হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-২৮

0
656

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২৮|
#শার্লিন_হাসান

শপিংমল থেকে তড়িঘড়ি বের হয়ে দরজার সামনে আসতে আবার কারোর সাথে ধাক্কা লাগে তার। ভাগ্যিস মাস্ক পড়া! সামনে থাকা ব্যক্তি সীতারা আহম্মেদ। তাহিয়া নিজের ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে আসে কোনরকম।

সীতারা আহম্মেদ এসেছে জায়ানের খোঁজে। জানে এখন এখানেই তাকে পাওয়া যাবে। সীতারা আহম্মেদ আইসক্রিমের দোকানে ঢুকতে জায়ান মেয়েটাকে বিদায় দিয়ে দেয়। সীতারা আহম্মেদ সামনের চেয়ারে বসতে,বসতে বলে,

-এসব মেয়েবাজি আড্ডা ওফ দিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দেও জায়ান।

-তোমার মেয়েকে দিবা কাকীমা?

-বামন হয়ে চাঁদ ধরার স্বপ্ন বাদ দাও জায়ান।

-তোমার মেয়ে কী এমন যে জায়ান তাকে ডিজার্ভ করে না?

-সেটা সময় মতো বুঝবে!

-একদিন খে!য়ে দিলে বুঝবা শাশুমা। অবশ্য আমার নেক্সট টার্গেট তোমায় মেয়ে নাজিয়া। ওর এক্সাম শেষ হোক পরের দিন ওকে নিয়ে আমি হাওয়া! অনেক দিনে স্বপ্ন তাকে ছুঁয়ে দেখা।

মনে,মনে কথাগুলো বলে জায়ান। সীতারা আহম্মেদ নিজের পছন্দের আইসক্রিম অর্ডার দেয়। জায়ান ফোনে ব্যস্ত!

*******

এরই মাঝে কেটে যায় তিনমাস। নাজিয়ার এক্সাম শেষ। সে খান বাড়ীতে থাকে। ভাবছে দেশের বাইরে চলে যাবে পড়াশোনার জন্যই! সেখান থেকে গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করে একবারে ছয় সাত বছর পর দেশে ফিরবে। আর না পরিবারের কিছুতে ইন্টারফেয়ার করবে সে।

নিবরাস এখনে কিছুই পরিষ্কার বলছে না তাকে। শুধু বলছে এটা করো এখানে লোক আছে। ওটা করে নেও! এই প্রমাণ আমায় দাও!

বিকেলটা বেলকনিতে কফির মগ নিয়েই কাটে নাজিয়ার। মাগরিবের আজানের একটু পর জায়ান আসে তার রুমে। নাজিয়া তাকে দেখেও না দেখার ভাণ করে। তখন জায়ান সোফায় বসতে,বসতে বলে,

-আয়াত পাখি চলো ট্যুরে যাি আমরা।

-তোমার মন চাইলে যাও।

-আরে চলো! কাকীমাকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার।

-ক্যারেক্টারলেস কারোর সাথে আমি কোথাও যাই না ভাইয়া।

-আমার ক্যারেক্টার একবারে পরিষ্কার সাদা কাপড়ে মোড়ানো আয়াত। তুমি চাইলে একটু আধটু ধূলা বালি ছোঁয়াতে পারি।

-বেশী ফটফটর করা বন্ধ কর। জায়গা মতো একটা কিক মারলে না তোর ভবিষ্যত একবারে অন্ধকার।

-এতো তেজ কোথা থেকে আসে তোর?

-তোর এতো কারেন্ট শরীরে? আয় আমার ফোনটা একটু চার্জ দিয়ে তোর কারেন্ট কমাবো।

-মুখ সামলে!

-তোর মুখ সামলে রাখ! শা*লা আমার মুখ একবার ছুটলে গর্ত থেকে কেঁচো না এমনকি সাপ ও না একবারে অ্যানাকোন্ডা বের করে নিয়ে আসবো।

-আচ্ছা আমি গেলাম। স্যরি! কাউকে কিছু বলো না প্লিজ! আমি মজা করেছি।

নাজিয়া সেসবে কান দেয়নি। জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,

-গেট লস্ট! নেক্সট টাইম আমার রুমে আসতে হলে পারমিশন নিয়ে আসবে।

-আচ্ছা।

জায়ান মাথা নিচু করে চলে আসে। নাজিয়া রাগে শরীর জ্বলছে! সে খাটের উপর বসে আছে। জায়ানকে দেখেই বুঝে গিয়েছে বাজে মতলব আছে।

জায়ান রুমে এসে খাটে একটা লা’থি মারে। যার ফল স্বরুপ নিজের পায়েই ব্যথা পায় খাটের কিছুই হয়না। তাতেও বেশ রেগে যায় জায়ান। নাজিয়ার কথাগুলো তার মস্তিষ্কের প্রতিটা নিউরনে,নিুরনে গেঁথে গেছে। এই মেয়ে এতোটা স্ট্রং কেনো?

-ওর পার্সোনালিটিতে যে কেউ প্রেমে পড়বে! কিন্তু যে কেউটা আসার আগে একে একবার হলেও আমার বেডে চাই। একবারে নিষ্পাপ একটা ফুল!

জায়ান হাসে! বিকট শব্দ করে হাসে। নাজিয়ার একটা ছবি বের করে তার সর্বাঙ্গ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে জায়ান। তাতে জেনো তার লোভ সামলাতে পারছেনা।

*******

তারিশা এসেছে বাড়ীতে অনেকদিন পর। সবার সাথেই মোটামুটি কথা হয়েছে কিন্তু নিবরাসের আশেপাশে ও সে ঘেঁষছে না। নিবরাসকে দেখলে সে নিজে দূরত্ব বজায় রাখেছ। ব্যপারটা আনায়ার চোখে আসে। কিন্তু ঠাহর করতে পারে না সে। তারিশার মতো ছ্যচড়া এতোটা ভালো হলো কী করে?

আনায়া নিবরাসের কফির মগ নিয়ে তার পার্সোনাল রুমের দিকে যায়। তার পেছন দিয়ে তারিশা আসে। আনায়াকে দেখে বলে,

-কোথায় যাচ্ছো আনায়া?

-কফি দিতে হবু বরকে।

-ওহ যাও!

-উমম মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে চিন্তিত তুমি।

-হ্যাঁ,হ্যাঁ নিবরাস ভাই।

-কী করেছে নিবরাস?

-বারো লাখ টাকা চেয়েছে।

-কেন?

-গাড়… না কিছু না। প্লিজ তুমি তোমার রাস্তায় যাও।

আনায়া মুচকি হেসে চলে আসে। তারিশা নিজের আঙুল নিজে খুঁটছে। নিবরাসের সামনে পড়া মানে টাকা দেও নাহয় বলবে কিডনি একটা বিক্রি করে দেও। তারিশা মনে হচ্ছে শামিম সরদারের কথায় সেদিন সায় না দিলেই হতো! এদিকে নিবরাস সব জানে তাকে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিলে তার যাওয়ার মতো জায়গা নেই। বাবা মায়ের দায়িত্ব মামা মামি পালন করে এসেছে। তার উচিত হয়নি তাদের নূন খেয়ে তাদের পিঠে চু’রি ঢুকানো।

আনায়া নিবরাসকে কফির মগ দিয়ে সামনের সোফায় বসে পড়ে। নিবরাস আনায়ার দিকে এক নজর তাকিয়ে বলে,

-মহারানী আজকাল একটু বেশীই খুশি!

-হ্যাঁ তারিশাকে কী এমন বলেছেন যে ভয়ে আপনার থেকে দূরত্ব বজায় রাখে।

-আরে ওর জন্যই তো শামিম সরদার আমার বারো লাখ টাকার জান প্রাণ উড়িয়ে দিলো। এখন বলেছি বারো লাখ টাকা ও দিতে। আর টাকা না দিতে পারলে কিডনি একটা বিক্রি করে দিতে।

-আপনি ও না! কিডনি বিক্রি করার কথা কেউ বলে?

-আরে ওকে ভয় দেখাই! ওকে দেখলেই বলবো আমার বারো লাখ টাকা দিবি নাকী তোর সত্যি সবার সামনে বলে দিবো।

নিবরাসের কথায় আনায়ার হাসি জেনো থামছে না।আজকাল তারিশার চিন্তিত মুখটা দেখতে জোশ লাগছে। আগে তো সারাক্ষণ নিবরাসের পেছনে পড়ে থাকতো এখন নিবরাসকে দেখলে পালিয়ে বেড়ায়।

আনায়া উঠে কিচেনে যায়। কাজের বুয়ারা রাতের রান্না করছে। রান্না প্রায় শেষ পর্যায়। আনায়া হাতে,হাতে কিছু কাজ করে দেয়।

রাতের ডিনার শেষে রুমে চলে আসে আনায়া,নিবরাস। তারিশা টেবিলে বসেও একটা টু শব্দ করেনি আর না নিবরাসের দিকে একবারের জন্যও তাকিয়েছে। আনায়া ভাবছে এই মেডিসিন কয়েকমাস আগে প্রয়োগ করলেই হতো! নিবরাস ও আফসোসের স্বরে বলে,

-হ্যাঁ,হ্যাঁ! ওর জন্যই তো ঝগড়া হতো আমাদের। তুমিও দূরে,দূরে থাকতা। এতোদিন এটা প্রয়োগ করলে আমি চার পাঁচ বাচ্চার বাবা হয়ে যেতাম।

-বাচ্চা তো প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যায় যে বছর না যেতে পাঁচটার বাবা হতেন।

-এভাবে বলো কেন? তুমি চাইলে বছরে পাঁচটা না আটটার বাবাও আমায় বানাতে পারো।

-আপনার যত আজাইরা কথা!

-আচ্ছা আসো তোমায় আদর করি!

-অনেক আদর হয়েছে জামাই। এবার প্লিজ ঘুমাই!

-কী বউ তুমি?

-এহহ্!

আনায়া মুখ বাকায়। নিবরাস নিঃশব্দে নিজের অধর আনায়ার কপালে ঠেকায়। রোজকার মতো নিবরাসের বুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ে আনায়া।

*****

পরের দিন সকালে খান বাড়ীর সবাই মিলে টিভিতে খবর দেখছে আর চা পান করছে। জায়ান ও তাঁদের সাথে বসা! এরই মাঝে টিভির চ্যানেলে নিউজ আসে,

-‘রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলার বিশিষ্ট বিজন্যাসম্যান তাসরিফ খান এবং তিয়াশ খান তাদের পরিবারের একমাত্র ছেলে জায়ান খান! যে তাঁদের গৃহকর্মীকে ধ’র্ষণ করে দিনের পর দিন! ব্যপারটা খান পরিবারের কেউই জানতো না! জায়ান নিজে গৃহকর্মী বন্যাকে হুমকি দিতো কাউকে কিছু বললে তাকে মে’রে ফেলা হবে। সেই সাথে খানদের দু’টো ইন্ডাস্ট্রির একটা ইন্ডাস্ট্রি বছরের আয়-ব্যায় শতকরা হিসেব অনুযায়ী পরিমাণের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী। এর পেছনেও পুলিশ সন্দেহ পোষণ করছে। এছাড়া বন্যার সাথে করা অনিয়ম, অবিচা’রের সমস্ত প্রমাণ পুলিশের কাছে আছে।’

নিউজ দেখে জায়ানের চায়ের কাপ আপনাআপনি হাত থেকে পড়ে যায়। সীতারা আহম্মেদ চুমুক দিতে গিয়েও দেননি। বাকীরাও শকড! বিশেষ করে তিয়াস খান, তাসরিফ খাম্ন তারা চা রেখে জায়ানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

এরই মাঝে এলজন পুলিশ ইন্সপেক্টর আসে ভেতরে। তাকে দেখে জায়ানের গলা শুকিয়ে আসে। তার মনে হচ্ছে আর বাঁচা হবে না এই দফায়! মূহুর্তে শরীর ঘামতে শুরু করে জায়ানের। তখন আবার নাজিয়া নিচে আসছিলো। জায়ান নাজিয়ার দিকে একনজর তাকায়।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে