#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১০
#জান্নাত_সুলতানা
আজ বারো দিন হয় সাদনান ঢাকা ফিরেছে।এর মধ্যে একদিনও প্রিয়তাকে ফোন দেয়নি। প্রিয়তা দিয়েছে তবে ফোনটা বন্ধ দেখায়। আজ মির্জা বাড়ির সবাই সওদাগর বাড়ি আসবে। শফিক নিজে সবাইকে আসতে বলেছে আয়ানরাও আসবে। সবাই কাজে ব্যাস্ত। আয়ানরা আসার মূল উদ্দেশ্য আজ বিয়ের ডেট ফাইনাল করা। মাইশার ফাস্ট ইয়ারে ফাইনাল শেষ তাই এখন বিয়ের কাজটা সম্পূর্ণ করতে চায় আজমল চৌধুরী। আবার আয়না আর রাহাত দেশের বাহিরে চলে যাবে কবে ফিরবে ঠিক নেই। মূলত সেই জন্য তাড়াহুড়া করছে।আয়ান এর বিয়ের পর ওনারা একেবারে ঢাকা চলে আসবে।
——————————-
-“আপনি ঠিক বলেছিলেন আমিও আগুনে পুড়ছি। আর সেটা উপলব্ধি করতে আপনি নিজে আমাকে সাহায্য করছেন।আপনার কথা আপনি রেখেছেন। আমার ছোট্ট একটা ভুলের জন্য আপনি ঠিকই আমাকে রেখে দূরে আছেন।কিন্তু আমার দিকটা একটু ভেবে দেছেন কি? সতেরো বছর বয়সী একটা কিশোরীর জন্য ওই দিন রাতের ঘটনা টা কতটা ভয়ের ছিল?না ভাবেন নি ভাবলে কখনো আজ বারোটা দিন আমাকে এভাবে কষ্ট দিতে পারতেন না। মানছি আমি আপনাকে বাজে কথা বলেছি। কিন্তু আমি নিজেও জানি না কেন বলেছিলাম ওই সব। আমি তো নিজেই আপনাকে ভালো,,,
ফোনের ওপাশের ব্যক্তিটা শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
মেয়েটার যেনো এই শব্দের কারণে গলা দিয়ে আর কিছু বেড় করতে পারলো না। লাইনটা কেটে দিলো।
ফোনটা সেন্টার টেবিলর উপর রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলো। বেশ অনেকটা সময় নিয়ে কাঁদল। সাদনান যাবার পর এমন একটা দিন যায়নি মেয়েটা কাঁদে নি। রাতেও কেঁদে বালিশ ভেজায়। ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে নিচে নেমে এলো। মাইশা সোফায় বসে চিপস খাচ্ছে। মেয়েটার এই একটা বাজে স্বভাব বাচ্চাদের মতো চিপস আর টিভিতে কাটুন দেখবে।এই মেয়ের না-কি কয়দিন পর বিয়ে। এ নিজেও এখন বাচ্চাদের মতো করে। বিয়ের পর বাচ্চা হলে নিজের বাচ্চাকে কি করে সামলাবে আল্লাহ মালুম। এসব ভাবতে ভাবতে প্রিয়তা মাইশার পাশে বসলো।আস্তে করে চিপস এর প্যকেট টা নিয়ে দিল দৌড়ে।
-“তোমার না কয়দিন পর বিয়ে। তুমি এখন বাচ্চাদের মতো এসব খাচ্ছো লজ্জা করে না।আর আমি যে একটা মাসুম বাচ্চা বাড়িতে আছি তুমি চোখে দেখো না?
মাইশাও দৌড়াতে দৌড়াতে বলল
-“না লজ্জা করে না। তোকে কে বলেছে তুই মাসুম? আর চিপস আমকে আমার মামা কিনে দিয়েছে। তোর এতো জ্বলে ক্যান?দে আমার চিপস দে ভালো হবে না বলে দিলাম।”
-“দিবো না। তুমি পাড়লে নিয়ে দেখাও।”
বলেই সোফার চারধারে ঘুরতে লাগলো। আর সুফিয়া বেগম রান্না ঘর থেকে এসব দেখে মুচকি হেসে বলল
-“দেখো মেয়েদের কান্ড। আরে ব্যথা পাবিতো পড়ে গিয়ে। প্রিয়তা তুই আয় দেখি ফুফির কাছে আয়।”
প্রিয়তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে দেড়ি কিন্তু প্রিয়তা ওর ফুফির পিছনে গিয়ে দাঁড়াতে দেড়ি না। প্রিয়তা জানে মাইশা ওর মার কাছে কখনো যাবে না।এর মধ্যে শফিক এলো মাইশা গিয়ে শফিকের কাছে
বলল
-“মামা দেখো প্রিয়তা আমার চিপস নিয়ে গিয়েছে। ”
বলেই শফিক সওদাগরের ডান বাহু জড়িয়ে ধরে নেকা কান্না করতে লাগলো।শফিক মুচকি হেসে বাম হাতটা সামনে এনো বলল
-“এখন আমার আম্মার এগুলো চাই?”
একটা পেকেট যেটা অনেক গুলো চিপস আর নানা জিনিস আছে। মাইশা অবাক হয়ে শফিকের হাতে পেকেটা ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়ে উপরে উঠেতে লাগলো।প্রিয়তাও ততক্ষণে কিচেন থেকে দৌড়ে মাইশার পিছনে দৌড়াতে লাগল।আর এদিক শফিক সুফিয়া দুই ভাই বোন হাসতে লাগলো।হঠাৎ করে সুফিয়া গম্ভীর কন্ঠে বলল
-“কদিন পর তো ওরা অন্যর ঘরে চলে যাবে। আর বাড়িটা ফাঁকা হয়ে যাবে। ”
—————————–
বিকেলে চারটা একটা মিটিং শেষ করে সাদনান এসে গাড়িতে বসল।এখন তার উদ্দেশ্য কুমিল্লা। অনেক তো হলো কষ্ট দেওয়ার পালা এবার না হয় এটা ইতি টানা যাক।বারো দিন হলো মেয়েটাকে দেখে না। আগে সব সময় ঢাকা এলে প্রতি সাপ্তাহে একবার করে বাড়ি যেতো শুধু তার প্রয়োসীকে দেখার জন্য। এবার ফাস্ট বারো দিন থাকা মেয়েটাকে না দেখে। অনেক কষ্ট দিয়েছে আর দেওয়া যাবে না। ভেবেই গাড়িটা স্টাট দিলো।পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধা হবে। সাদনান হঠাৎ একটা শপিংমলের সামনে গাড়িটা থামাল। কিছু ভাবলো। তার পর আস্তে করে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। তার ছোট্ট বউয়ের জন্য কিছু নিতে হবে। মেয়েটাকে এখন অব্দি কিছু দেওয়া হয়নি আজ না হয় কিছু দেওায়র জন্য কিছু নেওয়া যাক।
বেশ কটা দোকান ঘুরলো বেশ কয়েকটা শাড়ী নিলো। কিছু গহনা, সাথে কিছু নরমাল থ্রিপিস। সাথে আরো অনেক কিছু। নিজের বাবা-মা, বোন, শফিক,সুফিয়া, মাইশার জন্যও নিয়েছে। সব কাজ শেষ করে শপিংমল থেকে বেড়িয়ে এলো তার পর প্রিয়তাদের বাড়ির উদ্দেশ্য গাড়ি স্টাট করলো।
——————————-
একজন মধ্যে বয়স্ক লোক ঢাকা এয়ারপোর্টে থেকে বেড়িয়ে এলো। ডাইভার কে উঠিয়ে নিজে ডাইভিং সিটে বসল।
ডাইভারের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল
-“তুমি বাস ধরে চলে এসো। ”
ডাইভার বিনাবাক্য মাথা নাড়িয়ে বলল
-“আচ্ছা স্যার।”
স্যার বলাতে যেনো গাড়িতে থাকা ব্যাক্তিটা অসন্তুষ্ট হলো। বিরক্তি নিয়ে চাইলো সাতাশ, কি আটাশ বছরের যুবক টার দিকে।
-“তোমাকে কানাডা যাবার আগেও অনেক বার বলেছি আমাকে স্যার ডাকবে না। ”
ছেলেটা মুচকি হাসলো। আলতো করে মাথা ঝাঁকি বলল
-“আর বলবো না আংকেল। ”
-“হুম। ”
বলেই তিনি গাড়ি স্টাট দিয়ে চলে এলো বেশ অনেক টা পথ পর ওনার গাড়িটার তেল শেষ হয়ে গেলো।তিনি গাড়িতে দেখলো কিন্তু গাড়িতে তেল না থাকায় গাড়ি থেকে নেমে কাউকে কল করবার চেষ্টা করলেন কিন্তু নেটওয়ার্ক সমস্যার কারনে কল টাও ঢুকছে না। এদিকে সন্ধাও হয়ে এসছে। পথটা বেশি নেই কিন্তু গাড়িতে মাল পত্র ফেলে অন্য গাড়িতে যেতেও পাড়ছে না।এর মধ্যে একটা গাড়ি এসে ওনার কাছে থামলো। গাড়িতে বসা ব্যাক্তিটা সাদনান। সে গাড়ি থেকে নেমে অবাক হয়ে বলল
-“মফিজ আংকেল?”
————————
আয়ানরা সেই বিকেলে এসছে। সাদনানের বাবা এসে সারা,আর সাদনানের মাকে রেখে ওনি কোথাও বেড়িয়েছে। বলেছে আসতে আসতে রাত হবে। এখন সন্ধা সাড়ে ছয়টা বাজে। সবাই নামাজ পড়ে এসে বসার ঘরে বসে আছে। মাইশা, প্রিয়তা, সারা ইনিয়াকে নিয়ে খেলছে। সুফিয়া বেগম একটু পর পর দরজার দিকে তাকাচ্ছেন। এটা বেশ অনেকখন যাবত ইনিয়ার সাথে দুষ্টমি করার ফাঁকেও প্রিয়তা লক্ষ করছে।প্রিয়তা আলতো করে মাইশার বাহুতে ধাক্কা দিয়ে ফিসফিস করে বলল
-“আপু ফুফির কি হয়েছে বলতো?একটু পর পর দরজার দিকে ক্যান তাকাচ্ছে? ”
-“আমি কিভাবে জানবো। দাঁড়া জিজ্ঞেস করি।”
মাইশাও ফিসফিস করে বলল।
তার পর আলগোছে উঠে মায়ের কাছে বসল
-“মা কি হয়েছে তোমার? ”
সুফিয়া বেগম দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলো বিধায় মাইশাকে তিনি খেয়াল করেনি কিন্তু মেয়ের হঠাৎ এমন কথায় তিনি থমথমে খেয়ে উঠলো। তবে নিজেকে সামলে হাসার চেষ্টা করে বলল
-“কই কিছু নাতো। ”
ততক্ষণে সবার দৃষ্টি মা মেয়ের উপর পড়েছে।
-“আচ্ছা আমি কিছু হাল্কা নাস্তা দিতে বলি শেফালীকে।”
শেফালী হচ্ছে কাজের লোক। বলতে বলতে তিনি কিচেনে চলে গেলো।
আয়ানের ফোন কল আসায় আয়ান উঠে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো। মাইশাও একটু পর পা টিপে টিপে আয়ানের পিছু পিছু উপরে গেলো।
এর মধ্যে সুফিয়া কাজের লোকের হাতে নাস্তা এনে সেন্টার টেবিলে রাখলো। তার পর টুকটাক কথা বলতে বলতে সবাই নাস্তা খেতে লাগলো। হঠাৎ করে কলিং বেল বাজাল সবাই দরজার দিকে তাকালো ভাবছে এখম কে আসতে পারে? শুধু সুফিয়া বেগমের মুখে হাসি দেখা গেলো।তবে কেউ সেটা খেয়াল করেনি। কিন্তু একজন করেছে আর সেটা প্রিয়তা।ও ভাবছে ওর ফুফি এতো খুশি ক্যান? প্রিয়তার ভাবনার মাঝে সালেহা বেগম বলল
-“সাদনানের বাবা এলো নাকি? কিন্তু ওনার তো আরও পরে আসবার কথা।
সুফিয়া বেগম ঠাঁই বসে কাউকে নড়তে না দেখে প্রিয়তা পা টিপে টিপে গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে মুখ হা হয়ে গেলো।
#চলবে……
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]