#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_৪
#জান্নাত_সুলতানা
-“এমন ভাবে বলছেন মনে হয় আমি আপনা কে বিয়ে করতে সেজেগুজে বসে আছি,হুু।”
ফিসফিস করে কথা টা বলেই সায়রা ভেংচি কাটে।
মিশান মুচকি হাসে।
অতঃপর মিশান নিজেও সায়রার মতো ফিসফিস করে বলে
-“সেটা তো সময় হলেই দেখা যাবে, সুইটহার্ট। ”
মিশানের কথা শুনে সায়রা খাবার তালুতে উঠে।
সাদনান মির্জা তড়িঘড়ি করে মেয়ের মুখের সামনে পানি ধরে।
সায়রা বাবার হাত হতে পানির গ্লাস নিয়ে সবটা পানি এক চুমুকে খেয়ে নিলো।
-“বাবা আর না।
তুমি খেয়ে নেও। ”
কথা টা সাদনান মির্জা কে উদ্দেশ্য করে বলেই আর এক দন্ড চেয়ারে বসে না। হন্তদন্ত হয়ে উঠে উপরে নিজের রুমে যেতে যেতে বিরবির করে নিজে নিজেই বলে উঠে
-“মিশান ভাই কি করে এতো টা স্বাভাবিক আছে?
আচ্ছা এটা কি ঝর আসার পূর্বাভাস? ”
———–
-“এখন নিশ্চয়ই তোমার মেয়ে কে আমার সাথে বিয়ে দিতে কোনো সমস্যা নেই বাবাই?
আমি বাবা-মা কে রাতে তোমার সাথে কথা বলতে পাঠাবো।”
মিশান গাড়ি চালাতে চালাতে সাদনান মির্জা কে বলে।
-“আচ্ছা।”
সাদনান মির্জা ছোট করে বলে
তিনি এটা এই পাঁচ বছরে হারে টের পেয়েছে এই ছেলে তার মেয়ে কে তার চাইতেও বেশি ভালোবাসে।
আর কি বা বলবে? ওনি তো নিজেই কথা দিয়েছে লেখা পড়া শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে তার মেয়ে কে মিশান এর সঙ্গে বিয়ে দেবে। এখন তো মিশান প্রতিষ্ঠিত।
আর সেই সাথে দিয়েছিল কিছু কঠিন শর্ত। সেই জন্যই তো সায়রা আর মিশান এর দূরত্ব টা আজ এতো বেড়েছে। আর সেই দূরত্ব তো ওনাকেই মিটিয়ে দিতে হবে।
তবেই না মিশান যেমন তার কথা রেখেছে তেমন ওনাকেও তো নিজের কথা রাখতে হবে।
যদি সেই কথা রাখতে মেয়ের প্রতি একটু কঠিন হতে হয়। তা হলে না হয় তাই হবে।
কিন্তু যোগ্য পাত্রের হাতে তো তোলে দিতে পারবে।
—————-
-“সোহান ভাই আমার কলেজ লেট হয়ে যাচ্ছে।
আপনি কেন গাড়ি ওই দিকে নিচ্ছেন? ”
সোহান হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে দিয়ে আরভী কে নিজের নিকট আনে।
নিজের শক্ত খসখসে চামড়ার হাত জোড়া দ্বারা মেয়েটার নরম তুলতুলে ছোট মুখশ্রী হাতের আঁজল নিয়ে কাতর কন্ঠে প্রশ্ন করে
-“এই পুচকে তুই সত্যি কিছু বুঝিস না?”
-“কি বুঝার কথা বলছেন সোহান ভাই?”
ষোড়শী কন্যা আরভী কিছু বুঝতে পারে না।সোহান ভাই কেন এমন প্রশ্ন করছে? আর ওনি ওর এতো টা কাছেই বা কেন এসছে?তবে কিশোরীর আরভীর সোহানের এমন চাউনি। খুব করে মন টা খারাপ করছে।ওনি কেন মুখ এমন মলিন করে রেখেছে? ওনাকে এভাবে দেখতে মোটেও ভালো লাগছে না এই ছোট্ট আরভীর। নিজেও মলিন করে মুখ।অতঃপর অবুঝ গলায় উল্টো প্রশ্ন করে সোহান নামক সুদর্শন যুবক টা কে।
-“তুই এতো টাও ছোট নয়।
তুই কি কিছুই বুঝতে পারিস না?কেন আমি সব কিছু ছেড়ে ছুঁড়ে কয় দিন পর পর ঢাকা আসি? কেন রাত বিরেতে তোর কাছে একটু কল দেই? তোর কোনো আবদার কেন আমি ফেলে দিতে পারি না?
এই পুচকে বল না তুই কি কিছু বুঝতে পারিস না?”
কথা গুলো বলেই সোহান আরভীর কপালে আলতো করে নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয়।
আরভী আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়।
ও যে বুঝে না এমন টা নয়। বুঝে তবে ভয় হয়। যদি বাবা বা বাবাই রা কেউ জানতে পারে?তারা যদি ভবিষ্যতে না মেনে নেয়? তখন তো বেশি কষ্ট হবে । এই জন্যই তো অনূভুতি গুলো কখনো প্রকাশ করে না। নিজের মাঝেই সেই দুবছর ধরে চাপা দিয়ে রেখে আসছে। আর
তাই তো সোহান নামক সুদর্শন যুবক টার নিকট হতে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায় সব সময় তবে আজ মনে হয় আর সেটা এই লোক করতে দিবে না।
বুকের ভিতর লুকানো সব অনূভুতি মুখ দিয়ে বেড় করেই ছাড়বে।
-“এই পুচকে বল না কিছু। আমার ভিষণ বাজে ভাবে এখানে ব্যথা হয়। তোরও কি এমন হয়?”
নিজের এক হাত দ্বারা নেবি কালার সার্ট এ মোড়ানো শরীরে বুকের বা পাশে টায় ইশারা করে বলে।
-“আমার কেন এমন হবে সোহান ভাই?
আমারতো বুকে ব্যথা করে না।
আপনি ডাক্তার দেখান।
আপনার মনে হয় বড় কোনো অসুখ করেছে।”
-“ডাক্তার দেখাতে হবে নারে।
তুই আমার হলেই ভালো হয়ে যাবে।”
-“আমার লেট হচ্ছে সোহান ভাই।”
সোহান আরভী কে আবারও পূর্বের স্থানে বসিয়ে দেয়।
কিছু ভাবে। এই মেয়ে এভাবে কিছুতেই রাজি হবে না সোহান বুঝতে পারলো।
কারণ এর আগেও আরভী কে সোহান বেশ কয়েক বার ইংগিত দিয়ে বুঝিয়েছে।তখন ভাবতো আরভী ছোট্ট তাই হয়তো এতো গভীরে ভাবে না।
কিন্তু আজ সরাসরিও যখন মেয়ে টা কথা টা এড়িয়ে যাচ্ছে।
তার মানে নিশ্চয়ই কোনো কারণ তো আছেই।
-“চল যা ক্লাস শুরু হতে এখনো তেরো মিনিট বাকি আছে।
আমি নিতে আসবো।”
-“আচ্ছা। ”
ছোট জবাব দিয়ে আরভী গাড়ি হতে খুশি খুশি মনে নেমে কলেজের ভিতর চলে এলো।
ও আজ ভিষণ খুশি। খুশি হবে না?
ওর ভালোবাসার মানুষটাই ওকে আজ প্রপোজ করেছে।ভাবতেই আনন্দে মেয়েটার চোখ চিকচিক করে উঠে।
তবে পরক্ষণেই কিছু মনে পড়তে হাসি খুশি মুখটা মলিন হয়ে আসে।
—————-
-“তাহলে কালই একটা কাজি ডেকে নেই।
আর আমাদের সবাই তো এখন ঢাকাতেই রয়েছে।
কি বলো সাদনান ভাই?”
আয়ান চৌধুরী সাদনান মির্জার উদ্দেশ্য বলে।
সাদনান মির্জা হালকা হাসে। বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলে
-“হুম তোর যা ভালো মনে হয়।”
-“কিন্তু সায়রা কি রাজি হবে ভাই?”
সারা আহমেদ প্রশ্ন করে
-“এসব নিয়ে তোরা ভাবিস না।
আমি আমার মা কে রাজি করিয়ে নেব,,
-“কি রাজি করাবে?
তোমার ভায়রা ভাই এর ওই চরিত্রহীন ছেলে কে বিয়ে করে নিতে?
তবে এরকম ভেবে থাকলে কান খুলে শুনে রাখো।
আমি কিছুতেই মিশান ভাই কে বিয়ে করবো না।”
কথা গুলো বলতে বলতে সায়রা ঘরের ভিতর প্রবেশ করে।
প্রিয়তা মির্জা এগিয়ে গেলো। সারাও গেলো সাথে মাইশা। ওরা জানে প্রিয়তা এখন মেয়ে কে বেশ কিছু কটু কথা শুনাবে আর হলো তাই সায়রা কেন বড়দের মাঝে কথা বলতে এলো এই নিয়ে মেয়ে কে আচ্ছা মতো জারতে লাগলো প্রিয়তা মির্জা।
মাইশা সায়রা কে আগলে নিলো।
সারা প্রিয়তা মির্জা কে থামানোর চেষ্টা করছে।
ততক্ষণে রুহি,আরভী,প্রহর,সোহান সবাই সাদনান প্রিয়তার বেড রুমে হাজির হয়েছে শোরগোল এর আওয়াজে।
মিশান বাসায় নেই মূলত সন্ধ্যা অফিস থেকে ফিরে কোথাও বেড়িয়েছে।বলেছে ডিনার করে ফিরবে।
তাই সবাই ডিনার করে নিয়েছে।রাত প্রায় এগারো টার কোঠা পেড়িয়েছে।
-“আমি আপনার মতামত চাইনি।
আর কালই বিয়ে। মিশান কেই বিয়ে করতে হবে আপনার।
যে যার ঘরে যাও।”
সাদনান বেশ শান্ত কন্ঠে জানায়। অতঃপর দরজার পাশে দাঁড়ানো আরভীদের সকল কে উদ্দেশ্য পরের কথা টা বলে।
সায়রা যেনো স্তব্ধ।কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।বাবা কখনো এমন করে কথা বলে নি আজ নিয়ে দু’বার এমন করে কথা বলল।
প্রথম বলেছিল যখন ও এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর যখন বলেছিল ও আর পড়তে চায় না তখন। আর আজ দ্বিতীয় বার বিয়ে নিয়ে।
কিন্তু ও মিশান কে বিয়ে করবে না। কিছুতেই না।
কিন্তু ভয়ে এই কথা গুলো কণ্ঠনালি দিয়ে এসব কথা পেট হতে মুখ পযন্ত আসতে চাইছে না।
————
রাত প্রায় একটা মিশান বাড়ি ফিরছে। সায়রা এতোখন বেলকনিতে বসে মিশানের ফিরার অপেক্ষা করছিল।
মিশানের গাড়ি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে দেখেই সায়রা নিজের ঘর ছেড়ে মিশানের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়াল।
মিশান ভাইকে সরাসরি বলে দিবে ও তাকে বিয়ে করতে চায় না।
কিন্তু আদোও কি ও এসব কথা মিশান ভাই কে বলতে পারবে?
যতই রাগ, অভিমান, অভিযোগ থাক দিন শেষে তো এই ব্যক্তি টা কে ভালোবাসে।
দিনের আঁধারে যতই সবার সামনে হাসি খুশি থাকে।রাত হলে তো এই ব্যক্তি টাকে নিয়েই ভাবতে ভালো লাগে।
কিন্তু মিশান নামক পাষাণ পুরুষ কে সে সব কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না।
এসব ভাবতে ভাবতেই সায়রা এসে মিশানের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়াল।
কিন্তু কোনো এক অজানা ভয়ে ওর হাত – পা সব কাপছে।
মিনিট পাঁচ এক এর সময় ধরে সায়রা মিশান এর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তবে ভিতরে যাওয়ার মতো সাহস পাচ্ছে না।
-“তুই ভিতরে আসবি না আমি ঘুমিয়ে যাব?”
সায়রা চমকালো হকচকিয়ে উঠলো ।মিশান ভাই কি করে বুঝলেন ও এখানে দাঁড়িয়ে আছে?দেখার তো কোনো সুযোগ নেই।
এসব ভাবনার মাঝেই সায়রা কে হেঁচকা টানে মিশান কক্ষের ভিতর নিয়ে দরজা পাশে দেওয়ালে চেপে ধরে।
-“কি করছেন?দূরে যান।”
সায়রা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আমতা আমতা করে বলে।
-“এখন ভয় কেন পাচ্ছিস?
বল কি বলতে যেনো এসছিস?
হ্যাঁ মনে পরেছে। তুই আমার মতো চরিত্রহীন ছেলে কে বিয়ে করবি না।
এটাই তো?”
-“হ্যাঁ। যা শুনেছেন একদম সঠিক কথা শুনেছেন। করবো না আমি আপনার মতো ঠকবাজ,চরিত্রহীন,,
আর কিছু বলতে পারে না সায়রা সে পথ যে মিশান বন্ধ করে দিয়েছে।
নিজের ওষ্ঠ দ্বারা মেয়েটার ওষ্ঠ চেপে ধরে।
সায়রা বিষয় টা বুঝতে সেকেন্ড এর মতো সময় লাগলো।
পরক্ষণেই বুঝতে পেরে মেয়েটার সারা শরীর জমে গেলো।
মিশান দু হাতে শক্ত করে সায়রার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের আরো কিছু টা নিকটে নিয়ে এলো।
সায়রা হাত দিয়ে মিশান কে ঠেলে সড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
তবে সে ব্যর্থ। এক ফোঁটাও নড়াতে পারলো না মিশান কে। এম বলিষ্ঠ শরীরে একটা পুরুষ কে ওর মতো একটা মাছি ঠেলে সরিয়ে দেওয়া বিলাসিতা। সায়রা দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়।
মিশান বেশ সময় নিয়ে সায়রা কে ছেড়ে দিয়ে ওর মুখ টা দু হাত মাঝে নিলো।
সায়রা চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানছে।
অতঃপর চোখ পিটপিট করে সামনে তাকালো।
মিশান এখনো ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
সায়রা মিশানের চোখাচোখি হতেই বুকের ভিতর ধক করে উঠলো।
সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামায় সায়রা।
মিশান এক মোহনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-“আমি তোকে সে দিন ফিরিয়ে দিয়েছি ঠিকি।
তবে আমি তোকে বলেছিলাম যে দিন লেখা পড়া করে আমার যোগ্য হতে পারবি।
সে দিন আমি তোকে বিয়ে করবো। ”
-“কিন্তু আমি এখন আপনা কে বিয়ে করতে চাই না।”
-“তুই চাস বা না চাস। তুই শুধু আমার আর আমাকেই তোকে বিয়ে করতে হবে।
নিজ ইচ্ছায় করলে ভালো। আর নয়তো আমি আমার মতো করে তোকে নিজের করে নেবো, সুইটহার্ট। ”
#চলবে….