হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-২৩

0
693

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_২৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“Happy birthday বউ।”

প্রিয়তা এতোখন রুমে ছিল না এই মাত্র রুমে এসছে। কক্ষে প্রবেশ করার সাথে সাথে সাদনান ওর চোখে হাত দিয়ে ধরে নিয়ে সোজা বেলকনিতে চলে আসে।
প্রিয়তা জিজ্ঞেস করলেও সাদনান কোনো রকম উত্তর দেয় নি এক্কেবারে বেলকনিতে এনে চোখ হতে হাত সরিয়ে উপরোক্ত কথা গুলো বলে উঠলো।

প্রিয়তা চার দিকে তাকায়।
বেলকনিত টা অনেক সুন্দর করে সাজানো। বেলুন, ফুল। আর ছোট্ট ছোট্ট মোম বাতি দিয়ে। কখন করলো এসব প্রিয়তা বুঝতে পারছে না। প্রিয়তা অবাক হলো সাথে অনেক খুশি।
কিন্তু নিজে কে সামলে সাদনান কে জড়িয়ে ধরে।

-“ধন্যবাদ। ”

মিষ্টি হেসে বলে প্রিয়তা।

-“হুম। দেখতে দেখতে আমার বউ টার আঠারো বছর হয়ে গেলো। ”

সাদনান মুচকি হেসে বলল।

তার পর প্রিয়তা কে ছাড়িয়ে নি দু’জনেই সামনে সেন্টার টেবিলে রাখা কেক টা সামনে হাঁটু গেড়ে বসে প্রিয়তা কে ইশারা করে কেক টা কাঁটার জন্য।
প্রিয়তাও বাধ্য মেয়ের মতো কেক টা কাটে।
তার পর সাদনান কে খাইয়ে দেয় সাদনানও একটু নিয়ে বউ কে খাইয়ে দেয়।
কিন্তু বেচারি প্রিয়তা কে আর গিলতে দিলো না।
নিজের অধর জোড়া ধারা মেয়ে টার অধর চেপে ধরে।
মিনিট দুই এক এ-র মতো এভাবে ছিল তার পর ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল।

নিজের পরিহিত ট্রাউজারের ডান পকেট হাতরে কিছু একটা বক্স এর মতো বের করে সাদনান।
বক্স টা খোলে ভিতরে থেকে একটা লকেট বেড় করে।
ঘুরে গিয়ে প্রিয়তার পিছনে দাঁড়ায়।
খোলা চুল গুলো পিঠ হতে সরিয়ে লকেট টা পড়িয়ে দেয়।
প্রিয় পুরুষ টার ছোঁয়া পেয়ে মেয়েটার ছোট দেহপিঞ্জর কেঁপে উঠে।
চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নেয়।

সাদনান লকেট টা গলায় পড়িয়ে দিয়ে আবারও সামনে এসে দাঁড়ায়।
প্রিয়তার চোখ তখনো বন্ধ সাদনান মুচকি হাসলো। সেই প্রথম থেকে মেয়ে টা ওর ছোঁয়া পেলে কেঁপে উঠে। আর আজ বিয়ের চার মাসে এসেও ঠিক আগের মতো কেঁপে উঠে। আর এই দু’মাস ধরে তো রোজ আদর, ভালোবাসা দিয়ে আসছে। তবুও মেয়ে টার এই কাঁপা কাপির অভ্যাস টা গেলো না। হয়তো আর কখনো যাবেও না।
এস ভাবতে ভাবতেই সাদনান
হালকা ঝুঁকে ঝট করে কোলে তোলে নেয় বউ কে।
মেয়ে টা নিজে কে শূন্যে অনুভব করতে চোখ জোড়া খোলে চাইল।
আর অমনি সাদনানের নেশালো চোখ জোড়া সাথে দৃষ্টি মিলে। প্রিয়তা লজ্জা চোখ নামালো। বেশিখন এই চোখে তাকিয়ে থাকতে পারে না মেয়ে টা কিছু তো আছে এই চোখ জোড়ায়। তাইতো মাথা ঠেকালো স্বামীর শক্ত চওড়া বুকে।সাদনানও মুচকি হেসে কক্ষের দিকে অগ্রসর হলো। বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজের বলিষ্ঠ দেহের ভর ছাড়ে মেয়ে টার ছোট্ট দেহখানার উপর।

———————–

প্রিয়তা এখন সাদনানদের বাড়ি থাকে। সে দিন সাদনান তার নিজের কথা রেখেছে।
প্রথম নিজের বাড়ি এসছে।
পরের দিন প্রিয়তা কে নিয়ে ওদের বাড়িতে গিয়ে দু- দিন থেকে আবার নিজের বাড়ি চলে এসছে।
এর মধ্যে প্রিয়তার পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে।
আবার দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হয়েছে।
আর এর ভিতর সাদনান আর প্রিয়তার প্রতি ভালোবাসা যত্ন আরো দ্বিগুণ বেড়েছে। তবে সেটা কাজে কর্মে।
কিন্তু সাদনান আজও নিজের মুখে প্রিয়তা কে ভালোবাসে বলে নি।
প্রিয়তার অবশ্য এ বিষয় টা নিয়ে প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও এখন আর লাগে না।
কারণ সাদনান মুখে না বললেও প্রিয়তা জানে সাদনান নিজের চেয়ে বেশি ওকে ভালোবাসে।
তাই তো এখন আর খারাপ লাগে না।
কিন্তু তবুও কেন যেনো মন টা মানতে নারাজ।
ভালোবাসর মানুষটার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দ টা শোনতে কার না ভালো লাগে। প্রিয়তারও লাগতো যদি সাদনান ভালোবাসি বলতো।
প্রিয়তার মনের কোথাও একটু শূন্য অনুভব হয়।
হয়তো সাদনানের মুখে ভালোবাসার কথাটাই এই শূন্য অনুভব টাকে পূর্ণ করতে পারবে।

———————-

-“এক মাস তো সোনা। দেখতে দেখতে কেটে যাবে।”

-“হুম। ”

-“চলো। তোমাকে কলেজ পৌঁছে দিয়ে আমি চলে যাবো।”

-“সারা যাবে না আজ।”

-“হুম আমি জানি। এখন চলো লেট হচ্ছে আমার।”

প্রিয়তা সাদনান কে ছেড়ে দিয়ে ব্যাগ টা কাঁধে নিয়ে সাদনানের পিছনে পিছনে বেড়িয়ে এলো।
তার পর বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পরে।
সাদনান কলেজের সামনে গাড়ি টা থামিয়ে প্রিয়তা কপালে নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয়।

-“সোনা মন খারাপ করে না প্লিজ।
আমি কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি ফিরে আসার চেষ্টা করবো বউ।”

-“হুম। ”

কথা টা বলতে বলতে প্রিয়তা কেঁদে দিলো।
সাদনান প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরে। এই মেয়ে কে নিয়ে কি করবে সাদনান? কাল সাদনান যখন থেকে বলছে কাজের জন্য বাহিরে যেতে হবে তখন থেকে মেয়ে টা কেঁদেই চলেছে। সাদনানের নিজের যে কষ্ট হচ্ছে না তেমনটা নয়। এই ছোট্ট বউ টাকে রেখে যেতে মন কিছুতেই চাইছে না। কিন্তু যেতে হবে।যাওয়াটা ভিষণ জরুরি।

সাদনান প্রিয়তার মুখ টা নিজের দু হাতের আঁজলে নিয়ে দু চোখের পাতায় ছোট্ট ছোট্ট কটা চুমু খেলো।
প্রিয়তা তখনো কাঁদছে।

-“প্রিয়তা?”

সাদনানের ডাকে প্রিয়তা কান্না আপনি আপনি বন্ধ হয়ে গেলো। তবে সে টা ধমক দেওয়াতে নয়।”প্রিয়তা ” সাদনান কখনো ওকে নাম ধরে ডাকে না। প্রিয়তা বেশ অবাক হলো। কিন্তু সাদনানের পরবর্তী কথা শোনে অবাক নয় ভিষণ অভিমান হলো।

-“আর এক ফোঁটা জল গড়ালে। আমার খারাপ রুপ টা দেখাতে আমি বাধ্য হবো মেয়ে। আর পরীক্ষা শুরু হতে বেশি দিন বাকি নেই মন দিয়ে পড়বে।”

প্রিয়তা সাদনানের কথায় আর কোনো উত্তর দিলো না। চোখের পানি মুছে চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে মেইন গেট দিয়ে কলেজে এর ভিতর চলে গেলো।

সাদনান দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে।ও এভাবে কথা গুলো বলতে চায় নি কিন্তু কি করতো মেয়ে টা তো কিছুতেই কান্না থামাচ্ছিল না। এই মেয়ে কি জানে সাদনান এই মেয়ে কান্না কিছুতেই সহ্য করতে পারে না সাথে মা আর বোনের। জানলে নিশ্চয়ই এভাবে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাল রাত ধরে কেঁদে কেটে এমন অবস্থা করতো না। তাই তো বাধ্য হয়ে এভাবে কথা বলতে হলো। তবে সাদনান কিছু ভেবে মুচকি হাসলো। মুচকি হাসার কারণ সাদনান জানে এই মেয়ে এখন অভিমান করলেও সাদনান ফোন দিলে ঠিকই আবার ধরে কথা বলবে।
এটা ভাবার কারণও আছে সাদনান যখন এর আগে নয় দিনের জন্য চট্টগ্রাম গিয়েছিল তখন এমন কান্না কাটি করছে। পরে যখন ধমক দিয়েছিল তখন সে কি অভিমান কিন্তু পরে ঠিক সব ভুলে ফোন করলে কথা বলতো।
আর বেশি কিছু ভাবে না সাদনান গাড়ি স্টাট দিয়ে নিজের গন্তব্যের দিকে রওনা দিলো।

———————–

-“তোর ফোন কোথায়? তোর জামাই তোকে ফোনে না পেয়ে আমাকে কল করেছে। ”

বিকেলে প্রিয়তা সাদনানের রুমের বেলকনিতে বস বসে একটা বই পড়ছিল তখনি সারা পিছন হতে কথা গুলো বলে উঠলো।

-“রুমে হয়তো আমি সাইলেন্ট করে রেখেছি।”

-“ফোন টা রিসিভ করে আমাকে উদ্ধার কর বইন।”

কথা টা বলে মুখ ভেংচি কেটে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো সারা।
প্রিয়তা মুচকি হাসলো। কারণ সারা হয়তো রাহানের সঙ্গে কথা বলছিল।আর সাদনান সেটায় ভাগাড় দিলো।
কিন্তু ভাইকে তো আর কিছু বলতে পারবে না তাই তো প্রিয়তার উপর সব রাগ ঝেড়ে গেলো।

প্রিয়তা এসব ভাবতে ভাবতে রুমে এসে বড় ফোন টা হাতে নিলো।
বড় ফোন বলার অবশ্য একটা কারণ আছে সাদনান প্রিয়তা কে একটা অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনে দিয়েছে ঢাকা থেকে আসার পড়।

প্রিয়তা ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো বাইশটা কল এসছে “মাই লাভ” দিয়ে সেভ করে রাখা নাম্বার টা থেকে।
আর এটা সাদনানের নাম্বার সাদনান নিজে নতুন সিম নিয়ে নিজের হাতে সেভ করে দিয়েছিল।
মূলত ফোনের সব সেটিংস সাদনান নিজে করে দিয়েছে।
ওয়েল পেপারেও প্রিয়তার আর নিজের কাঁপেল পিক দিয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই আবার ফোনটা থরথর করে কেঁপে উঠল।
সাদনান আবার কল দিয়েছে।

-“এতোখন কোথায় ছিলে?”

প্রিয়তা ফোন টা রিসিভ করে কানে নিতেই সাদনান দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন টা করে।

-“ফোন সাইলেন্ট ছিল। ”

মিনমিন করে জানায় প্রিয়তম।

-“দুপুর খাবার খেয়েছো?”

-“হুম। আপনি?”

-“না মিটিং শেষ করে এই মাত্র রুমে এলাম।”

-“ওহ।”

তার পর দু’জনেই চুপ। সাদনান হুট করে বলে উঠে

-“কষ্ট হয় সোনা?”

প্রিয়তার যেনো সাদনানের এমন মধুর কণ্ঠে বলা কথায় এতোখন চেপে রাখা কষ্ট গুলো বেড়িয়ে এলো শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
কিছু বলতে পারলো না।
তবে অপর প্রান্ত হতে সাদনান চোখ রাগে লাল হয়ে এলো এই মেয়ে এই পনেরো দিনে যতবার ফোন দিয়েছে ঠিক ততবারই এমন কান্না করে।
একবার ফিরে এসে এই মেয়ের খবর করে ছাড়বে সাদনান।

-“খুব শীগগির ফিরছি আমি। তবে আমাকে এভাবে পোড়াবার জন্য খুব কঠিন শাস্তি পেতে হবে সোনা।”

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে