#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৫
#জান্নাত_সুলতানা
-“তুই শাড়ী পড়তে পারবি না।
অন্য কিছু পড়ে রেডি হয়ে নে।”
মিশান রুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাতে পরিহিত ঘড়ি টা খুলতে খুলতে বলে
-“আপনি সাহায্য করলে পড়তে পারব,,,
আর বলা হয় না সায়রার মিশানের দিকে দৃষ্টি যেতে।মিশান শান্ত চোখ চেয়ে আছে।
বিকালে খাবার খাইয়ে দিয়ে মিশান সায়রা কে কোলে করে সায়রার বাবা-মায়ের রুম থেকে নিজেদের রুমে এনে গম্ভীর কন্ঠে আদেশ করে গিয়েছিল যেনো সায়রা বিছানা থেকে এক পা নড়াচড়া না করে।
আর যদি করে তার ফল ভালো হবে না। মিশান পুরো টা সময় চুপ ছিল শুধু এই একটা কথাই বলে ছিল যার কারণে সায়রা ভয়ে আর কোনো কথা বলে নি।
সায়রা কে কিছু বলতে না দেখে মিশান ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে ধুপধাপ পা ফেলে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে ছিল আর এখন সন্ধ্যায় এলো।
-“আ,,,
-“ফ্রেশ হবি?”
-“না।”
-“আমি ফ্রেশ হয়ে এসে শাড়ী টা পড়িয়ে দিচ্ছি?”
-“হুম।”
অতঃপর মিশান তোয়ালে নিয়ে ওয়াশ রুম চলে যায়।সায়রাও আলমারি খোলে হলুদের মাঝে লাল পারের একটা শাড়ী বের করে।
হলুদে সব মেয়ে রা এক রকম পড়বে।আর পুরুষ সাদা পাঞ্জাবি।
সায়রা শাড়ী সহ প্রয়োজনীয় সব বের করে পড়ে নেয়।
সায়রা নিজে নিজেই শাড়ী টা কোনো রকম পড়ে।
মিশানও ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে একটু ঠিকঠাক করে।তার পর মিশান নিজেও রেডি হয় আর সায়রা হালকা করে সেজে নেয়।
মিশান একবার আঁড়চোখে বউয়ের দিকে তাকিয়ে আবার সঙ্গে সঙ্গে চোখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয়। তার পর বউকে নিয়ে ছাঁদের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
সবাই অনেক আগেই চলে গিয়েছে। নিচে একদম ফাঁকা।
-“শোন একদম লাফালাফি করবি না।
আর উপর অনেক বাহিরের লোক আছে। তাদের থেকে দূরে থাকবি।”
-“আচ্ছা।”
এখন আচ্ছা বলছে পরে দেখা যাবে কি না কি করে বসে আছে তার ঠিক নেই।
এসব ভাবতে ভাবতে উপর এসে পরে
তার পর মিশান সায়রা কে রুহি আর ইনিয়ার কাছে বসিয়ে দিয়ে অন্য দিকে চলে গেলো।
সোহান আর আরভী কে একসাথই বসানো হয়েছে। সব মহিলার আগে হলুদ দেবে তার পর পুরুষ রা দেবো এর পর তারা চলে গেলে মেয়েরা আর ছেলেরা মিলে সবাই যে যার মতো করে মজা করবে। রুহি সায়রা কে সব বুঝিয়ে দিচ্ছে। কারান ওরা আজেকের যা প্ল্যান আছে সায়রা তার কিছুতেই ছিল না তাই সব জেনে নিচ্ছে।
সায়রা মনে যোগ সহকারে রুহির কথা শুনছে।মাঝে ইনিয়াও বলছে।
ওদের কথার মাঝেই ইনিয়াকে উদ্দেশ্য করে কেউ বলে উঠে
-“ভাবি আপনি এখানে ভাইয়া আর মা আপনাকে ডাকছে। ”
ছেলেটার কথায় প্রহর সহ সবাই তাকায়।
ইনিয়া মুচকি হেসে বলে
-“আমি যাচ্ছি।”
বলেই ইনিয়া চলে যায়।রুহি ভদ্রতার খাতিরে ছেল টা কে বসতে বলে আর অমনি ছেলে টা রুহি আর সায়রার মাঝে ইনিয়া যেটায় বসে ছিল ওটায় ধপ করে বসে পড়ে।
ইনিয়ার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ওর নাম ইকবাল ওর বাবা নেই মা আর ছোট এক ভাই আছে।
ওনারও আজ বিকেলে এসে।
-“বেয়াইন কে তো পাওয়া যায় না।
কোথায় থাকো সারা দিন? ”
-“সারা দিন কই ভাইয়া আপনি তো এলেন বিকেলে।”
রুহির এমন কথায় এনামুল নামক ছেলে টা কেমন থমথমে খেয়ে গেলো। সায়রা আর প্রহর মুখ টিপে হাসে। ছেলে টা কেমন অসহায় লাগলো।
তবে নিজে কে সামলে নিয়ে সায়রার দিকে আড়চোখ তাকায়। তার পর রুহির দিকে তাকিয়ে ইশারা কিছু জিজ্ঞেস করে
রুহি বুঝতে পারে লম্বা চওড়া একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে
-“এটা আমার মিশান ভাইয়ার বউ।
প্রহর ভাই এর বোন।
আর আমার মিষ্টি ভাবি।”
ব্যস ছেলেটার মুখ কেমন অন্ধকার হয়ে গেলো যেনো বিরিয়ানির মাঝে এলাচি কামড় পড়ার মতো অবস্থা।
রুহি সায়রা দিকে তাকিয়ে সায়রা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে
-“এটা আপুর দেবর এনামুল ভাইয়া।
তুমি তো বিকেলে নিচে ছিলে না তারা যখন এসছে। তাই পরিচয় হয় নি।
বাকি সবার সাথে হয়েছে।”
সায়রাও সৌজন্যে মূলক হাসি দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে।
তার পর ছেলে টা চলে যায়।
আর রুহি হো হা করে হেসে উঠে। প্রহর আর সায়রা ভ্রু কুঁচকে তাকায় রুহি এমন হাসির মানে ওরা ধরতে পারছে না।
-“এভাবে হাসছিস কেন তুই?”
-“তুমি দেখনি ছেলে টার কি অবস্থা হয়ে ছিল তুমি আমার ভাবি জেনে।”
বলেই আবার হেসে উঠে তবে সায়রার কথা রুহির লজ্জায় হাসি বন্ধ হয়ে গেলো
-“আমি তোর ভাবি না তুই আমার।”
কথা শেষ সায়রা উঠে মা, খালা,ফুপির কাছে চলে গেলো।
-“ছেলে টার সাথে বেশি কথা বলবা না।
বুঝতে পারছো?”
-“আপনি তো এখন এখানে ছিলেন।”
-“হুম তবুও।
মেয়ে মানুষ।”
কথা টা বলে প্রহরও চেয়ার ছেড়ে সোহান আর আরভীর দিকে এগিয়ে গেলো।
রুহি প্রহর এর কথা টা বুঝতে একটু সময় লাগলো
বুঝতে পেরে বসা ছেড়ে দৌড়ে এসে প্রহর কে নিজেও বলে উঠে
-“একেই বলে বেডা মানুষ।”
বলে মুখ ভেংচি কেটে প্রহর এর আগে গিয়ে রুহির পাশে বসে ছবি তুলতে লাগলো।
প্রহর ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। এই মেয়ে কোনো কথা মাটিতে পড়তে দেবে না সব কথার উত্তর মুখে নিয়ে বসে থাকে।
এসব ভেবেই প্রহর ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়ে।
————
রাত দশ টা বাজে এখন। সায়রা কে মিশান টেনেটুনে জোর করে ঘরে নি এসছে।
হলুদ দেওয়া শেষ এখন সবাই মজা করে আরও পরে ঘুমাবে।
সায়রাও বায়না ধরেছে সেও থাকবে সবার সাথে। কিন্তু মিশান কিছু না বলে কটমট করে তাকিয়ে ছিল একবার।
ব্যস আহ্লাদী সায়রা তার বড় মনি কে গিয়ে নিচ থেকে ডেকে এনে বলেছিল যাতে মিশানের কাছে সুপারিশ করে তবে মিশান মার কথা শুনে নি। উল্টো মা কে সহ ঠেলেঠুলে নিচে পাঠিয়ে বউ কে সবার সামনে থেকে কোলে করে রুমে এনে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে দরজা বন্ধ করে নিজে পাঞ্জাবি খোলে ওয়াশ রুম চলে যায় ফ্রেশ হতে।
সায়রা সেভাবে পড়ে থাকে।মিশান ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে খাবার আনতে চলে যায়।
সায়রা তখন উঠে গিয়ে শাড়ী পাল্টে রাতের পোষাক পড়ে ফেলে।
মিশান খাবার নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করে দেখলো বউ তার কোমরের নিচে পড়ে চুল গুলো আঁচড়ে বেনুনি করতে ভাগ করছে।
মিশান খাবারের থালা সেন্টার টেবিলে রেখে চুল গুলো নিজের হাতে নিয়ে নেয়।
সায়রাও বুঝতে পেরে ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। মিশান কাজ শেষ সায়রা কে খাটে বসিয়ে নিজে বেসিন হতে হাত ধুয়ে এসে দেখলো সায়রা কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে।যা দেখে সারা দিনের চেপে রাখা মিশানের রাগ সব বেরিয়ে এলো।
এক টানে শুয়া থেকে তুলে বসি খামচে ধরে সায়রা বাহু।
হিসহিসিয়ে বলে উঠে
-“মেরে ফেলতে চাস আমায়?
তুই কি বাচ্চা এমন অবুঝের মতো কেন আচরণ করিস?কই রুহি আরভীওরা তো এমন করে না।সব সময় কেন আমি তোকে সামলাতে হবে তুই নিজে পারিস না।ছোট বেলায়ও শান্তি দিস নি। বিদেশ থেকে আসার পড়েও দিচ্ছিস না।সেই প্রথম থেকে একের পর এক ভুল করেই যাচ্ছিস। আচ্ছা সে সব বাঁধ তুই নিজের খাবার টা তে অন্তত খেতে পারিস। কিন্তু তুই সব সময় আমাকে টেনশনে কিভাবে রাখা যায়। সে সব করতে প্রস্তুত থাকিস।
কেন রে আমাকে তের মানুষ মনে হয় না। আমি কেন সব সময় তোর পেছন পেছন ঘুরবো?”
সায়রা বাকরূদ্ধ ও কি সত্যি এবার একটু বেশি বেশি করে ফেলেছে?
ওর মনের কোথাও একটা থেকে উত্তর এলো হ্যাঁ করেছিস এতো সেই প্রথম থেকে করে এসছি। আর প্রতি বার ছেলে টা তোকে আগলে আগলে রাখছে।
আর আজ তোর ভালোর জন্যেই তো ছাঁদ থেকে নিয়ে এসছে তাহলে কেন তুই ছেলে টার উপর রাগ করে না খেয়ে শুয়ে পড়লি?
এখন যদি মিশান চলে যায় রুম থেকে। সায়রার এসব ভাবনার কালেই মিশাল ওকে বিছানা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়।তবে বেরিয়ে যাওয়ার আগেই সায়রা বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে মিশান কে ডেকে উঠে ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে যায়।
#চলবে….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]
#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৬
#জান্নাত_সুলতানা
-“মিশা,,,
পুরোটা শেষ করার আগেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে থাকা টোলে পা বেঁধে সায়রা নিচে পরে যায়।মিশান মাত্র দরজার ছিটকিনি খোলতে যাচ্ছিল তবে আর খোলা হয় না।দৌড়ে এসে সায়রা কে নিচ থেকে কোলে তোলে বিছানায় শুয়ে দিয়ে পাগলের মতো করে জিজ্ঞেস করতে থাকে কোথায় ব্যথা পেয়েছে পরে গেলো কি করে।
এসব জিজ্ঞেস করতে করতে মিশানের নজর গেলো সায়রার গলার কাছে হাড্ডি টার কাছে লাল হয়ে ফোলে উঠছে।
মূলত অতিরিক্ত চিকন হওয়ার কারণ গলার হাড্ডি গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
সায়রা চোখ বন্ধ রেখেই বলে উঠলো
-“আমি ঠিক আছি।
পেটে ক্ষুধা। ”
-“তুই বস।”
কথা টা বলেই মিশান গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে একটা মলম নিয়ে আসে তার পর সেটা খুব সাবধানের সহিতে সায়রার গলার কাছেটায় লাগিয়ে দিয়ে মলম টা আবার যথা স্থানে রেখে দিয়ে হাত ধুয়ে খাবার খাইয়ে দিতে থাকে সায়রা কে।
তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো প্রতি বার সায়রা কে খাইয়ে দেওয়ার সময় নিজেও খেয়ে নেয়।কিন্তু আজ শুধু সায়রা কে খাইয়ে দিচ্ছে।
-“আপনিও খেয়ে নিন না।”
মিনমিন করে বলে উঠে সায়রা। কিন্তু মিশান কিছু বলে না। তাই দেখে সায়রা এবার কান্না পায়।
অর্ধেক খাবার শেষ হয়েছে কেবল সায়রা তখন মিনমিন করে জানায়
-“আমি আর খাব না?”
মিশান বউয়ের দিকে একবার শান্ত চোখে তাকায়।তার পর কিছু না বলে খাবার থালাতে পাশে থাকা পানির গ্লাস হাতে পানি ঢালতে নিলেই সায়রা মিশানের হাত ধরে আটকে দেয়।
মিশান সে দিকে একবার তাকি সায়রার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
-“হাত সরা।”
-“না।”
কথা নাকচ করে সায়রা অতঃপর মিশানের হাতে থাকা খাবার থালা নিজে হাতে নিয়ে সে টা থেকে ভাত মেখে মিশানের মুখের সামনে ধরে বলে উঠে
-“খেয়ে নিন না, প্লিজ।
কণ্ঠে করুন। সাথে আবদার। এমব আবদার কি করে ফিরিয়ে দেওয়া যায় মিশান জানে না। ঘাঁটতে চায় না বেশি।
রাতও অনেক বেড়েছে বউয়ের রেস্ট দরকার। তাই কথা বাড়ায় না চুপ চাপ মুখ খুলে।
সায়রার ছোট ছোট হাতের সাহায্য খাবার পুরে দেয় মিশানের মুখে।
খাবার শেষ মিশান নিজে হাত ধুয়ে বউ কে হাত ধুয়ে দেয়।
বড় লাইট অফ করে ছোট লাইট অন করে গিয়ে বউয়ের থেকে অনেক টা দূরত্ব রেখে শুয়ে পড়ে।
সায়রার বুঝতে পারছে জামাই তার রাগ বেশি করেছে।সায়রা মিশানের দিকে ফিরে দু’হাতে সাহায্য শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
মিশান হাত সরিয়ে দেয়।কিন্তু সায়রা ফের রাখে।চার পাঁচ বার এমন করার পর মিশান এবার বিরক্ত হয়। হাত ধরে বউ কে নিয়ে নিজেও উঠে বসে দাঁত কটমট করে বলে উঠে
-“কি সমস্যা?
শান্তিতে ঘুমুতেও দিবি না?”
-“সরি।
আর কখনো এমন করবো না।
খাবার ঠিক মতো খাব।”
বাচ্চা বাচ্চা ফেস করে বলে উঠে সায়রা
বউয়ের এমন কথায় মিশানের রাগ তো পরে।
তবুও মুখে রাগি ভাব রেখে আবারও বলে উঠে
-“এটা তো রোজ বলিস।
কখনো মনে থাকে কি?”
-“এবার থেকে মনে থাকবে সত্যি।”
-“ঘুমিয়ে যা।”
কথা শেষ মিশান কম্বল টেনে শুয়ে পড়ে।
কিন্তু সায়রা কম্বল এর নিচ দিয়ে মিশানের শরীরের উপর নিজের অর্ধেক শরীর এলিয়ে দেয়।
মিশান কোনো নড়াচড়া না করেই চোখ বন্ধ রেখে বলে উঠে
-“আবার কি চাই?”
-“আদর।’
-“ডক্টর না করেছে।
শরীর দূর্বল।”
-“আমি পারবো।”
আর কিছু বলে না মিশান।
ঝট করে বউ কে নিজের উপর থেকে নিচে ফেলে দিলো।
নিজের এক হাত বউয়ের গালে ঠেকিয়ে আদুরে কণ্ঠে বলে উঠে
-“সরি সুইটহার্ট।
আমি তখন ওভাবে বলতে চাই নি।
কিন্তু কি করবো বল?
তুই কেন বুঝিস না। তোর জন্য আমাদের সবার কতটা চিন্তা হয়।”
-“আ’ম সরি।
আর এমন করবো না। ”
-“হুম। ”
কথা শেষ মিশান সায়রা কে আরও একটু টেনে নিজের কাছে এনে গলায় মুখ গুঁজে চুমু আঁকে সেখানে।
সায়রা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মিশান কে।
——————
আরভী দাঁড়িয়ে আছে নিজের বেলকনিতে।সামনে দাঁড়িয়ে সোহান।
-“আপনি এতো রাতে পাইপ দিয়ে কেন আসতে গেলেন সোহান ভাই?
আমাকে বললে হতো দরজা খোলে দিতাম।”
ফিসফিস করে বলে আরভী।কারণ রুমে রুহি, ইনিয়া ঘুমিয়ে আছে।
আরভীর এমন বোকা বোকা কথায় সোহান কি বলবে বুঝতে পারছে না।
এই মেয়ে কি সত্যি বোকা কিছু বোঝে না?
বিয়ের আগের দিন রাতে বর যদি বউয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য দরজা দিয়ে আসে তা হলে বাড়ি মানুষ আত্মীয় স্বজনরা কি চোখে দেখবে।
-“তোকে এতো কিছু ভাবতে বলেছি?
চুপ চাপ চাদর টা সরা।
আর হাত বের কর।”
সোহানের এমন কথায় আরভী চোখ বড় বড় করে বলে উঠে
-“আপনি পাগল কত ঠান্ডা বাহিরে দেখছেন।
আর আপনি কিছু পড়েন নি কেন?”
সোহান শুধু একটা কফি কালার সার্ট পড়ে আছে।
সোহান আরভীর কথায় কান দেয় না।
নিজে আরভীর হাত টেনে আনে চাদর এর নিচ থেকে।
নিজে পরিহিত ট্রাউজার এর পকেট হতে একটা মেহেদী বের করে আরভীর লাল টকটকে মেহেদী রাঙা হাতের মাঝ খানে গোল বৃত্ত টায় সুন্দর করে নিজের আর আরভীর নামের প্রথম অক্ষর লিখে দেয়।
-“এটা কেন ফাঁকা রেখেছিস?”
-“রুহি বলেছিল লিখে দিতে।
আমি না করেছি।”
সোহান ভ্রু কুঁচকে তাকায় আরভী দিকে কৌতুহল নিয়ে আবারও প্রশ্ন করে
-“কেন?”
-“আমি জানতাম আপনি আসবেন। ”
মুচকি হেসে বলে আরভী।
সোহান খুশি হয়। তার পিচ্চি বড় হয়ে গিয়েছে।
জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে তবে নিজেই কোনো একদিন বলেছিল বিয়ের আগে আর কখনো কিছু চাইবে না।
কথার খেলাফ হয় এমন করতে চায় না সোহান।
-“ঘুমি পড়।
কাল তো আবার সারা দিন অনেক ধকল যাবে।”
কথা টা বলেই সোহান ফিরে যাবার জন্য পা বারাতে আরভী পেছন থেকে ঝাপটে ধরে সোহান কে।
সোহান স্তব্ধ। এটা কি সত্যি নাকি কল্পনা?
নিজেই নিজের হাতে চুম টি কাটতে গিয়ে ভুল বসত আরভীর হাতে পরে যায়।
ব্যথাতুর শব্দ করে আরভী ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায় আরভী।
অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে উঠে
-“এটা কি জড়িয়ে ধরার প্রতিদান?”
সোহান তড়িঘড়ি করে হাত টেনে ধরে আরভীর।
অস্তির হয়ে বলতে থাকে
-“ইস, আমি বুঝতে পারি নি ওটা তোর হাত ছিল।
সরি।”
-“হুম।
একটা? ”
-“হুম। ”
সোহান দেড়ি করে না আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় আরভীর হাতের লাল হয়ে যাওয়া জায়গায়।
—————-
মিশান সকালে ঘুম থেকে উঠে বউ কে পাশে পায় না।
ভ্রু কুঁচকে আসে।
এতো সকালে তো তার বউ ঘুম থেকে উঠে না।
নামাজ শেষ আবারও ঘুমিয়ে পড়ে।আর উঠে নাস্তা করার মিনিট খানেক আগে।
আর আজ সাত টা বাজে বিছানায় নেই।
ব্যাপার টা বড় অদ্ভুত।
এসব ভেবেই মিশান বিছানা ছেড়ে উঠতে নিলেই কেউ খট করে দরজা খোলে রুমে আসে।
মিশান তো চোখ বড় বড় করে সে দিকে তাকিয়ে থাকে।
কিন্তু সামনের নারীর সে দিকে পাত্তা না দিয়ে খাবার থালা সেন্টার টেবিলে রেখে সোফা থেকে তোয়ালে এনে মিশানের হাতে দিয়ে কোমরে শাড়ীর আঁচল গুঁজে বিছানা গুছাতে গুছাতে বলে উঠে
-“এখনো বসে আছেন যে?
ওয়াশ রুমে গরম পানি রাখা আছে। ঠান্ডা হয়ে যাবে।
ফ্রেশ হয়ে আসুন। ”
-“তুই?”
-“আপনার বউ।”
-“কিন্তু তুই তো আটটা বাজে ঘুম থেকে উঠিস?”
-“এখন থেকে সকালে উঠবো।”
মিশান আর কিছু বলার আগেই সায়রা ওকে ঠেলেঠুলে ওয়াশ রুম পাঠিয়ে দেয়।
#চলবে….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]