#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১৯
#জান্নাত_সুলতানা
[ পর্ব টা কিছু রোমান্টিক পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন]
-“ওই ছেলে যেনো আজকে দিনের ভিতর কুমিল্লা থেকে বিদায় হয়।”
উদোম লোমযুক্ত বুক হাত বুলাতে বুলাতে আদেশের সুরে বলে উঠলো সাদনান।
-“ভাই আপনি চিন্তা করবেন না আমি সব সামলে নেবো। ”
সাদনান কথা টা বলতেই রাহান ভদ্র ভাবে জানায়।
-“হুম।”
নিজের কথা সমাপ্ত করে।
রাহান কে কিছু বলতে না দিয়ে ফোন কেটে দেয় সাদনান।
ফোন পাশের সোফায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আলমারি দিকে এগিয়ে গিয়ে সেটা খোলে একটা
টি-শার্ট পরে নিলো।
তার পর নিচে চলে এলো।
সবাই খাবার টেবিলে বসে সাদনানের জন্য অপেক্ষা করছে ।
সাদনান বোন আর মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
অতঃপর একটা চেয়ার টেনে বাবার বরাবর বসে পড়লো।
-“কাল রাতে কথা হয়েছে শফিকের সঙ্গে। ”
খাবার শেষ আজ্জম মির্জা টিসু বক্স হতে টিসু নিয়ে সেটায় হাত মুছতে মুছতে জানায়।
-“কি বলেছেন ওনি? রাজি হয়েছে কি?”
আজ্জম মির্জা কথা শেষ করতেই বেশ উত্তেজিত
হয়ে প্রশ্ন গুলো করে বসল সালেহা বেগম।
তবে স্বামী তার আজ বড্ড গম্ভীর। প্রশ্ন গুলো করলেও এখন আজ্জম মির্জার দিকে তাকিয়ে একটা ঢোক গিলে নিলেন।
আজ্জম সকালে বেড়ি ছিল কোনো রাজনৈতিক দরকারে। যখন বাড়ি এসছে তখন থেকে একদম চুপ চাপ।
স্ত্রী সাথেও কোনো বাক্য বিনিময় করেনি।
তাই সালেহা বেগম ভেবেছে হয়তো রাজনৈতিক কোনো ঝামেলা হয়েছে।
কিন্তু এখন স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে বেশ আগ্রহী
হয়ে প্রশ্ন করে এখন ভয়ে আছে।
কিন্তু সালেহা বেগম কে অবাক করে দিয়ে আজ্জম মির্জা উত্তর করলো
-“হুম রাজি হয়েছে। তবে একটা সমস্যা হলো আমায় কালকের পর দিন চট্টগ্রাম যেতে হবে। রাজনৈতিক কিছু সমস্যা সমাধান করতে। তাই ভাবছি যদি এ মা,,,,
ব্যাস আর কিছু আজ্জম মির্জা মুখ দিয়ে বের করতে পারলো না।
তার আগেই সাদনান বলে উঠলো
-“তাহলে আমরা কালকে গিয়ে আমি আমার বউ নিয়ে আসি।”
সালেহা বেগম সারা খুশি হলো সাদনানের কথায়।
আজ্জম ছেলের দিকে পলকহীন চোখ চেয়ে। তিনি ভাবছে এই নির্লজ্জ ছেলে সত্যি ওনার ছেলে তো?
সাদনান সে সব উপেক্ষা করে আবারও বলে উঠলো
-“আমাদের তো তেমন কেউ নেই। আর ফুফিরা তো দেশের বাহিরে তারা তো আসবে না। আর তোমার দলের যারা আছে তাদের বলে দেও। শেষ তা হলেই তো হলো।”
সালেহা ছেলের কথায় সাই দিয়ে কিছু বলবে তার আগে আজ্জম মির্জা হাত দিয়ে ইশারা করে বলল
-“তোমাকে আর ছেলের হয়ে কিছু বলতে হবে না। আমি শফিক কে জানিয়ে দেবো আমরা কাল যাচ্ছি। ”
সারা খুশি হয়ে ভাইয়ের এক বাহু জড়িয়ে ধরে। সালেহা বেগম মুচকি হেসে ছেলের নিকট এসে মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে আলতো করে ভালোবাসার একটা পরশ দিলো।
আর এ সব কিছু সোফায় বসে চেয়ে চেয়ে দেখলেন আজ্জম।এছাড়া আর কিছু করার নেই ওনার।
——————————
-“আপনার কাছে কি অফিস থেকে ফোন এসছে আব্বা?”
সাদনান সোফায় বসে। বিয়ে শেষ হয়েছে মিনিট দশেক হবে হয়তো। বিয়ে আর কি শুধু ফর্মালিটি বলাও চলে। বিয়ে ইসলামের রীতি অনুযায়ী তো আগেই হয়েছে এখন আবার হয়েছে।
সাদনান বসে ফোনে কিছু করছিলো। তখুনি এসে আজ্জম মির্জা প্রশ্ন টা করে।
-“হ্যাঁ বাবা। আমি আজই চলে যাবো তুমি টেনশন করো না। ”
বাবাকে আশ্বস্ত করে সাদনান।
ছেলের কথায় আজ্জম চিন্তিত কন্ঠে ব’লে
-“কিন্তু প্রিয়তা?”
-“আমি আমার বউ সঙ্গে নিয়ে যাবো।”
আজ্জম মির্জা প্রশ্নে সাদনান সোজা সাপটা জবাব।
আজ্জম মির্জা ছেলের কথা আগে পিছে চাইলেন। না কেউ আশে পাশে নেই। যাক কেউ নেই থাকলে কি হতো? আজ্জম আর বেশি কিছু ভাবতে চাইলেন না। তবে লম্বা একটা শস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।
বাড়িতে তেমন লোক জন নেই যা আছে কিছু প্রতিবেশ লোক।
আর বেশি মানুষ জন নেই প্রিয়তার মামাও এবার কোনো কাজের চাপের জন্য আসতে পারবে না বলে জানিয়েছেন।
মাইশা আয়ানও আসেনি। আজমল চৌধুরীর অসুস্থ তাই ওনাকে ফেলে মাইশা আসতে রাজি হয়নি।
সাদনান উঠতে নিবে কিন্তু তার আগে শফিক সওদাগর উপস্থিত হলেন।
-“আমি বলি কি ওকে না হয় সাদনান বাবা কাল ঢাকা থেকে আসার পর নিয়ে,,,,
-“না তার দরকার নেই। প্রিয়তা কে আজই সাদনানের সঙ্গে ঢাকা নিয়ে যাবে। ”
শফিক সওদাগর কে সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে না দিয়ে আজ্জম মির্জা কথা টা বলে উঠলো।
-“কিন্তু ওরা দুজন থাকবে ক,,,,
-“শফিক তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছি আমার ঢাকা একটা দুতলা বাড়ি সাথে একটা ফ্লাটও বরাদ্দ আছে আমার ছেলের নামে।”
-” না আমি সে রকম কিছু বলতে চাইনি। আসলেও ও একা থাকতে পারবে কি না তাই বলছিলাম। ”
আজ্জম এর কথায় আমতা আমতা করে বলে শফিক।
-“আপনি এ নিয়ে চিন্তা করবেন না চাচা। আমি সামলে নেবো।”
সাদনান আশ্বাস দেয়।
-“আমি জানি বাবা।তবুও,,,,,,
শফিক আরো কিছু বলতে চাইলেন।কিন্তু আজ্জম তাড়া দিলেন।
-“আচ্ছা এসব ভেবে কাজ নেই।তুই বরং সুফিয়া কে বল জলদি সব নিয়ম কানন শেষ করতে। রাত হয়ে যাচ্ছে। ”
আজ্জম মির্জার কথায় যুক্তি আছে। শফিক চট করে বোন কে ডাকলো।
তার পর প্রিয়তা কে নিয়ে আসার জন্য তাড়া দেয়।
ততক্ষণে রাহান ওর বাবা – মা, কে নিয়ে বাগান থেকে বাড়ির ভিতরে এলো।
বেচারা কাজ করে বেহাল অবস্থা।
বাগানে খাবার জায়গা করেছেন সেখানেই ছিল। সাথে আরো ছেলে পেলে আছে কিন্তু বাড়িতে ঢোকার অনুমতি নেই কারোর।
সাথে মফিজুল ইসলামেরও তদারকি দায়িত্বে আছেন।
এখন মোটামুটি বাড়িতে মানুষ জন ভালোই ভিড় জমিয়েছে।
প্রিয়তাকে সারা আরও কিছু মেয়ে সঙ্গে করে নিচে নিয়ে এসছে।
তার পর সবাইর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে প্রিয়তাকে নিয়ে বাহিরে এলো।
কিন্তু প্রিয়তা তখনো বাবাকে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে।
ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
অনেক কষ্টে শফিক মেয়ে কে ছাড়িয়ে কপালে এক টা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে আদুরে কন্ঠে বলে
-“আমার মা কাঁদে না। বাবার কষ্ট হয়।”
বাবার কথায় যেনো কিছু টা দমন হলো। এবার শুধু হেঁচকি উঠেছে। হয়তো চেপে রাখা চেষ্টা চালাচ্ছে।
-“কালকের পর দিন তো আপনি আবার বাবার কাছে চলে আসবেন। ”
ততক্ষণে গাড়ির কাছে এসে তিনি দরজা টা খোলে প্রিয়তাকে সিটে বসতে ইশারা করলো।
সাদনান আগে থেকেই গাড়ির ডাইভিং সিটে বসে আছে।
মূলত ও সবাইর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আগে গিয়ে গাড়িতে বসে পরেছে।
শফিক প্রিয়তা কে সিটি বসিয়ে সাদনানের পানে চাইলো। সাদনান আবার ভরসার দৃষ্টিতে আশ্বস্ত করলো।
শফিক দরজা টা লাগিয়ে দিলেন। প্রিয়তা তখনো জানালা দিয়ে বাবার হাত আঁকড়ে ধরে।
সাদনান এবার সবাই কে বলে গাড়ি স্টাট দিলো।
মূহুর্তের মধ্যে গাড়ি টা রাস্তার ধুলো উড়িয়ে ছুটতে লাগলো গন্তব্যের দিকে।
প্রিয়তা ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। সাদনান মেয়ে টার বাহুতে হাত রেখে এক টানে নিজের কোলে উপর নিয়ে এলো । এক হাতে ডাইভ করতে করতে আরেক হাত ধারা চোখের জল মুছে দিলো।
-“কাঁদে সোনা।”
আস্তে করে বলে সাদনান।
মেয়ে টা এখন আর কাঁদছে না। কি সুন্দর প্রিয় পুরুষ টার বুকে মাথা ঠেকিয়ে হাট বিট শুনছে। সাদনানের হাট অনেক দূত উঠা নামা করছে।
করবারই কথা এমন একটা মেয়ে শরীরের সঙ্গে লেপ্টে আছে। তার উপর মেয়ে টার ওর ভালোবাসার মানুষ সেই সঙ্গে বউ। হাট তো জোরে জোরে বিট করবেই।
যদিও এর আগেও তিন কি চারবার এভাবে কোলে নিয়ে গাড়ি চালিয়েছে। কিন্তু তখন মেয়ে টাকে এতোটা গভীর ভাবে ধরে নি।
কিন্তু আজ তো এ মেয়ে নিজ থেকে এক্কেবারে লেপটে গিয়েছে।
সাদনান জোরে জোরে কয়েক বার শাস টানলো।
নিজে কে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে।
কিন্তু এই মেয়ে কি সে টা আদৌও সম্ভব হতে দিবে?
সাদনান হঠাৎ গাড়ি ব্রেক কষলো। জায়গায় টা সামান্য নির্জন। শুধু বড় বড় কিছু গাড়ি একটু পর পর সাই সাই করে আওয়াজ তোলে আবারও চলে যাচ্ছে।
সাদনান তার বউকে বুক হতে দু হাত ধারা আলগা করে।
প্রিয়তা পিটপিট করে চাইলো সাদনানের পানে।
চোখের কাজল লেপ্টে একাকার অবস্থা। এলোমেলো চুলে। ফোলা ফোলা চোখ। লেহেঙ্গার উপরি ভাগ এর ঠিক ঠিকানা কোনো টাই নেই। যার জন্য দেহে থাকা গো’পন ব’স্তুর দৃশ্য মান।
তবে সামনে বসা পুরুষ টা সে সব উপেক্ষা করে রমনীটার অধর জোড়া কে বেশি প্রাধান্য দিলো।
সারা মুখে পাগলের মতো চুমু খেতে লাগলো। অতঃপর অধর জোড়া স্পর্শ করলো। মেয়ে টা সাই দিলো।
আরও প্রখর হলো স্পর্শ। আরো গাঢ় হলো চুম্বন।
এবার স্পর্শ অনুভব করলো স্পর্শ’কাতর জায়গাতেও।
মেয়েটা ছটফট করতে লাগলো।
সাদনান ছেড়ে দিলো বউ কে। আলগোছে এক হাত ধারা গাল স্পর্শ করে।
মেয়ে টা তখনো অসহায় চোখে চেয়ে
তবে স্বামী কে বাঁধা দিতে যেনো সাহস কুলিয়ে উঠতে ব্যর্থ।
কিন্তু সহ্য করতে পারলো না সাদনানের হাতের উপর হাত রাখে মিনমিন করে জানায়
-“ব্যথা পাই।”
-“আর একটু সহ্য করো সোনা। বাসায় গিয়ে আদর দেবো।”
#চলবে……
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]