#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২৬|
#শার্লিন_হাসান
সকাল,সকাল ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে নেয় নিবরাস আনায়া সহ। আনায়া কিচেনে গিয়ে কফি বানিয়ে নিয়ে আসে নিবরাসের জন্য। পুরো বাড়ীতে তারা দুজন আর তার বাবা আছে। সে নিজের রুমে!
নিবরাস কফি শেষ করে ফোন হাতে নেয়। আনায়ার থেকে বিদায় নেয়। আবার কবে আসে ঠিক নেই। নিবরাস যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে আনায়া তার পান্জাবির কলার চেপে ধরে। নিবরাস আনায়ার দিকে তাকায়। হুটহাট এমন কিছু নিবরাসের বোধগম্য নয়।
-আমি আবার কী করলাম? এখানে তো তারিশা নেই।
-আরে সেটা না। আপনি চলে যাচ্ছেন আমার থেকে পারমিশন নিয়েছেন?
-যদি শশুর চলে আসে তাহলে সমস্যা।
-আপনি পরপুরুষ নাকী? সমস্যা হবে না। আেনাকে আমি রুলস দিয়েছিলাম সেদিন? আর আমাদের দেখা হতে অনেক লেট হবে।
-আগে বলবা তো!
নিবরাস আনায়ার কপালে চুমু খায়।
-গেলাম মহারানী। নিজের খেয়াল রেখো।
-শুনুন, তারিশার থেকে দূরত্ব বজায় রাখবেন। আর নিজের খেয়াল রাখবেন।
-হিংসুটে বউ! ও আমার কাজিন।
আনায়া চোখ গরম করে তাকায়। নিবরাস তাতে চুপসে যায়। আমতাআমতা করে বলে,
-আরে ওকে পাত্তা দেওয়ার টাইম আছে নাকী আমার? তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না।
-মনে থাকে জেনো।
নিবরাস মাথায় নাড়িয়ে বেড়িয়ে পড়ে। আনায়া নিজের রুম গুছিয়ে কিচেনের দিকে হাঁটা ধরে তার বাবার জন্য চা বানাতে।
নিবরাস বাড়ীতে এসে চেন্জ করে নেয়। আজকে পার্টি অফিসে যাবে কিছু কাজ আছে। রোহিত,পরাগকে বলে দিয়েছে।
তারিশা আজকে হোস্টেলে চলে যাবে। তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়েছে। মাইশা মিসবাহ আগামী কালকে চলে যাবে। নিবরাসের ব্যস্ততা মিসবাহকেও তেমন সময় দেয় না। সেও তার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত মামুকে কাছেই পায় না।
রুম থেকে বের হতে তারিশা সামনে পড়ে নিবরাসের। নিবরাস সেদিকে না তাকিয়ে হাঁটা শুরু করে। তখন তারিশা বলে,
-ভাইয়া একটু দরকার ছিলো।
নিবরাস থেমে বলে,
-কী দরকার?
-আমি তো হোস্টেলে চলে যাচ্ছি।
-তো?
-কিছু না!
নিবরাস বাঁকা হেসে বলে,
-আমার প্রতি মিনিটের ইমফরমেশন শামিম সরদারকে দিতে পারবে না এটাই তো? সমস্যা নেই ফোনটা দিয়ে যেও তোমার হয়ে আমি নিজেই ওকে ঘন্টায়,ঘন্টায় নিউজ দেবো।
-তুমি…
-আমার বারো লাখ টাকা তোর জন্য খোয়াতে হয়েছে। খুব সুন্দর ভাবে শামিমের লোকদের বাড়ীর পথ চিনিয়েছিলি তাই না? তাঁদের সাথে দাঁড়িয়ে গাড়ীতে বোম রেখেছিস।
তারিশা চুপসে যায়। নিবরাস কাঠখোট্টা গলায় বলে,
-সব কিছুর প্রমাণ আমার কাছে আছে। ভাবছি তোকে জেলে ঢুকিয়ে দেবো। অবশ্য আগে শামিম সরদারকে সামনে আনি। কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বের করে আনবো। আর আমার বারো লাখ টাকা বা একটা গাড়ী তোর ইচ্ছে যেটা দিতে মন চাইবে। তবে বারো লাখ টাকার ক্ষতি পূরণ তুই দিবি।
-আমার কাছে এতো টাকা নেই।
-তাহলে কিডনি আছে না? একটা বিক্রি করে দে।
-ভাইয়া..
-ডোন্ট ওয়ান্না টক। আমি যখন বলবো তখন আমার বারো লাখ টাকা রেডি রাখবি।
নিবরাস আর একমুহূর্ত ও দাঁড়ায়নি।
*******
কেটে যায় এক সপ্তাহ। তারিশা নিজের হোস্টেলে থাকে। শুক্রবার বাড়ীতে আসে আবার শনিবার চলে যায়। আনায়া মির্জা বাড়ীতে এখনো আসেনি। সে তার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। নিবরাসের সাথেও তেমন কথা হয়না। এই টুকটাক কথা ছাড়া। সে জানে তার বরটাও ব্যস্ত।
নিবরাস সন্ধ্যার দিকে আনায়াকে কল করে জানায় সে আসবে। আনায়া কিছু বলেনি! জিয়াউর রহমানকে বলে দিয়েছে নিবরাস আসবে।
সন্ধ্যায় সোফায় মুড অফ করে বসে আছে আনায়া। আজকাল তার মনটা খারাপ যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে নিজেকে অনেকটাই তুচ্ছ মনে হয়। কিছুতে আগাতে মন চায় না। কেমন লাগে নিজেও বুঝে না। একপ্রকার একাই থাকে আনায়া।
জিয়াউর রহমান ল্যাপটপের সামনে বসে আছেন। আনায়াকে বলেছেন কাজের বুয়াকে কল দিয়ে আসতে বলতে। রান্না করে দিয়ে চলে যেতে। আনায়া বারণ করে দিয়েছে। সে নিজে রান্না করতে পারবে।
সময় দেখে আনায়া উঠে পড়ে। নিবরাসের পছন্দের গরুর মাংশ রান্না করবে সে। সেবার তে তারিশা রান্না করে খাওয়ালো। মনে আসে আনায়ার। জেলার্স ফিল হচ্ছে না তার। তার মনে হচ্ছে এখন যদি তারিশা নিবরাসের সাথে লং ড্রাইভে ও যায় আনায়ার কিছু যায় আসবে না। আনমনা হয়েে অনিয়ন কাটছে আনায়া। মনোযোগ উচ্ছন্নে গেলো তার। কোনরকম রান্না চেপে রুমে গিয়ে বসে পড়ে সে। মেঝেতে থাকা কার্পেটে নিজের পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে খুঁটছে সে।
নিবরাস এসে জিয়াউর রহমানের সাথে কথাবার্তা বলে নেয়। আনায়ার রুমে আসতে দেখে আনায়া বসে আছে নিচের দিকে তাকিয়ে। নিবরাস হাসিমুখে ভেতরে প্রবেশ করে। আনায়াকে জ্বালানোর জন্য বলে,
-জানো আজকে না তারিশা বাড়ী এসেছিলো। রান্নাটাও ও-ই করেছে।
-কেমন হয়েছে রান্না?
-হ্যাঁ ভালোই। ওর রান্না সবসময় ভালোই হয়।
-ওহ!
আনায়া কোন রিয়েক্ট করেনি। নিবরাস কিছুটা অবাক হয়। চুপচাপ সোফার উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে নিবরাস। আনায়া উঠে কিচেনে যায়। নিবরাসের জন্য ঠান্ডা শরবত নিয়ে আসে।
-আনায়া তোমার মন খারাপ?
-না আমার মন খারাপ হবে কেন?
-মন খারাপের কারণের অভাব থাকে না।
-না এমনিতে ভালো লাগছে না আমার।
-চলো রাতের শহরটা ঘুরি।
-ভালো লাগছে না।
নিবরাস হাতের গ্লাসটা রেখে উঠে দাঁড়ায়। আনায়ার দিকে একনজর তাকিয়ে বলে,
-এদিকে আসো তো।
-কেন?
-মানুষ জামাইয়ের কাছে কেনো আসে?
-আপনার চুমু খাওয়ার ইচ্ছে থাকলে সেটা প্রত্যাখান করুন। নাহলে মাথা ফাটিয়ে দেবো।
-এই আমাকে দেখলে কী মনে হয় আমি তোমাকে শুধু চুমু খাবো? জড়িয়েও তো ধরতে পারি।
-আমার মজা করার মুড আসছে না। প্লিজ আমায় কিছু বলবেন না আর রুড বিহেভ করলে আমি স্যরি। কখন কী বলে বসি ঠিক নেই।
নিবরাস ঘড়ির দিকে তাকায়। দশটার উপরে বাজে। আনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-চলো ডিনার করবো।
-চলুন।
জিয়াউর রহমান সহ তারা রাতের ডিনার করে নেয়। আনায়া কিচেনে যায় কফি বানানোর জন্য। নিবরাস জিয়াউর রহমানের সাথে বসে কথা বলছে। বেশী কথা বলতে পারেনি জিয়াউর রহমানের কাজ আছে সেজন্য সে রুমে চলে যায়। নিবরাস আনায়ার কাছে যায়। তার কফি বানানো অলমোস্ট শেষ। নিবরাস যেতে আনায়া টেবিলের উপর থেকে কফির মগটা নিবরাসকে দিয়ে দেয়। নিবরাসের ভালো লাগছে না তার বউয়ের এমন এড়িয়ে চলা। চুপচাপ না বলা কথার মাঝেও অনেক কিছু লুকিয়ে থাকে। আনায়া তার বাবার কফির মগ নিয়ে চলে আসে। নিবরাস যে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে খেয়াল নেই। নিবরাস দাঁড়িয়ে আনায়ার যাওয়া দেখছে। তার মনে হচ্ছে আনায়াকে দূরে রেখে দূরত্ব তৈরী হয়ে গেলো না তো? কিছু পড়ার শব্দে নিনরাসের টনক নড়ে। কিচেন থেকে বেড়িয়ে আসতে দেখতে পায় আনায়া কফির মগের দিকে তাকিয়ে আছে। যেটা তার হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেছে। নিবরাসকে দেখে আনায়া বলে,
-ওটা ওটা আমি ভাঙিনি আমার হাত থেকে কীভাবে জেনো পড়ে গেছে।৷ ওটা আমি ভাঙিনি বিশ্বাস করুন।
-রিলেক্স এতে উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই পাখি।
আনায়া ফ্লোরেই বসে আছে। গরম কফি তার পায়ে পড়েছে সেদিকে খেয়াল নেই তার। নিবরাস বেশ অবাক হয় এতে। আনায়ার দিকে একনজর তাকিয়ে বলে,
-পায়ে কফি পড়েছে তো।
-ক..কোথায়?
-তোমার কী হয়েছে আনায়া? এমন বিহেভ কেনো করছো?
-আমার ভালো লাগছে না নিবরাস। আমি মনে হয়না বেশীদিন বাঁচবো।
-বাজে কথা ছাড়ো। তোমার মাথাটা পুরো গেছে।
-আমার নিজেকে পাগ’ল মনে হয়। প্লিজ আমাকে একটু শান্তি খুঁজে এনে দাও আর কিছু চাই না।
-আচ্ছা চলো তোমার পা তো পুড়ে গেলো মনে হয়।
আনায়া উঠে দাঁড়ায়। নিবরাসের সাথে রুমে চলে আসে সে। ওয়াশরুমে গিয়ে পা ধুয়ে খাটের উপর বসে পড়ে। নিবরাস কফি শেষ করে বলে,
-চলো তোমায় এক জায়গায় নিয়ে যাবো।
-উঁহু! যাবো না আমি।
-চলো না আমি বলেছি তো।
আনায়া উঠে দাঁড়ায়। নিবরাস সহ তারা গাড়ীতে বসে। বাড়ী থেকে বেড়িয়ে পড়ে। নিবরাস তাকে নিয়ে খোলামেলা একটা জায়গায় গাড়ী থামায়। আনায়া বাইরে নামতে মৃদু বাতাসের দেখা পায়। যেটায় কোন কৃত্রিমতার ছোঁয়া নেই। আনায়া প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেয়। নিজেকে অনেকটা হালকা করে। নিবরাস ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে,
-আচ্ছা তোমার হার্টের যে প্রব্লেমটা সেটার জন্য ডক্টরর কাছে আর যাওনি?
– আমার হার্টে প্রব্লেম আপনি কীভাবে জানলেন?
-তোমার সম্পর্কে আমি সবই জানি। তোমার যদি কিছু জানার প্রয়োজন হয় তোমার সম্পর্কে আমায় জিজ্ঞেস করে নিতে পারো।
-আপনি আসলে কে বলুন তো?
-নিবরাস মির্জা তোমার বর।
-একদিন বলেছি কোন রহস্য রাখবেন না আমার সামনে।
-আমি একটা খোলা ডায়েরি পড়তে থাকো আমায়।
-ইয়ার্কি করছেন?
-না সোনা! ইয়ার্কি করতে ভালো লাগে না আমার। আচ্ছা তুমি শান্তি পাচ্ছে না তাই না? ওপারে গেলে শান্তি পাবা নিশ্চয়ই?
-হুম পাবো।
-তুমি আগে যাও তার পেছন দিয়ে আমিও আসছি। আমার অসম্পূর্ণ কাজ গুলো সম্পূর্ণ করে।
-আগে কাজ সম্পূর্ণ করুন তারপর একসাথে নাহয় যাবো। আপনাকে একা রেখে যেতে পারবো না কারণ তারিশা আছে না?
-এই তো লাইনে এসেছো। জেলার্স হচ্ছে?
-হবে না?
হাসে নিবরাস। আনায়া তাতে পাত্তা দেয়না। কিছুক্ষণ পর নিবরাসের বুকে লেপ্টে যায়। নিবরাস ও তাকে জড়িয়ে ধরে কপালে নিজের অধোর ছোঁয়ায়।
*****
– বিশিষ্ট খান কোম্পানির ওনার জায়ান খান। যিনি খুব সাধাসিধা ভাবে থাকলেও খুবই ডেঞ্জারাস একজন। নিজের বাড়ীর গৃহকর্মেী বন্যা নামের মেয়েটির সাথে জোর করে দিনের পর দিন শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছে। তারই কিছু ভিডিও প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। এছাড়া খান কোম্পানি বছরে কোটি টাকার বেশী লাভ করে। এটা নিয়েও সন্দেহ পোষন করছে পুলিশ। তাদের কোম্পানির সবকিছুর উপর কড়া তদন্ত চলছে। জায়ানকে পুলিশ গ্রেফ্তার করেছে।
চ্যানেল জুড়ে খবর চলছে। জায়ানের মাথা হ্যাং ধরে যায় কীভাবে কী হচ্ছে আর হলো।প্রথমত তার ক্ষোভ চলে আসে সীতারা আহম্মেদের উপর।
#চলবে