#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_২
#জান্নাত _সুলতানা
-“যা বলেছিলাম তা করেছিস রাহান ।
-“জী ভাই, মাইশা প্রায় এক সাপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম আছে ফুফির বাসায়। ওর মা এই সুযোগই কাজে লাগিয়ে ভাবিকে বিয়ে দিতে চাইছিল। আর …
বলে থেমে গেলো রাহান
সাদনান রাহানের পানে দৃষ্টি দিলো
-“থেমে গেলি ক্যান, বল আর কি ?
রাহান আমতা আমতা করে বলল
-“আসলে ভাই ওই মহিলা মাইশার সাথে আপনার বিয়ে দিতে চায়। তাই ….
-“তাই প্রিয়তা কে বিয়ে দিয়ে পথের কাটা ছাফ করতে চেয়েছে।
রাহানকে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে বলে উঠলো সাদনান
-“হে ভাই ওনি হয়তো কোনো ভাবে টের পেয়েছেন আপনি ভাবিকে ভালোবাসেন। তাই শফিক চাচাকে ফুসলিয়ে ভাবিকে বিয়ে দিতে রাজি করিয়েছেন। আচ্ছা ভাই আমি এটা বোঝতে পারছি না শফিক চাচাতো আপনাকে কথা…
রাহানের কথা সম্পূর্ণ করতে দিলো না সাদনান
-“তোরা সবাই বাবার কাছে পার্টি অফিস যা। আমি ঘন্টা খানেক বাদে পৌঁছে যাব।
সাদনান কথা সমাপ্ত করেই বাইক স্টাট দিয়ে বাজারের পথে চলে গেলো।
রাহান সবাইকে নিয়ে পার্টি অফিস চলে গেলো।
—————————–
-“উফ, আমার যে কি খুশি লাগছে সারু। আমি পড়া লেখা করবো। ”
সারাকে জড়িয়ে ধরে বলল প্রিয়তা
সারাও খুশি হলো কিন্তু প্রিয়তাকে ক্ষেপানোর জন্য বলল
-“পড়া লেখার জন্য নাকী অন্য কেউর জন্য খুশি সেটা আমি ভালো করেই জানি, হুু।”
-“কি বলতে চাইছিস তুই?”
ভ্রুু কুঁচকে প্রশ্ন করলো প্রিয়তা
-“আমার ভাইকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে না। ”
-“হুু, তোর ভাই বুঝলেতো।”
-“না বুঝলে কি আর বিয়ে ভেঙ্গে দিতো। ”
-“সেতো আমি ছোটো বলে। ”
সারা মুখ ভেংচি কেটে বলল
-“হুু, সময় এ বলে দিবে। ”
-“হুম। ”
সারা কিছু মনে করবার মতো হঠাৎ এ বলে উঠলো
-“শুন মা তোকে আমার সাথে যেতে বলেছে। তোকে নাকি অনেক দিন হয় দেখে না। ”
-“আচ্ছা কলেজ থেকে ফিরার সময় বাবাকে বলে দেখি। ”
কথা বলতে বলতে দুজনেই ক্লাস এ চলে এলো।
শফিক সওদাগরের আর আজ্জম মির্জা শৈশব থেকেই দুজনে এক সঙ্গে বেশ ভাব। তাই দুই পরিবারের মঝে বেশ ভালো একটা সম্পর্ক।
—————————–
-” আসসালামু আলাইকুম চাচা। ”
হঠাৎ কারোর কন্ঠ শুনে পিছনে ফিরেই বেশ অবাক হলেন। তবে নিজেকে সামলে সালামের উত্তর করলেন
-” ওয়ালাইকুম আসসালাম, বসো বাবা। তোমার বাড়ির সবাই কেমন আছে? ”
-“জী চাচা ভালো। ”
-“তা হঠাৎ কিছু কি হয়েছে? ”
-“জী, চাচা অনেক কিছুই হয়ে যতো যদি না আমি কিছু করতাম। কেনো করলেন এমন? ”
শফিক মাথা নিচু করে নিলেন। কিভাবে তিনি একজকে কথা দিয়ে তার খেলাফ করতে পারেন।
বেশ অপরাধী গলায় বল্লেন
-“দেখো বাবা তোমার সাথে আমার মেয়ের যায় না। তুমি কোথায় আর আমার সম্পর্কে তো তোমরা জানো। ”
সাদনান কিছু টা অবাক করা কন্ঠে বলল
-“আপনি এসব কি বলছেন? আপনি আমার বাবার সাথে সেই ছোটবেলা থেকে এক সঙ্গে থেকেছেন তার পরও কি করে এসব বলতে পারছেন? তাছাড়া আমি যখন দেড়বছর আগে আপনাকে বলেছিলাম তখন আপনি বলেছিলেন প্রিয়তা ছোট একটু বড় হয়ে নিক আপনি নিজে তাকে আমার সাথে বিয়ে দিবেন। আর এখন অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে চাইছেন।”
-“প্রিয়তার ফুফি চাইছে মাইশার বিয়েটা তোমার সাথে দিতে। মাইশা নাকি তোমাকে পছন্দ করে। ”
-“চাচা অপনি নিজে একবার মাইশাকে জিজ্ঞেস করবেন। আর হে, আমি চাইলে আপনার মেয়েকে দেড়বছর আগেই বিয়ে করতে পারতাম । কিন্তু কিছু করেনি কারণ আমি চাইতাম আপনার মেয়ে আমায় ভালোবেসে গ্রহন করুক। আর কাল আমি আপনার মেয়ের চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি।
আমার আর কিচ্ছু চাই না। আমি দুই একদিনের মাঝে আবার ঢাকা বেক করবো। ফিরে এসে বাবাকে আপনার কাছে আসতে বলবো।”
শফিককে কিছু বলতে না দিয়ে সাদনান বসা ছেরে উঠে চলে এলো। বাহিরে এসেই দেখলো সারা আর প্রিয়তা দুজনেই হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে।
-“তোরা এখানে? ”
সারাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নটা করলো সাদনান
হঠাৎ সাদনানকে দেখে দুজনেই কিছু টা চমকে উঠলো। সাথে ভয়ও পেলো সারার হাত চেপে ধরলো প্রিয়তা। কাল রাগের মাথায় অনেক কিছু বলে ফেলেছে। কি হয়েছিল হঠাৎ কি করে এতো সাহস কোথা থেকে এসছিল কে জানে। প্রিয়তার ভাবনার মাঝে সারা বলে উঠলো
-“আসলে হয়েছে কি ভাই মা প্রিয়তাকে নিয়ে যেতে বলেছে। তাই চাচার কাছে বলতে এসছি।
আমতা আমতা করে বলেই দিলো।সাদনান একবার আঁড়চোখে প্রিয়তার পানে তাকায় যে এখন বাম হাত দিয়ে নেভি রং এর কলেজ ড্রেসটা খামচে ধরে। নিচের দিকে তাকিয়ে। মেয়েটা ওকে দেখলেই ভয় পায়। কাল হঠাৎ,, থাক এসব কথা সাদনান এসব ভাবনা সাইডে রেখে সারার দিকে শান্ত দৃষ্টি দিয়ে বলল
-“তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যাবি।”
বলেই বাইকে উঠে ধুলো উড়িয়ে চলে গেলো।
ওরা দুজনেও হোটেলের ভিতর এলো
শফিক সাদনানের বলা কথা গুলো ভাবছে ওনি জানেন সাদনান একবার যখন বলেই দিয়েছে তখন সাদনানের কথার নড়চড় হবে না। তিনি নিজেও চায় না নড়চড় হোক। এসব ভাবনার মাঝে কানে ভেসে এলো তার একমাত্র রাজকন্যার কন্ঠ
-“বাবা?”
শফিক মেয়ের পানে তাকায়। তারপর নিজে উঠে মেয়েকে নিজের এক বাহুতে পুরে নিলো আর সারার হাত ধরে দু’জন কে নিয়ে বসে বলল
-“কলেজ কেমন কাটলো?
প্রিয়তা চট করে বলল
-“ভালো বাবা।”
শফিক সারার দিকে তাকায়
-“তা কি মনে করে দুই মা আজ এক সঙ্গে? ”
শফিক মিয়া জানেন দুজনেই নিশ্চয়ই কোনো মতলব নিয়ে তবে এসছে তাই সোজাসাপটা প্রশ্ন করলো
সারার আমতা আমতা করে বলল
-“চাচা আসলে মা বলছিল প্রিয়তাকে আজ আমার সাথে নিয়ে যেতে। ”
বলে মাথা নিচু করে নিলো। শফিক মেয়ের পানে দৃষ্টি দেয় যে আপাতত বাবার দিকে অনুমতির আসায় তাকিয়ে। শফিক মেয়ের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল
-“আমার মা যদি চায় তবেই । ”
সারা খুশি হলো সাথে প্রিয়তাও কিন্তু বাবা সামনে বলে তা প্রকাশ কলো না। শফিক মিয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে হাটা ধরলো দুজনে।
——————-
একজন প্রেমিক তার প্রিয়তমাকে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরে রয়েছে যেনো ছেড়ে দিলে পালিয়ে যাবে? হে যাবেইতো আজ তো তাদের শেষ দেখা। আর বুকে লেপ্টে থাকা রমনীটা সে তো একটু পর পর ফুফিয়ে উঠছে হয়তো কান্না করছে প্রিয় মানুষটার থেকে দূরে যেতে হবে বলে। বেশ অনেক টা সময় পর পুরুষটা তার বুকে লেপ্টে থাকা রমনীটা গালে আলতো করে ধরে মুখটা উঁচু করে অধর জোড়া ছোঁয়ে দিল রমনীটার কপালে।প্রিয় পুরুষটার ছোঁয়া যেনো কান্না গুলো আরো বেশি করে বাহিরে বেড়িয়ে আসতে চাইলো কি? হয়তো তাই। তবে রমনিটা নিজেকে সামলে নিয়ে মানবটাকে প্রশ্ন করলো
-“কবে যাবেন মা আর মামার কাছে আয়ান ভাই?
-“যাবো খুব শীগগির জান। বাবা আর রাহাত ভাই দেশে আসবে এ মাসের মধ্যে। আর কটা দিন কষ্ট কর জান।”
আয়ান উত্তর দিয়ে আবারও জড়িয়ে নিলো তার প্রিয়তমাকে।
-“মাইশা তোর হলো?
রুমের বাইরে থেকে মিষ্টি কন্ঠে কেউ প্রশ্ন করলো
মাইশা ছিটকে দূরে সরে এলো। চোখের পানিটুকু মুছে পিছনে ফিরে দেখলো বাহিরে থাকা মানুষটা গড়ে প্রবেশ করেছে।
-“হে আয়না আপু শেষ। চলো। ”
আয়না ভাইয়ের পানে দৃষ্টি দিলো একাবার তার পর মাইশার দিকে তাকিয়ে বলল
-“মন খারাপ করে না সোনা। তোর ফুফা আর তোর রাহাত ভাই দেশে ফিরলে তোদের বাসায় যাবো আমরা। এখন চল তোর ডাইনি মা সেই সকাল থেকে ফোন করে করে আমায় জ্বালিয়ে মারছে তোকে কখন পাটাবো। এখনো পাটাইনি জানলে আমার আর রক্ষে নেই। ”
আয়নার কথায় ফিক করে হেসে দিল মাইশা। এটা দেখে আয়না বলল
-“এই তো আমার লক্ষি বোন। আর কান্না কাটি নয়। আয়ান যা যা গাড়ি বেড় কর। আমরা আসছি। ”
আয়ান একবার মাইশার দিকে তাকিয়ে গড় ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।আয়ান চলে যেতে মাইশা আয়নাকে জড়িয়ে ধরলো।
-“ইনিয়া কই আপু? ওকে তো দেখছি না।
-“ও ঘুমিয়ে আছে। ভালোই হয়েছে। নয়তো তুই যেতে পারতিস না। আবার তোর সাথে যাওয়ার জন্য বায়না ধরতো।”
মাইশা মুচকি হেসে বলল
-“হুম, ঠিক বলছো। আচ্ছা চলো।”
-“হুম। ”
বলেই আয়না মাইশাকে নিয়ে নিচে এলো।
-“সাবধানে যাস বোন। রাস্তা কেউ কিছু দিলে ভুলেও নিবি না সোনা।”
আয়নার কথায় আয়ান বেশ বিরক্ত হলো। তবে মাইশা বেশ মনোযোগ সহকারে কথা গুলো শুনছে। কারণ এটা ওর কাছে নতুন নয়। মাইশা চট্টগ্রাম এলেই আয়না প্রতি বার এসব বলে তাই মাইশার আর এখন বিরক্ত হয় না।
-“আপু তোমার হয়েছে? ও বাচ্চা নয় অনার্স এ পড়ে।তাই তুমি এসব বন্ধ করো। ”
তার পর মাইশার দিকে তাকিয়ে বলল
-“এই তুই আসবি নাকি আমি তোর ব্যাগ নিয়েই স্টেশনে গিয়ে রেখে আসবো?
আয়না আয়ানের দিকে কটমট করে তাকালো যেটার মানে আমি তোকে পরে দেখে নিবো। আর আয়ানের কথা শুনে চট করে গাড়ি দরজা খুলে আয়ানের পাশে বসে পড়লো। তার পর জানলা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“আসি আপু।ইনিয়াকে দেখে রেখে। ”
মাইশার কথা শেষ আয়ান গাড়ি স্টাট দিয়ে চলে গেলো আয়নাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না।
————————————–
-“আপনার বিয়ে করার খুব শখ তাই না প্রিয়তা?”
প্রিয়তা বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলো সারা ঘুমিয়ে আছে তাই প্রিয়তা একা। হঠাৎ এমন কথায় বেশ অবাক হলো সাথে ভয়। কারন এমন শান্ত ভাবে সাদনান তখনই কথা বলে যখন সাদনান রেগে থাকে। প্রিয়তার পিছনে ফিরতেও ভয় লাগছে। তবুও অনেক কষ্টে পিছনে ফিরতে দেখতে পেলো সাদনানের রাগী চেহেরা। এতে যেনো আরো এক দফা ভয় পেলো। প্রিয়তা কিছু বলার জন্য মুখ খোলবে কিন্তু সাদনান সেটা হতে দিল না তার আগেই তিরতির করে বলে উঠলো
-“আমি আপনার বিয়ে করার সখ মিটিয়ে দেবে আর কটা দিন অপেক্ষা করুন।এতো দিন আমি একা আগুনে পুড়েছি এখন থেকে আপনিও পুরবেন।”
#চলবে………
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]