#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৭
#জান্নাত_সুলতানা
-“আচ্ছা আমি কি ঘুমিয়ে আছি?”
মিশান মুখের খাবার টা শেষ করে জিজ্ঞেস করে।
সায়রা মিশানের মুখের আবারও খাবার পুরে জবাব দেয়
-“না মিস্টার চৌধুরী।
আপনি জেগে আছেন।
আর বউয়ের হাতে খাবার খাচ্ছেন। ”
মিশান আর কিছু বলে না। বউয়ের হাতে চুপ চাপ খাবার খেয়ে নেয়।
মিশান বুঝতে পারছে কাল রাতের ডোজ টা ভালোই কাজে দিয়েছে।
-“শুনুন আমি এখন আরভীর কাছে যাচ্ছি।
রুমে কখন আসতে পারবো জানি না।
আপনার সব প্রয়োজনীয় জিনিস সোফায় রেখে দিয়েছি।”
মিশান কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সায়রা এঁটো প্লেট নিয়ে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।
মিশান আর বসে থাকে না।
নিজেও বেরিয়ে ছাঁদে চলে গেলো।
কাল রাতের পর আর একবারও ওই দিকে যাওয়া হয় নি। অবশ্য কাজের জন্য সব লোক আছে।
শুধু একটু আধটু দেখিয়ে দিলেই হয়।
আর তাছাড়া প্রহর, আয়ান চৌধুরী, সাদনান মির্জা সাথে প্রহর আর মিশানের কিছু ফ্রেন্ডও আছে।
ওরা অবশ্য কাল সকালেই এসছে।
যদিও এতো হুলস্থুলের মাঝে কারোর সাথেই তেমন কথা হয় নি।
আর বউ তার কোনো ছেলের সাথেই কথা বলে না।
সেই ছোট্ট বেলার কথা আজও রেখে দিয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতে মিশান ছাঁদে চলে আসে।
অতঃপর সবার সাথে কাজে যোগ দেয়।
—————–
বিয়ে বাড়ি বলে কথা কত কাজ। কেউ হাত গুটি বসে নেই।সোহানদের নিমন্ত্রিত মেহমানগন সবাই কম বেশ এসে পড়েছে।
সকলকেই নাস্তা পানি দিতে হচ্ছে।
এর মধ্যে উপর থেকে মিশানের ডাক এলো উপরেও কিছু নাস্তা দিয়ে আসার জন্য।
কারোর হাত ফাঁকা নেই প্রিয়তা মির্জা মেয়ে কে ডেকে এক টা ট্রে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন
-“এগুলো ছাঁদে একটু দিয়ে আয়।”
সায়রা কিছু বলে না চুপ চাপ মাথা নেড়ে উপর ছাঁদের উদ্দেশ্য পা বাড়ায়।
কিন্তু ছাঁদে আর যেতে হয় না।
প্রহর নেমে এসে বোনের হাত থেকে ট্রে নিয়ে বোন কে আবার নিচে পাঠিয়ে দেয়।
মূলত মিশান পাঠিয়েছে প্রহর কে।
কারণ এখন নিচে কোনে মহিলা যে আসবে না তা বেশ আন্দাজ করতে পেড়ে প্রহর কে পাঠিয়েছে উপর তার বউ যে নো না আসে।
কারণ সেখানে কম বেশ অনেক ছেলে আছে বাহিরের।
————————
আরভী মিশান কে ঝাপটে ধরে কেঁদেই চলেছে।
বিয়ের কাজ একটু আগেই শেষ হয়েছে।
যদিও আরভী আজ কুমিল্লা যাবে না।
কিন্তু ওর কান্না কেন করছে সেটা কেউ বুঝতে পারছে না।
এবার রুহি নাক মুখ কুঁচকে নিলো।
এগিয়ে এলো ভিড় ঠেলে।
আরভীর হাতে চিমটি কেটে ফিসফিস করে বলে
-“এই তুই কান্না কেন করছি?
তুই তো আজ শশুর বাড়ি যাচ্ছিস না তবুও কেন কান্না করছি?”
রুহি কথা টা ফিসফিস করে বললেও সায়রা আর ইনিয়া পাশ থেকে শুনে ফেলে।
ইনিয়া বোন কে টেনে নেয় সাইডে।
আরভীও ততক্ষণে কান্না বন্ধ করেছে। সাথে লজ্জাও পাচ্ছে সত্যি তো।
তবে কোনো এক অজানা কারণে মনে হচ্ছে আজ থেকে সে এ বাড়ির মেহমান।
আয়না মেয়ে কে বকাঝকা করে।
সায়রা আরভী কে নিয়ে ওর রুমে চলে যায়।
————
-“শোন আরভী সোহান ভাইয়া এলে ওনার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবি।”
-“এই তুই এসব কি বলছি?”
ইনিয়া রুহি কে শাড়ী পড়াতে পড়াতে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।
-“কেন তোমার শাশুড়ী আর কয়েকজন মহিলাও তো বলাবলি করছিল এটা নাকি নিয়ম।”
-“তুই চুপ করবি?
আর এসব আজগুবী কথা যেনো তোর মুখে না শুনি।”
দু বোনের কথার মাঝে সায়রা বলে উঠে
-“তুই বরং প্রহর এর পায়ে হাত দিয়ে,,,
-“তুমি চুপ করো।
আমাকে লজ্জা না দিলে তোমার পেটের খাবার হজম হয় না।”
সায়রার পুরো কথা না শুনেই বলে উঠে রুহি।
আরভী ফিক করে হেসে দেয় রুহির কথায়।
সায়রা আর ইনিয়াও হাসে। রুহি এক দৌড়ে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়।
————
সারা দিনের জমজমাট পরিবেশ টা কেমন নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছে, বাড়ি একদম শান্ত কোনো সারা শব্দ নেই।কিছু মেহমান রয়েছে কিছু বিদায় নিয়েছে।
রাত এগারোটা বাজে এখন। সবাই ঘুমিয়ে পরেছে।
সোহান ফ্রেশ হয়ে এসে আরভী কে আদেশের সুরে বলল
-“যা ফ্রেশ হয়ে আয়।
নামাজ পড়তে হবে। ”
-“আচ্ছা।”
আরভী বাধ্য মেয়ের মতো বলে।
উঠে ওয়াশরুম চলে যায়।
সোহান মুচকি হাসে।
একটা জায়নামাজ তাই এটা বিছিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে একটু সামনে এক পাশে।
আরভী ফ্রেশ হয়ে এলে বউ কে ডেকে এনে নিজের কিছু টা পেছনে দাঁড়াতে ইশারা করে।
আরভীও দাঁড়ায়।
নামাজ শেষ সোহান বিছানার এক পাশে পা ঝুলিয়ে বসে।
আরভী তখন জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গায়ের গহনা গুলো খোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
তবে সব খোলে নিলেও কোমরে বিছা টা খোলতে সক্ষম নয়।
সোহান মুচকি হেসে উঠে গিয়ে সেটা খোলে দেয়।
কিন্তু নিজের অবাধ্য চোখ জোড়া আটকে যায় আরভীর ঢেউ খেলানো কোমরে।
না চাইতেও চুমু আঁকে সেথায়।
আরভী খামচে ধরে সোহানের চুল।
সোহান কিছু একটা ভেবে ছেড়ে দেয় আরভী কে উঠে দাঁড়িয়ে।
ট্রাউজার এর পকেটে বাম হাত ঢুকিয়ে একটা ছোট বক্স বের করে।
আরভীর সামনে খোলে ধরে।
একটা ডায়মন্ড এর রিং।
-“আমার এতটুকু সামর্থ্য রে পিচ্চি।
তবে তোর কাবিনের টাকা সব টা জোগাড় আছে।
কাল বাসায় গিয়ে দিয়ে দেবো।
আর এটা আজকের রাতের উপহার।
কিন্তু আমি আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করবো জীবনে অর্থে দিক দিয়ে তোকে খুশি রাখার জন্য।”
সোহানের পুরো কথা শুনে না আরভী। তার আগেই নিজে থেকে জড়িয়ে ধরে সোহান কে।
-“আমার এসব চাই না।
শুধু আপনার ভালোবাসা পেলেই হবে সোহান ভাই।”
সোহান আরভীর বাম হাত টায় রিং টা পড়িয়ে দিচ্ছিল।
কিন্তু ভাই ডাক শোনে এক সেকেন্ড থেমে এক ধাক্কা সেটা অনামিকা আঙুলে পড়িয়ে দিয়ে।
আরভী কে নিজের শরীর থেকে আলগা করে দিয়ে ঝট করে কোলে তোলে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আরভী উপর নিজের সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে নিজের বাম হাতের তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা মুখের সাইডে ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে নেশাক্ত কণ্ঠে বলে উঠে
-“আজকের পর যেনো আর কখনো ভাই ডাকতে না পারিস তার ব্যবস্থা করি?
কি রাজি?”
আরভী এতোক্ষণে বুঝতে পারলো সোহন হুট করে এমন করার কারণ।
আরভীর হাত জোড়া সোহানের বুকে ঠেকানো ছিল।
তবে মূহুর্তের মাঝে তা পিঠে নিয়ে হালকা উঁচু হয়ে জড়িয়ে ধরে সোহান কে।
সোহান যেনো তার উত্তর পেয়ে গেলো।
গলায় মুখ গুঁজে পাগলের মতো চুমু আঁকে সেখানে।
আরভী কাঁপছে ভীষণ বাজে ভাবে কাঁপছে।
চোখ বন্ধ করে আছে। চোখের পাতা গুলো থেকে থেকে নড়ছে।
চিকন পাতলা ঠোঁট জোড়া কেমন শুকিয়ে আছে।
সোহানের আর এক সেকেন্ডও দেড়ি করে না।
আরভীর ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের সাহায্য তা মুখে পুরে নেয়।
গভীর হয় স্পর্শ।
আরভী তলিয়ে যাচ্ছে সোহানের ভালোবাসার সমুদ্রের।
এই ভালোবাসার বাঁধন ভেঙ্গে চাইলো বেরোতে পারবে না তারা দুজন।
আর হয়তো চায়ও না তারা কেউ এতো শক্ত বাঁধন ভেঙ্গে ফেলতে।
———–
-“এই তুই ওখানে কি করছিস?”
মিশান ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছতে মুছতে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে সায়রা কে।
সায়রা মিশান কে দেখেই আলমারি থেকে তড়িঘড়ি করে কিছু একটা বের করতে নিয়েও আবার তা যথাস্থানে রেখে পেছনে ফিরে আমতা আমতা করে বলে উঠে
-“কই কিছু না তো।
আপনি,,,
-“কফি লাগবে।”
সায়রা কে সবটা কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে আদেশের সুরে বলে উঠে মিশান।
সায়রা অসহায় ফেস করে তাকিয়ে মিশানের দিকে।
এখন কিছুতেই নড়বে না ও।
কিন্তু মিশান কে সেটা বুঝতে না দিয়ে মিনমিন করে জবাব দেয়
-“আপনি একটু কষ্ট করে আজ নিজে বানিয়ে নিন না।
প্লিজ। ”
কি সুন্দর আবদার ফেলে দেওয়া যায় কি।
মিশানও ফেলতে পারে না।
চুপচাপ তোয়ালে সোফায় ফেলে হনহনিয়ে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।
সায়রা বুকে হাত দিয়ে ফুস করে শ্বাস ছাড়ে।
অতঃপর পেছন ফিরে আবারও আগের নেওয়া অতি গোপনীয় জিনিস টা হাতে নিয়ে বিরবির করে বলে উঠে
-“নিজে যেমন অসভ্য চিন্তা ভাবনাও তেমন।
কিন্তু অসভ্য জামাই আজ আপনার ঘুম আমি হারাম করে দেবো।”
#চলবে…..
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]
#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৮
#জান্নাত_সুলতানা
-“সায়রা?”
মিশান রুমে ঢুকে বউ কে রুমে না দেখে ডাকে সায়রা কে।
সায়রা ওয়াশ রুম থেকে উত্তর দেয়
-“হ্যাঁ, আসছি।”
মিশান আর কিছু বলে না কফির কাপে চুমুক বসাতে বসাতে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।
রেলিং ধরে খোলা আকাশের দিকে তাকায়।
বাড়ি টা শহর থেকে কিছু টা দূরে তবে অতো টাও দূরে নয়।
মাইশা চৌধুরী আর প্রিয়তা মির্জার আবদারেই নতুন বাড়ি শহর থেকে দূরে বানানো হয়েছে।চার দিকে সুন্দর করে বাউন্ডারি আর তার ভিতরে নানা রকমের গাছ।
আর তার মধ্যে এই দোতলায় একটা উপর নিচ মিলিয়ে দশ রুমের একটা বাড়ি। তার পেছনে রয়েছে গেস্ট হাউজ।
বাড়ি টা বেশ সুন্দর।
যে কারোর নজর এই বাড়ি টার উপর না চাইতেও পড়বে।
বাড়ি টার ঠিক সামনে রয়েছে শান বাধানো একটা পুকুর। দেখতে অনেক সুন্দর পুকুর টা।কিন্তু এখন মিশানের রুম
উপর থেকে চাঁদের আলোয়ে এখন আরও বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।
হাতের কফি তার ঠান্ডা হয়েছে অনেক আগেই।
মিশান এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সে দিকে।
কিন্তু দৃষ্টি তার সে দিকে থাকলে সে বেশ ভালো করেই টের পেয়েছে বউ তার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে।
শীতের মৌসুম না হলে মিশান এখন বউ কে নিয়ে সত্যি বাগানে যেতো।
-“চাদর নিয়ে এসছিস তো?”
মিশান কথা টা বলার অনেকক্ষণ ধরে কোনো উত্তর আসছে না। মিশানের ভ্রু কুঁচকে আসে।
শুধু জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার শব্দ হচ্ছে।
মনে হচ্ছে পেছনে দাঁড়ানো নারী টা বেশ ঘাবড়ে আছে।
মিশান এবার কফির মগ টা রেলিং এর উপর রেখে পেছন ফিরে তবে কিছু বোঝার আগেই সায়রা মিশান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
মিশান স্তব্ধ।
কি ছিল একটু আগে ওটা।
আর ভাবতে পারে না মিশান।না চাইতেও সায়রার উন্মুক্ত পিঠে হাত রাখে।
আর সায়রা আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার বাঁধন।
যেনো নিজের শরীর টাকে লুকাতে চাইছে চোখ বন্ধ করে।
কিছু টা কাকের মতো। কাক যেমন কিছু লুকানোর সময় চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবে আমি দেখতে পাচ্ছি না মানে কেউই দেখতে পাচ্ছে না।
সায়রার ঠিক সেই দশা।
-“তুই,,
-“প্লিজ কিছু বলবেন না।
আমার এমনিতেই কেমন লাগছে।”
-“আচ্ছা বলবো না।
তবে না হয় করে দেখাই।”
নেশাতুর কণ্ঠে কথা টা বলেই মিশান সায়রা কে আরও কিছু টা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের শরীরের সঙ্গে মিশিয়ে নেয়।
সায়রা এখন শুধু মিশানের গলায় ঝুলে আছে।
মিশান এভাবে থেকেই সায়রা কে নিয়ে ধীরে পায়ে হেঁটে হেঁটে রুমের ভিতর প্রবেশ করে।
-“এক বার দেখবো?”
প্লিজ। ”
-“না।
লাইট অফ করুন। ”
মিশান শোনে না কিছু।
নিজের শরীর থেকে আলগা করে সায়রা কে মূহুর্তের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বিছানায়।
সায়রা নিজে কে লুকাতে ব্যস্ত। কিন্তু সামনে দাঁড়ানো মিশান বউয়ের এই রুপে পাগল, উন্মাদ। সায়রা ততক্ষণে আবারও এসে নিজের লজ্জা লুকাতে স্বামীর বুকে মুখ গুঁজে।
তবে মিশান ভাবছে একটা সর্ট পাতলা ফতুয়া যে তার বউ কে এতো টা আকর্ষণীয় লাগবে মিশান কল্পনাও করে নি।
সুন্দর শরীরে কালো রং এর এই ড্রেস টা যে এতো টা মোহনীয় লাগবে।
মিশান এসব ভাবতে ভাবতে বলে উঠে
-“এতো সুন্দর মূহুর্তে কি লাইট টা অফ করলে সেটা উপলব্ধি করা যাবে?”
সায়রা কতক্ষণ চুপ থাকে।
তার পর জোরে জোরে কয়েক বার শ্বাস টেনে বলে উঠে
-“রাজি, যদি।
আপনিও আমার কথায় রাজি হন তবে।”
মিশানের চোয়াল শক্ত হয়।
সায়রার পিঠে থাকা হাত মুঠোবন্দি করে নামিয়ে নেয় সেখান থেকে।
শক্ত হাতে বাহু খামচে ধরে বউয়ের।
-“তুই ভালো করেই জানিস তোর শরীরের অবস্থা।”
তার পর একটু চুপ থেকে আবারও বলে উঠে
-“যা ড্রেস চেঞ্জ করে আয়।
এই ঠান্ডায় এসব পড়তে হবে না।”
তার পর বউ কে ছাড়িয়ে গিয়ে বিছানার এক পাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে পড়ে।
সায়রারও অভিমান জমে মনে।
চুপ চাপ রাতের পোষাক পড়ে এসে লাইট অফ করে অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।
এক টা বাচ্চাই তো।এমন করার কি আছে সায়রা বুঝতে পারছে না।
কিন্তু ও তো আর জানে না।বাচ্চা নিলে হয় বাচ্চা নয় ও নিজে যে কোনো এক জন থাকবে।
সেই ভয়ে মিশান বাচ্চা নিতে রাজি না।
—————
সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে। শুধু সায়রা আর আরভী ছাড়া।সায়রা গিয়েছে আরভীর জন্য নাস্তা দিতে। সোহান হালকা নাস্তা করে ডাইনিং টেবিল ছাড়ে।
হন্তদন্ত হয়ে উপর চলে গেলো।
রুহি কলেজ যাবে তাই একবারে রেডি হয়ে এসছে।
প্রহর এর আজ এক টা পরীক্ষা আছে তাই সেও নাস্তা শেষ গাড়ি চাবি নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল।
কিন্তু প্রিয়তা মির্জা আদেশে রুহি কেও সাথে নিতে হলো।
প্রহর মায়ের কথা মতো রুহি কে সাথে নিয়ে গেলো।
———-
-“তুই কি রে?
মেয়েটার কি অবস্থা করেছিস?”
-“তুই এসব রাখ বইন।
আগে বল ওর জন্য কি ডক্টর আনবো?
নাকি আমি গিয়ে ফার্মেসি থেকে ঔষুধ নেবো?”
সায়রা কে সোহান করুন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।
সায়রার হাসি পাচ্ছে সোহানের এমন অবস্থা থেকে তবে আরভীর দিকে নজর দিতেই দেখলো ও ব্যথায় কাতরাচ্ছে।
তাই আবার হালকা মেকি রাগ দেখিয়ে বলে উঠে
-“আমার বোন টা ছোট তোর সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার ছিল।”
সায়রা কথা গুলো গম্ভীর কণ্ঠে বলেই ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো। সোহান গিয়ে বউয়ের পাশে বসে নিজে আরভীর মুখে খাবার দেয়।
সোহান জানে সায়রা কিছু একটা ব্যবস্থা তো করবেই।ঠিক হলো সোহানের ভাবনা। সায়রা
ফিরে এলো মিনিট দুই এক এর মাথায় হাতে কিছু ঔষুধ।
ঔষুধ গুলো সেন্টার টেবিলে রাখে।
-“খাবার শেষ সব গুলো থেকে এক টা এক টা ওষুধ খাইয়ে দিবি।”
কথা শেষ আরভীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো।
সোহানের ভালোবাসা আরভী মন নিতে পারলেও দৈহিক গঠন দিয়ে সোহানের ভালোবাসা আরভী নিতে পারে নি।
প্রথম হয়তো তাই এতো টা কষ্ট পেয়েছে।
সোহানের সেই রাত থেকে দু চোখ এর পাতা আর এক করতে পারে নি।
তার ভালোবাসার মানুষ টা যে পাশে শুয়ে ছটফট করছে তাহলে সে কি করে ঘুমুবে।
আযানের সাথে সাথে বউ কে গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দিয়েছে। সাথে নিজেও করেছে।
কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না।
কাকে বলবে।
প্রহর সে তো বিয়েই করে নি।
আর মিশান?
সে টা কি ভাবে বোনের এসব কথা ভাই কে কি করে বলবে।
আর সায়রা কেও ডাকতে পারে নি।
এতো সকালে সায়রা কে ডাকতে গেলে মিশান তো শুনতো সাথে বাড়ি সবাই।
এর মধ্যে আরভী একটু ঘুমিয়ে ছিল।
তাই নাস্তার টেবিলে ডাক পড়ার সাথে সাথে নিচে গিয়ে বলছে আরভী ঘুমিয়ে আছে।
আর নিজে সায়রা কে ফোনে মেসেজ দিয়ে বলেছিল যাতে আরভীর রুমে একবার আসে আর নিজেও অর্ধেক নাস্তা করে ছুটে আসে রুমে।
—————
-“কোনো ছেলের সাথে কথা বলবা না।
বুঝচ্ছো?”
-“একশ বার বলবো।
আপনার কি?”
-“এই মেয়ে বেশি বলছো কিন্তু।”
-“তো কি করবেন?
আমার যার সাথে ভালো লাগে তার সাথে কথা বলবো তাতে আপনার কি?”
কথা টা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে রুহির ঠোঁট প্রহর নিজের ঠোঁটের সাহায্য আঁকড়ে ধরে।
রুহির ব্যাপার টা বুঝতে একটু সময় লাগলো।
যখন বুঝতে পারলো ততক্ষণে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়।
নিজের ছোট ছোট হাত জোড়া দিয়ে প্রহর এর বুকে ধাক্কা দিতে সাথে থাপ্পড় তো আছে।
তবে প্রহর এর মতো সুঠাম দেহের অধিকারী পুরুষের কাছে এসব নিছক তুচ্ছ।
প্রহর আরও কিছু টা নিজের সন্নিকটে আনে রুহি কে মাথার পেছনে হাত দিয়ে।
অন্য হাত কোমরে।
নিজের ইচ্ছে মতো সময় নিয়ে ভালোবাসার মানুষটার অধরে ভালোবাসা পরশ দেওয়ার পর নিজ থেকে সরে আসে। রুহি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
যেনো আর কিছুক্ষণ থাকলে দম আটকে মরে যেতো।
চোখ চিকচিক করে।
প্রহর নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা রুহির ঠোঁট স্লাইড করতে করতে বলে উঠে
-“আর কখনো কোনো ছেলের কথা মুখে আনলে ঠিক এভাবে দম আটকে মেরে দেবো।
সাথে নিজেও।”
রুহি আর কিছু বলে না। চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে গেইট দিয়ে কলেজের ভিতর চলে গেলো।
প্রহর গাড়ি নিয়ে নিজের ভার্সিটির উদ্দেশ্য চলে যায়।
#চলবে………
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]