#হৃদয়ে শুধু আপনি❤️
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১২
বাসর ঘরে বসে আছে আরশি।অপেক্ষা করছে মুগ্ধের।ঠোঁটে লাজুক হাসি বজায় রেখে বারবার তাকাচ্ছে দরজার দিকে।মনে মনে ভাবছে তখনকার কথা।আরশির বাবা জুনায়েদ তখন মেয়ের আর নিজের সম্মানের কথা ভেবে মুগ্ধের সাথেই বিয়ে দিতে রাজি হন।ফলস্বরূপ আরশি এখন এখানে বসে আছে।তবে ভাববার বিষয় হলো যে শেষ সময়ে এসে কেন জিসান বিয়েতে না করবে?নিশ্চয়ই এর পিছনে মুগ্ধের হাত রয়েছে। নয়ত একদম ঠিক সময় এন্ট্রি নিলো কিভাবে? আরশির ভাবনার মাঝেই ঘরে প্রবেশ করলো মুগ্ধ।হাতে খাবারের প্লেট।আরশি মুগ্ধের চেহারায় তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে।মুগ্ধের চঞ্চল দৃষ্টিতে চোখ রাখা অসম্ভব।মুগ্ধ এসে আরশির পাশে বসে পড়লো।আরশির ঘোমটা তুলে খাবারের প্লেট টা দিয়ে বললো,
-“নিন খাইয়ে দিন।”
আরশি অবাক হয়ে তাকায় মুগ্ধের দিকে।সে বাসর রাতে বউয়ের ঘোমটা তুলে কিনা ভাত খাওয়াতে বলছে?আরশি হালকা কেশে বললো,
-“মানে?”
-“ধূর!আপনার ওই হিটলার, ভিলেন বাপটাকে ফাঁদে ফেলতে যে দুদিন নাওয়াখাওয়া ভুলে গেছিলাম।সে খেয়াল কি আছে আপনার?”
আরশি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে মুগ্ধের হাতে চিমটি কেটে বললো,
-“আমার বাপ হিটলার হলে বিয়ে দিতো? ”
-“সে তো ফাঁদে পড়ে দিয়েছে।”
বলেই মুগ্ধ হাই তুলে।আরশি তখনো চুপচাপ বসে। মুগ্ধ আবার বলে,
-“হাতটা ভীষণ ব্যাথা।খাইয়ে দিবেন আরশি?আপনাকে তো মা খাইয়ে দাইয়ে দিয়েছে।আমি যে না খেয়ে বসে আছি।আপনার হাতে খাবো বলে।”
আরশি দীর্ঘশ্বাস ফেললো। প্লেটটা নিয়ে ভাত মেখে মুগ্ধের মুখে ধরতেই মুগ্ধ সেটা লুফে নিলো।আরশি আকস্মিক কেঁপে উঠলো। ভ্রু কুঁচকে হুমকি দিলো,
-“আমার হাতে যদি কামড় লাগে তো আপনার খবর আছে।”
মুগ্ধ হেসে উঠে।আরশি সযত্নে মুগ্ধ কে খাওয়াতে লাগে।মুগ্ধ কে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিতেই মুগ্ধ গলা বাড়িয়ে নেয়।আরশি মুগ্ধকে পানি খাওয়াতে খাওয়াতে বলে,
-“এটাও খাওয়াতে হবে?হাতে এত ব্যাথা?”
মুগ্ধ তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে আরশির কোলে মাথা এলিয়ে দিয়ে বললো,
-“আজ থেকে আপনাকে সবটাই করে দিতে হবে।আমিটাকে আমি আপনাকে দিয়ে দিলাম।এবার আপনি আপনার মত যত্ন করে রাখুন। আমি বড্ড অলস তো!নিজেকেই সামলাতে পারি না।”
আরশির হাত চলে গেলো মুগ্ধের চুলগুলোতে।মুগ্ধের ঘন সিল্কি চুলগুলোতে হাত দিতেই নিমেষেই সেগুলো বেরিয়ে যাচ্ছে।আরশি খুশিমনে হাত বুলাচ্ছে।মুগ্ধ আরশির একটা হাত টেনে বুকে রেখে বললো,
-“আহা কি শান্তি।”
আরশি মুচকি হাসলো।মুগ্ধ সকল লাইট নিভিয়ে জানালাটা খুলে দিলো।বাহির থেকে আলো ঢুকছে ঘরে সাথে হালকা বাতাস। বাহিরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।বাতাসে আরশির ঘোমটাটাও উড়ছে।মুগ্ধ আরশির ঘোমটাটা খুলতে সাহায্য করলো।আরশির হাত ধরে বললো,
-“আপনি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসুন আগে।এমন ভারী মেকআপে কতক্ষণ থাকবেন?আর মায়া বলে বেশি মেকআপ করে থাকলে নাকি মুখে দাগ হয়,ব্রণ হয়।না বাবা,আমার এত সুন্দর বউয়ের মুখে এসব দাগ মানাবে না।”
মুগ্ধের মুখে শোনা ‘বউ’ ডাকটা বারংবার আবেগে আপ্লূত করে তোলে আরশিকে।এবারও তাই হলো।সে মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো মুগ্ধকে।মুগ্ধ দাঁত কেলিয়ে আরশিকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো।
নিজে গা এলিয়ে দিলো বিছানায়।
একটু পর ওয়াশরুম থেকে বের হলো আরশি।ভেজা চুলগুলো ছেড়ে মুগ্ধের মাথার কাছে এসে বসতেই মুগ্ধ হেসে আবারো আরশির কোলে মাথা রাখলো।নেশাক্ত গলায় বললো,
-“আপনার শরীরে একটা আলাদা ঘ্রাণ আছে আরশি।সেটা এখন পাচ্ছি।”
আরশি মুগ্ধের বন্ধ করে রাখা চোখে হাত বুলায়।মুগ্ধ চোখ খুলে আরশির দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আপনার নেশায় কিভাবে যেন আসক্ত হয়ে গেছিলাম আরশি।সবসময় আপনার কথা মনে পড়ত।যেখানে সেখানে আপনাকে দেখতে পেতাম।একদিন আপনাকে না দেখতে পেলে ভিতরটা কেমন হা-হুতাশ করত।মনে হত,দমটা বুঝি বের হয়ে আসছে। বুকের ভিতর কেমন যেন কাঁপত।আপনাকে ভীষণ মিস করতাম। যখন আপনার প্রতি আমার একটু একটু করে অনুভূতি জন্মাচ্ছিলো, একদিন রাতের বেলা কেমন যেন একটা অদ্ভুত ইচ্ছে হলো আমার।আপনার কোলে মাথা রেখে ঘুমানোর।গল্প করার।নিজের ইচ্ছে দেখে নিজেই অবাক হয়েছিলাম।নিজেকে বুঝাতাম।উনি আমার কত্ত বড়।এসব ভাবাটা উচিত না এরপরও আমার ইচ্ছে টা কমেনি।বরং আরো প্রবল হলো।মন চাচ্ছিলো আপনাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখতে পারলে হয়ত ঘুম হতো!এইযে যেমন এখন।”
বলেই মুগ্ধ আরশির হাতের পিঠে চুমু খায়। আরশির শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে।মুগ্ধ আবার বলতে লাগে,
-“ঘুমটুম সব ছেড়েই দিয়েছিলাম।মা আর বাবা আমার এসব দেখে আমাকে সামনে বসিয়ে সব জিজ্ঞেস করে।আমি ধীরে ধীরে সব বলে দি।”
আরশি বিস্ময় নিয়ে তাকায় মুগ্ধের মুখপানে।মুগ্ধ এসবও বলেছে নাকি?আরশি অবাক হয়ে বলে,
-“কি বলেছেন আপনি?”
-“আপনাকে ভালোবাসি সেটা।”(মুচকি হেসে)
-“আপনি তো ভারী নির্লজ্জ।”(নিম্ন স্বরে)
-“ভালোবাসায় আবার কিসের লজ্জা?প্রথমে তারা অবাক হন।রাজি হননি।সমাজের কুসংস্কারের কথা ভাবেন।কিন্তু আমি যখন বলেছিলাম যে আমার আরশি চাই মানে চাই ই।আমার পাগলামি দেখে তারা আর না করেননি।”
আরশি মাথা নাড়ায়।মুগ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-“আপনাকে পেতে সবকিছুই করতে পারি আমি আরশি।আর তাই আমি জিসানকে সরানোর সবরকম ব্যবস্থা করেছি।”(বাঁকা হেসে)
আরশি চমকে উঠে।তারপর বলে,
-“ওহ হ্যা।কি করেছিলেন আপনি বলুনতো? জিসান কেন শেষ সময় ডিসিশন চেঞ্জ করলো?”
-“চেঞ্জ করেনি।আমি করিয়েছি।”
বলেই মুগ্ধ দাঁত কেলায়।আরশি আড়চোখে তাকিয়ে বলে,
-“কি করেছেন শুনি?”
মুগ্ধ নিজের নখ দেখতে দেখতে বললো,
-“বেশি কিছু না। গাড়ি আটকিয়ে নির্জন রাস্তায় একটু ধোলাই দিয়েছি।”
-“কিহ!”(চোখ বড় বড় করে)
-“হ্যা। শা*লার সাহাস হয় কেমনে আপনার হাত ধরার।আর আপনার হাতে চেপেও তো ধরেছিলো।তাই ওর হাতটাই ভেঙে দিলাম।”
-“এই মুগ্ধ, পাগল আপনি?ওর হাত ভেঙে দিলেন?”
-“আরে প্লাস্টার করলে ঠিক হয়ে যাবে।আর আপনার ওর উপর এত মায়া হচ্ছে কেন বলুন তো?”(কপাল কুঁচকে)
আরশি শ্বাস ছেড়ে বললো,
-“মায়া না।হাতটাই ভেঙে দিলেন। তাই অবাক হলাম।”
-“বুঝেছি,দরদ হচ্ছে। আর ও যে হাত ধরলো”
বলেই চোখমুখ অন্ধকার করে মুগ্ধ অন্যদিকে তাকায়।আরশি মুগ্ধের হাতে চিমটি কেটে বললো,
-“বেশি বুঝে।”
মুগ্ধ আড়শির দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ওরে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে বক্সে ভরে আই মিন এম্বুলেন্সে করে সোজা হাসপাতালে পাঠিয়েছি।”
-“আপনিই হাসপাতালে পাঠিয়েছেন?”
-“হ্যা।আর ও যদি পুলিশকে আমার কথা বলতে যায় তো আমি বলে দিয়েছি যে ভিডিওটা পুলিশকে দেখিয়ে দিব! ”
-“কোন ভিডিও?”(অবাক হয়ে)
-“ওকে আটকিয়ে মারার পরিকল্পনা ছিলো আমার।কিন্তু ওকে আটকানোর পর ও আমায় চিনে ফেলে। আর আপনাকে নিয়ে অনেক বাজে বাজে কথা বলে।বলে যে আপনাকে বিয়ে করার পর বিদেশে নিয়ে বেঁচে দিবে।আর আমি নাকি কিছু করতেও পারব না।তখন অবশ্য আমার সাঙ্গপাঙ্গরা আড়ালে দাঁড়িয়ে ভিডিও করছিল।আমায় একা ভেবে এসব বলছিলো ও।আর এসবও বলেছে যে বিদেশে থাকতে নাকি ও অনেক মেয়েকেই বিয়ে করেছে।আর দেশে এসেও অনেক মেয়েকে ঠকিয়েছে।ওর নাকি সপ্তাহে প্রতিদিনই বারে যেতে হয়।”
আরশি হা হয়ে গেলো।মুগ্ধ আরশির মুখটা বন্ধ করে বললো,
-“তারপর ও বললো আমি নাকি কিছুই করতে পারব না।তারপর ওরে পিটিয়ে আমি যা করার করে দিলাম।”
বলেই মুগ্ধ হো হো করে হেসে উঠলো।আরশি এখনেো অবাক হয়ে আছে।মুগ্ধ ভ্রু নাচিয়ে বললো,
-“কি হলো?”
-“না না কিছু না।অবাক হলাম। কতটা বাজে ছেলে ও।আপনি আমায় বাচিয়ে নিলেন মুগ্ধ।”
বলেই আরশি মুগ্ধের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। মুগ্ধ হেসে আরশির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
-“আপনার ভাগ্যে আমিই আছি আরশি।কি করে আপনাকে অন্যকারোর হতে দিতাম?শালায় তো বলেছিলো আমার মুখ দেখেছে,আমাকে নাকি পুলিশে দিবে।আমি ভিডিও দেখিয়ে বলেছি যে আমিও ওকে সারাজীবন জেল খাটাবো।তাই বেচারা আর আপনাকে বিয়ে করতে চায়নি।ওর বাবা ভেবেছে ও বিয়ের দিনও মদ খেয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলো আর হা*ই*জা*কা*র*রা পিটিয়েছে।”
এটা শুনে আরশি মুগ্ধ কে আরেকটু চেপে ধরলো।মুগ্ধ মুচকি হেসে আরশির সিঁথি বরারবর চুমু খেলো।আরশির হাত ধরে বললো,
-“ভালোবাসি আরশি।”
-“আমিও আপনাকে ভালোবাসি মুগ্ধ।আপনার আমার সামনে করা বাচ্চামোগুলোর প্রেমে পড়ে গেছি।”(মুচকি হেসে)
মুগ্ধ আরশির নাক টেনে বললো,
-“বাচ্চামো?সেটা তো আমি আমার আরশির সামনেই করি।আর বাদবাকি সবার সামনে তো আমি গম্ভীর, রাগী মুগ্ধ।”
বলেই মুগ্ধ আবারো ভুবনভোলানো হাসি দিলো।আরশি সেদিকে পলকহীন তাকিয়ে রইলো।মুগ্ধ হাত নাড়তেই আরশি বললো,
-“আজ একটু বেশিই হাসছেন বলে মনে হচ্ছে না?”
-“হু।আজ আরশি আমার কাছে যে।তাই।আমি আমার ভালোবাসার সান্নিধ্যে যে তাই।কত্ত কষ্ট করে আপনাকে আমি আমার করেছি জানেন আপনি?”(ছলছল চোখে)
আরশি মাথা নিচু করে ফেললো।মুগ্ধ চোখের কোণায় জমা পানি মুছে আরশির থুতনি তুলে বললো,
-“আরশি?”
-“হুম?”
-“আপনাকে ছোঁয়ার অধিকার পেতে পারি?মে আই?”
আরশি লজ্জায় চোখ নামালো।মাথা উপর নিচ করে মুগ্ধ কে আঁকড়ে ধরলো।মুগ্ধ নিজের জবাব পেয়ে গেলো।পরক্ষণেই আরশি নিজের ওষ্ঠে নরম ছোয়া অনুভব করলো। মুগ্ধ আস্তে আস্তে আরশিতে নিজের ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে লাগলো।সেই ভালোবাসায় আরশি মুগ্ধের পাগলামি দেখতে পেলো,নিজের জন্য একরাশ ভালোবাসা,প্রেম দেখতে পেলো মুগ্ধের চঞ্চল চোখে।আরশির হাতে থাকা কাঁচের চুড়ি গুলো এক এক করে ফ্লোরে পড়লো।আরশি চোখ বন্ধ করে অনুভব করলো মুগ্ধের সীমাহীন ভালোবাসা!
চলবে…