদ দিবে?উঁহু হয় না-কি আসতে তো হতোই। বিদেশ তো অনেক করা হলো এবার না হয় পরিবার কে সময় দেওয়া যাক।এই জন্য মেয়ের বিয়ে খবর পাওয়া মাএই দেশে আসবার জন্য টিকিট কেটে নিলেন আর সেটা শুধু স্ত্রীকে বলেছিলেন আর কাউকে নয়। সবার সঙ্গে আলাপ শেষ করে ফ্রেশ হতে গেলো মফিজ। সবাই যে যার মতো করে চলে যাচ্ছে। সালেহা আর সুফিয়া, শেফালী ওনারে চলে গেলেন কিচেনে খাবার ব্যবস্তা করতে। সারাও ইনিয়াকে নিয়ে চলে গেছে উপরে। মাইশা আয়নার সাথে ওর রুমে গিয়েছে। বসার ঘর শুধু প্রিয়তা আর সাদনান। সাদনান অবশ্য প্রিয়তাকে রুমে আসবার জন্য ইশারা করেছে। কিন্তু মেয়েটার সেদিকে কোনো হেলদুল নেই। কি সুন্দর ডাইনিং টেবিল থেকে আপেল নিয়ে সোফায় বসে তা মনের সুখে চিবচ্ছে। সাদনানের রাগ হলো। তবে কিছু ভেবে বাঁকা হেসে প্রিয়তার সামনে এসে দাঁড়ালো। মেয়েটা ভ্রুুজোড়া কুঁচকে সাদনানের পানে চাইলো। কথা বলবে না লোকটার সঙ্গে। ক্যান বলবে?বারোটা দিন কথা বলেনি এমন কি একবার খুঁজও নেয়নি। তাহলে এখন ক্যান আসছে দরদ দেখাতে। হুু ঢং,ভেবেই মেয়েটা আরো একবার মুখে আপেল পুড়ে নিলো তবে তা আর গিলা হলো না। হলো না বলতে সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটা গিলতে দিলো না।এক ঝটকায় মেয়েটাকে পাঁজা কোলে তোলে সিড়ি বেয়ে উপরে প্রিয়তার রুমের দিকে হাঁটা ধরলো। প্রিয়তা চোখ দুটো যেনো রসগোল্লার আকার ধারণ করলো।
-“এভাবে তাকায় না জান।এমনিতেই অনেক কষ্টে নিজেকে কনট্রোল করে রাখি।আমার বউ ছোট সেটা তো আমাকে বুঝতে হবে।তাই প্লিজ এভাবে তাকাবেন না । ”
প্রিয়তা কিছু বলার মতো খুঁজে পেলো না লোকটা কি বলছে এসব পাগল হয়ে গেলো না-কি। প্রিয়তার হঠাৎ পিছনে নজড় পড়ল।সুফিয়া, সাদনানের মা এদিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে দুজনেই মিটি মিটি হাসে।শেফালীও হাসছে।মেয়েটার বুঝতে একটু সময় লাগলো ওনারা সবাই ক্যান হাসছে? পরক্ষনে মাথা এলো ওতো সাদনানের কোলে। ছিঃ সবাই কি ভাবছে নিশ্চয়ই খারাপ। আর সাদনানের মা?ওনার সামনে কি করে দাঁড়াবে? আল্লাহ এই লোকটা তো নিজে বেহায়া। সাথে আমাকেও সবার কাছে বেহায়া বানাচ্ছে।
প্রিয়তা কিছু বলবে মুখ খোলার জন্য। কিন্তু সানান তার আগেই দরজাটা ধরাস করে খোলে এক প্রকার ছুড়ে ফেলে দিলো বিছানা।মেয়েটা ব্যথা পেলো তবে মুখ দিয়ে টু শব্দ পযন্ত বের করলো না। সাদনান ঝরের বেগে গিয়ে খোলা দরজাটা আটকে এলো। মেয়েটার মুখে এখনো আপেল হাতেও আধ খাওয়া আপেল। সাদনান সেদিকে নজড় দিলো না আস্তে করে গিয়ে মেয়েটার পাশে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো। প্রিয়তা উঠতে চাইলো তবে সাদনানের শক্ত বাঁধন ভেঙ্গে উঠতে পারলো না। এই বাঁধন কি এতো সহজেই ভেঙ্গে ফেলা যাবে?উঁহু একদম নয়। মেয়েটা চায়ও না ভেঙ্গে ফেলতে। তবে ছোট্ট মনটা অভিমান হয়েছে এই লোকটাকে তো বুঝতে হবে। প্রিয়তা আলতো করে সাদনানের বুকে মাথা রেখে বুকের ধুকপুক করতে থাকা লাল যন্তরটার আওয়াজ শুনতে লাগলো।
-“আমি ওই তিন দিন ঘুমতে পারিনি। কিন্তু এই বারো দিন আমি মনের শান্তিতে ঘুমিয়েছি।এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন?”
প্রিয়তা মুখের আপেলটা গিলে নিয়েছে ততক্ষণে। সাদনান কথা শেষ করে আলতো করে মাথার তালুতে চুমু খেলো। মেয়েটার যেনো সর্বাঙ্গে কাঁপুনি দিলো। ছোট্ট দেহখানা কেঁপে উঠল। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সাদনানের বুকের বা পাশের সার্ট। কেঁদে উঠলো। মাথা তুলে চাইলো ব্যাক্তিগত পুরুষ টার পানে। কান্না জড়িত কন্ঠে বলল
-“আমি বুঝতে পারিনি।আর কখনো এমন হবে। দোহাই লাগি আপনার আর ছেড়ে যাবেন প্লিজ।? ”
বাক্য শেষ শক্ত করে আবার সার্ট খামচে জড়িয়ে ধরলো।
সাদনান মুচকি হাসলো। দু’হাতে জড়িয়ে নিলো ছোট্ট পাতলা দেহপিঞ্জরা।যেনো পারলে ঢুকিয়ে নিতে বুকের মধ্যে। হয়তো মেয়েটা ব্যথাও পেলো।তবে তা গ্রহ করলো।স্বামীর ভালোবাসায় কাছে নয়তো ফিকে পরেছে।আবার চুমু আকলো মেয়েটার মাথার তালুতে তবে তা মেয়েটা টের পেলো না।
-“আর করবার সুযোগ দিলে তবে তো করবেন।ওই দিন অধিকার ছিলো না আর ভুলটাও আমার ছিল মানছি তাই কিছু বলনি। কিন্তু আপনি পরে যেটা করেছেন সেটা একদমই ঠিক করেননি।আর এখন সম্পূর্ণ অধিকার আছে আমার আপনার উপর । তবে চিন্তা করবেন না আপনার অনুমতি ব্যতিত আমাদের মাঝে কিছু হবে না। তবে হ্যাঁ একটু আধটু চুমু টুমু কিন্তু চলবে।”
মেয়েটা কি লজ্জা পেলো? এতোখন সাদনান নিজে বুকের ভিতর ঢুকিয়ে নিতে চাইছিল তবে এখন যেনো পারলে মেয়েটা নিজেই ঢুকে যেতো।সাদনান মুচকি হাসলো। দু’হাতে ধরে মেয়েটাকে ঝরের বেগে নিজের উপর থেকে নিচে ফেলে দিয়ে মেয়েটার উপর নিজের সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে দিলো । এতোখন লজ্জা পেলোও এখন ভয়ে প্রিয়তা চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো।সাদনান আলতো করে চুমু খেলো মেয়েটার কপালে। এতে যেনো মেয়েটা স্বভাবিক হলো একটু। কুঁচকে থাকা ভ্রুজোড়া সরল হলো। কিন্তু পরক্ষনে নিজের উপর কিছু নেই মনে হলো।চোখ জোড়া মেলে চাইলো। সাদনান দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়ানার সামনে হাত ঘড়ি খুলছে।
-“মা কি আমার ড্রেস দিয়েছে? ”
প্রশ্ন করলো সাদনান
-“না কেউ জানতো না-কি আপনি আজ আসবেন। আমি বাবার ঘর থেকে কিছু নিয়ে আসছি। ”
কথা সমাপ্ত করে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো প্রিয়তা।
সাদনান ওয়াশরুমে চলে গেলো অপেক্ষা না করে। বেশ অনেক টা সময় পর কারোর কোনো সারা না পেয়ে ওয়াশরুমে থাকা এক্সট্রা তোয়ালে সেটা পড়ে বেড়িয়ে এলো। ঠিক তখনই প্রিয়তা হাতে একটা লুঙ্গি নিয়ে রুমে ঢুকলো। তড়িঘড়ি করে লুঙ্গি সামনে দিয়ে ধরে বলল
-“আপনি ওয়াশরুমে যান আমি সব দিচ্ছি আপনাকে।”
ধরে আসায় গলায় বলতে দেড়ি কিন্তু সাদনান এক টানে মেয়েটাকে বুকে নিতে দেড়ি নয়।
-“তাকান আমার দিকে।”
বলে লুঙ্গি টা টেনে নিয়ে চেয়ারে রেখে দিলো।
মেয়েটা খিঁচে চোখ বন্ধ করে নিলো। এটা যেনো সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটার পছন্দ হলো না। শক্ত কন্ঠে মেয়েটাকে ডাকলো
-“প্রিয়তা?”
ব্যাস কাজ যেনো এতেই হলো মিটমিট করে চোখ মেলে চাইলো মেয়েটা লম্বা চওড়া শক্ত পোক্ত মানবটার দিকে। প্রথমেই নজড়ে এলো লোমযুক্ত শক্ত চওড়া মসৃণ বুকটা। কেমন যেনো একটা আকর্ষণ অনুভব করছে। মনটা খুব করে চাইছে একটা ঠোঁটের পরশ বুলাতে ওই বুকটায়। সাদনান মেয়েটার পানে চেয়ে। ঠোঁটে লেগে রয় মুচকি হাসি।হঠাৎ বুকে নরম কিছু আবিস্কার করলো।চাইলো রমনীটার পানে। হ্যাঁ তার একান্ত নিজের ব্যাক্তিগত নারী টা তাকে এই প্রথম নিজ থেকে ভালোবাসার পরশ দিয়েছে। আচ্ছা মেয়েটাকি হুসে আছে?নিশ্চয়ই না।থাকলে জীবনেও এমন করতো না।
সাদনানের ভাবনার মাঝেই রমনীটার নিভু নিভু চোখে চেয়ে আলগোছে হাত রাখল পুরষটার উদাম শরীরের বুকের মধ্যেখানটায় অতঃপর ধরে আসায় গলায় জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো
-“এই স্থানটা আমার একান্তই আমার। এখনে আমার রাজত্ব চলবে।”

#চলবে……….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে