#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪৯ (বিশেষ পর্ব)
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজল
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]
“ওহ,ওহ,ওহ..মাই সুইটহার্ট,আরও ২টা স্পেশাল জিনিসের সাথে তোমায় পরিচয় করাবো।আশা করি,আমার মতো তোমারও ভালো লাগবে।’
বলেই মুচকি হাসল নির্জন।”
“অতঃপর নিধির হাত ধরে,নির্জনের রুমের দেয়ালের সাথে লাগানো আলমিরাটির সামনে নিয়ে গেলো।
তারপর আলমিরার সামনে গিয়ে,মুচকি হেসে স্বাভাবিক স্বরে বললো,
‘জানো,নিরু..এই আলমিরাটি একেবারে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে।এটি প্রায় ছয় ফুট উঁচু এবং তিন ফুট চওড়া।
এটি দেখতে যেমন বিশাল এবং শক্তপোক্ত,তেমনি এটিকে এক ধরনের সুরক্ষিত দেয়াল বলতে পারো।আলমিরার বাইরের অংশটি মেটালিক প্যানেল দ্বারা আবৃত,যেটি বাইরের দৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করে।ভেতরের অংশটি টেম্পারেচার এবং আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিশেষ প্রযুক্তি দ্বারা সজ্জিত রয়েছে।এগুলো আমি বিশেষ ভাবে অর্ডার দিয়ে বানিয়েছি।’
“এই আলমিরাটির বাইরের অংশে অ্যান্টি-রফট এবং সুরক্ষার জন্য বিশেষ মেটাল প্যানেল ব্যবহৃত করা হয়েছে।এবং আলমিরার ভিতর প্রায় দীর্ঘকাল ধরে সংরক্ষণের জন্য উন্নত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে।এই কেমিক্যালগুলো দুর্গন্ধহীন এবং শোষক,যেটা ভিতরে থাকা জিনিসপত্রের অক্ষততা রক্ষা করে।আলমিরার দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলতে পারে,যাতে কোনো ধরনের শব্দ না হয় এবং ভিতরের পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে।দরজার কাঁচ স্বচ্ছ কিন্তু বিরল উপাদান দিয়ে তৈরি,যেটা ভিতরের দৃশ্য আড়াল করে।’
একাধারে কথাগুলো বলেই,নির্জন আলমিরাটি খুলতেই,সামনে থাকা নারী অবয়ব টি দেখে বিস্ময়ে চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো নিধির।তার হৃদ-স্পন্দন যেন তড়িৎ গতিতে বৃদ্ধি পেলো।”
“নিধি দেখলো,আলমিরার ভিতরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে,যে দেখতে ১৯ বছরের মতো হবে।মেয়েটির দেহ দেখলেই বোঝা যায়,কাপড়ে আবৃত দেহটি কেমিক্যাল দ্বারা সংরক্ষিত।তার শরীর নিখুঁত,কোন চিহ্ন ছাড়াই।মেয়েটির মুখে এক ধরনের স্থিরতা বিরাজ করছে।নিধি বুঝে গেলো,এই মেয়েটিও নির্জনের ভ**য়াবহতার সাক্ষী।
নিধি সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখলো,রাসায়নিক আলমিরার ভিতরে মেয়েটি যেন এক রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু তার শরীরের মাংসপেশি ও ত্বকে রাসায়নিকের প্রভাব স্পষ্ট।তার চোখজোড়া বন্ধ অবস্থায় আছে,কারণ সে দীর্ঘ দিন আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে।”
“নিধির মনে আতঙ্ক নিয়ে নির্জনের দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে ভাবতে থাকল,
‘নির্জন কতটা নিষ্ঠুর…’
ভেবে শুকনো ঢোক গিলে বললো,
‘কি কি করেছেন মেয়েটার সাথে?সে কি এমন করেছে?যে তাকে এখানে,এভাবে আটকে রেখেছেন?তাও এমন অবস্থায়?’
“নিধি বলতেই,নির্জন নিধির হাত শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করলো,অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত স্বরে বলতে শুরু করলো,
‘কলেজ লাইফের শেষের দিকে মেয়েটার সাথে আমার পরিচয় হয়।আমি ক্লাসে বরাবরই নীরব ছিলাম।কিন্তু মেয়েটি ছিলো ভীষণ চঞ্চল।মাঝে মাঝে সে আমার সাথে কথা বলতে চাইতো।কিন্তু আমার তাকে বরাবরই বিরক্ত লাগত।তাই যথাসম্ভব ইগনোর করতাম।কিন্তু হঠাৎ একদিন সে ক্লাসের টিফিন পিরিয়ডের সময় একগুচ্ছ গোলাপ ফুল দিয়ে আমায় প্রপোজ করে,সেই সাথে ৮-১০টি চিঠিও আমার সামনে রেখে,আমার প্রতি তার ভালোবাসা ব্যক্ত করে।যেটা আমাকে বেশ অবাক করে।”
“তবুও আমি আমার অতীত কাহিনী ভেবে,মেয়েটিকে না করে দেই।কিন্তু,সে ছিলো ভীষণ জেদি স্বভাবের।অবশেষে তার এতটা রিকোয়েস্টে আমিও ‘হ্যা’ সূচক সায় জানাই।
যদিও সেই মুহূর্তে তার প্রতি আমার কোনো ভালোবাসা অনুভব হয়নি।তবে ওর এতটা অনুরোধ আমার মনে কিছুটা মায়ার জন্ম দিয়েছিলো।তাই ‘হ্যা’ সূচক জবাব দিয়েছিলাম।”
“কিন্তু মজার ব্যাপার টা কি,জানো?পরের দিন ক্লাসে গিয়ে শুনি,মেয়েটা তার বান্ধবীদের কাছ থেকে ডেয়ার নিয়েছিলো।আর তারা তাকে ডেয়ার হিসেবে,আমাকে প্রপোজ করে বোকা বানাতে বলেছে।
হাহাহা..কি অদ্ভুত তাই না?ভালোবাসা নিয়ে ছলনা..তাও আবার আমার সাথে?হাহ..আচ্ছা,তুমি বলো,ভালোবাসা তো একটি গভীর শব্দ,যেটা মানুষ মুখের ভাষা দিয়েও পূর্ণাঙ্গ ভাবে প্রকাশ করতে পারবে না।এটি একটি পবিত্র জিনিস।সেখানে কেউ যদি তোমার সাথে,এই বিষয়টি কে নিয়ে মজা করে মিথ্যার আশ্রয় নেয়,সেটা কি আদৌ ঠিক?’
নাহ,ঠিক নয়।তোমার কাছে যেটা মজার,অন্যের কাছে সেটা সিরিয়াস হতে পারে।মানুষ যতভাবেই মজা করুক না কেনো,অন্তত এই ‘ভালোবাসা’ নামক বিষয়টি নিয়ে মিথ্যা প্রতারণা আমার আদালতে গ্রহণ যোগ্য নয়।ওর সেই নিখুঁত অভিনয় আমার মনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিলো।ভাবলাম,
‘আমার আদালতে এই মিথ্যাবাদী,ছলনাময়ী নারীকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে।’
“তারপর ওকে আমি ৬ মাসের মধ্যেও কিছুই বলিনি।শুধু ওকে শাস্তি দেওয়ার জন্য সুন্দর একটি সুযোগ খুঁজেছি।আর পেয়েও গেছি।”
“একদিন টিফিন পিরিয়ডে,ও আমার কাছে কিছু নোটস চেয়েছিলো।আমিও ওকে বলেছি,যে নোটসগুলো আমার বাসায় আছে।ও চাইলে আমাদের বাসায় যেতে পারে।প্রথমে ও আমার বাসায় যেতে ইতস্তত বোধ করছিলো।তারপর আমি বলেছিলাম,আমার বাসায় আমার মা এবং গৃহপরিচারিকা আছে।সে নিশ্চিন্তে যেতে পারে।”
“জানো,বোকা মেয়েটা কিছু না ভেবেই আমার বাসায় যেতে রাজি হলো।
তারপর আমি ওকে বলে,কলেজ থেকে আগে বেরিয়ে গেলাম।যেন ওকে আর আমাকে একসাথে কেউ না দেখে।তাছাড়া আমাদের প্রতিবেশীদের বাড়িগুলো দূরত্বে থাকায়,ওই ভরদুপুরে ওকে আর আমাকে একসাথে পরিচিত কেউ দেখেনি।”
“আর তারপর..হাহাহাহা..তারপর আমি আমার কাজে সফল হলাম।মেয়েটা বাসায় আসতেই আমার ‘মা’ নামক ডাইনীর রুমে নিয়ে গিয়ে,ওকে পরিচয় করিয়ে দিলাম।মায়ের এই অবস্থা দেখে ওরও খুব মায়া হলো।সেই সুযোগে আমি কিচেনে গিয়ে ওর জন্য কুুল-কুল লেমন জুস বানালাম।আর সেটাতে মিশিয়ে দিলাম ৭-৮টি ঘুমের ওষুধ।অতঃপর মেয়েটি কে শরবত দিতেই,সেটা সে তৃষ্ণার্ত গলায় ঢকঢক করে পান করলো।আহ!কি শান্তি।”
“তারপর আমার রুম থেকে নোটস গুলো নিয়ে ওকে দিলাম।আর নোটসের বিষয়ে কিছু কথা বলতে বলতেই দেখলাম,মেয়েটা ধীরে ধীরে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।তৃপ্তির হাসি দিয়ে,বেশ যত্ন করে ওকে কোলে তুলে নিয়ে,এই বিশেষ রুমটিতে নিয়ে এলাম,যেটা মায়ের অসুস্থতার পর থেকেই আমি একটু একটু করে সাজিয়েছি।তখন অবশ্য এতটা ডিজিটাল ডিভাইস ছিলো না।”
“যাইহোক,তারপর হাতে গ্লাভস পরিধান করে,দুই হাত দিয়ে মেয়েটির গলায় এমন ভাবে চাপ প্রয়োগ করলাম,যেন গলার হাড় গুলো একে-অপরের সাথে গভীরভাবে মিশে যায়।গলায় সজোরে চাপ প্রয়োগ করতেই,মেয়েটার মুখ দিয়ে গড়গড় করে র**ক্ত বেরিয়ে এলো।যেটা দেখে বেশ তৃপ্তি পেয়েছিলাম।
যেহেতু ওকে এভাবে মা**র্ডার করার প্ল্যান টি আগে থেকেই ছিলো,তাই আগে থেকেই এই আলমিরাটি রুমটিতে তৈরি করার ব্যবস্থা করেছি।ওই যে অতিথি আসার আগে,মানুষ যেমন আপ্যায়ন করার ব্যবস্থা করে,আমিও তেমন আমার রুমটিতে প্রথম অতিথির আগমনের কথা ভেবে,৬মাস ধরে সুন্দর করে তার জন্য বাসস্থান টি সাজিয়েছি।
আচ্ছা,আলমিরাটি কেমন দেখতে?সুন্দর..তাই না?বলতেই হবে..তোমার হাসবেন্ডের রুচি সবসময় ইউনিক হয়।”
“আচ্ছা,তোমার মনে নিশ্চয়ই কৌতূহল জাগছে,যে মেয়েটার লা**শটিকে আমি কিভাবে সংরক্ষণ করলাম…
নির্জন কথা গুলো বলতে বলতেই দেখলো,নিধির হাত অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে,চেহারায় তীব্র ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।সেটা দেখে নির্জন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
‘আরে,আরে..এতো কাঁপছো কেনো?দেখেছো,আমি কত স্বাভাবিক!এরপর থেকে প্রতিটি খু**ন তুমি আর আমি মিলে করবো।তুমি প্ল্যান বানাবে,আর আমি মা**র্ডার করবো।তোমাকে ওদের গায়ে হাত দিতে হবে না,তাহলে আবার আমার হিংসা লাগবে।আর যদিও তুমি নতুন..ব্যাপার না..আমার সাথে থাকতে,থাকতে আরও বুদ্ধিমতী এবং সাহসী হয়ে যাবে।আর এইসব স্বাভাবিক বিষয় নিয়ে কাঁপা-কাঁপি বন্ধ করে,আমার কথা শোনো।’
বলেই আলমিরার দিকে ইশারা করে,নির্জন বলতে শুরু করলো,
“আলমিরার ভিতরে থাকা বাতাসকে স্টেরাইল রাখার জন্য, আমি বিশেষ একটি বিপরীত গ্যাস ব্যবহার করেছি।এই গ্যাসটি অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে দ্রুত বিক্রিয়া করে, যাতে ব্যাকটেরিয়া এবং পঁচনশীলতা প্রতিরোধ করা যায়।
আর,আলমিরার ভিতরে একটি উন্নত ডিহাইড্রেশন সিস্টেম রয়েছে,যেটা রূদ্ধি করে দেয়।এটি ভ্যাপরাইজেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প অপসারণ করে,ফলে লা**শটির পঁচন এবং ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।”
“এছাড়াও বিভিন্ন রাসায়নিক প্রিজারভেটিভ যেমন ফরমালডিহাইড,গ্লিটারালডিহাইড এবং অ্যাসিটিক অ্যাসিড ব্যবহার করেছি।এই রাসায়নিকগুলো সেলুলার স্তরে কাজ করে এবং কোষগুলোকে সুরক্ষিত করে।
আর,আলমিরার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি অটো ক্লাইমেট কন্ট্রোল সিস্টেম রয়েছে।এটি একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখে,যেটা পঁচন প্রক্রিয়া রোধ করে এবং লা**শটিকে অক্ষত রাখে।”
একাধারে কথাগুলো বলে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে নির্জন আবারও বলতে শুরু করলো,
“এই আলমিরাটি ভ্যাকুয়াম সিলিং পদ্ধতির মাধ্যমে সিল করা হয়েছে।এতে করে বাইরের বাতাস প্রবেশ করতে পারে না এবং সাপেক্ষের ক্ষতিকর প্রভাব কমে যায়।
আর একটি ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করেছি,যেটা আলমিরার ভিতরের অবস্থার তাপমাত্রা,আর্দ্রতা এবং গ্যাসের স্তর পরীক্ষা করে।এই সিস্টেমটি নিয়মিতভাবে তথ্য সংগ্রহ করে,যাতে আমি নিশ্চিত হতে পারি যে,সবকিছু সঠিকভাবে চলছে কিনা।”
“আর এই বিশেষ আলমিরাটি মেয়েটিকে দীর্ঘদিন ধরে অক্ষত রাখার জন্য নিখুঁত ব্যবস্থা করেছি।বুঝলে ডার্ক কুইন?’
বলেই নিধির দিকে তাকাতেই দেখলো,নিধি এক দৃষ্টিতে আলমিরায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে আছে।”
“নিধির এহেন কার্যে ভীষণ ক্ষিপ্ত হলো নির্জন।নিধির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
‘ওই ছলনাময়ী নারীর দিকে এত গভীর দৃষ্টিতে তাকানোর কি আছে?তুমি শুধু আমার দিকে এভাবে তাকাবে।নেক্সট টাইম যেন এমন ভুল না হয়,হুম…
এইবার আসো,তোমাকে আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।যদিও ও তোমার-আমার মতো মানুষ নয়।তবে গেস করতে পারবে,সেটা কি?”
“নিধি হতভম্ব হয়ে নির্জনের মুখের পানে তাকিয়ে থাকল।ওর মাথা বারবার ঘুরে আসছে।মনে হয় এক্ষুনি মেঝেতে লুটিয়ে পড়বে।
নির্জন সেই বিষয়টি উপেক্ষা করে,নিধিকে আরেকটি আলমিরার সামনে নিয়ে গিয়ে,আলমিরার দরজা খুলতেই,ভেতরে তাকিয়ে তীব্র ভয়ে চোখজোড়া ছানাবড়া হয়ে গেলো নিধির।”
“নির্জনের দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকাতেই,নির্জন ওকে আরেকটু ভয় দেখানোর জন্য বললো,
‘ফোঁস….
