হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-৩০

0
695

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|৩০|
#শার্লিন_হাসান

সীতারা আহম্মেদের কানে খবর আসে নাজিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মূহুর্তে চোয়াল শক্ত করে নেয় সীতারা আহম্মেদ। নিশ্চয়ই নিবরাস কলকাঠি নাড়ছে। এই নিবরাস তাকে দমাতে এখন তার ছোট মেয়েকে কিডন্যাপ করিয়েছে। সে তো শুনেছে আনায়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হয়ত নিবরাস ভাবছে সীতারা আহম্মেদ তাকে সরিয়ে রেখেছে।

তবে নিবরাসকে মা’রার জন্য লোক লাগিয়ে দিয়েছে সীতারা আহম্মেদ। জায়ানকে ছাড়িয়ে আনার জন্য কাজ চালাচ্ছে। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। ঘুষ ও নিতে চাচ্ছে না পুলিশ! সীতারা আহম্মেদের মাথা কাজ করছে না। কাকে ধরবে,কাকে ছাড়বে কিছুই মাথায় আসছে না তার।

নাজিয়া কোথা থেকে উদাও হয়েছে সেসবের পেছনেও খোঁজ লাগিয়েছে সীতারা আহম্মেদ। এদিকে তার হাজবেন্ড আর ভাসুর দু’জনেই ক্ষিপ্ত! তাঁদের কাউকেই সীতারা আহম্মেদ পাত্তা দিচ্ছে না।

*****

নিবরাস গাড়ী নিয়ে এদিকওদিক ছোটাছুটি করছে। নাজিয়াকেও খুঁজে পাচ্ছে না সে। সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী সে রাস্তায় গেলেও কিছুই মিলেনি প্রমাণ আর না আনায়াকে পেয়েছে। পুরো মোহনপুর উপজেলায় খোঁজ করা হচ্ছে! কেউই খোঁজ মেলাতে পারেনি। আনায়াকে নিয়েছে কোন কল আসেনি কারা নিলো বা কী চায়! জায়ান তো জেলে তাহলে কে?

হুট করে শামিম সরদারের কথা মাথায় আসতে নিবরাস শামিমের খোঁজে ছুটে। রোহিত নিবরাসকে বাঁধা দিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। হুটহাট রাগের মাথায় কিছু হয়ে গেলে সমস্যা। এমনিতে অনেক জামেলা যাচ্ছে।

শামিম সরদার চেয়ারে বসে হুংকার ছেড়ে সবাইকে গা’লি দিচ্ছে। আনায়াকে তাঁদের থেকে অন্য কেউ কেড়ে নিয়ে গেছে। শামিম তো প্লান করেই আনায়াকে কিডন্যাপ করেছে। এটা অনেক আগে জায়ান সহ পরিকল্পনা করে রেখেছিলো। কিন্তু তাঁদের থেকে অন্য কেউ কেড়ে নিয়েছে আনায়াকে। এখন শুধু আহিয়ার আসার অপেক্ষা। আহিয়া আসতে লেট করছে এতেই শামিম সরদারের রাগের শেষ নেই।

আহিয়া গোডাউনে আসতে শামিম সরদার তাকে দেখে বি’শ্রী কয়েকটা গা’লি দেয়। আহিয়া তেমন রিয়েক্ট করেনি। তখন শামিম সরদার বলে,

-এখন আসার সময় হয়েছে তোর? সীতারাকে খবর দে?

-তাকে এসবে টেনে কী হবে?

-তোর মুখ বেশী চলে।

-আনায়াকে কিডন্যাপ করতে গিয়েও করতে পারলি না গাধা আর দুটোও নেই তোদের মতো! তোদের থেকেও অন্য কেউ কেড়ে নিয়ে গেছে।

-আমাদের পরিকল্পনা অন্য কেউ জেনে গেছে। কিন্তু কীভাবে?

-দেখ তোর লোকদের কেউ বলেছে কীনা!

-কিন্তু আনায়াকে নিয়ে গেলো কে? ওই গর্দভ গুলো কিছুই বলতে পারছে না। অবশ্য বলবে কীভাবে? সবগুলো হসপিটালে ভর্তি!

-নাজিয়া নাকী কিডন্যাপ হয়েছে।

-তো?

-তাকে আবার এসবে আনলি কেন?

-আমি না জায়ান!

-তো? সে তো জেলে বসে আছে।

-আরে সে তো বুঝলাম! দু-একের ভেতর ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবো। তারপর নাজিয়াকে যা করার ও করবে।

-নাজিয়া কোথায় জেনো?

-ফ্যাক্টরীতে!

-ওদের?

-হুম।

আহিয়া উঠে দাঁড়ায়। তার আর কাজ নেই এখানে। শামিম সরদারকে বলে সে বেড়িয়ে এসেছে। গাড়ী নিয়ে নিজের বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা হয়। মাঝপথে এসে গাড়ী থামায় আহিয়া। নিবরাস রাস্তার সাইডে দাঁড়িয়ে আছে। তার সাথে তার গার্ডের শেষ নেই! বিরক্তবোধ করে আহিয়া। গাড়ী থামিয়ে নিবরাসের কাছে যায় সে! আহিয়াকে দেখে নিবরাস বিরক্ত বোধ করে। বিশেষত তাহিয়া আহিয়া তারা বোন। আহিয়াকে দেখলে তাহিয়ার কথা মাথায় আসবেই তাদের চেহারায় অনেক মিল। তাহিয়া মানে আরেকটা বিরক্তির কারণ।

-এমপি মনে হয় বউয়ের শোকে শেষ।

-সেসব তোকে জানতে হবে না। বোনের শোকে নিশ্চয়ই এখন ড্রিং করাও ছাড়লি না।

-না আমি কোন ড্রিং করি না।

-গুড! তা আমাকে খু’ন করবি না?

-করবো এই তো মাত্র শুরু! তোর বউ তারপর তোর ভাগ্নে তারপর মা,বাবা, বোন! তোকে খু’ন করতে এদেরকে নিতে পারি আমি। অবশ্য ভাবছি তোকে খু’ন করতে ওদের কেন জীবন নিবো?

-ফাল’তু!

-গেলাম এমপি! বসে,বসে মুড়ি খা! বউকে তো এই জনমেও পাবি না।

নিবরাস চোখমুখ শক্ত করে নেয়। আহিয়া যেতে গাড়ীতে উঠে বসে নিবরাস। সে বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা হয়। আনায়াকে কী করে খুঁজবে বের করবে বুঝতে পারছে না।

তারিশা নিবরাসকে দেখে বাঁকা হাসে। দুইদিন আগেও এই ব্যক্তি তাকে থ্রেট দিয়েছে টাকার জন্য! এবার বউয়ের শোকে মরুক তাতে তারিশার কী!

-না,না ও না মরে ওর বউ মরুক তাহলে আমার রাস্তাটা ক্লিয়ার! কী জানি আবার কোন আনায়া এসে জায়গা দখল করে নেয় কে জানে?

তারিশা নিজের রুমে চলে যায়।

নিবরাস ফ্রেশ হয়ে খাটের উপর বসে পড়ে। আহিয়া নিশ্চয়ই খোঁজ দিতে পারবে আনায়ার। কিন্তু তার জন্য তো কিছু করতে হবে। আহিয়া সোজা কথার মানুষ না। নিবরাস ভাবছে তাহিয়াই এখন একমাত্র ভরসা!

যেই ভাবা সেই কাজ। নিবরাস আহিয়াকে কল দিতে তড়িঘড়ি রিসিভ হয়। নিবরাস তখন বলে,

-আমি জানি তুমি সব জানো আনায়ার ব্যপারে। ওর খোঁজ একমাত্র তুমিই দিতে পারো। তবে তোমাকে আমি একটা হেল্প করতে পারি বা তোমার আপন কাউকে আমি ফিরিয়ে দিতে পারি।

-কাকে?

-তোমার বোনকে!

-মৃ’ত মানুষ কখনো জীবিত হয়? মনে হয় বউয়ের শোকে মাথা পুরোটা গেছে আপনার।

-হয়! তাহিয়া বেঁচে আছে।

-তো?

-তাকে চাই না তোমার?

-হ্যাঁ চাই।

-তাহলে আনায়াকে ফিরিয়ে দাও। ওর খোঁজ দাও?

-আমি কিছুই জানি না ওর সম্পর্কে।

-তাহলে তোমার বোনকে উপরে পাঠিয়ে দেই?

-দিন! দেখি কত সাহস আপনার। এমন ভাবে ফাঁসাবো না এমপিগিরি ছুটে যাবে।

নিবরাস রেগে কল কেটে দেয়। আজকে তার মনে হচ্ছে সবাই তাকে নিয়ে খেলা করছে। যেই নিবরাস মানুষকে তার কথায় ঘুরাতো,নাচাতো সেই নিবরাসকে কেউ পাত্তা দিচ্ছে না।

এখন সব রাগ যাচ্ছে আনায়ার উপর! কী দরকার ছিলো পন্ডিতি করে গাড়ীতে উঠার? সে তো বলেছে সে নিজে এসে নিয়ে যাবে। আনায়া বেশী চালাক।

আবার নাজিয়ার কথা মনে হতে আরো বেশী বিরক্ত হয় নিবরাস। তার মনে হচ্ছে এরা দুই বোনে একবোন ও কাজের না। না আছে বুদ্ধি না আছে ভয়! সব কিছু কী বলে দিতে হবে? নাজিয়াটা এতো বোকা হয়েছে কবে থেকে কে জানে?

এমনিতে আনায়া বোকা! নাজিয়াও আনায়ার ছোঁয়ায় বোকা হয়ে গেছে।

-নিবরাস মাথাটা এক বারে গেছে তোর! অবশ্য যাবেই তো কতঘন্টা হয়ে গেলো বউকে দেখি না। একটু চুমুও পাইনা। ধুর!

নিবরাস কফি খেয়ে মাথা ঠান্ডা করে ভাবতে থাকে!

******

অপরিচিত একজন লোকের গাড়ীর পেছনের সীটে পড়ে আছে নাজিয়ার নিথর দেহটা। ভদ্রলোক গাড়ী নিয়ে তার বাড়ীতে প্রবেশ করে। ভেতরে এসে কয়েকজন মেয়ে সার্ভেন্ট ডেকে নাজিয়াকে ভেতরে নেওয়ার ব্যবস্থা করে।

নিজে ফ্রেশ হয়ে নাজিয়াকে রাখা রুকটায় প্রবেশ করে ডক্টর সীতাব জুম্মান চৌধুরী। নাজিয়ার কপালে রক্ত শুকিয়ে আছে। হাতের তালু পুরোটা কেটে গেছে যেখানে সাদা কাপড় মোড়ানো। জুম্মান চৌধুরী ফাস্ট এইড বক্স এনে প্রাথমিক চিকিৎসা করে হাত,কপাল ব্যান্ডেজ করে দেয়।

সে জানে না মেয়েটা কোথা থেকে দৌড়ে এসেছে কীভাবেই বা তার সামনে এসে পড়লো! শুধু বলেছিলো হেল্প করতে। গাড়ীতে একটু স্থান দিতে। জুম্মান ও না করেনি। তবে বাড়ী ফিরতে,ফিরতে অজ্ঞান হয়ে গেছে নাজিয়া। এখন তার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় আছে জুম্মান। তারপর তার মুখ থেকে সব শুনবো ক্লিয়ার ভাবে।

নাজিয়ার মুখের দিকে তাকাতে খেয়াল হয় কোথাও দেখেছিলো তাকে। এই মূহুর্তে স্মরণ হচ্ছে না তার।

সীতারা আহম্মেদ সোফায় বসে আছে। তখন তার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। বিরক্তি নিয়ে রিসিভ করে সীতারা আহম্মেদ। ওপাশ থেকে তাহিয়া তখন বলে,

-ফুফু আম্মু! আছো?

-আহিয়া?

-একদম না! তারই বোন তাহিয়া বলছি আমি।

-তাহিয়া আসবে কোথা থেকে? ও তো মারা গেছে বছর আগে। মজা করো না আহিয়া!

-মজা করে আমার লাভ কী বলো? আমি তাহিয়া বলছি! তা তোমার মেয়েদের খোঁজে তোমার কী অবস্থা বলো?

-তুমি তাহলে সব করেছো? আহিয়া তোমাকেও আমি ছাড়বো না। একদম তাহিয়ার মতো অবস্থা করবো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে