হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-২৯

0
705

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২৯|
#শার্লিন_হাসান

এরই মাঝে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর আসে ভেতরে। তাকে দেখে জায়ানের গলা শুকিয়ে আসে। তার মনে হচ্ছে আর বাঁচা হবে না এই দফায়! মূহুর্তে শরীর ঘামতে শুরু করে জায়ানের। তখন আবার নাজিয়া নিচে আসছিলো। জায়ান নাজিয়ার দিকে একনজর তাকায়।

তখন ইন্সপেক্টর বলেন,
-জায়ান খানকে গ্রেফতার করা হবে।

সীতারা আহম্মেদ বলেন,
-টাকা চাই তো আপনাদের? কত টাকা চাই সেটা বলুন! এইসব কিছু ধামাচাপা দিয়ে দিন।

আশেপাশে খেয়াল না করে কথাটা বলে সীতারা আহম্মেদ। তিয়াশ খান এবং তাসরিফ খান তাকিয়ে আছে তার দিকে। সেসবে ভ্রুক্ষেপহীন সীতারা আহম্মেদ। তখন নাজিয়া এসে বলে,
-কী হয়েছে?

-কী আর হবে! আমার গুনধর ছেলে যা করার করে নিয়েছে। এখন খান পরিবারের সন্মান ধূলোয় মিশাবে।

তাসরিফ খান কথাটা বলেন। তখন তিয়াশ খান বলেন,
-সব ক্লিয়ার জানতে চাই। ইন্সপেক্টর আপনি যা করতে এসেছেন তাই করুন! প্রয়োজনে সীতারা আহম্মেদকেও গ্রেফতার করুন।

তিয়াশ খানের কথা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সীতারা আহম্মেদ। আর বাক্যব্যায় না করে কয়েকজন পুলিশ অফিসার আসে। জায়ানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। সীতারা আহম্মেদ সোফায় বসে পড়েন। তিয়াশ খান চেঁচিয়ে বলেন,

-তোর মতো বেয়া’দব,লোভীকে বিয়ে না করলেই আমার ভালো হতো।

তিয়াশ খানের কথার জবাবে সীতারা আহম্মেদ বলেন,

-যেটা জানো না সেটা নিয়ে কথা বাড়িয়ো না তিয়াশ।

-আচ্ছা! দুনিয়ার সব তুমি একাই বুঝো।

-এসব না করে সব ধামাচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করো। নাহলে কোম্পানি লাটে উঠবে। এই যে এতো টাকা পয়সা কিছুই থাকবে না তখন।

তাসরিফ খান বলেন,
-আমাদের বিজন্যাস ঠিকই আছে। তুমি আর জায়ান মিলে কী কারসাজি করেছো সব মিডিয়ার লোক,পুলিশ সামনে আনবে। খুব তো লালবাতির গাড়ী,সিকিউরিটি নিয়ে চলাফেরা করো। টাকা পয়সা উড়াও এবার সবাই জানুক সব টাকা পয়সা কোথা থেকে আসে। যা হওয়ার তুমি আর জায়ান বুঝে নিবা। আমায় আর তিয়াশকে এসবে টানবে না। জেলে পঁচে মরো নাহয় গর্তে! আমাদের ডাকবে না।

কথাটা বলে তাসরিফ খান বেড়িয়ে পড়েন। তিয়াশ খান সীতারা আহম্মেদের চোখের সামনে আঙুল দেখিয়ে বলেন,
-তোর সব কৃতকর্ম এবার ফাঁস হবে! সব জেনেছি আমি দেখ আমি বলার আগে কেউ মিডিয়া,পুলিশকে এসব বলে দিয়েছে।

তিয়াশ খান নিজেও বেড়িয়ে পড়েন। সীতারা আহম্মেদ সোফায় বসে রাগে ফুঁসছে। সুহাসিনী সেসবে কান দেয়নি সে তার কাজে চলে যায়। বাড়ী জুড়ে শুধু সীতারা আহম্মেদ আর নাজিয়া।

নাজিয়া চায়ের কাপ নিয়ে সীতারা আহম্মেদের সামনের সোফায় বসতে,বসতে বলে,

-সত্য কখনো গোপন থাকে না।

-কাটা গায়ে লবণের ছিটা দিতে শিখে গেছো দেখছি।

-সময়ের সাথে সব শিখতে হয়।

-তুমি আমার মেয়ে।

-আর তোমায় মা বলতেও আমার ঘৃণা হয়।

-নাজিয়া!

চিৎকার করে বলে সীতারা আহম্মেদ। নাজিয়াও চেঁচিয়ে বলে,

-লজ্জা,আত্মসন্মান থাকলে আর আমার সাথে চেঁচাতে না। পারলে নিজের দোষ ঢেকে দেখাও! অবশ্য পারবে কীভাবে তোমার যা পা’প আর দোষ কোনটা রেখে কোনটা আড়াল করবে?

-এসবের পেছনে তুই ছিলি তাইনা? আমারি ভুল ছিলো তোকে এতো সাদাসিধা ভেবে ছেড়ে দেওয়াটা।

-তা কী করতে আমায়?

-বাংলাদেশ থেকে দূরে পাঠিয়ে দিতাম।

-তাতে কী? সত্য কখনো কী গোপন থাকে?

-অবশ্যই থাকে! আমারটা ছিলো।

-হাস্যকর!

-তোর কী মনে হয় আমি কাঁচা প্লেয়ার? তাহিয়াকে আমি মেরেছি সেটা একটা কাকপক্ষী, এমনকি আহিয়াও জানে না আর না নিবরাস জানে!

-লজ্জা করে না?

-রুমে যাও!

-জানতে চাইনি আমি। আমার ভিসা পাসপোর্ট রেডি করে দেও আমি বিডি থেকে চলে যাবো। তোমার শাস্তি,মৃ’ত্যু যন্ত্রণা দেখার ইচ্ছে আমার নেই।

কথাটা বলে নাজিয়া উঠে চলে আসে। সীতারা আহম্মেদ বসে,বসে নতুন পরিকল্পনা করছেন। জায়ানকে ছাড়িয়ে আনতে পারলেই হলো! আর এসব ধামাচাপা দেওয়া তেমন ব্যপার না। থানায় টাকা দিয়ে মুখ অফ আর মিডিয়া! সেখানেও কয়টাকে থ্রেট আর বাকী গুলোকে টাকা। কিন্তু নিবরাস করবে জামেলা।

-এই নিবরাস টাকেই মে’রে দেই। তাহলেই তো সব সমস্যার সমাধান।

যেই ভাবা সেই কাজ! সীতারা আহম্মেদ ফোন হাতে, গাড়ী নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।

******

আনায়াকে ভার্সিটিতে নিবরাস ড্রপ করে দিয়ে গেছে। আনায়া আজকে একটু বেশীই খুশি! হুটহাট মনটা তার বেশ ভালো। সবচেয়ে বড় কথা নিবরাস তার পাশে থাকলে তার সবই ভালো যায়। মাঝেমধ্যে শুধু মুড সুয়িং টা ভিলেন হয়।

ক্লাস শেষ করে মারিয়ার সাথে অনেকক্ষণ কথাবার্তা বলে আনায়া রাস্তায় দাঁড়ায়। গাড়ী ফেলে চলে আসবে! এমন সময় একটা কার এসে দাঁড়ায় তার সামনে। আনায়া উঁকি মারতে একজন মধ্যবয়স্ক লোক বলে,

-স্যার পাঠিয়ে দিয়েছে গাড়ী।

-আপনাকে তো চিনলাম না! এর আগেও কখনো দেখিনি।

-চিনবেন না ম্যাম! আমি স্যারের পরিচিতই তবে কয়েকমাস ঢাকায় ছিলাম সেজন্য আমায় দেখেননি আপনি।

আনায়ার ইতস্থবোধ হয়। তখন ড্রাইভার বলে,

-স্যার আসতো ওনার কাজ পড়েছে সেজন্য আমায় বলেছে আপনায় নিয়ে যেতে।

-ওহ আচ্ছা আগে বলবেন তো!

আনায়া পেছনে উঠে বসে পড়ে। ড্রাইভার গাড়ী স্টার্ট দিয়ে কিছুটা সামনে এসে গাড়ী থামায়। আনায়া প্রশ্ন করে,

-গাড়ী থামালেন কেন?

-আসলে ম্যাম একটু বসুন আমার পানির তৃষ্ণা পেয়েছে।

-গাড়ীতে পানি নেই?

-না! সামনের দোকান থেকে নিয়ে আসছি।

কথাটা বলে ড্রাইভার গাড়ী থেকে নেমে পড়ে।আনায়া ও আর কথা বাড়ায়না। তখন কোথা থেকে দু’টো ছেলে এসে একজন ড্রাইভিং সীটে আরেকজন আনায়ার পাশে বসে পড়ে। আনায়া কিছু বলার আগে তাকে ক্লোরোফোম দিয়ে অজ্ঞান করে দেয়। গাড়ী নিয়ে তারা চলে যায় তাঁদের গন্তব্যের উদ্দেশে।

******

নিবরাস ভার্সিটিতে এসে আনায়াকে পায় না। তার একটু লেইট হয়ে যায়। ভেবেছে আনায়া হয়ত চলে গেছে রিকশায় করে। নিবরাস ও গাড়ী নিয়ে বাড়ীতে চলে আসে। মরিয়ম নওয়াজকে আনায়ার কথা জিজ্ঞেস করলে জানতে পারে আনায়া এখনো ফিরেনি। নিবরাস ভেবেছে তার বাড়ী চলে গেছে! কিন্তু আজকে আনায়ার মন মেজাজ ভালো ছিলো। রাগ করে তো যাবে না। নিবরাস চিন্তিত হয়ে জিয়াউর রহমানকে কল করলে সে জানায় সে অফিসে সঠিক জানে না। নিবরাস আনায়ার ফোনে কল করে। রিং হয় তবে কেউ রিসিভ করেনি।

কিছুক্ষণ এদিকওদিক খোঁজ করার পর নিবরাস বেড়িয়ে পড়ে আনায়াদের বাড়ীর উদ্দেশ্য। খুব দ্রুত সেখানে পৌঁছালে দেখে বাড়ীর মেইনডোরে তালা জুলানো! দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলে জানায় কেউ আসেনি।

পরাগ,রোহিত তারা খোঁজ খবর চালাচ্ছে। থানায় ইনফর্ম করে দিয়েছে। আরো ঘন্টা তিনেক পর আনায়ার ফোনে কল দেয়। এবার কলই ঢুকছে না।

নিবরাস চিন্তিত হয়ে পড়ে! সে যে চাল চেলেছে সেটায় না নিজেই গুটি হয়ে বসে পড়ে। কিন্তু কীভাবে সম্ভব? সে তো সব আড়ালে করেছে কেউই জানে না এসবের পেছনে কে আছে! নাজিয়া জানবে কিন্তু সে কাউকে বলবে না।

নিবরাসের মাথা কাজ করছে না। সীটে হেলান দিয়ে বসে আছে। তার সামনে ড্রাইভারের সাথে রোহিত বসে আছে। নিবরাসকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে রেহিত বলে,

-স্যার কিছু ভাবুন? আমরা আর কোথায় খোঁজ করবো আর কাকে সন্দেহ করবো?

-পাঁচ ঘন্টা হয়ে গেছে আনায়া নিখোঁজ! আমার মাথা কাজ করছে না।

-হার্ট কাজ করে তো স্যার?

-সেটাও বন্ধ করে দিচ্ছে আস্তে,আস্তে।

-ডক্টর ডাকবো স্যার?

-না তোমার ম্যামকে ডেকে আনো প্লিজ ও ছাড়া কেউই আমার অসুখ ভালো করতে পারবে না।

******

নিউজ হচ্ছে। এমপির বউ নিখোঁজ! পাঁচঘন্টা হলো তার খোঁজ মিলছে না। ব্যপারটা খুব তাড়াতাড়ি চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।

নাজিয়া কানেও খবরটা আসে। সে আর দেরী করেনি তার মায়ের খোঁজে বেড়িয়ে পড়ে। তার মায়ই একমাত্র আনায়ার খোঁজ দিতে পারবে। বাড়ীতে সে ছাড়া কেউই নেই। সবার ফিরতে রাত হবে! নাজিয়া নিজেও রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়ে তার মায়ের উদ্দেশ্য।

নিবরাসের সাথে একবার কথা হয়েছে। অনেকটা চাপে আছে সে! নাজিয়া সিএনজিতে বসে ভাবছে কে হতে পারে?

-জায়ান তো জেলে! আর সীতারা আহম্মেদ কখনো আনায়ার ক্ষতি করবে না। তাহলে শামিম সরদার? সে তো এসবে আপাতত নেই! কারণ যা করার জায়ান করবে তারপর সে তার এমপি হওয়ার শখ পূরণ করবে কোন ভাবে। সেই হিসাবে নিবরাসের উপর অ্যাটাক হওয়ার কথা! কিন্তু না সম্পূর্ণ বিপরীত হয়ে গেলো। তাহলে কী আহিয়া? তার ক্ষোভ নিবরাসের উপর। আনায়ার উপর না! তাহলে আনায়া মাঝখান দিয়ে নিখোঁজ হলো কেন?

নাজিয়া পুনরায় নিবরাসকে কল করে বলে ভার্সিটির গেটের কাছের সিসিটিভি ফুটেজ চেক দিয়ে। যেই,যেই রাস্তা দিয়ে গাড়ী গিয়েছে সেই রাস্তা,গাড়ী নাম্বার লোকেশন ট্র্যাকিং করতে।

নাজিয়ার কথায় নিবরাসের জেনো হুশ ফিরে আসে। আর দেরী না করে সিসিটিভি ফুটেজ চেক দিতে বলে। সেখানে দেখা যায় সাদা রংয়ের কার এসেছিলো। যেখানে আনায়া কিছু কথা বলছিলো ড্রাইভারের সাথে। গাড়ীর নাম্বার তেমন বুঝা যায়নি। তবে যতটুকু বুঝা যায় সেটা দিয়ে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছে।

নিবরাস নাজিয়াকে পুনরায় কল করতে তার ফোনেও রিং হয় কেউ রিসিভ করে না। নিবরাস ঘাবড়ে যায়! নাজিয়ার আবার কী হলো?

অনবরত কল দেওয়ার পর ফোন সুইচ অফ দেখায়। আনায়ারটা যা,যা। নাজিয়ার তো কিছুই জানলো না নিবরাস। কোথায় যাচ্ছে,কোন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে কিছুই জানে না সে।

এই মূহুর্তে নিবরাসের নিজেকে অনেকটা পা’গল, পাগ’ল লাগছে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে