#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২০|
#শার্লিন_হাসান
গাড়ীতে আনায়া গাল ফুলিয়ে বসে আছে তাকে শপিং করিয়ে দেয়নি বলে। নিবরাস রেগে বসে আছে তাকে দোকানদারের সামনে ইনডিরেক্টলি কিপ্টা প্রমাণিত করলো তার বউ। তারউপর তার চুজ করা ঘড়ি রিজেক্ট করে নিজের পছন্দের ঘড়ি নিলো।
দু’জনের মাঝে পূর্ণ নিরবতা বিরাজমান। মির্জা বাড়ীতে আসতে আনায়া চুপচাপ নাজিয়ার গিফ্ট নিয়ে ভেতরে চলে যায়। নিবরাস তার পেছন দিয়ে আসে। রুমে এসেও কেউ কারোর সাথে কথা বলে না। আনায়া শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে নিচে চলে যায় লান্সের জন্য! তার পেছন দিয়ে নিবরাস আসে। বাকীদের লান্স শেষ। আনায়া নিবরাস চুপচাপ বসে খাচ্ছে। কেউই কারোর সাথে কথা বলে না।
তখন আবার মিসবাহ আসে। তার মামু আর বউমনিকে এতো চুপচাপ দেখে বলেই ফেলে,
-মামু বউমনিকে বকা দিয়েছো?
-না শপিং করিয়ে দেইনি।
-টাকার অভাব তোমার?
-হুম! তোমার নানাভাইকে বলো মামুকে টাকা দিতে এইমাসে।
-দিবে না সে আরেক কিপ্টা।
-যাহ বাপ তোর বউমনির কাছেই যা। কিছু হলেই তোদের মুখে কিপ্টা ছাড়া কিছুই শুনি না। গাড়ত্যাড়া একটা আমার কপালে জুটেছে।
নিবরাসের কথায় আনায়া রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। নিবরাস সেসবে পাত্তা দেয়নি। চুপচাপ খেয়ে দু’জন রুমে চলে যায়। আনায়া অপেক্ষায় ছিলো নিবরাস কখন আসবে আর তাকে ধরবে।
নিবরাস চুপচাপ খাটে গা এলিয়ে দেয়। আনায়া তখন তার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-আমি ঘাড়ত্যাড়া?
-আমাকে জিজ্ঞেস করছো?
আনায়া রেগে যায়। সে সিরিয়াস মুডে ঝগড়া করতে এসেছে অথচ তার বদলোকটা এমন ভাব করছে মনে হয় কিছুই হয়নি।
-সত্যি আপনার টাকা নেই?
-তোমার মতো আমি কোটিপতি না। সরকার যা দেয় সেখান থেকে আবার কতজনকে দান করতে হয়। চাঁদাবাজি করলে টাকার অভাব পড়তো না। অবশ্য এসব আমি করি না।
-আপনার বাবার কোম্পানি আছে না?
-আচ্ছা এতো কথা কেন? গতকাল রাত্রে তোমার রাগ ভাঙাতে কতগুলো টাকা খরচ হলো। সেই সাথে লাখ টাকার উপরে গিফ্ট কেনা হলো শুধু একরাতের জন্য। আজকেও পঞ্চাশ হাজারের বেশী গেলো। একটু হিসাব করো?
-বাবা এই কিপ্টে লোককে কোথা থেকে খুঁজে পেলো.
-শোনো আমাদের বেবি আসলে তখন…
-এই শুনুন আপনার এসব হিসাবের ভাষণ নিজে,নিজে দেন আমার সামনে না। যত্তসব! মানে কী একটা অবস্থা এটা আপনি? এতো হিসাবী?
-শোনো আমি ভাষণ দেই না। আমি সবার জন্য একসাথে শপিং করবো সেজন্য তোমায় একা করে দেইনি।
-সবাই কী আমার মতো আপনার বউ?
-না।
-বুঝেছি তারিশা রাগ করবে মেইন পয়েন্ট এটা। এতেসব বাহানা আমায় দিবেন না। যান আমার চোখের সামনে থেকে সরে যান। আর শপিংয়ের কথা তৃতীয়বারের মতো মুখে আনবেন না। এটার ম্যাটার এখানে ক্লোজ।
-তুমি রাগ করেছো?
-আসলে কী! কিছু মানুষ রাগিয়ে দেওয়ার পর যখন জিজ্ঞেস করে রাগ করেছো তখন তাদের মন চায়..
-কী?
আনায়ার কথার মাঝে পোড়ন কেটে বলে নিবরাস। তখন আনায়া বলে,
-মুখটা ভেঙে দিতে। অসহ্য লাগে এদের।
-স্যরি।
নিবরাসের স্যরি আনায়া পাত্তা দেয়না।
*****
বিকেলের দিকে আনিসুল হক বসে কফি খাচ্ছেন। আহিয়া ও তার সাথে বসে নিজের কাপে কফি বানাচ্ছে। তখন আনিসুল হক বলেন,
-তোমার ফুফির সাথে কথা হয়?
-হুম হয় তো!
-আগামী কালকে খান বাড়ীতে যাবো। তোমার ফুফির ছুটির দিন সাথে খান বাড়ীর সবাই অবসর! তাঁদের সাথে কালকের দিনটা কাটাবো।
-ওহ! যাবো তবে।
-তাহিয়াটাকে না খুব মনে পড়ছে। একটা পাগল ছিলো আমার। চঞ্চল মেয়েটা একবারে সারাজীবনের মতো নিরব হয়ে গেলো।
-ওই নিবরাস!!
-ওদের ক্ষমতা আছে সেজন্য কিছু বলতে পারছি না। তবে এর পতন হলে অবশ্যই এই কেসটা সামনে আনবো একে এমন ভাবে ফাঁসাবো যাতে যাবত জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়।
-ওটা তো তোমার ভাগ্নির জামাই।
-আনায়ার কথা মনেই ছিলো না। বাদ দাও ওর বাবার সাথে তেমন ভালো সম্পর্ক নেই আমাদের আপাতত যা আছে মন কষাকষি!
আহিয়া কফির মগ হাতে নিজের রুমে চলে আসে। তাহিয়ার একটা ফটোফ্রেম বের করে তাতে হাত বুলায়। মিষ্টি হাসি দেওয়া মেয়ে। চোখ দু’টো ভীষণ মায়াবী ছিলো। চঞ্চল একটা মেয়ে ছিলো। হ্যাঁ নিবরাসকে পা’গলের মতো ভালোবাসতো তাহিয়া। ভার্সিটিতে তার সাথে নিবরাসের প্রথম দেখাটা হয় নবীন বরণে। সেখানে নিবরাসকে কালো পান্জাবিতে দেখে ক্রাশ খায় তাহিয়া। খবর নেওয়ার পর জানে ছাত্রলীগের সভাপতি। পলিটিক্স নিয়ে দিনরাত কাটায়। বলা যায় ভবিষ্যত নেতা। নিবরাসে হাঁটা, চলা, কথার ভাব ভঙ্গি সবই তাহিয়াকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করে। যখন শুনতে পায় নিবরাস মেয়েদের থেকে দূরে থাকে। কাউকে পাত্তা দেয়না অনেকে প্রপোজাল দিয়ে রিজেক্ট হয়! তখন প্রপোজাল দেওয়ার কথা মাথা থেকে উড়ে যায় তাহিয়ার। নিবরাসকে বেশীরভাগ সময় ফলো করতো সে। একদিন তো হাতেনাতে ধরাও খায় তার দলের একজনের কাছে। অবশ্য তেমন কিছু বলতে পারেনি লোকটা নিবরাসের জন্য সেদিন বেঁচে যায়। নিবরাস জিজ্ঞেস করেছিলো কেনো প্রতিদিন পিছু নেয়। তখন তাহিয়া উত্তর দেয়, ‘তার বাড়ী সামনের রাস্তায় সেজন্য এই পথে আসা যাওয়া হয়।’
ধীরে,ধীরে নিবরাসের প্রতি না চাইতে একটু বেশী আসক্ত হয়ে পড়ে তাহিয়া। সে জানতো না এই আসক্তি কতটা ভয়বহ! এলকোহলের আসক্তি তো ধীরে,ধীরে একটা মানুষকে মৃত্যুর সর্য্যায় নিয়ে যায় তবে এই নিবরাসের প্রতি অনুভূতুর আসক্তি তাকে ধীরে,ধীরে না একজটকায় মৃত্যুর দুয়ারে নিয়ে যায়।
খান বাড়ীতলও মাঝেমধ্যে আসা যাওয়া হতো তাহিয়ার। তখন শামিম সরদারের সাথে জায়ানের গলায়,গলায় ভাব ছিলো। যাওয়া আসা হতো খান বাড়ীতে! শামিম সরদারের পেছন দিয়ে একদিন তাহিয়া ও যায়। জায়ান আর শামিম সরদারের কিছু কথোপকথন যা নিবরাসের বিরুদ্ধে ছিলো সেই সাথে তার ফুফির আর জায়ানের গোপন অবৈধ ব্যবসা সবই নিজ কানে শুনে তাহিয়া। তার পরে ছিলো নির্বাচন। শামিম সরদার প্রার্থী হবে নিবরাসের সাথে। এমপি নির্বাচিত হলে জায়ানের বিজন্যাসের জন্য লাভ সেই সাথে শামিম সরদারকে শেয়ার দিবে।
তখন তাহিয়া সীতারা আহম্মেদের পেছনে লাগে। তার বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণ জোগাড় ও করে। তার ইচ্ছে ছিলো নিবরাসকে সবটা বলে দেওয়ার। সেই সাথে প্রমাণ ও দিয়ে দেওয়ার। তখন তাদের নির্বাচন ছিলো এটা,ওটার ভেজাল ছিলো। কোন ভাবে সীতারা আহম্মেদ ও টের পায় তাহিয়া তার বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করে আর সে নিবরাসের পক্ষে। নিবরাসের ভালো চায়! কিন্তু নিবরাস তাকে এভয়েড করে।
তাহিয়ার উপর কড়া নজরদারি করা হয়। নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করার পর নিবরাস এমপি মনোনয়ন পায়। তার কয়েকমাস পর তাহিয়া পুনরায় নিবরাসকে ফলো করতো। একটু কথা বলার সুযোগ খুজতো, এক্সিডেন্টলি তাঁদের দেখাও হতো। নিবরাস কিছুতেই তাকে পাত্তা দিতো না। তবে তাহিয়া হাল ছাড়েনি। চেয়েছিলো নিবরাসের মন জয় করতে।
এসবের ভীড়ে সীতারা আহম্মেদের কথা তার মাথা থেকে উড়ে যায়। নিবরাসের নাম্বার জোগাড় করে কল দিয়েও তাকে বিরক্ত করা শুরু করে তাহিয়া। কিছুতেই নিবরাসের মনে স্থান করে নিতে পারেনি। একসময় তার কাছে তার অনুভূতি তুচ্ছ মনে হয়। খুব রাগ,অভিমান জমে নিবরাসের প্রতি! এই একটা অভিমান নিয়েই দুনিয়া ছাড়তে হয় তাকে। আজো জানা নেই তাহিয়া নামক মেয়েটি নিবরাসের মনে স্থান করতে পেরেছিলো কীনা। হয়ত না! নিবরাসের এসবে ইন্টারেস্ট কোন কালে ছিলো না। সে চায়না তার রাজনীতির মঞ্চে কোন কালো দাগ! সে চায় না তার নামের পাশে নারীর নামের কোন ঘটনা চক্রের ট্যাগ বসুক। শুধু তাহিয়া না তাহিয়ার মতো অনেককে নিবরাস এভয়েড করতো।
তাহিয়ার জীবনের শেষ দিন ছিলো। দিনটা ছিলো বৃহস্পতিবার। একটা ক্লাস শেষ করেই তাহিয়া বেড়িয়ে পড়ে নিবরাসের খোঁজে।
#চলবে
#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২১|
#শার্লিন_হাসান
তাহিয়ার জীবনের শেষ দিন ছিলো। দিনটা ছিলো বৃহস্পতিবার। একটা ক্লাস শেষ করেই তাহিয়া বেড়িয়ে পড়ে নিবরাসের খোঁজে।
সেদিন নিবরাস একটা ইভেন্টে যায়। সেখানের কাজ শেষ করে গাড়ীতে করে তারা কোলাহল মুক্ত নিরব একটা জায়গায় গাড়ী দাঁড় করায়। তার পেছন দিয়ে তাহিয়া আসে। নিবরাসকে দেখে তড়িঘড়ি তার কাছে যায়। তাহিয়াকে দেখে নিবরাস বিরক্ত হয়। তখন তাহিয়া বলে,
-আমাকে ভালোবাসলে কী বেশী ক্ষতি হতো নেতাসাহেব?
-দেখুন এভাবে আমার পেছনে ঘুরঘুর না করে নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করুন। আমার থেকে বেটার কাউকে পাবেন।
-বেটার কাউকে আমার চাই না নেতাসাহেব। আপনি হলেই হবে!
-শুনুন আপনার এই এক ডায়লগ প্রতিদিন শোনতে,শোনতে আমার মুখস্ত হয়ে গেছে সাথে আমি অতিষ্ঠ।
-নতুন কিছু বলবো নেতাসাহেব?
-আমার পথ থেকে সরে দাঁড়ান।
-ইশ নেতার ব্যবহার এতো খারাপ কেনো?
-এই মুখটা বন্ধ রাখবেন? প্রতিদিন এগুলো কোন ধরনের নাটক? ফা*লতু মেয়ে! এটেনশন পাচ্ছে না জেনেও ছ্যাচড়ামি করেই যাচ্ছে।
-ভালোবাসার জন্য আমি এমন ছ্যচড়া হাজারবার হতে পারি নেতা সাহেব। বিয়ে করবেন আমায়?
-বিয়ে না আপনায় আমি খু*ন করবো।
-সত্যি? আচ্ছা সমস্যা নেই বিয়ে করেই খু’ন টা করিয়েন। আমার প্রপোজাল একসেপ্ট করলে এমনিতেও আমি খু*ন হয়ে যাবো।
-শিক্ষাদীক্ষার বড়ই অভাব আপনার। আনিসুল হক সাহেব মনে হয়না শিক্ষা দিক্ষা ভালো দিয়েছে আপনায়।
-সব শিক্ষা আছে এমনকি আপনার বউ হওয়ার মতো যোগ্যতা!
-আপনার বাবার সাথে আমার বাবার পুরোদমে শত্রুতা। আর সেখানে আপনি কীভাবে ভাবছেন বিয়ের কথা? আপনি আমায় চেনেন? মির্জার ছেলে! আর আমার নামের শেষে রাসের জায়গায় আকার বাদ দিলে যে রস বানান হয় আমি রসের বিপরীত। একদম রসকষহীন একটা মানুষ। আপনার মতো চিপ ক্লাসের প্রতি কখনোই ফিলিংস আসবে না। এবার দয়া করে আসুন ভদ্রতার সহিত এতোদিন সহ্য করেছি।
-মূল কথাটাই তো বলা হয়নি। আসলে আপনাকে আমি একটা কথা বলতে এসেছি। কিছু প্রমাণ দিতে এসেছি।
-আপনার আবার কথা! প্লিজ যান শত্রুর মেয়ে আবার আমায় কী প্রমাণ দিবে? রোহিত এ যদি না যায় এখন তাহলে কল লাগাও একে একবারে গুম করে দেওয়া যাক।
-আমি আপনার খারাপ চাইনা নেতা সাহেব!
-শত্রু সবসময় শত্রুর খারাপ চায় এটা সবাই জানে। সো প্লিজ আপনার বক্তব্য আপনার কাছে রাখুন।
-কিন্তু আপনি আমার শত্রু নন আমার ভালোবাসা!
ঠা’স করে চড় পড়ে যায় তাহিয়ার গালে। নিবরাস এতোক্ষণ ঠান্ডা মাথায় বললেও এখন ভীষণ রেগে যায়। সে বুঝতে পারছে তাকে পাষাণোর জন্য নতুন চাল এটা। হয়ত বিরোধী দলের পরিকল্পনা। না জানি কে আবার ভিডিও করে মিডিয়া পাড়ায় ছেড়েও দিলো নেতা নিরালায় দাঁড়িয়ে অষ্টদশী কন্যার সাথে প্রেমালাপ করছে। তারউপর যা মেয়ে! সরতে চাইছে না।
নিবরাস পুনরায় ধমক দিয়ে বলে,
– আত্মসন্মান থাকলে আর কখনো আমার সামনে আসবেন না।
তাহিয়া আর একমুহূর্ত ও দাঁড়ায়নি। সোজা চলে আসে। তার আত্মসন্মানে লেগেছে শেষের কথাটা। হ্যাঁ সে ভালোবাসে পাগলের মতো তবে প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনরকম। সে নিবরাসের ক্ষতি চায় না ভালো চায়। সীতারা আহম্মেদ সম্পর্কেই কিছু বলতে চেয়েছিলো। অথচ বলা হলো না। তাহিয়া ভাবছে কারোর মাধ্যমে প্রমাণ পাঠিয়ে দিবে। তবে নিবরাসের প্রতি অনেকটা অভিমান জমেছে। কী এমন ক্ষতি হয় তাকে গ্রহণ করলে? ভালোবাসা কী পাপ নাকী দোষের কিছু? সে তো পুরোদমে ভালোবেসেছে।
পায়ে হেঁটে কিছুটা সামনে আসতে তাকে কিডন্যাপ করা হয়। গোডাউনে নিয়ে গিয়ে হাত পা বেঁধে রাখা হয়। তবে বুঝতে পারেনি তাহিয়া কে এমনটা করছে। তখন আবার শামিম সরদার আসে। তাহিয়া তাকে দেখে বেশ চমকায়। শামিম সরদারের সাথে জায়ানের হাত আছে আর জায়ানের কলকাঠি তো সীতারা আহম্মেদ নাড়ে। তার মাথায় মূহুর্তে সীতারা আহম্মেদের কথা চলে আসে। তাহলে কী কোন ভাবে টের পেয়ে গেছে তাঁদের বিরুদ্ধের প্রমাণ তার কাছে সংরক্ষিত আছে আর সবগুলো নিবরাসকে দিতে চেয়েছে তাহিয়া।
শামিম সরদার একটা সিরিঞ্জ এনে তাহিয়ার সামনে নড়াছাড়া করে। তাহিয়া তা দেখে কিছুটা ভীতু চোখে তাকায়। তখন শামিম সরদারকে বলে,
-আমাকে এখানে আনার মানে কী? ফুপ্পি কোথায়? সে নিশ্চয়ই আমাকে এনেছে।
-হুম! তোমার ফুফির পরিকল্পনা সব।কী টাইমিং দেখো নিবরাসকে তোমার মৃত্যুর জন্য দায়ী করা যাবে। একটা কালো দাগ পড়ে যাবে তার ক্যারিয়ারে। উফফ কী বলবো তাহিয়া!
-আমায় মেরে ফেলবে?
-তা কী মনে হয় তোমার? তোমার ফুফির কালো ব্যবসা সম্পর্কে জানো তার বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করে নিয়েছো। এখন এটাও জানো তোমায় সে কিডন্যাপ করিয়েছে তোমার বেঁচে থাকার কোন মানেই হয়না।
-ওই মহিলাকে আমি এখান থেকে যেতে পারলে জু’তো পেটা না করেছি।
-যাবে কীভাবে সেটা বলো?
-আমায় ছাড়ো তোমরা।
-তোর বাপ আসলেও ছাড়াতে পারবে না। এই সিরিন্জে কী আছে জানিস?
না বোধকে মাথা নাড়ায় তাহিয়া। তখন শামিম সরদার হেঁসে বলে,
-বিষ আছে! বিষাক্ত সাপের বিষ। একটু পর তোর ফুফি এসে এটা তোকে পুশ করবে তারপর তোর ফেসটা একদম শেষ করে দিবে এসিড দিয়ে।
তাহিয়া চুপচাপ তাকায় সিরিঞ্জের দিকে।
তার ঘন্টা দুয়েক পর সীতারা আহম্মেদ আসে গোডাউনে। তাহিয়ার ফেসের দিকে তাকিয়ে নজর সরিয়ে নেন তিনি। এসিড দিয়ে একদম বাজে অবস্থা করে দিয়েছে শামিম সরদার। রেগে সামনের একটাকে চ*ড় মারে সীতারা আহম্মেদ। দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,
-আমি না আসার আগে এতো আপ্পায়ন করতে কে বলেছে? আমি বলেছিলাম একে আমি নিজ হাতে মারবো কত বড় কলিজা আমায় ফাঁসাতে চায়। আর এ তো এখন আধমরা হয়ে গেছে আমি কী মারবো?
তখন তাঁদের একজন বলে,
-মুখ বেশী চালাচ্ছিলো ম্যাম সেজন্য থামাতে শামিম স্যার রেগে এসিড ছুঁড়ে মারে। এখনো মরেনি ও! তবে মরে যেতে বেশীক্ষণ নেই বাকী কাজটা আপনি করে নিন!
হাত বাড়ায় সীতারা আহম্মেদ। তখন একজন তাকে সিরিঞ্জ দেয়। বিষের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে সীতারা আহম্মেদ। সোজা তাহিয়ার চেয়ারের কাছে যায়! গাড়ের টানা রগ যেটা মাথায় গেছে সেই রগে সিরিঞ্জটা পুশ করে। এটা তাইপেন সাপের বি*ষ। যেটা অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হয়েছে। সীতারা আহম্মেদের অস্ত্রের মূল হলো এই সাপের বিষ যেটা তার কাছে সংরক্ষিত আছে অনেক। তাইপেনের এক ছোবলে ৫০জনের অধিক লোক ও মারা যায়। সেখানে এক সিরিঞ্জ বিষ পুশ করা হয়েছে! মূহুর্তে রক্তে বিষ মিশে কালো হয়ে যায় শরীরের রং! ধবধবে ফর্সা শরীরটা মূহুর্তে অজানা নামহীন বি*শ্রী রং ধারণ করে।
মিনিট পাঁচেক পর বলেন,
-একে কোন নদীর কিনারায় ফেলে দিয়ে আয়। যাতে ভাবে একে খু*ন করেছে আর সেটা নেতা বাবাজি! সেটা যদি না হয় তাহলে বলবি আত্মহত্যা করেছে। আর টাকা যা লাগবে আমি দেবো। তবুও এর ম্যাটার ক্লোজ করে দে।
বেড়িয়ে আসে সীতারা আহম্মেদ। শামিম সরদারকে দেখতে পায়নি সে। হয়ত চলে গেছে ভেবে আর মাথা ঘামায় না সীতারা আহম্মেদ। জায়ানকে বলে রেখেছে যাতে গোডাউন পুড়িয়ে দেয়। কোন প্রমাণ কোথাও যাতে না থাকে।
এরই মাঝে তাহিয়ার লা’শ উদ্বার হয়। প্রথমত নিবরাসকে সন্দেহ করা হয়। কিন্তু প্রমাণ মেলাতে পারেনি। সবাই মোটামুটি জানে নিবরাস মেয়েদের ইগনোর করে আর তাহিয়া তার পেছনে ঘুরলেও সে পাত্তা দেয়নি।
নিবরাসের বিরুদ্ধে তেমন প্রমাণ না পেয়ে শামিম সরদারের উপর চাপ পড়ে। থানায় কী হয়েছে সেটা সীতারা আহম্মেদের অজানা। এই কেসটা দামা চাপা দিতে থানায় টাকা অফার করে। এসপি লোভী থাকায় বেশী ভাবতে হয়নি তাঁদের। শেষমেষ এটাকে আত্ন*হ*ত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। তবে তাহিয়ার পরিবার জানে নিবরাস তাহিয়ার খু*নি। নিবরাস জানে জায়ান খু*নি আর সীতারা আহম্মেদের লোক জানে তারাই আসল খু*নি। গল্পের মেড়টা তাড়াই ঘুরিয়ে দেয়। কারণ নিবরাস অনেক চালাক। নিজেকে একবারে ফ্রেশ রাখে কোন ধূলাবালি তার সুন্দর ক্যারিয়ারে লাগতে দেয়না। সীতারা আহম্মেদের প্লানিং ফ্লপ খায়। সে থেকে নিবরাসের উপর দ্বিগুন ক্রোধ জমা হয়। আনিসুল হক বেশী কিছু করতে পারেন না। থানার লোক নিজে থেকে সরে গেছে। নিবরাস তো একবারে ইনোসেন্ট! তারউপর সীতারা আহম্মেদ যা বুঝ দেওয়ার দিয়ে ফেলেছে। এই নিয়ে কত নিউজ সত্য,মিথ্যা রটেছে তবে নিবরাস মিডিয়ার লোকদের বলে দিয়েছে এসব কেসে তার নামের ট্যাগ বসালে সে আইনি ব্যবস্থা নিবে। একবারে চাকরী উড়িয়ে দিবে কয়েকজনের! সেই সাথে তাকে এসবে না জড়ায়।
আহিয়ার ক্রোধ একটাই। এতো কিছু হয়ে গেলো অথচ নিবরাস কীভাবে,কীভাবে বেঁচে গেলো। এই হিসাব মিলাতে আজোও তার ব্রেন অক্ষম! হয়ত ক্ষমতার জোর নাহয় কিছু সত্য,মিথ্য। এখনো সব ধোঁয়াশা!
নিবরাসের অধঃপতন না দেখা অব্দি তার শান্তু হবে না।
তার বোনটাকে সে আজোও মিস করে। চঞ্চল ছিলো তবে অনেকটাই সহজসরল ছিলো। নিবরাসের পেছনে ভালোবাসার জন্য কত দৌড়ালো। পাষাণ লোকটাকা ভালোবাসেনি তার বোনকে। তার বোন অভিমান,অভিযোগ,ভালেবাসা পাওয়ার তৃষ্ণা নিয়েই বিদায় নিলো।
আনায়া সন্ধ্যায় কফি বানায় সবার জন্য। তারিশা কফি এক চুমুক দিয়েই বলে,
-একদম জঘন্য হয়েছে। এতো তেতো কেন? সুগার দাওনি?
-কী জানি! আমার বানানো কফি মিষ্টি হলেও তোমার মুখে তেঁতোই লাগবে।
বাবা-মা তোমরা বলো কফি ঠিক আছে কীনা?
আনায়ার কথায় নিরব মির্জা কফিতে চুমুক দেয়। বেশী তারিফ করে। সাথে মরিয়ম নওয়াজ ও! সেই সাথে তারিশার দিকে সন্দেহের জাল ছিটিয়ে দেন মরিয়ম নওয়াজ! তারিশার হাব ভাব বেশী ভালো ঠেকছে না তার কাছে। আনায়ার পেছনে কেমন পড়ে আছে সেই সাথে কথাবার্তায় কেমন ক্ষোভ প্রকাশ করে তারিশা।
#চলবে