#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_৩
#জান্নাত_সুলতানা
-“সারা যাতো মা প্রিয়তা টাকে ডেকে নিয়ে আয়।দুপুর খাবার খেলো শুধু, বিকেলে কত করে বললাম তবুও নাস্তাটা খেলো না। কি হয়েছে কি জানি। ”
সারা চমকে উঠলো ভাইয়ের দিকে দৃষ্টি দিলো। সাদনান সোফায় বসে ফোন নিয়ে ব্যাস্ত। সারা ভাইয়ের পানে তাকি ভাবে ভাইয়া কিছু বলেনিত আমি যখন ঘুমি ছিলাম তখন? এই জন্যই কি প্রিয়তার চোখ মুখ ফোলা ছিল? হয়তো। সারার ভাবনার মাঝে সালেহা বেগম আবার বলে উঠলো
-“সারা তুই এখনো বসে আছিস। মেয়েটাকে ডেকে নিয়ে আয়। সেই দুপুরে খেয়েছে আর এখন রাত দশটার বেশি বাজে। জলদি ডেকে নিয়ে আয় মা।”
এর মধ্যে আজ্জম মির্জা নিজের কক্ষ হতে বেরিয়ে এলেন। তিনিও এসব শুনে সারাকে তাগাদা দিলেন প্রিয়তাকে ডাকার জন্য। সারা আর বিলম্ব না করে চট করে উপরে চলে গেলো। সার প্রিয়তাকে নিয়ে
এলেই সবাই খাবার খেতে বসে যায়। শুধু প্রিয়তা খাবার নাড়াচাড়া করছে এটা দেখে সালেহা বেগম বলল
-“কি হয়েছে তোর? খাবার না খেয়ে নাড়াচাড়া ক্যান করছিস?”
প্রিয়তা চমকালো, মাথা তুলে দেখলো সবার দৃষ্টি ওর দিকে শুধু সাদনান বাদে। প্রিয়তা মুখে মেকি হাসি টেনে আমতা আমতা করে বলল
-“খাচ্ছি তো। ”
-‘হুম। ”
খাবার খেয়ে সবাই গড়ে চলে গেলো। সারা রুমে ডুকেই দরজা বন্ধ করে দিয়ে খাটে গিয়ে প্রিয়তার পাশে বসে বলল
-“কি হয়েছে তোর ভাইয়া কি কিছু বলেছে? ”
প্রিয়তা সারার দিকে ফিরে আচমকায় সারাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। যেনো এতখন কান্না গুলো আটকে ছিল এখন কারোর ছোঁয়ায় সব কান্না বেড়িয়ে আসতে চাইছে। সারার প্রিয়তার পিঠে হাত রাখলো। আস্তে করে বলল
-“কি হয়েছে বলবি না আমায়?”
-“বিশ্বাস কর সারু আমি নিজ ইচ্ছে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। বাবা আর ফুফি মিলে জোড় করেছে। তুই তো জানিস ফুফি কেমন। প্লিজ ওনাকে বল না।”
-“আচ্ছা আচ্ছা বলবো তুই কান্না থামা প্লিজ। ”
সারা উঠে গিয়ে পাশের সেন্টার টেবিল থেকে পানি এনে প্রিয়তাকে খাইয়ে দিল। প্রিয়তা কিছুটা শান্ত হলো। সারা মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। প্রিয়তার মন ভালো করার জন্য সারা চট করে উঠে দরজা টা খোলে বেড়ি যেতে যেতে বলল
-“তুই বস আমি আসছি। ”
সারা বেশ অনেক টা সময় পর রুমে এলো হাতে দুটো শাড়ী নিয়ে। এটা দেখে প্রিয়তা খুশি হলো। কিন্তু বিকেলে সাদনানের বলা কথা গুলো মনে হতে মুখ মলিন করে বলল
-“এই রাতের বেলা তুই শাড়ী কেন এনেছিস?”
সারা প্রিয়তার কাছে এসে প্রিয়তাকে খাট থেকে তুলে শাড়ী সাথে সব যাবতীয় জিনিস দিয়ে ঠেলে ওয়াশরুমে পাঠাতে পাঠাতে বলল
-“এক টা তুই পরবি আর একটা আমি তার পর ছাঁদে গিয়ে লাইট দিয়ে ছবি তোলবো অনেক সুন্দর হবে যা জলদি করে সব পড়ে আয়। আমি শাড়ী পড়িয়ে দিবো। ”
প্রিয়তাকে আর কিছু বলল না। ওয়াশরুম থেকে সব পড়ে বেরিয়ে দেখল সারা শাড়ী পড়া শেষ। প্রিয়তা বেরোতেই সারা প্রিয়তাকে সুন্দর করে শাড়ী টা পড়িয়ে দিলো। তার পর হালকা করে সেজে দুজনে ছাদে চলে গেলো। তার পর দুজনে মিলে কিছু ছবি তোলবার পর সারা হঠাৎ করে বলল
-” তুই দুমিনিট দাঁড়া আমি নিচ থেকে একটা গল্পের বই নিয়ে আসি। ”
-“আচ্ছা। ”
সারা চলে যাওয়ার পর প্রিয়তা একটু সাইডের দিকে গিয়ে দাঁড়াল। বেশ অনেখন পরও যখন সারা আসছে না তখন প্রিয়তা পিছনে ফিরে দেখলো ওর পিছনে সাদনান দাঁড়িয়ে আছে। কিছুটা ভয় পেয়ে এক পা পিছিয়ে যেতে নিলেই সাদনান প্রিয়তার হাত ধরে এক ঝটকায় সাদনানের সামনে এনে দাঁড় করালো। প্রিয়তা সাদনানের চোখের দিকে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিলো। কিছু তো আছে ওই চোখে কেমন নেশার মতো বেশিখন তাকিয়ে থাকা যায় না। প্রিয়তার ভাবনার মাঝে কোমরে শীতল হাতের র্স্পশে চমকে তাকালো সাদনানের দিকে সাদনানের কোনো হেলদোল নেই সে এক দৃষ্টিতে তাকি প্রিয়তার পানে। প্রিয়তার শরীরে যেনো হীম হয়ে এলে নড়াচড়া মতো শক্তিও পাচ্ছে না। সাদনান প্রিয়তার এতো কাছাকাছি এই প্রথম এসছে। হয়তো নিজের ভালোবাসার মানুষটার এই রুপ টাকে উপেক্ষা করতে পারছে না। তাইতো না চাইতো এতোটা কাছে চলে এসছে। প্রিয়তা ছোটার জন্য ছটফট করছে। কিন্তু সাদনান সেতো তার প্রেয়সীর রুপে এতোটাই মগ্ন যে তার কোনো দিকে খেয়াল নেই।সাদনান কে মুখটা এগিয়ে আনতে দেখে প্রিয়তা সাদনানকে শরীরে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ধাক্কা দিলো। এতে যেনো সাদনানের হুুস এলো। সে পিছন ফিরে মাথার চুল খামচে ধরলো । আর ভিতু প্রিয়তা সেতু ভয়ে মাথা তোলেও তাকাচ্ছে না। সাদনান ভাই কি করতে যাচ্ছিল।আল্লাহ এই মানবটার সামনে কি করে যাবে এখন থেকে। ইস কি লজ্জা। আচ্ছা সাদনান ভাইকি রেগে গেলো তাকে এভাবে বাঁধা দেওয়াতে? এইজন্যই বোঝি তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না? প্রিয়তার এতো এতো প্রশ্নর ভাবনার ভিতর সাদনান বেশ শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো
-“আজ যেটা করেছেন বিয়ের পর ভুলেও এমনটা করবেন না। সম্পূর্ণ আমার না হওয়া পযন্ত যেনো আর শাড়ীও পড়তে না দেখি।কথা গুলো আপনার মন এবং মস্তিস্কে গেথে নিন মিস প্রিয়তা সওদাগর। ”
————————————-
একজন প্রেমিকা তার ভালোবাসার মানুষটার সাঙ্গে ফোনে মনের কথা আদান-প্রদান করতে ব্যাস্ত। ঠিক তখনই রুমের দরজাটা খট করে খুলে কেউ রুমে এলো। ফোন হাতে দাঁড়িয়ে থাকা রমনীটা ভয়ে স্তব্দ হয়ে গলো। থমথমে কন্ঠে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই সামনে থাকা ব্যাক্তিটা তিরতির করে বলে উঠলো
-“তোর এতোখন লাগলো একটা বই নিয়ে যেতে?”
-“আসলে প্রিয়তা হয়েছে ক,,,,
-“তোর আর কিছু বলতে হবে না।আমি ঘুমবো। ”
বলে প্রিয়তা ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। সারা বই নিতে এসে যখনি গড় থেকে চলে যেতে পা বাড়াল ঠিক তখনই ওর হাতের ফোনটা বেজে উঠলো। স্কিন এ “আর” লেখাটা বেসে উঠতে হাত থেকে বইটা সেন্টার টেবিল রেখে বেশ খুশি মনে কলটা রিসিব করে ব্যাক্তিটার সঙ্গে আলাপ করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।আর ঔদিকে যে কাউকে অপেক্ষা প্রহরে রেখে এসছে সে কথা বেমালুম ভুলে বসে আছে। হঠাৎ এ চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসাতে ভাবনার সুতু কাঠলো সারার। বোঝতে বাকি রইলো না প্রিয়তা লাইট অফ করে দিয়েছে। তড়িঘড়ি করে গিয়ে খাটে উঠে প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরে নেকা সুরে বলল
-“জান তুই এমনটা করতে পারলি? তুইতো জানিস আমার অন্ধকার ভয় করে।”
-“এই ছাড় ছাড়, তুই তোর রাহানকে গিয়ে জড়িয়ে ধর।আমাকে ধরবি না। যখন আমাকে একা একা ছাঁদে রেখে গড়ে এসে তোর রাহান এর সাথে কথা বলেছিস আমার কথা তখন মনে পড়েনি।”
বলতে বলতে উঠে বসে নিজেকে সারার বাহুডোর থেকে মুক্ত করে নিলো।সারাও ছেড়ে দিয়ে বেশ ভাব নিলো। যদিও তা অন্ধকারে প্রিয়তার চোখে ফুটলো না। তবে গলা বেশ গম্ভীর করে বলে উঠলো
-“একা নাকি কেউ ছিল? ”
প্রিয়তা চমকালো, হকচকিয়ে উঠলো। থমথমে গলা বলল
-“মানে?”
-“তুই জানিস না আমাদের বাড়িতে তো আবার ইয়া লম্বা হিরোর মতো একটা ভূত আছে। সেটার সাথে ছিলি আর কি।তবে কিছু করে না শুধু একটু আধটু ধমকায় এই যা। এর বেশি কিছু না।”
প্রিয়তা ভূতের কথা শুনে ভয় পেলোও। তবে পরে বোঝতে পেড়ে হু,হা করে হেসে দিল। সাথে সারাও।সারা মনে মনে ভাবছে যাকগে মনটাতো ভালো করতে পেড়েছে বোনের মতো বান্ধবির। এভাবে কথা বলতে বলতে এক পর্যায় দু’জনেই ঘুমের দেশ এ পাড়ি দিলো।কাল কি হবে জানতে পাড়লে হয়তো কেউ একজন না ঘুমিয়ে রাত পাড় করে দিতো।
—————-
-“আমার কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নে। যদি তোর মামা এমপির ছেলের ব্যপারে কিছু জিজ্ঞেস করে। তা হলে তুই হে বলে দিবি। বুঝেছিস?”
মাইশা বেশ অবাক হলো তার মা এসব কি বলছে।কিছু না বোঝাতে মাইশা ফের তার মাকে প্রশ্ন করলো
-“কি বলছো মা আমি ঠিক বুঝিনি। ”
-“এতে না বোঝার কি আছে?তোর মামার সাথে কথা বল্লেই বোঝে যাবি। শুধু কিছু জিজ্ঞেস করলে হে বলে দিবি বাকিটা আমি সামলে নিবো। ”
কথাটা বলে সুফিয়া বেগম মাইশার গড়তেগ করলেন।আর মাইশা ভাবতে লাগলো তার মা কিসের কথা বলছে?কোনো ভাবে মামাকে সাদনান ভাইয়ের ব্যাপারে ভুল বোঝাতে চাইছে না তো? এমন হলে যে মামার সাথে এখনি আমার কথা বলতে হবে।
——————————–
-“মা ভাইয়া কোথায়?”
নাস্তার টেবিলে সাদনানকে দেখতে না পেয়ে প্রশ্ন করলো সারা। সাদনানের মা মুখটা মলিন করে উওর করলো
-“সেই ভোরবেলায় ঢাকার উদ্দেশ্য বেড়িয়েছে। মিটিং আছে নাকি বলল। ”
প্রিয়তার মুখটা মলিন হয়ে এলো।
-“আচ্ছা তোরা খেয়ে নে ক্লাসের লেট হয়ে যাবে নয়তো।”
বলেই তিনি কিচেনে চলে গেলো। সারা আর প্রিয়তা অল্প খেয়ে। সালেহা বেগমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কলেজের উদ্দেশে বেড়িয়ে পরলো।
———————–
-“কাল কি হয়েছিল ছাঁদে?”
হাঁটতে হাঁটতে আচমকাই প্রশ্ন করলো প্রিয়তা সারার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো।
-“তোর কি মনে হয় আমি তোর ভাইকে চলে যেতে বলেছি?
-“আমি এমনটা বলতে চাইনি। ভাইয়া তো এতো সকালে কোথাও যায় না। তাই ভাবছি তোর সাথে রাগ করে চলে যায়নি তো?”
প্রিয়তা বেশ চমকালো সত্যি এ তো সেতো এটা একবারও ভেবে দেখেনি।তবে কি কাল ওনাকে ধাক্কা দেওয়াতে ওনি আমার উপর রেগে আজ ভোরে ঢাকা চলে গিয়েছে? প্রিয়তা এসব ভাবনা বাদ দিয়ে সারাকে বলল
-“আমি কিছু বলেনি।আচ্ছা এসব বাদ দে এখন ক্লাস এ চল।
——————–
মাইশার আজ ক্লাস নেই তাই ভার্সিটিতে যায়নি।সোফায় বসে চিপস খেতে খেতে টিভি দেখছে তখনি বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। মাইশা ভাবছে তার মাতো ঘুমিয়ে আছে আর মামা আজ হোটেল যায়নি।আর প্রিয়তার তো এখন বাসায় ফিরার কথা না। তবে কে এলো এমন সময়? মাইশার ভাবনার মাঝেই মাইশার মা বেশ বিরক্ত নিয়ে রুম থেকে মাইশাকে ডেকে দেখতে বলল কে এসছে।
মাইশা সব ভাবনা বাদ দিয়ে দরজা টা খুলেই অবাক হলো সাথে খুশিও। তবে নিজেকে সামলে সামনের মানবীটাকে জড়িয়ে ধরে বলল
-“আপু তুমি? ”
———————
সাদনান মিটিং শেষ কুমিল্লা নিজ বাড়ি ফিরছে। সে ঢাকায় থাকলেও তার মনটা যে ছোট্ট প্রিয়তার কাছে রয়েছে। কাল একটু বেশি বেশি হয়ে গেছে কি? হয়তো তাই। দিন দিন যেনো আরো দিশাহারা অবস্থা হয়ে যাচ্ছে কোনো কাজে মন বসে না। মেয়েটাকে শীগগির নিজের করে নিতে হবে।আর দূরে রাখা যাবে না। ফোনের রিংটোন এর শব্দে সাদনানের ভাবনাছেদ হলো। সাদনান ফোনটা পাশের সিট থেকে হাতে নিয়ে দেখলো রাহান কল দিয়েছে। সাদনান ভ্রুুজোড়া কুচকে নিলো। রাহান কেন কল দিয়েছে আবার কিছু হলো কি? ভাবতে ভাবতে কলটা রিসিভ করলো। কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই ওপাশ থেকে কিছু শোনে চোয়াল শক্ত করে বলল
-“ঠিক আছে। ”
তার পর কলটা কেটে দাঁতে দাত পিষে বলে উঠলো
-“কেন বার বার আমাকে কঠোর হতে বাধ্য করেন প্রিয়তা?
#চলবে……
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]