#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_৮
#জান্নাত_সুলতানা
-“খারাপ পুরুষ মানুষ আমি । এই জন্যেই বুঝি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে ছিলেন? ”
বাসর ঘরে বসে আছে প্রিয়তা এটাকে বাসর ঘর কেউই বলবে না। এটা প্রিয়তার নিজের রুমেই। পুস্পহীন বিছানা। কোনো সাজসজ্জা নেই। এখন রাত দেড়টা বাজে।সন্ধা বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। সাদনান আজ এখানেই রয়েছে। আর বাকীরা চলে গিয়েছে। প্রিয়তাকে বারোটা নাগাদ মাইশা এখানে রেখে গেছে। মেয়াটা নিজের রুমেও কতটা গুটি বসে আছে। অথচ কাল অব্দি মেয়েটা এই ঘরটায় নিজের মন মর্জি মতো চলছে।এমনিতেই মেয়েটা ভয়ে গুটি ছিল। তার মধ্যে সাদনানের এরূপ গম্ভীর কন্ঠে শুনে মেয়েটা আরো এক দফা ভয় গুটি গেলো। কাঁপা কাঁপা গলা দিয়ে কিছু শব্দ বের করতে চাইলো। তবে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানবটার দিকে তাকি কথা সব যেনো কন্ঠনালি থেকে আর বেড়ি আসতে চাইলো না। ব্যক্তিটাকে দেখেই বুঝাই যাচ্ছে মারাত্মক রেগে আছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। চুল গুলো সন্ধার চাই এখন আরো অবনতি হয়েছে। হঠাৎই সাদনানের কিছু মনে পড়লো। আবার চোয়াল শক্ত হলো। প্রিয়তাকে কিছু বলতে না দেখে সাদনান দাঁতে দাঁত চেপে বলল
-“কি হলো বলোন। আমিও সব পুরুষদের মতো খারাপ? আমিও নারীর দেহ চাই?আপনাকে বিয়ে করতে নয় ব্যবহার করতে চেয়েছি তাই তো? এমন তো ছিল আপনার কিছু বলা কিছু না বলা কথা গুলো? চাইলে তখন যে গুলো বলতে পারেননি এখন সব উসুল করে নিতে পারেন। ”
এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলেই পাশে থাকা চেয়ার নামক বস্তুটাকে সজোরে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। প্রিয়তা এতো সময় বিছানায় বসে ছিল। কিন্তু চেয়ার ফেলে দেওয়াতে মেয়েটা ভয়ে লাফিয়ে বিছানা ছাড়ে এক কোনায় জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। মেয়েটার আঁখি জোড়া দিয়ে অনবরত জলের স্রোত বইছে। তবে এবার কিছু বলবেই বলবে। মাথাটা নুইয়ে ধরে আসা গলায় বল
-“আমি,,,
তবে সাদনান তা সম্পূর্ণ করতে দিলো না। আবারও নিজেই বলে উঠলো
-“হ্যা, মানছি আমি ওই দিন ওভাবে ছোঁয়াতে আপনি মানতে পারেন নি। আমিও পারিনি।ইচ্ছাকৃত করিনি। ভুল করে হয়ে গিয়েছিল। মানুষ ভুল করলে অনুতপ্ত হলে তো তাকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দেয়। আর আপনি? নিজের মন গড়া মতো কতগুলো কথা শুনিয়ে চলে গেলেন। আর আমাকেও কিছু বলতে দিলেন না।ফাঁশির আসামীকেও একটা শেষ সুযোগ দেওয়া হয়। আর আপনিতো আমকে সেই সুযোগ টাও দিলেন না। ফোন টা অব্দি ধরেন নি।কি অবস্থা হয়েছিল জানেন আপনি? দম আটকে আসছিল আমার প্রতি সেকেন্ড। মনে হয়েছে মরে গেলেই বেচে যাই। ”
সাদনানের মুখে মরার কথা শুনে প্রিয়তা মূহুর্তের মধ্যে এসে সাদনানকে জড়িয়ে ধরে ফুফাতে ফুফাতে বল
-“প্লিজ আপনি এসব বলবেন না। আমি এতসব বলতে চাইনি তবে কেন যেনো মানতে পারিনি। মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে।”
সাদনান শুনলো না কিছু। জোর করে ছাড়িয়ে নিলো মেয়েটাকে।দৃষ্টি দিলো মেয়েটার দিকে। চোখ দুটো দিয়ে অনবরত জল গড়াচ্ছে। নাকটা কেমন লালচে আকার ধারণ করছে। মেয়েটা এখনো সাদনানের গলা জড়িয়ে ধরে। গায়ে একটা ছাই কালারের শাড়ী। ওই দিন রাতে দেওয়া গলায় দাগটা এখনো কেমন কালচে হয়ে জলজল করছে। বিয়ের সাজ ছেড়েছে অনেক টা আগেই। কি সুন্দর বউ বউ একটা ভাব মুখে ফুটেছে।মনটা একবার চাইলো নিজের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ থাকা মেয়েটাকে একবার গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিতে। তবে মনের কথা শুনলো না। সব গিলে খেয়ে নিলো। পর পর আলগোছে মেয়েটার বাহু ধরে নিজ নিকট হতে কিছু টা দূরে সরায়।আলতো করে গালে হাত দিয়ে বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা চোখের জল মুছে দিতে দিতে বেশ শান্ত কন্ঠে জানায়
-“এতো দিন আমি যে কষ্ট টা পেয়েছি আপনি নিজেও খুব শীগগির সেটা উপলব্ধি করবেন।আর সেই কষ্ট টা আমি নিজে আপনাকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করবো। তাই বলে এটা ভাববেন না আমি আপনাকে ভালোবাসি না। যদি এটা ভাবেন তো ভুল। একটা কথা ভালো করে শুনে নিন আমার #হৃদয় জুড়ে_শুধু_আপনি# ছিলেন, আছেন, আর ভবিষ্যতেও থাকবেন।”
প্রিয়তা কিছু বুঝলো না ছলছল চোখ করে চেয়ে রইলো সাদনানের পানে।যেটা দেখে সাদনান বাকা হাসলো। তার পর আস্তে করে প্রিয়তার কানের কাছে ঝুঁকে এসে ওষ্ঠ জোড়া নেড়ে আলগোছে বলে উঠলো
-“আজ কিন্তু আমাদের বাসর রাত।ভুলে গেলেন না-কি?”
প্রিয়তার ফেলফেল করে এখনো সাদনানের পানে চেয়ে।
সাদনান সে সব উপেক্ষা করে ওয়াশরুমের চলে গেলো। প্রিয়তা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়ে। সাদনান কি বলে গেলো একটু সময় লাগলো বুঝতে। তবে পরক্ষনেই বুঝতে পেরে মেয়েটা গাল রক্তিম আবা ধারণ করলো।পর পরই মেয়েটার মনে প্রশ্ন উদয় হয়। সাদনান ভাই অধিকার চাইবে নাতো? এসব ভেবেই মেয়েটা ভয়ে সিটিয়ে গেলো। বেশ অনেক টা সময় নিয়ে সাদনান ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। এসে দেখলো মেয়েটা এখনো আগের যায়গায় দাঁড়িয়ে। একটু এগিয়ে এলো। দৃষ্টি দে মেয়েটার পানে। তার পর শান্ত কন্ঠে আদেশ দেয়
-“যান ফ্রেশ হয়ে আসুন। নামাজ পড়তে হবে।”
মেয়েটা শুনলো। চাইলে তার ব্যাক্তিগত মানুষটার দিকে।কি সুন্দর একটা পুরুষ মানুষ । আর এই সুন্দর মানুষটা ওর একান্ত নিজের। একটু আগে একটা পবিত্র বন্ধ আবদ্ধ হয়েছে।একটা নাম পেয়েছে সমাজের চোখে স্বামী-স্ত্রী। এই সুন্দর পুরষটার বউ ও। ভেবেই প্রিয়তা মুচকি হাসলো।
-“আচ্ছা। ”
বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। প্রিয়তা ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এলেই দুজন মিলে দু’রাকাআত নফল নামাজ পড়ে নিলো। প্রিয়তার সব ভাবনা ভুল প্রমান করে দিয়ে নামাজ পরে সাদনান বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়লো। প্রিয়তা এখনো দাঁড়িয়ে।ও বুঝতে পারছে না। সাদনানের পাশে শুবে কি না। এসব ভাবছিলো তখন সাদনানের কন্ঠে ভেসে এলো
-“বিছানা এসে ঘুমিয়ে যান।আমরা কোনো সিনেমা করছি না যে আপনি বিছানায় না শুবার চিন্তা করবেন।আমরা এখন স্বামী-স্ত্রী। ফালতু ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ুন। ”
চোখ বন্ধ রেখেই কথা গুলো বলল সাদনান।প্রিয়তার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।ওনি কি করে বুঝলেন আমি এসব ভাবছিলাম?
-“আপনাকে কে বলল আপনি ভাবেন?আপনি তো সব সময় মনের কথাও জোড়ে বলেন। যেটা আমি নই আপনার আশেপাশে যে থাকে সেও শুনতে পায়। ”
সাদনানের চোখ বন্ধ এখনো।
-“কই সারা, বাবা, মাইশা আপু। কেউই তো কখনো বলেনি আমি মনে মনে কথা বল্লে ওরা শুতে পায়?
প্রিয়তার বোকা বোকা প্রশ্ন সাদনান এবার হো হা করে হেসে দিলো।প্রিয়তা সেই হাসির দিকে মুগ্ধতা নিয়ে চেয়ে রইলো। সাদনান হাসতে হাসতে বলল
-“তার মানে আপনি সত্যি বিছানায় ঘুমাতে চাইছিলেন না তাই তো?”
প্রিয়তা এবার বুঝলো লোকটা ওকে ওর কথার জালে ফাঁসিয়ে সত্যি বের করতে চাইছিলো? উঁহু, চাইছিল না অলরেডি বেড় করে নিয়েছে। ভেবেই প্রিয়তার রাগ হলো।কিছু বলতে গিয়েও কি ভেবে যেনো বললো না।
আস্তে করে হেঁটে গিয়ে সাদনানের সামনে দাঁড়ায়
-“সত্যি কি না জানি না। তবে যাই হয়েছে ভালোই হয়েছে। অন্তত আপনার হাসিটাতো দেখতে পেলাম। ”
সাদনান ততক্ষণে শুয়া থেকে উঠে বসে। চোখ ছোট ছোট করে তাকালো প্রিয়তার পানে। মেয়েটা কথা গুলো বলেই। বিছানার অন্য পাশে শুয়ে পড়লো। সাদনানও আর বেশি কিছু না ভেবে শুয়ে পড়লো। বেশ অনেক টা সময় কেটে গেলো প্রিয়তার কোনে সারা শব্দ নেই। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে।সাদনান যেনো এটার অপেক্ষা ছিল। আলগোছে মেয়েটা জড়িয়ে ধরে নিজে বুকের উপর নিয়ে শান্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে। আজ অনেক দিন পর শান্তিতে ঘুমোবে এই মেয়েটাকে ভালোবাসার পর থেকে একটা রাতও ভালো করে ঘুমুতে পারেনি।আজ না হয় একটু শান্তির ঘুম ঘুমানো যাক। সাদনান এসব ভাবতে ভাবতে নিজেও ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো। আর এদিকে প্রিয়তা আস্তে করে চোখ মেলে চাইলো।তার তন্ধা ছুটেছে অনেক আগে। কিন্তু সাদনানের ঘুৃমিয়ে যাবার অপেক্ষা ছিল। কি সুন্দর লাগছে। এই মানুষটা ওর নিজের। একান্তই নিজের।
সাদনানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজেও ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।
যদি জানতো কাল কি হবে। তবে হয়তো রাত টা না ঘুমিয়ে নিজের একান্ত ব্যাক্তিটার দিকে তাকিয়ে রাত কাটিয়ে দিতো।
—————————-
সকালে কারোর চেঁচামেচির শব্দে প্রিয়তার ঘুম ভাংলো। আস্তে করে উঠে বসে মেয়েটা ডানে তাকাল। কেউ নেই দেখে বেশ অবাক হলো।
-“কিরে প্রিয়তা দরজাটা কি খুলবি? তোর কি এখনো ঘুম শেষ হলো না? সাদনান ভাই সেই সকালে উঠে চলে গেলো আর তুই বেলা নটা অব্দি ঘুমাচ্ছিস?”
মাইশার কথায় বুঝলো সাদনান চলে গেছে। কিন্তু আমায় ডাকলো না কেন?ভাবতে ভাবতে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।আর মাইশা সুড়সুড় করে ঘরে ঢুকে গেলো
-“তোমরা আমায় ডাকোনি ক্যান?”
-“,তোকে ডাকতে তো চেয়েছিলাম তোর ওনি তো ডাকতে দিলো না। বলে রাতে নাকি ঘুমসনি তাই যেনো একটু বেলা করে ডাকি।”
বলেই মুখ টিপে হাসলো।
প্রিয়তা সে সব পাত্তা দিল না। কিছু বলবে তখনই মাইশা আবার বল
-“থাক আর কিছু বলতে হবে না। আমি জানি এখন বলবি যে আপু তেমন কিছু হয়নি। এসব রেখে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেতে আয়।”
বলেই মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো।
আর প্রিয়তা ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল। তবে একটু আগাতেই দেখলো টেবিল কিছু রাখা। ওয়াশরুমে না গিয়ে প্রিয়তা টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো।
চলবে……
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ ]