হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-৪৭+৪৮

0
20

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪৭
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]

“তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো,ছেড়ে দেবো না,
তোমায় বক্ষ মাঝে রাখবো,ছেড়ে দেবো না।”

“নির্জনের নিধিকে এভাবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গান গাওয়াতে,হকচকিয়ে গেলো নিধি।
কতদিন পর প্রিয় মানুষটির স্পর্শ পেলো।’
ভাবতেই চোখের কোণে নোনাজল দেখা গেলো।”

“নিধি নির্জনের বুকে মাথা রেখে,নিচু স্বরে বললো,

‘নির্জন,ছাড়ুন প্লিজ..আশেপাশের মানুষগুলো দেখছে।আমার অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে।’
এদিকে কিছুটা দূর থেকে সিকিউরিটি গার্ড রা নিধির ফ্যাকাশে চোখ-মুখ খেয়াল করে,ইশারা করলো,সবকিছু ঠিক আছে কিনা?

“নিধি তাদের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বোধক ইশারা করতেই,গার্ডগুলো দ্রুত পায়ে ছুটে এসে পেছন থেকে নির্জনের দুই হাত ধরে বেঁধে ফেললো।
আচানক এহেন কাহিনীতে কিছুটা ভড়কে গেলো নির্জন।গার্ডগুলোর দিকে র**ক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলতে থাকল,

‘আমাকে আবার ধরেছো কেনো?দেখছো না,আমি আমার আমার নিরুর সাথে কথা বলছি?তোমাদের দেখি নূন্যতম বোঝার ক্ষমতা নেই।হাজবেন্ড-ওয়াইফের মাঝখানে এভাবে কেউ আসে?’

“নির্জন এভাবে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে,অপরদিকে নিধি নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে নিজের স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছে।সে যেন আজ ভাষাহীন।যেটুকু আশার আলো দেখেছিলো,সেটাও হয়তো নিভে গেছে।গার্ডদের সামনেই নির্জনের কাছে এসে তার কাঁধের দুই পাশে শার্ট খামচে ধরে কান্নারত গলায় বললো,

‘কবে সুস্থ হবেন আপনি?আর কত কষ্ট দিবেন আমায়?আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় আপনি ইচ্ছে করে এগুলো করছেন।আপনার সাথে মনে হয় আমিও পা**গল হয়ে যাচ্ছি।আর কত কাঁদালে আপনি শান্তি পাবেন,বলুন তো?’

বলেই নির্জনের কাছ থেকে কয়েক কদম দূরে সরে গিয়ে,কন্ঠে তেজ নিয়ে গার্ডদের বললো,

‘নিয়ে যান তাকে,প্লিজ।’

“নিধির মুখনিঃসৃত কথা,
‘নিয়ে যান তাকে,প্লিজ।’
কথাটি শুনে নির্জন আকস্মিক আরও রাগান্বিত হয়ে উঠল।তার চোখে এক অস্বাভাবিক আগ্রাসন ফুটে উঠল,যেন তার ভেতরের পা**গলামোকে কেউ আরও প্ররোচিত করছে।নিধির দিকে র**ক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো,

‘আমি যাচ্ছি না,আমার নিরুর সঙ্গে আমার কথা শেষ হয়নি।আপনারা আমাকে ছাড়ুন,বলছি।’
বলেই গ**র্জে উঠল নির্জন।আর গার্ডদের পেছনে সরিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল।”

“গার্ডরা প্রথমে কিছুটা পিছু হটল,কিন্তু দ্রুত আবার নিয়ন্ত্রণে আনল পরিস্থিতি।তাদের একজন ইনজেকশনের জন্য প্রস্তুত হতে থাকল।অন্য একজন নির্জনকে শক্ত করে ধরে রেখেছে,যেন পালানোর কোনো ফাঁক না পায়।”

“নিধি চুপচাপ দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখছে।তার চোখ থেকে অনবরত অশ্রু ঝরছে,কিন্তু মুখে কোনো অভিব্যক্তি নেই।একটা শূন্যতায় যেন সব আশা হারিয়ে গেছে।”

“নির্জন এইবার নিধির দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলতে থাকল,

‘ডার্ক কুইন,তুমি এটা করতে পারো না।আমি তোমাকে ভালোবাসি জানপাখি।’

“নির্জনের কণ্ঠে এহেন আকুলতা বুঝতে পেরে ভীষন কষ্ট হলো নিধির।কিন্তু তার পা**গলামোর কাছে বারবার হার মানতে হচ্ছে নিধির।’
ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে,আবারও কঠোর স্বরে গার্ডদের উদ্দেশ্য করে বললো,

‘তাকে নিয়ে যান,প্লিজ।’

“নিধির কথা শুনে,গার্ডরা নির্জনের হাতে ইনজেকশন পুশ করল।মুহূর্তের মধ্যে,তার শরীর ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে এলো,এক ভ**য়ার্ত নিস্তব্ধতা নেমে এলো চারপাশে।নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা আশেপাশের কিছু মানুষ এই দৃশ্য দেখে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকল।”

“নির্জনের অচেতন শরীর গার্ডরা তুলে নিয়ে যেতে লাগল।নিধি কোনো শব্দ না করে নির্জনের ঘুমন্ত মুখস্রির পানে তাকিয়ে থাকল।তার হৃদয় ভে**ঙে যাচ্ছে,কিন্তু মুখের তীব্রতা যেন তাকে শক্ত করে রেখেছে।”

“গার্ডদের চলে যাওয়ার পরে নিধি ধীরে ধীরে মাটিতে বসে পড়ল।তার ঠোঁট কাঁপছে,কিন্তু কথা বলতে পারছে না।সে শুধু নীরবে নিজেকেই প্রশ্ন করলো,

‘কবে শেষ হবে এই যুদ্ধ?’

————
“সময় চিরবহমান,তার স্রোতে আমরা সবাই ভেসে যাই।থেমে যাওয়ার কোনো উপায় নেই,শুধু কিছু স্মৃতি আর অভিজ্ঞতা জমা হয় পথে।প্রতিটি ক্ষণ নতুন,আবার প্রতিটি মুহূর্ত অতীতের সঙ্গে জুড়ে থাকে।”

“নিধি ড.মায়ার কেবিনে বসে আছে,তার চোখে একরাশ আশার ঝিলিক।আরও ৩ মাস কে**টে গেছে এবং এই সময়টা যেন অনন্তকাল বলে মনে হয়েছে তার কাছে।প্রতিদিনের যন্ত্রণা,অনিশ্চয়তা,আর নির্জনের অনুপস্থিতি তাকে নিঃশেষ করে ফেলেছিলো।আজ দীর্ঘদিন পর ড.মায়া তাকে ডেকেছেন,কারণ নির্জনের অবস্থা অনেকটাই ভালো।”

“ড.মায়া বললেন,

‘তোমার স্বামী এখন বেশ সুস্থ। তবে…’

“ড.মায়ার কথা শুনে,নিধির হৃদয় যেন এক মুহূর্ত থেমে গেলো।উত্তেজিত স্বরে বললো,

‘তবে?তবে কি,আন্টি?’

“মায়া এক গ্লাস পানি নিধির দিকে এগিয়ে দিয়ে ধীর কণ্ঠে বললেন,

‘তুমি ওকে বাসায় নিয়ে যেতে পারো,কিন্তু কিছু শর্ত মানতে হবে।নির্জনের জন্য নিয়মিত মেডিসিন চালিয়ে যেতে হবে।ওর নিয়মিত থেরাপি আর মনিটরিং দরকার।আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো,ওর আশেপাশের পরিবেশ যেন একদম শান্ত থাকে।কোনো চাপ,উত্তেজনা বা মানসিক আ**ঘাত যেন না পায়।’

“নিধি ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।তার মনের মধ্যে খুশির স্রোত বইছে,আবার অজানা ভয়ের শীতল ছোঁয়া তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।নির্জন আবার বাসায় ফিরবে,তার পাশে থাকবে,তার জীবনের অংশ হয়ে ফিরবে,কিন্তু সেই নির্জন কি আগের মতো হবে?”

“মায়া নিধির ভাবনায় ছেদ টেনে বললেন,

‘আরেকটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে,নিধি।এই সময়টাতে তুমি তার জন্য সবচেয়ে বড় সাপোর্ট।তুমি যদি একটু অসাবধান হও,তার সুস্থতা আবারও পিছিয়ে যেতে পারে।তোমার কাছে আমি এটা বলতে চাইনি,কিন্তু ওর অবস্থা খুব ভ**ঙ্গুর।তোমাকে শক্ত থাকতে হবে নিধি।’

“নিধি নিজের ভিতরে এক গভীর শ্বাস নিয়ে ড.মায়ার কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করল।সবকিছু ঠিকমত মানলে নির্জন সুস্থ থাকবে।এই বিশ্বাস নিধিকে অদ্ভুত রকমের সাহস দিলো।মনের খুশি যেন এইবার মুখে প্রকাশ পেলো।”

“নিধি মুচকি হেসে বললো,

‘আমি সব করবো,আন্টি।নির্জনকে আমি আর হারাতে পারব না।’

“ড.মায়া একবার নিধির দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে হাসলেন।অতঃপর বললেন,

”তাহলে যাও,তাকে নিয়ে যাও।আমার মনে হয় সে তোমার যত্ন ও ভালোবাসায় সেরে উঠবে।’

“নিধি ড.মায়ার কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো,কিন্তু তার মনে একটা প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খেলো,

‘এই নির্জন কি সত্যিই সেই নির্জন,যাকে আমি একদিন ভালোবেসেছিলোম?আচ্ছা,আমাদের সম্পর্ক কি আগের মতো করে আবার জোড়া লাগবে?’
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে ইউনিটের দিকে গেলো নিধি।
নিধি হসপিটালের করিডোরে ধীরে ধীরে হাটছিলো,আর ভাবছিলো,

‘নির্জন আমাকে দেখে আবারও সেই নদীর পাড়ের মতো ঘটনা ঘটাবে না তো?নাকি সুস্থ-স্বাভাবিক আচরণ করবে?’

ভেবে ইউনিটের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো,

‘মাহির,দিগন্ত এবং নির্জন কিছুক্ষণ আগে থেকে ইউনিটের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।”

“নিধি দূর থেকে নির্জন কে হাসিমুখে কথা বলতে দেখে,স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে যেতে লাগল।তখনই ওর মনে হলো,ওর পাশ দিয়ে কোনো এক পরিচিত মানুষ হেঁটে গেলো।’

ভেবে,নিধি পেছনে তাকিয়ে লোকটি কে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘এই যে,শুনছেন?’

“নিধির কন্ঠস্বর শুনে লোকটি পেছনে তাকাতেই,তার চোখ জোড়া যেন থমকে গেলো।লোকটির ফর্সা মুখস্রিতে যেন মন ভোলোনো হাসি খেলে গেলো।বিস্ময়ের স্বরে বলে উঠলো,

‘আরে নিধি,তুৃমি এখানে?কত বছর পর দেখা হলো।’
বলেই ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ফেললো মেহরাব।”

“নিধি আবারও মুচকি হেসে বললো,

‘মায়া আন্টি তো একবারও আমাকে বলে নি,যে আপনি এখানে কাজ করেন?’

“মেহরাব মুচকি হেসে বললো,

‘আমি মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করি আরেকটি হসপিটালে।’

“নিধি কিছুটা অবাক হলেও সৌজন্যমূলক ভাবে মাথা নেড়ে বলল,
‘ও আচ্ছা।আপনি কি এখানেও কাজ করেন?’

“ড.মেহরাব হাসল।বললো,

‘না,আমি এখানে কাজ করি না।কিন্তু মাঝে মাঝে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এখানে আসি।আজ কিছু কাজের জন্য এসেছি,আর তোমার সাথে দেখা হয়ে গেলো।তুমি আগের মতোই আছো।তবে কিছুটা লম্বা হয়েছো।’
বলেই ফিক করে হেসে দিলো মেহরাব।”

“নিধি তার উত্তেজনাময় মুহূর্তের মধ্যে ড.মেহরাবের পরিচয় শুনে একটু থমকে গেলো।ভাবলো,

‘ড. মায়া আন্টির ছেলেও একজন সাইকিয়াট্রিস্ট?এর মানে মা-ছেলে দু’জনেই এই পেশায় যুক্ত!’

ভেবে মেহরাব কে বললো,

‘তাহলে..আপনাকে সংক্ষেপে কিছু কথা বলি।’
বলেই মেহরাব কে নির্জনের অতীতের কিছু ঘটনা,এবং বর্তমানের ঘটনাগুলো খুব সংক্ষেপে বললো।”

“নিধির দুঃখের কথাগুলো শুনে মুহুর্তেই মুখ-মন্ডল মলিন হয়ে গেলো মেহরাবের।সে ভাবতে পারেনি,নিধির বিয়ে হয়ে গেছে।আর সে এতগুলো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে।’

ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“নিধি,আমি চাই নির্জনের চিকিৎসায় কোনো খুঁত না থাকে।তোমার স্বামীকে আরও উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আমার একজন সিনিয়র স্যার আছেন,ড.আজাদ।তিনি মানসিক রোগের চিকিৎসায় একজন বিশেষজ্ঞ এবং আমার প্রশিক্ষণ তার কাছেই।”

“নিধি কিছুটা অবাক হয়ে তাকালো মেহরাবের দিকে।জিজ্ঞেস করলো,

‘ড.আজাদ?’

“মেহরাব মাথা নেড়ে বললো,

‘হ্যা,তিনি আমার শিক্ষক।অনেক কঠিন কেসে তার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা আছে।আমার মনে হয়,যদি তিনি নির্জনকে দেখেন,তাহলে আরও ভালোভাবে তার চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।আমি চাই,তুমি তার সাথে একবার যোগাযোগ করো।’

“মেহরাবের এহেন কথা শুনে,নিধির চোখে যেন এক নতুন আশার আলো ফুটে উঠল।খুশি হয়ে বললো,

‘তাহলে…তিনি কি আমাদের সাহায্য করবেন?’

“মেহরাব মৃদু হাসি দিয়ে বললো,

‘আমি তার সাথে কথা বলব।তুমি চিন্তা করো না।নির্জনের জন্য আমরা যা করা দরকার,সব করব।তবে,তোমাকেও ধৈর্য ধরতে হবে,কারণ এ ধরনের মানসিক চিকিৎসা ধীরে ধীরে কাজ করে।আর মা যেই মেডিসিন গুলো লিখে দিয়েছে,আপাতত সেগুলো চালিয়ে যাও।তোমার স্বামী কে নিয়ে বাসায় গিয়ে,তাকে সময় দাও।তারপর না হয় তোমাকে ড.আজাদ স্যারের সাথে দেখা করাবো।’

“নিধি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।মেহরাবের প্রস্তাবে তার মনে কিছুটা শান্তি ফিরলো।মুচকি হেসে বললো,

‘ধন্যবাদ,ড.মেহরাব।আপনার সহায়তায় হয়তো নির্জনকে আবার আগের মতো ফিরে পাবো।’

“মেহরাব একবার মাথা ঝুঁকিয়ে বললো,

‘তুমি শক্ত থাকো,নিধি।আমি তোমার পাশে আছি।’

বলেই নিজেদের মধ্যে ফোন নাম্বার আদান-প্রদান করে,মেহরাব সেখান থেকে প্রস্থান করলো।’

“এদিকে নিধি পেছনে ঘুরতেই দেখলো,হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে নির্জন হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে মাহির এবং দিগন্ত।’

“নির্জনকে দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো নিধি।ও বুঝে ফেলেছে,যে নির্জন ওকে মেহরাবের সাথে কথা বলতে দেখে ফেলেছে।এখন কি হবে?”

“নিধির ভাবনায় পানি ঢেলে দিয়ে,নির্জন এগিয়ে এসে নিধির ডান হাত মুঠোবন্দি করে বললো,

‘এখনও কি আমাকে ভয় পাও?ডোন্ট ওয়ারি,আমি এখন ভালো আছি।আর এই জায়গার কয়েকজন মানসিক রোগীর সাথেও আমার বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিলো।আর তখনই ডক্টর আমাকে মুক্তি দিলো।’

বলেই হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।অতঃপর স্বাভাবিক স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
‘আচ্ছা,একটু আগে কার সাথে কথা বলছিলে?উনি কে?’

“নির্জনের এহেন কথা শুনে নিধি ভয় নিয়ে বললো,

‘ড.মেহরাব,মায়া আন্টির ছেলে।উনি অন্য হসপিটালে জব করেন।উনি আপনাকে আরও ভালো ডক্টর দেখানোর জন্য সাজেস্ট করলেন।’
বলেই নির্জনের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।”

“নিধিকে অবাক করে দিয়ে,নির্জন মুচকি হেসে বললো,

‘ওহ,এই কথা?ঠিক আছে,তুমি যেমন বলবে,তেমনই হবে।তবে তার আগে আমি বাসায় যেতে চাই।কতদিন হয়ে গেলো তোমার সাথে এক ছাদের নিচে থাকা হয় না।’

“মাহির এবং দিগন্তের সামনে নির্জনের এহেন কথা শুনে,লাজুক হাসল নিধি।
এদিকে দু’জনের কাহিনী বুঝতে পেরে,দিগন্ত দুষ্টু হেসে বললো,

‘এহেম!এহেম!আমাদের মনে হয় এখানে থাকা ঠিক হচ্ছে না।আমিও আমার বউয়ের কাছে যাই।তোমাদের প্রেম দেখে আমার জমানো ভালোবাসা গুলো বেরিয়ে আসতে চাইছে।’

“দিগন্তের সাথে তাল মিলিয়ে মাহির বললো,

‘ঠিক বলেছেন ভাইয়া,আমার স্বপ্নচারিনী ইদানীং বেশ অসুস্থ থাকে।আজ ফোন করে বললো,
ওর শরীর কিছুটা ভালো।ভাবছি,এই সুযোগ টা হাত ছাড়া করা যাবে না।আজ ডিউটি করে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবো।’
বলেই মুচকি হাসল মাহির।”

“এভাবে ৪জন আরও কিছুক্ষণ দুষ্টু-মিষ্টি কথা বলে,নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গেলো।এদের কথপোকথনের মধ্যে নিধি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে বারংবার নির্জনের দিকে তাকিয়েছে।নাহ!আজ নির্জনের চেহারা এবং আচার-আচরণ আর ৫জন স্বাভাবিক মানুষের মতো।নইলে,মেহরাবের কথা শুনে এতক্ষণে তো সিনক্রিয়েট করার কথা।অথচ বিষয়টি সে কতটা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিলো।’
ভেবে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলো নিধি।”

———
“এদিকে আজ সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরে তোহার সাথে লেপ্টে রয়েছে মাহির।”

“তোহা পেয়ারায় কা**মড় বসিয়ে বললো,

‘আপনার জন্য শান্তি মতো পেয়ারাটাও খেতে পারছি না।একটু সরে বসুন।’

“মাহির মুচকি হেসে বললো,

‘আমি তো এই পেয়ারা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি।এটা শেষ হলেই শুরু হবে।’

‘তোহা চোখ পাকিয়ে বললো,
‘কি শুরু হবে?’

‘মাহির চোখ টিপে বললো,

‘সাড়ে ৩মাস যাবৎ আমাকে ঘুরিয়েছো।আর নয়।শুধু আমার অনাগত প্রিন্সেসের জন্য সব সহ্য করেছি।এই অবজ্ঞা আমি আর মানব না।’

“এদিকে মাহিরের কথা শুনে,তোহা শুকনো ঢোক গিলে আগের থেকে আরও ধীরে ধীরে পেয়ারা খেতে লাগল।বিষয়টি মাহির বুঝতে পেরে,ঠোঁট টিপে হেসে তোহার হাত থেকে খপ করে পেয়ারা টি নিয়ে,মুহূর্তেই বাকি পেয়ারাটি নিজের মুখে নিয়ে খেয়ে ফেললো।অতঃপর তোহার কাঁধে হাত রেখে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে,ওর গালে হাত বুলিয়ে মৃদুস্বরে বলতে থাকল,

“তোমার চোখের হাসিতে মিশে আছে চাঁদের আলো,
স্বপ্নচারিনী,তোমায় দেখে হৃদয়ে যেন বাজে মৃদু গান।
তোমার নামের প্রতিটি অক্ষর যেন মধুর স্পর্শ,
তুমি ছাড়া জীবন আমার এক মুহূর্তও যে নীরব হর্ষ।

তোমার কথা ভেবে আমার দিন শুরু হয় মিষ্টিমাখা,
তোমার সাথেই জীবনটা হবে সুরে সুরে গাঁথা।
স্বপ্নচারিনী,তুমি আমার জীবনের একমাত্র প্রেরণা,
তোমার প্রেমেই খুঁজে পাই আমার বেঁচে থাকার মানা।”

~মেহের~

“কবিতা আবৃত্তি করেই তোহার গলায় ঠোঁট ছোঁয়ালো মাহির।দীর্ঘ দিন পর মাহিরের গভীর স্পর্শ পেয়ে তোহার হৃদয়টা স্পন্দিত হলো।সে অনুভব করলো,এই মুহূর্ত তাদের জীবনের সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত।নাহ!তাকেও তো তার প্রিয়তমকে ভালোবাসা উচিত।’
ভেবে তোহা আলতো করে মাহিরের ঠোঁটের দিকে নজর দিলো।মাহিরও ধীরে ধীরে তোহার দিকে ঝুঁকে পড়ল। দু’জনের ঠোঁটের মাঝে ফাঁকা জায়গা কমে এলো,আর তাদের হৃদয় যেন একসাথে মিলিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলো।অবশেষে,দু’জন একে-অপরের সাথে মিশে গেলো এক মিষ্টি,প্রগাঢ় চুম্বনে।তাদের মধুর মিলনের রাতটি যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলো।”

——–
“রাত সাড়ে ১০টায় বেলকনিতে বসে,ফোনে বাচ্চাদের ভিডিও দেখে খিলখিলিয়ে হাসছে নাদিয়া।ওর হাসির শব্দ শুনে,ল্যাপটপ বন্ধ করে দিগন্ত ধীর পায়ে নাদিয়ার পেছনে গিয়ে,ওকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে চুমু দিয়ে মৃদুস্বরে বললো,

‘শুধু ওই বাচ্চা গুলোকেই দেখে যাবে?এই বাচ্চাটার দিকেও তো একটু নজর দেওয়া উচিত,তাই না?’

“দিগন্তের এহেন কথা শুনে নাদিয়া ঠোঁট কামড়ে বললো,

‘ওলে লে..বুইড়া ব্যাটা নিজেকে বাচ্চা দাবি করে।ঢং দেখে আর বাঁচি না।সরো,আমার গরম লাগছে।’

“নাদিয়া আরও কিছু বলার আগেই দিগন্ত ওকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে,নিজেও ওর পাশে শুয়ে হাস্কি ভয়েসে বললো,

‘হানি,একটু পর আমার সাথে শাওয়ার নিলেই ঠান্ডা হয়ে যাবে।কতদিন হয়ে গেলো আমরা একসাথে শাওয়ার নেই না।’
বলেই দুষ্টু হাসলো দিগন্ত।”

“দিগন্তের ঠোঁট কা**টা কথা শুনে,যা বোঝার বুঝে গেলো নাদিয়া।দিগন্তের হাত ছাড়িয়ে,উঠে যেতে চাইলো নাদিয়া।কিন্তু দিগন্তের পুরুষালি শক্তির কাছে হার মেনে আবারও শুয়ে বললো,

‘ইয়ে মানে,বেবি মনে হয় পেটে কিক মা**রছে।আমি এখন ঘুমাবো,নইলে ও শান্ত হবে না।’

“দিগন্ত হো হো করে হেসে,নাদিয়ার ঠোঁট জোড়ায় চুমু দিয়ে বললো,

‘এখন তুমি ঘুমিয়ে গেলে,আমিও তো শান্ত হবো না।এক কাজ করো,আমার ভালোবাসা উপভোগ করে তারপর না হয়,তিন জনে শান্ত হয়ে ঘুমাই,কি বলো?’

“নাদিয়া পিটপিট করে তাকিয়ে বললো,

‘তুমি কি জীবনেও লাগামহীন কথা ছাড়তে পারবে না?’

“দিগন্ত চোখ টিপ মে**রে বললো,

‘তোমার জন্য তো অসম্ভব।ওকে,হাতে সময় কম।’
বলেই নাদিয়ার ওষ্ঠযুগল আঁকড়ে ধরলো দিগন্ত।প্রিয়তমর এহেন ছোঁয়া পেয়ে,নাদিয়াও সে জোয়ারে উ**ন্মাদ হলো।দু’টি শরীর মিলে-মিশে একাকার হয়ে গেলো।অবশেষে পরিতৃপ্ত হলো দু’টি প্রাণ।’

——–
“রাত ১১টায় সবেমাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে নিধি।নির্জন কে নিয়ে বাসায় আসার পর ধুলোমাখা ঘর পরিষ্কার করে,রান্না করে নির্জনের সাথে ডিনার করে মাত্রই শাওয়ার নিয়ে বের হলো।”

“নিধি বের হতেই ওকে দেখে চোখজোড়া আটকে গেলো নির্জনের।ব্লু কালার নাইটি পড়েছে নিধি।ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।চেহারায়ও বিন্দু বিন্দু পানি লেপ্টে আছে।”

“নির্জনের দৃষ্টি উপেক্ষা করে,নিধি আয়নার সামনে গিয়ে চুল মুছতে থাকল।”

“এদিকে এতদিন পর প্রেয়সীকে আবেদনময়ী রূপে দেখে,মনে জমে থাকা আবেগ গুলো যেন উপচে পড়তে চাইছে নির্জনের।চশমা খুলে,বালিশের পাশে রেখে,বিছানা থেকে নেমে ধীর পায়ে নিধির কাছে গিয়ে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,গভীর চুম্বনে মত্ত হলো।
আকস্মিক নির্জনের এহেন স্পর্শে ভড়কে গেলো নিধি।কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে নির্জনের কাছ থেকে ছাড়াতে চাইল নিজেকে।কিন্তু নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানবীকে এতদিন পর কাছে পেয়ে,কিছুতেই ছাড়লো না নির্জন।এক পর্যায়ে নিধি কে সামনে ঘুরিয়ে,ওর ঠোঁট জোড়া সন্তর্পণে আকড়ে ধরলো নির্জন।
অতঃপর নিধিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে,আলতো করে নিধির চুলের ভাঁজে হাত বুলিয়ে দিলো।নেশালো স্বরে বললো,

‘খুব সুন্দর লাগছে তোমায়,ডার্ক কুইন।’

“নির্জনের মুখনিঃসৃত ‘ডার্ক কুইন’ নামটি শুনে,ভীষন ভালো লাগল নিধির।ক্ষণিকের স্পর্শে আবেগাপ্লুত হয়ে,পুরনো ঘটনাগুলো স্বেচ্ছায় ভুলে গেলো নিধি।নির্জনের দিকে তাকিয়ে দেখলো,তার চোখে গভীর ভালোবাসা,যেন সে নিধির প্রতিটি স্পর্শ অনুভব করতে চাইছে।”

“নির্জন নিধির গালে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,

‘তুমি পাশে না থাকলে,আমি হয়তো আজ এখানে থাকতাম না।তুমি আমার জন্য কি করেছো,সেটা ভাষায় বোঝানো সম্ভব না।’

“নিধি একটু হাসলো,নির্জনের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো,

‘আপনার ভালোবাসাই আমাকে শক্তি দিয়েছে,নির্জন।’

“নির্জন ধীরে ধীরে নিধির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো,তার নরম শ্বাস নিধির ত্বকের ওপর এক শীতল শিহরণ বইয়ে দিলো।নিধি নির্জনের দিকে আরও একটু ঝুঁকে পড়লো,তার বুকে মাথা রেখে মৃদু কণ্ঠে বললো,

‘আপনি জানেন,আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি?’

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,

‘জানি,আমার থেকে একটু কম…হাহাহা।জাস্ট কিডিং।’

বলেই নিধির কোমরে নিজের হাত বিচরণ করতে থাকল।
নির্জন ধীরে ধীরে নিধিকে আরও গভীর ভাবে স্পর্শ করতে থাকল।এক পর্যায়ে দু’জনের হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে চলল।নির্জনের হাত নিধির কোমরের চারপাশে জড়িয়ে ধরল,আর নিধি নির্জনের বুকে নিজেকে সমর্পণ করল।এক মুহূর্তে দুজনের শরীর আর হৃদয় একসঙ্গে মিশে গেলো।নিধির নরম অধরে নির্জনের অধর আবদ্ধ হলো,আর সেই স্পর্শে তারা যেন নিজেদের সব অনুভূতি বিনিময় করলো।মধুর মিলন শেষে,নির্জন নিধির কানে কানে ফিসফিস করে বলে
উঠলো,

“তোমার স্পর্শে যেন জেগে উঠল মন,
নির্জন রাতে মিলল স্বপ্নের অনুপ্রেরণ।
শরীরের প্রতিটি ভাঁজে খুঁজে পেলাম সুখ,
তুমি ছিলে পাশে,আমি ভুলে গেছি দুঃখ।

তোমার ঠোঁটে মিশে আমার নিশ্বাস,
চুপচাপ রাতে যেন নীরবতার বাস।
তোমার চোখের গভীরে ডুবে যাই আমি,
তুমি আর আমি,এ পৃথিবী শুধু আমাদের নামি।

মেঘের ছায়ায় ঢাকা সেই আকাশটা,
তোমার ভালোবাসায় পেলাম শান্তির ঠিকানা।
তোমার হৃদয়ে যেন পেয়েছি মুক্তি,
তোমার পাশে জীবনটাই লাগছে অমৃতি।

প্রতি ক্ষণে,প্রতি ছোঁয়ায় নতুন এক গান,
তুমি-আমি আজ যেন একে-অপরের প্রাণ।
মিলনের পর এই রাত্রি অবিরাম,
ভালোবাসার গল্পে রচিত হবে এক নতুন ভোরের নাম।”

~মেহের~

“দীর্ঘদিন পর নির্জনের এহেন মধুর কবিতা শুনে,নিধি যেন আবারও নতুন স্বপ্নের বীজ বুনতে থাকল।কিন্তু আদৌ কি সেই স্বপ্ন সত্যি হবে?”

#চলবে…

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪৮ (বিশেষ পর্ব)
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]

“দীর্ঘদিন পর নির্জনের এহেন মধুর কবিতা শুনে,নিধি যেন আবারও নতুন স্বপ্নের বীজ বুনতে থাকল।কিন্তু,আদৌ কি সেই স্বপ্ন সত্যি হবে?”

“কিছু স্বপ্ন তো নিঃশব্দেই নিঃশেষ হয়ে যায়,তবু মানুষ তার অন্তর্গত শূন্যতায় আশার প্রদীপ জ্বালায়।
নিধির চোখে আজও সেই আলো জ্বলছে,কিন্তু সে জানে না,এ আলোয় কতটা ছায়া মিশে আছে।স্বপ্নের ভেতর যে তৃষ্ণা লুকিয়ে থাকে,তা একদিন মরুভূমির মতো বিবর্ণ হয়ে যায়।”

“স্বপ্নের বীজ যে মাটিতে পড়ে,সেখানে কখনো কখনো বি**ষাক্ত ফল ধরে,যে ফলের স্বাদ নেওয়ার আগেই নেশা কে**টে যায়।আর বাস্তবতা তার নিষ্ঠুরতার মুখোমুখি দাঁড় করায়।”

“কে**টে গেলো ২মাস ১৩দিন।নিধি এবং নির্জন আরও কয়েকদিন সুখী জীবন-যাপন করলো।নিধি যেন তার দুঃস্বপ্নের মত অতীত গুলো কে প্রায় ভুলে যেতে লাগল।কারণ,এই কয়েকদিন নিধির কথা মত নির্জন ওষুধ খেয়েছে।মাহিরের পুরো পরিবার এবং দিগন্ত আর নাদিয়া নির্জনের বাসায় এসে সময় কা**টিয়ে গেছে।তাছাড়া নির্জন,নিধির প্রতিটি ভালো কাজের সঙ্গ দিয়েছে।নিধির কথা মত মেহরাবের ঠিকানা দেওয়া ডক্টরের চেম্বারে গিয়ে,ড.আজাদ কে দেখিয়েছে।ডক্টর আজাদ নির্জনের রিপোর্ট গুলো দেখে,নতুন ওষুধ প্রেসক্রিপশন করে দেন এবং আগের ওষুধ গুলো বাদ দিয়ে,নতুন ওষুধ গুলো সেবন করতে বলেন।”

“ড.আজাদের কথা মত,নিধি নির্জন কে প্রতিটি ওষুধ নিয়ম করে খেতে দেয়।তবে,প্রায় এক সপ্তাহ পর নিধি,নির্জনের মধ্যে অদ্ভুত পরিবর্তন দেখতে পেলো।”

“বিকালে নিধি যখন কিচেনে দাঁড়িয়ে তোহার সাথে কথা বলছিলো,সেই মুহূর্তে নির্জন এসে ফোন টা ওর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে,কল কে**টে রুঢ় স্বরে বলে উঠলো,

‘বোনের সাথে এত কথা কিসের,হ্যা?’
বলেই ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘৩৩মিনিট যাবৎ তুমি ওর সাথে কথা বলছো,এর মানে এতক্ষণ তোমার আমার কথা মনে ছিলো না,তাই না?মিস করো নি আমায়,তাই না?কি হলো,চুপ করে আছো কেনো?আনসার মি!’

“আকস্মিক নির্জনের এহেন আচরণে হতভম্ব হয়ে গেলো নিধি।কপাল কুঁচকে বললো,

‘নির্জন,আপনি আমার সাথে এমন ব্যবহার করছেন কেনো?কি হয়েছে আপনার?’

“নির্জন ভ্রুকু**টি করে নিধির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,

‘কই?আমি তো একই রকম আছি।আমার তো কিছুই হয়নি।হয়েছে তো তোমার।মাঝে মাঝেই দেখি ওই মেহরাবের সাথে কথা বলো।কি ভেবেছো?আমি কিছুই দেখি না?ওকে তো আমি…

“নির্জনের কথা শেষ হওয়ার আগেই,নিধি পাশ কা**টিয়ে দ্রুত পায়ে কিচেন থেকে চলে গেলো।ওষুধের বক্স থেকে পাতাগুলো চেক করে দেখলো,নির্জন ওষুধ গুলো ঠিকমত খেয়েছে।তাছাড়া,ওষুধ খাওয়ার সময় নিধি নির্জনের পাশেই ছিলো।”

ভেবে আনমনে কিছু একটা ভাবতে থাকল নিধি।এরই মধ্যে পেছনে এসে হাজির হলো নির্জন।ঘাড় কাত করে বললো,

‘এগুলোর দিকে তাকিয়ে কি দেখছো?ওষুধগুলো খেয়েছি কিনা?
হাহাহা…এই শোনো,তোমাকে নিয়ে অন্য কিছুর প্রতি ঈর্ষা আমার কখনোই শেষ হবে না,জানপাখি।সেটা তুমি যত ধরনের ওষুধ খাওয়াও না কেনো।এনিওয়ে,অনেক দিন তোমায় স্বাধীনতা দিয়ে দেখলাম,তুমি এত মানুষের সাথে কথা বলে,আমাকে ইগনোর করছো।আমি বুঝতে পারি,ওদের সাথে কথা বলার সময় তোমার ভাবনাগুলো সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকে।তখন তুমি আমায় মিস করো না।অথচ দেখো,আমি আমার কাজের মধ্যেও কতবার তোমাকে মিস করি,কতবার তোমায় ‘ডার্ক কুইন’ বলে ডাকি,কাছে টেনে নেই।আমি চাইলে,আরেকটা জব করতে পারতাম।কিন্তু আমার মনে হয়,তোমার সাথে সময় কা**টানোর জন্য ফ্রিল্যান্সিং পেশা পারফেক্ট।এর মাধ্যমে আমার কোনো অফিসে যেতে হয় না।ঘরে বসে কাজ করি,সেই সাথে তোমার সঙ্গেও থাকা হয়।একদিন তুমি বলেছিলে,

‘বিয়ের পর একা ঘরে থাকতে তোমার খুব কষ্ট হবে।আমি সবসময় পাশে থাকলে,তুমি খুশি হবে।
কিন্তু..কিন্তুু,এখন তো আর সেই খুশি টা তোমার মধ্যে দেখছি না!এখন আর ভালো লাগছে না বুঝি?’
সমস্যা নেই,কিভাবে ভালো লাগাতে হয়,সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।’

বলেই বাঁকা হাসি দিয়ে,হাতে থাকা নিধির ফোন টি সজোরে ফ্লোরে ছুঁড়ে মা**রলো নির্জন।ফোনটি ফ্লোরে পড়তেই,কাচের স্ক্রিনটি ধীরে ধীরে চিড় ধরে ফাটতে শুরু করল।স্ক্রিনে একাধিক ফাটল ছড়িয়ে পড়লো।এই মুহুর্তে ফোনটি দেখতে ঠিক যেন মাকড়সার জালের মতো লাগছে।একবারে ভে**ঙে না গেলেও,ফোনের ডিসপ্লেটি নিস্তেজ হয়ে অন্ধকার হয়ে গেলো।যেন সেটির ভেতরের সব আলো নিভে গিয়ে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে।”

“নিধি স্তব্ধ হয়ে সেই দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকল।অতঃপর বিস্ময়ের দৃষ্টিতে নির্জনের উজ্জ্বল শ্যামরঙা মুখস্রির দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকল,

‘নির্জন,হঠাৎ কিভাবে এত নিষ্ঠুর আচরণ করছে?তাহলে কি আবারও সেই আগের রূপে ফিরে গেলো নির্জন?’
কথাগুলো ভাবতেই,নিধির মস্তিষ্কের আরও ভাবনাগুলো যেন এলোমেলো হয়ে গেলো।ফ্লোরে পড়ে থাকা ফোনটির কাছে গিয়ে,যখনই ফোনে হাত দিতে যাবে,তখনই খপ করে নিধির হাত টেনে ধরলো নির্জন।উত্তেজিত স্বরে বলে উঠলো,

‘ওহ বুঝেছি,এখন আমার থেকে এই ফোনের জন্য বেশি মায়া অনুভব হচ্ছে,তাই না?এর মানে তুমি এই ফোন কে মিস করছো,তাই তো?’

“নির্জনের অদ্ভুত সব কথাবার্তা শুনে,নিধি যেন কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে গেলো।নির্জনের গালে আলতো করে হাত রেখে করুণ স্বরে বলে উঠলো,

‘কি হয়েছে নির্জন?এমন করছেন কেনো আপনি?এই কয়েকদিন ভালোই তো ছিলেন।হঠাৎ করে আবার কি হলো?আমি তো আপনাকে নিয়মিত ওষুধ দিয়েছি।তবুও আপনার আচরণে এত পরিবর্তন হলো কেনো?আপনার কি মাথায় ব্যথা করছে,নির্জন?’

‘নির্জন র**ক্তিম দৃষ্টিতে নিধির চোখে চোখ রেখে মুচকি হেসে বললো,

‘উহুম,এই হৃদয়ে ব্যথা করছে নিরু।কারণ,তুমি আমায় মিস করো না,যেটা আমি তোমার কাছে থেকেও উপলব্ধি করছি।আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে।আমি এই অবহেলা কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না।তাই একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

“নিধি নির্জনের দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?’

“নিধি বলতেই,নির্জন তাকে কোলে তুলে নিলো।অতঃপর ওর কপালে আলতো করে চুৃমু দিয়ে গেস্ট রুমে নিয়ে গেলো।নিধিকে কোল থেকে নামিয়ে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে,হাত দিয়ে ইশারা করে বললো,

‘ওই দেখো,ফ্যানের সাথে রশি টানিয়েছি।প্রথমে ওটাতে তোমাকে ঝুলাবো।তুমি ম**রে যাওয়ার পর,তোমাকে নামিয়ে আমি ঝুলে যাবো।দারুণ হবে,তাই না?তুমি-আমি একসাথে এই নিষ্ঠুর বেড়াজালে আবদ্ধ পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নেবো।’
আইডিয়া টা কেমন,জানপাখি?”

“নির্জনের এহেন পা**গলামো কথা শুনে,যা বোঝার বুঝে গেলো নিধি।এতটুকু খুব ভালো করে বুঝতে পারলো,যে নির্জনের অসুস্থতা আবারও নিষ্ঠুর রূপে তার জীবনে হানা দিয়েছে।কিন্তু নির্জন কে দেখে মনে হচ্ছে,সে যা বলেছে,সেটা সে করেই ছাড়বে।তার দৃষ্টিতে সেই প্রতিজ্ঞার ছাপ যেন স্পষ্ট ভেসে উঠছে।”

ভেবে নির্জনের দিকে অশ্রুভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে,শুকনো ঢোক গিললো নিধি।কি করা যায়,কি করা যায়..
ভাবতেই নিধির মস্তিষ্কে কয়েক সেকেন্ড পর উপস্থিত বুদ্ধির উদয় হলো।হঠাৎ নিধি ফ্লোরে বসে,দুই হাত দিয়ে নির্জনের পা ধরে মলিন স্বরে বললো,

“নির্জন,প্লিজ..আ**ত্মহ**ত্যার মত ভ**য়ানক জিনিস বেছে নিবেন না।আ**ত্মহ**ত্যা মহাপাপ।ইহকাল এবং পরকাল উভয়েই কঠোর শাস্তুি ভোগ করতে হবে।প্লিজ,আপনার মাথা ঠান্ডা করুন।আচ্ছা..আচ্ছা,আপনি যা বলবেন,আমি সব অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো।কারো সাথে যোগাযোগ করবো না,সবসময় আপনার পাশে থাকব,আপনাকে নিয়েই ভাববো।প্লিজ এমন ভ**য়ং*কর কাজ করবেন না।”

‘বলেই নিধি হেঁচকি তুলে কান্না করতে থাকল।নিধির কান্নার শব্দে নির্জনের নিষ্ঠুরতম হৃদয় কিছুটা বিগলিত হলো।তবুও নিজ মনে বি**কৃত পরিকল্পনা করলো নির্জন।অতঃপর ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে,নিজেও ফ্লোরে বসে দুই হাত দিয়ে নিধির চোখের পানি মুছিয়ে বললো,

‘উমম,ওকে..তোমার কথা মানতে পারি।তার আগে তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।এই যে আমাকে এতদিন মিস করোনি।মেহরাবের সাথে ফোনে কথা বলেছো।তোমার বোন,বান্ধবীর সাথে এত এত কথা বলেছো,আমি কাছে গেলেও,আমাকে উপেক্ষা করে,তাদের কে সময় দিয়েছো।তোমার এই অবহেলা গুলো তোমার কাছে তুচ্ছ মনে হলেও,আমার কাছে বৃহৎ…।তাই তুৃমি একটু শাস্তি পাবে।বেশি না,একটু…’

‘বলেই নিধি কিছু বলার আগেই,ওকে কোলে তুলে নিজের রুমে নিয়ে গেলো নির্জন।তারপর নিধিকে বিছানায় বসিয়ে,ডেভিল হেসে,নিধির কানের কাছে এসে হাস্কি ভয়েসে আওড়ালো…

“ভয়**ঙ্কর মিলনের তা**ন্ডব”

দুটি সত্তার সংঘর্ষে,যেখানে প্রেমের অগ্নি দগ্ধ করে,
মিলনের অন্ধকারে,যে শক্তি সমস্ত বাঁধা পেরিয়ে যায়।
প্রেমের নামে এই ভ**য়ঙ্কর তা**ন্ডব,
অন্তরের গভীরে ছড়িয়ে যায় এক অব্যক্ত তীব্রতা।

শরীরের প্রতিটি অঙ্গ,প্রান্তিকতায় এক র**ক্তাক্ত ছোঁয়া,
মিলনের এই গভীর রাতে,দ্যুতি হয়ে ওঠে অন্ধকারের।
অবিনাশী প্রেমের যুদ্ধে,আত্মার ভিতর সঞ্চালিত ভয়,
ভ**য়ঙ্কর মিলনের সুরে,প্রতিটি স্পর্শে উন্মোচিত হয় এক অদ্ভুত রহস্য।

প্রেমের তা**ণ্ডবে,যেখানে সীমা অতিক্রম করা হয়,
দুটি হৃদয়ের মধ্যে,গড়ে ওঠে এক ভ**য়াবহ সংযোগ।
মিলনের এই গভীরে,ছড়িয়ে পড়ে অব্যক্ত,ভ**য়ঙ্কর শক্তি,
যা প্রমাণ করে,প্রেমের সত্যিকার শক্তি কতটা বেদনার ও নিষ্ঠুর হতে পারে।” ~মেহের~

“অবশেষে দুঃস্বপ্নের মত একটি বিকাল কা**টালো নিধি,যেটা নির্জনের কাছে ছিলো পৈ**শাচিক তৃপ্তির।”

“ঘুটঘুটে অন্ধকারে অর্ধ-নগ্ন অবস্থায় দুই হাঁটু এক করে,তার ওপর ঘাড় কাত করে,মুখমন্ডল রেখে বসে আছে নিধি।পরনের কালো শাড়িটি অনেক আগেই শরীর থেকে খুলে,পু*ড়ে ফেলা হয়েছে।তার সামনেই দাউ-দাউ করে আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলে উঠছে।আগুনের র**ক্তিম আভা এবং তীব্র তাপের দহনে নিধির অর্ধ-নগ্ন শরীর যেনো অগ্নি লাভায় জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠছে।নাসারন্ধ্র থেকে ভারী নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসছে।কপাল থেকে শুরু করে,দরদর করে ঘাম গুলো গলা বেয়ে পড়ছে।”

এ যেন নিধির ভোরের দিকে নির্জন কে নিয়ে দেখা সেই দ্বিতীয় স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি।’
ভেবে ডুকরে কেঁদে উঠলো নিধি।”

“সেদিনের স্বপ্নে দেখা পুরুষটির চোখ এবং মুখমন্ডল ঢাকা থাকলেও,সামনে থাকা পুরুষটিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।সে যেন এক হিং**স্র মানব।”

“নিধির দিকে হিং**স্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,নির্জন হো হো করে তৃপ্তির হাসি হেসে উঠলো।অতঃপর কুচকুচে কালো রুমালটি দিয়ে প্রেয়সীর গলার নিচে গড়িয়ে পড়া ঘাম মুছে দিয়ে,হাস্কি ভয়েসে বললো,

‘উহুম..নো,নো,নো..এই ঘাম কখনোই তোমার বক্ষে পৌঁছাতে পারবে না।আমি বেঁচে থাকতে সেটা অসম্ভব।ওই পবিত্র জায়গাটা শুধু আমার জন্য বরাদ্দ থাকবে।আমার ভালোবাসার বিস্তার ঘটবে তোমার সাম্রাজ্যে।
এই দেখো.. দেখো..তোমার ঘামগুলো কে এই কালো রুমাল টা কেমন ভাবে ছুঁয়ে দিলো।কত বড় সাহস দেখেছো?না না..এটাকেও শাস্তি পেতে হবে।ভয়ং**কর শাস্তি পেতে হবে।আমার জানপাখি কে কেনো ছুঁয়ে দিবে ওওও..?’
বলেই রুমালটি হাত দিয়ে ইচ্ছেমতো কঁচলে,দলা পাকিয়ে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করে,উচ্চশব্দে হো হো করে হেসে উঠলো।”

“নির্জনের এহেন কান্ডে নিধির প্রাণ যায় যায় অবস্থা।কারণ,কিছুক্ষণ আগেই তার শরীরের ইঞ্চি ইঞ্চি জায়গায় পুরুষালি স্পর্শের ধা***রালো ছাপ ফেলেছে সে।বলিষ্ঠ মানবের হিং**স্র আ**ক্রমণের তুৃমুল বর্ষণে কিয়ৎক্ষণ আগে জ্ঞান হারিয়েছিলো চঞ্চলা,সুহাসিনী নারীটি।”

“কিয়ৎক্ষণ পূর্বের কথা ভেবে,আতং**কে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো নিধি।বারবার যেন সেই স্বপ্নের সাথে আজকের ঘটনা গুলো মেলাতে লাগল।”

“অতঃপর চোখের নোনা জল ছেড়ে দিয়ে,করুণ স্বরে,মৃদু আর্তনাদ করে,হাত জোর করে বললো,

‘আমাকে ছেড়ে দিন,নির্জন।আমি আর আপনার কাছে থাকব না।দরকার হলে আপনি আমায় কোনো গুপ্ত গুহায় রেখে আসুন।সেখানে না হয়,বন্য পশুদের সাথে জীবন-যাপন করবো।তবুও আপনার সাথে থাকব না..প্লিজ।’

“নিধির এহেন কথা শুনে,হিং**স্র থেকে হিং**স্র হয়ে উঠলো নির্জন।তার শক্ত হাতের ছোঁয়া দিয়ে নিধির কোমর চেপে ধরে কাছে টেনে,কোমরে ৫আঙ্গুলের ৫টি ধা**রালো নখের আঁচড় বসিয়ে দিয়ে বললো,

‘হিসসস..চুপ…একদম চুপ।একটুও চেঁচামেচি করবি না।ওহ! স্যরি..চেঁচামেচি করবে না।তাহলে একটু আগে যা হয়েছিলো,সেটা আবারও রিপিট হবে।ইউ নো ডার্লিং..অনেক দিন পর আমি কিন্তুু বেশ মজা পেয়েছি।তোমার উত্তেজনাপূর্ন তীব্র চি**ৎকার,আমার পিঠে তোমার সূচালো নখের আঁচড়,তোমার সর্বাঙ্গে আমার ধা**রালো দন্তগুলোর ডার্ক বা**ইট,সব মিলিয়ে এক রহস্যময়,ভয়ং**কর,রোমাঞ্চকর অনুভূতি ছিলো,তাই না?
আ’ম সো লাকি জানপাখি,উম্মা..”
বলেই গভীর চুম্বন এঁকে দিলো নিধির কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে।এ চুম্বন যেনো স্বেচ্ছায় বিষপান করার মত অনুভূত হলো রমনীর নিকট।কারন,কিছুক্ষণ আগে তার ওষ্ঠদ্বয়ের ওপর বয়ে গেছে হিং**স্র ব্যক্তিটির দন্তগুলোর পৈ**শাচিক তান্ডব-লীলা।’

“নির্জনের এহেন কান্ডে নিধি কিঞ্চিৎ আর্তনাদ করতেই সরে গেলো সে। বিভৎ**স হাসি দিয়ে কিছুক্ষণ আগে সন্তর্পণে করে রাখা তপ্ত লোহার শিক টি নিধির ক্লান্ত,মায়াবী মুখস্রির সামনে ধরে বললো,

‘দেখো জানপাখি,এটা হলো তোমার মৃ**ত্যুর অস্ত্র।আর আমি হলাম তোমার মৃ**ত্যু দূত।দারুণ,তাই না?’

বলেই নিধির কোমল চিবুক বৃদ্ধাঙ্গুল এবং তর্জনী দিয়ে জোরে চেপে ধরে আবার আওড়ালো,

‘তোমার মুখে যদি আবারও চলে যাওয়ার কথা শুনি,তাহলে এই গরম শিক তোমার বক্ষ বিভাজন ভেদ করে বের হবে।অতঃপর তোমার #হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ হবে।সেই র**ক্তের একেকটি ফোঁটা আমার আঁধার রাজ্যের চার দেয়ালে যত্ন করে লেপ্টে দিবো এবং সেগুলোতে প্রতিদিন অসংখ্য চুমুর বর্ষণ বইবে।যেমনটা একটু আগে তোমার সাথে করেছি জানপাখি।”

“আকস্মিক নিধি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে,নিমিষেই প্রতিবাদী রূপ ধারণ করে বললো,

‘আমি তোর এই অন্ধকার নৃ**শংস কারাগারে কখনোও বন্দিনী হয়ে থাকব না।এক্ষুনি চলে যাবো আমি।মে**রে দিবি তো?দেহ!মে**রে দে।তোর এই নরকমুখী যন্ত্রণা থেকে মৃ**ত্যু শ্রেয়।”

“নিধি বলতেই,তার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরলো নির্জন।পরিপূর্ণ ভাবে নিজের তৃষ্ণা মিটিয়ে ফিসফিস করে বললো,

‘তবে তাই হোক,মাই ডার্ক কুইন..ইউ আর অনলি,অনলি এ্যান্ড অনলি মাইন..জানপাখি।’

বলেই সদ্য উত্তপ্ত আগুনে গরম করা লোহার শিকটি নিধির বক্ষ বিভাজনে তাক করতেই,শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো নিধির।চিৎ**কার করে বলে উঠলো,

‘মা**রবেন না আমায়,দয়া করে মা**রবেন না..।’

“নির্জন জানত,নিধির নিজের জীবনের প্রতি মায়া আছে।’

ভেবে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,নিধির ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বললো,

‘আমি তো তোমাকে মা**রতে চাই না,নিরু।তুমিই তো ইচ্ছে করে আমার ক্রোধের শিকার হও।ভালোবাসার মানুষ কে কি কেউ এমনি এমনি আ**ঘাত করে,বলো?তুমিই তো আমাকে অবহেলা করে,আমার ভেতরটাকে দুমড়ে-মুষড়ে দিয়ে,নিজেও আমার আ**ঘাতে জর্জরিত হও।’

বলেই হাতে থাকা শিকটি ফেলে দিয়ে,রুমের কর্ণার থেকে পানির বোতলের ছিপি খুলে,আগুনের ওপর পানি ঢেলে দিলো।ধীরে ধীরে আগুন নিভে গিয়ে পুরো রুম জুড়ে ধোঁয়াটে হয়ে গেলো।”

“নির্জন,নিধির হাত ধরে উঠিয়ে টানতে টানতে রুম ত্যাগ করে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে,বিছানায় বসিয়ে আদুরে স্বরে বললো,

‘জানি,খুব ক্লান্ত তুমি।এখন থেকে আমি যা বলবো,তাই শুনবে কেমন?এখন ফ্রেশ হয়ে,একটু ঘুমিয়ে নাও।রাতে আবার দেখা হবে।আমার একটু বাইরে যেতে হবে।বিশেষ একটি কাজ আছে।’

বলেই মুচকি হেসে নিধির কপালে চুমু দিয়ে,নিধিকে রুমে রেখে বাইরে থেকে দরজায় তালা ঝুলিয়ে,চলে গেলো নির্জন।”

“বদ্ধ রুমের বিছানায় বসে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলো নিধি।সে বুঝতে পারলো না,পরবর্তীতে তার সাথে আরও কি কি ঘটতে চলেছে।অনবরত ক্রন্দনের ফলে,একসময় ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো নিধি।”

———-
“এদিকে তোহা বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েও নিধিকে না পেয়ে,কিছুটা চিন্তিত হয়ে নির্জন কে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতেই,নির্জন স্বাভাবিক স্বরে উত্তর দিলো,

‘রান্নার সময় তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে,অসচেতন থাকায়,তোমার বোনের ফোন বাটিতে থাকা পানিতে পড়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।সেটাই ঠিক করতে এসেছি মার্কেটে।’

“নির্জনের গোছানো কথা শুনে,তোহাও সরল মনে বিশ্বাস করে ফোন রেখে দিলো।”

“তোহা ফোন রাখতেই,নির্জন পৈ**শাচিক হাসি দিয়ে,তার চেনা-পরিচিত জঙ্গলের দিকে পা বাড়ালো।অনেক টা পথ জার্নি করে এখানে এসেছে সে।অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর,তার শিকার যেন তার কাছে ধরা দিলো।প্রথম দিকে শিকারের সাথে তাকে অনেক খেলতে হয়েছে।পরবর্তীতে তার ফাঁদেই সবাই কে পা দিতে হয়েছে।”

———–
“রাত ৩টায় নিধির ঘুম ভা**ঙতেই,পাশে তাকিয়ে দেখলো, নির্জন হাতে একটি পোশাক নিয়ে ওর পাশে বসে আছে।”

‘নির্জন কে এভাবে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে, তড়িঘড়ি করে শোয়া থেকে উঠে,বসে পড়লো নিধি।’

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,

‘ঘুম হয়েছে?আমি কিছুক্ষণ আগেই আসলাম।তোমার জেগে ওঠার অপেক্ষায় ছিলাম।আজ তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিবো,নিরু।তার আগে এই পোশাক টি পড়ে নাও।’

“নিধি নির্জনের হাতে থাকা কালো পোশাকটির দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ের স্বরে বললো,

‘এটাতো সেফটি স্যুট!’

“নির্জন মৃদু হেসে বললো,

‘হুম,আমার টা আমি পড়ে নিচ্ছি।আর তোমার টা তুমি পড়ে নাও।আর এটা না পড়তে চাইলে,কিভাবে পড়াতে হয় সেটা কিন্তু আমার জানা আছে।তাই আর প্রশ্ন না করে ঝটপট পড়ে নাও।আজ দীর্ঘসময় জার্নি করে,রাত জেগে স্পেশাল অপারেশন করে আমি ক্লান্ত।তোমার জন্য এগুলোর আয়োজন করেছি,ডার্ক কুইন।আশা করি,এগুলো দেখে তুমিও আমার মত আত্মতৃপ্তি পাবে।’

বলেই বাঁকা হেসে,বিছানা থেকে নেমে বিশেষ পোশাক টি পরিধান করে নিলো।যেটা নির্জন তার দুটি প্রিয় রুমে যাওয়ার আগে পরিধান করে।”

“নিধি আর কথা না বাড়িয়ে,শুকনো ঢোক গিলে নির্জনের পরবর্তী কাহিনী দেখার আগ্রহে,দুর্বল শরীরে পোশাকটি পরিধান করলো।”

“নিধি পোশাক পরার পর,নির্জন বললো,

‘ডার্ক কুইন,আজ আমি তোমাকে আমার সেই প্রিয় দু’টি রুমে নিয়ে যাবো,যেখানে আমার অনেক স্মৃতি রাখা আছে।তুমি তো একদিন যেতে চেয়েছিলে,তাই না?
তবে,আমার সুইট ওয়াইফ কে সেখানে নিতে হলে,অবশ্যই রুমটিকে আরও ভালোভাবে সাজাতে হবে।তাই আজ অনেক পরিশ্রম করে রুমটি সাজিয়েছি।আশা করি,তোমার মনের মত হবে।তবে সেখানকার ক্ষ**তিকর রাসায়নিক পদার্থ তোমার শরীরে প্রভাব ফেলতে পারে।এজন্য আমি তোমার জন্য বিশেষ সেফটি স্যুটের ব্যবস্থা করেছি।আর
এই পোশাকটি বিশেষভাবে তৈরি করা,যাতে এসিড এবং বিষাক্ত পদার্থ কোনোভাবেই ত্বক বা শরীরে প্রভাব ফেলতে না পারে।স্যুটটির সঙ্গে যে স্বচ্ছ হেলমেট পড়েছো,এটা তোমার মুখমণ্ডল সম্পূর্ণভাবে ঢেকে রাখবে এবং ভেতরে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য ছোট ছোট টিউব আছে।যার ফলে,তোমার নিশ্বাস গ্রহণ করতে কষ্ট হবে না।’

কথাগুলো বলতেই দেখলো,নিধি একটু কৌতূহলী এবং চিন্তিত চোখে নির্জনের দিকে তাকিয়ে আছে।”

“নির্জন বাঁকা হেসে,নিধির হাত ধরে সেই রুমের সামনে নিয়ে গেলো।
নির্জন তার ১নাম্বার ল্যাবরেটরি রুমে ঢুকে,উচ্চস্বরে হেসে বললো,

‘Welcome to my shadow Darkness’
“আমার ছায়ার অন্ধকারে স্বাগতম,ডার্ক কুইন।”

“নির্জন কথাটি বলতেই,নিধির চোখজোড়া আটকে গেলো দরজার ওপরে কালো ধাতব নেইমপ্লেটে সোনালি হরফে খোদাই করা নামটির দিকে,”Shadow of Darkness”

“নিধি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে রুমের চারিদিকে তাকিয়ে ভাবলো,

‘এই রুমটি বাইরে থেকে দেখলে বোঝাই যায় না,যে এখানে এত কিছু আছে।কিন্তু,এগুলো দিয়ে কি করে নির্জন?’

“নিধির ভাবনা গুলো আঁচ করতে পেরে নির্জন বললো,

“এটা আমার প্রিয় দু’টি রুমের ১নাম্বার কক্ষ।রুমের দেয়ালগুলো কালো ধাতব প্লেট দ্বারা আবৃত,এবং ঘরটি সূক্ষ্মভাবে লাল আলোতে আলোকিত করেছি।যেন এখানে প্রবেশ করলে,রুমটি দেখে তীব্র শান্তি অনুভব করি।
আর এখানে একটি বড়,শক্ত কাঠের টেবিল রেখেছি।এতে বিভিন্ন ধরনের কাঁচের বেকার,নলকূপ এবং এসিডের বোতলে ভর্তি।প্রতিটি বেকার স্বচ্ছ তরল দ্বারা পূর্ণ,কিছু উজ্জ্বল এবং অন্যগুলো অন্ধকার।”

“তাছাড়া আরও কয়েকটি সেফটি স্যুট,গ্লাভস,এবং মাস্ক রুমের ওই কোণায় রেখেছি।যেন কোনো বিপদের সম্মুখীন হলে তা ব্যবহার করতে পারি।
আরেক কোণায় সাজিয়েছি বিভিন্ন বিজ্ঞানগ্রন্থ,যেখানে লা**শ সংরক্ষণ এবং এসিডের ব্যবহারের উপর গবেষণা করতে পারি।”

“নির্জনের মুখে লা**শের সংরক্ষণের কথা শুনে,ভয়ে আঁতকে উঠল নিধি।
রুমটির দিকে তাকিয়ে দেখলো,রুমের মধ্যে একটি ভ**য়াবহ নীরবতা বিরাজমান।কেবলমাত্র রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তৈরি হালকা শিস বা ফিসফিস শব্দ শোনা যাচ্ছে।
নির্জনের এই ল্যাবরেটরি রুমকে ভ**য়ংকর জায়গা ছাড়া কিছুই মনে হলো না নিধির।
নিধি শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা স্বরে কিছু বলতে যাবে,তার আগেই নির্জন নিধির হাত ধরে রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে,দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ২য় কক্ষে নিয়ে গেলো।”

“অতঃপর রুমে প্রবেশ করে পুনরায় উচ্চস্বরে হেসে বলে উঠলো,

“আমার আঁধারের সাম্রাজ্যে তোমায় স্বাগতম ডার্ক কুইন।

“Welcome to my realm of darkness.”
এটা আমার সবচেয়ে প্রিয় রুম,ডার্ক কুইন।”

“নির্জন কথাটি বলতেই,নিধির চোখজোড়া আটকে গেলো দরজার ওপরে কালো ধাতব নেইমপ্লেটে সোনালি হরফে খোদাই করা নামটির দিকে,”Realm of Darkness”

অতঃপর রুমের চারিদিকে কফিন দেখে চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো নিধির।”

“নির্জন মুচকি হেসে,নিধির হাত ধরে কফিনগুলোর সামনে নিয়ে এসে স্বাভাবিক স্বরে বললো,

‘এসো,পরিচয় করিয়ে দেই।

বলেই প্রথম কফিন টির দিকে ইশারা করে বললো,
এটার নাম হলো,

“কালো বিষ(Black Venom)।
এটা আমার ক্রয় করা স্পেশাল কফিন।”

“নির্জনের কথা শুনে,নিধির গলা শুকিয়ে আসল।হৃদস্পন্দন যেন দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেলো।”

তারপর নির্জন আরেকটি কফিনের সামনে নিয়ে গিয়ে,হাসিমুখে বললো,

“এই কফিনের নাম হলো,
‘বি**ষাক্ত হাসি(Poisoned Smile)’

আর পাশের কফিনটির নাম হলো,
‘মৃ**ত্যুর ছায়া(Shadow of death)’

আর ওই যে কর্নারে দেখছো…
ওই কফিনটার নাম হলো,

‘র**ক্তের ফোয়ারা(Fountain of Blood)’

বলেই আবারও মুচকি হাসল নির্জন।কফিন গুলো দেখে নিধির হাত-পা যেন কাঁপতে থাকল।অথচ নির্জন কফিনগুলোর সাথে এমন ভাবে পরিচয় করালো,যেন কোনো পরিচিত মানুষগুলোর সাথে এই প্রথম তার স্ত্রীকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।’
ভেবে শুকনো ঢোক গিলে চেহারায় একরাশ আ**তংক নিয়ে নির্জনের দিকে তাকাতেই,নির্জন বাঁকা হেসে বললো,

‘ওহ,ওহ,ওহ..মাই সুইটহার্ট,আরও ২টা স্পেশাল জিনিসের সাথে তোমায় পরিচয় করাবো।আশা করি,আমার মতো তোমারও ভালো লাগবে।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে