হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-২৭

0
631

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২৭|
#শার্লিন_হাসান

বা’জে স্বপ্ন দেখে জায়ান ঘুম থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠে। তড়িঘড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দেয়। রাত তখন আড়াইটা! জায়ানের মনে ভয় ঢুকে যায়। সে ফাঁসলে সীতারা আহম্মেদকেও ছাড়বে না। একমাত্র সীতারা আহম্মেদ যে তার সব সিক্রেট জানে এছাড়া বাইরের এলটা কাকপক্ষী ও না। কিন্তু সীতারা আহম্মেদ এটা ককনো কাউকে বলবে না কারণ তার সিক্রেট জায়ান জানে।

চিন্তা একদিকে রেখে জায়ান পুনরায় শুয়ে পড়ে। এবং নিশ্চিন্তে ঘুম দেয়।

পরের দিন সকালে আহিয়া নাস্তা করে তার বেলকনিতে বসে। তাহিয়াকে বেশ মনে পড়ছে তার। নিবরাসকে এই মূহুর্তে খু’ন করতে মন চাইছে তার। শুধু নিবরাসের জন্যই তার বোনের এই অবস্থা। খুব করে মন চাচ্ছে বোনের স্মৃতিগুলো বিচরণ করতে। তাই তো উঠে মেমোরি কার্ডটা নেয় আহিয়া। ফোনে ঢুকিয়ে মেমোরি কার্ড সে চেক করতে থাকে। হঠাত কয়েকটা ভিডিও তার সামনে আসে। আহিয়া আর দেরী না করে ভিডিও ওপেন করে। যেটার একটা ভিডিও এরকম ছিলো,

-সীতারা আহম্মেদ কয়েকজন ভদ্রলোকের সাথে বসে মিটিং করছে। তাঁদের কথাবার্তা হচ্ছিলো পরের মাসে কয়টা বাচ্চা
জোগাড় করতে পারবে আর তাঁদের পাচার করতে পারবে। সীতারা আহম্মেদের এমন কথা আহিয়া যেন হতভম্ব হয়ে যায়। তার ফুফি আর যাই হোক এরকম করতে পারে না। কিছুতেই না! পরের ভিডিওটা দেখে যেখানে জায়ানের সাথে বসে কথা বলছে।

-নিবরাস কোন ভাবে জেনে গিয়েছে আমাদের এই বিজন্যাস এর ব্যপারে। আমার কী মনে হয় জানো জায়ান? কেউ আমাদের পেছনে পড়েছে। ছদ্মবেশে কেউ প্রমাণ জোগাড় করছে।

-কিন্তু সেটা কে? আমার কাউকে সন্দেহ হয় না। কারণ এমন কেউ নেই আমাদের পেছনে পড়বে। নিবরাস তার রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত!

সীতারা আহম্মেদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
-নাজিয়া?

-আরে না! তুমি কী যে বলো? ওর এসব দেখার সৃয় আছে বুঝি? ক্লাস নাইনে পড়া মেয়ে এসবের কী বুঝবে?

-আমার মেয়েকে ছোট ভেবে ভুল করো না। ওর বুদ্ধি তোমাকে ছাড়িয়ে গেছে।

-সে যাই হোক আমাদের পেছনে ও পড়বে না।

-তাহলে আহিয়া?

-ও কোন দুঃখে পড়বে? ও নিজের লাইপ নিয়ে ব্যস্ত। ওকে দেখে এসব মনে হয়না।

-সে যাই হোক! যেই প্রমাণ জোগাড় করুক আমার হাত থেকে বেঁচে প্রমাণ নিবরাস অব্দি যাবে না। তাইপেন আর এসিডে নিজেকে বিসর্জন দিতে হবে।

-হুহ! জানি।

-আমার কী মনে হয় জানো?

-কী?

-এই তাহিয়া নিবরাসকে পছন্দ করে। ভালোবাসে! সে নিশ্চয়ই নিবরাসের ক্ষতি চাইবে না। উল্টো নিবরাসের কাজকে সহজ করতে চাইবে। এই ধরে সমাজ থেকে আমাদের দূর করা নিবরাসের লক্ষ্য ! আর তাহিয়া সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিবরাসের মনে জায়গা করে নিবে।

-তাহলে তাহিয়া?

-হিসাবে তো তাই বলে!

-তাহলে আরকী? কয়েকদিন খোঁজ চালাও! তারপর যদি সত্যি হয় রাস্তা থেকে সরিয়ে দাও।

-খোঁজ চালানোর কিছু হয়নি। ওই আসল কালপিট যে আমাদের ধরিয়ে দিতে চায়। আমি ভাবছি কী জানো?

-কী?

-নিবরাসের সাথে তাহিয়ার দেখা হবে এরপর তাকে কিডন্যাপ করে খু’ন করবো যাতে করে দোষটা নিবরাসের উপর পড়ে। এক ঢিলে দুই পাখি মারবো।

-আহিয়া?

-তাকে সামলানোর দায়িত্ব আমার।

তারপর আর কোন ভিডিও হয়নি এটায়। আহিয়ার হাত থেকে ফোনটা আপনাআপনি খাটের উপর পড়ে যায়। দুচোখ বেয়ে অশ্রু পড়ছে। অথচ সে এতোদিন নিবরাসকে মারার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু নিবরাস এসবের কিছুতেই নেই! আহিয়া নিজেকে শক্ত করে নেয়। সে সিদ্ধান্ত নেয় সেই এর শেষ দেখে ছাড়বে। নিবরাস,তাহিয়া,আনায়া,নাজিয়া ওরা পরে। আহিয়া নিজে সবার সামনে সব নিয়ে আসবে যেহেতু তার কাছে কিছু প্রমাণ আছে। বিশেষ করে তার বোনের খু’নের প্লানিং করা ভিডিও। কিন্তু এটা তো পুরো যৌক্তিক না। কারণ এই ভিডিওর সাপেক্ষে এই কথাটাও আসে যে,
– আসল কালপিটকে ধরা যায়নি। হয়ত নিবরাস ও খুনটা করেছে। নাহয় সীতারা আহম্মেদ! প্লানিং করেছে বলে যে খু’ন করেছে এমনটাও না।হয়ত নিবরাস কোন বাবে জেনে খু’ন করে গেমটাকে পুরো ঘুরিয়ে দিয়েছে। এটাও প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু আহিয়া বিশ্বাস করে নিবরাস এসবে জড়িত না উল্টো তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

মেমোরি কার্ডটা খুব যত্ন সহকারে রাখে আহিয়া। এখন আরো কিছু প্রমাণ চাই তার। তার বোনকে যেখানে খু’ন করা হয়েচিলো সেই স্থান,সেই সময়ের গার্ড বা লোক তাঁদের কারোর খোঁজ চাই তার। কিন্তু কীভাবে? একবছর আগের জিনিস এখন কীভাবে জানবে? যেটা চার দেওয়ালে সমাপ্তি ঘোষণা করে হয়েছিলো।

আহিয়ার মাথা কাজ করছে না। শামিম সরদার এই ব্যপারে কিছু জানে? মনে হয়না জানে! সে তো শুধু নিবরাসের জায়গায় বসতে চায় শিশু পাচার করতে না।

*****

আনায়া ভার্সিটি এসেছে আজকে। মারিয়ার সাথে খুনসুটিতে মেতে উঠেছে। এই তো নিবরাসকে নিয়ে একের পর এক কথা খোঁচাচ্ছে মারিয়া। আনায়াও বেশ মজা নিচ্ছে।

ক্লাস শেষ করে তারা বের হয় ভার্সিটি থেকে। গেট পেড়িয়ে আসতে দেখে নিবরাসের গাড়ী দাঁড় করানো। তবে সিকিউরিটি গার্ড আছে তার সাথে। অনেক ভীড় জমেছে জায়গাটায়। আনায়া যাবে কী যাবে না ভাবছে। এতো মানুষের ভীড়ে না জানি চাপা পড়ে।

এতোসব ভাবনার মাঝে মারিয়া তাকে ধাক্কা দেয়।

-যা তোর মাইন চলে এসেছে। অন্য কারোর সাথে সাইন করার আগে গ্রেপ্তার করে বাড়ী নিয়ে যা। গ্রেপ্তার টা হাত কড়া পড়ি না। ঠোঁটকরা পড়িয়ে।

-ঠোঁট কড়া কী বান্ধুবী?

-যেটা তোমার বর তোমায় উঠতে বসতে দেয়। আইমিন চুমু!

-এতো গুলো মানুষের সামনে চুমু খাবো?

-তোর জামাইয়ের আবার লজ্জা কম! সে এসব মাইন্ডে নিবে না গিয়ে খেয়ে নে।

-ছিঃ,ছিঃ,ছিঃ! আসতাগফিরুল্লাহ দিনে দুপুরে পাবলিক প্লেসে আমি রোমান্স করবো? আমাদের এতো সুন্দর বেড রুম থাকতে আমি চাইনা গাড়ীতে কলঙ্কের দাগ লাগাই।

-গাড়ীতে বসেও তো রোমান্স চলে তোদের।

-সেটা লোকচক্ষুর আড়ালে।

-সে সব বুঝলাম খালামনি হবো কবে?

-এখন না! আরো কয়েকবছর যাক।

-দেখা যাবে।

-যাহ্! এভাবে আমাকে না বলে নিজে বিয়ে করে আমায় খালামনি বানা।

-তোর দেবর থাকলে ভেবে দেখতাম।

-আমার জামাইয়ের কয়েকটা ভাই আছে। রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।

-তোর জামাইয়ের চামচা তারা!

-তোর মাথা।

-সমস্যা নেই আমি একজনকে এনে দেবো আপনার জন্য। হাই মিস মারিয়া আপু।

নিবরাসের কথায় আনায়া,মারিয়া দু’জন গাড় ঘুরিয়ে তাকায়। নিবরাস হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। আনায়ার কথা নেই তার সাথে। দেখা করতে আসে না এই বদলো কটা আর না রাত বিরাতে এসে সারপ্রাইজ দেয়।

মারিয়া ও হাসিমুখে কুশল বিনিময় করে নেয় নিবরাসের সাথে। অতঃপর বিদায় নিয়ে ওদের দু’জনকে একা ছেড়ে দেয়।

নিবরাস আনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-মুখটা অমন শুকনো লাগছে কেন?

-ও..ওই এমনিতে।

-আচ্ছা চলো কোথাও খেতে যাই।

-যাবো না। আপনি চলে যান। আমি বাড়ী ফিরবো!

-আমি না দিলে এক চুল পরিমান ও তুমি নড়তে পারবে না।

-এতোদিন কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিলেন?

-কাজে ছিলাম।

-ভালো!

-আচ্ছা চলো গাড়ীতে বসো! লোক দেখছে আবার সাংবাদিকরা আমার চরিত্রে কালো দাগ লাগিয়ে দিয়ে হেডলাইন করবে,
‘মোহনপুরের এমপি মুয়াম্মার নিবরাস মির্জা রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের সাথে প্রেমালাপ করে।’
শা*লারা এটা দেখবে না মেয়েটা তার কী হয়! এমনিতে একবার মেয়েবাদী কেসে আমি ফেঁসে গিয়েছিলাম। এবার বউবাদী কেসে ফাঁসতে চাইনা।

-আমার লয়্যাল বরটা!

নিবরাস মুচকি হাসে।আ নায়া সহ গাড়ীতে গিয়ে বসে। নিবরাস নিজে ড্রাইভিং করছে। সামনে পেছনে তার গার্ডের গাড়ী। আনায়াকে গাড়ীতে নিয়ে বসলে কত রোমান্টিক কথাই সে বলে কিন্তু ড্রাইভার সেসব শোনলে লজ্জার ব্যপারস্যপার আছে। নিবরাস আবার লজ্জা পায় বেশী! সে আনায়ার বেশ লাজুক বর!

-তা আমাকে ছাড়া দিনকাল ভালোই যাচ্ছে বুঝি?

-আরে না কী যে বলেন? একদম ভালো যাচ্ছে না।

-বুঝেছি! রোমান্স করার জন্য অপেক্ষা করে আছো। চলো আজকের রাতটা ছোট্ট একটা সারপ্রাইজের আয়োজন করি তারপর নাহয়!

-মুখে লাগাম টানুন তো!

-আমি এমনই বউ!

-আচ্ছা চলুন আজকে আমাদের বাড়ীতে থাকবেন।

-না মির্জা বাড়ীতে চলো! কয়েকদিন থেকে আবার বাবার কাছে চলে যেও।

-ঠিক আছে।

নিবরাস মির্জা ভিলার দিকে গাড়ী ঘুরায়। অনেক দিন পরেই আনায়া মির্জা বাড়ীতে আসছে। মরিয়ম নওয়াজের সাথে কুশলাদি করে রুমে চলে আসে। লম্বা শাওয়ার নিয়ে নিবরাস সহ লান্স করে নেয়।

আনায়া লম্বা ঘুম দেয়। নিবরাস ল্যাপটপের সামনে বসে কিছু কাজ করছে।

******
তাহিয়া বিকেলে ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে নেয়। সে একটু বাজারে যাবে দরকারে। এই সন্ধ্যা বেলাটা তার কাছে সেভ মনে হয়। কেউই আসবে না তেমন! তার ও ধরা খাওয়ার চান্স নেই। তবে মাস্ক মুখ থেকে সরায় না তাহিয়া। আজকে আর মাস্ক পড়তে মন চাইলো না তার। খোলামেলা মুখেই বাজারে আসে। একটা শপিংমলে ঢুলে নিজের যাবতীয় জিনিসপত্র নিচ্ছে সে। কেনাকাটা শেষ হতে আইসক্রিমের দোকানে ঢুকতে দেখে জায়ান মেয়ে নিয়ে বসে আছে। তাহিয়া ঘুরে বেড়িয়ে আসে সেখান থেকে। তড়িঘড়ি মাস্ক পড়ে নেয়। নিবরাসের কানে এই খবর গেলে তাকে রাজশাহী ছাড়া করবে।

নিবরাসের নির্দেশ না পাওয়া অব্দি না পরিবারের কাছে যেতে পারবে না কাউকে কিছু বলতে পারবে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে