#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১১
#জান্নাত_সুলতানা
-“বাসায় যেতে হবে না?”
সায়রা মিশানের গলায় মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে আছে। মিশান কখন থেকে উঠতে বলছে কিন্তু এই মেয়ের কোনো রকম প্রতিক্রিয়া নেই।
মিশান এবার মহা বিরক্ত। ভ্রু কুঁচকে আসে ওর।একটা মানুষ এতো কি করে ঘুমুতে পারে ও ভেবে পায় না। সকাল ন’টা বাজতে চলে এই মেয়ের কি সে খেয়াল আছে।
মিশান আবারও মাথায় হাত বুলিয়ে বউয়ের।
বেশ শান্ত কন্ঠে বলে উঠে
-“আচ্ছা বাসায় যাব না।
তাহলে তোকে আদর করি।”
মিশান দুষ্ট কন্ঠে বলে উঠে।
সায়রা মিশানের বুক হতে মাথা তুলে ঘুম ঘুম চোখে পিটপিট করে তাকিয়ে ধরে আসা গলায় বলে
-“আমি জানি আপনি এটা কিছুতেই আজ করতে পারবেন না। ”
কথা শেষ মুচকি হেসে আবারও আগের স্থানে মাথা এলিয়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় সায়রা।
মিশান আর কিছু বলে না। কি বা বলবে।যাই একটা বুদ্ধি বের করে ছিল। তবে সেটাও কাজে দিলো না।
তাই চুপ করে নিজেও প্রেয়সীর শরীরের গন্ধ নিয়ে লম্বা শ্বাস টেনে।
এক সময় মিশান নিজেও আবার ঘুমি পরে।
সায়রা নড়েচড়ে আবারও ঘুমিয়ে যেতে গিয়ে পারলো না।
পেটে ক্ষুধা অনুভব করে।ঝট করে চোখ খোলে অতঃপর মিশানের চাপ দাঁড়ি ফাঁকে ঠোঁট জোড়া নজর পরে।
কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছে। দেখতে বেশ লাগছে।
এসব ভেবেই সায়রা
আস্তে ধিরে বালিশের পাশে থাকে মিশানের ফোন টা হাতে নিয়ে টাইম দেখে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে।
ফোন বিছানায় ফেলে মিশান কে ডাকতে লাগলো
-“বারো টা বজে বাসায় যাব না? উঠুন। ”
মিশান নড়েচড়ে উঠে বসে। তার পর আড়মোড়া ভেঙ্গে বলে উঠে
-“তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।”
সায়রা আর কিছু বলে না উঠে গিয়ে কাল রাতে বাসা থেকে পড়ে আসা কাপড় গুলো শপিং থেকে বেড় করে ওয়াশ রুমে চলে যায়।
মিশানও ফোন হাতে কাউ কে কল লাগায়। ফোনে কথা শেষ করে মিশান সোফায় বসে অপেক্ষা করে সায়রা বেড়িয়ে আসার।সায়রা সাত কি আট মিনিটের এর মধ্যে বেড়িয়ে আসে।
শুধু কাপড় পাল্টে এসছে।
মিশান একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে ফোন টা সোফায় রাখে।
সায়রা কাল পড়ে আসা চাদর টা নিয়ে সেটা ওর শরীরে জড়িয়ে দিতে দিতে বলে উঠে
-“দরজা কেউ নক করলে একটু ফাঁক করে খাবার টা রেখে দিবি।
ঠিক আছে?”
-“হুম। ”
কথা শেষ মিশান ওয়াশরুমে চলে যায়। সায়রাও আর কি করবে বিছানায় পা গুটি কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে থাকে।
এর মিনিট দুই এক এর মাথায় দরজা কেউ নক। সায়রা গায়ে চাদর টা পেচিয়ে দরজা টা হালকা খোলে উঁকি দিয়ে দেখলো একটা মেয়ে আর একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে হাতে খাবার এর ট্রে।সায়রা ছেলে টার হাত থেকে একটা ট্রে নেয়।আর মেয়ে টাকে বলে ওর সাথে আসার জন্য।
মেয়ে টা ভিতরে আসে সায়রা খাবার গুলো রেখে পেছনে ফিরে মেয়ে টা কে বলে রাখতে। ঠিক তখনি ওয়াশরুমের দরজা খোলে মিশান বেড়িয়ে আসে।
আর মেয়ে টা হা করে তাকিয়ে থাকে। এদিকে সায়রা রাগে ফুঁসছে। মেয়েটা কে মনে মনে একশ’রও বেশি গালি দিয়ে ফেলে।আর এদিকে
মিশান সায়রার দিকে কটমট করে তাকিয়ে মেয়ে টা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে
-“আপনি আসতে পারেন।”
মেয়ে টা লজ্জা পায়।তার পর রুম থেকে বেড়িয়ে যেতেই মিশান শব্দ করে দরজা টা লাগিয়ে ঝড়ে বেগে এসে সায়রার বাহু খামচে খাবলে ধরে।
অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে
-“বলেছিলাম না দরজা টা একটু ফাঁক করে খাবার টা নিতে?
তাও কেন শুনলি না আমার কথা?”
সায়রা ভয় পায় না নিজেও উল্টো বলে উঠে
-“আপনার তো খুশি হওয়ার কথা।”
মিশান অবাক হয়।তবে বুঝতে পারে বউ তার রেগে আছে। এখন নিজেও রাগলে ভালোর চাই খারাপ এ হবে বেশি।
আর দুজনেই আগুন হলে কি করে হবে। লোহা পেটানোর জন্য তো কাউকে হাতুড়ি হতে হবে।
-“আচ্ছা আপনাকে এতো সুন্দর কে হতে বলেছে?
একটু কম সুন্দর হলে কি এমন ক্ষতি হতো।”
মিশানের ভাবনার মাঝেই সায়রা অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে।
মিশান ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।
এই মেয়ে এসব কি বলছে। মিশান আর বেশি ঘাঁটে না।
সায়রা কে ছেড়ে দিয়ে টেবিলে রাখা খাবার গুলো পেকেট থেকে বের করে নিয়ে সায়রা কে ডাকে
-“এদিকে আয়।”
-“খাব না আমি বাসায় যাবো।”
-“দুই সেকেন্ড এর মধ্যে আমার পাশে এসে না বসলে তোর খবর আছে।”
ব্যস আর কি মিশানের এই চাপা ধমকে সুর সুর করে সায়রা মিশানের পাশে গিয়ে বসে পড়ে।
মিশানও ওকে খাইয়ে দেয়।
সাথে নিজেও খায়।
-“কাল রাতেও মেয়ে টা খাবার দিতে এসে কেমন করে তাকিয়ে ছিল।
তাই তোকে আজ দরজা টা বেশি খুলতে না করেছিলাম।
কিন্তু তুই তো তুই। নিজে খাল কেটে কুমির এনে এখন আমার সাথে রাগ দেখাচ্ছি।
যেখানে আমি তোকে আগেই থেকেই সাবধানে করেছিলাম।”
-“আমি অতো কিছু ভাবিনি। ”
-“তা ভাববি কেন।
শুধু আমার সাথে কিভাবে রাগ দেখাবি অভিমান করবি।
এই তো তোর কাজ।”
মিশানের এই কথা টা সায়রার বেশ খারাপ লাগলো।
সত্যি তো ও নিজে সব সময় মিশান কে ভুল বুঝে।
—————–
সায়রা আর মিশান বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই দেখলো পুরো বাড়ি অন্ধকার। এখন বিকেল হয়ে গিয়েছে কিন্তু এমন সময় বাড়ির এমন অবস্থা সায়রা ভয় পেলো তবে মিশান ঠাঁই দাঁড়িয়ে যেনো এসব কিছুই না।
-“Happy birthday”
সবাই এক সাথে বলে উঠে আর ঠিক তখনি পুরো বাড়ি আলোকিত হয়।
সায়রা এসব দেখে অবাক হয়।কিন্তু মনে অনেক খুশি হয়।
তার পর সবাই একে একে শুভেচ্ছা জানায় সায়রা কে।
সবাই অনেক সুন্দর করে সাজুগুজু করে আছে।
আর শুধু সায়রা রাতের পোষাক পড়ে উপর চাদর জড়িয়ে। সায়রার মনে মনে হেসেছে। তবে মুখে তা প্রকাশ করে নি।
তার পর কেক কেটে আড্ডা দিয়ে রাতে খাবার খেয়ে সবাই যার যার রুমে চলে যায়।
এর মধ্যে অবশ্য মিশান একবার রুমে গিয়েছে তবে সায়রা একবারে এখন এসছে রুমে।
কিন্তু রুমে এসেই সায়রার চোখ চড়কগাছ।
মিশান সত্যি সত্যি ওই দিনের বলা কথা রেখেছে। ওই দিনের পিক টা বাঁধিয়ে এনেছে।ছিঃ কি অশ্লীল অসভ্য মানুষ।
সায়রা ধুপধাপ পা ফেলে ছবি টার সামনে গিয়ে যেই না ছবি টা ধরতে যাবে আর অমনি মিশান এসে এক ঝটকায় ওকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে।
সায়রা ভয়ে খামচে ধরে মিশানের পিঠ।
-“অসভ্য লোক।
এটা কেউ দেখলে কি হবে আপনি এক বারও ভেবেছেন? ”
জড়িয়ে থাকা অবস্থা বলে উঠে সায়রা।
মিশান হাসে হো হা করে হাসে। অতঃপর সায়রা কে ছেড়ে দিয়ে বলে
-“তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছিস আমাদের রুমে কেউ আসে না।
আর আমি তোর হাসবেন্ড।”
সায়রা আর কিছু বলে না। চুপ চাপ ওয়াশরুমে চলে যায়। বলে কিছু লাভ নেই এই অসভ্য মানুষ কে।
আর মিশান ছবি টার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে।
ছবিটায় সায়রা শরীরের কাপড় ঠিক নেই যার ফলে শরীরের বেশির ভাগ অংশ উন্মুক্ত। আর ও মিশানের গলায় মুখ গুঁজে আছে। তবে মুখ টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মিশান নিজেও সায়রা কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। তবে মিশান নিজেও একদম উন্মুক্ত।
এসব ভাবতে ভাবতে সায়রা ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে নিজের প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।
মিশানও ফ্রেশ হয়ে এসে সায়রা কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে
-“বেশি খারাপ লাগছে? ”
জিজ্ঞেস করে মিশান।সায়রা মুচকি হেসে মিশানের বুকে নাক মুখ ঘঁষে জানায়
-“হুম একটু একটু লাগছে।”
-“আচ্ছা তুই ঘুমিয়ে পর আমি বিলি কেটে দিচ্ছি। ”
সায়রা কিছু বলে না চোখ বন্ধ করে।
মিশানও প্রেয়সীর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
——-
-“আপনি কেন আমায় ভালোবাসেন না,প্রহর ভাই?”
রুহির করা প্রশ্নে প্রহর মোটেও অবাক হয় না।এটা হওয়ারই ছিল।
প্রহার বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বেশ শান্ত কন্ঠে বলে
-“আড়াই মাস হয়েছে এখানে এসছো।
এর মধ্যে তুমি আমায় ভালোবাসো বলছো। কিন্তু সত্যি কি তুমি আমায় ভালোবাসো? ”
প্রহরের প্রশ্নে রুহি মাথা নুইয়ে নেয়। আসলেই তো ওতো একবারও এটা ভাবে নি। কিন্তু ওর মনে মাথায় সব সময় প্রহরের কথা ঘুরে। প্রহর এর সব দিক ভাবতে ভালো লাগে।
-“আমি জানি না।
তবে আপনার কথা ভাবতে আমার ভালে লাগে।”
-“আমার প্রশ্নের উত্তর যখন জানবে তখন না হয় ভালোবাসার দাবি নিয়ে এসো।
সে দিন ফিরিয়ে দেবো না।”
#চলবে…..
#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১২
#জান্নাত_সুলতানা
-“শোন বেশি লাফালাফি করবি না।
ঠিক আছে? ”
-“আমি ছোট নই।”
-“ছোট নয় তবে পাগল তুই।”
আর শোনে না সায়রা এক দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
মিশান ফুস করে শ্বাস ফেলে। কি লাভ হলো এতো করে বলে সেই তো দৌড়াদৌড়ি করছে।
মিশান বড় বড় কদম ফেলে ওয়াশ রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
কত কাজ বাকি এক মাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা।
———
দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গিয়েছে। আরভীর এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে দশ কি বারো দিন হবে।
এ-র মধ্যেই সোহান তার বাবা মা কে আবারও আয়ান চৌধুরীর সাথে কথা বলতে বলে বিয়ে ডেট ফাইনাল করে নিয়েছে।
আয়না রাহাতও দেশে এসছে বড় মেয়ে ইনিয়া কে নিয়ে। সামনে মাসে ইনিয়ারও বিয়ে। ছেলে ডক্টর। ছেলেরাও ঢাকাতেই থাকে। বিয়ের পর ইনিয়া দেশেই থাকবে।
আর আয়না রাহাতও আর লন্ডন যাবে না।রুহি কেও এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে ভর্তি করা হয়েছে আরভীর কলেজ।
যদিও আরভীর সমানেই ছিল রুহি তবে এক বছর পিছিয়ে গিয়েছে।
———–
সামনে সাপ্তাহে বিয়ে। আজ সবাই শপিং এ যাবে। সবাই রেডি হয়ে চলে এসছে শুধু মিশান আর প্রহর বাড়ির ভিতরে থেকে এখনো আসে নি।
সাদনান মির্জা একটা গাড়ি ডাইভিং সিটে বসে আছে তার পাশে আয়ান চৌধুরী। পেছনে মাইশা,প্রিয়তা বসে আছে। আরও একজন বসা যাবে তবে রুহি, আরভী,সায়রা ওরা কেউ এখনো বসে নি গাড়িতে দাঁড়িয়ে আছে ওরা।
আয়ান চৌধুরী এবার বিরক্ত হলেন। ডাকলেন আরভী কে
-“ওদের ডেকে নিয়ে আয়তো।”
-“আচ্ছা।”
আরভী কথা শেষ বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। মিনিট দুই এক এর মাথায় আরভী সহ মিশান প্রহর সবাই এলো।
আরভী সোজা গিয়ে মাইশার আর প্রিয়তা মাঝ খানে গিয়ে বসে পড়ে।
-“তুই ওদের নিয়ে আয়।”
সাদনান মির্জা মিশান কে উদ্দেশ্য করে কথা টা বলে।
মিশান মাথা নাড়ে যার মানে আচ্ছা।
সাদনান মির্জাও গাড়ি স্টাট দিয়ে চলে যায়।প্রহর গিয়ে ডাইভিং সিটে বসে সায়রা পেছনে বসে আছে
মিশান এসে ধপ করে সায়রার পাশে বসে গাড়ির দরজা টা ধড়াম করে লাগিয়ে দেয়।
এদিকে রুহি এখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে পেছনে সায়রার পাশে বসবে না-কি সামনে প্রহরের পাশে।
-“কি এখনো দাড়িয়ে আছিস যে?”
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে মিশান। সায়রা কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই মিশান সায়রা হাত চেপে ধরে রুহি কে আবারও বলে
-“সামনে বসে পড়।”
-“হুম।”
বলেই রুহি গিয়ে প্রহরের পাশে বসে পড়ে। প্রহর এক বার রুহির দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টাট দেয়।
সবাই কাপড় দেখছে। সবাই বললে ভুল হবে। ছেলেরা সবাই কেউ চেয়ারে বসে কেউ ফোনে কথা বলছে কেউ
বা গেমস খেলছে। শুধু মহিলারা সব পছন্দ করছে।
মিশান নেই এখানে মিশান কোথাও একটা গিয়েছে।
বারোটা নাগাদ সবাই মার্কেট এসছে আর এখন সন্ধ্যা ছয়টা র বেশি সময় বাজে। সব কেনাকাটা করা শেষ।
এখন সবাই রেস্টুরেন্টে এ যাবে খাবার খেয়ে তার পর বাসায় চলে যাবে।
————-
-“মা আমার কফি টা একটু কষ্ট করে কাউ কে দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিও।”
প্রহর কথা টা বলার সময় রুহির দিকে তাকায় একবার।অতঃপর প্রহর সিঁড়ি দিয়ে উপর নিজের রুমে চলে যায়।
সবাই ফ্রেশ হয়ে এসছে রাতে আর কেউ খাবার খাবে না তাই এখন কিছু কিছু কাপড় এখন দেখে নিবে।
প্রহরের বলা কথায় মাইশা কিছু বুঝলো কি? হয়তো।
-“শোন রুহি।
একটা কফি করে প্রহর কে দিয়ে আয় না মা।”
প্রহর যখন কথা টা বলেছে তখনি রুহির আগমন ঘটেছে।
-“আচ্ছা।”
রুহির জোর পূর্বক হেসে বলে। প্রিয়তা মির্জা অবশ্য নিজে দিতে চে্য্য়ে ছিল তবে মাইশা যেতে দিলো না। রুহি নিজেও পারবে জানায়। তাই তিনিও বেশি ঘাটেঁ না। অতঃপর রুহি কিছু বিরবির করতে করতে রান্না ঘরে চলে যায়।
তার পর কফি বানিয়ে নিয়ে প্রহর এর রুমে এর উদ্দেশ্য হাঁটা লাগায়।তবে ওর ভিষণ ভয় করছে।
কারণ টা হলো ও কাল থেকে এক বারও প্রহর এর সাথে কথা বলে নি উল্টো কালকের আগের দিন কলেজে এক ছেলের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করছে।
আর সেই ছেলে ওকে এনে কালকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে।
আবার কাল ফোন দিয়ে ছিল রুহি ফোনে তখন কথা বলছিল আর ঠিক তখনি প্রহর ফোন দিয়ে মোবাইল ওয়েটিং এ পেয়েছিল।
প্রহর এটা নিয়ে ওকে কিছু বলে নি তবে রুহির নিজের ভয় সাথে কিছু টা অপরাধ বোধ করছে।
তাই নিজ থেকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।ছয় মাস আগে যখন প্রহর ওকে মেনে নিয়ে ছিল তখন ও নিজেই বলে ছিল কখনো কোনো ছেলে ফ্রেন্ড বানাবে না। কখনো প্রহর এর কষ্ট হয় এমন কিছু করবে না।
কিন্তু ও তো সে সব কথা রাখতে পারছে না।
ছেলে ফ্রেন্ডও বানিয়েছে।আবার আজ এক দিন এক রাত ধরে কথা না বলে প্রহর কে কষ্টও দিচ্ছে।
যদিও ছেলে টার সাথে ও ইচ্ছে করে ফ্রেন্ডশিপ করে নি। তবে ছেলে টার মা কিছু দিন আগে মা-রা গিয়েছে সেই জন্য ওর খারাপ লেগেছে এসব শুনে তাই ছেলেটার সাথে এমনি কথা বলে যাতে ছেলে টা একটু স্বভাবিক হয়।
রুহি এসব ভাবতে ভাবতে এসে প্রহর এর রুমে সামনে দাঁড়াল।
-“কফি।”
প্রহর বিছানায় বসা থেকেই বলে উঠে
-“রুমে এসে দিয়ে যাও।”
রুহি পা টিপে টিপে এগিয়ে গিয়ে কফি টা বিছানার পাশে থাকা টেবিলে রেখে দিয়ে চলে আসতে গিয়ে প্রহর এর কথায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
-“বলেছিলাম না।
সব তোমার আবেগ মিলল তো?”
কথা টা বলতে বলতে বিছানা হতে নেমে দাঁড়ায় প্রহর।
রুহি কিছু বলছে না। কারণ প্রহর যা বলছে সব টা মিথ্যা। প্রহর ওর আবেগ না ভালোবাসার,শখের।
তবে কিছু বলে না রুহি মন বাগানে অভিমান জমছে।
আজ দেড় বছর ধরে ওর পেছন পেছন ঘুরছে আর এই লোক এখনো বলছে আবেগ থেকে এসব করছে।
যদি আবেগ হতো তাহলে নিশ্চয়ই এতো দিন ওনার কাছে ভালোবাসার দাবি নিয়ে সব সময় ওনার দরজা এসে দাঁড়াতো না। ওনাকে ভালোবাসে, ভালোবাসে বলে পাগলামি করতো না।
-“তোমার আবেগ, মোহ যাই হই আমি।
কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসা আর সেই ভালোবাসায় দিয়ে তোমাকে আমি আমার জীবনে আবদ্ধ করে নেবো।
আর সেটা তোমার ইচ্ছেকৃত হোক বা অনিচ্ছেকৃত। ”
প্রহরের কথা রুহির মন শরীর জুড়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো। সাথে অনেক টা অবাক হলো। কেন না প্রহর রুহির সাথে রিলেশনশিপ এ থাকলেও কেমন আলগা আলগা থাকতো।রুহি বেচারি বেশি বকবক করতো।
আর প্রহর আচার আচরণ দেখে কখনো মনে হয় নি প্রহর এমন ভয়ংকর প্রেমিক পুরুষ হতে পারে।
———-
-“এটা কিসের পেকেট ?আর এটা কখন নিয়েছেন আপনি?
আমি তো দেখলাম না।”
সায়রা সোফায় থাকা একটা পেকেট হাতে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে মিশান কে।
মিশান ল্যাপটপ থেকে দৃষ্টি সড়িয়ে সায়রার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে
-“আগেই নিয়ে গাড়িতে পেছনে রেখে দিয়ে ছিলাম তাই দেখিস নি।
আর ভিতরে কি আছে সেটা না হয় নিজেই দেখ।”
সায়রা মিশানের অনুমতি পেয়ে ঝটপট পেকেট টা খুলেই ওর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।
সাথে লজ্জাও পেলে তড়িঘড়ি করে আবারও আগের স্থানে রেখে দেয় পকেটে থাকা জিনিস গুলো। অতঃপর আমতা আমতা করে বলে উঠে
-“আপনি মনে হয় ভুল করে করোর জিনিস নিয়ে এসছেন।”
মিশান বালিশ সহ ল্যাপটপ বিছানায় রেখে উঠে এসে সায়রার পেছনে দাঁড়িয়ে ওকে নিজের বুকে আগলে ধরে।
গলায় নাক ঘঁষে জানায়
-“ভুল না ইচ্ছে করে এনেছি।
আর এটা তুই এখন পড়বি।”
-“না,প্লিজ।”
ফট করে না করে সায়রা।
তবে মিশান শোনে না বেশ আদুরে কণ্ঠে আবদার করে
-“জাস্ট একবার।
প্লিজ।”
ব্যস সায়রা গলে যায়।তবে এটা কি আদৌও পড়ে মিশানের সামনে এসে দাঁড়াতে পারবে ও?
কি অসভ্য আবদার। পরক্ষণেই সায়রা ভাবে পুরো মানুষটাই তো অসভ্য তো আবদার গুলো তো তেমন অসভ্যই হবে।
এসব ভেবেই সায়রা পেকেট থেকে মিশানের আনা ড্রেস টা নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায়।
#চলবে…