#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৫০(১ম অংশ)
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]
“নির্জন কথাগুলো বলতে বলতেই নিধি চোখ জোড়া বন্ধ করে,নির্জনের বুকে ঢলে পড়লো।”
“নিধি এভাবে নির্জনের বুকে সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাওয়াতে,নির্জন নিধির পিঠে হাত দিয়ে শক্ত করে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে,পৈ**শাচিক হাসি দিয়ে,হাস্কি ভয়েসে বললো,
‘উফফ,এতো ভীতু হলে হবে?আমার বউ কে তো আমার মতো সাহসী হতে হবে।এরপর থেকে তোমাকে আরও ভালো করে ট্রেইনিং দিতে হবে,ডার্ক কুইন।’
বলেই পুরো রুমের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে,নিধিকে কোলে তুলে,রুম থেকে প্রস্থান করলো নির্জন।”
“নিধিকে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে,নিজের সেফটি স্যুট চেঞ্জ করে,নিধির সেফটি স্যুট চেঞ্জ করে দিলো।তারপর নিধির পাশে বসে,ওর ঘুমন্ত মুখস্রির দিকে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে,ওর কপালে লেপ্টে থাকা চুল গুলো সরিয়ে,আলতো করে চুমু দিলো।অতঃপর ওর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
“প্রিয়তমা,যদি তুমি পাথর ভে**ঙে ফেলো ভুল পথে,
আমার শাসন হবে ভ**য়ংকর,তোমার চিন্তা করবে রাত।
তোমার প্রতিটি পদক্ষেপ আমি গভীরভাবে লক্ষ্য রাখবো,
যদি তুমি পথে বাঁকাও,ভ**য়ংকর শাস্তি হবে তোমার প্রতিশ্রুতি।
তোমার দৃষ্টির দিকে কেউ যদি একটুও নজর রাখে,
আমার প্রতিশোধের আঁচ তুমি অস্বীকার করতে পারবে না।
তোমার ভুলের জন্য আমি হবো অন্ধকারের গার্ড,
ভ**য়ংকর শাসনের আগুনে পুড়বে তোমার অহংকার।
আমার চোখের তীক্ষ্ণতা থাকবে সর্বদা,
যতক্ষণ তুমি আমার নিয়মে চলবে,ততদিন শান্তি।
প্রেমের নামে শাসন হবে কঠোর,অনুশাসন হবে অবিচল,
যদি তুমি ভুল করো,তুমি পাবে এক ভ**য়ংকর রাতের কল্লোল।”
~মেহের~
“কবিতা আবৃত্তি করে,কিছু একটা ভেবে ডেভিল হেসে রুম ত্যাগ করে,বাইরে চলে গেলো নির্জন।তারপর ৩-৪ ঘন্টা বাসার বাইরে এবং ঘরে কঠোর পরিশ্রম করে,সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নিধির পাশে শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।”
————–
“সকাল ৯টা বেজে ৪১ মিনিট।জানালার শুভ্র রঙা পর্দা ভেদ করে,সূর্যের তীর্যক রশ্মি নিধির চোখজোড়ার ওপর পড়তেই ঘুম ভে**ঙে গেলো নিধির।পিটপিট করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখলো পাশে শুয়ে আছে নির্জন।
সাধারণত ঘুম থেকে উঠার পর মানুষের মস্তিষ্কের নিউরনগুলো সাথে সাথেই কাজ করা শুরু করে,তবে সম্পূর্ণ কার্যক্ষমতায় পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগে।ঘুমের সময় মানুষের মস্তিষ্কের কিছু অংশ বিশ্রাম নেয় এবং ব্রেন ওয়েভ বা মস্তিষ্কের তরঙ্গ ধীর গতিতে চলে।ঘুম থেকে ওঠার পর, মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসে। এজন্য কিছু মানুষ ঘুম থেকে উঠার পর খানিকটা সময় ঘোরের মতো অবস্থায় থাকতে পারে,যাকে “sleep inertia” বলা হয়।”
“নিধির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।ও রাতে ঘটে যাওয়া কাহিনী গুলো ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে মনে করতে পারলো না।আড়মোড়া ভে**ঙে বিছানা থেকে উঠতে নিলেই,দেখলো নির্জনের হাত ওর পেটের ওপর।নিধি
নির্জনের হাত সরানোর জন্য তার হাতের ওপর হাত রাখতেই,ধীরে ধীরে রাতের ভ**য়ংকর ঘটনাগুলোর কথা মনে পড়ে গেলো।”
“সবকিছু মনে পড়তেই,নির্জনের দিকে একবার ভ**য়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে,নির্জনের হাত সরিয়ে মুহূর্তেই বিছানার এক কোণে গুটিসুটি হয়ে বসে,তীব্র স্বরে চি**ৎকার করে উঠলো নিধি।”
“নিধির এহেন চি**ৎকার শুনে,নির্জনের শান্তির ঘুম ভে**ঙে গেলো।ঘুমঘুম চোখে নিধির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
‘সকাল,সকাল এত জোরে চি**ৎকার করে উঠলে যে ডার্ক কুইন?কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছো নাকি?এসো, আমার বুকে এসো।
বলেই নিধির দিকে এগিয়ে ওর হাত ধরতে গেলেই,নিধি নির্জনের হাত ধা**ক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে,চি**ৎকার করে বলতে থাকে,
‘আমাকে স্পর্শ করবেন না,আপনি খু**নি,আপনি পাপী।সরুন,সরুন..’
বলেই আরো গুটিসুটি হয়ে বসলো নিধি।ওর শরীর রীতিমতো থরথর করে কাঁপতে থাকল।”
“নিধির এহেন আচরণের কারণ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বুঝতে পেরে,বাঁকা হাসল নির্জন।কিছু একটা ভেবে,নিধির দিকে হিং**স্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শোয়া থেকে উঠে,নিধির কাছে এসে ওর হাত শক্ত করে ধরে বলতে থাকল,
‘বুঝেছি,রাতের ঘটনা মনে করে ভয় পাচ্ছো,হা হা হা..আরে এগুলো তো কিছুই না।আরও কাহিনী আছে,শুনবে?উমম..তুমি না শুনলেও জোর করে শোনাবো।নইলে তো আমার মতো সাহসী হতে পারবে না।’
“নির্জন এভাবে হাত ধরাতে ব্যথায় ‘উহ’ আর্তনাদ করে উঠলো নিধি।
চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
‘আপনার এই নি**কৃষ্ট হাত দিয়ে আমায় ধরবেন না,ছাড়ুন আমার হাত।অ*সভ্য,ইতর,ন**রপ*শু,খু**নি,প্রতারক।’
“নিধির বলা শেষ (প্রতারক) শব্দ টি শুনে,মেজাজ বিগড়ে গেলো নির্জনের।ঘাড় কাত করে নিধির দিকে র**ক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,ডান হাত দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে,
ঘনঘন শ্বাস ফেলে বলতে থাকল,
‘চুপ,চুপ..একদম চুপ..এই আমাকে প্রতারক বলার সাহস তোর হলো কি করে?কার সাথে প্রতারণা করেছি,হুম?তোর সাথে করেছি?নাকি অন্য কারো সাথে করেছি?আরে আমি তো তাদের শাস্তি দিয়েছি,যারা আমার সাথে প্রতারণা করেছে।ওই আলমিরাতে যেটাকে দেখলি,সেটাও তো ছলনাময়ী,আমার ভার্সিটির ফ্রেন্ড ইতি তো ছিলো মিথ্যাবাদী।আমাকে প্রপোজ করে,দুইদিন পর আরেকজন কে ওর মনে ধরেছে।তাই তো ওর হাত আর পায়ের আঙ্গুল গুলো ক্যা**চক্যা**চ করে কে**টে ফেলেছিলাম।আরেকজন আছে আমার অফিসের কলিগ,বর্ষা।ওই চরিত্রহীন নারীকে তো বিভিন্ন খাবারে বি**ষ দিয়ে,এসিড এবং আগুনে পুড়িয়ে মে**রেছি।আর সেই ছাইগুলো আমার ল্যাবরেটরী রুমের টেবিলে একটি বক্সে রেখেছি।
আরও শুনবি,কাকে কাকে মে**রেছি?হাহাহা..
তোর জন্যও মা**র্ডার করেছি।মনে আছে,রিমনের কথা?
দিগন্তের বিয়েতে ও তোর দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো,সেই সাথে তোকে ইঙ্গিত করে বাজে কথা বলেছিলো।ওকে তো আমি ওয়েটারদের চেঞ্জিং রুমে গিয়ে ক্ষ**তবিক্ষ**ত করেছি।নিউজে তো দেখেছিস,তাই না?এইবার ওর হ**ত্যাকারীকে নিজে চোখে দেখে নে।হ্যা,ওই খু**নি আমি,ভালো করে দেখ..ওই দেখ..দেখ..
আর শোন,নেক্সট টার্গেট হবে,মেহরাব।ওকে তো আমি টু**করো টু**করো করবো।’
“নিধি চোখজোড়া বন্ধ করে আছে।ভয়ে পুরো শরীর কাঁপছে।নির্জনের সেদিকে ধ্যান নেই।নির্জন ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ফেলে ঘাড় কাত করে আবারও বলতে শুরু করলো,
‘তারপর তোর বাবার বাড়ি থেকে আসার সময় বাসে একজন নে**শাখোর,চরিত্রহীন লোক তোর দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো,সেই সাথে বাসে থাকা অন্য মেয়েগুলোকেও বা**জে ভাবে ছুঁয়েছে।ওকেও আমি কৌশলে পোড়াবাড়িতে নিয়ে ইচ্ছে মতো কা**টাকা**টি
করে,সেখানেই মাটি চাপা দিয়েছি।’
বলেই নির্জন কিভাবে লোকটিকে মে**রেছে,উ**ন্মা*দের ন্যায় তার বিবরণ দিতে থাকল।’
“এদিকে নির্জনের মুখে এতগুলো মা**র্ডারের নৃ**শংস বর্ণনা শুনে,নিধির মাথা ঘুরে উঠলো।ওর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়ে এলো।
সেদিকে হুঁশ নেই নির্জনের।সে তো কিভাবে মা**র্ডার গুলো করেছে,সেগুলোর মজা করে বর্ণনা দিচ্ছে।আর কিছুক্ষণ পর পর পৈ**শাচিক হাসি দিচ্ছে।”
“সবকিছু বলে নির্জন নিধির মুখ থেকে হাত সরাতেই, গড়গড় করে বমি করে দিলো নিধি।”
“নিধি এভাবে বমি করে দেওয়াতে নির্জনের পড়নের টি-শার্ট,প্যান্ট এবং বিছানার চাদর নষ্ট হয়ে গেলো।নির্জন চোখজোড়া বন্ধ করে,আবার খুললো।
অতঃপর নিধির পিঠে হাত বুলিয়ে বলতে থাকল,
‘এই রোমান্টিক ওয়েদারে তোমার বমি হওয়ার কারণ কি অন্যকিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে,ডার্ক কুইন?’
বলেই বাঁকা হাসল নির্জন।”
“নির্জনের কথাগুলো নিধির কানে গেলো না।নিধি আবারও বমি করে দিলো বিছানায়।
নিধির এহেন পরিস্থিতি দেখে,নির্জন নিধিকে কোলে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো।তারপর নিধি কে ফ্রেশ করে দিয়ে,
ওকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।তারপর ওর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
‘সকালে সূর্যের তেজ টা প্রখর ছিলো।কিন্তুু এখন ঠান্ডা মনে হচ্ছে।সেই সাথে তুমিও বেশ ঠান্ডা হয়ে গেছো।সবকিছুই তো তোমাকে বললাম।এখন আমাকে একটা উপহার দাও।
এই রোমান্টিক ওয়েদারে একটা রোমান্টিক গান শোনাও,নিরু।ওই যে ওই গানটা,যেটা ফুলসজ্জার রাতে গেয়েছিলে..
“বাতাসে গুন গুন..
এসেছে ফাগুন..”
উফফ,ওটা যা গেয়েছিলে…ওটা শোনাও।”
“এই ভ**য়ংকর পরিস্থিতিতে নির্জনের এহেন আবদার শুনে,হতভম্ব হয়ে গেলো নিধি।দুর্বল শরীর নিয়ে,নড়েচড়ে বসে,নির্জনের দিকে করুণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
‘নির্জন….
‘উহুম’ বুঝেছি,তোমার শরীর দুর্বল লাগছে।আচ্ছা,একটু পর শুনিও।আগে আমার টা শোনো।গান টা মনযোগ দিয়ে শুনবে।এটা কিন্তু আমার ভীষণ প্রিয় গান,হুম..।’
বলেই চোখজোড়া বন্ধ করে গাওয়া শুরু করলো নির্জন।
🎶”Na jaane koi, kaisi hai ye zindagani,
Humari adhuri kahani..”
ভেবে দেখেছো কি,তারাও কত আলোকবর্ষ দূরে..
আরও দূরে..
তুমি আর আমি ক্রমে ক্রমে যাবো সরে..”🎶
“কয়েক লাইন গেয়ে,নির্জন চোখজোড়া খুলতেই দেখলো,নিধির চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
সেটা দেখে নির্জন নিধির চোখের পানি মুছে বলে উঠলো,
‘আরে শেষের দুই লাইন শুনে কষ্ট পেলে নাকি?আরে বোকা বউ আমার..আমরা কখনোই দূরে সরে যাবো না।তুমি যেতে চাইলেও তোমাকে যেতে দেবো না।
আচ্ছা,আমি আগে আমার পোশাক এবং বিছানার চাদর পাল্টে নেই।তুমি এখানে বসে রেস্ট করো।তারপর আমরা আরও অনেক গল্প করবো,ওকে ডার্ক কুইন?’
বলেই নিধির ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিয়ে,বিছানার চাদর উঠিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো নির্জন।”
“নির্জন ওয়াশরুমে যেতেই,নিধি সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,টেবিলে থাকা গ্লাসের পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।অতঃপর টেবিলের ওপর রাখা নির্জনের
মোবাইল,ওষুধের বক্স এবং প্রেসক্রিপশন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যখনই দরজা আটকাতে যাবে,তখনই নির্জন এসে দরজায় হাত দিয়ে নিধিকে আটকাতে চাইলো।”
“নিধি কোনো উপায় না পেয়ে,দরজা আরেকটু আটকাতেই নির্জনের হাতের তালুতে খুব জোরে চাপ লাগতেই,অসহ্য যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে নিচে বসে পড়লো নির্জন।
‘এই ফাঁকে নিধি,তড়িঘড়ি করে সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো।এলোমেলো পায়ে দৌঁড়াতে লাগল রাস্তা দিয়ে।রাস্তার মানুষগুলো এমন এলোকেশী নারীটিকে দেখে কি ভাবছে,সেদিকে মনোনিবেশ করার সময় নেই নিধির।বরং সে দৌঁড়ানোর সময় বারকয়েক পেছনে তাকিয়েছে।আর ভেবেছে,
‘এই বুঝি নির্জন চলে এলো।এখনই আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে কঠোর শাস্তি দিবে।’
কথাগুলো ভাবতেই গায়ে কাঁপন শুরু হলো নিধির।দুর্বল শরীরে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে মাথা ঘুরে উঠলো নিধির।আবারও বমি বমি ভাব হচ্ছে।এভাবে একসময় একটি গলিতে গিয়ে,একটি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে ঘনঘন শ্বাস ফেললো নিধি।তারপর নির্জনের মোবাইল থেকে
মাহিরের নাম্বার বের করে ফোন করলো।’
‘কয়েকবার রিং হওয়ার পর,মাহির ফোন রিসিভ করতেই,নিধি শুকনো ঢোক গিলে,ড.মায়ার ফোন নাম্বার চাইলো।’
“মাহির বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘আপু,আপনি ঠিক আছেন তো?নির্জন ভাইয়ার নাম্বার থেকে কল করলেন যে?আপনার ফোন কোথায়?’
“নিধি মাহিরের কথার বিপরীতে বলে উঠলো,
‘এইসব বিষয়ে পরে কথা বলবো,আগে মায়া আন্টির ফোন নাম্বার দিন প্লিজ।’
“মাহির কিছুটা চিন্তিত হয়ে,ফোন কে**টে ম্যাসেজ করে,ড.মায়ার নাম্বার দিলো।নিধি তৎক্ষনাৎ ড.মায়ার নাম্বারে কল দিলো।২বার পরিপূর্ণ রিং হয়ে কে**টে যাওয়ার পর,তিন বারের সময় রিসিভ করলেন ড.মায়া।”
“ফোন রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলতেই,নিধি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে,করুণ স্বরে ড.মায়াকে নির্জনের করা ঘটনা গুলো সব বললো।কিন্তু খু**নাখু**নির বিষয়টি বললো না।আপাতত ওর মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে,
‘এতদিন চিকিৎসা নেওয়ার পরেও,প্রতিদিন নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার পরেও,নির্জন কেনো সুস্থ হলো না?’
কথাগুলো ভেবে ড.মায়া কে কান্নামিশ্রিত স্বরে প্রশ্ন গুলো করলো।”
“ড.মায়া কিছুটা চিন্তিত হয়ে,নিধি কে বললেন,
‘আমার মনে হয়,এই বিষয়টি নিয়ে তুমি ড.আজাদের সাথে কথা বললে ভালো হবে।যেহেতু মেডিসিনগুলো তিনি দিয়েছেন।তুমি তাকে সবকিছু খুলে বলো।আশা করি,সঠিক পরামর্শ পাবে।’
“নিধি গলির আশেপাশে তাকিয়ে,করুণ স্বরে বললো,
‘এই মুহূর্তে আমার কাছে কোনো টাকা নেই।আমি তার কাছে কিভাবে পৌঁছাবো?আপনি যদি মেহরাব কে এখানে পাঠাতেন,তাহলে হয়তো আমি যেতে পারতাম।আমার খুব ভয় লাগছে আন্টি।’
“ফোনের অপর পাশ থেকে নিধির কান্নার শব্দ শুনে,ভীষণ মায়া হলো ড.মায়ার।তিনিও তো একদিন এভাবেই কেঁদেছিলেন।কিন্তু,তখন কেউ ছিলো না তার পাশে।নিজেকেই সংগ্রাম করতে হয়েছে।’
ভেবে,নিধিকে শান্ত করার জন্য ভরসার সহিত বললেন,
‘রিল্যাক্স নিধি।আমি মেহরাব কে পাঠাচ্ছি।ও তো ওখানেই জব করে।একটু অপেক্ষা করো।’
বলেই ফোন রেখে দিয়ে মেহরাব কে কল করে সব কিছু বললেন ড.মায়া।
মেহরাব সবকিছু শুনে,সিনিয়র অফিসার কে বলে,গাড়ি নিয়ে ড.মায়ার বলা ঠিকানায় চলে গেলো।”
“প্রায় ২০মিনিট পর নিধির দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছালো মেহরাব।গলি থেকে বেরিয়ে মেইন রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলো নিধি।এই সময়ের মধ্যে কতবার যে এদিক-ওদিক তাকিয়েছে ঠিক নেই।
মেহরাবের গাড়ি দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে,দরজা খুলে গাড়িতে উঠে বসে,ড.আজাদের চেম্বারে নিয়ে যেতে বললো
নিধি।”
“নিধির ক্লান্ত মুখস্রির পানে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে,কথা না বাড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো মেহরাব।”
“প্রায় আধা ঘন্টা পর ড.আজাদের চেম্বারে পৌঁছাতেই,তার এ্যাসিস্ট্যান্টের কাছ থেকে জানতে পারলো,যে সে আজকে চেম্বারে বসবে না।”
“এ্যাসিস্ট্যান্টের এহেন কথা শুনে ক্লান্ত মুখমণ্ডল চুপসে গেলো নিধির।
নিধির দিকে তাকিয়ে মেহরাব ম্লান হেসে ভরসার সহিত বললো,
‘চিন্তা করো না,নিধি।ব্যাপারটা যেহেতু আর্জেন্ট,তাই আজাদ স্যারের বাসায় তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি।স্যারের সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক।আশা করি,তোমাকে দেখে তিনি কিছু মনে করবেন না।’
“মেহরাবের এহেন কথায় ধোঁয়াশার মাঝেও,মনে হয় আলোর দিশা পেলো নিধি।মলিন স্বরে বললো,
‘আপনি খুব ভালো মানুষ,মেহরাব।আমি চিরজীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।’
“নিধির কথা শুনে,অপরদিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো মেহরাব।’
“তারপর নিধিকে নিয়ে রওনা হলো ড.আজাদের বাসায়।”
“ড.আজাদের বাসায় গিয়ে ২বার কলিংবেল বাজাতেই,তিনি দরজা খুলে নিধি এবং মেহরাব কে দেখে বিস্ময়কর চাহনি নিক্ষেপ করে বললেন,
‘আরে,তোমরা এখানে?হঠাৎ আমার বাসায় এসেছো যে?’
“মেহরাব এবং নিধি ড.আজাদের দিকে তাকিয়ে সালাম দিলো।মেহরাব সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে নিধির বলা কথাগুলো তাকে বুঝিয়ে বললো।
সবকিছু শুনে ড.আজাদের চেহারার ভাব পাল্টে গেলো।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে,মেহরাব এবং নিধিকে ঘরে প্রবেশ করতে বললো।”
“মেহরাব ঘরে প্রবেশ করে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো,
‘স্যার,আমি একটা মিটিং ফেলে রেখে কিছু সময়ের জন্য চলে এসেছি।মিটিং টি এখনও চলমান।আমাকে এখন যেতে হবে।’
বলেই নিধির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘নিধি,তুমি স্যারের সাথে কথাগুলো বলো।আর আমার জন্য অপেক্ষা করো।আমি মিটিং টা শেষ করে,তোমাকে নিয়ে যাবো।’
বলেই মেহরাব ড.আজাদ কে সালাম দিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।”
“এদিকে মেহরাবের যাওয়ার পানে তাকিয়ে,বাঁকা হাসল ড.আজাদ।”
“নিধিকে সোফায় বসতে বলে,তিনি চলে গেলেন কিচেনে।নিধির জন্য শরবত বানিয়ে এনে টি-টেবিলে রেখে,সোফায় বসে বললেন,
‘কি ভাবছো,এই বাসায় আমি একা কেনো?’
‘আসলে আমার স্ত্রী পরলোকগমন করেছে আরও ৬বছর আগে।আমার ২জন মেয়ে লন্ডনে সেটেল।আর আমি কাজের সুবাদে এখানেই থাকি।আচ্ছা,মেহরাবের থেকে তো সবকিছু শুনলাম।এইবার তুমি কি আমাকে আমার করা প্রেসক্রিপশন টা দিতে পারবে?সেটা কি সাথে এনেছো?’
“ড.আজাদ বলতেই,নিধি প্রেসক্রিপশন টা তার দিকে এগিয়ে দিলো।তিনি সেটা হাতে নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বাঁকা হেসে বললেন,
‘আরে,তোমাকে দেখে তো বেশ অস্থির মনে হচ্ছে।এই ঠান্ডা শরবত টি খেয়ে নাও,আশা করি এই প্রখর গরমে স্বস্তি পাবে।’
“ড.আজাদের কথা মতো,নিধি গ্লাসে মুখ লাগিয়ে কিছুটা শরবত খেলো।তারপর ড.আজাদের দিকে তাকিয়ে নির্জনের এহেন পরিস্থিতির কথা জিজ্ঞেস করতেই,তিনি ডেভিল হেসে বলে উঠলেন,
‘যদি বলি,নির্জনের এই ভ**য়ংকর পরিণতি আমার দেওয়া ওষুধের কারণে হয়েছে,তাহলে কি তুমি বিশ্বাস করবে?’
“ড.আজাদের কথা শুনে ভড়কে গেলো নিধি।ভ্রকু**টি করে বিস্ময়ের স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
‘মানে?’
“ড.আজাদ পৈ**শাচিক হাসি দিয়ে বললেন,
‘আরে,আরে..রিল্যাক্স।এখনই এত উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই।আগে তো পুরোটা শুনে নাও।অবশ্য একটু পর তুমিও শুকনো পাতার মতো ঝরে যাবে।তার আগে পুরো ঘটনাটা তোমাকে শোনাতে চাই,আফটার অল তুমি তারই স্ত্রী।’
বলেই বাঁকা হেসে বলতে শুরু করলো,
‘তোমার সৎ শাশুড়ির সাথে ছিলো আমার নিষিদ্ধ সম্পর্ক।তখন আমি এত বড় ডক্টর ছিলাম না।মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি।চোখে ছিলো অনেক স্বপ্ন।কিন্তু হাতে তেমন টাকা ছিলো না।তোমার শ্বশুর অসুস্থ হওয়ার পর,আমাদের হসপিটালে সায়রা বেগম তাকে দেখাতে নিয়ে আসে।আমার কেনো জানি,তার স্বামী কে দেখে খুব মায়া হয়েছিলো।সেই সাথে তাকে দেখেও।তোমার শ্বশুরের শারীরিক কন্ডিশন আগে থেকেই খারাপ ছিলো।চিকিৎসা করার পরেও তিনি হার্ট অ্যা**টাক করে মৃ**ত্যুবরণ করেন।আর আমাকে দিয়ে যায় সুবর্ণ সুযোগ।তারপর আমি নিজে থেকেই নির্জনদের বাসায় আসা-যাওয়া করতাম,খোঁজ-খবর নিতাম।তবে নির্জন যখন স্কুলে যেতো,তখন।
এক পর্যায়ে তোমার শ্বাশুড়ির সাথে আমার সম্পর্ক গভীর হয়।আর আমি তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেই এবং সে আমাকে এই সব সম্পত্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।কিন্তু সেখানে জটলা পাকায় ওই অ**সভ্য ছেলেটা,নির্জন।
একদিন ও আমাদেরকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে এবং আমি কোনোরকমে মুখ ঢেকে ওকে ধা**ক্কা দিয়ে, বাইরে চলে যাই।আর তারপর একসময় জানতে পারি,তোমার শ্বাশুড়ি নাকি শয্যাশায়ী।আমার এতদিনের সাজানো সমস্ত প্ল্যান ভেস্তে দিয়েছিলো নির্জন।তারপর আমাকে এই পর্যায়ে আসতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে।”
“যাইহোক,তখনই আমার কেনো জানি,সন্দেহ হয়েছিলো,যে তোমার শ্বাশুড়ির অসুস্থ হওয়ার পেছনে নির্জনের হাত নেই তো!
হ্যা,অবশেষে সন্দেহ টা সত্যি হলো তখন,যখন এতগুলো বছর পর নির্জন আমারই চেম্বারে আমার পেশেন্ট হয়ে এলো।ওকে এক পলক দেখেই আমি চিনে ফেলেছিলাম।
কিন্তু ও আমাকে চিনতে পারেনি।কারণ ও আমাকে এর আগে কখনো দেখেনি।
ব্যাস,মেঘ না চাইতেও বৃষ্টি পেয়ে গেলাম।আমার মধ্যে থাকা এতোদিনের জমানো প্রতিশোধ স্পৃহা হুড়হুড় করে জাগ্রত হয়ে উঠলো।
ড.মায়ার দেওয়া ভালো ওষুধ গুলো চেঞ্জ করে,যেই ওষুধ গুলোতে সাইড-ইফেক্ট হয়,সেগুলো লিখে দিলাম।আরও মজার বিষয় হলো,তুমি আমারই বলে দেওয়া ফার্মেসী থেকে ওষুধ গুলো কিনে নিলে,আর ওকে খাওয়ালে।তারপর বাকি কাহিনী তো নিজেই ভোগ করেছো,হা হা হা।
ওহ,কি কি ওষুধ দিয়েছি,আর সেগুলোতে কি কি সাইড ইফেক্ট আছে,সেটা শুনবে না?আচ্ছা,শোনো,
“১. সাইকোট্রিক্সিন(Psychotrixin):
এটি মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারগুলোতে রিয়্যাকশন তৈরি করে এবং মানসিকভাবে স্থির থাকা কঠিন করে তোলে।
এর সাইড ইফেক্ট হলো,
ঘুমের তীব্র অভাব,মস্তিষ্কের মধ্যস্থ চিন্তা ও বোধশক্তি দুর্বল করে।এই ওষুধটি নির্জনকে দিনরাত জেগে থাকার এবং নানা অস্বাভাবিক চিন্তা ও ভ্রান্তির জগতে নিয়ে গিয়েছে।”
“২.ডিপ্রেসাড(Depressad):
এটি নির্জনের মনকে ধীরে ধীরে বিষণ্ণ করে তুলেছে।তার আত্মবিশ্বাস এবং ইচ্ছাশক্তি নষ্ট করে দিয়েছে।
সেই সাথে মানসিক অবসাদ,স্বপ্নভঙ্গ এবং আ**ত্মহ**ত্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে দিয়েছে।এই ওষুধের কারণে নির্জন ক্রমাগতভাবে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবতে থাকে।আশা করি,তুমি সেটা ভালো ভাবে উপলব্ধি করেছো।”
“৩. ইনসানিক্স(Insanix):
এটি নির্জনের ভেতরের অনুভূতিগুলোকে আরও গভীরভাবে জাগিয়ে তোলে এবং হিং**স্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে।সেই সাথে সহিংসতা ও ক্রোধের স্ফুরণ বৃদ্ধি করেছে।আর এই ওষুধটি নির্জনের ভেতরে আগ্রাসন সৃষ্টি করেছে এবং তাকে প্রতিদিন আরও হিং**স্র ও ভ**য়ংকর করে তুলেছে।যেন নিজের কিংবা অন্য কারো ক্ষতি করতে তার আর দ্বিধা না থাকে।”
“৪.হ্যালুসিনাজিন(Hallucinagin):
এটি নির্জনের মনে বি**কৃত চিন্তা এবং ভ্রান্তির সঞ্চার ঘটিয়েছে এবং বাস্তব আর কল্পনার পার্থক্য ঘুচিয়ে দিয়েছে।
ফলে তার তীব্র হ্যালুসিনেশন,ভ**য়ানক বিভ্রম এবং অতিরিক্ত অস্বস্তি অনুভব হয়েছে।এই ওষুধের কারণে নির্জন ঘরে বসেই অবাস্তব দৃশ্য দেখছে এবং সে ভ**য়ংকর দুঃস্বপ্নে আটকে পড়েছে।”
“৫. ইরেটোল(Iratol):
এটি মস্তিষ্কের রাগ এবং হতাশা সংক্রান্ত অংশগুলোতে কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে।তার স্থায়ী মানসিক অশান্তি সৃষ্টি করেছে এবং উদ্বেগ,মাথাব্যথা,এবং গায়ে অস্বাভাবিক অস্থিরতা তৈরি করেছে।এই ওষুধের কারণে নির্জনের ধৈর্য একেবারে শূন্য হয়ে গেছে,এবং সে ক্ষণে ক্ষণে রাগের মধ্যে ফেটে পড়ছে।”
“ড. আজাদ প্রতিটি ওষুধের বর্ণনা দিয়ে ভ**য়ানকভাবে হেসে উঠলো,এবং বললো,
“নিধি,তুমি কি বুঝতে পারছো না?এই ওষুধগুলো ওকে ধ্বং**স করার জন্যই বানানো হয়েছে।একদিন নির্জন এমন অবস্থায় পৌঁছাবে,যেখানে সে তার নিজের শরীর আর মনকে সহ্য করতে পারবে না।সে হয় নিজেই নিজেকে শেষ করবে,অথবা আমার মতো মানুষের হাতে বন্দী হয়ে থাকবে চিরকাল।”
“নিধি আতঙ্কিতভাবে ড. আজাদের মুখের দিকে তাকিয়ে ঘৃণার স্বরে বললো,
‘ছিহঃ, একজন ডক্টর হয়ে পেশেন্টের ক্ষ**তি করতে আপনার বিবেকে বাঁধল না?আরে সে তো আপনার পেশেন্ট ছিলো।আর তার দ্বারা তো আপনার ক্ষ**তি হওয়ারও কোনো আশংকা ছিলো না।তবুও আপনি এই জ**ঘন্য কাজটা করতে পারলেন?ধি**ক্কার জানাই আপনার এই মন-মানসিকতাকে।’
বলেই নিধি সোফা থেকে উঠে গিয়ে যখনই সদর দরজার দিকে পা রাখতে যাবে,তখনই পেছন থেকে ড.আজাদ নিধির চুলের মুঠি ধরে রাগী স্বরে বলে উঠলেন,
‘আমার বয়স হলেও,এখনও শক্তি কমেনি।তোর কি মনে হয়,তোকে বাইরে গিয়ে ঘোষণা দেওয়ার জন্য এতক্ষণ এগুলো বলেছি?উহুম..তোকে তো এখানে মে**রে তারপর গুম করবো,তাই বলেছি।ওই শরবতে আমি হাই ডোজের ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছি।ভাগ্যিস,তুই পুরোটা খাস নি।নইলে তো গল্প শোনার মধ্যেই ঘুমিয়ে যেতি।সমস্যা নেই,তোর ওই পা**গলা স্বামীকে নিয়ে এতো কষ্ট করতে হবে না।ও আরও পা**গল হবে।একসময় মা**রাও যাবে।তার আগে তোকে ওপারে পাঠাবো।’
বলেই নিধির চুলের মুঠি আরও শক্ত করে ধরে,টি-টেবিল থেকে গ্লাস এনে নিধির মুখে ধরতেই,
মুহূর্তেই কারও হাতের ধা**ক্কায় গ্লাসটি ফ্লোরে পড়ে ভে**ঙে কাচগুলো এদিক-সেদিক ছড়িয়ে গেলো।”
“আকস্মিক এহেন কান্ডে নিধি এবং ড.আজাদ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখলো,নির্জন হাতে ধা**রালো ছু**রি নিয়ে ঘাড় কাত করে ড.আজাদের দিকে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।”
“নির্জনের আকস্মিক উপস্থিতিতে বিস্ময়ের শেষ চূড়ায় পৌঁছালো,ড.আজাদ এবং নিধি।ড.আজাদ নিধির চুলের মুঠি ছেড়ে দিয়ে,কন্ঠে আ**তংক নিয়ে বললেন,
‘নির্জন,তুমি এখানে?’
“ড.আজাদের কথা শুনে,নির্জন হিং**স্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,
‘হুমম,আমি এসেছি..আমার নিরু আমাকে আ**ঘাত করে,আমার ফোন নিয়ে বাসা ছেড়ে পালিয়ে
গিয়েছিলো।কিন্তু বেচারি জানে না যে,আমার ফোনের সাথে ল্যাপটপের ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক কানেক্ট করা।সেখান থেকেই তো লোকেশন ট্র্যাক করে,আমি ওর অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারলাম।এরপর তোর এখানে এসে ভাবলাম,ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে যাবো।না বুঝতে চাইলে এই ছু**রি টা দিয়ে ভয় দেখিয়ে নিয়ে যাবো।কিন্তু এখানে এসে সবকিছু শোনার পর,মনে হলো,ছু**রিটাকে সঠিক কাজে ব্যবহার করতে পারবো।থ্যাংকস রে..জানিস,আমার না ইদানীং খু**ন করার জন্য হাত টা কেমন নিশপিশ করে।আর তোকে দেখেতো,তোর পুরো শরীরটাই লুফে নিতে ইচ্ছে করছে।আচ্ছা,তাহলে অপারেশন শুরু করি,কি বলিস?তাছাড়া,তুই যেই পাপ করেছিস,তার জন্য এতটুকু শাস্তিও কম হবে।তবুও আমি তোকে যথাযথ শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করবো।’
বলেই মুহূর্তেই ড.আজাদের বুকে ছু**রি দিয়ে টান দিলো নির্জন।
ড.আজাদ চি**ৎকার করে ফ্লোরে পড়ে যেতেই,নির্জন নিধির দিকে তাকিয়ে,ওর হাত ধরে ডাইনিং টেবিলের কাছে থাকা চেয়ারে বসিয়ে,পকেট থেকে রশি বের করে মুহূর্তেই ওর হাত-পা বেঁধে দিলো।তারপর কালো কাপড় দিয়ে ওর মুখ বেঁধে দিলো,যেন চি**ৎকার করতে না পারে।”
“নির্জনের এহেন কান্ডে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো নিধি।করুণ স্বরে ‘উম,উম’ শব্দ করতে যাবে,
ঠিক তখনই নির্জন নিধির গালে হাত রেখে মুচকি হেসে বললো,
‘হিসসস..আরও সাহসী হতে হবে তোমাকে।এখন তোমাকে লাইভ মা**র্ডার দেখানো হবে,যেনো ভবিষ্যতে তোমার আমাকে হেল্প করতে সমস্যা না হয়।’
বলেই নিধির ঘামে ভেজা কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে, ডক্টর আজাদের দিকে ঘাড় কাত করে হিং**স্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো।ড. আজাদ অজ্ঞাতসারে তাকাচ্ছিলো নির্জনের দিকে।নির্জন হঠাৎ তীব্রভাবে ড. আজাদের বুকে লাথি দিলো,আর তারপর শুরু হলো ধ্বং**সাত্মক যুদ্ধ।নির্জন অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ড.আজাদের হাত ধরে ফেলে এবং এক ঝটকায় ছু**রি দিয়ে ড. আজাদের ডান হাতের কব্জি লক্ষ্য করে আ**ঘাত করে।”
“ছু**রি একটানা টেনে নিয়ে ড. আজাদের হাত থেকে কব্জি সোজা কে**টে পড়ে।ফলে র**ক্তে ভিজে যায় পুরো ফ্লোর।ড. আজাদ তীব্র স্বরে চি**ৎকার করে ওঠে,কিন্তু নির্জন তার চি**ৎকারে আর কোনো সাড়া না দিয়ে,
ছু**রি নিয়ে ড. আজাদকে আরও একবার বুকে আ**ঘাত করে।ড.আজাদ তীব্র কষ্টে কুঁকড়ে ওঠে,কিন্তু নির্জন তার কা**টা বুক থেকে বের হওয়া তাজা র**ক্তের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি দেয়।”
“তারপর নির্জন তাকে আরো নৃ**শং*সভাবে আ**ক্রমণ করে।তার পায়ের হাঁটুতে ছু**রি দিয়ে এমন ভাবে আ**ঘাত করে,এতে ফ্লোরে র**ক্তের ফোয়ারা বয়ে যায়।”
“আর নির্জনের এই আ**ঘাতের মধ্য দিয়ে,ড.আজাদ একেবারে নিঃশেষ হয়ে পড়ে।তার শরীরের র**ক্ত গড়িয়ে পড়তে থাকে ফ্লোরে।ড.আজাদ চোখ জোড়া বন্ধ করার আগমুহূর্তে নির্জন ছু**রি দিয়ে তার চক্ষুদ্বয়ের কোটর থেকে সন্তর্পণে মনি দুটো বের করে আনে।তারপর এলোপাথাড়ি ভাবে ছু**রি দিয়ে তার পুরো শরীরে আ**ঘাত করতে থাকে নির্জন।যেনো খুব দ্রতু গতিতে সে শশার স্লাইস করছে।এভাবে একের পর এক আ**ঘাত করতে করতে,নির্জনের পুরো শরীর লাল র**ক্তে মাখামাখি হয়ে যায়।এদিকে এহেন দৃশ্য দেখে কয়েক মিনিট আগেই নিধি সেন্সলেস হয়ে যায়।”
“নির্জন কপালের র**ক্ত মুছে,নিধির দিকে একবার তাকিয়ে,ড.আজাদের ওপর নিজের করা আ**ঘাতগুলো দেখে,ঘাড় কাত করে বলে উঠলো,
‘এবার তুমি আর কাউকে ধ্বং**স করতে পারবে না,আজাদ।কারণ,তোমার নামের মতোই তোমাকেও আমি মুক্ত করে দিয়েছি,আজাদ।আজ থেকে তোমাকে এই নশ্বর পৃথিবী থেকে আজাদ(মুক্ত) করে দিলাম।হা হা হা…
‘একাধারে কথাগুলো বলেই ধীরে ধীরে নিধির দিকে এগিয়ে গেলো নির্জন।হাতে থাকা র**ক্তাক্ত ছু**রিটির দিকে তাকিয়ে,তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
‘কখনো ভাবিনি,তোর মাধ্যমে আমার প্রেয়সীর প্রাণও ঝরবে..’
#চলবে…
#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৫০(শেষ খন্ডের ১ম অংশ )
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]
[অনেক বড় পর্ব লিখেছি,তাই বাকিটা ১ঘন্টা পর দিবো]
“কখনো ভাবিনি,তোর মাধ্যমে আমার প্রেয়সীর প্রাণও ঝরবে..”
কথাগুলো বলেই নির্জন নিধির কাছে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে থাকা পানির গ্লাস থেকে হাতে পানি নিয়ে,নিধির চোখে কয়েকবার ছিটিয়ে দিতেই,ধীরে ধীরে নিধি চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো,চোখের সামনে র**ক্তমাখা পোশাকে দাঁড়িয়ে আছে নির্জন।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কিছুটা কপালে লেপ্টে আছে,কপালে ফোঁটা ফোঁটা র**ক্ত লেগে আছে,আর দুই গাল এবং চিবুকেও র**ক্তের ফোঁটা বিদ্যমান।”
“এগুলো দেখে রীতিমতো গায়ে কা**টা দিয়ে উঠলো নিধির।দুর্বল শরীর নিয়ে চেয়ার থেকে উঠতে গিয়ে দেখলো,ওর হাত-পা বাঁধা।ফ্লোরে থাকা ড.আজাদের লা**শটির দিকে তাকিয়ে,শরীর গুলিয়ে আবারও বমি-বমি ভাব হলো নিধির।নির্জনের দিকে ঘৃণার নজরে তাকিয়ে,মুখ দিয়ে ‘উমম’ শব্দ করলো।”
“নিধির অস্বস্তি হচ্ছে বুঝতে পেরে,নির্জন বাঁকা হেসে নিধির মুখের বাঁধন খুলে দিয়ে,হাতের ছু**রিটি নিধির চোখের দিকে তাক করে,গম্ভীর স্বরে বললো,
‘তোমাকে ছাড়তে পারি,তবে এক শর্তে।আগে বলো মানবে কিনা?যদি না মানো,তাহলে এখানেই তোমার মৃ**ত্যু নিশ্চিত,ডার্ক কুইন।’
“নির্জনের কথা শুনে চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো নিধির।বিস্ময়ের চাহনি নিক্ষেপ করে,নির্জনকে বললো,
‘নির্জন..আপনি অসুস্থ।ওই ডক্টর আপনাকে ভুল ওষুধ দিয়েছে।আ..আমার বাঁধন খুলে দিন প্লিজ।আপনি যে অন্যায়গুলো করেছেন,একটাও সুস্থ মস্তিষ্কে করেন নি।আমি আপনাকে সব বুঝিয়ে বলছি।আ..আর আমার শরীর খুব দুর্বল লাগছে।প্লিজ.. আমাকে ছেড়ে দিন।’
“নিধির অশ্রুতে ভেজা চোখজোড়া দেখে মন বিগলিত হলো না নির্জনের।সে রুঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,পানির গ্লাস নিধির মুখের কাছে নিয়ে বললো,
‘হা করো,তোমার গলা শুকিয়ে গেছে।স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে পারছো না।আর ওই ন**রপ**শুকে মে**রে,এখন নিজেকে সম্পূর্ন সুস্থ মনে হচ্ছে।আগে পানি খাও,তারপর বাকি কথা হবে।’
বলেই নিধির ঠোঁটের কাছে পানির গ্লাস স্পর্শ
করতেই,তৃষ্ণার্ত নিধি ঢকঢক করে পানি খেলো।”
“নির্জন পানির গ্লাস টেবিলে রাখতেই,নিধি কাঁপা-কাঁপা স্বরে বললো,
‘নির্জন,এখানে আমার খুব ভয় লাগছে।প্লিজ,আমার বাঁধন খুলে দিন।’
“নিধির কথা উপেক্ষা করে,বাঁকা হাসল নির্জন।অতঃপর ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে,নিধির হাত ধরে মুচকি হেসে বললো,
‘জানো,ডার্ক কুইন,ভেবেছিলাম এই ছু**রিটা দিয়ে এখন তোমার প্রাণ কেড়ে নেবো।কারণ,আজ তুমি পালিয়ে গিয়ে ভ**য়াবহ অন্যায় করেছো।কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম,
এখনও একজন কে মা**র্ডার করা বাকি আছে।আর সে হলো মেহরাব।এক কাজ করো,তুমি ওর বাসার ঠিকানা টা দিয়ে আমাকে সাহায্য করো।বাকি কাজ আমি একাই করতে পারবো।’
খুব স্বাভাবিক স্বরে কথাগুলো বললো নির্জন।”
“নির্জনের এহেন কথায় ফের কেঁপে উঠলো নিধি।নির্জনের দৃষ্টিভঙ্গি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করে,কিছু একটা ভেবে করুণ স্বরে বললো,
‘আচ্ছা,আমি মেহরাবের বাসার ঠিকানা দিবো এবং আপনার সাথে আমিও যাবো সেই বাসায়।আমিও আপনার সঙ্গী হবো,আপনাকে সাহায্য করবো।’
“নিধির এহেন কথা শুনে বেশ অবাক হলো নির্জন।মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,
‘সত্যি?সত্যি তুমি আমাকে সাহায্য করবে?এর মানে,তোমার সাহস হয়েছে,তাই না?দেখেছো,এইজন্যই তোমার সামনে লাইভ মা**র্ডার করলাম।নইলে তো ট্রেইনিং টা পাকাপোক্ত হবে না।আচ্ছা জানপাখি,তোমার বাঁধন খুলে দিচ্ছি।’
বলেই নির্জন নিচের দিকে তাকিয়ে নিধির হাত-পায়ের বাঁধন খুলতে থাকল।
এদিকে নির্জনের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নিধি।আজ যেন সে নিষ্প্রাণ।”
“নির্জন নিধির হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেওয়ার পর,নিধি নির্জন কে ম্লান হেসে বললো,
‘থ্যাংক’স,নির্জন।এতক্ষণ আমার সত্যি খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো।এখন একটু শান্তি লাগছে।’
“নির্জন মুচকি হেসে,পরনের শার্ট খুলে ফেলে ফ্লোরে ছুঁড়ে মা**রলো।অতঃপর প্যান্টের পকেট থেকে শুভ্র রঙা রুমাল দিয়ে চেহারায় লেপ্টে থাকা র**ক্ত মুছে,সেটাও ফ্লোরে ছুঁড়ে দিয়ে,নিধিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,ওর কানের কাছে এসে হাস্কি ভয়েসে বললো,
‘এখন আমারও খুব শান্তি লাগছে নিরু।কত সময় পর এই বুকে এক চিলতে শান্তি পেলাম,বলোতো?আজ রাতের পর,আমরা অনেক দূরে চলে যাবো বুঝলে?যেখানে পরিচিত কেউ আমাদের খুঁজে পাবে না।আমাদের মাঝে কোনো তৃতীয় ব্যক্তির ছায়াও আসবে না।বলো,যাবে আমার সাথে?’
“নিধি নির্জনের ঘামে ভিজে থাকা বুকে মাথা ঠেকিয়ে,চোখজোড়া বন্ধ করে বললো,
‘হুম,অনেক দূরে চলে যাবো নির্জন।আপনি যা
বলবেন,তাই হবে।তার আগে এখান থেকে আমায় নিয়ে চলুন,নইলে যেকোনো সময় পুলিশ চলে আসতে পারে।’
বলেই চোখের পানি মুছলো নিধি।”
“নির্জন নিধির কপালে আলতো করে চুৃমু দিয়ে বললো,
‘বাহ!তোমার দেখছি বেশ বুদ্ধি হয়েছে।হুম,চলো জানপাখি।’
বলেই সদর দরজা পেরিয়ে আগে-আগে হাঁটতে থাকল নির্জন।
গাড়ির কাছে গিয়ে,গাড়ির দরজা খুলে,পেছনে তাকাতেই দেখলো,নিধি এলোমেলো পায়ে বিপরীত দিকে থাকা সরু একটি রাস্তা দিয়ে দৌঁড়ে যাচ্ছে।”
“নিধির এহেন কান্ড দেখে মেজাজ বিগড়ে গেলো নির্জনের।গাড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবলো,
‘এই রাস্তা দিয়ে এই গাড়ি যাবে না।উফফ..কাজ টা তুৃৃমি ভালো করলে না,ডার্ক কুইন।অবশেষে নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই জড়িয়ে গেলে।আমার সাথে মিথ্যা নামক প্রতারণা করার শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।আর সেটা হলো মৃ**ত্যু।আজ না হয় আমাদের জীবনের শেষ প্রতিযোগিতা হবে।’
ভেবেই নিধির পেছনে নির্জনও ছুটলো।”
“এদিকে সরু রাস্তা দিয়ে দৌঁড়ানোর পর,নিধি পাশে একটা জঙ্গলের মতো দেখতে পেলো।পেছনে একবার তাকিয়ে দেখলো,কেউ নেই।ভাবলো,
‘যেকোনো সময় নির্জন চলে আসতে পারে।আমাকে এই জঙ্গলেই লুকাতে হবে।’
ভেবেই গহীন একটি জঙ্গলের মধ্যে এলোমেলো পা ফেলে দৌঁড়াতে থাকল নিধি।চোখে-মুখে আ**তংকের ছাপ স্পষ্ট।এ যেনো নিধির দেখা সেই প্রথম স্বপ্নের কাহিনী বাস্তবায়ন হচ্ছে।দৌঁড়ানোর সময় বারংবার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে নিধি।কিন্তুু বারবার একটা ধোঁয়াশা অবয়ব কে পেছনে দৌঁড়ে আসতে দেখছে।নিধি আরও জোরে দৌঁড়াতে থাকল।কিন্তুু কিছুতেই সে সামনে এগিয়ে যেতে পারছে না,হৃদস্পন্দন যেন ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।হঠাৎ কালো অবয়ব টি নিধির সামনে এসে,ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।অতঃপর ওর কোমল ওষ্ঠদ্বয় খুব সন্তর্পণে আঁকড়ে ধরলো।শত চেষ্টা করেও নিধি ছুটতে পারলো না।অবয়ব টি যেনো তার শীতল ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা তার শেষ তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত।নিজের তৃপ্তি মিটিয়ে,জঙ্গলের দা**নবাকৃতির গাছ ভেদ করে,জোছনার আবছা আলোতে কালো অবয়ব টি নিধি কে ছেড়ে দিয়ে ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হলো।অবয়ব টি পুরোপুরি দৃশ্যমান হতেই,নিধি বিস্ময়কর স্বরে বলে উঠলো,
‘নির্জন আপনি?’
“অপরপাশ থেকে র**ক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে;উত্তেজিত স্বরে নির্জন বলে উঠলো,
‘কি ভেবেছিলে?তোমায় ধরতে পারবো না?হা হা হা..আবারও বিশ্বাস করে শেষ সুযোগ দিয়েছিলাম তোমায়।কিন্তুু তুমি কি করলে?আমার বিশ্বাস নিয়ে খেললে?আচ্ছা,ডার্ক কুইন তুমি কেনো আমার থেকে দূরে যেতে চাইছো?না না না..আর তোমাকে কষ্ট করে দূরে যেতে হবে না।আমরা এখনই অনির্দিষ্টকালের জন্য পরপারে চলে যাবো।আর ইউ রেডি মাই ডার্ক কুইন?’
বলেই নির্জন পেছন থেকে সেই চকচকে ধা**রালো ছু**রি বের করে যখনই নিধির পেটে তাক করবে,ঠিক তখনই নির্জন কে পেছন থেকে কেউ একজন নির্জনের মাথায় আ**ঘাত করলো।আর নির্জন তীব্র চি**ৎকার করে মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শুকনো পাতার ওপর পড়ে গেলো।ধীরে ধীরে তার চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেলো।
এদিকে জোছনা রাত হওয়ায় জঙ্গলের গাছের ফাঁক থেকে চাঁদের আলোতে সামনের অবয়ব টি আঁচ করতে কষ্ট হলো না নিধির।ঘন ঘন শ্বাস ফেলে,উত্তেজিত স্বরে বলে উঠলো,
‘মেহরাব,আপনি এখানে?’
“নিধি বলতেই,মেহরাব তার হাতে থাকা শুকনো,সরু ডাল টি ফেলে দিয়ে,নিধির কাছে এসে ভরসার স্বরে বললো,
‘নিধি,ডোন্ট ওয়ারি।ও আর তোমার কোনো ক্ষ**তি করতে পারবে না।আমি যখন স্যারের বাসায় ঢুকতে যাবো,ওই সময় দেখি নির্জন গাড়ির কাছে এসে দাঁড়িয়েছে,আর তুমি সরু পথ দিয়ে দৌঁড়ে যাচ্ছো।কিছুক্ষণ পর দেখলাম,নির্জন ও তোমার পেছনে ছুটে গেলো।তাই আমিও তোমাদের ফলো করি।আর ও তোমাকে আ**ঘাত করতে নিলে,আমি তৎক্ষনাৎ সামনে থাকা গাছের সরু ডাল দিয়ে ওর মাথায় আ**ঘাত করি।আজ আমি সঠিক সময়ে না পৌঁছালে হয়তো অঘটন হয়ে যেতো।আল্লাহ যে এখনও তোমায় ভালো রেখেছেন,তার জন্য শুকরিয়া।আর আমি পুলিশ কে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি।’
বলেই ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ফেলে মাটিতে পড়ে থাকা নির্জনের ক্লান্ত মুখস্রির দিকে তাকালো মেহরাব।”
“এদিকে মাটিতে অচেতন হয়ে শুয়ে থাকা নির্জনের ঘুমন্ত মুখমণ্ডল দেখে,নিধি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।এক পর্যায়ে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে,নির্জনের বুকে হাত জোড়া রেখে গগনবিদারী চি**ৎকার দিয়ে উঠলো নিধি।
কিছুক্ষণ পর সেখানে পুলিশ এসে হাজির হলো এবং কয়েক ঘন্টা পর নিধির কাছ থেকে ড.আজাদ কে মা**র্ডার করার বিষয়ে স্বীকারোক্তি নিয়ে,নির্জন কে নিয়ে গেলো।”
———–
“কে**টে গেলো ১৭দিন।এই ১৭দিনে ঘটে গেছে অনেক কিছু।নির্জনের মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে,তাকে মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করা হয়।সেখানে তার আরও কিছু টেস্ট করার পর,তার মানসিক জটিলতার অবস্থা জানতে পেরে ডক্টররা বেশ অবাক হয়ে যায়।তারা ড.আজাদের এই কাজটিকে ‘বি**কৃত মস্তিষ্কের কাজ’ বলে আখ্যায়িত করেন।
টিভির নিউজ এবং পেপারেও এই খু**নের ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে।”
“সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি ছড়িয়ে পড়তেই,কেউ কমেন্ট করে,
‘ডক্টরের এমন মৃ**ত্যুই কাম্য ছিলো।’
কেউ কেউ আবার নির্জনের এই মা**র্ডারটির ভ**য়াবহতা সম্পর্কে নিজেদের অনুভূতি গুলো ব্যক্ত করে।”
“এদিকে নিধিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে,নিধি কান্নারত অবস্থায় নির্জনের করা প্রতিটি খু**নের বিবরণ দেয়।কিন্তু,তার কাছে কোনো প্রমাণ নেই।”
“পুলিশ ড.আজাদের মা**র্ডার ব্যতীত নির্জনের বিরুদ্ধে আর কোনো প্রমাণ খুঁজে পায় নি।”
” ১৫ দিন পর নির্জন কিছুটা স্বাভাবিক হলে,পুলিশ তাকে রিমান্ডে নিয়ে রিমন হ**ত্যা থেকে শুরু করে,সবকিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলে,সে শুধু ড.আজাদের খু**নের ঘটনা স্বীকার করে।বাকি মা**র্ডার গুলো আত্মবিশ্বাসের সাথে অস্বীকার করে।”
“নির্জনের কাছ থেকে কথা বের করার জন্য পুলিশ তাকে উত্তম-মধ্যম দেয়।কিন্তু সে তার কথায় অনড় থাকে।
এতে পুলিশও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়।কারণ,তাদের কাছেও কোনো প্রুভ নেই।তাছাড়া নিধির দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী পুলিশ নির্জনের বাসায় গিয়েও কোনো প্রমাণ না পেয়ে,হতাশ হয়ে ফিরে আসে।এক মুহূর্তের জন্য নিধিকেই তারা মানসিক রোগী ভেবে নেয়।”
“অবশেষে ১৭দিন পর,আদালতের কাঠগড়ায় দুইজন চিরচেনা মুখ একে-অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
সাক্ষীর আসনে দাঁড়িয়ে,নিধি নির্জনের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আর আসামীর আসনে দাঁড়িয়ে থেকে,নির্জন নিধির দিকে গভীর চাহনি নিক্ষেপ করে আছে।সেই দৃষ্টিতে যেন কোনো ঘৃণা বা ক্ষোভ নেই।আছে শুধু প্রিয়জনকে দীর্ঘ সময়ের জন্য হারানোর তুৃুমুল যন্ত্রণা।”
“আদালতে আসা সদস্যদের মধ্যে চেয়ারে বসে আছে নিধির মা তাহমিনা বেগম,দিগন্ত,নাদিয়া,মাহির,তোহা এবং মেহরাব।এই ১৭দিনে নির্জনের বিষয়টি নিয়ে ভেবে-ভেবে, তারাও যেন মানসিক অবসাদে ভুগেছে।তবুও নিধিকে সর্বোচ্চ দিয়ে সাপোর্ট করার জন্য তারা যেন অনড় ছিলো।
ইতোমধ্যে,আদালতের কাজ শুরু হয়ে গেছে।নিধি কাঁপা গলায় বিচারকের সামনে তার সাক্ষ্য দিচ্ছে।”
“নির্জনের পক্ষের সরকারি উকিল,নিধিকে উদ্দেশ্য করে,তার করা অভিযোগগুলো সম্পর্কে বর্ণনা দিতে বললো।”
“নিধি ফোলা চোখে একবার নির্জনের দিকে
তাকিয়ে,পরক্ষণেই চোখ নামিয়ে,খু**নের বিবরণগুলো বলতে শুরু করলো।তারপর আবারও বললো,
‘আমি সব নিজের চোখে দেখেছি, সে খু**ন করেছে।তার শার্টে র**ক্তের দাগ… সবকিছু আমি দেখেছি।নিধি চি**ৎকার করে একই কথা বলতে থাকল,
‘আমাকে বিশ্বাস করুন,আমি সত্য বলছি।তার বাসায় ২টা ল্যাবরেটরী রুম আছে।সেখানে সব কিছু রাখা আছে।এমনকি সেই লা**শগুলোও কফিন এবং আলমিরাতে রাখা আছে।আমি নিজে চোখে দেখেছি।
আমি তাকে ভালোবাসলেও,তার অন্যায়গুলোকে কখনোই প্রশ্রয় দিবো না।’
বলেই চোখের পানি মুছলো নিধি।”
“নিধির কথাগুলো শুনে সরকারি উকিল ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
‘বিচারক মহাশয়,আসুন আমরা সেই রুম দু’টির কথা বলি,যেখানে আমার মক্কেলের স্ত্রী দাবি করছেন খু**ন হয়েছে।মজার বিষয় হলো,মিসেস নিধির কথা শুনে তদন্ত কমিটি নির্জনের বাসায় সেই রুম দুটি তে গিয়ে সেখানে পুরনো কাপড়,ধুলা,আর মাকড়সার জাল ছাড়া আর কিছু পায়নি।মাকড়সার জাল দেখলেই বোঝা যায়,বহুদিন ধরে রুমটিতে কেউ যায়নি।এই নিন সেই রুম দু’টির কিছু ছবি।’
বলেই বিচারকের নিকট সেই ছবিগুলো দিলো।”
“এদিকে নিধি,উকিলের এহেন কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো।ভাবলো,
‘এটা কিভাবে সম্ভব?আমার দেখা,ভুল হতেই পারে না।’
ভেবে মাথায় হাত দিলো নিধি।”
“জজ কিছুক্ষণ নীরবে বসে থাকলেন।নিধির চোখে জল জমে উঠেছে।সে বুঝতে পারলো,তার কথা কেউ বিশ্বাস করছে না।রুমের সমস্ত প্রমাণ ধ্বং**স করা হয়েছে।নিধির মুখে চি**ৎকার আছে,কিন্তু তার প্রমাণ নেই।”
“এদিকে নিধির সেই স্তম্ভিত চেহারা দেখে,নির্জন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বাঁকা হাসি দিলো।চলে গেলো ফ্ল্যাশব্যাকে।”
“ফ্ল্যাশব্যাক-
“সেদিন রাতে নিধি নির্জনের বুকে সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাওয়ার পর,নিধিকে রুমে শুইয়ে দিয়ে,নির্জন ভাবলো,যদি নিধি কোনোদিন সব কিছু প্রমাণ সহ পুলিশের কাছে বলে দেয়,তাহলে নিধিকে সে সারাজীবনের জন্য হারাবে।তাই যে করেই হোক,এইসব প্রমাণ লোপাট করতে হবে।যেই ভাবা সেই কাজ।”
“নির্জন শুরু করে তার পরিকল্পনার প্রথম ধাপ।সে ভাবতে থাকে,
‘লা**শগুলোকে চিরতরে মুছে ফেলতে হবে,যেন কোনো চিহ্ন না থাকে।’
“সে রাতে,গাড়িতে এক এক করে ৫টি লা**শ গাড়ির ডিকি তে ভরে,১ঘন্টা জার্নি করে,চুপিসারে লা**শগুলো নিয়ে যায় নদীর ধারে।নদীর ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে সে ল্যাবরেটরী রুম থেকে আনা এ**সিডের বোতলগুলো খুলে লা**শগুলোতে ঢেলে দেয়।এ**সিডের গন্ধ,লা**শের পোড়া মাংসের ধোঁয়া মিশে যায় বাতাসে।এবং লা**শগুলোও একে একে বালির সাথে মিশে গিয়ে ধ্বং**স হয়ে যায়।আর সেগুলো দেখে তৃপ্তির হাসি দেয় নির্জন।কারণ তার সব প্ল্যান চলছে নিখুঁতভাবে।
অতঃপর রাতের নিস্তব্ধতা শেষ হতে না হতেই,নির্জন ফিরে আসে তার রুমে।”
“এইবার তার দ্বিতীয় কাজ হলো,রুম থেকে সমস্ত প্রমাণ মুছে ফেলা।
সে প্রথমেই খু**নের সরঞ্জামগুলো এক এক করে ভে**ঙে ফেলে।হ্যামার দিয়ে মা**রার পর যেসব অংশ ভে**ঙে গিয়েছে,সেগুলো প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে অনেক দূরে জঙ্গলে ফেলে আসে।
তারপর রুমের সবকিছু নতুনভাবে সাজায়।আলমিরাতে রেখে দেয় কিছু পুরনো আসবাবপত্র,কিছু পুরনো দিনের জামাকাপড়।যেন রুমটা দেখলেই মনে হয়,বহুদিন ধরে এটি ব্যবহার করা হয়নি।
সবশেষে,একটি ছোট্ট মেশিন ব্যবহার করে মাকড়সার জাল তৈরি করে দেয়।জালগুলো এমনভাবে বোনা,যেন সত্যিই বছরের পর বছর কেউ এই রুমে প্রবেশ করেনি।
রাতের কাজ শেষ করে নির্জন এক গ্লাস পানি খেয়ে,সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নিধির পাশে এসে শান্তির ঘুম দেয়।”
“অতীতের স্মৃতিচারণগুলো করে আবারও ডেভিল হাসল নির্জন।”
“এদিকে নিধির পক্ষের উকিল বিচারক কে নির্জনের নৃ**শংস খু**নের বিবরণ দিয়ে,তার ফাঁসির দাবি করছে।অপরদিকে,সরকারি উকিল নির্জনের মানসিক রোগের সমস্ত রিপোর্ট,এবং তার অতীত কাহিনী থেকে শুরু হওয়া এই পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সকল কাহিনী বিস্তারিত বর্ননা করলেন।”
“এদিকে নির্জনের অতীত কাহিনীগুলো শুনে আদালতে থাকা বিচারক থেকে শুরু করে,সকল সদস্যদের চোখজোড়া ছলছল করে উঠলো।কিন্তু সবকিছুর পরেও নির্জন আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে।যদিও সেটা অসুস্থতা বশত।কিন্তু আইনের চোখে সবাই সমান।কোনো অপরাধী আইনের বেড়াজাল থেকে ছাড় পাবে না।”
“আদালতের পরিবেশ থমথমে।সবাই নিঃশব্দে অপেক্ষা করছে চূড়ান্ত রায়ের।কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে নির্জন,তার মাথা নত।তার সামনে নিধি দাঁড়িয়ে আছে।তার চোখে দেখা যাচ্ছে অশ্রুর মেঘ।বিচারক একটু থেমে ঘোষণা করার চেষ্টা করছেন নির্জনের শাস্তি,কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে কিছু একটা ঘটে গেলো।”
” সবাইকে অবাক করে দিয়ে,নির্জন কাঠগড়া থেকে নেমে, সামনে থাকা একজন কনস্টেবলকে ধা**ক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।তার এই আচরণে সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেলো।কিছুক্ষণের জন্য সবাই জমে গেলো,যেন কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছে না,কি হলো!”
“নির্জন তীব্র গতিতে নিধির দিকে এগিয়ে গিয়ে,তাকে হতবাক করে দিয়ে,নিধিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তার ঠোঁট নিধির কানের কাছে নিয়ে গিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলে উঠলো,
‘তুমি মাস্ক ছাড়া এসেছো কেনো?দেখছো না,বিচারক থেকে শুরু করে সবাই তোমার দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে?কতবার করে বলেছি,আমাকে ছাড়া এই মুখ তুৃমি কাউকে দেখাবে না।কবে তুমি আমার কথা শুনবে বলোতো?তোমার কি মনে হয়,ওই পঁচা বিচারক আমায় ফাঁসির আদেশ দিবে?দিক,কোনো সমস্যা নেই।
কিন্তুু আমি বেঁচে থাকতে কেউ তোমায় দেখবে না,কেউ তোমায় ছুঁতে পারবে না।আমি আছি,আমি থাকবো,ডার্ক কুইন।’
বলেই নিধির কপালে আলতো করে চুম্বন দিয়ে।আবারও জড়িয়ে ধরে বিড়বিড় করে বলতে থাকল,
‘কেউ দেখবে না,কেউ না..।আমি তোমাকে ঢেকে রাখার জন্য আছি তো।তোমার মায়াবী মুখস্রি ঢেকে রাখার জন্য আমার বুকই যথেষ্ট।’
“নির্জনের এহেন কান্ডে,নির্জনের বুকে মাথা রেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো নিধি।তার ভেতরের ভ**য়াবহ যন্ত্রণা যে সে চেয়েও বোঝাতে পারছে না।”
“এদিকে আদালতে শোরগোল শুরু হলো।বিচারক সবাই কে থেমে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।২জন কনস্টেবল নির্জন কে টেনে-হিঁচড়ে নিধির থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে,ওর হাত জোড়ায় হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে দিলো।কয়েক মিনিট চি**ৎকার করার পর নির্জন কিছুটা স্থির হতেই,
আদালতের পরিবেশ আবারও নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।সবাই অপেক্ষা করছে চূড়ান্ত রায়ের জন্য।কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে নির্জন,তার মুখে কোনো অনুশোচনার ছাপ নেই।ঠোঁটের কোণে হিং**স্র হাসি।চোখে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি,যেন সে যা করেছে তাতে তার কোনো অনুতাপ নেই।বিচারক তার জায়গায় বসে নীরবে চিন্তা করছেন।ড.আজাদের নৃ**শংস হ**ত্যাকাণ্ড এবং অন্যান্য মামলার আলোচনা শেষ।কিন্তু নিধির অভিযোগ এবং সব সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে একটি মাত্র খু**ন প্রমাণিত হয়েছে,ড. আজাদের খু**ন।”
“বিচারক কিছুক্ষণ নীরবে সব শুনে এবং মামলার নথি দেখে রায়ের জন্য কলম হাতে তুলে নিলেন।পুরো আদালত অপেক্ষায় আছে।সবার নিঃশ্বাস যেন আটকে আছে।সেই সাথে নিধির চোখ বেয়ে পড়ছে অনবরত পানি।”
“বিচারক টেবিলে হাতের মুষ্টি রেখে একটু ঝুঁকে বললেন,
‘আসামি নির্জন,তোমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ পরীক্ষা করার পর,আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে,তুমি ড. আজাদকে নি**র্মমভাবে খু**ন করেছো।মামলায় অন্য হ**ত্যার অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয়নি,কিন্তু ড.আজাদের মৃ**ত্যুর ঘটনায় সমস্ত প্রমাণ তোমার বিপক্ষে।”
“বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ধারা ৩০২ মোতাবেক,ইচ্ছাকৃত খু**নের শাস্তি হিসাবে তোমার মৃ**ত্যুদণ্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।কিন্তু,আসামি নির্জনের মানসিক অবস্থার বিশেষ বিবেচনায়,এবং তার অপরাধের ধরন দেখে আদালত এটিকে সাধারণ খু**ন হিসেবে না দেখে,সাইকোলোজিক্যাল কেস হিসেবে বিবেচনা করছে।ধারা ৮৪ অনুযায়ী,যে কোনো মানসিক অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার মানসিক অবস্থার বিচার করা হয়,এবং শাস্তির সিদ্ধান্ত সেভাবে নেওয়া হয়।’
বলেই বিচারক কিছুক্ষণ থামলেন,যেন সবার মনে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিচ্ছেন।তারপর তর্জনী দিয়ে চশমা টা ঠিকঠাক করে,আবারও বললেন,
‘আদালত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে,আসামি নির্জনকে প্রথম ৫ বছর মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে।চিকিৎসা শেষে,যদি চিকিৎসক দল তার মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে ঘোষণা করে,তবে বাকি ৫ বছর তাকে কারাগারে রাখা হবে।যদি তার মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল না হয়,তবে চিকিৎসার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে।’
“অতঃপর বিচারক তার কণ্ঠকে আরও দৃঢ় করে বললেন,
‘আদালত বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ধারা ৮৪, ৩০২ এবং ধারা ৩২৫ অনুযায়ী এই রায় ঘোষণা করছে।আসামি নির্জনকে মোট ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো।এর মধ্যে প্রথম ৫ বছর মানসিক হাসপাতাল এবং পরবর্তী ৫ বছর কারাগারে কা**টাতে হবে।’
বিচারকের হাতের কলম টেবিলে পড়ে গেলো।পুরো আদালত নীরব হয়ে গেলো।যেন শাস্তি ঘোষণার ওজন সবাই অনুভব করছে।নির্জন একটু মুচকি হাসল,যেন এই শাস্তি তার কোনো ভয় বা কষ্টের কারণ নয়।এগুলো তার কাছে কোনো ব্যাপারই নয়।”
“নির্জন নিধির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো,
‘হাসপাতাল হোক বা জেল,আমি সবকিছুই উপভোগ করবো।কিন্তু তুমি … তুমি তো আমার থেকে পালাতে পারবে না,ডার্ক কুইন।আমি ফিরে আসবো,আমি আবার তোমার কাছে আসবো।’
“আদালতের পরিবেশ একদম নীরব হয়ে গেছে।আকস্মিক,নির্জন নিধির দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
“আমার প্রেয়সী,তুমি যতই পালাতে চাও,আমি আছি তোমার ছায়ায়,তোমার ঘুমে,তোমার স্বপ্নে,
আমি থাকবো পাশে,সবসময়।
রাতের গভীর অন্ধকারে,তোমার মনে আমি চুপচাপ,
মনে মনে আমার হাতে,চিরকালই থাকবে তোমার প্রতিটি ধাপ।
তুমি ভাবো যতই তুমি দূরে চলে যাবে,
তোমার হৃদয়ে আমি আছিই,এ ছাড়া আর কিছু নেই।
ভালোবাসা নয়,এটা অভিশাপ,এক কঠিন শিকল,
তুমি চাইলে যতই পালাও,আমি ছেড়ে দেবো না তোমার বাঁধন।
স্বপ্নেও তুমি দেখবে আমাকে,আমি ছড়িয়ে যাবো তোমার মনে,
কখনও পারবে না তুমি ভুলতে,আমার ভালোবাসার শিখা,তুমি জানো না আমি কেমন….?”
~মেহের~
“নির্জনের এহেন কবিতা শুনে,নিধি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।তার চোখের কোণে পানি জমে গেছে।তার নিঃশ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে গেলো।হয়তো নির্জনের প্রতিটি শব্দ তাকে আরও গভীরভাবে ঘিরে ধরছে।নির্জন আবার এক মুহূর্তের জন্য তার দিকে তাকিয়ে হাসলো।কারণ সে জানে,নিধির মুক্তি কখনও হবে না।
নিধির চোখে পানি জমে গেলো,সে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।আদালতের কক্ষ ভরে উঠল কোলাহলে,কেবল নির্জনের কণ্ঠ সবার কানে পৌঁছালো।এক সময় সেই সময়টাও ধীরে ধীরে ফুরিয়ে এলো।দীর্ঘ সময়ের জন্য দুটি দেহ একে-অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো।আবারও কি এক হবে তারা?আবারও কি ফিরে আসবে সেই সুখময় দিন?যেখানে নিধি তার কল্পনার রাজ্যে এক সুন্দর স্বপ্ন সাজিয়েছিলো তার পা**গল প্রেমিক কে নিয়ে!”
*
*
*
———-
“সময়ের সাথে তাল মেলানো দায়,
স্বপ্নগুলো ঝরে যায় কাঁটার মতো,
বাঁচতে চাওয়ার লড়াইটা আজকাল বড়োই কঠিন হয়।
কে**টে গেলো ১০টি বছর।এই ১০টি বছরের একেকটি দিন,একেকটি রাত ছিলো নিধির কাছে তীব্র যন্ত্রণার।তারই সমপরিমাণ কষ্ট পেয়েছে নির্জনও।মাঝে মাঝে নির্জনের সাথে দেখা করতে গিয়েছে নিধি।প্রথমদিকে নির্জন অনেক পা**গলামি করলেও,চিকিৎসকদের সঠিক চিকিৎসায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়েছে নির্জন।এখন আর নির্জন তার মন এবং হৃদয়ের সাথে কথা বলে না।সে যেন আর ৫জন স্বাভাবিক মানুষের মতই ব্যবহার করে।কিন্তু নিধির প্রতি পা**গলামি ভালোবাসা এখনও অবিচল,যদিও সেটা সবার আড়ালে।”
“নির্জন জেলে যাওয়ার পর নিধির পরিবারের পাশাপাশি,মেহরাবও নিধিকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছে।
অতঃপর মেহরাব মনোবিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য লন্ডন যাওয়ার আগে,নিধিকে একটি চিঠি দিয়ে যায়।
নিধি সেই চিঠি পড়ে হতবাক হয়ে যায়।চিঠিতে লেখা ছিলো,
“প্রিয় নিধি,
তোমার কাছে একটি দীর্ঘ চিঠি রেখে যেতে যাচ্ছি,আর জানি না,এই চিঠি তুমি কখন পড়বে।কিন্তু যখন পড়বে,তখন হয়তো আমি এই দেশে থাকব না।কিছু কথা হয়তো তুমি জানো,আবার কিছু হয়তো জানো না।কিন্তু আজ,এই মুহূর্তে,তোমার কাছে আমি সব খুলে বলতে চাই।
অনেক আগে থেকেই আমি তোমায় ভালোবাসি,নিধি।যখন আমরা প্রতিবেশী ছিলাম,তখন আমি আমার মনটা তোমার কাছে খুলে দেওয়ার সাহস পাইনি।তবে এই যে সময় চলে গেলো,আমি উপলব্ধি করেছি,এখন কিছু কথা বলার,কিছু অনুভূতি প্রকাশ করার সময় এসেছে।তোমার পাশে থাকলে অনেক কিছুই বলার ইচ্ছে ছিলো,কিন্তু শঙ্কা ছিলো যেন না কখনো হারিয়ে ফেলি তোমাকে।কিন্তু মনে হয়,আমার অনুভূতিগুলো বলা জরুরি ছিলো,একবার হলেও।হয়তো কথাগুলো বললে,আজ তুমি পুরোপুরি আমার হতে।
জানো,তোমার বিয়ের খবরটা শুনে আমি খুব ভে**ঙে পড়েছিলাম।এটা এমন এক খবর ছিলো,যেটা আমি কোনোদিন কল্পনা করিনি।তুমি অন্য কারো হয়ে গেলে,এটা আমার হৃদয়ে এক অদ্ভুত ক্ষ**ত সৃষ্টি করেছিলো,যেটা কোনোদিন ভরতে পারবে না।আমি তোমার সুখের জন্য অবশ্যই খুশি,কিন্তু আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না।আমার পৃথিবী যেন এক মুহূর্তে অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।
তবে জানো,নিধি,ভালোবাসা কখনো একরকমের নয়।কিছু ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না,কিন্তু সেই অপূর্ণ ভালোবাসার মধ্যেই এক ধরনের শান্তি লুকিয়ে থাকে।আমি জানি তুমি ভালো থাকবে,আমি জানি তুমি সুখে থাকবে,আর তার মধ্যে আমি আমার ভালোবাসার শেষ দাগ রেখেই নিশ্চিন্ত হতে পারি।
তোমার জন্য কিছু ছন্দ লিখে যাচ্ছি,জানি না কখনো তুমি এগুলো পড়বে কিনা,
“তুমি,যেমন বৃষ্টি,মাটির স্নিগ্ধতা,
যেমন আলো,অন্ধকারের মাঝে এক আশার কণা।
তুমি,যেমন পাখি,আকাশে উড়ে চলে,
যেমন স্বপ্ন,কখনো জাগ্রত,কখনো হারিয়ে যায়।”
আর কিছু বলার নেই,নিধি।আমি জানি,তুমি কখনো বুঝবে না,কিন্তু এই চিঠির প্রতিটি শব্দই আমার হৃদয়ের গভীরতা থেকে উঠে এসেছে।
তোমার জন্য শেষবারের মতো একটাই বাক্য লিখছি,
“Some love remains incomplete,yet in that incompleteness,there lies a certain peace.”
আমি জানি,তুমি নিজেই একদিন এই শান্তির অর্থ বুঝবে।আমার কথা মনে রেখো,এবং যদি কখনো আমার সাহায্যের প্রয়োজন হয়,তুমি জানো আমি কোথায় আছি।
ইতি তোমার অজানা ভালোবাসা,
মেহরাব”
পুরো চিঠিটি পড়ে নিধিও কান্না করেছিলো।কিন্তু তার মন তো এক পুরুষেই আটকে আছে।”
————
“দীর্ঘ ১০বছর পর থানার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে নিধি,তাহমিনা বেগম,দিগন্ত,নাদিয়া এবং ওদের একমাত্র ছেলে-সীমান্ত ইসলাম নাভীন।ওর বয়স সাড়ে ৯বছর।
আর তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে তোহা এবং মাহিরের একমাত্র ছেলে-মিহাদ ইসলাম তাহির।ওর বয়স ৮বছর ৬মাস।”
“থানার সব নিয়ম-নীতি মেনে নির্জনকে থানার বাইরে নিয়ে আসা হলেই,দিগন্ত ছুটে গিয়ে নির্জন কে জড়িয়ে ধরে।
নির্জনও বহুবছর পর প্রিয় বন্ধুটিকে খুশি মনে জড়িয়ে ধরে।
আজ এই স্পর্শে নির্জনের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখতে না পেয়ে ভীষণ শান্তি পায় দিগন্ত।একে-একে সবার সাথে কথা বলে,নিধির সামনে এসে নির্জন মুচকি হেসে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করে,
‘সবারই দেখছি বাচ্চারা বড় হয়ে গেছে।আমাদের টা কবে হবে,হুম?’
“এতদিন পর প্রথম সাক্ষাতে নির্জন যে এমন কথা বলবে,কল্পনা করেনি নিধি।মন খারাপ করে ভাবতে থাকল,১০ বছর আগে তার পেটেও তো একটি ভ্রুনের সৃষ্টি হয়েছিলো।কিন্তু অতিরিক্ত জার্নি এবং মানসিক অবসাদের কারণে,নির্জন জেলে যাওয়ার ১৫দিন পর,ভ্রুন টি নিঃশ্বেস হয়ে যায়।’
কথাগুলো ভাবতেই চোখের কোণে পানি জমে গেলো নিধির।”
“নিধি নির্জনের হাত ধরে মৃদুস্বরে সেই ভ্রুনটির কথা বললো।সবকিছু শুনে নির্জনের হাসি মুখ টা সেখানেই চুপসে গেলো।”
“নির্জন,নিধির হাত শক্ত করে ধরে বললো,
‘সব হবে।আবার নতুন করে আমাদের স্বপ্নের জগৎ গড়বো।সেখানে থাকবে শুধু সুখ আর সুখ..ডার্ক কুইন।’
#চলবে…
#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৫০(অন্তিম অংশ)
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]
‘সব হবে।আবার নতুন করে আমাদের স্বপ্নের জগৎ গড়বো।সেখানে থাকবে শুধু সুখ আর সুখ..ডার্ক কুইন।’
———-
“নির্জন জেল থেকে বের হওয়ার এক মাস পর নিধি ড.মায়ার সাথে দেখা করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।এবং তার চেম্বারে বসে গল্প জুড়ে দেয়।ঠিক সেই সময় পেছন থেকে একটি পুরুষালি গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসে।
‘মায়া,তুমি এই পেশেন্টের সাথে এত গল্প জুড়ে দিয়েছো কেনো?তোমাকে তো বলেছি,প্রয়োজনের অধিক সময় কারো সাথে কথা বলবে না।তোমার মনের সব কথা শুধু আমার সাথে বলবে।’
“আকস্মিক এহেন কথায় নিধি পেছনে ফিরে তাকিয়ে বললো,
‘নিশাদ আঙ্কেল আপনি এখানে?’
“নিশাদ রহমান নিধির দিকে এক পলক বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে,পরক্ষণেই ড.মায়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘৫মিনিট সময় দিলাম।তাড়াতাড়ি বাইরে এসো।তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।’
বলেই কেবিন থেকে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন।”
“এদিকে নিধি হতভম্ব চাহনি নিক্ষেপ করতেই,ড.মায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগলেন,
“তোমার আঙ্কেলও একজন মানসিক রোগী ছিলেন।সেও আমার সাথে নির্জনের মতই আচরণ করেছে।তবে কাউকে খু**ন করেনি।তার রোগের নাম হলো,
ওথেলো সিন্ড্রোম (Othello Syndrome)।এটি এক ধরণের মানসিক রোগ,যেখানে একজন ব্যক্তি তার সঙ্গীর প্রতি অবিরাম ও অবাস্তব হিংসা এবং সন্দেহ অনুভব করে।এই রোগের নামকরণ হয়েছে শেক্সপিয়রের বিখ্যাত চরিত্র ওথেলো এর নাম থেকে,যিনি তার স্ত্রী ডেসডিমোনার প্রতি অতিরিক্ত সন্দেহের কারণে তাকে হ**ত্যা করেন।”
“তোমার আঙ্কেল বিয়ের কিছুদিন পর আমাকে অবিরাম সন্দেহ,আমার ওপর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা,গোপন নজরদারি,হিং**স্র এবং আ**ক্রমণাত্মক আচরণ,অন্যের সঙ্গে মিশতে না দেওয়া,অযৌক্তিক প্রশ্ন,অন্যায় দোষারোপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাবে আমায় টর্চার করে।এমনকি মেহরাব বড় হওয়ার পর,ওর সাথেও কথা বলতে দিতো না।”
“অবশেষে অনেক কাহিনীর পর আমি মেন্টাল হসপিটালে যোগাযোগ করে,তাকে চিকিৎসার জন্য পাঠাই।এবং তোমাদের পাশের বাসা টা ছেড়ে অন্য জায়গায় শিফট হই।
আর তোমার আঙ্কেলের ওথেলো সিন্ড্রোমের কারণ হলো,হীনমন্যতা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব।
তার পরিবার থেকে দীর্ঘসময় প্রতারণার অভিজ্ঞতা এবং আ**ঘাত পেতে পেতে একসময় সে এমন হয়ে যায়,আর তার প্রভাব পড়ে আমার ওপর।অবশেষে দীর্ঘ
১৫ বছর পর তাকে আমি নিজের কাছে ফিরে পাই।এই রোগের চিকিৎসা দীর্ঘ মেয়াদি।কেউ ভালো হয়,কেউ আবার একই রকম থেকে যায়।কিন্তু আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া,তিনি আমায় নিরাশ করেন নি।”
“তবে কি জানো,প্রতিটি মানুষের মধ্যে একটি সাইকো সত্তা লুকিয়ে থাকে,যা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে উন্মোচিত হতে পারে।চাপ,অতিরিক্ত সন্দেহ,বা মানসিক অস্থিরতার ফলে এই সত্তা প্রকাশ পায়।কিছু মানুষ এটি সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে,তবে অন্যরা অজান্তে এটি শাসন করতে শুরু করে।কখনো কখনো,মানুষের অজ্ঞাত সাইকোলজিক্যাল প্রবণতা তাদের আচরণকে একদম পরিবর্তন করে দেয়।এটি তাদের সম্পর্ক,আচরণ,এবং মনোভাবের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে,যা প্রায়ই সাইকোপ্যাথিক আচরণের দিকে ধাবিত করে।
আমার স্বামীও এইরকম।সে সুস্থ হলেও আমার প্রতি তার পজেসিভনেস একই রকম আছে।হয়তো সেটা কখনোই যাবে না।”
“আচ্ছা,অনেক কথা হলো।আরও দেরি করলে,আমার জনাব রেগে যাবে।আমি গেলাম।দোয়া করি,তোমার বাকিটা জীবন সুখময় হোক।”
বলেই ড.মায়া মিষ্টি করে হেসে বিদায় নিলেন।”
———-
তারপর…তারপর কে**টে গেলো আরও ৯মাস।এই ৯ মাসে ১০বছরের পুরনো স্মৃতি গুলো কে সুখে ভরিয়ে,মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে নির্জন।
নিধি আবারও অন্তস্বত্বা হলো।একজন গাইনী ডক্টরের পরামর্শে সব নিয়ম-কানুন মেনে চলতে থাকল।
৯মাস পর লেবার পেইন উঠে নরমাল ডেলিভারিতে কন্যা সন্তানের বাবা-মা হলো নিধি এবং নির্জন।”
“নির্জন এবং নিধি তাদের মেয়ের নাম রাখল,নিহারিকা ইসলাম নিহার।নিহারের গায়ের রং নিধির মতো ফর্সা হলেও,চেহারার গড়ন হয়েছে নির্জনের মতো।এ
যেন নির্জনের রাজকন্যা।”
“নিহার কে ঘুম পাড়িয়ে,নিধি বেলকনিতে গিয়ে আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘ গুলোকে দেখতে থাকল।
নির্জন নিধির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।অতঃপর নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ওই আকাশের দিকে তাকিয়ে কি দেখছো?’
“নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘ধূসর রঙা মেঘ গুলো কে দেখছি।জানেন,আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘ গুলো দেখতে আমার খুব ভালো লাগে।এই মুহূর্তে বেশ ভালো লাগছে মেঘগুলোকে।মন
চাইছে,একবার যদি ছুঁয়ে দিতে পারতাম!’
“নিধির এহেন কথা শুনে,মনে মনে ভীষণ হিংসা হলো নির্জনের।মেঘের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে ভাবলো,
‘তোকে চ্যালেন্জ করলাম,আমি তোর থেকেও আমার ডার্ক কুইন কে অনেক দূরে নিয়ে যাবো।যেখানে তোর অবস্থান হবে নিচে।আর আমাদের অবস্থান হবে উপরে।ভূমি থেকে তোকে আর চাইলেও সে দেখতে পাবে না।’
ভেবে বাঁকা হেসে নিধির কোমরে হাত দিয়ে কাছে টেনে,ওর গালে আলতো করে চুমু দিলো নির্জন।”
————
“এদিকে শীতের ছুটিতে মাহির,তোহা,দিগন্ত এবং নাদিয়া প্ল্যান করে তাদের সন্তান সহ সাজেক ভ্যালিতে ঘুরতে এসেছে।
শীতের সময় সাজেক ভ্যালি একেবারে অন্যরকম সুন্দর এবং স্বপ্নময় জায়গা হয়ে ওঠে।পাহাড়ি এলাকা,মেঘের ঘনঘটা এবং ঠাণ্ডা হাওয়ায় শীতকালীন সাজেক ভ্যালি এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা দেয়।শীতের সময় এখানে তুষারপাতও হয়,যেটা জায়গাটিকে আরও মনোরম করে তোলে।রাস্তা দিয়ে চলার সময় পাহাড়ের মাঝে সূর্যের আলো এবং শীতের ঠাণ্ডা মিশে এক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে।গ্রামের বাড়ি,সাদা তুষারের চাদর,এবং সবুজ পাহাড়ের সাথে মিলিয়ে সাজেক ভ্যালির শীতকাল একেবারে মনোমুগ্ধকর।”
“দিগন্ত এবং নাদিয়া,মাহির এবং তোহা সাজেক ভ্যালিতে “রিসোর্ট ৭৭” নামে একটি পরিচিত রিসোর্টে উঠেছে।এখানে তারা পাহাড়ের উঁচু জায়গায় বসে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করছে,যেখানে চারপাশে শুধু পাহাড় আর মেঘের সমারোহ।এই রিসোর্টটি খুবই জনপ্রিয়,কারণ এটি সাজেকের সুন্দর প্রকৃতি এবং পাহাড়ি জীবনের সঙ্গে একীভূত হয়ে থাকে।রিসোর্টের শান্ত পরিবেশ এবং আধুনিক সুবিধা তাদেরকে এক আদর্শ অবকাশ যাপন করতে সাহায্য করছে।
বিষয়গুলো নিয়ে ওরা একে-অপরের সাথে কথা বলছে।ঠিক সেই সময় সেখানে এসে ইহান এবং আফরিন তাদের ৬ বছরের কন্যা,জাফরিন নাহার ইনায়াকে নিয়ে হাজির হতেই মুখোমুখি হয়ে যায় দিগন্ত এবং নাদিয়ার।
আফরিন তো দিগন্ত কে দেখে,তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে।এদিকে নাদিয়া আর ইহান একে-অপরের দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।”
“আফরিন দিগন্তের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
‘বুঝলাম না,তুমি কি এখনো আমাকে ফলো করছো?আমরা এখানে ঘুরতে এসেছি,আর তুমিও…
“দিগন্ত ঝগড়ুটে সুরে বলে উঠলো,
‘হেই মিস আফরিন..এত বছর পর আপনার মাথায় কি ভূত চেপেছে?আমি আপনাকে ফলো করতে যাবো কেনো?এখানে আমি নয়,আমরা এসেছি পরিবার সহ।এত বছর পরেও দেখছি আপনার ঝগড়ুটে স্বভাব গেলো না,হুহ।’
“দিগন্তের এহেন কথা শুনে,আফরিন আঙ্গুল উঁচিয়ে কিছু বলতে যাবে,তখনই ইহান ওকে টেনে রিসোর্টের দিকে নিয়ে গিয়ে বললো,
‘পা**গল নাকি তুমি?সে তোমায় ফলো করবে কেনো?এনিওয়ে,গতকাল রাতে আমার কথা শোনো নি।এখন নাদিয়ার ছেলের সাথে আমার মেয়ে খেলা-ধুলা করুক,আর আমি তোমার সাথে।’
বলেই ইহান দুষ্টু হেসে,ইনায়া কে কোল থেকে নামিয়ে বাচ্চাদের সাথে খেলতে যেতে বললো।ইনায়া ও দৌঁড়ে চলে গেলো খেলতে।”
“আফরিন কটমটিয়ে ইহান কে বললো,
‘আরে,তুমি এটা কি করলে?আমার শত্রুর ছেলের সাথে ইনায়া কে খেলতে পাঠালে?
“ইহান চোখ টিপে বললো,
‘তোমার মাইন্ড ফ্রেশ করো।তাছাড়া দাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয়,তাহলে দাগই ভালো।’
বলেই আফরিনের হাত ধরে রুমে নিয়ে গেলো।
অতঃপর ইহান আফরিন কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আফরিন আর কিছু বলতে পারলো না।সাজেকের ঠাণ্ডা বাতাসে দু’জনের শরীর যেন একাকার হয়ে যায়।আফরিনের নরম গাল ইহানের হাতের উষ্ণ স্পর্শে সজীব হয়ে উঠলো।দুজনের চোখে গভীর প্রেমের আভা ছড়িয়ে পড়লো।ইহান ধীরে ধীরে আফরিনের ঠোঁটে আলতো চুমু দিলো।ধীরে ধীরে একে-অপরের মধ্যে হারিয়ে গেলো দু’জন,তাদের মাঝে বয়ে গেলো শুধুই প্রেম,শুধুই মিলন।”
———
“এদিকে নাদিয়া নাভীন কে ইনায়ার সাথে খেলতে দিয়ে, দিগন্ত কে টেনে রুমে নিয়ে গিয়ে,দিগন্তের মুড চেঞ্জ করার জন্য জড়িয়ে ধরে বললো,
‘আমি এখন প্রেম করবো।’
“নাদিয়ার এহেন কথা শুনে দিগন্ত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো,
‘সূর্য কি আজ দক্ষিণ দিকে উঠলো নাকি?দাঁড়াও দেখে আসি।’
বলেই নাদিয়া কে ছাড়তে চাইলে,নাদিয়া দিগন্তের কলার টেনে বললো,
‘সূর্য ঠিক জায়গায় উঠেছে।এই কুল-কুল ওয়েদারে তোমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে জানু।বাইরে বাচ্চারা খেলছে।আর এটাই তো সুবর্ণ সুযোগ।’
বলেই লাজুক হাসল নাদিয়া।”
“দিগন্ত নাদিয়ার দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
‘এই,তুমি কি হানি নাটস খেয়েছো নাকি?’
“নাদিয়া মুখ ভেং**চি কে**টে বললো,
‘যাহ,দুষ্টু।ওটাতো নাভীন কে খাওয়াই।হানি নাটসে থাকা পেস্তাবাদাম,কাজুবাদাম,কিশমিস,মধু,জাফরান এগুলো ওর শরীরে হাড়ের ক্ষয়রোধে সহায়ক।
তুমি না..সবসময় নেগেটিভ চিন্তা করো।ধরু,ভাল্লাগে না।’
বলেই মুখ অন্যদিকে ঘুরাতেই,দিগন্ত ওর ঘাড়ে চুমু দিয়ে,নাদিয়া কে সামনে ফিরিয়ে ওর ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরলো।অতঃপর সাজেকের ঠাণ্ডা হাওয়ায় তাদের দেহ ধীরে ধীরে এক হয়ে গেলো।দিগন্ত নাদিয়ার চোখে গভীর ভালোবাসার দৃষ্টি ফেলে,আর নাদিয়া তার ঠোঁটে চুমু দিয়ে সাড়া দিলো।চারপাশের নীরবতা যেন তাদের অনুভূতির গভীরতা আরও বাড়িয়ে দিলো।ভেসে গেলো দু’জন গভীর ভালোবাসার সুখ সায়রে।”
———–
“এদিকে রিসোর্টের রুমের বেলকনিতে গায়ে গোলাপি রঙের শাল জড়িয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে তোহা।বাইরে তাহির,নাভীন,ইনায়া খেলছে..সেগুলো দেখছে,আর মিটিমিটি হাসছে।”
“হঠাৎ মাহির পেছন থেকে ‘স্বপ্নচারিনী’ বলে ডাক দিতেই তোহা পেছনে তাকিয়ে দেখলো,মাহির হাঁটু গেড়ে হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল নিয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।”
“তোহা অবাক হয়ে বললো,
‘হঠাৎ এগুলো এনেছেন যে?’
“মাহির মুচকি হেসে তোহার হাত ধরে চুমু দিয়ে বললো,
‘চুপ..একদম চুপ..আমি বলবো,তুমি শুনবে..
১. বাংলা: “স্বপ্নচারিনী,আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
২. ইংরেজি: “Dream Weaver, I love you.”
৩. হিন্দি:”ম্যায় তুমসে প্যায়ার কারতি হুঁ।”
৪.ফরাসি: “Dream Weaver, je t’aime.”
(উচ্চারণ:”স্বপ্নচারিনী,ঝে তেমে।”)
৫. স্প্যানিশ: ” Dream Weaver, te quiero.”
(উচ্চারণ: “স্বপ্নচারিনী, তে কিয়েরো।”)
৬.জার্মান: “Dream Weaver, ich liebe dich.”
(উচ্চারণ: “স্বপ্নচারিনী, ইখ লিবে দিখ।”)
৭. ইতালীয়: “Dream Weaver, ti amo.”
(উচ্চারণ: “স্বপ্নচারিনী, তি অ্যামো।”)
৮. আরবি: “توها، أنا أحبك.”
(উচ্চারণ: “তোহা, আনা আহাবুক।”)
৯. রাশিয়ান: “Dream Weaver, я тебя люблю.”
(উচ্চারণ: “স্বপ্নচারিনী, ইয়া তেব্যা ল্যুব্ল্যু।”)
১০. চীনা: “Dream Weaver, 我爱你。”
(উচ্চারণ: “স্বপ্নচারিনী, উও আয়ে নিও।”)
এভাবে মাহির ১০টি ভাষায় প্রপোজ করে,দাঁড়িয়ে তোহার ঠোঁটে চুমু দিয়ে বললো,
‘স্বপ্নচারিনী,আজ আমি বলবো,আর তুমি শুনবে,অনেক ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও তোমায় খুব মিস করি।আগলে রাখতে চাই।কিন্তু ব্যস্ততা আমায় ঘিরে ধরে।তাইতো কিছু সময় তোমাকে আনন্দ দেওয়ার জন্য এখানে আসা।এসো না,এত সুন্দর স্নিগ্ধ পরিবেশে দু’জন মধুর আবেশে হারিয়ে যাই।’
বলেই তোহার ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিতেই,তোহা মাহির কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বললো,
‘আমি সত্যি খুব ভাগ্যবতী নারী,মাহির।আপনার মতো একজন আদর্শবান স্বামী পেয়ে,আমার নারী জীবন ধন্য মনে হয়।এতগুলো ভাষায় আমাকে প্রপোজ করে,আমায় পা**গল করে দিয়েছেন মাহির।আমি তো এগুলো পারি না।তবে গান শুনাতে পারি।শোনাবো?”
“মাহির মুচকি হেসে সায় জানাতেই,তোহা মাহিরের বুকে মাথা রেখে গেয়ে উঠলো,
“🎶ভালোবাসি, ভালোবাসি
এই সুরে কাছে-দূরে,জলে-স্থলে বাজায়…
বাজায় বাঁশি..ভালোবাসি, ভালোবাসি..
আকাশে কার বুকের মাঝে ব্যথা বাজে,
দিগন্তে কার কালো আঁখি,আঁখির জলে যায় ভাসি..ভালোবাসি..
সেই সুরে সাগরকূলে বাঁধন খুলে
অতল রোদন উঠে দুলে।
সেই সুরে বাজে মনে অকারণে
ভুলে-যাওয়া গানের বাণী, ভোলা দিনের কাঁদন-হাসি,ভালোবাসি….🎶
“তোহা গান শেষ করে মাহিরের দিকে তাকাতেই,মাহির তোহা কে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় গিয়ে শরীরে কম্ফোর্টার টেনে নিলো।
মাহির ধীরে ধীরে তোহার হাতে হাত রাখল,অতঃপর একে-অপরের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে থাকল।মাহিরের নিঃশব্দে চুম্বনে তোহার ঠোঁটে আগুনের মতো উত্তাপ ছড়িয়ে পড়লো।তোহাও নিজেকে মাহিরের কাছে সঁপে দিলো, দু’জনের ঠোঁট জোড়া এক মিষ্টি,অদৃশ্য প্রতিজ্ঞায় মিলিত হয়ে গেলো।আজ সময় থেমে গিয়েছিলো,সুখময় পৃথিবী শুধু তাদের ছিলো।”
———–
“৬মাস পর নির্জন,নিধি এবং তাদের মেয়ে নিহার কে নিয়ে চিরস্থায়ী হতে বাংলাদেশ থেকে বহুদূরের একটি দেশে এসেছে।যেখানে কখনোই বৃষ্টিপাত হয় না।”
“সত্যিই এমন এক গ্রাম আছে বিশ্বে যেখানে হয় না বৃষ্টি।এটি পৃথিবীর একমাত্র স্থান যেখানে কখনোই বৃষ্টি হয় না।তবে গ্রামের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে।সেখানে জনবসতি,স্কুল,মাদ্রাসা,মসজিদ সবই আছে।
আরও আছে নজরকাড়া প্রাচীন স্থাপনাসমূহ।প্রতিবছর প্রচুর পর্যটকেরও আগমন ঘটে সেখানে।আবার ক্ষেত-খামারও রয়েছে।
আর সেটি হলো ইয়েমেনে ছোট একটি গ্রাম ‘আল হুতাইব।’
“সেখানকার রাজধানী সানার প্রশাসনিক এলাকা জাবাল হারাজের পাহাড়ি অঞ্চলে গ্রামের অবস্থান।আর এই গ্রামে কখনো হয় না বৃষ্টি।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যখন বছরের বিভিন্ন সময়ে বৃষ্টিপাত হয়,ঠিক তখন ‘আল হুতাইব’ গ্রাম থাকে শুকনো।এই গ্রামে যেহেতু কখনো বৃষ্টি হয় না,তাই সেখানকার আবহাওয়া বেশ শুকনো।
তবে কেনো এই গ্রামে বৃষ্টিপাত হয় না?এর কারণ হলো, ‘আল হুতাইব’ গ্রামটি অনেক উচ্চতায় অবস্থিত।সমতল থেকে প্রায় ৩২০০ মিটার উঁচুতে এই গ্রামের অবস্থান।আর এ কারণে সেখানে বৃষ্টিপাত হয় না।
সাধারণত বৃষ্টি মেঘ জমে সমতল থেকে ২০০০ মিটারের মধ্যে।তাই ‘আল হুতাইবের’ উপরে মেঘ জমে না।আর মেঘ না থাকলে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না।
বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এই গ্রামের পরিবেশ বেশ গরম।”
“শীতকালে সকালের পরিবেশ খুব ঠাণ্ডা থাকলেও সূর্য উঠলেই প্রচণ্ড খরতাপে পুড়ে সেখানকার মানুষরা।
তবে এই গ্রামের বাসিন্দাদের বৃষ্টি হওয়া বা না হওয়া নিয়ে তেমন কোনো দুশ্চিন্তা নেই।তারা সেখানকার শুকনো আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেদেরকে মানিয়ে নিয়েছেন।”
“বাংলাদেশে থাকাকালীন নির্জন, নিধির হাত ধরে করুণ স্বরে বলে,
‘এই মাটিতে তার জীবনের অনেকটা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে।তাই সে এখানে আর থাকতে চায় না।নিধিকে নিয়ে সে অন্য দেশে পাড়ি জমাতে চায়।তবে মাঝে-মাঝে বাংলাদেশে এসে ঘুরে যাবে।’
“নিধিও নির্জনের কথা শুনে রাজি হয়ে যায়।দীর্ঘ ১০বছর পর প্রিয় মানুষটিকে কাছে পেয়েছে নিধি।তার জন্য তো এই আবদার রাখতেই হবে।”
“অবশেষে ইয়েমেনে এসে একটি প্রাচীন প্রাসাদে উঠলো নির্জন এবং নিধি।এটা শহরের বাইরের অংশে অবস্থিত।নিধি ঘুরে ঘুরে দেখলো,বাড়ির চারপাশে বালুকাময় শুষ্ক প্রান্তর,এবং দূরে কোনো গাছপালা বা জলাধার নেই।বাড়িটি এক ধরনের ক্লাসিক আরবীয় স্থাপত্য শৈলীতে তৈরি,যেখানে উঁচু দেওয়াল,দরজা,এবং প্রাচীন সিলিং রয়েছে।
ঘরের অভ্যন্তর খুবই সাধারণ কিন্তু রহস্যময়।এটি দেয়ালের ওপর পুরনো আরবি নকশা,কাঠের ফার্নিচার এবং আলোর স্বল্পতা দ্বারা সজ্জিত।বাড়ির জানালাগুলোও বন্ধ,যেন বাইরের রুক্ষ পরিবেশকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে।”
“সবকিছু দেখে,নিধির মন টা কিছুটা খারাপ হয়ে গেলো।কারণ,আশে-পাশে তেমন জনমানব নেই।নিধি চাইলেও কারো সাথে মিশতে পারবে না।”
“নিধির বিষন্ন চেহারা দেখে,বাঁকা হাসল নির্জন।”
“নিধির মন পরিবর্তন করার জন্য বললো,
‘আমার ইউনিভার্সিটির এক ফ্রেন্ড এই শহরে থাকে।আমার কথা মতো সে এই বাড়িটির ব্যবস্থা করেছে।’
“নির্জনের কথা শুনে নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘বাড়িটি তো খুবই সুন্দর।কিন্তুু এখানে আপনি কি কাজ করবেন?’
“নির্জন মুচকি হেসে বললো,
‘আল হুতাইব (Al-Hutaib) শহরটি ইয়েমেনের অন্যতম পরিচিত এবং ঐতিহাসিক শহর,যা মূলত তার উঁচু পাহাড়ি ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য বিখ্যাত।এখানে বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান মাধ্যমগুলো হলো,চাষাবাদ ও কৃষিকাজ,গবাদি পশুপালন।এই অঞ্চলে গবাদি পশু,যেমন ছাগল ও ভেড়া পালন করা হয়। পশুপালন এখানকার অনেক পরিবারের আয়ের অন্যতম উৎস।
এছাড়াও আছে,হস্তশিল্প ও কারুশিল্প ঐতিহ্যবাহী ইয়েমেনি পোশাক,মৃৎশিল্প,এবং অন্যান্য হস্তশিল্পও এখানে জনপ্রিয়।
তারপর আছে,পর্যটন-
‘আল হুতাইব’ তার পাহাড়ি প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং ঐতিহাসিক স্থাপনার জন্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়।পর্যটন থেকে উপার্জন এখানে একটি বড় উৎস।
আরও আছে,জাম্বিয়া (Jambia) ও ধাতব কাজ-ইয়েমেনের ঐতিহ্যবাহী অস্ত্র জাম্বিয়া তৈরির কারুশিল্প অনেক জনপ্রিয়।
তারপর ব্যবসা ও বাণিজ্য-স্থানীয় বাজার এবং ছোটখাটো দোকানগুলো ব্যবসা পরিচালনা করে।এখানকার ব্যবসায়ীরা সাধারণত কফি,মসলা,এবং হস্তশিল্প সামগ্রী বিক্রি করেন।
অর্থাৎ,আল হুতাইবের মানুষের জীবিকা বেশিরভাগই কৃষি,পশুপালন,পর্যটন,এবং হস্তশিল্পের ওপর নির্ভরশীল।এগুলোর মধ্যে কোনো একটা করে নিবো।
তাছাড়া এতো বিলাসিতার দরকার নেই।তুমি-আমি,আর আমাদের রাজকন্যা.. এতেই শুকরিয়া আদায় করবো।কি বলো,ডার্ক কুইন?”
“নির্জনের এহেন কথা শুনে,হৃদয় বিগলিত হলো নিধির।মুহূর্তেই চোখজোড়া ছলছল করে উঠলো।”
“নির্জন সেটা দেখে,বারান্দায় গিয়ে ভূমি থেকে কিছুটা দূরে ভেসে বেড়ানো মেঘগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবলো,
‘মনে আছে,চ্যালেন্জ করেছিলাম,তুই থাকবি আমার এবং ডার্ক কুইনের নিম্নে,আর আমাদের অবস্থান হবে তোর উপরে।
এখন আমায় সর্বোত্তম হিংসুটে বলে ব্যাঙ্গ করবি তো?করতে পারিস,কিন্তু আমার নিরুর জন্য আমি সর্বোচ্চ হিংসুটে হতে পারি।’
কথাগুলো ভাবতেই,পেছন থেকে দুটি কোমল হাতের ছোঁয়ায় নির্জনের বক্ষগহ্বর প্রশান্তিতে ভরে উঠলো।”
“এই প্রেয়সীর জন্যই তো তার এত কষ্ট করা।
নির্জন, নিধির দিকে ফিরে নিধির কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
‘নিহার তো ঘুমিয়েছে,এখন কি করবে?মেঘবিলাস ও তো করতে পারবে না।কারণ,মেঘগুলো আমাদের নিম্নে অবস্থান করছে।’
“নিধি নির্জনের পা দুটো একটু উচু করে,নির্জনের কপালে চুমু দিয়ে,মুচকি হেসে বললো,
‘অনেক টা পথ জার্নি করে এসেছি।তাই এখন ফ্রেশ হবো,তারপর খাওয়া-দাওয়া করে,আপনার সাথে গল্প করবো।এছাড়া তো এখানে কেউ নেই।’
“নিধির এহেন কথা শুনে বিজয়ের হাসি দিলো নির্জন।
নিধিকে পাঁজাকোলে নিয়ে বললো,
‘আমার বয়স ৩৯ এর কোঠায়,আর তোমার ৩৩ এর কোঠায়।অথচ দেখো,আমাদের ভালোবাসা কিন্তু একইরকম আছে।বিন্দু পরিমাণ কমেনি।বরং প্রতিনিয়ত আরও বাড়ছে।’
কথাগুলো বলতে বলতে নিধিকে পাশের রুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে,নিধির ঠোঁট জোড়া নিজ অধরে আবদ্ধ করে নিলো।কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে হাস্কি ভয়েসে বললো,
“তুমি কি জানো, প্রিয়া,এই ১০বছর,৩৬৫২ দিন কতটা তৃষ্ণায় কে**টেছে?
৮৭,৬৪৮ ঘণ্টা, প্রতিটি নিশ্বাসে শুধু তোমার গন্ধ খুঁজেছি,
৫,২৫,৮৮৮০ মিনিট,প্রতিটি মুহূর্তে তৃষ্ণার্ত ঠোঁট তোমার স্পর্শ চেয়েছে,
৩,১৫,৫৩,৮০০ সেকেন্ড, প্রতিটি কাঁপন তোমার ছোঁয়া পাওয়ার জন্য।
৩১,৫৩,৮০০,০০০,০০০ ন্যানো সেকেন্ড,
তোমার শরীরের উত্তাপে পুড়ে ম**রে যেতে চেয়েছি।
আজ,যখন এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার শেষে তোমাকে পেলাম,
গভীর এক চুম্বনে সেই সময়ের সব হিসাব মিটিয়ে দিলাম,
তোমার শরীরের প্রতিটি কোণে,প্রতিটি ভাঁজে,
আমি রেখে দিলাম আমার পুড়ে যাওয়া সমস্ত তৃষ্ণা।
তোমার ঠোঁটের স্বাদে এই দশ বছর,
এক মুহূর্তে গলে গেলো আমার ভিতরে,
তুমি আছো,আজও তুমি আছো আমার মাঝে,
আর আজ থেকে,প্রিয়তমা,
এই ৩১,৫৩,৮০০,০০০,০০০ ন্যানো সেকেন্ড হবে,
আমাদের প্রতিটি চুম্বনের প্রতিধ্বনি।” ~মেহের~
“নির্জনের এহেন কবিতা শুনে নিধির চোখজোড়ায় পানি চলে এলো।নির্জনের হাতে চুমু দিয়ে বললো,
“আপনি কি জানেন,প্রিয়,এই ৩৬৫২ দিন আমি কীভাবে কষ্ট পেয়েছি?
৮৭,৬৪৮ ঘণ্টা,আপনি যখন দূরে ছিলেন,আমি গভীর এক যন্ত্রণায় ডুবেছিলাম,
৫,২৫,৮৮৮০ মিনিট, প্রতি মুহূর্তে আপনার ছায়ায়,আপনার অভাবে,
আমার হৃদয় এক অন্ধকার গহ্বরে পড়েছিলো,যেখানে শুধু আপনার অসহায় চি**ৎকার ভেসে আসতো।
৩,১৫,৫৩,৮০০ সেকেন্ড,আপনার অভাবের যন্ত্রণা আর তৃষ্ণায়,
আমার আত্মা ক্ষ**তবিক্ষ**ত হয়ে গিয়েছিলো।
৩১,৫৩,৮০০,০০০,০০০ ন্যানো সেকেন্ড,
আপনার স্পর্শে,আপনার চুম্বনে,
এই দীর্ঘ সময়ের ব্যথা আর নৈরাশ্য মেটাতে চেয়েছি,
এবং যখন আমি আপনার সামনে এসে দাঁড়ালাম,
আপনার ঠোঁটে আমার তৃষ্ণা পূরণ হলো,
গভীর এক চুম্বনে,তীব্র যন্ত্রণার সঙ্গে,
আপনার শরীরের প্রতিটি কোণে আমার প্রতিশোধ রেখে দিলাম।
আপনি জানেন,প্রিয়,এই চুম্বন কেবল প্রেম নয়,
এটা সেই সমস্ত কষ্টের প্রতিশোধ,
যা আপনার অদৃশ্য হাতের ছোঁয়া নিয়ে আমার দেহে ঢুকে গেছে,
আমার শিরায় শিরায় র**ক্তের প্রতিটি বিন্দু,
আমার প্রেমের গভীর অন্ধকারে মিশে যাবে,
যা এই দীর্ঘ যন্ত্রণা আর অপেক্ষার হিসাব মিলিয়ে দেবে।
আমরা এবার একসাথে সেই অন্ধকারে প্রবাহিত হবো,
যেখানে কষ্ট আর প্রেমের অশ্রু একাকার হয়ে যাবে।”
~মেহের~
বলেই নিধি নির্জনের বুকে মুখ গুজলো।দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পর ক্লান্ত শরীরেও একে-অপরের মাঝে সুখ খুঁজে নিতে ব্যস্ত হলো।অবশেষে দু’জনের মিষ্টি-মধুর সম্পর্ক আরও প্রগাঢ় হলো।”
“মধুর কিছু সময় কা**টিয়ে নির্জন টেবিল থেকে ব্যাগ এনে,চেইন খুলে ব্যাগের ভেতর থেকে একটি বই বের করে নিধির সামনে রেখে বললো,
‘বলোতো,আমার কথা রাখতে পেরেছি কিনা?একদিন বলেছিলাম,তোমাকে নিয়ে একটা বই লিখবো।আর বিয়ের আগে থেকেই বইটি লেখা শুরু করেছিলাম।মাঝখানে কে**টে গেলো ১০টি বছর।নিহার যখন তোমার পেটে ছিলো,তখন তুমি রাতে ঘুমিয়ে গেলে,আমি নতুন করে আমাদের জীবনের গল্প লেখা শুরু করি।কিছুদিন আগে এটা সম্পূর্ন করেছি।আর বইটির নাম কি দিয়েছি বলো তো?”
“নিধি বইয়ের দিকে তাকিয়ে,অবাক হয়ে বললো,
“#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ।”
“নিধি বলতেই নির্জন মুচকি হেসে নিধিকে কোলে তুলে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে,ভূমি থেকে অদূরে ভেসে বেড়ানো মেঘ দেখিয়ে বললো,এই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় একটি কবিতা লিখেছি,শুনবে ডার্ক কুইন?”
“নিধি নিম্নে ভেসে বেড়ানো মেঘের দিকে তাকিয়ে,মুচকি হেসে বললো,
‘হুম,বলুন।’
“নির্জন নিধির কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে নিধির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘উহুম..ওই মেঘের দিকে নয়,আমার দিকে তাকাও।তাহলে বলবো।’
“নিধি ফের মুচকি হাসলো।অতঃপর নির্জনের চোখে-চোখ রাখতেই,নির্জন নিধির দিকে প্রগাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো,
“#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ”
তুমি মেঘের প্রশংসা করেছিলে একদিন,
সে মুহূর্তে যেন বেঁধেছিলো বিষের কাঁ**টা আমার হৃদয়ে।
তোমার মুখে অন্য কিছুর রূপের বন্দনা শুনে,
হিংসার আগুনে জ্বলেছি,আর
#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ হয়েছে গভীর সুরে।
আল-হুতাইবের এই আকাশে,মেঘ নামে নিচে,
আমি চাই,তুমি আর কোনো কিছুতে মুগ্ধ হবে না চোখে।
তোমার দৃষ্টি যেন শুধু আমায় ছোঁয়,
আমার ভালোবাসার হিংসা এমনই; সহ্য হয় না অন্যের প্রশংসা।
তুমি আমার নীল মেঘ,আমার স্বপ্নের আকাশ,
তোমার প্রশংসা যেন আর কোথাও না যায় উড়ে।
তোমার মুখে অন্য কিছুর প্রশংসা শুনলে,
আমার র**ক্তক্ষরণ হয় হৃদয়ের গভীরে,নিঃশব্দে।
#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ লিখেছি শুধুই তোমার নামে,
তোমার ভালোবাসা ছাড়া আমি কিছুই চাই না এই জীবনে।
তুমি যদি অন্য কিছু চাও,তোমার মুখে অন্যের নাম শুনি,
তবে আমার মনের অতল গহীনে #হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ হবে।”
~সমাপ্ত~