#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_২৫
#জান্নাত_সুলতানা
-“থাকবো না আমি আপনার সঙ্গে। আমায় বাবার কাছে দিয়ে আসুন।
নয়তো আমি একাই চলে যাবো।”
-“প্লিজ প্রিয়তা অবুঝের মতো ব্যবহার করবেন না।
আমি আপনা কে বলেছি,,,
-“আমি আপনার কাছে একবারও কিছু জানতে চাইনি।
আর আপনা কে আমায় দিয়ে আসতে হবে না।
আমি একাই যেতে পারবো।”
সাদনানের সব টা কথা না শুনেই বলে উঠে প্রিয়তা।
তবে সাদনান দমলো না আবারও কিছু বলতে চায়
-“প্লিজ আমার কথা,,,,
কিন্তু প্রিয়তা শোনে না।
তার আগে কক্ষে হতে বেড়িয়ে গেলো। সাদনান আটকাতে চেয়েও যেনো ব্যর্থ হলো।
কি বলবে কি করবে কিছুই যেনো মস্তিষ্কে আসছে না। পরক্ষণেই ভাবে এখন যদি প্রিয়তা একবার মির্জা বাড়ির চৌকাঠ পেড়িয়ে যায়। তবে হয়তো পরবর্তিতে ফিরে আনতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।
তাছাড়া দু’দিন বাদে তার বোনের বিয়ে।
এখন কিছুতেই প্রিয়তা কে রাগ করে চলে যেতে দেওয়া যাবে না। আর প্রথম থেকে ভুল গুলো তো সে নিজেই করে আসছে।
সব টা দোষ তো নিজেরই।
আগের ভুল গুলো ক্ষমা পেতে হলে এখন বউকে যেতে দেওয়ার মতো এতো বড় ভুল কিছুতেই করা যাবে না।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে সাদনান সিঁড়ি কোঠার কাছ থেকে প্রিয়তা কে এক ঝটকায় পাঁজা কোলে তোলে নিয়ে নিজের কক্ষের দিকে হাঁটা ধরে।
প্রিয়তার ব্যাপার টা বুঝতে সেকেন্ড এর মতো সময় লাগে।
যখন বুঝতে পাড়লো ততক্ষণে সাদনান মেয়ে টা কে রুমে এনে বিছানায় ছুড়ে ফেলে।
ঝরের বেগে গিয়ে দরজাটা আটকে এসে মেয়ে টাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো মেয়েটার সারা মুখে চুমু খেতে লাগলো।
প্রিয়তা যেনো সাদনানের এমন স্পর্শে শরীরের কোনো রকম নড়াচড়া করতে ভুলে গেলো।
অনুভূতিহীন হয়ে পড়ে রইলো।
সাদনান সারা মুখে অধর ছুঁয়ে। দিয়ে মাথা টা তোলে বউয়ের দিকে দৃষ্টি দিলো।
মেয়ে টা এখনো চোখ বন্ধ।
সাদনান বেশি কিছু না ভেবে নিজের অধর জোড়া দিয়ে মেয়ে টার অধর চেপে ধরে।
লম্বা একটা চুম্বন আবদ্ধ হয় মেয়েটার পাতলা ওষ্ঠে।
প্রিয়তার যেনো শ্বাস আঁটকে আসার জোগাড়।
সাদনান অনেক সময় নিয়ে গাঢ় একটা চুম্বন পর মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়ে শাড়ীর আঁচল হাত রাখে।
তৎক্ষনাৎ প্রিয়তা সাদনানের হাত ধরে বাধা দেয়।
মেয়েটার চোখ চিকচিক করছে।
আর সেই মায়াবী চোখ জোড়ায় যেনো বলছে আপনি আমাকে অনেক কষ্ট দেন।
-“সোনা আর কখনো এমন করবো না। প্লিজ এবারের মতো ক্ষমা করে দিন।”
আদুরে কণ্ঠে কথা গুলো বলেই সাদনান বউয়ের বুকের উপরি ভাগের অংশে অধর ছোঁয়া।
প্রিয়তা সাদনানের কথায় কোনো রকম উত্তর করে না।
এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে চার দিকে।
চোখের পানি আড়াল করে।
সাদনান বউ কে আবারও আগলে নেয়।
প্রিয়াতও আর বাধা দেয় না।
চুপ টি করে স্বামীর সঙ্গ দেয়।
সাদনান যেনো আরো উন্মাদ হয়।
প্রিয়তার চোখ হতে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে চোখের জল।
খামচে ধরে সাদনানের পিঠ।
নখ ডাবে সাদনানের উদাম শরীরে।
-” প্লিজ শান্ত হোন আপনি। আমি কোথাও যাচ্ছি না।”
প্রিয়তা জানায়।
কিন্তু উন্মাদ সাদনান শুনে না।
-“সরি সোনা। আপনি নিজে আমাকে এমন করতে বাধ্য করলেন।
এখন আমি কিছুই করতে পারবো না।
কষ্ট হলে এখন আপনাকে সহ্য করতে হবে।”
প্রিয়তা সাদনানের যুক্তিতে আর কিছু বলে না।
তবে সাদনান একটা অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ উচ্চারণ করে
-“ভালোবাসি বউ।”
অধরে চুমু খেয়ে আলগোছে জানান দেয় বউ কে।
প্রিয়তার এ-তোখন সাদনানের হাতের এলোমেলো স্পর্শে সুখ অনুভব না করলেও যেনো “ভালোবাসি” শব্দ টা শুনে মূহুর্তের মধ্যে বুকের বা পাশটায় সুখ সুখ অনুভব করে। মেয়ে টা খুশিতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে প্রিয় পুরুষ টাকে।
————–
প্রিয়তা পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আজ সাপ্তাহের বেশি সময় হতে চলে।
সে দিন সাদনান রিসোর্টে রাত টা থেকে প্রিয়তা কে নিয়ে এর পর দিন বাড়ি ফিরে।
মাঝে ক-দিন ভালোই চলছিল।
কিন্তু বিপত্তি সৃষ্টি হয় তখনি যে দিন প্রিয়তার পরীক্ষা শেষ হয়।
সাদনান সে দিন প্রিয়তা কে নিতে আসবে বলেও আসে নি।
প্রিয়তা ভেবে ছিল হয়তো কোনো কাজে আটকে গিয়েছে।
আর তাছাড়া রাতে তো বাড়ি আসবেই।
এসব ভেবেই প্রিয়তা মন খারাপ করে নি।
বাড়ি চলে গিয়ে ছিল।
কিন্তু সাদনান সে দিন প্রিয়তা কে নিরাশ করে দেয়। সে দিন রাতে বাড়ি আসা তো দূর এক টা কলও দেয় নি। আর যখন এক সাপ্তাহ পরও কোনো রকম উত্তর সাদনানের পক্ষ হতে আসে নি তখন মেয়ে টার ছোট্ট মনটা অভিমানে ঘিরে ধরে ছিল।
কিন্তু সাদনান সে অভিমান টা বউকে করে থাকতে দেয় নি।
বেচারা সাদনানের বা কি দোষ কাজের জন্য যে এলাকায় গিয়ে ছিল ওখানে নেট সার্ভার বন্ধ ছিল।
তাই তখন চাইলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না।
আর কাজ টাও ইম্পরট্যান্ট থাকায় ফেলে আসতে পারছিল না।
তবে যাবার পর একবার আজ্জম মির্জার সঙ্গে কথা বলেছিল।
আর আজ্জম মির্জাই সবাই কে খবর টা দিয়ে ছিল।
আর সেই থেকে প্রিয়তা অভিমান হতে লাগলো।
আর এক সপ্তাহে সে টা রাগে পরিণত হলো।
সাদনান আজ সকালেই বাড়ি এসছে।
আর বুঝতে পেড়েছিল বউ তার বড্ড অভিমান করছে।
সকাল থেকে প্রিয়তা একবার কক্ষে আসে নি সারা আর সালেহা বেগম এর সঙ্গে থেকেছে।রান্নার কাজে সাহায্য করেছে।
আর যখন রুমে এসছিল তখনি সাদনানের সঙ্গে রাগ করে চলে যেতে চেয়েছিল।
তবে সাদনান তার ভালোবার কাছে সে সব কে তুচ্ছ করে বউকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে দিলো।
এ-র মধ্যেই আবার রাহানের বাবা মা আবদার করেছে।
তাদের ছেলের বউ তারা খুব শীগগির বাড়ি নিয়ে যেতে চায়।
মূলত রাহানের পিড়াপীড়িতে ওনার অতিষ্ঠ।
তাই তো রেজাল্ট দেওয়ার আগেই নির্লজ্জের মতো আজ্জম মির্জার সাথে কথা বলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে রফিক আহমেদ।
——————
মির্জা বাড়ি উৎসবে মেতে আছে। বাড়ি এক মাত্র মেয়ের বিয়ে।
কোনো রকম খামতি রাখছে না আজ্জম মির্জা।
কোনো আত্মীয় স্বজন বাকি রাখে নি।
তবে নিজের বলতে বিশেষ কেউই নেই।আর সালেহা বেগম ওনারো কোনো আত্মীয় নেই ওনি ওনার বাবা মার একমাত্র সন্তান।
আর আজ্জম মির্জার এক বোন তিনি দেশে থাকে না ছেলেদের সঙ্গে বাহিরেই থাকে।
আর ওনার ছেলেরাও এখন বউ বাচ্চা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত তাই তো কেউ আসতে পারবে না।
——————
-“দেখে হাটঁ ইডিয়েট।”
মাইশা আয়ানের কথা শুনলে তো ঝরের বেগে দৌড়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।
প্রিয়তা মাইশা কে দেখেই বলে উঠলো
-“আপু আস্তে। পুঁচকো ব্যথা পাবে।”
মাইশা ভ্রু কুঁচকে তাকায় প্রিয়তার দিকে। তার পর সারার দিকে তাকিয়ে বলে
-“দেখলি কত
দিন পর দেখা কোথায় জড়িয়ে ধরবে তা না করে যার এখনো পৃথিবীতে আসাতে আরো সাত মাস বাকি তাকে নিয়ে সবাই চিন্তা করছে।”
বলেই নেকা কান্না করতে লাগলো।
সারা মিট মিট করে হাসে কিছু বলে না।
প্রিয়তা সারার পাশ হতে সোফা ছেড়ে উঠে এসে মাইশাকে জড়িয়ে ধরে তার পর ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে।। ততক্ষণে আয়ানও এসছে।
আর বাড়ি বড়দের সাথে কথা বলছে।
মাইশাও সবার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
মাইশা আর আয়ানের অস্তিত্ব আসতে চলছে।
তিন মাস চলে।
এবারও মাইশা আসতে চাইছিল না।
কিন্তু সারার আর প্রিয়তার আবদার টা ফেলতে পারে নি আয়ানরা সবাই চলে এসছে।
আজ সন্ধায় গায়ে হলুদ।
মূলত তখন সবাই সারার হলুদ নিয়ে গবেষণা করছিল আর তখনি মাইশাদের আগমন ঘটে।
মাইশার বাবা মা, শফিক সওদাগর সবাই দু দিন আগেই চলে এসছে মির্জা বাড়ি।
—————
হলুদের অনুষ্ঠান বাগানে করা হয়েছে।
সাদনানদের বাড়ি টা যেমন দেখতে বাগান টা এর চাইতে বেশি সুন্দর।
বিয়েও এখানেই হবে।
আজ্জম বেশ কড়াকড়ি ভাবে গার্ড রেখেছে।
এতো মানুষের হৈ-হুল্লোড়ে যেনো না হয় সে জন্য বেশ মার্জিত ভাবে গোছগাছ করছে।
আর এক মাত্র মেয়ের বিয়ে। সঙ্গে তিনি এমবি। এলাকায় একটা নাম ডাকের ব্যাপার আছে।
হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত একটার বেশি সময় নিয়ে শেষ হলো।
প্রিয়তাও ফ্রেশ হয়ে রাতের পোষাক পড়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে বিছানায় শরীর
এলিয়ে দেয়।
সাদনান এতোখন বসে বসে বউ কে দেখছিল।
প্রিয়তা চোখ বন্ধ করতে যাবে
আর অমিন সাদনান মেয়ে টাকে ঝাপটে ধরে।
প্রিয়তা ক্লান্ত চোখে স্বামীর দিকে তাকালো।
কিন্তু রুমে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় সামনে থাকা পুরুষ টার চোখে সে টা ধরা পড়ে না।
সাদনান নিজের অধর ছুঁয়ে দেয় মেয়েটার গলায়।
প্রিয়তা পরিহিত রাতের পোষাক এর হাতা টেনে নামায় কাঁধ হতে।
প্রিয়তা বাধা দেয়।
মিনমিন করে অনুরোধ করে
-“আজ না প্লিজ। অনেক ঘুম পাচ্ছে আমার।”
সাদনান আরো ক’টা চুমু আঁকে। আগের তুলনায় আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদুরে কণ্ঠে জানায়
-“মনজুর বেগম।”
#চলবে…
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]