#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#অন্তিম_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা
-“কলিজা আর একটু এই তো আমরা এসে পরেছি।
তুই চোখ বন্ধ করিস না কষ্ট করে একটু,,,
-“মিশান,,মিশান,,
-“হ্যাঁ,হ্যাঁ?
বেশি কষ্ট,,,
-“আপনি শান্ত হোন আমি ঠিক আছি।
আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন আমার কিছু হবে না।”
মিশান শোনে না বউয়ের কথা।
উল্টো নিজের বাবা কে তাগাদা দেয়
-“বাবা আরও একটু জোরে চালাও না।”
ছেলের কণ্ঠ উত্তেজিত সাথে কি করুন আয়ানের বুক ধক করে উঠে।
আয়ানের পাশে বসা সাদনান মাইশা,প্রিয়তা মিশান কে আশ্বাস দেয়।
এটা ওটা বোঝাতে থাকে।
আর আয়ান নিজের কিছু পুরোনো সৃতিচারণ করে।
যখন মাইশা চৌধুরী লেভার পেইন উঠে ছিল মিশানের সময় তখন কি ভয় টা না পেয়ে ছিল তবে আয়ানের বাবা ছিল আশ্বাস দিয়েছে সাথে ছিল সাথে এখন বর্তমান অবস্থানরত পরিবারে প্রতি টা সদস্য।
যদিও সেই মানুষ গুলো এখন বেঁচে নেই।
তবে শুধু ছিল না মা।তাই তো সায়রা যখন সাদনান মির্জার ঘর আলো করে এসেছি তখন “মা” ডেকেছে।
আর আজ চব্বিশ বছর পর সেই মা আজ নিজের সন্তানের জন্ম জন্য আজ ব্যথায় ছটফট করছে।
—————
দেখতে দেখতে সাত টা মাস কেটে গিয়েছে। আজ নয় মাসের শেষ এর দিকে সায়রার লেভার পেইন উঠেছে। যদিও সময় এখনো আসে নি। সামনে আরও পাঁচ সাত দিনের মতো বাকি ছিল। তার আগে লেভার পেইন উঠেছে।
রুহি প্রহর এর বিয়ে হয়েছে দু মাসের বেশি সময় হবে।
ইনিয়া শশুর বাড়ি আছে। ইনিয়ার দেবরও বিয়ে করেছে।রুহির এক ফ্রেন্ড কে।মূলত রুহির এনগেজমেন্ট হয়ে যাওয়াতে বেচারা কষ্ট পেয়েছিল। কারণ রুহি কে ওর ভালো লাগতো তবে এনগেজমেন্ট হওয়ার পর সে টা বেশি করে উপলব্ধি করতে পারছিল।
আর তাই নিজের মনে কথা গুলো বলতে এক দিন রুহির কলেজে গিয়ে ছিল নিজের মনের কথা গুলো বলে চেষ্টা করতে চেয়েছিল রুহি কে নিজের করে পাওয়ার। তবে সেখানে যাওয়ার পর রুহির এক ফ্রেন্ড কে ওর ভালো লেগে যায়। আর সেখানে থেকেই মেয়ে টার সাথে কথা হতো। তার পর পরিবার নিয়ে মেয়ে টা কে বিয়ে করে নেয়। মাসখানেক হবে।
সারা আহামেদ এবার তার কথা রেখেছে।
ঢাকাতেই ভাইয়ের বাড়িতে রয়ে গিয়েছে।
আর তাদের ঢাকায় যে কোম্পানি টা আছে।সেটার দেখভাল করে দুই বাপ ছেলে মিলে।
—————-
-“মা কে একদম জ্বালবে না।
okay?”
দুই টা দুই বছরের বাচ্চা কে মিশান কথা গুলো আদুরে কণ্ঠে আদেশের সুরে বলে উঠে।
-“okay পাপা।”
দু জনেই আদোও আদোও কণ্ঠে জবাব দেয়।
মিশান মুচকি হেসে ওদের দু জন কে কোলে নিয়ে উঠে রুম থেকে বেড়িয়ে লিভিং রুমে আসে।
ওরা এখন নিচে থাকে তার কারণ প্রথম সায়রা ছিল প্রেগ্ন্যাসির সময় আর এখন এই বাচ্চা পাটি।
উপরে থাকলে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে কখন কোথায় পড়ে ব্যতা ট্যথা পেয়ে যায় ঠিক নেই। মিশা কোনো রিস্ক নিতে চায় না
তাই মিশান রা এখন নিচে একটা রুমে থাকে।
মিশান বাচ্চা দের নিয়ে লিভিং রুম আসতেই দেখা মিলে সবার। সাদনান মির্জা নাতনি কে আদুরে কণ্ঠে ডেকে উঠে
-“মিশ্র নানু ভাই।”
কথা টা বলতে বলতে মিশানের কোল হতে মিশ্র কে নিয়ে সোফায় বসে আদর করতে লাগলো।
সারা আহামেদ এসে সায়ন কে কোলে তুলে আদর করতে থাকে।
আর বাকি রা ডাইনিং এ সকালের নাস্তা রেডি করছে।
মিশান বউ কে খুঁজছে।
অনেকক্ষণ খোঁজার পর দেখা মিলে রান্না ঘর থেকে ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসছে।
মিশান বেশি কিছু না ভেবে চেয়ারে বসে পড়ে।
আস্তে আস্তে সবাই এসে গেলো।
সবাই নাস্তা করতে লাগলো।
আর সারা আহামেদ মিশ্র আর সায়ন কে তাদের খাবার খাইয়ে দিতে লাগলো।
—————–
দেখতে দেখতে দু টি বছর কেটেছে। সে দিন মিশান আর সায়রার ঘর আলো করে তাদের দু টি চাঁদ হয়েছে।
টুইন বেবি হয়েছে যদিও আগে টেস্ট করে তাড়া জানতে পেরেছিল। সায়রা বেবি হওয়ার ছয় মাস পযন্ত অসুস্থ ছিল। বেবিদের দেখাশোনা সাথে সায়রার অসুস্থ।
সব মিলিয়ে মিশান অবস্থা করুন ছিল।
যদিও তার বেশি কিছু করতে হয় নি।দুই মা সাথে এক মনি।
তার সাথে রয়েছে রুহি, আরভী তবুও বউ তার অসুস্থ নিজের কেমন অশান্তি লাগতো।
সায়রা যখন ওটিতে ছিল ডক্টর তখন বলেছিল দুই টা বেবি হয়তো বাঁচাতে পারবেন না তখন মিশান মনে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।
তার পর সায়রা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলো। আর আজ দু বছর পর দু।দিন আগে যখন মিশানের সাথে আবারও বাচ্চার কথা উঠলো তখন মিশান সোজা বলে দিয়েছে আর এখন সে আর বাচ্চা চায় না।
কিন্তু নাছোরবান্দা সায়রা মানতে নারাজ তখন মিশান রাগের মাথায় থাপ্পড় দিয়ে ফেলেছে।
যার কারণে বউ তার আজ দু দিন ধরে অভিমান করে আছে।
অবশ্য মিশান সেটা দীর্ঘস্থায়ী হতে দিতো না। তবে অফিসে দু দিন বেশি কাজ থাকায় বউ কে সময় দিতে পারে নি।
আজ সকাল সকাল অফিস থেকে চলে আসবে আর বউয়ের অভিমান ভেঙে দিবে।
এসব ভাবতে ভাবতে মিশান নাস্তা করে ছেলে মেয়ে কে আদর করে অফিসে চলে গেলো।
আর রুহি, আরভীও বাচ্চা দের নিয়ে রুমে চলে গেলো শুধু সায়রা রান্না ঘরে মাইশার সঙ্গে সব গুছিয়ে রাখতে গেলো।
সায়রা থালা গুলো বেসিনে রেখে চলে আসতে নিলেই মাইশা চৌধুরী সায়রা হাত ধরে ওনার সাথে যাওয়ার জন্য বলে।
সায়রা মুচকি হেসে ওনার পেছন পেছন ওনার রুমে এলো।
-“তোর যখন লেভার পেইন উঠলো।আমার ছেলে অর্ধেক পাগল হয়ে পরেছিল।তুই হয়তো কিছু টা দেখে ছিলি।কারণ তোর তখন সামান্য জ্ঞান ছিল। আর যখন হসপিটাল নিতে নিতে তুই অজ্ঞান হয়ে পরেছিল তখন আমার ছেলের চোখের পানি তার একটা সার্ট এর বুকের কাছের অংশ টা আর বাম হাত টা অর্ধেক ভিজে গিয়ে ছিল চোখের জলে।
তার পর তোকে ওটিতে নেওয়া হলো।ডক্টর বলেছিল তোর অবস্থা ভালো তবে বাচ্চা দু টা থেকে ছেলে বাবু টার না-কি নাও বাঁচতে পারে কারণ হসপিটাল নিতে নিতে অনেক দেড়ি হয়ে গিয়েছিল। তখন আমার ছেলের পুরো পাগল। দৌড়ে চলে গিয়েছিল মসজিদে নামাজ পড়তে।আর ও যখন ফিরে এলো তখন তোরা তিন জনেই সুস্থ ছিলি।
সে দিন শেষ আমার ছেলে বাচ্চা দের কোলে নিয়ে কেঁদে ছিল এই দুই বছরে আমি আমার ছেলে কে আর কাঁদতে দেখি নি।
তবে দু দিন আগে ও আমার কাছে এসে খুব করে আবার সে দিনের নয় কান্না করলো। এই কান্নার কারণ ও সে দিন মসজিদে আল্লাহর দরবারে তোদের তিন জনের সুস্থতা কামনে করেছে। সাথে নিয়ে ছিল এক টা কঠিন সিদ্ধান্ত।
আর সে টা হলো আর কোনো দিন ও সন্তান নিবে না।
ওর বিশ্বাস আল্লাহ ওর কথা রেখেছে দিয়েছে ফিরিয়ে তোদের সুস্থ করে। আল্লাহ যদি তার কথা রাখে তবে ও কেন সেই কথা রাখতে পারবে না?
আশা করি এই বিষয় আর কিছু জানার নেই।
এখন তোমার যা ভালো মনে হয় তাই করো।
এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলেই থামল মাইশা চৌধুরী।
পাশে থাকা টেবিল থেকে পানি এনে সায়রা সে টা এগিয়ে দেয়।
মাইশা চৌধুরী পানি টা খেয়ে গ্লাস টা তিনি যথাস্থানে রেখে দিয়ে পেছনে ফিরে সায়রার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
সায়রাও তাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে
-“তুমি চিন্তা করো না। ”
মাইশা চৌধুরী কিছু বলে না সায়রা ওনাকে ছেড়ে দিয়ে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়
——–
-“বাবা মা কোথায়? ”
মিশ্র আর সায়ন খেলছে বিছানায় বসে।মিশান অফিস থেকে এসছে রুমে এসে বাচ্চাদের একা দেখে ভ্রু কুঁচকে আসে।
তবে বাচ্চাদের সেটা বুঝতে না দিয়ে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে।
-“মেজো মার সাথে উপর রুমে। ”
মিশ্র আদোও আদোও কণ্ঠে বাবার প্রশ্নের জবাব দেয়।
-“আচ্ছা তোমরা বসো।
পাপা ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
-“okay”
সায়ন বলে উঠে।
মিশান দুজনের কপালে চুমু খেয়ে মুচকি হেসে তোয়ালে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে।
তার পর বাচ্চা দের কোলে নিয়ে রুমে থেকে বেড়িয়ে লিভিং রুমে এসে প্রিয়তা মির্জার কাছে ছেলে মেয়ে কে দিয়ে নিজের মা কে খাবার দিতে বলে।
মাইশা চৌধুরী খাবার বেড়ে দেয়।
-“মা নয় টার বেশি সময় বাজে।
ওরা এখনো ঘুমায় নি কেন?”
মিশান খাবার খেতে খেতে মা কে প্রশ্ন করে।
-“আমি আর সারা তো গিয়ে ছিলাম ঘুমা পাড়াতে।
কিন্তু ওরাই তো বলল তুই আসলে ঘুমুবে।”
মিশান আর কিছু বলে না খাবার খেয়ে বাচ্চা দের নিয়ে রুমে এসে ওদের ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
তার পর উঠে রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের উপর আগের রুমে উদ্দেশ্য উপর হাঁটা ধরে।
রুমে সামনে এসে মিশান দেখলো দরজা টা হালকা করে ভিড়ানো দরজা টা আর ভিতর থেকে হালকা আলো আসছে।
মিশান বেশি কিছু ভাবে না দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পরে।
আর সামনে তাকাতেই দেখা মিলে বাড়ির প্রতি টা সদস্য। আছে শুধু প্রহর আর রুহি নেই। কিন্তু মিশান সে দিকে না তাকিয়ে বিছানার কাছে উপর দেয়ালে কিছু এক টা খুঁজে নাই দেখে চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল।
মিশান চোখ বন্ধরত অবস্থায় আদোও আদোও কণ্ঠে দুই টা বাচ্চার বলে উঠে
-“happy birthday papa”
মিশান ধপ করে চোখ খোলে অবাক নয়নে পেছনে ফিরে দেখলো প্রহর আর রুহি ওদের বাচ্চাদের কলো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-“ওরা তো ঘুমিয়ে,,,
-“আমরা ঘুমুই নি।”
-“আচ্ছা চলো এখন এগারো টা বেশি সময় বাজে।
কেক কাটো আমার ঘুম পাচ্ছে। ”
মাঝে ফোড়ন কেটে বলে উঠে সোহান।
সবাই শব্দ করে হেসে দিলো।
সোহান একটু বেশি ঘুম পাগল সাথে বউ।আর এটা সবাই জানে।
অতঃপর মিশান ওর দুই বাচ্চা কে দুই দিক দিয়ে নিয়ে কেক টা কেটে সবাই খাইয়ে দেয়।
আর ঠিক তক্ষুনি প্রহর ওর ক্যামেরা টা নিয়ে আসে।
সাথে আনে বাড়ির দারোয়ান চাচা কে।
তার পর সবাই কে এক সাথে করে মিশ্র কে প্রহর কোলে নেয় সায়ন কে মিশান নেই মিশানের বা পাশে বউ কে নিয়ে ডান পাশে মাকে তার পর বাবা কে।প্রিয়তার পাশে সায়রা তার পাশে রাহান সোহান,আরভী,আর সাদনান মির্জার পাশে প্রহর, রুহি সবাই ঠিক ঠাক ভাবে দাঁড়ানোর পর সেটা দারোয়ান চাচা ক্যামেরা বন্দী করে নিলো।
আর তাদের সুন্দর পরিবার এক টা প্রতিবিম্ব সেখানে আবদ্ধ হলো।
হয়তো কোনো এক শীতের সকালে কেউ কেউ বা হয়তো তখন থাকবে না। আর কিছু বৃদ্ধ মানুষ হয়তো তখন এই ছবির দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যাবে নিজের যৌবনের সৃতিতে আর মুচকি হেসে হঠাৎ করে বলে উঠবে #হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি আজও আছেন।
~সমাপ্ত~