#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_৮
#জান্নাত_সুলতানা
-“মা বাবা কে আয়ান মামার সাথে কথা বলতে বলো।”
-“ও এখন রাজি হয় নি?”
-“না।আমার মনে হয় ও ভয় পাচ্ছে মা।”
-“হবে হয়তো।
আচ্ছা আমি তোর বাবার সাথে কথা বলবো।”
-“হুম। ”
সারা আহামেদ আর কিছু বলে না ছেলের মাথায় বিলি কাটতে থাকে।
সোহান যে আরভী কে ভালোবাসে সেটা সারা আহামেদ জানে।
তিনি প্রথমই বলে ছিল আয়ান চৌধুরীর সাথে কথা বলে সব পাকা করে রাখতে।
তবে সোহান না করেছে। সে চাইতো তার প্রেয়সীও তাকে নিজ থেকে ভালোবেসে মেনে নিক।
সোহান ওই দিন আরভীর চোখের ভাষা বুঝতে পেরেছে। নিজের জন্য এই ডাগর ডাগর আঁখি জোড়ায় ওর জন্য ভালোবাসা দেখেছে। মেয়ে টাও ওকে ভালোবাসে তবে কোনো এক অজানা কারণে তা প্রকাশ করছে না।
———-
রুহি,আরভী কে আজ সাদনান মির্জা ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জরুরি মিটিং থাকার কারণে তা আর হলো না।আয়ানও সাথে আছে।
রাহান কোথাও এক ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে গিয়েছে।অগত্যা সোহান আর প্রহর কে দিয়ে পাঠিয়েছে রুহি,আরভী কে।
প্রহর রাজি ছিল না। কিন্তু প্রিয়তা মির্জার জোড়া জুড়ি।আবার নিজেও কি ভেবে যেনো রাজি হলো।
কিন্তু সোহান বেশ খুশি। কেন না আবারও কিছু সময় খুব কাছ হতে প্রেয়সী কে দেখতে পাবে।
ওরা প্রথম এ আরভীর কলেজ যাবে কারণ রুহি আবদার জরেছে আরভীর কেলেজ দেখবে।
চার জন মিলে সারা বিকেল ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যা বাসায় ফিরে এলো।সাথে নিয়ে এসছে কিছু ভাজাপোড়া মূলত নিজেরা যা খেয়েছে তার সব কিছুই, সারা,প্রিয়তা,মাইশার জন্য নিয়ে এসছে।
তার পর আবার বসার ঘরে এক দফা আড্ডা দিয়ে যে যার রুমে চলে গেলো। ওরা চার জন আর নিচে আসবে না বলে জানিয়েছে।
বাহিরে ঘুরাঘুরি করে ক্লান্ত।
তাই আর কেউ দ্বিধা মত পোষণ করে নি।
রাত সাড়ে আটটা নাগাত আয়ান, সাদনান, রাহান বাসায় ফিরে।
সবাই ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
তবে এর মধ্যে সারা আহামেদ দুপুরে ছেলের বলা কথাও বলে দিয়েছে রাহান আহামেদ এর নিকট।
রাহান আহামেদও রাজি হয়েছে এখন কথা টা আয়ান আর সাদনান মির্জার কাছে পারতে পারলে হয়।
রাত নয় টা নাগাদ সবাই ডাইনিং এ উপস্থিত হলো।
খাবার খাওয়া শেষ সবাই ড্রয়িং রুমে বসে।
-“ভাই সোহান আরভী কে,,,
-“হুম আমি জানি। তবে আমি আমার ভায়রা ভাইয়ের মেয়ে কে তো আর বেকার ছেলের কাছে বিয়ে দিতে পারি না।
আশা করি আমি কি বলছি বুঝতে পরেছিস।”
-“হুম, তবে আমার ছেলে কিন্তু বেকার নয় ভাইয়া।
আমার ছেলে লেখা পড়ার পাশাপাশি তার বাবার সাথে নিজেদের ব্যবসাও সামলাচ্ছে। ”
সাদনানের কথায় মুচকি হেসে বলে সারা।আয়ান,মাইশা দু’জন তারা দর্শক।
-“ভাই আমি বলছিলাম কি।
এখন না হয় পাকাপাকি করে রাখা যাক?”
রাহানের কথায় আয়ানও যেনো কিছু টা মত আছে। সাদনান যেনো তা বুঝতে পারলো।
তবু্ও নিজে নিজের মত প্রকাশ করে দিলো।
-“আয়ান, মাইশা তোদের কি মত?
আর মেয়ে তোদের একার নয়।তাই আমি চাই রাহানের কথা থাক।”
আয়ান মুচকি হাসে আয়ান জানে সাদনান ওর চোখ দেখে বুঝতে পেরেছে। তবুও ফর্মালিটি করছে।
-“তোমার যা ভালো মনে হয়।”
আয়ানের সাথে তাল মিলিয়ে মাইশাও বলে
-“হ্যাঁ ভাই। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। ”
-“সে না হয় হলো।
তবে আরভী?”
প্রিয়তা মির্জা চিন্তিত কণ্ঠে বলে। সবাই কিছু টা ভাবনায় পড়ে প্রিয়তার কথায়।
তবে সাদনান মুচকি হাসে।
-“বাবাইর উপর দিয়ে আরভী কিছু বলবে না।
আর যেখানে নিজেও সোহান কে ভালোবাসে। ”
সাদনানের কথায় সবাই অবাক হয় শুধু রাহান,সারা বাদে।
তবে মুখে তা কেউ প্রকাশ করে না।
কারণ এটা জানা সাদনানের কাছে কোনো বিষয়ই না।
সাদনান নামক মানব টাই এমন। একটা রহস্যময়। যেখানে নিজের স্ত্রী এখনো তার রহস্যের উন্মোচন করতে পারেনি এতো বছরেও সেখানে আয়ান,মাইশার জন্য তো এসব বিলাসিতা।
-“তাহলে আমরা কুমিল্লা যাওয়ার আগেই কাজ টা সেরে ফেলা যাক।”
অতঃপর সবাই রাজি হলো।
তবে আয়ান শর্ত রেখেছে মেয়ের সাথে কথা বলে মেয়ে রাজি হলে তার পরই বিয়ে ব্যাপারে এগুবে নয়তো না।
এতে অবশ্য কারোর উপর তেমন প্রভাব বিস্তার করে নি।
কারণ আরভী নরম মনের, শান্ত আর চুপচাপ স্বভাবের। আরভী কখনো বাবার উপর দিয়ে কিছু বলবে না।
—————–
-“আল্লাহ আপনি কেন এসব করতে গেলেন?
আমি তো নামাজ টা শেষ করে এসে করতাম। ”
-“আমার ইচ্ছে। ”
-“তাই বলে এসব?”
-“তুই টেবিলে বস।
আমি খাবার দিচ্ছি। ”
সায়রার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো নিজে আদেশ করে।
অগত্যা সায়রা বাধ্য মেয়ের মতো গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে পরে।
সকালে খাবার মিশান বাইরে থেকে আনিয়ে ছিল। তার পর দু’জন খেয়ে ঘুমিয়ে ছিল। ঘুম থেকে দুপুরে উঠে সায়রা মিশান কে পাশে পায়নি।
ওয়াশরুমে নিজের মিশানের কাপড় রাখা ছিল। ভেবে ছিল ধুয়ে দিয়ে নামজ পড়ে নিবে। কিন্তু ওয়াশরুমের ভিতর কোনো কাপড় ছিল না।তাই বেলকনিতে গিয়ে দেখে।
আর সেখানেই দেখতে পায় নিজের আর মিশানের কাপড় ধুয়ে শুকাতে দেওয়া।
সায়রার আর বুঝতে বাকি থাকে না এসব মিশান করেছে। শুধু মুচকি হেসে ছিল।
অতঃপর ভেবেছিল নামাজ পড়ে রান্না করে নিবে।
কিন্তু রান্না ঘরে এসো দেখা মিলে মিশান অলরেডি রান্না করে নিয়েছে।
-“হা কর।”
সায়রা ভাবনার জগতে এতো টা বিভোর যে মিশান সামনে খাবার নিয়ে বসে সে টাও খেয়াল করে নি।
সায়রা ভাবনা বাদ দিয়ে চুপ চাপ হা করে তবে মুখে নিতে ঠোঁটে লেগে ঠোঁট জ্বলে উঠে।
-“জ্বলে।আমি খাব না।”
অসহায় ফেস করে বলে সায়রা
মিশান সায়রার ঠোঁটে হালকা করে নিজের ঠোঁট ছোঁয়া।
তার পর আদুরে কণ্ঠে জানায়
-“সরি জান।
খাবার টা খেয়ে নে।ঔষুধ দেবো।খেলে ঠিক হয়ে যাবে।”
সায়রা আর কিছু বলে না পানি নিয়ে কোনো রকম গিলে নেয় খাবার। সকালে খাবার টা ততটা ঝাল ছিল না
তাই তখন এতো টা বুঝতে পারে নি তবে এখন বেশ জ্বলছে ঠোঁটে।
সায়রা কে খাইয়ে দিচ্ছে সাথে নিজেও খাচ্ছে মিশান।
খাওয়া শেষ মিশান সব গুছিয়ে রাখে।
সায়রা করতে চেয়েছিল তবে মিশান দেয় নি। সব গুছিয়ে রেখে এসে সায়রা কে চেয়ার থেকে কোলে করে রুমে এনে বিছানায় শুয়ে দিয়ে সায়রা কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে মিশান।
-“সকাল থেকে আমাক পাগল করে রেখেছি।
এখন আমি ঘুমবো সাথে তুইও।”
-“আপনি ঘুমুতে পারেন নি আপনি ঘুমান।আমাকে ছাড়ুন।
আমি ঘুমবো না।”
-“দেখ বেশি নড়াচড়া করবি না। না ঘুমালে চুপ করে শুয়ে থাক আর আমাকে ঘুমুতে দে।”
-“আরে,,,
আর কিছু বলতে পারে না সায়রা মিশান তার আগেই ওর মুখ নিজের ঠোঁট দ্বারা বন্ধ করে দেয়।
গাঢ় একটা চুম্বনে আবদ্ধ হয়।এখন আর তেমন একটা কষ্ট হয় না সায়রার এখন নিজেও সাথে সাথে রেসপন্স করে।
বেশ অনেক টা সময় পর মিশান সায়রা কে ছেড়ে দিয়ে। ওকে নিচে ফেলে ওর উপর চেপে বসে
অতঃপর নেশা মিশানো কণ্ঠে বলে উঠে
-“ঘুমিয়ে গেলো বেঁচে যেতি।
তবে এখন যা হবে সব টার জন্য তুই দ্বায়ী, সুইটহার্ট।
কথা শেষ করেই নিজের হাতের এলোমেলো স্পর্শে পাগল করে মেয়ে টা কে অতঃপর দুজন পাড়ি দেয় ভালোবাসার সমুদ্রের।
#চলবে…..
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]