হাহাহাহা…কি হলো ভয় পেয়েছো?উহুম,তোমার মত সাহসী মেয়ের ভীতু দৃষ্টি মানায় না।শোনো,
এটা হলো রাসেলস ভাইপার সাপ।’
“এই সাপটিকে আমি ২দিন আগে,ঢাকা থেকে দূরত্বে একটি গ্রাম থেকে ধরে এনেছি।এটা আগে থেকে প্ল্যান ছিলো।যদিও এই বি**ষাক্ত সাপটিকে ধরার জন্য ইঁদুর এবং ব্যাঙ আমাকে সংগ্রহ করতে হয়েছে।তবে আমার শত্রুদের ইউনিক স্টাইলে শাস্তি দেওয়ার জন্য রিস্ক নিয়ে এটাকে ধরেছি।জানো,এটার তেজ একদম আমার মতো।তাইতো ওর সাথে আমি ফ্রেন্ডশিপ করেছি।আর আমার বিশেষভাবে তৈরি করা লাঠিতে সাপটি ঢুকে পড়েছে।এবং নিজের অজান্তেই আমার আঁধার রাজ্যে বন্দী হয়েছে।আর এই লাঠিটি মোটামুটি ৫ ফুট লম্বা এবং ৮ ইঞ্চি ব্যাসের।এর বাইরে একটি শক্ত কাঠের তৈরি আবরণ আছে,যেটা সাপটির জন্য নিরাপদ এবং সুরক্ষিত স্থান প্রদান করে।”
“এই দেখো,লাঠির বাইরে একটি বন্ধনী দেওয়া আছে,যাতে সাপটি সহজে বাইরে আসতে না পারে।এই বন্ধনীর মধ্যে একটি বড় প্যাডলকের ব্যবস্থা রয়েছে,যেটা শুধুমাত্র আমি খুলতে পারবো।”
“এছাড়া,লাঠির সাইডে ছোট ছোট ছিদ্র রয়েছে,যেটা সাপটির জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে।এই ছিদ্রগুলো এত ছোট যে,সাপটি সহজে বাইরে বের হতে পারে না কিন্তু ভিতরে সে অস্বস্তি বোধ করে না।”
“আর দেখো,লাঠির অভ্যন্তরে একটি নরম স্তর রয়েছে,যেটা সাপটিকে আহত হতে বাঁধা দেয়।এই স্তরটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে,যাতে সাপটি সহজে সরে যেতে পারে এবং ভিতরে শান্তিতে থাকতে পারে।
আর এই লাঠিটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে এটি সাউন্ড প্রুফ,ফলে বাইরের কোন শব্দ সাপটিকে বিরক্ত করতে পারে না।এর ফলে,সাপটি পুরোপুরি শান্তিতে থাকতে পারে।”
“আর আমি বিশেষ প্রয়োজনে সাপটিকে ব্যবহার করার জন্য বের করেছি।বিশেষ করে,এটা আমার শত্রুদের আক্রমণ করার জন্য পারফেক্ট একটি প্রাণী।”
“ওহ,ওর মনে হয় ক্ষুধা লেগেছে।কি বলোতো,ও আবার ক্ষুধা সহ্য করতে পারেনা।’
বলেই নির্জন,লাঠিতে আবদ্ধ রাসেলস ভাইপারের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
‘ওয়েট,বন্ধু..এখনই তোমার খাবারের ব্যবস্থা করছি।’
বলেই নিধির হাত ছেড়ে,আলমিরার পাশে থাকা ছোট ছোট ছিদ্রযুক্ত একটি খাঁচা,সাপটির সামনে আনল।
নিধি সেই খাঁচাটির দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।নির্জনের একের পর এক বিস্ময়কর কর্মকাণ্ড দেখে,তার ভাষাগুলো যেন অনায়াসে হারিয়ে যাচ্ছে।”
“খাঁচাটির ভেতর অনেকগুলো ব্যাঙ আর ইঁদুর এলোমেলো ভাবে ছোটাছুটি করছে।সেটা দেখে নির্জন পৈ**শাচিক হাসি দিয়ে বললো,
‘বুঝেছি,তোরাও মৃ**ত্যুর আগে একটু ইনজয় করে নিচ্ছিস।কিন্তু,এখন তো তোদের কে আমার বন্ধুর পেটে যেতে হবে।’
বলেই,লাঠিতে থাকা বিশেষ ধরণের ছিপি টা খুলে,লাঠিটি খাঁচার মধ্যে ঢুকিয়ে দিতেই,রাসেলস ভাইপার তার প্রিয় খাদ্য গুলোকে পেয়ে,ভ**য়ংকর আওয়াজ (ফোঁসফোঁস) করার পর,তৃপ্তির সহিত ভক্ষণ করলো।’
‘সেটা দেখে নির্জনের মনও বেশ তৃপ্ত হলো এবং খাঁচা থেকে লাঠিটি সন্তর্পণে বের করে ঢাকনাটি লাগিয়ে,আবারও লাঠিতে থাকা সাপটিকে আলমিরাতে রেখে,হাত দিয়ে ইশারা করে ‘বাই..বাই’ বলে আলমিরার দরজা বন্ধ করে দিলো।”
“এদিকে ছোটবেলা থেকে যেই ‘সাপ’ নামক প্রাণী টিকে সবচেয়ে বেশি ভয় পেতো,সেটাকে আজ চোখের সামনে এমনভাবে দেখে,নিধি মাথা ঘুরে পড়ে যাবে প্রায়,এমন সময় নির্জন নিধির কোমরে হাত দিয়ে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে বললো,
‘কি হলো তোমার?এখনোও ভয় পাচ্ছো নাকি?আচ্ছা,আর ৫ মিনিট..
তোমার ভয় এখন পুরোপুরি দূর হয়ে যাবে।’
বলেই,নিধির দুর্বল হাতটি টেনে সেই কফিনগুলোর কাছে নিয়ে গেলো।
অতঃপর প্রথম কফিন টি খুললো,
‘প্রথম কফিনটি খুলতেই চোখের সামনে একটি যুবকের লা**শ দেখতেই,ভয়ে চি**ৎকার করতে গিয়েও গলায় স্বর আটকে গেলো নিধির।
নির্জন বিষয়টি উপেক্ষা করে বললো,
‘রিল্যাক্স,রিল্যাক্স…এগুলো আগে দেখো,তারপর না হয় তোমার মনের কথা গুলো স্বাধীন ভাবে বলবে।’
বলেই একে একে বাকি তিন টি কফিনও খুললো।”
“একে একে ৪জন যুবকের লা**শ দেখে,এইবার যেন নিজের শরীর কে সামলে রাখতে কষ্ট হচ্ছে নিধির।প্রতিটি বাস্তবতা যেন তার কাছে দুঃস্বপ্নের মত লাগছে।”
“অতঃপর নিধির ভাবনার মাঝেই,ওর হাত ধরে টেনে নির্জন প্রথম কফিনের কাছে নিয়ে গিয়ে,র**ক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
‘মনে আছে,এই ৪জন বা**স্টার্ডগুলোর কথা?যারা তোমাকে,তোহা কে এবং নাদিয়া কে চলনবিলের নদীতে সম্ভ্রমহানি করতে চেয়েছিলো?ওদের চেহারাগুলো মনে পড়ে ডার্ক কুইন?
জানো,ওদের কে আমি আগে থেকেই চিনি।এর আগেও একবার চলনবিলে ঘুরতে গিয়ে দেখেছিলাম,কিছু মেয়ের সাথে ওরা খারাপ আচরণ করছিলো।
আর,তোমাদের সাথেও যেদিন এমন টা হলো,সেইদিনই বুঝেছি,এগুলো ওদের কাজ।”
“কিন্তু..কিন্তু যেখানে আমার ডার্ক কুইনের সাথে কেউ এমন আচরণ করবে..তাকে আমি বাঁচিয়ে রাখি কি করে?
যদিও তখন তোমাকে আমি ভালোবাসতাম না।কিন্তু যখন ভালোবেসেছি,তখন থেকেই আমার মনে প্রতিশোধের স্পৃহা জেগে উঠেছিলো।তাই তো আমি গ্রামের ক্ষেত থেকে আমার প্রিয় বন্ধুটিকে ধরে এনেছি,যেন ওদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দিতে পারি।গতকাল সন্ধ্যায় তোমাকে রুমে তালাবদ্ধ রেখে,আমি আমার বন্ধু রাসেলস ভাইপার কে নিয়ে, ৪ঘন্টা জার্নি করে সিরাজগঞ্জের চলনবিলে গিয়েছিলাম।সেখানের আশেপাশের কয়েকটি জায়গায় ওদের কে খুঁজেছি।ভেবেছিলাম,হতাশ হয়ে আমাকে বাসায় ফিরে আসতে হবে,কিন্তু অবশেষে যেই জঙ্গলটিতে তোমার আর আমার প্রথম শরীর এবং মনের সংঘর্ষ হয়েছিলো,সেখানেই ওদের কে পেয়েছি।”
“আমার মনে যে তখন প্রতিশোধের আগুন জ্বলছিলো,নিরু।চলনবিলের পাশে সেই জঙ্গলেই আমার শত্রুরা মজার আসর বসিয়ে,টর্চলাইটের আলোতে তাস খেলছিলো আর ধূমপানের ধোঁয়া ছড়িয়ে দিচ্ছিলো চারদিকে।
আমি পা টিপে টিপে সন্তর্পণে হেঁটে গিয়ে,এক হাতে লাঠি আর তার মধ্যে থাকা রাসেলস ভাইপার নিয়ে ওদের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।”
“যখন শুকনো পাতার খড়খড়ে আওয়াজে,পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ওরা ঘুরে তাকালো,তৎক্ষণাৎ ওরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই,আমি ওদের মাথার পেছনে ক্লোরোফর্মের গ্যাস স্প্রে করলাম।কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই,চারজনই মাটিতে ঢলে পড়লো,একেবারে নিস্তেজ হয়ে গেলো।”
“আমি শান্তভাবে লাঠি থেকে সাপটি নামিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে দিলাম।রাসেলস ভাইপার সাপটি নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য সজাগ হয়ে তাদের শরীরে কা**মড় বসালো।বি**ষের তীব্রতা দ্রুত তাদের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো।কিছুক্ষণেই তাদের হাত-পা অবশ হতে শুরু করলো।
অতঃপর তাদের নিষ্প্রাণ দেহগুলো গাড়িতে তুলে নিয়ে,আমি বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
তারপর বাসায় এসে আমার প্রিয় রুমটিতে ঢুকে,তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এই কফিনগুলোতে ওদের
লা**শ গুলো রেখে,সুন্দর করে সংরক্ষণ করলাম,যেন তোমার শত্রুদের এহেন পরিস্থিতি দেখে তুমি আত্মতৃপ্তি পাও।”
“আর তুমি তো নিশ্চয়ই নিউজে শুনেছো যে,
রাসেলস ভাইপার সাধারণত একবারে একটি শিকারকে কা**মড়ে বি**ষ প্রয়োগ করে।তবে,যদি তার কাছে একাধিক শিকার থাকে এবং যদি সে প্রয়োজন বোধ করে,তাহলে সে পরপর একাধিক কা**মড়ের মাধ্যমে বি**ষ প্রয়োগ করতে পারে।সাপটির কা**মড়ে বি**ষাক্ততা এবং আ**ক্রমণের কারণ হিসেবে,এটি একসঙ্গে একাধিক মানুষের উপর বি**ষ প্রয়োগের জন্য সক্ষম হতে পারে।কিন্তু সেক্ষেত্রে তা অতি মাত্রায় কষ্টকর ও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।”
“সাধারণত,রাসেলস ভাইপারের বি**ষ শক্তিশালী এবং মাত্রা অনুযায়ী এটি ১০০-২০০ মিলিগ্রাম বি**ষ একবারে প্রয়োগ করতে পারে,যেটা একাধিক ছোট প্রাণীকে মা**রতে যথেষ্ট।মানুষের জন্যও এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং প্রায়ই মা**রাত্মক হতে পারে।তবে একসঙ্গে একাধিক মানুষের ওপর তার বি**ষ প্রয়োগ করার জন্য বিশেষ কোন সক্ষমতা নেই;এটি প্রায়ই পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল।”
“সবকিছু ভেবেচিন্তে,আমি আমার বন্ধুটিকে দিয়ে ওদেরকে ভ**য়াবহ ভাবে শাস্তি দিয়েছি।
আর জানো,ওদের কে আমি কিভাবে সংরক্ষণ করেছি?
বলেই,প্রথম কফিনে থাকা লা**শটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শুরু করলো,
“১.কালো বি**ষ (Black Venom)”-
এটি হলো ওই বখাটেদের দলের নেতার লা**শ।এই লা**শটি রাসেলস ভাইপারের বি**ষে শরীর কালো-নীল হয়ে ফুলে উঠেছে।মৃ**ত্যুর পর আমি এটি সংরক্ষণ করতে ফরমালডিহাইডের তীব্র দ্রবণে পুরো শরীর ডুবিয়ে রেখেছি।ফরমালডিহাইড লা**শের কোষগুলোকে জ্যান্ত রেখে,এই ভ**য়ঙ্কর মৃ**ত্যুর নিদর্শন যেন জীবন্ত রাখে,আর আমি এবং তুমি সেটা দেখে যেন তৃপ্তি পাই,তাই এভাবে সংরক্ষণ করেছি।”
“২.দ্বিতীয় কফিন,”বি**ষাক্ত হাসি (Poisoned Smile)”-
এই লা**শটি মৃ**ত্যুর আগেই বি**ষের তীব্র যন্ত্রনায় মুখ বি**কৃত হয়েছে।এই লা**শটির মুখমণ্ডল সিলিকন ওয়ার্নিশ দিয়ে আবৃত করে রেখেছি,যাতে বি**কৃত মুখটি স্থির থাকে।শরীরের বাকিটা পটাশিয়াম ডাইক্রোমেট দিয়ে সংরক্ষণ করেছি,যেটা লা**শটির ত্বকে ভ**য়ঙ্কর লালচে-বাদামি আভা এনে দিয়েছে।”
“নির্জনের কথাগুলো কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই,নিধি কফিনের ভেতরের লাশের সেই বি**কৃত মুখটি দেখে শিউরে উঠলো।”
“নির্জন আবার বলতে শুরু করলো,
” ৩.তৃতীয় কফিন,”মৃ**ত্যুর ছায়া (Shadow of Death)”-
এই লা**শটি সরাসরি রাসেলস ভাইপারের বি**ষে সংক্রমিত হয়ে র**ক্তপাত বন্ধ হওয়ার ফলে সারা শরীর কালচে-লাল হয়ে রয়েছে।আমি এখানে লা**শটিকে ব্লিচ এবং মিথানলের সংমিশ্রণে সংরক্ষণ করেছি,যেটা লা**শের ত্বকে কালো ছায়া এনে দিয়েছে।”
বলেই মুচকি হেসে আবার ইশারা করলো,দেখো,
“৪.শেষের কফিন,”র**ক্তের ফোয়ারা (Fountain of Blood)”-
এই লা**শটি মৃ**ত্যুর পর র**ক্তপাত থামানো হয়নি,বরং আমি তাকে চিরস্থায়ী করতে ব্লাড ফিক্সেটিভ ব্যবহার করেছি।লা**শের শরীরকে পুরোপুরি সিল করেছি ভিনেগার ও প্রিজারভেটিভ সলিউশনের সংমিশ্রণে,যেটা লা**শের র**ক্তকে ঠাণ্ডা,থকথকে ফোয়ারার মতো লাগাচ্ছে।
আর এগুলো আমার পূর্বপরিকল্পিত ছিলো।তাই,কফিনটির নাম দিয়েছি ‘র**ক্তের ফোয়ারা’।”
“এদিকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রুমটিতে,নিধি তার দুর্বল শরীর নিয়ে একের পর এক অদ্ভুত জিনিসগুলোর সম্মুখীন হয়ে,আতঙ্কে নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না।নিধির শরীর কাঁপতে থাকল,চোখ বেয়ে অনবরত নোনাজল গড়িয়ে পড়লো।নিধি এক মনে ভাবতে থাকল,
‘নির্জনের এই ভ**য়ঙ্কর রাজ্য থেকে পালাবে কিভাবে?আদৌ কি পালানো সম্ভব?’
“এদিকে স্বচ্ছ হেলমেটের আড়ালে নিধির চোখের পানি দেখে,নির্জন একে একে কফিনগুলো বন্ধ করে দিয়ে,নিধির দুই বাহু ধরে,ঘাড় কাত করে,উত্তেজিত স্বরে বলতে থাকল,
‘কি হলো,নিরু?ওদের এমন শাস্তিতে তোমার মন ভরেনি,হ্যা?তুমি বললে,আমি ওদেরকে কু**চি কু**চি করে কে**টে তোমার সামনে রাখব।কি হলো,চুপ করে আছো কেনো,হুম?’
“নির্জন কথাগুলো বলতে বলতেই,নিধি চোখ জোড়া বন্ধ করে,নির্জনের বুকে ঢলে পড়লো।”
#চলবে…