#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১০
#জান্নাত_সুলতানা
-“ক’টা বাজে?”
সায়রা রুমে ডুকতেই মিশান ফোন টা সোফায় ছুঁড়ে ফেলে দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করে সায়রা কে।
-“দেওয়ালে ঘড়ি আছে।ড্রেসিং টেবিলের উপর আপনার ঘড়ি আছে।
দেখে নিন। এটার জন্য এভাবে ডাকার কি আছে?হু।”
আলমারি হতে রাতের পোষাক নেয় কথার বলার মাঝে। কথা শেষ মুখ ভেংচি কাটে সায়রা। মিশান কে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো।
মিশান তাজ্জব বনে গেলো। কি জিজ্ঞেস করলো আর এই মেয়ে কি উত্তর দিলো।
মিনিট দুই এক পর সায়রা ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এলো।
মিশান বিছানায় কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে ফোন হাতে নিয়ে ছিল মাত্র।
কিন্তু ফোন আর দেখা হলো না। সায়রা ওড়না সোফায় রেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে অতঃপর চুল গুলো বিনুনি করে।
ততক্ষণে মিশান তার বউয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে। সায়রা নিচে তাকি ছিল। হঠাৎ আয়নায় মিশানের প্রতিবিম্ব দেখে ভয় পেয়ে বুকে থুতু দেয়।
মিশান মুচকি হাসে তবে চোখে রয়েছে এক অদ্ভুত রকম নেশা।
যা সায়রা ছোট্ট দেহ কাঁপুনি ধরাতে যথেষ্ট।
-“কিছু বলবেন?”
সায়রা নিজে কে সামলে নেয় প্রশ্ন করে মিশান কে। তবে মিশান কিছু বলে না।
আলমারি হতে চাদর নামিয়ে আনে।বউয়ের গায়ে জড়িয়ে দেয় তা।অতঃপর পাঁজা কোলে তোলে নেয়। রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে এসে গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে দাঁড়াতে বলে গাড়ি বের করতে যায়।
গাড়ি বের করে নিয়ে আসে।তার পর গাড়ি নেমে এসে সায়রার কাছে দিয়ে দরজা খুলে দেয়।সায়রা প্রশ্নতুর চাহনিতে তাকায়।
মিশান দরজা টা ছেড়ে দিয়ে দু’হাত দ্বারা সায়রার মুখ টা হাতের আঁজল নিয়ে মোলায়েম কণ্ঠে বলে
-“বিশ্বাস আছে?”
সায়রা মুচকি হেসে মাথা উপর নিচ করে যার অর্থ “হুম”। মিশান নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয় বউয়ের ললাটে।
তার পর সায়রা সামনে বসিয়ে নিজেও গিয়ে ডাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টাট করে।প্রায় দশ এগারো মিনিট পর মিশান গাড়ি থামায় এক টা শপিং মলের সামনে।
সায়রা অবাক হলো রাত বাজে দশ টার বেশি আর ওনি এখন শপিং করতে এসছে।
-” বেড়িয়ে আয়।”
মিশানের ডাকে সায়রার ভাবনা জগৎ থেকে বেড়িয়ে আসে।কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করে না। গাড়িতে উঠার আগে মিশানের বলা কথা মনে পড়ে তাই আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে মিশানের সঙ্গে পা মেলায়।
অনেক গুলো দোকান ঘুরাঘুরি করে মিশান এক টা নেভি কালার একটা ড্রেস নিয়ে তা সায়রার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সেটা পড়ে আসতে বলে।
সায়রা মুচকি হেসে ড্রেস নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে যায়।মিনিট পাঁচ এক পর সায়রা ড্রেস টা পড়ে আসে। মিশান এর মধ্যে বিল মিটিয়ে নিয়েছে। সায়রা এসে মিশানের পাশে দাঁড়ায়। মিশান এক পলক তাকায় বউদের দিকে। অতঃপর সায়রার হাতে থাকা পড়ে আসা কাপড়ের শপিং ব্যাগ টা নিজে হাতে নেয় অন্য হাত দ্বারা সায়রা বাম হাত আঁকড়ে ধরে শপিং মল থেকে বেড়িয়ে আসে।
হাতে থাকা শপিং ব্যাগ টা পেছনে রেখে গাড়ি স্টাট দেয়। গাড়ি তে টুকিটাকি কথা বলছে তবে সায়রা আর এক বারও জিজ্ঞেস করে নি ওরা কোথায় যাচ্ছে।
প্রায় আধঘন্টার পর মিশান একটা রিসোর্ট এর সামনে গাড়ি থামায়।সায়রা নেমে দাঁড়ায় মিশান গিয়ে গাড়ি পার্কিং করে আসে।
এর পর দু’জনেই রিসোর্ট এর ভিতরের দিকে পা বাড়ায়। রিসোর্ট টা বেশ নিরিবিলি। শহর থেকে একটু দূরে।
দেখতেও বেশ চারদিকে গাছে গেঁড়া লাইটিং করা সেই জন্য আরো বেশি সুন্দর দেখতে লাগছে সায়রার কাছে।
ওরা করিডর দিয়ে একবারে শেষ মাথার এর একটা কক্ষে গেলো।
আর এই কক্ষটার বাহির টা আরো সুন্দর করে সাজানো।
মিশান দরজা টা হালকা একটু ফাঁক করে অন্য হাত দিয়ে সায়রার চোখের উপর রাখে।
সায়রা চুপটি করে থাকে। মিশান সায়রা কে নিয়ে রুমে ঢুকে হাত টা চোখের উপর থেকে সরিয়ে নিতে সায়রার মুখ হা করে তাকিয়ে থাকে।
পুরো টা রুমে বেলুন আর মোমবাতি দিয়ে সাজানো বিছানা টাও ফুল দিয়ে সাজানো। আর রুমের মাঝখানে সেন্টার টেবিলে একটা কেক রাখা তাতে কিছু লেখা আছে তবে অতো দূর থেকে তা স্পষ্ট নয়।
মিশান সায়রা কে এভাবে হা করে থাকতে দেখে মুখ গম্ভীর করে বলে
-“মুখ টা বন্ধ করো।”
সায়রা হকচকিয়ে যায় তড়িঘড়ি করে মুখে হাত দেয়।
তার পর মিশানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে
-“এসব কি?”
কিছু বলে না মিশান। হাত ধরে এগিয়ে সেন্টার টেবিলে রাখা কেক টার সামনে দাঁড়ায়।
কেক টার উপর সুন্দর করে ওর নাম লেখা।
সায়রা হঠাৎ মনে পরে আজ তো ওর জন্ম দিন আর ও তো ভুলে বসে ছিল।
সায়রা বেশি কিছু ভাবে না এক লাফে মিশানের গলা জড়িয়ে ধরে ঝুলে পরে।
মিশান নিজে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বলে উঠে
-” Happy birthday. koliza”
অতঃপর গলায় মুখ গুঁজে শব্দ করে চুমু আঁকে বউয়ের কাঁধে।
সায়রা কেঁপে উঠে। তৎক্ষনাৎ ছেড়ে দেয় দু পা পিছিয়ে গিয়ে দাড়ায়।
মিশান অন্য সময় হলে হয়তো বিরক্ত হতো।তবে এখন বিরক্ত হলে না। অসহায় চোখে তাকায় বউয়ের দিকে।যে এখন মাথায় নুয়ে দাঁড়িয়ে।
বিয়ের দু মাসে গতে এক মাস ধরে রোজ নিয়মিত আদর, ভালোবাসা দিয়ে আসছে। তবুও একটু ছুঁয়ে দিলে এখন প্রথম রাতের মতোই কেঁপে কেঁপে উঠে। মিশান এতে বিরক্ত হয়।তবে কখনো তা প্রকাশ করে না।
মুখ চোখ শক্ত করে বলে
-“চল কেক কাট।”
সায়রা তড়িৎগতিতে মিশানের মুখের দিকে তাকালো। মিশান চুল খামচে ধরে অন্য দিকে তাকিয়ে।
তবে কিছু ভাবে মিশান। তার পর আবারও সায়রার হাত ধরে মুচকি হাসে। অতঃপর কেক টা কেটে নেয় সায়রা মিশান কে খাইয়ে দেয়।
মিশানও একটু নিয়ে বাকি টা সায়রা কে খাইয়ে দেয়।
মিশান কালো জিন্স আর একটা কলো জ্যাকেট পড়া।
জিন্স এর পকেট হতে হাতরে এক জোড়া গোল্ড এর নুপুর বের করে।
নিচে হাঁটু গেড়ে বসে সায়রার পায়ে যেই না হাত দিতে যাবে অমনি সায়রা দু পা পিছিয়ে গিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠে
-“কি করছেন আপনি?
আমি পড়ে নেবো। আপনি আমার কাছে দিন।”
-“থাপ্পড়ে তোর সব দাঁত ফেলে দেবো,ইডিয়েট।
পা দে।”
কথা শেষ মিশান নিজের ফোনে ক্যামেরা অন করে সেটায় টাইমার সেট করে সেন্টার টেবিল রেখে পা টেনে এনে নিজের উরুতে রাখে। আর সেই সুন্দর মূহুর্ত টা ক্যামেরা বন্দি হয়ে যায়।
মিশান নুপুর গুলো পড়িয়ে দিয়ে উঠে দাড়ায়।
অতঃপর ফোন টা আগের স্থানে রেখে সায়রার হাত ধরে নিয়ে রুমের এক কর্নারে দাঁড়ায় আবারও ফোনে সেটা ক্যামেরা বন্দী হয়ে যায়।
সায়রা শুধু মিশানের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
যার কারণে ফোনে পিকচার গুলো বেশ হয়েছে।
বেশ অনেকখন পর দরজায় কেউ নক করে।
মিশান গিয়ে দরজা খুলে তার পর হাতে কিছু খাবার নিয়ে ফিরে এসে খাবার গুলো রেখে দরজা টা আবার আটকে আসে।
-“চল খাবার খেতে আয়।”
-“কিন্তু আমরা তো বাসায় খেয়ে এসছি।”
-“তোকে জিজ্ঞেস করেছি?”
-“কিন্তু আমার,,,
-“চুপ চাপ খেতে আয় যদি থাপ্পড় খেতে না চাস।”
অগত্যা সায়রা কেও বাধ্য হয়ে মিশানের পাশে বসতে হলো। সব সময় শুধু ভয় দেখায়।
অবশ্য মনে মনে বেশ কিছু খারাপ কথাও বলে নিয়েছে সায়রা মিশান কে।
মিশান নিজেও খাচ্ছে সায়রাকেও খাইয়ে দিচ্ছে। খাবার শেষ মিশান বেসিনে হাত ধুয়ে। সায়রাকেও পানি দিয়ে নিজেও পানি খেয়ে নেয়।
সব রেখে সায়রা কে মিশান কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও আঁকড়ে ধরে বউ কে।
-“আদর করবো?”
-“অসুস্থ।”
মিশানের করা প্রশ্নে মিনমিন করে জানায় সায়রা।
মিশান নিজের ওষ্ঠ বউয়ের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয় আলগোছে।
-“আচ্ছা, ঘুমিয়ে পর।
কাল সকালে বাসায় চলে যাব।”
বলে জড়িয়ে ধরে সায়রা কে সায়রাও নিজেও জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।
মিশান কখনো সায়রা’র ইচ্ছার বিরুদ্ধে কখনো বেশি ঘনিষ্ঠ হয় না। শুধু চুমু খায়।
#চলবে….