হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-১২

0
701

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|১২|
#শার্লিন_হাসান

শামীম সরদার তার দলের সব কয়টা কে চ’ড়, থাপ্পড়, সাথে লা’থি মেরে আপাতত শুইয়ে দিয়েছে। আরাফের মাথার চুল টেনেছে কিছুক্ষণ। শামিমকে আপাতত পাগ’লা কু’ত্তা লাগছে। যে ক্ষেপে আছে! নিজের শিকার ধরতে না পারায়।

বাকীরা কয়েকজন ভয়ে তটস্থ। শামিম সরদার হুংকার ছেড়ে বললেন,

-কার গাড়ীতে করে ওরা ফিরেছ? গাড়ীর নাম্বার ডিটেলস কিছু জানিস? তোদের মতো গরু গুলোকে পুষি যারা ছোট একটা বাচ্চা আর মেয়ের সাথে পারে না। তোরা তো পুরুষদের বদনাম করে দিলি ওই সামান্য একটা মেয়ের কাছে হেরে।

-গাড়ীর কালার সাদা ছিলো। আর ওটা বড় মাইক্রো ও না আবার ছোট কার ও না। মাঝারি…”

-সুন্দর ভাবে কথাটাও গুছিয়ে বলতে পারে না। ছোট ও না বড় ও না মাঝারি। শা*লা BANCD আজকে থেকে গরুর সাথে গিয়ে ঘাস খাবি মা*ল পাবি না কেউ।

আরাফ চুপসে যায়। শামিম সরদার নিজের মাথার চুল নিজে টেনে ছিঁড়ে ফেলার উপক্রম করছে। কেউ কিছু বলছে না। আপাতত এই পাগ’ল কুকুরকে সামলানো যাবে না। আরাফের চোখের ইশারায় একজন ম*দের বোতল আর গ্লাস এগিয়ে আনতে শামিম সরদার বোতল নিয়েই ঢকঢক করে গিলতে থাকে।

বাকীরা দাঁড়িয়ে দেখছে শামিমের ম*দ খাওয়ার কান্ড।আহিয়া তখন কল দেয় শামিমকে। শামিম কল রিসিভ করে বিশ্রী কয়টা গা’লি দেয়।

আহিয়া ও ছাড়েনি সেও পাল্টা গা’লি দিয়ে বলে,

-কী রে পাগলা কু’ত্তা শিকার খাঁচায় আসেনি বলে এমন ঘেউ,ঘেউ করছিস?

-তোকে কাছে পেলে খে*য়ে দিতাম। নেতার বউয়ের ক্ষেপটা তোর উপরই মিটাতাম আহিয়া। ভাগ্যিস তুই কাছে নেই বলে বেঁচে গেলি।

-হাহা আহিয়া তো বোকা! তোর মতো জানোয়ারকে বিশ্বাস নেই। আমার কাজ হয়ে গেলে তোর পশ্চাৎদেশে লা’থি মেরে তোকে বুড়িগঙ্গায় ফেলে চলে আসবো। (মনে,মনে)

-আমি না তোর সহযোগী। গেমের লিডার আমি আর তুই! সেখানে তুই ফূর্তি করবি নেতার বউকে নিয়ে আর আমি ফূর্তি করবো….”

-নেতাকে নিয়ে নাকী তার বাপকে নিয়ে?

-দু’টো মা*লই কিন্তু হ্যান্ডসাম আছে। তবে বুড়োটা অন্যের খা*ওয়া। আর নেতাকে দেখে মনে হয় না….”

-তোকে দেখে করেছে নাকী সংসার?

-সেরকম কিছু না।

ওদের অকথ্য কথা বার্তা বাকীরা চুপচাপ শোনছে। আরাফের মন চাইছে আহিয়াকে কষে কয়টা থাপ্পড় মারতে। কেনো জানি খুব ক্ষোভ আহিয়ার উপর জমা হয়েছে।

******

পরের দিন সকালে নিবরাস পরাগকে দিয়ে চকলেট আনিয়েছে মিসবাহর জন্য। মিসবাহ সে চকলেট নিয়ে বসে,বসে খাচ্ছে। সবাইকে বিলাচ্ছে! তারিশার আশেপাশে ও সে ঘেঁষছে না। তখন তারিশা দুষ্টমি করে বলে,

-কী ভাগ্নে আমাকে চোখে লাগছে না?

-তুমি পঁচা সেজন্য পঁচা মানুষকে আমি চকলেট দেই না।

মুখের উপর বলে নিবরাস চলে আসে। বালীরা কেউ মিটিমিটি হাসছে। নিবরাসের তাতে হেলদোল নেই। আনায়াকে ডেকে বলে,

-তারিশাকেও কিছু চকলেট দাও তো। পরে আবার কান্না করলে ওর চোখের পানি অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে আমার জন্য। এতো রিস্ক নিতে চাই না আমি।

নিবরাসের কথায় তারিশা জ্বলেপুড়ে যায়। আনায়া চকলেটর বক্স তারিশাকে এগিয়ে দিলে তারিশা তার প্রত্যাখান করে বলে,

-তোমরাই বসে,বসে চকলেট খাও! আমি গেলাম।

-মনে,মনে তো আমায় হাজারটা গালি দিচ্ছো সাথে অভিশাপ সেটা জানি। আচ্ছা থাক চকলেট খেতে হবে না। গালি তো খেলামই! অকৃতজ্ঞ মানুষদের আবার

-গালি দেবো কেন? আমি আবার এসব পঁচা কথা বলি না।
নিবরাসের কথার মাঝে পোড়ন কেটে বলে তারিশা। আনায়া তাঁদের দুজনকে বলে,

-এতো কথা বাড়াও কেন তোমরা? খাবে না মানে খাবে না শ্যাষ!

তারিশা চলে আসে। আসার সময় হাজারটা বকা দেয় নিবরাসকে।

-এদের ঢং দেখতে,দেখতে আর কত জনম যাবে কে জানে? আনায়া কে বলেছে আমি চকলেট খাবো না? একটু ঢং করেছি তাই বলে তোমরা জামাই বউরা সিরিয়াস ভাবে নিবা? ধ্যাত! এরা বুঝে না চকলেট আমার কত প্রিয়।

ঢংটা না করলেই বোধহয় ভালো হতো আমার।

তারিশা আফসোস করছে।

আনায়া নিবরাসকে বলে দিয়েছে যাতে আজকে সন্ধ্যায় রওনা হয় রাজশাহীর উদ্দেশ্য। মোহনপুর না যাওয়া অব্দি তার শান্তি হচ্ছে না। এখানে কেমন হাসফাস লাগছে। বিশেষ করে গতকাল রাতের কথা মনে পড়লে মনে আলাদা ভয় কাজ করে।

নিবরাস ও সবাইকে বলে দেয় রেডি হয়ে নিতে। যা ঘুরাঘুরি হয়েছে এটাই বেটার। বেশীর দরকার নেই আশেপাশে শত্রু ঘুরছে।

মরিয়ম নওয়াজ তো প্রথমে বলেই দিলেন,
-এমপি না হলেই ভালো হতো! অন্তত শান্তিতে থাকতে পারতাম। এই শত্রু,এই নজর ওর নজর। মাঝেমাঝে মন চায় কারাগারে ঢুকে যাই সেটাই ভালো।

-আরে মা এমন করছো কেন? এমন শত্রু থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

-তাই বলে বাবার বাড়ীতে এসেও দু’টো দিন থাকতে পারবো না?

-আরে মামনি সবই আনায়ার চাল। ওর মন চাচ্ছে না সেজন্য আমাদেরকে নিয়েও টানাটানি করে। ওর ভালো না লাগলে চলে যাক না? গাড়ী তো বাইরে দাড়ানো আছেই।

-লিসেন তারিশা! আমি একবার ও বলেছি না আনায়া একবার ও এসে বলেছে ওর ভালো লাগছে না সেজন্য রাজশাহী ব্যাক করছি আমরা? আমার দরকারী কাজ পরেছে সেজন্য চলে যাবো। তোমার এতো বেশী থাকতে মন চাইলে একাই থাকো না? যত্তসব টেমপার গরম করার মতো কথাবার্তা।

নিবরাসের গরম গলার স্বরে সবাই চুপসে যায়। মরিয়ম নওয়াজ উঠে চলে যান। আনায়া সে রুমে এখানে নেই। তারিশা বিষ খেয়ে বিষ হজম করছে। নিবরাস মুখের উপর অপমান দিলো।

তখন মিসবাহ আসে নিবরাসের কাছে। এসে বল,

-আমার চকলেট গুলো পাচ্ছি না মামু।

-নিশ্চয়ই তারিশা খেয়ে নিয়েছে। তাই না তারিশা?

নিবরাস বলে। তারিশা থতমত খেয়ে যায়। আমতাআমতা করে বলে,

-আজব! আমি কেনো ওর চকলেট না বলে খেতে যাব বো? খাওয়ার হলে তখনই খেতাম।

-আমি দেখেছি তো তুমি যখন চকলেট নিয়ে ছাঁদে যাচ্ছিলে।

-বাজে কথা বলবে না ভাইয়া। আমার তো বয়ে গেছে অপমান পাওয়ার পর আবার চকলেটের দিকে তাকাবো?

নিবরাস একটা ভিডিও ধরে তারিশার মুখের উপরে। যেটাতে দেখা যাচ্ছে সে চকলেট হাতে ছাঁদের দিকেই যাচ্ছে। নিবরাস হেসে ভিডিও অফ করে বলে,

-বললে নাহয় আরেক ঝুড়ি এনে তোমায় দিতাম। তাই বলে এভাবে? কে জানি দেখা যাবে কবে আমার বউকে ভালোবেসে ফুল এনে দিলাম আর সেই ফুল ও তুমি না বলে নিয়ে গেলে।

তারিশা কিছু বলছে না। নিবরাস মিসবাহকে বলে,

-রাজশাহী গেলে তোমায় আবারো চকলেট কিনে দেবো সোনা। তোমার আন্টি রা’ক্ষসী সেজন্য সব চকলেট খেয়ে নিয়েছে।

মিসবাহ মাথায় নাড়ায়। যাওয়ার সময় তারিশার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে যায়।

সন্ধ্যায় তারা রেডি হয়ে গাড়ীতে বসে পড়ে। আজকে তারিশার লেট হচ্ছে। নিবরাস বিরক্তি নিয়ে বলে,

-ওর থাকার মনে হয় বেশী ইচ্ছে। ওকে থাকতে বলো। ড্রাইভার গাড়ী স্টার্ট দাও তো!

-এই তো আমি।
দৌড়ে এসে বলে তারিশা। তড়িঘড়ি গাড়ীতে উঠে বসতে নিবরাস ও বসতে,বসতে বলে,

-সেদিন তো আমার বউয়ের দেরী হওয়ায় মনে,মনে কত বকা দিয়েছো। এখন তো তোমার নিজেরই লেট।

-এই নিবরাস মনের কথা পড়ে নিচ্ছে কীভাবে? ও কী করে জানে ওদের আমি মনে,মনে গুষ্টিতুষ্টি উদ্বার করে দেই?

মনে,মনে বলে তারিশা। নিবরাস জানে না এসব! সে তো আন্দাজি ঢিল ছুঁড়েছে। তারিশার ভাবভঙ্গি দেখে বলে,

-আর কখনো আমাকে বা আমার বউকে মনে,মনে বকলে জেলে ঢুকিয়ে দেবো।

তখন রোহিত মজা করে বলে,

-এভাবে থ্রেট দিচ্ছেন কেন বেচারিকে? মানুষ মাত্রই ভুল স্যার।

-তোমাকে ওর হয়ে গীতা পাঠ করতে হবে না।

রোহিত চুপসে যায়। মরিয়ম নওয়াজ মন খারাপ নিয়ে বসে আছেন সে দুটো দিন থাকতে পারলো না। ছেলেকে কে বলেছে এমপি হতে? ওর জন্যই ঠিকঠাক ভাবে বাইরে বের হতে পারেন না। এই শত্রু এর নজর ওর কুনজর।

মরিয়ম নওয়াজকে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখে নিবরাস বলে,

-তোমার আবার গালে কী হলো? মৌমাছি কামড় দিলো নাকী?

-বাজে কথা ছাড়ো নিবরাস। তোমার এই রাজনীতির জন্য আমি শান্তিতে কোথাও যেতে পারি না।

-তো যাও না? বারণ করলো কে? গিয়ে দু চারটার বুলেট খেয়ে আসো। তারপর হসপিটালের বেডে তিনমাস শুয়ে থাকো। ওইটা বেটার হবে মনে হচ্ছে।

-এভাবে ভয় দেখাও কেন?

-ভাইয়া ঠিকই বলেছে। তুমি আজকাল ঘুরে বেড়ানোর জন্য ছটফট করছো। দেখো না বাইরে শত্রুর শেষ নেই।

-হ্যাঁ এতোই শত্রু যে কখন আবার গাড়ীটা না ব্লাস্ট করে। পরে দেখা যাবে নিবরাস মির্জার শত্রু তার গাড়ীতে টাইম বোমা সেট করে রেখেছে।অবশ্য শত্রু গুলোকে চেনাও যাবে না।

মাইশার কথার মাঝে আনায়া বলে কথাটা। তারিশা তো সন্দেহের জাল ও ইতোমধ্যে ছিটিয়ে দিয়েছে। নিবরাস স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে ব্যপারটা। এরকম টিটকারি তার বউ এর আগেও করেছে। এটা তো সিম্পল লাগছে তাকে সে ডিরেক্ট চাঁদাবাজ বলে অপবাদ দিয়েছে সেটা তো তার ইগোতে লেগেছে। শুধু বউ বলে কিছু বলেনি।

তখন তারিশা বলে উঠে,

-বহিরা শত্রুর আগমনের আগে ঘরের শত্রু না কাজটা করে রেখেছে। আর যে করেছে সেই নিশ্চয়ই এটা সম্পর্কে জানে।

-তুমিও না তারিশা আপু। থিংকিং ভালো তবে ওভারথিংকিং না।

-যুক্তি দেখালাম।

-তোমার বালের যুক্তি আনায়া গুণেও না। যত্তসব! নিজে যে কেমন সেটা ভাবে না আসে আমার কথার মাঝে যুক্তি দেখাতে। চুলের পোলাপাইন।

মনে,মনে বলে আনায়া। তখন আবার নিবরাস বলে,

-যুক্তি দেখাতে যাও কেন তারিশা? চুপচাপ শুনতে পারো না? তাহলে তো আর এসব কথা-কাটাকাটি হয়না। কথাও বাড়ে না। আসলে মেয়ে জাত এমনই! একটা কথা পেলে সেটা তিল থেকে তাল তাল থেকে তালাফি করা।

এবার সবাই নিশ্চুপ। আনায়া তারিশা আর নিবরাসের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।

*****

জায়ান নাজিয়াকে নিয়ে বাইরে বের হয়েছে। সাথে কাউকে আনেনি! নাজিয়া গতকাল থেকে মুড অফ করে রেখেছে। কারণটা জায়ান জানে না। সেটাই জিজ্ঞেস করার জন্য বাইরে বের হয়েছে। হাঁটতে, হাঁটতে বলে,

-মুড অফ কেন পাখি?

-কিছু না! একটা কথা ভাবছি।

-কী কথা?

-এই ধরো শামিম সরদার জানলো তুমি বা তোমার গাড়ীর মাধ্যমে নেতার বউ পালিয়েছে তখন যদি তোমার গাড়ীতে বোম সেট করে রাখে? তোমাকে আর তোমার গাড়ীকে উড়ানোর জন্য।

-ফাল’তু কথা ছাড়ো! ও এরকম আমার সাথে করবে না।

হাসে নাজিয়া। জায়ান তাকিয়ে তার হাসি দেখছে। পরক্ষণে নাজিয়া বলে,

-আরে শামিম সরদার যা! হলেও হতে পারে। তোমার গাড়ীতে না হোক পথযাত্রীদের গাড়ীতে যদি তাই করে থাকে।

-তোমার নিশ্চয়ই মুডের উপর বাজ পড়েছে সেজন্য উল্টাপাল্টা বকছো। যাও তো মুডটাকে ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়েমুছে আসো তারপর শুদ্ধ, সুন্দর ভাবনা ভাবো। এসব আজাইরা চিন্তা তোমাদের মেয়ে মানুষদের দ্বারাই সম্ভব।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে