হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা পর্ব-২২+২৩

0
691

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২২|
#শার্লিন_হাসান

সবার সাথে বসে নিজের কফিটুকু শেষ করে নিবরাসের কফি নিয়ে রুমের দিকে যায় আনায়া। নিবরাস তার রুমে নেই! হয়ত তার পার্সোনাল রুমে। আনায়া সেদিকেই হাঁটা ধরে। রুমটার কাছাকাছি যেতে দেখে নিবরাস বেড়িয়ে এসেছে। আনায়াকে দেখে নিবরাস মুচকি হাসে।
আনায়া কফির মগ দিয়ে রুমে চলে আসে। পেছন দিয়ে নিবরাস ও আসে রুমে। কাউচের উপর বসে নিবরাস কফি খাচ্ছে আনায়া রুমজুড়ে পায়চারি করছে। নিবরাস তার দিকে তাকাচ্ছে একটু পর,পর। কফি শেষ করে নিবরাস প্রশ্ন করে,

-এনি প্রবলেম আনায়া?

-হ্যাঁ,হ্যাঁ অনেক প্রবলেম। এই তারিশা আমার সবকিছুতে দোষ খুঁজে বের করে এককথায় ঝগড়ুটে ননদ বলা চলে একে।

-আরে খুঁজুক তাতে তোমার কী? কয়দিন পর ও হোস্টেলে চলে যাবে।

-উফফ আল্লাহ বাঁচালো বলুন?

-আচ্ছা আগামী কালকে আমরা নাজিয়ার সাথে দেখা করতে যাবো।

-আর কয়েকদিন পর! ও হোস্টেলে উঠেছে কীনা জানি না।

-দু একের ভেতর চলে যাবে।

*****

পরের দিন সন্ধ্যায় সুহাসিনী সহ নাজিয়া আড়ংয়ে এসেছে। নাজিয়ার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে। আগামী কালকে হোস্টেলে উঠবে সে। সুহাসিনী বসে আছে নাজিয়া নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিচ্ছে। দু’জন মিলে বিল পে করে বেড়িয়ে আসে।৷ নাজিয়াকে নিয়ে আইসক্রিমের দোকানে যায়।

নাজিয়ার ফেভারিট চকলেট আইসক্রিম। সুহাসিনীর প্রিয় বাটারস্কচ। আইসক্রিম খেয়ে নাজিয়া একগাদা চকলেট কিনে তার প্রিয় খাবার।

গেটের কাছে আসতে কারোর সাথে জোরেই ধাক্কা লাগে নাজিয়ার। তার জেম্মা কিছুটা সামনে। তার হাতের শপিং ব্যাগ কয়েক নিচে পড়ে যায়। সামনের ব্যক্তিকে দেখে আর কিছু বলেনি সে। কারণ সে ব্যক্তি তার শপিং ব্যাগ তুলতে ব্যস্ত। নাজিয়ার হাতে শপিং ব্যাগ দিয়ে স্যরি বলে সীতাব জুম্মান।
নাজিয়ার রেসপন্সের অপেক্ষা না করে সে আবারো নিজের কথায় মনোযোগ দেয় ব্লুটুথে। নাজিয়া তার যাওয়ার পাণে একবার তাকিয়ে আবার চলে আসে। ভদ্রলোক সেজন্য রুড বিহেভ করেনি। এই যে রেগে কাউকে যা-তা বলে দেওয়া এটা নাজিয়ার পছন্দ না।মানুষ মাত্র ভুল আর সে লোক ভুল করে স্যরিও বলেছে সেখানে তার লোকটাকে যাতা বলার রাইট নেই। এতে পারিবারিক শিক্ষাটাও প্রকাশ পায়।

গাড়ীতে এসে বসতে সুহাসিনী প্রশ্ন করে,

-এতো লেট হলো কেন?

-ওই হাত থেকে ব্যাগ পড়ে গিয়েছে।

-ভাগ্যিস তুমি পড়ে যাওনি।

-আমি পড়লে আমাকে ধরার মতো কেউই নেই সেজন্য আমি এখন পড়বো না। যেদিন তোমাদের জামাই আসবে আমায় নিতে তারপর নাহয় তার সাথে শপিং করতে আসলে পড়বো।

-পাকনাবুড়ি! এতো তাড়াতাড়ি তোমায় বিয়ে দিয়ে বিদায় করছি না।

-তাহলে নিধি আপুকে দিলে কেন?

-সে পড়াশোনায় পাকিবাজ! আর তার বিয়ের বয়স হয়েছে সাথে সময়ও।

-তবুও!

-তেমায় সবাই একটু বেশী আদর করে পাখি। সেজন্য এতো সহজে তোমায় কেউই ছাড়বে না।

-তোমার দেখি মেয়ের থেকে আমার প্রতি ভালোবাসা বেশী।

-মেয়ে পূত্রবধু একই জায়গায়।

সুহাসিনীর কথায় নাজিয়ার হাসি মুখটা মূহুর্তে মলিন হয়ে যায়। আর কথা বাড়ানোর প্রয়োজন মনে করে না নাজিয়া। মনে,মনে পণ করে নেয় সুহাসিনীর থেকেও দূরত্ব বজায় রেখে চলবে। বেশী মিশে গেলে সমস্যা তার উপর নজর পড়বে তার ছেলের জন্য দুনিয়ার কোন মেয়েকে তার পছন্দ হবে না। অবশ্য জায়ানে উড়েবেড়ানোর সময় কয়েকদিন বা কয়েকমাস। এরপর খাঁচায় বন্দী হবে! একবারে যাবত জীবনের জন্য। সব প্রমাণ সংগ্রহ করা শেষ সাথে বন্যার স্বীকারোক্তি ও নেওয়া শেষ।

বাড়ীতে আসতে,আসতে নয়টা বেজে যায়। তখন সীতারা আহমেদ, জায়ান, জাফিন, তিয়াশ খান সহ তারা লিভিং রুমে বসে কথা বলছে। তাঁদের বাসায় একজন নতুন কাজের বুয়া আনা হয়েছে। তার নাম বনিতা। বয়স অল্প না আবার খুব বেশী না। সুহাসিনীর থেকে কিছুটা বেশী হবে হয়ত। গরিব মানুষ সে। সুহাসিনী, সীতারার মতো মাসে,মাসে পার্লারে গিয়ে রুপচর্চা করতে পারে না আর না নিজের ছত্রিশ বয়সটাকে পঁচিশ বানাতে পারছে।

নাজিয়াকে দেখে জায়ান বলে,

-শপিং করা শেষ আয়াত পাখি?

-দেখতেই পাচ্ছো আবার জিজ্ঞেস করার কী দরকার?

নাজিয়ার এমন রসকষহীন কথায় সীতারা আহম্মেদ বিরক্ত হয়। আজকাল তিনি খেয়াল করেন নাজিয়া জায়ানের কথা তুচ্ছ করে। তেমন পাত্তা দেয়না বিরক্ত বোধ করে আগে এমন ছিলো না। দিনদিন তার মেয়ে চেন্জ হচ্ছে। হয়ত বড় হচ্ছে সেজন্য! আবার সন্দেহ লাগে তার মেয়ে তার সম্পর্কে সব জেনে গেলো না তো?
নাজিয়ার ব্যস্ততা দেখে এসব মনেই হয়না সীতারা আহম্মেদের।

রাতের ডিনার করে যে যার রুমে চলে যায়। নাজিয়া চুপিসারে বাইরে আসে। জায়ানের রুমে যায় চকলেট হাতে। কিছুক্ষণ মিলটিল দিয়ে জায়ানের গাড়ীর চাবি নিয়ে নেয়।
তারপর গ্যারেজে গিয়ে জায়ানের গাড়ীর লক খুলে গাড়ীর লোকেশন নিজের ফোনে সেট আপ করে যাতে সহজে গাড়ীর লোকেশন ট্রাকিং করতে পারে। কাজ শেষ হতে গাড়ী লক করে আবারো জায়ানের রুমে যায়। এবার যায় জায়ানের ফোনের উসিলা দিতে। জায়ান রাজী হয় ফোন দিতে। কিন্তু নাজিয়ার আপাতত ইন্টারেস্ট নেই মূলত চাবিটা জায়গায় রেখে
বাহানা দিয়ে চলে আসে। তার মুড এখন চেন্জ ফোন নিতে মন চাচ্ছে না।

নাজিয়া প্রস্থান করতে সাড়ে দশটায় জায়ান বেড়িয়ে পড়ে সকলের চোখ পাকি দিয়ে। আজকে অবশ্য সীতারা আহমেদ ও যাবে তার সাথে। তাঁদের নেতার সাথে কিছু কথা সাথে দেখাসাক্ষাৎ করবে তারা।

নাজিয়া ও সিদ্ধান্ত নেয় সেও আজকে তাঁদের পিছু নিবে। বেলকনি থেকে নজর রাখে জায়ান বেড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু গেটের কাছে গাড়ী নিয়ে অনেক্ক্ষণ কারোর জন্য অপেক্ষা করে। নাজিয়া রুমে এসে তড়িঘড়ি চেন্জ করে নেয়। ব্লাক জিন্স,হোয়াইট টি-শার্টের সাথে ব্লাক একটা জ্যাকেট পরিধান করে। কালো শু এর ভেতরে ছোট্ট একটা চাকু ঢুকিয়ে নেয়। কাঁধের চুলগুলো দুইভাগ করে সামনে আনে। মুখে একটা মাস্ক পড়ে নেয়।

তাঁদের বাড়ীর মোটামুটি সবাই ব্যস্ত কেউ অফিসের কাজে ল্যাপটপে কেউ বা সারাদিনের ক্লান্তির কারণে ঘুমের ঘোরে।

বনিতা বেগম নিচের লিভিং রুমের সাথের রুমটায় থাকে।

সীতারা আহম্মেদ তিয়াশ খানকে ঘুমের ঔষধ দেয় কফির সাথে। যার ফলে সে কয়েক মূহুর্তে ঘুমের ঘোরে চলে যায়। জাফিন তার বড় বাবার কাছে ঘুমাবে আজকে।

সীতারা আহম্মেদ খুব সাবধানে রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার সময় কোতা থেকে বনিতা কাশতে,কাশতে লিভিং রুমে আসে। সীতারা আহম্মেদের পা সেখানে থেমে যায়। এই বুঝি বনিতা লাইট অন করলো আর সে ধরা খেলো। মনে,মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে ধরা খেলে বনিতা আর কখনো বাড়ী যেতে পারবে না তাদের অন্দরমহলের কোন একপাশে লা”শ হয়ে শুয়ে থাকবে।

নাজিয়া রুম থেকে বেড়িয়ে রুম লক করে দেয়। সিঁড়ির কাছে আসতে গিয়েও আড়ালে চলে যায়। কারণ তার মা এখনো সিঁড়ির মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে। বাইরের আলোয় কিছুটা আলোকৃত তাদের লিবিং রুম। তারউপর বনিতা উঠে গেছে। মা মেয়ে দুজনের মাথায় একটা চিন্তা ধরা না খেলেই হলো।

বনিতা আর লাইট অন করেনি। আবছা আলোয় সে কিচেন রুমে চলে যায়। সেখানের লাইট অন করে। এই সুযোগে সীতারা আহমেদ বাইরে বেড়িয়ে যায়। নাজিয়া সেখানে দাঁড়িয়ে বনিতার অপেক্ষা করে। কিছুক্ষণের মধ্যে বনিতা চলে আসে। নাজিয়া ও বেড়িয়ে পড়ে সমস্যা হলো সে যাবে কী করে? সে তো ড্রাইভিং পারে না তেমন। আর গাড়ী বের করলে ধরা খাওয়ার চান্স আছে। যতটুকু পারে রাস্তায় বের হতে পারবে কিন্তু রাস্তায় গাড়ী বেশী থাকলে সে কন্ট্রোল করতে পারবে না।

ভাবছে নিবরাসকে জানাবে। কিন্তু কী মনে আর নক দেয়নি। হয়ত নিবরাস ঘুমাচ্ছে আর ডিস্টার্ব করতে মন চাইলো না তার। সিদ্ধান্ত নেয় পায়ে হেঁটে যাবে গাড়ীর লোকেশন ট্র্যাক করে বুঝার চেষ্টা করে কোনদিকে যাচ্ছে গাড়ী। সিদ্ধান্ত নেয় সিএনজি পেলে উঠে চলে যাবে।

এই ছোট,ছোট বুদ্ধি গুলো নিবরাস তাকে দেয়। শুধু তাইনা কীভাবে একা নিজেকে প্রোটেক্ট করতে হয় সবসময় রাতে বের হলে সাথে অস্ত্র রাখতে হয়। আর চোখ কান খোলা রাখতে হয়। নিবরাসের বলা সেই কথাটা নাজিয়াকে বেশী সাহস জোগায়,
-নাজিয়া তুমি একজন ভালো মানুষ হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বে আমি তোমার পাশে সবসময় আছি তোমায় প্রোটেক্ট করতে।

নাজিয়া লড়ছে যতটুকু সম্ভব তবে নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাচ্ছে না এই লড়াই করার পেছনে। সে জানে তাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। কাছের মানুষগুলো যারা দিনের পর দিন অন্যায় করে যাচ্ছি নাজিয়া কিছুই জানতো না। নিবরাস বলার পরও তার বিশ্বাস হয়নি। তবে জায়ানকে কয়েকদিন ফলো করার পর তার মনে হয় সত্যি কিছু আছে। ধীরে,ধীরে তা আরো ক্লিয়ার হয়।

নিবরাস আনায়া বেড়িয়ে পড়ে। আনায়া জানে তার মামী ওরফে মায়ের সাথে আরেকবার মুখোমুখি হবে সে। নিবরাস গাড়ী ড্রাইভ করছে আনায়া বাইরে তাকাচ্ছে একটু পর,পর।

গাড়ীতে লাইট অন করে নিবরাস আনায়ার দিকে নিজের ফোনের ক্যামরটা ধরতে আনায়া হকচকিয়ে যায়। নিজের মুখে আপনাআপনি হাত চলে যায়। নিবরাস তা দেখে হাসে। আনায়া চোখ গরম করে তাকায়। ধমক দিয়ে বলে,

-এটা কোন ধরনের কাজ? তাও এই রাতের বেলা যদি আমি হার্ট অ্যাটাক করতাম?

-তাহলে ফ্রিতে আমিও তোমার ইজ্জত হরণ করতে পারতাম। উহ্! আহ্! এসব শব্দ শোনতে হতো না আর না বদলোক শব্দটাও। ফ্রিতে চুমুও খেতে পারতাম।

-বদলোকটা এতো বেশী অ’সভ্য হচ্ছে দিনদিন।

-আমার চুমু পাচ্ছে।

-এহহ্! এটা আবার কেমন কথা? শুনেছি মানুষের প্রেম পায় আর আপনার চুমু?

-আর কথা বলো না প্লিজ!

নিবরাস গাড়ী ব্রেক কষে। আনায়ার দিকে তাকিয়ে ইনিয়েবিনিয়ে বলে,

-মহারানী যদি অনুমতি দিতেন তাহলে আমি আপনার অধরে আমার অধর মিলিয়ে একখানা রোমান্টিক ফিল নিতাম। সেই সাথে আপনার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করিতাম।

-বাজে কথা ছাড়ুন আর গাড়ী স্টার্ট দিন।

-ধুর আগে চুমু তারপর গাড়ী স্টার্ট।

কথাটা বলে নিবরাস আনায়ার অধরে নিজের অধর জোড়া মিশিয়ে নেয়। আনায়ার রাগ লাগছে প্রচুর! নিবরাস ছাড়তে মুখ ফুলিয়ে তার দিকে তাকায় আনায়া।

-এমন জামাই থাকলে রোগী হতে বেশীদিন লাগবে না।

-আচ্ছা একটু অপেক্ষা করো বাড়ী গিয়ে তোমায় প্রেগন্যান্ট বানাবো।

#চলবে

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২৩|
#শার্লিন_হাসান

এমন জামাই থাকলে রোগী হতে বেশীদিন লাগবে না।

-আচ্ছা একটু অপেক্ষা করো বাড়ী গিয়ে তোমায় প্রেগন্যান্ট বানাবো।

আনায়া চোখ গরম করে তাকায়। নিনরাস গাড়ী স্টার্ট দেয়। নির্দিষ্ট সময় তারা পিচঢালা নিরব সুনশান রাস্তায় এসে গাড়ী থামায়। তাদের গাড়ীর সামনে আরেকটা গাড়ী যেখানে জায়ান আর সীতারা আহমেদ দাঁড়িয়ে আছে। নিবরাস আনায়াকে নিয়ে তাদের সামনে যায়।

নাজিয়া সিএনজি ধরে গাড়ীর লোকেশন থেকে কিছুটা দূরে নেমে পড়ে। ভাড়া মিটিয়ে হাঁটতে থাকে। পিচঢালা রাস্তা নিরব সুনশান। দূরে,দূরে ল্যাম্পপোস্ট দাঁড়ানো। সেখানে আলো জ্বলছে! তবে চাঁদের আলোয় চারপাশটা আরো বেশী জ্বলজ্বল করছে। কেউ হেঁটে গেলে তার অবয়ব বুঝা যাবে।

কিছুটা সামনে আসতে কিছু কথাপোকথন কানে আসে। জায়ানের সাথে নিবরাসের তর্কাতর্কি হচ্ছে। মূলত তারা তাহিয়াকে নিয়ে তর্ক করছে।

সীতারা, জায়ান গাড়ী থেকে এগিয়ে নিবরাসদের সামনে আসে। নিবরাস সীতারা আহম্মেদের দিকে একবার তাকিয়ে রাস্তায় থুঃথুঃ ছুঁড়ে ফেলে। সীতারা আহম্মেদ তাতে চোয়াল শক্ত করে নেয়। নিবরাস ব্যঙ্গ করে বলে,

-জায়ান ভালো করে শাশুমাকে দেখে রাখিস। আবার অন্য মেয়েদের সাথে এনাকেও মেয়ে ভেবে পাচার করে দিস না। নাহলে খান পরিবারে শনির দশা লেগে যাবে।

-তোকে ডেকেছি একটা ঢিল করতে জনগণের নেতা। আপাতত তোর এসব জ্ঞান তোর পকেটে রাখ।

-কী জেনো ঢিল? এনি ওয়ে তোদের জন্য আজকের রোমান্সটা আমার মিস গেলো। মনে হয় না তোদের মামা আর নানু হওয়ার শখ আছে।

সীতারা আহম্মেদ ঘুরে দাঁড়ায়। আনায়া নিবরাসের হাতে চিমটি কাটে। তখন জায়ান বলে,

-আমাদের কোম্পানির গোপন যে বিজন্যাসটা সেখান থেকে তোকে থার্টি পার্সেন্ট শেয়ার দিবো। প্রয়োজনে তোকে নিরবাচনে ক্ষমতায় থাকার জন্য সাহায্য করবো। আর এসবে না হলে গাড়ী,বাড়ী যেটাই চাইবি অফার দিতে রাজী আমরা।

-এতো সুন্দর অফার! মনে হচ্ছে ভাবতে হবে। এনিওয়ে তোদের আবার কিসের বিজন্যাস?

জায়ান সীতারা আহম্মেদ ভরকে যায়। তাদের মনে হচ্ছে ভুল ইনফরমেশন শুনে ভুল জায়গায় ঢিল মেরেছে। নিবরাস কিছুই জানতো না তাহলে। কিন্তু জায়ান নিবরাসের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। ও ভোলাভালা ঠিকই কিন্তু খুবই চালাক।

তখন সীতারা আহম্মেদ বলে,

-আমাূের বিজন্যাস আছে সেসব তুমি জানো। প্রমাণ সংগ্রহ করাও তোমার বা হাতের কাজ সেটাও জানি! কিন্তু আমরা চাই না আমাদের বিজন্যাস বন্ধ হোক সেজন্য তোমায় অফার দিলাম। খবর পেয়েছি আমাদের পেছনে লোক লাগিয়েছো তুমি। টাকা নেও এসব থেকে সরে যাও।

-শাশুমা এতো সুন্দর অফার ফ্রিতে দিলে কী হতো? আমি তো আপনার মেয়ের জামাই।

-মুখটা বন্ধ রাখো নিবরাস।

-বাবুর মাম্মাম তুমি গাড়ীতে গিয়ে বসো বাবুর পাপা আসছে একটু পর।

আনায়া ব্রু কুঁচকে তাকায়। নিবরাসের কথায় সাথে,সাথে তার উদরে হাত চলে যায়। সে কী আসলেই প্রেগন্যান্ট? কই তার তো মনে হয়না। নিবরাস ধমকের স্বরে বলে,

-আমার বাবুর আম্মু কথা কানে যায়না তোমার?

-আমার বাবু কোথায়?

আনায়া বলে। নিবরাস তখন বলে,
-ঘুমাচ্ছে তোমার পেটে। এবার যাও তো! এসব কথা শোনলে যদি ভয় পাও! আমি চাইনা তোমার পেটে প্রভাব পড়ুক আর আমার বাচ্চাটার ক্ষতি হোক।

সীতারা আহম্মেদ আর জায়ান চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে রয়। আনায়া সোজা গাড়ীতে গিয়ে বসে পড়ে। নিবরাস পান্জাবির হাতা গোটাতে,গোটাতে বলে,

-শাশুমা এতো তেজ কোথা থেকে পান আপনি? লজ্জা করে না আপনার? খুব উড়ছেন মা ছেলে! এমন ভাবে খাঁচায় বন্দী করবো না।

-তোকে মেরে গুম করে দিতেও আমার সময় লাগবে না নিবরাস।বেশী মুখ চলে তোর। হয় আমাদের অফারে রাজী হয়ে যা নাহলে বউকে নিয়ে বাড়ী যা। বেশী ফটরফটর করলে বউ জামাই দুটোকে মেরে রাস্তার সাইডে ফেলে দেবো।

-কুল শাশুমা কুল! টাকা পয়সা আপনার বেশী হয়ে গেছে মনে হয়।

-ঠিকই ধরেছিস। আমার মনে হয় না আমার জীবনে কাউকে এতো তেল মাখতে হয়েছে। যতটা তোর পেছনে সময় ব্যয় করেছি আমি ততোটা সময় আমার অফিসের কাজ শেষ করলে কয়েক লাখ টাকা আসতো।

নিবরাস ঘুরে দাঁড়ায়। জায়ান সীতারা আহম্মেদ তার কান্ড দেখছে। তবে কিছুটা ভয়ে আছে তারা। আসার সময় পিস্তলটা আনেনি। যদি নিবরাস দু একটা বুলেট ছুঁড়ে চলে যায় গাড়ী নিয়ে।

-তোর উত্তরটা খুব তাড়াতাড়ি আমায় জানাবি। আর সময় মতো অফিসে এসে চেক/চাবি যেটাই লাগে নিয়ে যাবি।

নিবরাস তাতে পাত্তা দেয়না। সে যে কাজে এসেছে সে কাজ হয়ে গেছে। তার হাতেনাতে প্রমাণ দরকার ভিডিও করা ডান। সীতারা আহম্মেদের জলজ্যান্ত প্রমাণ নিয়ে নিয়েছে সাথে। নিবরাসের ভাব লক্ষণ তাদের কাছে ভালো ঠেকছে না। কিছুক্ষণ পর সীতারা আহম্মেদ জায়ান গাড়ীতে উঠে বসে।

নাজিয়া গাড়ীর পেছনের সীটে নাজিয়া গুটিশুটি মেরে বসে আছে। সামনেই জায়ান,সীতারা আহম্মেদ বসেছে জায়ানের গাড়ীর এক্সট্রা চাবি তার কাছে আছে আগে থেকেই। শুধু গাড়ীর না অনেক কিছুরই এক্সট্রা চাবি নাজিয়ার কাছে আছে।

সীতারা আহম্মেদ জায়ানকে বলে,

-সময়টা নষ্ট হলো আমার। এই নিবরাসটা এখানে এসে পড়লো কেন? মনে হয় মাঝেমাঝে উপরওয়ালা ভুল করে এখানের জিনিস ওখানে অদলবদল করে দেয়। নাহলে এতো খারাপ মানুষের মাঝে ও এতো ভালো মানুষ আসলো কীভাবে?

-আমাদের সবকয়টা কথা ও ইয়ার্কি করে উড়িয়ে দিয়েছে। মনে হয় ওর সাথে আমরা মজা করতে এসেছি।

-একে রাস্তা থেকে সরাতে হবে। যেভাবে আমি তাহিয়াকে সরিয়েছি।

-কিন্তু একে সরালে সবার আগে দোষ পড়বে শামিম সরদারের উপর। আর শামিম তো নিজের স্বার্থের জন্য আমাদের সব পাবলিশ করতে সময় ও নিবে না।

-এটাও দেখি পথের কাটা।

-একলও রাস্তা থেকে সরিয়ে দেই আর দোষ দেই নিবরাসের।

-তাহিয়াকেও তো সরিয়েছি তো দোষটা কার গাড়ে পড়লো জেনো? তোর বুদ্ধি আমি শুনি না। শামিম সরদার ও আমাদের অনেক উপকারে আসবে।

বাড়ীতে এসে গ্যারেজে গাড়ী রেখে ভেতরে চলে যায় সীতারা আহম্মেদ আর জায়ান। তার যাওয়ার পেছন দিয়ে নাজিয়া গাড়ীর লক খুলে বেড়িয়ে আসে। একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে তার কাছে তাহিয়ার খু*নী নিবরাস না। কিন্তু আহিয়া তো এটাই ভাবে।কীভাবে বিশ্বাস করাবে তাকে?

এতো,এতো ভাবনা,ভুল বোঝাবুঝি নাজিয়ার তেমন সময় ও নেই এসবে মাথা ঘামানোর। কিন্তু নিবরাস সব জানতো আর তাকে বললো না। তাহিয়ার ব্যপারটাও বলেনি। কী জানি!

নাজিয়া খুব সাবধানে ভেতরে প্রবেশ করে নিকের রুমে চলে যায়। রুমে এসে দরজা লক করতে হাফ ছেড়ে বাঁচে। ভাগ্যিস চাবিটা ছিলো আর বুদ্ধি করে গাড়ীর পেছনে বসে পড়ে। এই রাস্তায় গাড়ী পাওয়া দুষ্কর। আর সীতারা আহম্মেদ বা জায়ান পেছনে তাকানোর প্রয়োজন মনে করবে না।

আনায়াকে নিয়ে একটু ঘুরাঘুরি চন্দ্র বিলাস করে বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে নিবরাস। আনায়া চুপচাপ বাইরে দেখছে। চাঁদের আলোয় চারপাশটা জ্বলজ্বল করছে। মনে হচ্ছে পূর্ণিমা লেগেছে।

নিবরাস আনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-শুনেছো?

-বলুন?

-আজকে তো চাঁদে পূর্ণিমা এসেছে। আমার হৃদয়কোঠায় চাঁদের পূর্ণিমা এসেছে সে অনেক আগে। আজকে পূর্ণিমারচাঁদকে দেখে মনে পড়লো সে কথা।

-আপনার যে কত প্রেম মনে,মাথায়,শরীরে। আমার ভালো লাগছে না তো! এসব ভেজাল কবে যাবে? প্লিজ এসবে আমাকে আর আনবেন না আমি শুনতে চাইনা।

-আরে আমি তো তোমায় এনেছি রাতে ঘুরার জন্য। আর ওঁদের সাথে কথা বলার রুচি ছিলো না আমার। তবুও এসেছি আমার কিছু দরকারে। তবে দরকার শেষ হয়ে গেছে।

*****

কেটে যায় বেশ কয়েকদিন। নাজিয়া হোস্টেলে এসেছেও কয়েকদিন হলো। আজকে আনায়া আসবে দেখা করার জন্য। তার মিসকে বলে ছুটি নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয় নাজিয়া। রিকশা করেই যাবে সে।

আনায়ার দেওয়া ঠিকানার উদ্দেশ্য রওনা হয় নাজিয়া। তবে সুদূরে চোখ যায় তার। চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। মুখ দিয়ে আপনাআপনি বের হয়,

-মৃ*ত মানুষ জীবিত হয়ে কীভাবে? তাও এই শহরের অলিতেগলিতে কেন?

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে