#হৃদয়ে শুধু আপনি❤️
#লেখীনিতেঃঅনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব :০৫
মুগ্ধের প্রানহীন দেহটাকে এখনো নিজের সাথে চেপে ধরে আছে আরশি।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর বলছে,
-“মুগ্ধ প্লিজ চোখটা খুলুন না।আমি আপনার সব কথা মেনে নেবো।সত্যি বলছি।”
আরশির কানের কাছে বাজতে লাগলো মুগ্ধের সেই কথাটা,
-“আমি আর কখনো আপনাকে বিরক্ত করবো না।
কিন্তু একদিন আমার শূন্যতা আপনি টের পাবেন। সেদিন হাজার খুঁজেও আমায় পাবেন না।”
-” না আপনি যেতে পারেন না আমাকে ছেড়ে। আমি যেতে দিবো না আপনাকে। তাকান আপনি। আপনাকে আমার জন্য হলেও বাঁচতে হবে মুগ্ধ।”
চিৎকার করে বলতে বলতে কাঁদছে আরশি। মুগ্ধের কথাগুলো বারংবার তার কানে এসে বারি খাচ্ছে।
-“আমার যে আপনাকেই চাই।আমার যে #হৃদয়ে শুধু আপনি।”
-“আমারও #হৃদয়ে শুধু আপনি। মুগ্ধ। শুধু মাত্র আপনি। আপনাকে আমি আমার থেকে আর দূরে রাখবো না মুগ্ধ। একবার আমাকে দেখুন। বলুন যে আপনাকে ভালোবাসতে আমার কি সমস্যা!কোনো সমস্যা নেই মুগ্ধ। দুনিয়া উল্টে গেলেও আমি আপনাকেই ভালোবাসবো।হ্যা ভালোবাসি আপনাকে আমি মুগ্ধ।নিজের থেকেও বেশি। ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে। নিজের থেকে দূরে করতে পারব না। প্লিজ তাকান।”
মুগ্ধ কে কয়েকজন লোক মিলে তুলছে। আরশি কাঁদতে কাঁদতে বলছে,
-“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনারা আমার মুগ্ধ কে।ওকে আমার কাছে দিয়ে যান।”
একজন লোক বললো,
-“দাফন করতে হইবো আম্মা। তুমি থাকো।”
-” না না না। আমার মুগ্ধের তো কিচ্ছু হয়নি।দাফন কেন করবেন আপনারা? কিসব বলছেন। ও তো ঘুমাচ্ছে।এখনই চোখ খুলবে।উঠুন মুগ্ধ।”
আরশিকে আর বলতে না দিয়ে তারা মুগ্ধ কে নিয়ে চলে যাচ্ছে।আরশি সেদিকে তাকিয়ে হু হু করে কাঁদছে। তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে মুগ্ধের হাসিমাখা চেহারাটা।মুগ্ধের সেই চঞ্চল চোখগুলো।সেই ঠোঁট কামড়ে হাসিটা।বৃষ্টির মধ্যে ভিজে যাওয়া মুখটা।পরক্ষনেই নিজের হাতের মধ্যে চোখ পড়লো তার। এই হাতেই সে মুগ্ধ কে চড় মেরেছিলো।জিদে আরশি নিজের হাতটাকে দরজার চিপায় বাড়ি দিলো। তারপর চিৎকার করে বললো,
-“মুগ্ধঅঅঅঅ!”
বলেই লাফ দিয়ে আরশি ঘুম থেকে উঠে পড়লো। জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো।আর মাথায় হাত দিয়ে বলতে লাগলো,
-“মুগ্ধ?কই মুগ্ধ? মুগ্ধ আপনি কই?”
পাশ থেকে দিবা উঠে বসে।বোনের হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বলে,
-“কি হয়েছে আপু?তুই কি কোনো বাজে স্বপ্ন দেখেছিস?”
আরশি দিবার দিকে তাকায়।আরশির কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে।ফ্যানের নিচেও সে ঘামছে।দিবা বোনকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো,
-“পানি দিবো আপু? তুই কি খারাপ স্বপ্ন দেখেছিস?”
বলতে বলতে দিবা আরশিকে পানি দেয়। আরশি পানিটা ঢক ঢক করে খেয়ে নিজেকে শান্ত করলো।তারপর ঘাম মুছে বললো,
-” ওহ ওটা স্বপ্ন ছিলো।”
-” হ্যা আপু।কি দেখলি রে?”
-” না কিছু না। তুই শুয়ে পড়।”
-” আর তুই?”
-“তুই শুয়ে পড়।সকালে স্কুল আছে।শুয়ে পড়। আমি একটু পর ঘুমাবো।”
দিবা বোনের কথায় সায় দিয়ে শুয়ে পড়লো।আরশি উঠে দাঁড়ালো।বুকের মধ্যে হাত রেখে বুঝতে পারলো হার্টটা এখনো জোরে জোরে চলছে।ভয় এখনো কাটেনি। চারিদিকে নিস্তব্ধতা! বাহির থেকে কুকুর-শেয়ালের ডাক ছাড়া কিছু শোনা যাচ্ছে না।আরশির মাথায় এখনো স্বপ্ন টা ঘুরছে।সে ঢোক গিলে বললো,
-“ভাগ্যিস ওটা স্বপ্ন ছিলো।তোমার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া হে আল্লাহ।”
ভেবেই সে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগে,
-“কই যেতে পারে ছেলেটা?কোনো আক্কেল নেই? ওকে নিয়ে যে সবার চিন্তা হতে পারে?”
ভাবতে ভাবতে আরশি বারান্দার জানলা দিয়ে সামনের দিকে তাকায়। চোখ বর বড় হয়ে যায় তার।ল্যাম্পপোস্টের নিচে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।প্রথমেই মাথায় এলো মুগ্ধের কথা।আরশি আর কিছু ভাবার আগেই অবয়বটা একটু এগিয়ে এলো।ল্যাম্পপোস্টের আলোয় মুখটা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠলো।আরশির মুখে হাসি ফুটে উঠ লো। অস্ফুট স্বরে বললো,
-“মুগ্ধ!”
মুগ্ধ আরশির দিকে তাকিয়ে হাসছে।আরশি প্রথমে নিজের মনের ভুল ভেবে চুপ হয়ে গেলো।কিন্তু মুগ্ধ হাত নাড়াতেই আরশির মুখে আবারো হাসির রেখা দেখা গেলো। আরশি তাড়াতাড়ি করে বিছানার পাশ থেকে ওড়না নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।সে পারছে না উড়ে মুগ্ধের কাছে চলে যায়।আস্তে আস্তে দরজা খুলে বাহিরে আসতেই মুগ্ধের বাইকটা দেখতে পেলো।আরশি হাসলো।এগিয়ে যেতেই মুগ্ধ এক পা এক পা করে এগিয়ে এলো।আরশি কান্নারত গলায় বললো,
-“মুগ্ধ?”
মুগ্ধ হেসে হাতটা দুপাশে মেলে দিলো।আরশিকে আর পায় কে? দৌড়ে মুগ্ধের বুকে আছড়ে পড়লো।জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।মুগ্ধ তো মহাখুশি। চোখের মধ্যে পানি চিকচিক করছে।কিন্তু মুখে হাসি। সে আরশিকে আরেকটু চেপে ধরে বললো,
-“কাঁদছেন কেন আরশি?”
আরশি সরে এলো।মুগ্ধের বুকে কয়েকটা কিল বসিয়ে বললো,
-“আপনি অনেক খারাপ মুগ্ধ। ভীসণ ভীষণ খারাপ আপনি।”
মুগ্ধ আরশির হাত চেপে ধরে বললো,
-“কেন? আমি কি করেছি?”
-“কি করেছেন তাই না?সারাদিন কই ছিলেন আপনি? চিন্তায় আমার মাাথা ফেটে যাচ্ছলো।মানে কোনো খেয়াল থাকে না তাই না? দুনিয়া উচ্ছন্নে যাক!আন্টি,আমি,মায়া,আংকেল সবাই কত্ত টেনশনে ছিলাম জানেন আপনি? তাছাড়া একটু আগে স্বপ্নে..”
বলেই আটকে গেলো আরশি।ঘন ঘন নাক টানলো।মুগ্ধ আরশির গালে হাত দিয়ে বললো,
-“স্বপ্নে কি? কি দেখলেন?আমি মরে গেছি?”(মলিন হেসে)
আরশি এবার ফুঁপিয়ে উঠলো।তারপর মুগ্ধের বুকে আরো কয়েকটা বসিয়ে দিয়ে বললো,
-“বাজে কথা একদম বলবেন না। মরার কথা আরেকবার মুখে আনলে একদম মুখে স্টেপলার মেরে দিবো।”
মুগ্ধ হেসে ফেললো।তারপর আরশিকে আরেকটু উঁচু করে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আপনিই না বললেন চলে যেতে। আপনার থেকে বেটার কাউকে খুঁজে নিতে?”
-“বলেছি বলে চলে যেতে হবে?”(কাঁদো কাঁদো গলায়)
-“আমি তো আপনার সব কথা মানি।গুড বয় তো তাই।”
আরশি মুগ্ধের মাথায় চাটি মেরে বললো,
-“তাই না?”
-” একদম। আমি ভেবেছিলাম আপনি আমাকে ছেড়ে থাকলে আর কাঁদবেন না। দেখুন না,আপনার কান্না দেখলে তো আমার ভীষণ কষ্ট হয়। মনে হয় বুকের উপর কেউ ভারী পাথর রেখে দিয়েছে।”
আরশি অসহায় চোখে তাকায় মুগ্ধের দিকে।মুগ্ধ মুখে মুচকি হেসে বলে,
-“ভালোবাসি আরশি।”
আরশি মাথা নিচু করে নিস্তব্ধে কাঁদছে। মুগ্ধ আরশির মুখটা দু হাতে উচু করে বললো,
-“এখন কেন কাঁদছেন?এখন তো আমি চলে এসেছি।”
আরশি নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
-“সারাদিন কিছু খেয়েছেন?”
মুগ্ধ মাথা চুলকে না করলো।আরশি ফোস করে শ্বাস ফেলে বললো,
-“বাইকটায় বসুন।আমি আসছি।”
মুগ্ধ বাধ্য ছেলের মত মাথা নাড়ায়।বেশ কিছুক্ষণ পর আরশি একটা প্লেট হাতে বাহিরে এলো।মুগ্ধ তা দেখে বললো,
-“এটা কি?”
-“আপনার জন্য খাবার। সারাদিন না খেয়ে আছেন।খেয়েদেয়ে ঘরে গিয়ে ঘুমাবেন।”
-“আমি খাবো না।”
-“খেতে হবে।”(চোখ রাঙিয়ে)
-“তাহলে খাইয়ে দিতে হবে।”(হেসে)
আরশি কিছুক্ষণ মুগ্ধের মুঝপানে তাকিয়ে রইলো।তারপর ভাত মেখে খাইয়ে দিতে লাগলো।আর বলতে লাগলো,
-“সারাদিন কই ছিলেন?”
-“কেন মিস করেছিলেন?”
আরশি রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।মুগ্ধ দাঁত কেলিয়ে বললো,
-“বন্ধুর বাসায় ছিলাম।”
-“আন্টিকে বলে যাননি কেন?”
-“যেন আপনি আমার শূন্যতা অনুভব করেন।”
আরশি চুপ করে রইলো।মুগ্ধ কে খাইয়ে দিয়ে পানিটা হাতে দিয়ে বললো,
-“নিন পানি খান।”
-“হুহ।”
মুগ্ধ পানি খেয়ে গ্লাসটা আরশির হাতে দিলো।তারপর আরশির ওড়না টেনে মুখ মুছে বললো,
-“মজা ছিলো।”
আরশি হেসে বললো,
-“এবার বাসায় গিয়ে ঘুমাবেন।”
-“না আমি থাকবো।”(মুখ ফুলিয়ে)
আরশি ভ্রু উঁচু করে বললো,
-“থাকবেন মানে?”
-“আপনার সাথে থাকব।চলুন বাইকে করে শহর ঘুরি।”
আরশির মনটা কেন যেন চাইলো মুগ্ধের আবদার টা রাখতে।তবুও অন্যকিছু ভেবে সে বললো,
-” আজ না৷ গিয়ে ঘুমাবেন ওকে?”
মুগ্ধ মন খারাপ করে বললো,
-” আজ হলে কি হত?”
-“আজ না বললাম তো।বাসায় গিয়ে রেস্ট নিন। আর কালকে ভার্সিটি আছে তো।”
-“হু।”
আরশি বায় বলে যেতে নিলো।কিন্তু পিছন থেকে মুগ্ধ বলে উঠলো,
-“আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরি আরশি?”
আরশির পা থেমে গেলো।শরীরে আলাদা রকম এক শিহরণ জাগলো।পিছনে ঘুরে বললো,
-“হু?”
মুগ্ধ এসে আরশিকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো।আরশি স্তব্ধ হয়ে রইলো।মুগ্ধ আরশিকে আরেকটু আগলে নিতেই আরশির হাত মুগ্ধের পিঠ স্পর্শ করলো।আরশি চোখ বুজে ফেললো।
🍁
ভার্সিটিতে আসা মাত্রই আরশি মুগ্ধ কে খুঁজতে লাগলো।কিন্তু আশেপাশে খুঁজে না পেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলো,
-“হয়তো গতকাল দেরী করে ঘুমিয়েছে বলে আসতে পারেনি।”
ভেবে যেই না গেইটে ঢুকবে এমন সময় পিছন থেকে কেউ ডাকলো,
-“আরশি?”
আরশির মুখে হাসি ফুটলো।পিছনে ফিরে মুগ্ধ কে দেখতে পেলো।মুগ্ধ তার দিকেই হেসে এগিয়ে আসছে।আরশিও এগুতে নিবে এমন সময় কোত্থেকে একটা ছেলে এসে আরশির হাতটা চেপে ধরে বললো,
-“আপনি আরশি?”
আরশির ভ্রু কুঁচকে গেলো।হাতটা ছাড়িয়ে বললো,
-“জ্বী?”
-“হায় আমি জিসান।তুমি আমায় চিনবা না। আমি কিন্তু চিনি।”
-“কিভাবে?”
জিসান হাসলো।তারপর বললো,
-“ক্যান্টিনে বসে বলি?”
আরশি একবার জিসানের দিকে তাকিয়ে কি ভেবে মুগ্ধের দিকে তাকায়।মুগ্ধ রাগী চোখে তাকিয়ে আছে জিসানের দিকে।চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে।আরশি ঢোক গিললো।মনে মনে ভাবলো,
-“জিসান,ইউ আর গন নাউ ”
চলবে…