#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_৭
#জান্নাত_সুলতানা
-“বাবা আমি বিয়ে করবো। তুমি শফিক চাচার কাছে যত দুরত্ব সম্ভব প্রস্তাব পাঠাও। চাইলে আজই পাঠাতে পারো। ”
এটা কি ছেলের আবদার ছিল? না-কি শান্ত কন্ঠে আদেশ? আজ্জম মির্জার বোধগম্য হলো না। আজ্জম জনতো ওনার ছেলে প্রিয়তাকে পছন্দ করে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাইবে তিনি তা ভাবেনি। আজ্জম আজ তিন দিন পর বাড়ি ফিরেছে।দুপুরের আগে এসেছে তাই সবাই এক সঙ্গে খাবার খেতে বসেছেন। সারা,সালেহা বেগমও অবাক হলো বেশ।কারন সাদননাতো এমন নয়। কোনো সিদ্ধান্ত তাড়াহুড়ো করে নেয় না। কিন্তু আজ হঠাৎ কেন এসব। যদিও তারাও চাইছে ছেলের বিয়ে দিতে। সাদনান রাজি হয়নি। বিয়ের কথা হলে বলতো “তোমাদের বৌমা এখনো বড় হয়নি” আজ্জম মির্জা ছেলেকে বলল
-“আব্বা আমরা খাবার খেয়ে কথা বলি এ বিষয়ে?
শান্ত, নরম কন্ঠে সময় চাইলো ছেলের কাছে
সাদনান মাথা ঝাকালো। যার মানে “ঠিক আছে” তার পর আবার সবাই খাবার খাওয়াতে মনোযোগ দিলো। আজ্জম বড় একজন নেতা হলেও ঘরে ছেলে,মেয়ে, স্ত্রী সবার সঙ্গে বেশ বন্ধু সূলভ আচরণ করেন। আমাদের পেশাগত জীবন যেমনি হোক আমাদের সবাইর উচিত পরিবারের সবার সাথে বন্ধ সূলভ আচরণ করা। সবার সাথে সব শেয়ার করা। খাবার শেষ আজ্জম সোফায় আয়েশ করে বসলেন। ছেলে, মেয়ে এবং স্ত্রী সবাই ওনার আসেপাশের সোফায় বসলেন।আজ্জম মির্জা ছেলের পানে চাইলো।
-“আব্বা আপনি কি ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
সাদনানকে প্রশ্ন করলো আজ্জম।সাদনান বাবার দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল
-“হ্যা বাবা। তুমি এই সাপ্তাহের মধ্যে ঘরোয়া ভাবে বিয়ের ব্যাস্থা করতে বলো শফিক চাচাকে। ”
-“কিন্তু আব্বা প্রিয়তা মা তো ছোট। আর এতো তাড়া কিসের শফিক আমাকে বলেছে এখন আর প্রিয়তাকে বিয়ে দিবে না। প্রিয়তাকে লেখা পড়া করাবে। ”
-“আমি কি একবারও বলেছি বিয়ের পর লেখা পড়া করাবো না?”
-“না। কিন্তু,,
-“আর কোনো কিন্তু নয় বাবা। আমি বিয়ে করতে চাই প্রিয়তাকে আর সেটা এই সাপ্তাহের মধ্যে। আমি আর কিছু শুনতে চাই না।”
আজ্জম মির্জাকে সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে না দিয়ে সাদনান কথা গুলো বলেই ধুপধাপ পা ফেলে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো। সালেহা বেগম স্বামীর কাছে এসে বসলো তার পর আলগোছে বলে
-“কি হয়েছে বলোনতো ছেলেটার?আচ্ছা যাইহোক আপনি শফিক ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলোন।”
সারাও পাশ থেকে বল
-“হ্যা বাবা। তুমি বরং সব কিছুর আয়োজন করো।চাচার সাথে কথা বলে।”
বাহ কি সুন্দর মা, মেয়ে, ছেলে মিলে শান্ত কন্ঠে আদেশ করছে।আজ্জম জানে এখনো কিছু বলেও লাভ নেই। তাই বলল
-“আচ্ছা আমি শফিকের সাথে কথা বলবো। তোমরা সবাই রেডি হয়ে নেও । আমরা একটু পরই ওখানে যাচ্ছি। ”
বলেই তিনি সোফা ছেড়ে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।
সারা আর সালেহা বেগমও যে যার মতো করে চলে গেলো।
————————
আজ তিন দিন হয় মেয়েটার সাথে দেখা, কথা কিছুই হয় না।হয়না বললে ভুল হবে প্রিয়তা ইচ্ছে করে এসব করছে। মেয়েটাকে ওই দিন ওভাবে ছোঁয়া ঠিক হয়নি। সাদনান কি করবে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে যে একবার ছুঁয়ে দিতে মন চাইছিল এতো কাছ থেকে দেখে যে না ছুঁয়ে থাকতে পারলো না। সব সময় তো এই কারণে মেয়েটার কাছ থেকে দূরে থাকে। কিন্তু ওই দিন কেন যে নিজের উপর কন্টোল রাখতে পারে নি। এখন নিজের উপরএ রাগ হয়। কি দরকার ছিল ওভাবে এতো গভীর ছোঁয়া দেওয়ার। এসব ভেবেই সাদনান দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হ্যা, আজ তিন দিন হয় মেয়েটা ওর সামনে আসে না। কথা বলে না। ফোন দিলে ওটাও রিসিভ করে না।বিয়ের আগে এতোটা গভীর র্স্পশ দেওয়াতে মেয়েটা অসন্তুষ্ট। মেয়েটা এসব বিষয় মোটেও ওতোটা অবগত নয়।তাই হয়তো এই এটা সহজ ভাবে নিতে পারেনি।
———–
কলিং বেল বাজতেই প্রিয়তা দরজা খুলে বাবাকে দেখে বেশ অবাক হলো। এতো তাড়াতাড়ি তো বাসায় ফিরে না বাবা। তবে আজ এতো জলদি চলে এসছে যে?
শরীর ভালো তো? প্রিয়তা অস্তির হয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো
-“বাবা তোমার শরীর ঠিক আছে? ”
শফিক মেয়ের পানে চাইলো। আস্তে করে বলে
-“হ্যা, মা আমি ঠিক আছি।তুই এতো অস্তির হোস না। ”
কথা বলতে বলতে দুজনেই এসে সোফায় বসে।এর মধ্যে সুফিয়া বেগম ভাইয়ের জন্য ঠান্ডা পানি নিয়ে এলেন।শফিক বোনের হাত থেকে পানি নিয়ে খেয়ে নিলেন।ততক্ষণে প্রিয়তা কথা গুছিয়ে নিয়ে বাবাকে ফের প্রশ্ন করে
-“বাবা কিছু কি হয়েছে? আজ এতো তাড়াতাড়ি চলে এসছো যে?”
শফিক মুচকি হেসে মেয়ের মাথায় হাত রাখে। তার পর আলগোছে বলে
-“কিছু মেহমান আসবে। তাই জলদি চলে এসছি মা। আচ্ছা আমি যাই ফ্রেশ হয়েনি। ওরা এলো বলে। আমার খাবার টা টেবিলে দে আমি আসছি। ”
শেষে সুফিয়া বেগম কে কথাটা বলতে বলতে তিনি নিজের রুমে চলে গেলো। প্রিয়তা যে কিছু জিজ্ঞেস করবে সেই সুযোগও দিলেন না। প্রিয়তা ওর ফুফির পানে চাইলো।
-“কে আসবে ফুফি বাবা কার কথা বলছে? আয়ান ভাইয়ারা তো কালকের আগের দিন গেলো।”
সুফিয়া বেগম কি বলবে ভাইয়ের নিষেধ আছে যে। দুপুরের দিকে না-কি আজ্জম ফোন দিয়ে জানিয়েছে ওনারা আজ সাদনান আর প্রিয়তার বিষয় কথা বলতে আসবে । শফিক সুফিয়া বেগম কে কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করছেন। তাই আমতা আমতা করে বলল
-“আমি জানি না তো। তুই গিয়ে জিজ্ঞেস কর। আমি যাই আমার কত কাজ বাকি।”
কথা শেষ চলে যেতে গিয়েও আবার প্রিয়তার দিকে ফিরে বল
-“আর শোন মাইশাকে বলিস। নিচে আসতে।”
বলেই তিনি কিচেনে চলে গেলো।
প্রিয়তা জানে তার ফুফি জানে। কিন্তু বলবে না। হয়তো বাবা নিষেধ করছে।ভাবতে ভাবতে প্রিয়তা উপরে মাইশার রুমে গিয়ে মাইশাকে ডেকে দেয়।
—————————————-
-“প্লিজ বাবা। আমি লেখা পড়া করতে চাই। তুমি এমন করো না।”
শফিক শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো
-“আমি বা সাদনান কেউ-ই কি বলেছি। তুমি লেখা পড়া করবে না? ”
প্রিয়তার টনক নড়ল। ঠিক এ-তো বাবা বা সাদনান কেউই না করেনি। তবে আমি ওনাকে বিয়ে করতে চাই না। কিন্তু কেন? প্রিয়তা নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো।তবে প্রিয়তার ভিতর থেকে কোনো রকম উত্তর এলো না।
-“কিন্তু তুমি তো আমায় বলেছিল তুমি এখন আর আমাকে বিয়ে দিবে না।আর আমি যা বলবো তাই হবে। তবে এখন কেন এসব বলছো বাবা?”
ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো।
শফিক মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
-“মা।বাবা -মা কখনো তার সন্তানের খারাপ চায় না। ”
প্রিয়তা টলমল চোখে বাবার পানে চাইলো। ব্যাস এক কথা প্রিয়তার মুখ বন্ধ।
-“সন্ধার মধ্যে কাজি আসবে।”
শফিক মেয়েকে আর কিছু বলতে না দিয়ে। তিনি প্রিয়তা ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো। সাদনানরা সন্ধার একটু আগে এসছে। আর কথা বার্তা বলে।এক পযার্য়ে সাদনান জানায় ওকে আজ রাতের মধ্যে ঢাকা যেতে হবে তাই আজ এ যেনো বিয়ে টা সম্পূর্ণ করে।ছেলের এমন লাগামহীন কথায় বেশ লজ্জা পেলো আজ্জম, সালেহা।তবে বেশী কথা না বাড়িয়ে শফিকের সাথে কথা বলে। শফিক আর না করেনি। কারণ তিনি সাদনান কে আগেই কথা দিয়েছে মেয়েকে ওর হাতে তুলে দিবে।তাহলে আজ নয় কাল তো দিতে হবে। তাই সব কিছু ঠিক করে। সন্ধা বিয়ের আয়োজন করে।
প্রিয়তা কিছু ভাবছে। কিন্তু কি? প্রিয়তার ভাবনার মাঝে সারা, মাইশা আর কিছু প্রতিবেশী মেয়ে রুমে আসে।সারা এসে প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরলো। প্রিয়তা মুচকি হাসলো। তার পর মাইশাকে আলগোছে বলে
-“আপু আমি ওনার সাথে একটু একা কথা বলতে চাই। প্লিজ তুমি ফুফিকে বলো না। ”
-“ওনিটা আবার কে রে প্রিয়তা?”
মাইশা, সারা আর সাথে থাকা মেয়ে গুলো মুখটিপে হাসলো।প্রিয়তা বুঝল ভুল জায়গা ভুল কথা বলে ফেলেছে। তবে সে-সব পাত্তা না দিয়ে মাইশার দিকে করুণ দৃষ্টিতে চাইলো।ব্যাস মাইশা গলে গলো। মাইশা এমনি ও একদম নরম মনের মানুষ। আর কথা না বাড়িয়ে মাকে ডাকতে চলে গেলো। সারা প্রিয়তার হাতে শাড়ীর প্রয়োজনী সব দিয়ে বল
-“যা এগুলো পরে আয়। তার পর আমি আর আপু শাড়ী টা পড়িয়ে দিবো। ”
প্রিয়তা শুনলো। চলে গেলো ওয়াশরুমে। এর মধ্যে মাইশাও চলে এলো। প্রিয়তাও সব পড়ে বাহিরে এলো। মাইশা প্রিয়তাকে শাড়ী পড়িয়ে দিতে দিতে বলল
-“মা বলেছে তুই রেডি হওয়ার পর আসবে।”
প্রিয়তাও আর কথা বাড়ালো না। বেশ অনেক টা সময় পর প্রিয়তাকে সাজিয়ে দিয়ে সবাই ঘর থেকে চলে গেলো। এর খানিক্ষন পর জুতোর আওয়াজ পাওয়া গেলো।ঠকঠক করে কেউ রুমে ঢুকে। প্রিয়তা সামনে চায়।সাদনান দাঁড়িয়ে কালো পেন্ট, সাদা একটা সার্ট গায়ে, চুলটা কেমন অগোছালো। চোখ দুটো লাল মনে হয় রাতে ঘুময়নি।প্রিয়তার এতো সব ভাবনা ভেঙ্গে সাদনান গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
-“বলুন কেন ডেকেছেন? ”
প্রিয়তা বিছানা বসে ছিল। বসা থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।ওর এতোখন সাহস থাকলেও এখন কেন যেনো সাদনানকে দেখে ভয় করছে। সাদনান প্রিয়তাকে কিছু বলতে না দেখে বেশ বিরক্ত হলো। সাদনান ফের বলে উঠলো
-“কিছু বলবেন না-কি আমি চলে যাবো?”
প্রিয়তা এবার ধরে আসা গলায় বল
-“আমি বিয়ের পর ইন্টার পাস না করা অবধি এখানে থাকবো। ”
ভয়ে ভয়ে কথা গুলো বলেই মাথা তুলে সাদনানের পানে চাইলো। সাদনান ভাবলেশহীন প্রিয়তা কিছু বুঝলো না। সাদনান বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
-“আপনার ইচ্ছে। ”
ব্যাস ছোট জবাব। প্রিয়তাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সাদনান কথা সমাপ্ত করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় সাদনান এতখন দাঁড়িয়ে থেকে কথা বল্লেও প্রিয়তার দিকে তাকালো না।
প্রিয়তার বেশ খারাপ লাগলো। আজ লোকটা ওর দিকে একবারও তাকালো না পযন্ত।
কিন্তু কেন? হয়তো ওই দিন রাতে ওভাবে এতো কিছু বলা ঠিক হয়নি।
#চলবে………