#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_৩
#জান্নাত_সুলতানা
-” তবে তোর ঠোঁট গুলো কিন্তু দেখতে একদম চেরি’র মতো।
একবার টেস্ট করব,,,
মিশান কে সব টা সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই
সায়রা মিশান কে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিয়ে নিজে কে ছাড়িয়ে নিলো মিশানের শক্ত বাঁধন হতে।
অতঃপর ঘৃণার দৃষ্টি তাকায় মিশানের দিকে।
মেয়ে টার চোখ চিকচিক করছে।
ঘৃণায় ওর সারা শরীর কাপছে। কন্ঠ নালি দিয়ে কোনো শব্দ বেড় করতে পারে না।
কিন্তু ওর ইচ্ছে করছে মিশান কে কিছু কটু বাক্য শুনিয়ে দিতে।
মিশান কে লেখা পড়া করার জন্য লন্ডন পাঠানো হয়েছে।
মানে ভালো ভাবে পড়া লেখা করে যেনো সে জন্য। সুশিক্ষিত হওয়ার জন্য।
কিন্তু সায়রার মনে হচ্ছে ভালো নয়,সুশিক্ষিত নয়, বিদেশে থেকে বিদেশি হাওয়া মিশান একজন অসভ্য, লজ্জাহীন মানুষে পরিণত হয়েছে। না হলে একটা মেয়ে কে কি করে এমন অসভ্য মার্কা কথা বলতে পারে।
মিশান এখনো বাকা হেসে তাকিয়ে আছে। এটা দেখে সায়রার আরও রাগ লাগলো তবে কিছু না বলেই এক ছুটে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ে।
মিশানের চোখে মুখে তখন লেগে রয়েছে এক অদ্ভুত রকম হাসি।
অতঃপর নিজের ডান হাত দ্বারা মাথার চুল খামচে ধরে বিরবির করে বলে
-“এখন তো কিছুই করলাম না তার আগেই এমন অবস্থা।
সবে তো শুরু। তোমাকে তো আরও অনেক কিছু সহ্য করতে হবে, সুইটহার্ট।
কথা গুলো বলেই কফির মগ হাতে সেটায় চুমুক বসায় মিশান।
—————-
রাত বারো টার বেশি সময় বাজে।
সবাই খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গিয়েছে।
বসার ঘর খাবার ঘর একদম নিস্তব্ধতা বিরাজমান।
রুহি পানি নিতে এসছে। রুমে পানি নেই আর আরভী ঘুমি আছে। তাই আর ডাকতে ইচ্ছে করে নি। কিন্তু এখন উপর থেকে নিচ পযন্ত এসে বেচারি চার পাশ এমন স্তব্ধ দেখে ভয়ে কোনো দিক নড়াচড়া করার সাহস কুলিয়ে উঠতে পারছে না। শুধু এদিক ওদিক নজর ঘুরিয়ে দেখছে।
যদি কেউ আসে। সে আশায়। আর এলো কেউ উপর থেকে ঠকঠক শব্দ করে সিঁড়ি বেয়ে নামছে।রুহি সিঁড়ি হতে একটু সামনে দাঁড়িয়ে।
পেছন ফিরছে না। মেয়ে টা ভয় পাচ্ছে।
প্রহর এমনিতেও অনেক রাত অব্দি পড়ে। আর এখন তো কয় দিন পর পরীক্ষা সেই জন্য একটু বেশি রাত জাগে। আর রাত জাগলে প্রহর কফি খেতে হয়।তাই কফি বানাতে এসছে।কিন্তু ড্রয়িং পেরিয়ে যাবার সময় সামনে কাউ কে নজরে এলো।
-“কে? আরভী?”
প্রহর ভাবছে আরভী। তাই প্রশ্ন করে।
-“না আমি রুহি। ”
কথা টা বলতে বলতে প্রহরের দিকে ফিরে রুহি।
-“ওহ আচ্ছা। এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে?শরীর খারাপ লাগছে? ”
-“না আসলে ভাইয়া। আমি পানি নিতে এসছি। কিন্তু ভয় লাগছিলো তাই,,
রুহি আমতা আমতা করে। প্রহরের ভ্রু কুঁচকে আসে। এই মেয়ের বয়স তো সতেরো আশেপাশে হবে হয়তো। বিয়ে দিলে তো বাচ্চা কাচ্চা দু এক টা থাকতো। সে তো শুনে ছিল তার দাদির ষোল বছরে বিয়ে হয়েছে। আর মায়ের সতেরো।আর নিজের সায়রা ফুফির আঠারো। আর এই মেয়ে কি না সামান্য পানি নিতে এসে ভয় পাচ্ছে।
-“তুমি করেই বলি। কারণ তুমি হয়তো আমার বছর তিন বা এর চেয়ে ছোট হবে।
তুমি আমার সাথে এসো। আমি রান্না ঘরে যাচ্ছি কফি বানাতে।”
-“আচ্ছা। ”
রুহি মনে মনে প্রহর নামক এই সুদর্শন যুবক টা কে বেশ কয়েক বার ধন্যবাদ জানালো।
তার পর প্রহরের পেছন পেছন রুহিও রান্না ঘরে এসে ফিল্টার হতে জগে পানি নিয়ে নেয়।
প্রহরও কফি বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
রুহি পানি নিয়ে প্রহরের থেকে কিছু টা দূরে রান্না ঘরের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
-“তোমার জন্য করবো ?”
-“না ভাইয়া। ”
প্রহরও আর কিছু বলে না কফি নিয়ে আবারও প্রহর রান্না ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে উপর নিজের রুমে দিকে হাঁটা ধরে।
রুহিও প্রহর কে অনুসরণ করে।
-“ধন্যবাদ ভাই।”
রুহি আরভীর রুমের সামনে এসে পেছন থেকে মুচকি হেসে বলে উঠে।
প্রহর পেছন ফিরে উত্তর বিনিময় নিজেও হালকা হেসে চলে আসে। রুহি রুমে চলে যায়।
—————–
-“আমি তো চেয়েছিলাম তোকে সুইটহার্ট।
কিন্তু তোর হারামি বাপ। তোকে আমায় দিলো না। আর উল্টো শর্ত জুড়ে দিলো।
বলে কি না তার মেয়ে কে মন থেকে ভালোবাসতে হবে।
কেন? আমি কি তোকে আবেগ দিয়ে ভালোবাসি? কিন্তু তুই আমার আবেগ, মোহ কোনো টাই না। তুই তো আমার ভালোবাসা।
এতো দিনে নিশ্চয়ই তোর বাপ সে টা বুঝে গিয়েছে। এখন ভালোয় ভালোয় তোকে আমায় দিয়ে দিলেই হয়।
আর না দিলেই বা কি আমি তোকে আমার করে নেবো,হুু।”
কথা গুলো বিরবির করে বলেই মিশান সায়রা নামক ঘুমন্ত রমণীর কপালে খুব সাবধানের সহিতে নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয়।
তার পর অনেকখন তার প্রেয়সীর পাশে বসে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে।
যেনো বহু দিনের তৃষ্ণার তো।হুম বহু দিনেরই তো কত টা দিন সাপ্তাহ মাস বছর দূরে থেকেছে শুধু ও মেয়ে টা কে সারা জীবন কাছ থেকে দেখবে বলে একটু ভালেবাসবে বলে।
রাত দু টার বেশি সময় বাজে। ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে।
মিশান তার প্রেয়সীর কপালে আবারও ওষ্ঠ ছুঁয়ে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এলো নিজেও ঘুমানো দরকার একটু। কাল আবার বাবা আর বাবাইর সাথে অফিস জয়েন করতে হবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই মিশান গিয়ে নিজের রুমে শুয়ে পরে।
সায়রা রাতে দরজা আটকে ঘুমায় না। কারণ সাদনান মির্জা রাতে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে মেয়ে কে দু তিন বার এর মতো করে দেখে আসে। মেয়ে তার বড্ড শখের। ভালোবাসার প্রথম চিহ্ন।
আর এই সুযোগ টাই মিশান কাজে লাগিয়ে সাদনান মির্জা বেড়িয়ে যাওয়ার পর পরই নিজে গিয়ে প্রেয়সীর পাশে বসে ছিল।
————
সকালে সবাই ডাইনিং টেবিল বসে। সারা,মাইশা,প্রিয়তা তিন ননদ,ভাবি, বোন মিলে সবাই কে নাস্তা টেবিল সহ রান্না ঘরে ছুটাছুটি করে সবাই কে সকালের খাবার দিচ্ছে।
মিশান আর প্রহর এখনো আসে নি।
ওদের ডাকা হয়ছে।তারা ফ্রেশ হয়ে আসছে।
সকলা আট টার বেশি সময় বাজে এখন।
সায়রার ওর বাবার পাশে বসে।
ওর ডান দিকের চেয়ার টা ফাঁকা এটাতে সব সময় প্রহর বসে। তার পর আরভী আর সাদনানের বরাবর বসে আয়ান আর ওপাশেও তিন টা চেয়ারে খালি থাকে তবে আজ সদস্য সংখ্যা বেড়েছ। সোহান, রাহানও সাথে যোগ হয়েছে। এখন এ পাশে একটা চেয়ার ফাঁকা ওপাশে একটা ফাঁকা রয়েছে। রুহি এখনো ঘুমিয়ে আছে।
ও আরও পরে উঠবে।
সায়রা কে সাদনান মির্জা খাবার মুখে তোলে খাইয়ে দিচ্ছে। এটা ওনি নতুন নয় বাসায় থাকলে সব সময়ই মেয়ে কে নিজে হাতে খাইয়ে দেয়।
সায়রা এক মনে খাবার গিলেই যাচ্ছে ওর কোনো দিকে নজর নেই।
কিন্তু এতো মনযোগ সহকারে খাবার খাওয়াতে কেউ নষ্ট করে দিয়ে ঠকঠক শব্দ করে উপর হতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে।
বিরক্ত ভরা মুখ নিয়ে সায়রা সহ বাকি রা সবাই সিঁড়ির দিকে তাকাতেই একজন সুদর্শন পুরুষের দেখা মিলে।
আর সে সুদর্শন পুরুষ কে দেখে সায়রা বিরক্ত ভুলে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলো।
কারণ সেই সুদর্শন পুরুষ টাও যে তারই ভালোবাসার মানুষ মিশান। মিশান একদম রেডি হয়ে নিচে এসছে।
কালো সুট পরে আছে।সুন্দর শরীরের কালো রং টা যেনো ভিষণ ভাবে আকর্ষণ করছে সায়রা কে।
সায়রা খাবার মুখ নিয়ে সে টা আর নড়াচরা করছে না।
মুখে নিয়ে বসে আছে।
সায়রা চেয়ে থাকতে থাকতেই মিশান এসে ওর পাশের চেয়ের টায় ধপ করে বসে পড়ে।
তার প্লেট উল্টে সারা আহমেদ কে খাবার দিতে বলে।
অতঃপর সায়রার দিকে হালকা ঝুঁকে ওষ্ঠ নেড়ে কিছু আওড়ায়
-“আমাকে চোখ দিয়ে বিয়ের পরেও গিলতে পারবি।
এখন না হয় মুখের খাবার টা গিলে নে।”
#চলবে..
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]