#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_২৩
#জান্নাত_সুলতানা
-“রাহাত ভাই।
একটা জিনিস চাই দিবেন?”
আজ সকালেই সবাই মার্কেট করেছে।আর সে গুলো এখন রাতে খাবার পর বসে দেখছে।
এর মধ্যে প্রিয়তা মির্জা প্রশ্ন টা করে।
-“আরে আমার ছোট বোনের কি চাই বলো একবার।
আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। ”
রাহাত সাহেব হেসে দিয়ে উৎসাহ দিয়ে নিজের মতামত জানায়।
-“আপনার ছোট জান টাকে আমায় দিয়ে দিন।
আমার মেয়ের মতো করে রাখার চেষ্টা করবো।
আর আমাদের পরিবার সম্পর্কে আপনার কোনো অভিযোগ হতে দেবো না।”
কেউ কেউ অবাক হয়েছে তো কেউ কেউ খুব খুশি আর রুহি লজ্জা পাচ্ছে।
কিন্তু প্রহর এর কোনো ভাবান্তর নেই।
সোহান শয়তানি হেসে প্রহর কে খুঁচা তে লাগলো।
মিশান কটমট করে সায়রার দিকে তাকাল সায়রা কেবলা’র মতো একটা হাসি দিয়ে মিশান কে ইশারা করে রুমে আসার জন্য আর নিজেও উপরে দিকে চলে যায়।
মিশান হড়হড় করে উঠে বউয়ের পেছনে পেছন চলে গেলো।
রুহি কে টেনে নিয়ে আরভীও চলে গেলো।
ইনিয়া নেই রুমে হয়তো ইকবাল এর সাথে ফোমে কথা বলছে। স্টেলা নামের মেয়ে টা আজ সকালেই চলে গিয়েছে।
এই দু দিন খুব স্বাভাবিক ভাবে চলা ফেরা করছে। সবার সাথে মিলেমিশে থাকতো।কথা গুলো বেশি সুন্দর ছিল সায়রার ভালো লাগতো। স্টেলা নিজের আর মিশানের সম্পর্কের কথা সব বলেছে সায়রা কে।সায়রার অবশ্য মনে মনে অনুতপ্ত হয়েছে।মিশান কে ভুল বোঝার জন্য। তবে মেয়ে টাকে বেশ মনে ধরেছিল সবার। সবাই বলে ছিল বিয়ের পরে যেতো কিন্তু মেয়ে টার বাবা আর্জেন্ট কোনো দরকারে ইমারজেন্সি ফ্লাইট এ চলে যেতে বলেছে।
-“প্রহর, তুমি কি বলো?
অবশ্য তুমি যাই বলো।
আমার বোন আমার কাছে কিছু চেয়েছে আমি কি তা না দিয়ে থাকতে পারি?
তবে আমার একটা শর্ত আছে। ”
রহাত সাহেব এর শর্ত কথা শুনে সবাই অবাক হয়।
প্রহর মুখ মলিন করে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সাদনান মির্জা এবার মুখ খোলে
-“দেখুন ভাই।
আপনি আমার বড়।
তাই আপনার জিনিসের অসম্মান যেনো না হয় আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। ”
আয়ানও বলে উঠে
-“আচ্ছা আগে বলো ভাই।”
রাহাত সাহেব স্ত্রী দিকে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে নড়েচড়ে বসে।
তার পর গম্ভীর কণ্ঠে বলে
-“আসলে ওর পড়া লেখার ব্যাপার টা নিয়ে।
ওতো পড়া নিয়ে ভীষণ ফা,,,
-“বড় বাবাই তুমি চিন্তা করো না।
রুহি কে প্রহর বিয়ের পরও পড়াবে।”
রাহাত সাহেব কে সব টা কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে সোহান বলে উঠে।
সবাই মেনে নেয়।
অতঃপর সবাই মিলে ঠিক করে ইনিয়ার বিয়ের দিন এনগেজমেন্ট হবে।
আর রুহির পরীক্ষার পর বিয়ে।
—————
-“তুই আগে থেকে সব জানতি?”
মিশান সায়রা কে রুমে এসে কিছু টা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।
-“আরে আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন?
বলছি তো সব।”
-“এখন তো সব আমিও জানি, হু।”
সায়রার কথায় মুখ ভেংচি কেটে বলে উঠে মিশান
-“কচু জানেন।
প্রহর রুহি ওরা দুজন দুজন কে আগে থেকে ভালোবাসে।
কম বেশ সবাই জানতো।
শুধু আপনারা কয়েকজন ছাড়া।
————–
পার্লার থেকে তিন জন্য মেয়ে আনা হয়ছে।
একজন রুহি কে এনগেজমেন্ট এর জন্য তৈরি করছে।
আর বাকি দু জন ইনিয়া কে।
সকাল এগারো টা বাজে ইকবালরা বারোটা নাগাদ আসবে।
সায়রা নিচে রান্না ঘরে সবার সাথে হাতে হাতে কাজ করছে।
মিশান অনেক আগেই তাকে ডেকেছে।
কিন্তু বেচারি যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।
দুই দুই টা অনুষ্ঠান বলে কথা কত লোকজন মানুষ গিজগিজ করছে।
নাস্তা এটা সেটা তাদের এগিয়ে দিতে হচ্ছে।
সায়রা ছয় টা শরবত এর গ্লাস একটা ট্রে তে নিয়ে লিভিং রুমে বসে থাকা মহিলাদের দিয়ে কোনো রকম তাদের সাথে হালকা কথা বলে রুমের উদ্দেশ্য ছুটতে লাগলো।
শরীর টাও বেশি দূর্বল লাগছে।
সায়রা ভাবছে হয়তো সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি তাই এমন লাগছে।
মাথা টা খানিকন বাদে বাদে চক্কর দিচ্ছে।
এ-সব ভাবতে ভাবতে সায়রা কোনো রকম সিঁড়ি গুলো পার করে উপর এলো।
কিন্তু পা গুলো আর হাঁটতে সায় দিচ্ছে না।
অনেক কষ্ট করে তিন চার পা কদম হাঁটার পর হুট করে মাথা টা বেশি ঘুরাতে লাগলো।
সায়রা চট করে করিডর এর রেলিং ধরে এক হাতে মাথা চেপে নিচে বসে পরলো।
উপর তেমন মানুষ নেই শুধু ইনিয়ার রুম আর রুহির রুম থেকে মেয়েদের কথার শব্দ ভেসে আছে।
আর বাকি সব মানুষ নিচে আর বিয়ের জন্য বাগানে জায়গা করা হয়েছে সেখানে।
সায়রা নিচে বসেও রক্ষা পায় না সারা শরীর ছেড়ে দিচ্ছে।
মেঝেতে পড়তে যাচ্ছিল।
কিন্তু তার আগেই হুট করে কেউ কোলে তুলে নেয়।
সায়রা পিটপিট করে অতি পরিচিত একটা মুখ দেখতে পায় যা দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফোটে উঠে তার পর নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ কর নেয়।
মিশান সায়রা কে কোলে তুলে আবারও নিচে নেমে দুই মাকে ডাকতে থাকে।
তাদের কাউ কে কিছু বলতে হয়নি।
মিশান এমনি হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
————–
-“আমি বলেছিলাম সব সময় ওনার খেয়াল রাখার জন্য। ”
মহিলা ডক্টর টা গম্ভীর মুখ করে প্রেসক্রিপশনে কিছু লিখতে লিখতে বলে উঠে
-“সরি ডক্টর বাড়িতে বিয়ে।
সে জন্য খেয়াল করি নি।
বলুন না কিছু হয়ে নি তো ওর?”
বেশ উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন গুলো করেই বসে মিশান।
যা দেখে মহিলা ডক্টর টা মুচকি হাসে।
মাথা নেড়ে জবাব দেয়
-“না তবে ওনার খেয়াল রাখবেন
সাথে নিজের হবু বাচ্চারও।”
মিশান স্তব্ধ। কি বলল ডক্টর ও কি বলবে বুঝতে পারছে না। না-কি কণ্ঠনালী দিয়ে কিছু বের করতে পারছে না।
ওর চোখ চিকচিক করে উঠে।
আচ্ছা ও কি ভীষণ খুশি হয়েছে?
ডক্টর মিশানের দিকে হালকে হেসে তাকিয়ে আছে।
যা দেখে মিশান চোখ ঘুরায় অন্য দিকে।
চার দিকে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে ডক্টর এর দিকে ফের তাকি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে প্রশ্ন করে
-“আপনি সত্যি বলছেন?”
কিন্তু ডক্টর কিছু বলার আগে সায়রা পাশের বেড থেকে মিশান কে আস্তে করে ডেকে উঠে
-“মিশান।”
মিশান তড়িৎ গতিতে ডক্টর এর সামনে থেকে উঠে বউয়ের পাশে দাঁড়িয়ে সায়রার এক বাহু ধরে উঠতে বসতে সাহায্য করে।
-“এই নিন প্রেগ্ন্যাসির সময় এক জন মায়ের খাবার লিস্টে।”
মিশান সেটা সায়রার হাতে দিয়ে নিজে সায়রা কে কোলে নিয়ে ডক্টর কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে
-“পেমেন্ট আপনার একাউন্টে পৌঁছে যাবে।”
মিশান দারোয়ান কে দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে বউ কে বসিয়ে দিয়ে গাড়ি স্টাট করে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। সায়রা তখন ডক্টর এর কথা শুনেছে।ও দেখেছে মিশানের চোখে পানি ছিল। ও নিজেও কি ভীষণ খুশি তবে কোনো এক অজানা কারণে মিশানের সাথে আর কথা বলে না।
ভাবে হয়তো মিশান নিজ থেকে বলবে।
মিশানের সাথে শুধু ফোনটা আছে টাকা পয়সা কিছু নেই কারণ তখন মিশান ফোন স্ক্রল করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে ছিল। কিন্তু বউকে ওই অবস্থায় দেখে
তাই ফোন টা তখন ট্রাউজার এর পকেটে নিয়ে বউ কে কোলে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসছে।
প্রহর সাদনান মির্জা আসতে চেয়েছে তবে মিশান কাউকে সাথে আনে নি।
বাড়িতে কত কাজ।
বলেছে দরকার পড়লে ফোন দেবো।
মিশান ফোন ট্রাউজার এর পকেটে থেকে বের করে একটা নাম্বারে ফোন লাগায় রিং হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা রিসিভ হলো
তবে ওপাশের ব্যক্তি টা কে কিছু বলতে না দিয়ে মিশান গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে
-“বাবাই আমরা বাড়িতে চলে যাচ্ছি।
তোমরা সব কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় চলে এসো।”
সাদনান মির্জা ওপাশ থেকে কি বলল তা শোনা গেলো না।
মিশান “আচ্ছা” বলে ফোন কেটে ডাইভিং এ মনোযোগ দেয়।
তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো মিশান সায়রার সাথে কোনো কথা বলে না।
সায়রাও কিছু বলছে না একটা হাত নিজের পেটে রেখে চুপচাপ বসে আছে।
যেনো এই কথা না বলার মানে “আপনি কথা না বললে নাই এখন আমার বাচ্চা আছে।আমি তার সাথে কথা বলে সময় কাটাতে পারবো।”
#চলবে…