#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১৫
#জান্নাত_সুলতানা
মাইশার নিজের রুমেই বাসর সাজিয়েছে সবাই মিলে।
মাইশাকে দশটা নাগাদ আয়না আর সারা মিলে বিয়ের সাজ চেন্জ করিয়ে একটা সিল্কি শাড়ী পড়িয়ে দিয়েছে। হালকা করে সাজিয়ে দিয়ে চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে।
এখন রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই করছে।
মাইশা কখন থেকে বসে বিরক্তি হচ্ছে এভাবে আর কতখন বসে থাকা যায়। ভালো লাগছে না মেয়েটার।
এর মধ্যে দরজা খুলার শব্দ হলো।
কেউ ঘরে ঢুকে আস্তে করে দরজাটা লাগাচ্ছে।
মাইশার একটু নড়েচড়ে বসলো।মেয়েটার এতোখন বিরক্ত লাগলেও এখন ভয় সাথে লজ্জাও পাচ্ছে।
আয়ান ঘরে ঢুকে দরজাটা আটকে মাইশার পানে দৃষ্টি দিলো একবার।
মেয়েটা একদম গুটিয়ে বসে আছে।
আয়ান মুচকি হাসলো।
তার পর হাতের ঘড়ি সাথে আরো কিছু একটা টা সেন্টার টেবিল রাখলো।
কিছু না বলে লাগেজ থেকে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
মাইশা এতোখনে মাথা টা নিচু করে রেখেছিল। ওয়াশরুমে দরজার খোলার শব্দের মাথা টা একটু উঁচু করে চাইলো না কেউ নেই।
তার পর মাথা হতে শাড়ীর আঁচল টা ফেলে দিলো।
বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে কয়েকবার নিঃশ্বাস ছাড়লো।মেয়েটা নার্ভাস। ওর আজ এই সুদর্শন চিনা পরিচিত পুরুষ টা কে ভয় ক্যান লাগছে? এই অতি সুদর্শন পুরুষ টিকে তো ও ভালোবাসে।তাহলে এতো নার্ভাস ক্যান হচ্ছে? নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হলো মাইশা। মিনিট দশে কের বেশি সময় আয়ান বের হলো তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে।
এসেই দেখলো তার বউ ঘুমটা ফেলে কি সুন্দর আরাম করে বসে কিছু ভাবছে। মেয়েটা নিশ্চয়ই এখনো বুঝতে পারেনি আয়ান এসছে। বুঝতে পাড়লে এতোখনে কি করতো হয়তো নিজেও জানে না।
আয়ান বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলল
-“মাথার আঁচল কই?”
মাইশা থমথমে খেয়ে উঠলো। তড়িঘড়ি করে মাথায় ঘুমটা দিলো। মেয়েটা ওকে ভালোবাসলেও বেশ সম্মান করে।সব সময় কেমন বেজা বিড়াল হয়ে থাকে। তবে চট্টগ্রামে ওই দিন কি হয়েছিল কে জানে।
কেমন লজ্জা ভয় সব ভুলে বলেই ফেলেছিল” মামার কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখতে”। সব ভাবনা চিন্তা সাইডে রেখে আয়ান গম্ভীর কন্ঠে আবার শুধাল
-“ফ্রেশ হয়ে এসো। নামাজ পরতে হবে।”
-“আচ্ছা। ”
বলে তড়িঘড়ি করে বিছানা হতে নামতে গিয়ে কুঁচি তে পা বেজে আয়ানকে নিয়ে ধরাস করে দুজনেই নিচে পড়লো।
বেচারা আয়ান চোখ মুখ কুচকে নিলো।
ব্যাথা পেছে হয়তো। মাইশা তড়িঘড়ি করে উঠতে নিলেই আয়ান ওর হাত ধরে আটকে নিলো।যার কারণে মেয়েটার মুখ একদম আয়ানের মুখে ছুঁই ছুঁই করলো।আয়ান পূর্ণ দৃষ্টি দিলো মেয়েটার পানে। ছোট্ট ছোট্ট কটা চুল কপালের আশেপাশে খেলা করছে। আর লম্বা লম্বা বাকি চুল গুলো কিছু পিঠে কিছু কাঁধের দু ধারে ঝুলে রয়েছে।
ভ্রুুজোড়া কুচকে রেখেছে।
চোখের নিচে হালকা কালচে দাগ। হয়তো এই কয় দিন বিয়ের জন্য ঠিক মতো ঘুমুতে পারেনি। কিন্তু তবুও আয়ানের কাছে মেয়েটাকে আজও আরো মায়াবী লাগছে। যদিও সব সময় লাগে। তবুও অন্য দিনের চাই আজ বেশী সুন্দর লাগছে। তবে কি গুরুজনেরা যে বলে বিয়ের পানি গায়ে পড়লে মেয়েদের সুন্দর্য বারে তবে কি তা সত্যি? হুম সত্যি সেটা ওর বউকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।হঠাৎ আয়ানের নজড় পড়ল ওর বউয়ের ঠোঁট জোড়ার দিকে তবে নিজেকে কনট্রোল করে নিলো।
আলতো করে মেয়েটার কপালে নিজের রক্ষ অধর জোড়া ছুঁয়ে দিল।
ছেড়ে দিলো। মাইশা ছাড়া পেয়ে তড়িঘড়ি করে উঠতে গিয়ে ঘটলো আরেক বিপত্তি শাড়ী সব কুঁচি খোলেছে।
তবে নিজেকে সামলে কুঁচি ধরে উঠে দাঁড়ালো না।
এক দৌড়ে ওয়াশরুম ঢুকে গেলো।
আয়ানের সবটা বিষয় বুঝতে মিনিট খানিক সময় লাগলো।
পরক্ষনে বুঝতে পেরে হো, হা করে হেসে উঠলো।
-“তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে আয়।”
আয়ান কথা টা বলে নিজে গিয়ে খুঁজে জায়নামাজ বের করলো। তার পর সেটা বিছিয়ে বউয়ের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। পাঁচ সাত মিনিটের মধ্যে মাইশা ওজু করে বেরিয়ে এলে দুজন মিলে দু’রাকাআত নফল নামাজ পড়ে নিলো।
নামাজ শেষ মাইশা জায়নামাজ গুছিয়ে পিছন ফিরতেই আয়ান মাইশাকে এক ঝটকায় পাঁজা কোলে তোলে নিলো। আস্তে করে হেঁটে গিয়ে আলগোছে বিছানা বসিয়ে দিলো। তার পর সেন্টার টেবিল রাখা একটা বক্স নিলো। মাইশা অবাক হয়ে বলল
-“এটা কখন এনেছেন আমি তো দেখে নি?”
-“আমি এটা অনেক আগেই কিনে রেখেছি।আর এটা আমি ঘরে ঢুকেই সেন্টার টেবিল রেখেছি ইডিয়ট। ”
পরের কথা গুলো কিছু টা চাপা সুরে বলল।মাইশা মুখ ভেংচি কাটলো। এই কথাটা একটু সুন্দর করে বললে কি এমন হতো?
আর কথা বলবে না লোক টার সাথে। ছোট্ট মনটায় অভিমান ভিড় জমিয়েছে। ততক্ষণে আয়ান বক্স টা খোলে নিয়েছে বক্স টার ভিতরে এক জোড়া দোল, একটা নোস পিন, সাথে একটা চেইন। মাইশা আর বেশি কিছু পর্যবেক্ষণ করতে পাড়লো না।কারণ আয়ান মাইশার কানে হাত দিয়ে আগের দোল টা খোলে নিজে আনা বক্স হতে ছোট্ট ছোট্ট দোল জোড়া পরি দিয়েছে মেয়েটাকে। তার পর মাইশাকে বলল
-“নোস পিন টা খোল।”
মাইশা বাধ্য মেয়ের মতো শুনলো। খোলে নিলো।
আয়ান আলতো করে ধরে নোস পিন টা পড়িয়ে দিলো। তার পর এক জোড়া চুড়ি।
নিজে মেঝে হতে উঠে মেয়ে টার হাত টা ধরে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড় করালো।
তার পর বক্স থেকে চেইন টা নিয়ে আলতো করে পিঠ হতে খোলা চুল গুলো সরিয়ে নিলো। মেয়েটা হালকা কেঁপে উঠল। আয়ান মুচকি হাসলো। নিজের বলিষ্ঠ হাত ধারা দিয়ে পড়িয়ে দিলো হাতে থাকা চেইন টা।
-“এগুলো সব সময় পরে থাকবি। বুঝেছিস?”
আদেশের কণ্ঠে জানালো। মাইশা চোখ এতোখন বন্ধ ছিলো। আয়ানের এমন কড়া কণ্ঠে মেয়েটা নড়েচড়ে দাঁড়াল। মাথা টা উপর নিচ করে “আচ্ছা” বুঝালো।
আয়ান আর কাল বিলম্ব করলো না। ঝট করে আবারও কোলে তোলে নিলো।
বিছানায় নিয়ে শুয়ে দিলো নিজেও মেয়ে টার উপর আধ শুয়া হলো।
আয়ানের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম চিক চিক করছে।মাইশা আলতো করে হাত ছোঁয়ালো।
তড়িঘড়ি করে বলল
-“আপনার মনে হয় গরম লাগছে।আমি পাখা টা ছেড়ে দিয়ে আসি? ”
পালাতে চাইলো কি? আয়ান বুঝলো না। হয়তো এখন বুঝতে চাইছে না। তবে এই মেয়েটার কাছে এলে অতি ঠান্ডায় ও ওর গরম লাগে এই যে এখন নবেম্বর মাস চলছে। হালকা হালকা শীত পরেছে। কিন্তু এই মেয়ের সন্নিকটে এসে ওর নার্ভাস লাগছে। অবশ্য সব সময় এই মেয়ের আশেপাশে থাকলে ওর কেমন নার্ভাস লাগে। আর এখন তো এতো কাছে গরম লাগাটাই স্বাভাবিক।
মাইশা উঠতে চাইলো কিন্তু আয়ান তা হতে দিলো না শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
-“তুই আমার পাশে থাকলে এসিতেও আমার গরম লাগে জান।”
বলেই মাইশার ঠোঁটের কোনে আলতো করে ঠোঁট ছুয়ে দিলো।
মাইশা পরম আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো।
আয়ান মাইশার উপর থেকে সরে ওকে জড়িয়ে ধরে বল
-“ঘুমি পড়।”
মাইশা ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।
কই বেচারি ভেবে ছিল আয়ান কিছু করবে। এই রাত টা নিয়ে সব মেয়ের সব থাকে ওর ও ছিল। কিন্তু কই এই বেডা তো কিছু করলো না। মাইশার মনে মনে বেশ কয়েকটা কটু কথাও বলে নিলো আয়ানকে।
তার পর আলতো করে আয়ানকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠতে চাইলো তবে সে ব্যর্থ। লাইট এখনো জ্বালানো লাইট অফ না করলে ওর ঘুম হবে না। কিন্তু এই লোক তো ওকে ছাড়ছেই না। মাইশা বেশ অনেকখন মুচড়া মুচড়ি করে যখন কালান্ত হয়ে গেলো। তার পর হুট করেই একটা কান্ড ঘটালো। শক্ত পোক্ত মানবটার লোমযুক্ত বুকে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। আয়ানের বুকে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকা বেশ সুবিধা হয়ছে।কিন্তু ও হয়তো এটাই ভাবে নি এর পর কি হতে পারে।
আয়ান মেয়েটাকে এক ঝটকায় নিচে ফেলে ওর উপর উঠে গেলো
-“এতোখন কনট্রোল করছিলাম। কিন্তু তুই? এখন আমাকে কিছু বলতে পারবি না। ”
বলেই অধর অধর মিলিয়ে দিলো। মাইশা আস্তে করে চোখ বন্ধ করতে চোখের কার্নিশ হতে দুফোঁটা জল গড়ি পড়লো।
এই চোখের জল কষ্টের নয় সুখের।
আয়ান মাইশাকে ছেড়ে দিয়ে ঝরের বেগে গিয়ে লাইট অফ করে দিলো।
[এর বেশি কিছু আপনাদের লেখিকা জানে না😐।]
——————————
একটা রমনী তার প্রিয় পুরুষ টার কাঁধে মাথা রেখে গল্প করছে।
-“আচ্ছা আপনি আমাকে আপনি আপনি করে ক্যান বলেন? আমি তো আপনার অনেক ছোট। ”
হঠাৎই প্রশ্ন টা করলো। উওরের জন্য কাঁধ হতে মাথা তোলে ব্যাক্তি টার মুখে পানে চাইলো।
-“ক্যান আপনার ভালো লাগে না?”
ব্যাক্তিটা মুচকি হাসলো। তবে সে পাল্টা প্রশ্ন করলো
-“ভালো লাগে। কিন্তু তুমি করে বল্লে আরো ভালো লাগতো।”
রমনীটা ঝটপট জবাব দিলো। তবে মুখটা মলিন করে।
আবারও মাথা এলিয়ে দিলো পুরুষ টার শক্ত চওড়া কাঁধ টায়।
বেশ অনেক টা সময় নিরবতায় কাটলো।
-“জান ঘরে চলো। রাত অনেক হয়েছে। ”
মেয়েটা বিস্ময় নিয়ে চাইলো।অবাক হয়ে বল
-“আপনি সত্যি। ”
অবাক হয়ে জড়িয়ে ধরলো মানব টাকে।
মানব টা মুচকি হাসলো। আস্তে করে মেয়ে টাকে ছাড়িয়ে নিলো।
ভালোবাসার পরশ একে দিলো তার প্রিয়তামার কপালে।
কণ্ঠে শীতলতা এনে শুধালো
-“আমার ছোট্ট বউ টা আবদার করে বলেছে আর সেটা কি আমি আগ্রহ করতে পারি? উঁহু, একদম নয় জান।”
কথা টা সমাপ্ত করে সাদনান প্রিয়তাকে এক ঝটকায় পাঁজা কোলে তোলে বেলকনি হতে ঘরে ভিতর যেতে যেতে বল
-“অনেক রাত হয়েছে জান।কাল কলেজ যেতে হবে তো? এখন ঘুমুতে হবে বউ।”
প্রিয়তা কে বিছানায় শুয়ে দিয়ে সাদনান লাইট অফ করে দিয়ে নিজেও এসে ছোট পুচকে বউ টাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো।
#চলবে……….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ ]