#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১৮
#জান্নাত_সুলতানা
-“বাবা আজ শফিক চাচার সাথে কথা বলে। এই সাপ্তাহের মধ্যে বিয়ের ডেট ফাইনাল করবে। আমি আমার বউ আর শশুর বাড়ি রাখতে চাই না।”
ছেলের কথায় আজ্জম
চোরা চোখে চাই ছেলের পানে।
-“কিন্তু শফিক তো বলেছিল প্রিয়তার আঠ,,,,
-“আমি আমার বউ চাই এই সাপ্তাহের ভিতর। বিয়ের পরও আর কতো দিন বউ ছাড়া থাকবো। আর বয়স সেটা সময় হলে আমি রেজিস্ট্রার করে নিবো।”
বাবা কে বলতে না দিয়ে বলে উঠলো সাদনান।
ছেলের এমন কথায় আজ্জম তাজ্জব বনে গেলো।
ছেলে নির্লজ্জ জানে।
কিন্তু এতো টা বেহায়া পানা ? মোটেও কাম্য নয়। মা-বোনের সামনি কি সব বলছে ছি:।
সারা তাদের থেকে একটু দূরে সোফায় বসে গেমস খেলছে। সালেহা বেগম ভাবলেশহীন যেনো এসব কথায় ওনার মোটেও কিছু আসে যায় না। ছেলে বড় হয়েছে। মেয়েরও বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। তাহলে এখন বউ নিয়ে এলেই হয়।এতো পেঁচাল ক্যান পাড়ছে স্বামী সেটাই বুঝতে পারছে না সালেহা বেগম।
-“আমি বলছিলাম কি। আপনি না হয় শফিক ভাইজান এর সঙ্গে একবা কথা টা পেরে দেখেন।আমার মনে হয় না তিনি দ্বিধা মত করবে।”
আজ্জম ছেলে কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু স্ত্রীর কথায় যুক্তি আছে।
তবে তিনি আরো একবার কিছু বলে পাতাতে চাইলেন। কিন্তু তিনি হয়তো ভাবেইনি এর পর ওনার নির্লজ্জ ছেলে কি বলতে পারে।
-“আমি বলি কি। প্রিয়তা মা তো অনেক ছোট। আর কটা দিন,,,
-“তুমি যখন মা কে বিয়ে করেছিলে তখন মা-র বয়স ষোলো বছর ছিল। আর আমার বউ তবুও আঠারো হতে আর মাস খানিক বাকি। ”
এবারও তিনি কথা পুরো টা সম্পূর্ণ করতে ব্যর্থ হলেন।
ছেলের এমন কথায় আজ্জম বউয়ের দিকে চোখ বড় বড় করে চাইলো
এভাবে তাকানোর একটাই অর্থ আর সে টা হলো “এই নির্লজ্জ ছেলে এসব কোথা থেকে জেনেছে। ”
-“মা-র দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। যখন অনেক ছোট ছিলাম তখন দাদু আমাকে এসব বলেছিল। ”
-“আচ্ছা। আমি কাল শফিকের সাথে কথা বলবো।”
বলেই সোফা ছেড়ে উঠে নিজের কক্ষের দিকে হাঁটা ধরলো। আজ্জম বেশি ঘাঁটতে চাইছেন না।আর
এখানে থেকে এই ছেলের এমন নির্লজ্জ মার্কা কথা বার্তা শুনার কোনো ইচ্ছে নেই।
এই ছেলের সঙ্গে কথা বলে নিজের সম্মানের রফাদফা করা চেয়ে। কক্ষে গিয়ে বসে বই পড়া ভালো।
—————————
সে দিন বিকেলে রাহান আর সারার আংটি বদল হয়ে ছিল। সারা তো এতো টা ঝটকা খেয়েছিল বেচারি। কিছুই বুঝতে পারছিল না। তবে ভাইকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছে মেয়েটা।
আজ্জম মির্জা বলেছে সারার ইন্টার পাস কর বার পর বিয়ে হবে। এর আগে তিনি মেয়ে কে দিবে না।
রাহানের বাবা -মা সবাই মেনে নিয়েছে।
সে দিন সন্ধা সবাই চলে গিয়ে ছিল।
শফিক সওদাগর নিজে এসে ছিল আংটি পড়াবার মিনিট দশেক আগে। আংটি পড়ানো শেষ বোন আর মেয়ে কে নিয়ে রাহানরা যাবার পর পর চল গিয়েছে।
সাদনানের বাবা মা অবশ্য বলে ছিলো।
রাত টা যেনো থেকে যায়। কিন্তু শফিক রাজি হয় নি।
তাই কেউ বেশি জোর করে নি।
কয় দিন পর তো চলেই আসবে সারা জীবনের জন্য।
এখন না হয় এ সময় টা বাবার সঙ্গী হোক।
শফিক সওদাগর এই মেয়ে বেশ আদুরে।
স্ত্রী মা-রা যাবার পর মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করে নি। অনেক ভালোবাসতো স্ত্রী কে। আর সেই স্ত্রী শেষ চিহ্ন কে তিনি কি করে অবহেলা করতে পারেন। তাই তো জীবন টা একা একা কাটিয়ে দিলেন।
————————————
প্রিয়তার ছোট্ট মোটো ফোনটা বাজাচ্ছে। অবশ্য ছোট্ট বলার একটা কারন আছে। এটা দিয়ে শুধু ফোনে কথা বলা যায় আর একটা সাপের গেমস আছে।
এটা দিতেও সুফিয়া রাজি ছিল না।
নিজের মেয়ে কেও তিনি কোনো ফোন দেয়নি প্রিয়তার সমান বয়সে।
মাইশাকে ফোন দিয়েছিল মাইশা ইন্টার পাস করে অনার্স এ ভর্তি হওয়ার পর।
প্রিয়তাকে দিতে চাই ছিল না কিন্তু শফিক ছোট একটা দিয়েছে।
সুফিয়া তাই কিছু বলে নি।যেখানে বাবা হয়ে নিজে ওনার মেয়ে কে ফোন দিচ্ছে। সেখানে ফুফি হয়ে ওনার কিছু বলা সাজে না।
-“এতো খন কোথায় ছিলেন? ”
কণ্ঠে চাপা ধমক।
বেচারি প্রিয়তা বেশ ভয় পেলো।তবে ফোনের ওপাশের ব্যাক্তি টা সে টা টের পেতে দিলো না।
-“ওয়াশ রুমে রাতের পোষাক পড় ছিলাম। ”
মিনমিন করে জানায়
-“বেলকনির দরজা টা খুলে দিন।”
আদেশ করলো? হয়তো কিন্তু এতো রাতে বেলকনির দরজা ক্যান খুলেবে? মেয়ে টার ছোট্ট মস্তিস্ক সেই প্রশ্নের উত্তর টা তৈরি করতে ব্যর্থ।
-“কি হলো তারাতাড়ি করুন। আর কতখন এভাবে ঝুলে থাকবে।? ”
কণ্ঠে অসহায়ত্বের ছোঁয়া।
পর পর আবারও শুধালো
-“সোনা আমার হাত ব্যাথা করছে।
এবার কণ্ঠে বেশ করুন।
প্রিয়তা এ-তোখন যেনো কিছু ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না।
কিন্তু এবার যেনো “সোনা আমার হাত ব্যাথা করছে” কথা টা পুরো শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো।
ফোন তড়িঘড়ি করে বিছানা ছুড়ে ফেলে।
হন্তদন্ত হয়ে বেলকনির দরজা হাতল হাতরে দরজা খুলে।
প্রিয়তার বেলকনিতে বেশি জায়গায় নেই আবার সাথে রয়েছে কিছু ফুল গাছ। সেই সাথে আছে ছোট একটা দোলনা। দুজন মানুষ দাঁড়াতে বেশ কসরত করতে হবে।
প্রিয়তা দরজা খুলে দক্ষিণ সাইডে এগিয়ে এলো। সাদনান লোহার রেলিং ধরে ঝুলে আছে ফুলের টপ গুলোর জন্য উপর উঠতে পারছে না।
প্রিয়তা জলদি করে ফুলের টপ গুলো নিচে সাইডে রাখে।
এর মধ্যে সাদনান উঠে এসছে।
ফুলের টপ রেখে সোজা হয়ে দাঁড়াতে বেচারী শক্ত পোক্ত চওড়া একটা বুকে ধাক্কা খেলো। ছোট্ট ডান হাত ধারা নাক ধরে আর্ত -না করে উঠে
-“আহ,,।”
-“সরি সরি সোনা। বেশি লেগেছে? ”
নিজের দানবী হাত জোড়া মেয়ে টার বাহুতে রেখে অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে সাদনান।
তার পর হঠাৎ মেয়ে টার দিকে নজর দিতেই তড়িঘড়ি করে জড়িয়ে ধরে।
অতঃপর দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে হালকা গলায় বলে
-“তুই যা রাহান। ”
রাহান নিচে মই ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। রাহানের ভদ্র ভাবে জানায়
-“আচ্ছা ভাই।”
তার পর আর কোনো সারা পাওয়া গেলো না।
প্রিয়তা চুপটি করে আছে।
কোনো সারা শব্দ নাই শুধু দুটি মানুষের নিঃশ্বাসের শব্দ বাদে।
মিনিট দশেকের বেশী সময় হয়তো এভাবে ছিল তারা।
-“এতো রাতে আপনি এখান দিয়ে ক্যান আসতে গেলেন?
মেইন দরজা দিয়ে আসলেই হতো। এতো কষ্ট হতো না।”
-“কি বলে আসতাম?যে আমার বউ এই বাড়িতে তাই আমিও এ বাড়িতে থাকবো?”
-“তো যা সত্যি তা-ই তো বলবেন,,,,
সাদনানের কথা প্রিয়তা মনোযোগ দিয়ে না শুনেই বলেতে নিয়ে আবারও থেমে বলে
-“আচ্ছা থাক কাউকে বলতে হবে না।
আমি এখন থেকে রোজ বেলকনির দরজা মেলে রাখবো।”
সাদনান আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। পারলে হয়তো নিজের মাঝে নিয়ে নিতো।
তার পর জড়িয়ে ধরে রাখা অবস্থা সাদনান মেয়ে টাকে নিয়ে আস্তে আস্তে রুমের দিকে এগোতে এগোতে বলে
-“সে সব আমি পরে দেখে নিবো। কিন্তু আপনি তার আগে এটা বলুন গায়ে ওড়না কোথায়?”
ততক্ষণে রুমে এসে প্রিয়তা কে বিছানায় ছুড়ে ফেলবার মতো করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।
চোয়াল শক্ত করে প্রশ্ন করে।
যদি সাদনান আর রাহান থাকতে তবে না হয় একটা কথা ছিল।
কিন্তু রাহানের সঙ্গে ওর এক খালা তো ভাইও ছিল। রাহান আর সারার আংটি বদলের দিন এসেছিল। সে দিন প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে ছিলো সাদনান দেখেছিল।কিন্তু কিছু বলে নি। এবার বলবে কাল এক্কেবারে ভালো করে বুঝিয়ে দিবে। মির্জা সাদনান শাহরিয়ার জিনিসের দিকে নজর দিলে তার ফল কি।
তখন প্রিয়তা যখন ফুলের টপ গুলো নিচে উবু হয়ে রাখছিল তখন
ওই ছেলেটা লোহার রেলিং হালকা হালকা ফাঁকা জায়গা দিয়ে তাকিয়ে ছিলো।
যদিও এতো দূর থেকে স্পষ্ট নয়। আবার রাত তবুও আশে পাশে থেকে আসা আলো ভালোই ছিল।
তাই তো তখন ওভাবে হুট করে জড়িয়ে নিয়ে ছিলো।
প্রিয়তা বেচারি একটু বাদে বাদে ফুফিয়ে ফুফিয়ে উঠছে।
মিনিট পাঁচের মতো সময় নিরবতায় অতি বাহিত হলো।
সাদনান এখন চুপ।
প্রিয়তা একটা সর্ট ফতুয়া, বিভিন্ন প্রাণীর ছবি আঁকা ঢোলা ঢালি একটা প্লাজু।
মেয়ে টার কি দোষ সাদনান তখন তাড়া দেওয়াতেই তো ওড়না নিতে ভুলে ছিলো।
আর এখন নিজেই বকা বকি করছে। অভিমানে ঘিরে ধরলো ছোট্ট মন টা।
তবে নিজে এখন অভিমান করলে চলবে না।
এই রাগী বেডার রাগ ভাংতে হবে।
সাদনান তখন থেকে আলমারিতে হেলান দিয়ে ফোনে কিছু করছে। সত্যি কি কিছু করছে? নাকি রাগ দমনের চেষ্টা চালাচ্ছে? হয়তো।
প্রিয়তা উঠে দাঁড়াল।
পা টিপে টিপে এগিয়ে গেলো স্বামী নামক ব্যাক্তি টার নিকট।
সাদনান টের পেয়েছে। কিন্তু মাথা এখনো ফোনের দিকে ঝুঁকে রেখেছে।
প্রিয়তা সামনি গিয়ে দাঁড়ায় বেশ ভয় পাচ্ছে মেয়ে টা।
পাবারই কথা একটু আগে যা খেল দেখেছে।
-“আর কখনো এমন হবে না। সরি। ”
প্রিয়তা কথা শেষ করে সাদনানের পানে চাইলো।
সাদনান ফোন টা ট্রাউজারের পকেটে রেখে দিয়েছে।
প্রিয়তাও সুযোগ বুঝে আলতো করে সাদনানের বুকে মাথা রেখে দিলো।
সাদনান নড়াচড়া করলো না।আগের মতো ঠাঁই দাঁড়িয়ে।
-“প্লিজ কিছু বলুন। ”
প্রিয়তা কেঁদে দিবে দিবে অবস্থা হয়ে এসেছে আবারও।
তবে সাদনান তা হতে দিলো না এর আগেই ঝট করে প্রিয়তার মুখ খানা দু হাতের তালুতে নিয়ে নিজের অধর জোড়া মেয়েটার অধরে চেপে ধরে গাঢ় চুম্বনে লিপ্ত হলো।
প্রিয়তা বেচারি শাস বন্ধ হয়ে এলো বোধহয়।
পা-হাত ছুঁড়া ছুঁড়ি করতে লাগলো।
সাদনান ছাড়লো।
-‘সোনা আর দু মিনিট। প্লিজ চুপ করে থাকো।”
কথা সমাপ্ত করে আবারও মুখে পুড়ে নিলো মেয়েটার অধর।
ছোট্ট দেহখান আরও কিছু টা কাছে টানলো।
প্রিয়তা আর হাত পা ছুঁড়ছে না।
কিন্তু ওর মনো হলো আজকের চুম্বন টা বেশ কঠিন।
এর আগে তো দু, তিন বার করেছে। কিন্তু আজকের টা অন্য রকম শাস নেবার সময়ও পাচ্ছে না।
মিনিট দুই এর মধ্যেই সাদনান প্রিয়তা কে ছাড়ে।
একটু ঝুঁকে ঝট করে কোলে তোলে হাঁটা দিলো বিছানার দিকে।
শুয়ে দিয়ে লাইট অফ করে।
নিজেও এসে জড়িয়ে ধরে আদুরে কন্ঠে জানায়
-“আপনি শুধু আমার। আপনার সব কিছুর উপর শুধু আমার অধিকার। খারাপ, ভালো এভরিথিং। আশা করি আমার জন্য হলে নিজেকে সেভ করে রাখবেন।”
#চলবে……
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ]