#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৩
#জান্নাত_সুলতানা
-“কি হলো বেড়িয়ে আয়।”
সায়রা সেই আধঘন্টা যাবত ওয়াশ রুমে।
কোনো রকম সারা শব্দ করছে না। মিশান পাঁচ মিনিট ধরে ডেকেই যাচ্ছে তবে এই মেয়ের কোনো হেলদুল নেই।
মিশান এবার বেজায় বিরক্ত। ফুস করে নিশ্বাস ছাড়ে।
অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে ধমকের সুরে বলে উঠে।
-“তুই পাঁচ সেকেন্ড এর মধ্যে বেড়িয়ে আসবি।
নয়তো সারা রাত ওয়াশ রুমে আটকে থাকতে হবে।”
কি ছিল কণ্ঠে? কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দরজার ওপাশ হতে উত্তর এলো।
-“আপনি লাইট অফ করে দিন।
তাহলে আমি বেরোবো। ”
-“তোর কি আমাকে পাগল মনে হয়?”
-“আপনি পাগলি না হলে এমন কাপড় কেউ আনে।
অসভ্য লোক। ”
লাস্ট কথা টা বিরবির করে বলে।
মিশান শোন তবে কিছু বলে না। আদুরে কণ্ঠে বলে উঠে
-“সুইটহার্ট, প্লিজ বেড়িয়ে আয়।
তুই জানিস এটা তিন দিন আগে থেকে অর্ডার করে রেখেছিলাম কিন্তু আজ গিয়ে দেখি সেটা অন্য কেউ নিয়ে যাচ্ছে।
তাই এটার যা দাম তার ডাবল দাম দিয়ে ড্রেস টা এনেছি।
আর তুই?
প্লিজ বেড়িয়ে আয়।”
-“তো কে বলেছে এমন অসভ্য ড্রেস এতো দাম দিয়ে আনতে?
কেন এনেছেন শুনি?”
সায়রা এখনো ড্রেস পড়ে নি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেটা উল্টে পাল্টে দেখই যাচ্ছে আধঘন্টা যাবত।
মিশান দুষ্ট হেসে বলে উঠে
-“শুনতে হবে না।
তুই বেড়িয়ে আয় করে দেখাচ্ছি।”
-“প্লিজ না।”
মিশান মিনিট খানিক্ষন চুপ থাকে। সায়রাও চুপ করে আছে মিশান কি বলে তা শুনার জন্য।
অতঃপর মিশানের গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে এলো
-“পড়তে হবে না।
বেড়িয়ে আয়।
বেশিক্ষণ ওয়াশ রুমে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”
বলেই মিশান গিয়ে বিছানায় কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে।
সায়রাও বেড়িয়ে এসে প্যাকেট রুমে থেকে যেভাবে নিয়েছে ঠিক সেভাবে আলমারিতে তুলে রাখে।
অতঃপর রাতের পোষাক নিয়ে ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে এসে নিজেও কম্বল এর ভিতর ঢুকে মিশান কে জড়িয়ে ধরে।
কিন্তু মিশান দিক হতে কোনো রেসপন্স আসে না।সায়রা মিশানের টি-শার্ট সরিয়ে কাঁধে চুমু খায়।
তবুও মিশানের কোনো রকম উত্তর নেই। সায়রা এবার কম্বল সরিয়ে দিয়ে মিশানের উপর উঠে মিশানের কপালে, চোখে চুমু আঁকে।
মিশান এতোখন চোখ বন্ধ করে ছিল। কিন্তু এই মেয়ে আর সেটা হতে দিলো কই।বউ যদি এমন এলোমেলো স্পর্শ করে তো স্বামী হয়ে কি করে সেটা কে উপেক্ষা করা যায়।
মিশানও পারে নি। চোখ খুলে সায়রা কে নিজের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে।
সময় দেওয়ার মতো করে আদেশের সুরে বউ কে জানিয়ে দেয়
-“এখন পড়তে হবে না।
যখন তোর মনে হবে আমার আবদার নামক তোর ভাষায় অসভ্য ড্রেস টা পড়ে আমরা শখ পূরণ করা দরকার তখনি পড়িস।
তবে পড়তে তোকে হবেই।”
সায়রা কিছু বলে না মন দিয়ে মিশানের কথা শুনছে।
মিশান সায়রার কিছু বলতে না দেখে আবারও বলে উঠে
-“কি?”
-“হুম।”
-“টেস্ট করেছিস?”
-“হুম।”
সায়রা আর কিছু বলার আগেই মিশান উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে
-“কি এসছে?
পজিটিভ? ”
মিশানের প্রশ্নে সায়রার মুখ আধার নামে।
-“না।”
মুখ মলিন করে উত্তর দেয় সায়রা।যা দেখে মুচকি হাসে মিশান। মনে মনে বেশ খুশি হয়। খুশি হওয়ার কারণ ডক্টর না করেছে এখন বেবি নিতে। ওরা দুজন ওই দিন গিয়ে ছিল ডক্টর এর কাছে।বেবি নিতে পারবে কি না বেবি নিলে সায়রা কোনো সমস্যা হবে কি না সেই জন্য। মূলত সায়রার শারীরিক কিছু সমস্যা আছে সেই জন্যই ডক্টর এর কাছে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য। ডক্টর কিছু টেস্ট করে জানিয়েছে সায়রার কিছু শারীরিক সমস্যা আছে যাতে করে এখন বেবি নিলে নাও টিকতে পারে। মানে বেবি ক্যারি করার মতো ওর জরায়ু সক্ষম নয়। আর যদিও টিকে তবে সায়রার সমস্যা হবে।
তাই এখন বেবি নিতে না করেছে। আর সমস্যা টা ঠিক হওয়ার জন্য কিছু মেডিসিন দিয়েছে।
বলেছে বছর খানিক অপেক্ষা করে যেনো বেবি নেয়।
কিন্তু সায়রা সে সব শুনলে তো।
ঠিক মতো ডক্টর এর দেওয়া মেডিসিন নেয় না। আবার পিলও নিতে চায় না মিশান ঝুর করে দিতে হয় তবে সায়রা বেশির ভাগ সময় মুখে নিয়ে তা ফেলে দেয়। তাই মিশানও এখন আর ঝুর করে না।চলুক এ মেয়ে তার মর্জি মতো।
আর আল্লাহ যদি চায় তবে না হয় হলো একটা অস্তিত্বের প্রণয়।
ডক্টর দেখিয়েছে ছয় মাসের মতো হতে চলে এখন নিশ্চয়ই সমস্যা টা কিছু টা কমে গিয়েছে। এস ভাবতে ভাবতে বউয়ের ঠোঁটে নিজের ঠোঁটে ছুঁয়ে দেয় আলগোছে মিশান।
অতঃপর এক ঝটকায় বউ কে নিজের উপর থেকে নিচে ফেলে দিয়ে নিজে চেপে বসে বউয়ের উপর।
সায়রা খরগোশ ছাপা গেঞ্জি টা পেটের উপর হতে সরিয়ে সেখানেও চুমু একেঁ দিয়ে বলে উঠে
-“মন খারাপ করে না, জান।
আর তাছাড়া ডক্টরও তো বলেছে আমরা যেনো এখন বেবি না নেই।
নিলে তো তোর সমস্যা হবে।”
মিশানের এমন কথায় সায়রা মুখ ভেংচি কাটে। মিশানের কথা ওর মোটেও পছন্দ হয়নি। তবে মুখে কিছু না বলেই মিশানের বুকে চুমু খায় নিজে।
-“আদর চাই?”
-“হুম অনেক।”
এমন উত্তর কি উপেক্ষা করা যায়?উঁহু,মোটেও না।যেখান সামনে থাকা পুরুষ স্বামী কম প্রেমিক পুরুষ বেশি।
সেখানে এমন উত্তর যে এই পুরুষ টার কাছে হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো অনূভুতি।
চেপে ধরে বউ কে নিজের শক্ত ঠোঁটের স্পর্শে দেয় বউয়ের অধরে।
অতঃপর হারিয়ে যায় একে অপরের ভালোবাসায়।
————
-“এই উঠুন।”
-“উমম জান ডাকে না।”
সায়রার বুকের ভিতর ধক করে উঠে। এই লোকের এমন ঘুম জড়ানো কণ্ঠে যে সায়রা নামক রমণীর মন দুয়ারে কিছু একটা হয়। এই লোক কি তা জানে?
উঁহু, জানলে নিশ্চয়ই এভাবে কখনো বলতো না।
মিশান নড়েচড়ে আবারও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বউ কে সায়রার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। মিশানের বুক হতে
মাথা টা একটু উঁচু করে। বুকের ঠিক মধ্যিখানে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে।
মিশানের ঘুম ততক্ষণে পালিয়েছে।
মুখ দিয়ে হালকা ব্যথাতুর শব্দ করে বলে উঠে
-“আহ,,
কি করলি এটা?”
-“তো কখন থেকে ডাকছি।
উঠছেন না কেন?”
নামাজের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। উঠুন।”
কথা গুলো বলতে বলতে সায়রা নিজে কে মিশানের বাঁধন হতে আলগা হয়ে যায়।
মিশান কিছু বলে না। নিজেও উঠে বসে। ভালোবাসার মূহুর্ত শেষ গোসল করে এসে ঘুমিয়েছে বেশিক্ষণ হয় নি। যদিও গরম পানি দিয়ে করেছে তবে শীতের মৌসুমে তো তাই শীত শীত লাগছে।সাথে চোখ জ্বালা করছে। তাই চোখ কচলে বউয়ের দিক দৃষ্টি দিতেই সব আবারও এলোমেলো হয়ে গেলো। পাশে থাকা চাদর জড়িয়ে দেয় বউয়ের গায়ে সাথে নিজেও টি-শার্ট গায় দিয়ে বউ কে কোলে তোলে ওয়াশরুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
অতঃপর বউ কে ফ্রেশ করিয়ে নিজেও ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো সায়রা নিজে দুটি জায়নামাজ বিছিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মিশান আসলে সায়রা নিজে টুপি এগিয়ে দেয় স্বামীকে।তার পর দু’জনে নামাজ পড়ে নেয়।
-“ভার্সিটিতে যেতে পারবি?
বেশি কষ্ট হচ্ছে?”
নামাজ শেষ দু-জনে শুয়ে আছে। মিশান তখনি হঠাৎ প্রশ্ন টা করে। প্রশ্ন টা করার কারণ বউ তার ভালোবাসার ভার এখনো সামলে উঠতে পারে না।
সায়রা বেশ রয়ে সয়ে উওর দেয়
-“হুম একটু একটু পেট ব্যথা করছে।
তবে ভার্সিটি যেতে পারবো। আজ সব নোট কালেক্ট করতে হবে। বিয়ের ঝামেলায় তো ক’দিন যেতে পারবো না।”
-“তোকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দিয়ে আমি ইনিয়া আপুদের আনতে যাব।
তোর ছুটির পর দাঁড়াবি প্রহর নিয়ে আসবে।
আমি বলে দেবো।
-“আচ্ছা।”
আর কিছু বলে না মিশান বউ কে বুকে আগলে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আবারও।সারা রাত ঘুমুতে পারে নি এখন একটু ঘুমানো প্রয়োজন।
#চলবে…
#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৪
#জান্নাত_সুলতানা
-“শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে, সুইটহার্ট?”
-“না।একটু শুয়ে থাকলে ঠিক হয়ে যাবে।
আপনি যান তো ওই দিকে নিশ্চয়ই আপনাকে সবাই খুঁজচ্ছে।
কত কাজ। আমি একটু পর নিচে আসছি।”
সায়রা মিশান কে ঠেলেঠুলে রুম থেকে বের করে দিলো।
সায়রা এসে আবারও বিছানায় শুয়ে পড়ে।
মিশান সিঁড়ি কোঠায় কাছে গিয়ে হঠাৎ কিছু মনে করার মতো করে দাঁড়িয়ে যায়।
কিছু ভেবে আবারও রুমে ফিরে আসে। রুমে এসে দরজা টা লক করে। সায়রা চোখ বন্ধ করে ছিল। কিন্তু দরজা লক করার শব্দে চোখ খোলে মিশান কে আবারও রুমে দেখে ভ্রু কুঁচকে আসে।
-“আপনি?
কিছু দরকার?”
-“খাবার কেন খাসনি?”
মিশানের এমন সোজাসাপটা প্রশ্নে সায়রা ভয়ে শুকনো একটা ঢুক গিলে।
সায়রা আমতা আমতা করে বলে
-“খে,,,
-“চুপ একদম চুপ।
আর একটা মিথ্যাও না। নিচে চল।”
-“আপনি আমার কথা টা শুনুন।”
-“থাপ্পড়ে তোর সব দাঁত ফেলে দেবো, ইডিয়েট।”
কথা শেষ মিশান সায়রা কে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।
তার পর রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা নিচে এসে রান্না ঘরে চলে যায়।
-“ওকে এভাবে টানছিস কেন?”
মাইশা চৌধুরী প্রশ্ন করে। মিশান মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে
-“মা ও কিছু খায় নি।
তাই তখন রুমে মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিল। ভাগ্য ভালো আমি তখন রুমে গিয়েছিলাম।”
-“সে কি কথা সায়রা? এটা একদম ঠিক হয় নি।
তুই তো দেখছি মিশান তোর বাবা সবাই কাজে কতটা ব্যস্ত তবুও কেন খাবার টা খাস না।”
মাইশা চৌধুরী কথা বলতে বলতে থালায় খাবার নিয়ে নিলেন।
অতঃপর সেটা মিশানের হাতে দিয়ে তিনি সব কাজের লোকদের নিয়ে রান্না ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো। বিয়ে বাড়ি বলে কথা কত মানুষ জন ডাইনিং টেবিল লিভিং রুম সব জায়গায় মানুষ জনে গিজগিজ করছে।
রান্না ঘরে জায়গায় টাই একটু ফাঁকা। মিশান সায়রাকে চুলার পাশে ফাঁকা জায়গা টায় বসিয়ে দিয়ে নিজে বেসিনে হাত ধুয়ে সায়রার মুখে খাবার তুলে দিতে লাগলো।
দুবার খাবার মুখে দেওয়ার পর সায়রার হঠাৎ করে মাথা টা চক্কর দিয়ে উঠে।
মাথার এক পাশ বাম হাত দ্বারা চেপে ধরতেই মিশান নিজেও হাতা থাকা খাবার থালা পাশে রেখে বউ কে এক হাত দিয়ে ডান পাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরে মাইশা চৌধুরী প্রিয়তা মির্জা কে ডেকে উঠে।
তারা সবাই লিভিং রুমে বসে ছিল। তাই মিশানের এমন ডাকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে সবাই।
সাদনান মির্জা এসে মেয়ে কে কোলে তোলে আয়ান কে গাড়ি বের করতে বলে। আয়ানও গাড়ি বের করে মিশান ততক্ষণে নিজের এঁটো হাত ধুয়ে এসে গাড়িতে বসে পড়ে।
অতঃপর সায়রার মাথা টা নিজের কোলে নিয়ে নেয়।আয়ানও গাড়ি স্টাট দিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য চলে।
———
আজ সন্ধ্যা আরভীর গায়ে হলুদ। সোহানরাও বিকেলের দিকে এসে যাবে।
মূলত দু’পক্ষই এক বাড়িতে থেকে বিয়ে হবে। বিয়ের দিন রাতে বর থাকবে আর সব আত্মীয় বিদায় নিবে।
আয়না, রাহাত তাদের নিজেদের বড় মেয়ে কে নিয়ে ওই দিন নিজেদের ফ্ল্যাট থেকে এখানে এসে পড়েছে। সব আত্মীয় চলে এসছে।
বাড়িতে অনেক মেহমান।মানুষ বেশি হলে তো কাজও বেশি হবে।যদিও কেউ নিজের হাতে ধরে কিছু করছে না। তবে কাজের লোকদের তো সব বুঝিয়ে দিয়ে সাথে সাথে থাকা লাগে।
আর এই ফাঁকেই সায়রা নামক মিশানের আহ্লাদী বউ নিজের খাবার নিয়ে বেশ অনিহা করছে।
যা এতো কাজের ফাঁকে কারোরই চোখে পরে না।
সকাল এগারো টার দিকে যখন মিশান নিচের কিছু লাইটিং এর কাজ লোকদের দেখিয়ে দিয়ে উপর নিজের রুমে আসে। রুমে আসার মূল কারণ বউ কে একটু মন ভরে দেখা। সে দিন রাতে যে ভালোবাসা আদান-প্রদান হয়েছে এর পর কাজের চাপে আর তেমন কিছু তো দূর বউয়ের দেখা পাওয়াও হয় না।
এসব ভাবতে ভাবতে যখন রুমে ঢোকে ঠিক তখনি সায়রা ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে আসছিল।
তবে মাথা টা হঠাৎ ঘুরে উঠে আর তখনি কেউ এসে নিজের শক্ত চওড়া বুক আগলে নে সায়রার ছোট তুলতুলে দেহখানা।
চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে মিশান কে দেখে নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছিল সায়রা।
তার পর বেশ অনেক টা সময় বউয়ের কাছে থাকার পর সায়রা আবারও মিশান কে ঠেলেঠুলে পাঠিয়ে দিয়ে ছিল। যাতে করে খাবার নিয়ে মিশান কিছু টের না পায়।
কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না মিশান ঠিক ও খাবার খায় নি সেটা ধরে ফেলে।
——————
-“মির্জা সাহেব।
সায়রা মামুনির কি বিয়ে হয়ে গিয়েছে?”
সাদনান মির্জার পারিবারিক ডক্টর এর কাছে নিয়ে এসছে সায়রা কে।
আর তিনি জানেন না তাই এমন প্রশ্ন।
ডক্টর এর প্রশ্নে সাদনান মির্জা কিছু বলবে তার আগেই মিশান জানিয়ে দেয়
-“আমি ওর হাসবেন্ড।
কি হয়েছে ওর এখনো জ্ঞান ফিরছে না কেন?”
মহিলা ডক্টর মুচকি হাসে মিশানের এমন তড়িৎ গতিতে উত্তর দেওয়া দেখে।
ঠোঁট এলিয়ে হেসে নিজেও উওর করে
-“আয়ান চৌধুরীর ছেলে মিশান চৌধুরী।”
-“হুম।
বছরের বেশি হয় বিয়ে হয়েছে।
ও বিদেশ ছিল। হুট করে হয়ে গিয়েছে তাই কাউ কে আর জানানো হয় নি।”
-“ওর শরীর দূর্বল।
খাবার দিবেন বেশি বেশি।আর যত্ন নিবেন শরীরের প্রতি খেয়াল রাখবেন।
খাবার যেনো কোনো হেলাফেলা না করে।”
-“আচ্ছা।”
সায়রা বেডে ঘুমি আছে। মিশান কোলে নিয়ে ডক্টর কেবিন হতে বেরিয়ে আসে।
সায়রা কে ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে। তাই ও ঘুমিয়ে আছে।
মিশান হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে এলে আয়ান চৌধুরীও আগে আগে এসে গাড়ি দরজা খুলে দেয়।
মিশান মুচকি হাসে।অতঃপর বউকে সিটে বসিয়ে নিজে বসে বউয়ের মাথা নিজের কাঁধে রাখে।
এবার আর সাদনান মির্জা পেছনে বসে না ভায়রা ভাইয়ের সাথে সামনে বসে পড়ে। মেয়ে কে তিনি প্রচুর পরিমাণ ভালোবাসে। আর তিনি সব সময় চাইতেন তার এই ছন্নছাড়া মেকে ওনার নিজের থেকেও তার মেয়ে কে কেউ ভালোবাসুক আর তার হাতে তোলে দিয়ে তিনি নিশ্চিন্ত হতে চাইতেন। আর আজ তিনি নিশ্চিন্ত। পেড়েছেন তিনি মেয়ে কে যোগ্য পাত্রের হাতে তুলে দিতে।
——-
মিশান সায়রা কে সাদনান প্রিয়তার রুমে বিছানা শুয়ে দিয়ে নিজে রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
সবাই দাঁড়িয়ে আছে। সবাই ভেবেছে সুখবর আসবে হয়তো কিন্তু উল্টো বেচারি অসুস্থ তাই সবার মন খারাপ।বিয়ে বাড়ির কেমন থমথমে হয়ে আছে।
সাদনান মির্জা কিছুখন পর রুমে এলো ততক্ষণে সায়রা জেগে গিয়েছে আর সবার সাথে টুকটাক কথা বলছে।
-“চলো সবাই যার যার কাজে যাও।
আর ওকে রেস্ট করতে দেও।”
সবাই চুপচাপ বেড়িয়ে গেলো।
সাদনান মির্জা মেয়ের কাছে গিয়ে পাশে বসে মাথা হাত বুলিয়ে বেশ আদুরে কণ্ঠে মেয়ে কে বেশ অনেক টা সময় নিয়ে বোঝালো যাতে খাবার ঠিক মতো খায় আর শরীরের যত্ন করে।
এভাবে থাকলে তো আর হবে না। এই যে আজ এমন একটা দিনেও তার জন্য সবাই কত টা চিন্তিত।
এসব কতক্ষণ বোঝাল।
সায়রাও বাবা কে সম্মতি দিলো সে আর কোনো কিছু হেলাফেলা করবে না।
সাদনান মির্জা মেয়ে কে বুঝিয়ে দিয়ে কপালে চুমু একেঁ ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়।
আর ঠিক তখনি মিশান খাবার থালা হতে মিশান রুমে ঢোকে।
সাদনান তাকায় মিশানের দিকে মিশান চোখ দিয়ে ইশারায় সাদনান কে আশ্বাস দেয়।
সাদনান মুচকি হেসে চলে যায়।মিশান নিজও খাবারের থালা হাতে রুমে ঢুকে।
সায়রা কে শুয়া থেকে তোলে বসিয়ে ওয়াশ রুম থেকে তোয়ালে ভিজিয়ে আনে সাথে মগে করে পানি।
তার পর সুন্দর করে বউদের শরীর মুছিয়া দেয়।
অতঃপর খাবার খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন দেয়।কিন্তু একটা কথাও বলে না। সায়রা ভয়ে কিছু বলছে না। এটা যে ঝড় আসার পূর্বাভাস এটা বেশ বুঝতে পারছে।
#চলবে…..