হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি পর্ব-০৪

0
700

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব _৪
#জান্নাত_সুলতানা

-” শুধু আয়না নই আমরা সবাই আছি মামনি। ”

কোনো পুরুষালী কন্ঠ শুনে সোজা হয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো আয়ান, রাহাত, আর মাইশার ফুফা আজমল চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে। আর কথাটা আয়ানের বাবা আজমল চৌধুরী বলছেন। মাইশা সবাইকে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে ভিতর আসতে বলল।এর মধ্যে শফিক সওদাগর, সুফিয়া বেগম দুজনেই ড্রয়িংরুমে এসে হাজির হয়েছে। সবাইকে দেখে বেশ অবাক হলেন সুফিয়া বেগম। তবে শফিক দেখে মনে হচ্ছে না সে অবাক হয়েছে। এমন ভাবে কথা বলছে মনে হয় আগে থেকে জানতো। এই জন্যই কি আজ হোটেল যায়নি? ভাই কি জানতো ওনারা আসবেন? কই আমাকে তো কিছু বলল না। এত এত প্রশ্ন সাইডে রেখে সবাইর সাথে কুশল বিনিময় করে সবাইকে ফ্রেশ হতে বলে তিনি কিচেনে গেলেন নাস্তার ব্যবস্থা করতে। মাইশা ইনিয়াকে কোলে নিয়ে সোফায় বসে আছে। আর সবাই উপরে ফ্রেশ হতে চলে গেছে।সুফিয়া বেগম কিচেনে থেকে সব দেখছেন। শফিক ইনিয়ার সাথে বেশ ভাব হয়েছে। কিছুখন পর মাইশা ইনিয়াকে নিয়ে চলে গেলো। আয়না ডাকছে। মাইশা যেতেই সুফিয়া বেগম ভাইয়ের কাছে এলো।
-” ভাইজান আপনি জানতেন ওনারা সবাই আসবে?

শফিক বেশ শান্ত কন্ঠে বলল
-“জানবো না কেন, আমি নিজেইতো ওনাদের আসতে বলেছি। ওনারা অবশ্য এখন আসতে চায়নি। কাল দেশে ফিরেছেন আজমল আর ওর মেয়ে জামাই। ওনারা পরে আসতে বলেছিল আমি জোর করাতে এসছে।”

-“আমাকে তো জানালেন না। আর হঠাৎ করে কেন ওনাদের আসতে বল্লেন?

-“একটু পর সব বুঝতে পারবি। আর হ্যা,তুই যেটা চেয়েছিলি সেটা কোনো দিন সম্ভব না। অন্তত তুই নিজে যে কষ্ট টা পেয়েছিস সেটা নিজের মেয়েকে বা আমার মেয়েকও পেতে দিস না। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। তাই একটু পর যা হবে সব মেনে নিলেই তোর মেয়ের সুখ। ”
কথা শেষ করে শফিক এক দন্ড দাঁড়াল না হনহনিয়ে নিজ কক্ষের দিকে পা বাড়াল।

—————————

সতেরো কি আঠারো বছর বয়সের তরুণ ছেলেটার কপাল ঘেমে চিকচিক করছে আর ছেলেটা একটু পর পর হাত দিয়ে তা মুছে ফেলার র্ব্যাথ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আটাশ বছরের পুরুষটা চোখে হাসলো। তাকে দেখেই ছেলেটা ভয়ে হাঁটু কাপছে এই ছেলে না-কি তার প্রিয়তমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে? আবার প্রেম করবে না বলাতে হাতও ধরেছে বাজে কথাও বলেছে। যে মেয়েটাকে এখন পযন্ত নিজেও একটা ধমক দিয়ে কথা বলে নাই। আর এই ছেলে না-কি বাজে কথা বলেছে আবার হাত। ভাবা যায় এতো কিছু?উঁহু, একদম নয়। মানবটার দৃষ্টি শান্ত। হঠাৎ গম্ভীর কন্ঠে ব’লে উঠলো
-“কিসে পড়ো তুমি? বাবার নাম কি?আমাকে চেনো?”

ছেলেটা হঠাৎ মানবটার হাঁটু জড়িয়ে ধরে। কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে কিছু বলতে চাইলো কি? হয়তো। কিন্তু মুখ দিয়ে কিছু বের করতে পারছে না। তবে হার মানেনি। অনেক কষ্টে যেনো মুখ দিয়ে কিছু বলবার আগে পুরুষটি ওকে টেনে উঠালো।চোয়াল শক্ত করে ফের বলে উঠলো
-“যা বলেছি তার উত্তর? ”

তরুণ ছেলে টা ভয়ে মাথা নুইয়ে নিল। বেশ অনেকটা সময় নিয়ে শান্ত হয়ে। আস্তে করে বলল উঠে
-প্লিজ সাদনান ভাই বাবার কাছে কিছু বলবেন না। আমি কালেই এই কলেজ ছেড়ে চলে যাবো আর কখনো ভাবিকে জ্বালাব না। প্লিজ ভাই প্লিজ বাবাকে কিছু বলবেন না। ”

বলেই ছেলেটা কেঁদে উঠলো। সাদনান রাহানকে কিছু ইশারা করলো। রাহান কোথাও চলে গেলো। এটা দেখে ছেলেটা পাগলের মতো বলতে লাগলো
-“প্লিজ ভাই প্লিজ আমায় মা’রবেন না।”আমি,,

আর কিছু বলার আগেই রাহান প্রিয়তা আর সারাকে নিয়ে আসে।

-“বলেছিলাম না কোনো ছেলের সাথে কথা বলবি না?”
চোয়াল শক্ত করে সারাকে উদ্দেশ্য প্রশ্ন করে।সারা ভাইয়ের এই রুপ দেখে মিনমিন করে বলল
-“আমরা কথা বলতে চাইতাম না ও রোজ নিজ থেকে এসে প্রিয়তার সঙ্গে কথা বলতে চাইতো। ”

সারা কথায় প্রিয়তা বেশ ভালো করে বুঝতে পারছে। আজ ওর খবর করে ছাড়বে সাদনান।সাদনান কয়েকজন ছেলেকে কে বলল ছেলেটাকে নিয়ে যেতে আর কলেজ থেকে টিসির ব্যবস্থা করতে। ওরা ছেলেটাকে নিয়ে বিনাবাক্য মূহুর্তের মধ্যে চলে গেলো। সাদনানও ওদের নিয়ে গাড়ির কাছে যেতে নিলে ওর একটা ফোন আসাতে সাদনান সারাকে বল
-“যা গাড়িতে গিয়ে বস। আমি আসছি।”

ওরা দুজন চলে এলো। সারা প্রিয়তাকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে বলল
-“ওই দিন কি যেনো বলছিলি? আমার ভাই, তুই ছোটো বলে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। তো আজ কি বলবি রে জান? ”
বলে হাসতে লাগলো। আর প্রিয়তা নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন করে বসলো সত্যি কি ওনি আমায় ভালোবাসে?

সারা হাসতে হাসতে গাড়ির পিছনের সিটে বসে পড়লো। প্রিয়তা বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল সাদনান এসে প্রিয়তার কাছে দিয়ে সামনের দরজা টা খুলে দিল। আর নিজেও ঘুরে গিয়ে ডাইভিং সিটে বসে গেলো। প্রিয়তাকে উঠতে না দেখে সাদনান দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-“আজ এখানেই থাকার ইচ্ছে আছে না-কি? ”

বাক্য গুলো কর্নপাত হতে প্রিয়তা চট করে গাড়িতে উঠে পড়লো। এটাদেখে সারা ফিক করে হেসে দিল। সাদনান পিছনে ফিরতেই সারা মুখে তর্জনি আঙ্গুল ঠেকিয়ে চোপ হয়ে গেলো। সাদনান ও গাড়ি স্টাট দিল। একটু সামনে গিয়ে সাদনান গাড়ি দাঁড় করালো। সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বল
-“প্রিয়তা সিট বেল্টা বাঁধোন ।”

প্রিয়তা হঠাৎ গাড়ি থামাতে সাদনানের দিকে চাইলো। তবে তার কান পযন্ত সাদনানের কথা যায়নি সেতো তার পাশে বসা সুদর্শন পুরুষটিকে দেখতে ব্যাস্ত। সাদনান বুঝলো তার প্রেয়সী তার দিকে চেয়ে। আর কোনো কথাও যে তার কান পযন্ত যায়নি সেটাও বুঝলো। সাদনান একবার আঁড়চোখে পিছনে বোনের পানে চাইলো যে এখন গেমস খেলতে ব্যাস্ত। একটু আগেই সাদনানের কাছ থেকে ফোনটা নিয়েছে সারা। সাদনান চট করে ঝুঁকে এসে প্রিয়তার সিট বেল্ট পড়াতে পড়াতে বল
-“আমাকে দেখার জন্য সারাজীবন পাবেন। কিন্তু সিট বেল্ট না বাঁধলে যেকোনো সময় ক্ষতি হতে পাড়ে। আর আপনার কিছু হলে, আপনদর থেকেও আমার হৃদয়ে রক্ত ক্ষরন বেশি হয়।”

এতো সব এতো জলদির সাথে হয়েছে যে প্রিয়তা বুঝতে একটু বেগ পেতে হলো। কি বল্লেন ওনি আমার কষ্টে ওনার হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়?

-“ভাইয়া আমরা সবাই প্রিয়তাদের বাড়ির দিকে কেন যাচ্ছি? তুমি আমাকে আমাদের রাস্তার মোড়ে কেন নামিয়ে দিলে না? ”
হঠাৎ সারা প্রশ্ন করাতে প্রিয়তা বাহিরে তাকালো সত্যি এতো ওনি কি তবে বাবার কাছে কলেজের সব বলে দিবে?প্রিয়তার ভাবনা ছেঁদ হলো সাদনানের কথায়
-“মা আর বাবা ওখানেই আছে। তাই আমাদেরকে ওখানে যেতে বলেছে। ”

সারা ছোট করে বল
-“ওহ। কিন্তু,,

সারকে পুরো কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে প্রিয়তা প্রশ্ন করলো
-“কেন বাড়িতে কিছু হয়েছে? বাবা, বাবা ঠিক আছে তো?কি হলো বলুন?

সাদনান হঠাৎ গাড়ি ব্রেক করলো তার পর প্রিয়তার দিকে তাকি বলল
-“আমরা এসে গেছে। আপনি নিজে গিয়ে দেখে নিন।”
প্রিয়তা পুরো কথা সম্পূর্ণ না শুনেই সিট বেল্ট খুলে দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। পিছন পিছন সারা, সাদনান ভিতরে গিয়ে দেখলো প্রিয়তা তার বাবকে জড়িয়ে ধরে আছে। আর সোফায় আজ্জম মির্জা আর একটা ওর বাবার বয়সি লোক ওনার পাশে বসে। আর তাদের ঠিক সামনের সোফায় ওর থেকে দুই এক বছরের ছোটো হবে একটা ছেলে বসে আছে।
ওদের দেখে সুফিয়া বেগম বলল
-“তোমরা ওখানে দাঁড়িয়ে কেন? ভিতরে এসো। এই প্রিয়তা তুই এসেই বাবার কাছে বসে গেলি। যা সারাকে আর সাদনানকে ফ্রেশ করে নিয়ে খেতে আয়।

প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলেই আবার কিচেনে চলে গেলো। প্রিয়তা উঠে সারাকে নিয়ে চলে গেলো। সাদনান গিয়ে তার বাবার পাশটায় বসলো। তার বাবাকে কিছু জিজ্ঞেস করবার জন্য মুখ খুলবে কিন্তু শফিক তা হতে দিলো না। তিনি আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“আয়ান ও তোমার আজ্জম আংকেল এর ছেলে সাদনান।”

তার পর সাদনানের দিকে তাকিয়ে বলল
-“ও আয়ান আমি ফোনে ওর কথাই বলেছিলাম। ”

সাদনান মাথা নাড়ালো। আয়ান সাদনানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বল
-“আমি আয়ান চৌধুরী। মাইশার কাজিন। ”

সাদনান হাতটা মিলিয়ে বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলল
-“মির্জা সাদনান শাহরিয়া।”

বলেই হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বল
-“ওকে আপনারা কথা বলোন। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ”

বলেই ওর মাকে ডাকলো
-“মা? ”

সালেহা বেগম কিচেন থেকে কাপরে হাত মুছতে মুছতে এসে সাদনানের কাছে দাঁড়িয়ে বল
-“হ্যা আব্বা। মা আপনার দরকারী সব জিনিস নিয়ে এসছি আপনি আমার সাথে আসুন।”

বলেই তিনি হাঁটা ধরলো সাদনানও বাধ্য ছেলের মতো মার পিছন পিছন যেতো লাগলো।

——————————

দুপুরে খাবার শেষ করতে করতে সাড়ে তিনটে বেজে গেলে তাই আর কেউ বিশ্রাম নিতে যায়নি সবাই ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছে । সারা,প্রিয়তা, মাইশা এক সাথে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ান, আয়না আর রাহাত এক সাথে বসে। ইনিয়া ঘুমিয়ে আছে। সাদনান তার বাবার পাশটায় চুপ করে বসে আছে। সাদনানের এখানে থাকতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। কিন্তু আজ সব হিসাব না মিলালে যে আবার তার প্রিয়তমাকে কার সাথে কখন বিয়ে দিতে উঠে পরে লাগেন সুফিয়া বেগমকে দিয়ে বিশ্বাস নেই।তাই বাধ্য হয়ে বসে আছে। আয়ান বেশ উশখুশ করছে। তার বাবা কিছু বলছে না কেন? ওনি এখানে নিজের শশুর বাড়ি এসে বেচারা নিজের ছেলের শশুর বাড়ি বানানোর কথা ভুলে বসছে।আয়ান কাঁদো কাঁদো মুখ করে বোনের পানে চাইলো। আয়না হয়তো ভাইয়ের চোখের ভাষা বুঝলো। তাইতো বাবার দিকে তাকালো। আর নিজের পাশে বসা স্বামীকেও খুঁচা দিল। রাহাত বউয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে যেনো বল আমি দেখছি।
এর মধ্যে সালেহা বেগম, সুফিয়া বেগম কাজের লোকদের হাতে চা, হালকা কিছু নাস্তা নিয়ে হাজির হলেন।তারাও গিয়ে প্রিয়তাদের পাশে দাঁড়াল। রাহাত চায়ে চুমুক দিয়ে শশুরকে উদ্দেশ্য করে বল
-“বাবা আমাদের তো আবার ফিরতে হবে। আমার কাল একটা মিটিং আছে।”

মিটিং তো নয় রাহাত যে ইঙ্গিত দিলো বেশ বুঝলো আজমল। তিনিও মাইশার মার পানে চাইলো। তার পর আয়নার দিকে তাকলো।আয়না চট করে উঠে এসে প্রিয়তাদের সবাইকে নিয়ে উপরে চলে গেলো। কেউ কিছু বলল না। কোনো বাক্য প্রয়োগ না করে সবাই আয়নার সাথে চলে গেলো।

আজমল মাইশার মার পানে ফের চাইলো তারপর আলগোছে বলে উঠে
-“ভাবি ভাই তো দেশে নেই। দেশে যেহেতু নেই আর মাইশাকে যখন শফিক ভাইজান ছোট্ট বেলা থেকে আদর যত্ন করে বড় করেছেন। তাই আমি মাইশাকে ওনার কাছে আমার ছেলের বউ নয়। আয়নার মতো করে মেয়ে চাইছি। ”

#চলবে…….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে