হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-৪৩+৪৪

0
25

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪৩
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]

“এই চার দেয়ালের বাইরে কর্মস্থল ব্যতীত,না আমি কোথাও যাবো,আর না তুমি কোথাও যাবে ডার্ক কুইন।”

“নির্জনের এহেন কথায় ভড়কে গেলো নিধি।কন্ঠে তেজ নিয়ে বললো,

‘পা**গল নাকি আপনি?আমি আমার মায়ের কাছে যাবো না?এই বাসা তো আমারই,মাকে শুধু দেখতে যাবো।তারপর তো ফিরেই আসবো।সরুন,আমি এখন রেডি হবো।আর আপনিও রেডি হয়ে নিন।’
বলেই নির্জনের হাত ছাড়িয়ে নিধি চলে যেতে নিলে,নির্জন আবারও ওর হাত মুঠোবন্দী করে শক্ত করে চেপে ধরে,পৈ**শা*চিক হাসি দিয়ে বললো,

‘হুম..আমি তো পা**গল।তোমার জন্য পা**গল।এটা কি নতুন নাকি?কেনো,তুৃমি জানো না?তোমার প্রতি আমার গভীর ভালোবাসার ছোঁয়া তো আগেই এঁকে দিয়েছি,এখনও কি কিছু বোঝার বাকি আছে,হুম?’

“নির্জনের প্রথমে বলা কথাগুলো নিধি ততটা গুরুত্ব না দিলেও,এইবার ঠিকই গুরুত্ব দিলো।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘হাত ছাড়ুন।সকাল,সকাল কি হলো আপনার?আপনি তো আগে এমন ছিলেন না?হঠাৎ আপনার আচরণ এভাবে পরিবর্তন হয়ে গেলো কেনো?’

“নিধির এহেন কথা শুনে,অট্টহাসি দিলো নির্জন।মনে হয় কোনো মজার জোকস শুনলো।নির্জনের হাসিমাখা মুখ ভীষণ পছন্দ করে নিধি।কিন্তু এই মুহূর্তে প্রিয় মানুষটির এই হাসি যেন গায়ে কাঁটার মতো বিঁধলো।নির্জনের মুঠোবন্দী হাত আরও শক্ত হলো।”

“এতটা শক্ত করে ধরায় ‘উহ’ আ**র্তনাদ করে উঠলো নিধি।চোখ-মুখে বিরক্তিকর ছাপ এঁটে বললো,

‘নির্জন,এইসব কি ধরনের পা**গলামে হচ্ছে?আপনার এইসব আচরণের মানে কি,বলুন তো?আর হাত ছাড়ুন,ব্যথা পাচ্ছি।’

“নিধির কথায় এইবার হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।মুঠোবন্দী হাত টা হালকা করে ধরে, ওর কাছে এসে হাস্কি ভয়েসে বললো,

‘নিরুপমা,তুমিই তো ওয়াদা করেছিলে,আমাকে ছেড়ে কখনো যাবে না।এখন আমি তোমার বোনের শ্বশুর বাড়ি না গেলে,তুমি একা যাবে।এর মানে, সারাদিন আমি এই বাসায় একা সময় কা**টাবো।অর্থাৎ, তুমি আমাকে ছেড়ে ওই বাসায় গিয়ে, সময় কা**টিয়ে ওয়াদা ভঙ্গ করবে।এটা তো আমি হতে দিতে পারি না।আমিও কোথাও যাবো না,আর তুমিও কোথাও যাবে না।আজ থেকে তোমার বাইরে বের হওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ।ওহ,হ্যা,তোমার ফোন ব্যবহার করাও নিষেধ।তোমার মা,বোন কে ফোন দিয়ে এইসব খবর নেওয়া,এগুলো আমার কাছে আদিক্ষেতা লাগে।আজ থেকে এগুলো সব বন্ধ।এই বাসায় কারো আসাও নিষেধ।আমার বন্ধু এবং তোমার আত্মীয়-স্বজন কেউ নয়।বিয়ের পর থেকে এই পর্যন্ত অনেক স্বাধীনতা দিয়েছি,আর নয়।আমি যতক্ষণ বাসায় থাকব,ততক্ষণ তুমি আমার সাথে সময় কা**টাবে।আর যতক্ষণ অফিসে থাকব,ততক্ষণ আমার কথা ভাববে।”

“নির্জনের এহেন আচরণে ফের হতভম্ব হয়ে গেলো নিধি।অবিশ্বাস্য চাহনি নিক্ষেপ করে বললো,

‘আপনি এগুলো কি বলছেন নির্জন?মজা করছেন না তো!না মানে,আপনি তো এমন ছিলেন না;তাহলে?’

“নির্জন নিধির কানের কাছে আসা চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো,

‘উমম,কে বলেছে, আমি আগে এমন ছিলাম না?আমি তো আগে থেকেই এমন।বিয়ের আগে তোমাকে শপিং মলে চলন্ত সিঁড়ি থেকে ফেলে দেওয়া,চলনবিলের নদীর ধারে ধা’ক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া,তোমার চিঠি পড়ার সময় একটা আরশোলা খুব বিরক্ত করেছিলো,সেটাকেও কে**টে কু**টিকু**টি করেছি।বোটানিক্যাল গার্ডেনে যে ছেলেগুলো তোমাকে বা**জে দৃষ্টি দিয়ে বিরক্ত করেছিলো,সেগুলো কে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া,তারপর তোমার সো কলড বান্ধবী নাদিয়ার দেওয়া আংটি টাকে পুকুরে ফেলে দেওয়া,আমার মোবাইল ফোনের স্ক্রিন তোমার জন্য বরাদ্দকৃত চুমু গ্রহণ করেছিলো,তাই সেটাকে ধ্বং**স করা, বিয়ের পরের দিন সকালে তোমার পায়ে গরম তেল পড়ে যাওয়া,তোমার ফোনের ইউটিউব চ্যানেল,আর ফেইসবুক আইডি নষ্ট করে দেওয়া,কোয়েল পাখি গুলো কে কে**টে,ঝাল মশলা দিয়ে রান্না করে,সেগুলো তোমাকে জোর করে খাওয়ানো,তোমাকে ছাদে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজিয়ে জ্বর বাঁধানো,মেইড কে বিদায় করা..সবকিছুই তো আমি করেছি।বিয়ের আগের কিছু কাহিনী যদিও তোমার জানা ছিলো।কিন্তু বিয়ের পরবর্তী ঘটনাগুলো তো জানতে না, জানপাখি।হাহাহা..এগুলো সব খুব যত্ন সহকারে তোমার জন্য করেছি।এখন প্রশ্ন হলো কেনো করেছি?’

“হাহাহাহা..জানো, আমি না বড্ড হিংসুটে।সেটা শুধু তোমার জন্য।এইসব কিছু হিংসায় জ্বলে-পু*ড়ে করেছি।ওহ,তোমার এই চুলগুলো যখন তোমার কপালে আদুরে ভাবে লেপ্টে থাকে,তখনও আমার খুব হিংসা হয়।ভেবেছিলাম,চুলগুলো কে কে**টে দিবো।পরক্ষণে,আমার বেস্ট ফ্রেন্ড- মিষ্টি ‘মন’ বুদ্ধি দিলো,কিছুদিন পর তুমি বুড়ো হয়ে যাবে।তখন এগুলো এমনিতেই ঝরে পড়বে,ততদিন যেন একটু ধৈর্য ধারণ করি।দেখেছো,আমি এবং আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কতটা দয়ালু!
আচ্ছা, পরিচয় করিয়ে দেই,

বলেই নির্জন নিজের বুকের বাম পাশে ডান হাত রেখে বললো,

‘এই দেখো,এটা হলো আমার ‘হৃদয়’
আর আরেকটা হলো আমার ‘মন’।যার কথায় আমি সব ধরনের কাজ করি।বাহিরের জগতে দিগন্ত আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হলেও,অন্তর্জগতে এরাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড,বুঝলে ডার্ক কুইন?’

“নির্জনের এতক্ষণ পর্যন্ত বলা কথাগুলো,সব মনে হয় নিধির মাথার ওপর দিয়ে গেলো।বিস্ময়কর চাহনি নিক্ষেপ করে নিচু স্বরে আওড়ালো,

‘নির্জন,আমার মনে হয় আপনি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত।হতে পারে,আপনি আপনার মায়ের আকস্মিক মৃ**ত্যু সহ্য করতে পারেন নি,তাই…’

“নির্জন আর এক মুহূর্ত কথা বলতে দিলো না নিধিকে।তড়িৎ গতিতে ওর মুখ চেপে ধরে বললো,

‘চুপ,চুপ..একদম চুপ।ওই ডাইনী,নোং**রা মহিলার কথা আমার সামনেও উচ্চারণ করবে না।সে তো মা হওয়ার যোগ্যই না।আর সে আমার মা নয়,সে আমার সৎ মা।
আমার জন্মসনদে বাবা আমার নিজের মায়ের পরিবর্তে তার নাম টা দিয়েছিলো।তাই সবাই এটাই জেনে এসেছে।বুড়ি টাকে তো আগেই মে**রে ফেলতাম।শুধু তার কষ্ট গুলো কাছ থেকে দেখে মজা নেওয়ার জন্য, এতদিন হাত দু’টো কন্ট্রোল করেছি।’
বলেই ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ফেললো নির্জন।”

“নির্জনের প্রতিটি কথা যেনো নিধিকে বিস্ময়ের শেষ চূড়ায় নিয়ে যাচ্ছে।আজকের সকাল টি যে তার জীবন টাকে বি**ষাক্তময় করে দিবে,সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি নিধি।”

“নিধি মুখ দিয়ে ‘উমম’ শব্দ করতেই,নির্জন ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে,নিধির হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে গেলো।নির্জন এত জোরে হাত ধরাতে আবারও ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো নিধি।কন্ঠে তেজ নিয়ে বললো,

‘নির্জন,ভালো হচ্ছে না কিন্তু।আপনি কিন্তু সবকিছুর লিমিট ক্রস করছেন।”

“নির্জন ঘাড় ঘুরিয়ে মুখমণ্ডলে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে বললো,

‘হুঁশশ..আমি নয়,তুমি লিমিট ক্রস করছো।
সকাল থেকে মনের ভালোবাসা উজাড় করে ওইসব খাবার তোমার মায়ের জন্য রান্না করেছো?দাঁড়াও, ওগুলোর এখনই ব্যবস্থা করছি।তার আগে তোমার ব্যবস্থা করবো।বিয়ের আগে রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের সাথে হেসে হেসে কথা বলা,বোটানিক্যাল গার্ডেনে আমার কথার অমান্য করে বোরকা ছাড়া এসে অন্য ছেলেদের নজরে পড়া,গার্ডেনের ঘাসগুলো কে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দেওয়া,দিগন্ত কে বিয়ের পোশাকে দেখে ওর সৌন্দর্যের প্রশংসা করা,কোয়েল পাখি গুলো কে আদর করা,ওই ডাইনীর মৃ**ত্যুর আগমুহূর্তে তার নোং**রা হাত ধরে তার সাথে স্নেহ মাখা কথা বলা,ইউটিউব,ফেইসবুকে নিজের চেহারা দেখিয়ে হাজার হাজার মানুষের প্রশংসা পাওয়া,সবকিছুর জন্য শাস্তি পাবে।’

বলেই পৈ**শা*চিক হাসি দিয়ে এক হাত দিয়ে নিধির হাত শক্ত করে ধরে,টেবিলের কাছে এনে,আরেক হাত দিয়ে টেবিলের ড্রয়ার খুলে মোটা দড়ি বের করলো।”

“নির্জনের এহেন কান্ড দেখে চোখ দিয়ে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়লো নিধির।এই নির্জন কে সে চেনে না।ওর পুরো পৃথিবী যেন ওলট-পালট হয়ে গেলো।প্রিয়তম মানুষটির কাছ থেকে এমন আচরণ সে কখনোই আশা করেনি।এ যেন অতীতের স্বপ্নে দেখা সেই হিং**স্র নির্জন কে,বাস্তবে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে।”

“ব্যথায় জর্জরিত হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিতে চাইলো নিধি।কিন্তু সেই শক্তিটুকুও যেনো বিস্ময় এবং কান্নার ফলে কমে এসেছে।তবুও উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

‘অ**সভ্য, নিষ্ঠুর,নির্দয়,কা**পুরুষ..এই তাহলে আপনার আসল রূপ?যেটা এতদিন মুখোশের আড়ালে ছিলো।আমি আপনার সাথে থাকব না।আমি এখনই মায়ের কাছে চলে যাবো।’
বলেই হেঁচকি তুলে কেঁদে উঠলো নিধি।”

“নিধিকে এভাবে নাক টেনে কান্না করতে দেখে,ভীষণ রেগে গেলো নির্জন।ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরে দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠলো,

‘যাওয়াচ্ছি তোমায়।’

বলেই টেবিলের সামনে থাকা চেয়ার টেনে জোর করে চেয়ারে বসিয়ে দিলো নিধিকে।অতঃপর মুহূর্তেই মোটা দড়ি দিয়ে নিধিকে চেয়ারের সাথে শক্ত করে বেঁধে ফেললো।”

“এদিকে নির্জনের শক্তির কাছে অনেক আগেই হার মেনেছে নিধি।সে তো নির্জনের হাব-ভাব দেখতে ব্যস্ত।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ক্লান্ত ভঙ্গিমায় বললো,

‘নির্জন আপনি কি করছেন,বুঝতে পারছেন?আমি আপনার স্ত্রী।ভালোবাসি আপনাকে।আপনি যেই কথাগুলো বললেন,সবকিছু ভিত্তিহীন।এগুলো অপ্রয়োজনীয় যুক্তি।প্লিজ,আমার বাঁধন খুলে দিন।আমরা দু’জন ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নিবো।আমার মনে হয় আপনি মানসিক ভাবে অসুস্থ,সেটা হয়তো আপনি জানেন না।আমি আপনাকে সুস্থ হতে সাহায্য করবো।’

“নিধির করুণ চাহনি দেখে কিছুটা মায়া হয়েছিলো নির্জনের।কিন্তু যখনই শুনলো,নির্জন কে নিধি মানসিক ভাবে অসুস্থ বলেছে,তখনই চোখ-মুখ শক্ত করে ঘাড় কাত করে,র**ক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

‘আমাকে তোমার মানসিক রোগী বলার সাহস হলো কি করে?আমাকে আজ পর্যন্ত কেউ এই ধরণের কথা বলে নি।অথচ তুমি সহসাই বলে দিলে?বুঝেছি, এখন আর আমাকে ভালো লাগছে না,তাই না?পুরনো হয়ে গেছি?এত তাড়াতাড়ি?কই..তুমি তো আমার কাছে আগের মতই আছো।এই দেখো,কতটা ভালোবেসে তোমাকে আমার শক্ত বাহুডোরে বেঁধে রেখেছি।তুৃমি চাইলেও যেতে দিচ্ছি না।এমন জীবন সঙ্গী পাওয়া তো তোমার সৌভাগ্য।সেখানে তোমার মধ্যে কোনো কৃতজ্ঞতা বোধ নেই।ওয়েট,ওয়েট.. এর জন্য তোমাকে ইউনিক স্টাইলে শাস্তি পেতে হবে।’
বলেই হন হন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো নির্জন।”

“এদিকে নির্জনের একের পর এক কান্ড দেখে, নিধি যেন বিস্ময়ের শীর্ষে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।মোটা দড়ি দিয়ে চেয়ারের সাথে নিধির হাত-পা খুব শক্ত করে বেঁধেছে নির্জন।নিধি অনেক চেষ্টা করলো দড়ি হালকা করার,কিন্তু ব্যর্থ হলো।ভাবলো,খুব জোরে চিৎকার করবে।কিন্তু সেটা করলেও কেউ শুনবে না।কারণ,আশেপাশের প্রতিবেশীদের বাড়িগুলো কিছুটা দূরে।এই মুহুর্তে সবচেয়ে অসহায় মনে হলো নিজেকে।চোখের অশ্রু যেন বারিধারার ন্যায় গড়িয়ে পড়লো।আবারও বৃথা চেষ্টা করলো ছোটার জন্য।কিন্তু পারলো না,এক পর্যায়ে চেয়ার সহ ফ্লোরে পড়ে গিয়ে মাথায় ব্যথা পেলো নিধি।”

“এদিকে কিচেন থেকে চেয়ার পড়ার শব্দ পেয়ে নির্জনের আর বুঝতে বাকি রইলো না,নিধি কি করেছে।’
প্রিয়তমার বোকা,বোকা কান্ড দেখে মুচকি হাসলো নির্জন।ভেতর থেকে ‘মন’ বলে উঠলো,

‘সে তোমাকে এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি।সমস্যা নেই,খুব তাড়াতাড়ি চিনে যাবে।’

‘মনের কথা শুনে পৈ**শাচিক হাসি দিয়ে কিচেনের দুই চুলায় রাখা বিরিয়ানি এবং পায়েসের পাত্র দু’টি সন্তর্পণে ধরে, বেসিনে ফেলে পানি ছেড়ে দিলো।সেই সাথে পাত্র দু’টি কে ফ্লোরে খুব জোরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে, রাগে ফুঁসে উঠে ঘাড় কাত করে বলতে থাকল,

‘অন্যকে ভালোবেসে এই খাবার এই পাত্রের মধ্যে রান্না করেছিলো আমার নিরুপমা,তাই তোদের কে এভাবে আ**ঘা*ত করলাম।চিন্তা করিস না,একটু পর তোদের কে ভ**য়াবহ শাস্তি দিবো।’

বলেই সেখান থেকে বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো নির্জন।”

“অপরদিকে,কিচেন থেকে থালাবাসন ফ্লোরে পড়ার শব্দ শুনে,আকস্মিক কেঁপে ওঠে নিধি।শুকনো ঢোক গিলে ফ্লোরে শুয়ে অস্ফুটস্বরে কান্না করতে থাকল।এই মুহূর্তে এই বদ্ধ খাঁচা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ছটফট করছে সে।আদৌ কি এই ভ**য়ং*কর,বি**কৃত মস্তিষ্কের মানুষটির কাছ থেকে মুক্তি পাবে নিধি?
প্রশ্ন টা নিজের মনে আওড়ালো নিধি।কিন্তু কোনো উত্তর পেলো না।”

“রুমে এসে নিধিকে এভাবে চেয়ার সহ ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে,উচ্চস্বরে হেসে উঠলো নির্জন।ধীর পায়ে নিধির সামনে গিয়ে বললো,

‘ইশশ!খুব ব্যথা পেয়েছো তাই না?খামোখা নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলে।আমার মুখে মুখে তর্ক না করলে এমন দিন দেখতে হতো না,জানপাখি।’

বলেই নিধিকে চেয়ার সহ উঠিয়ে মুচকি হেসে,রুমের এক কোণ থেকে আরেকটি চেয়ার এনে নিধির সামনা-সামনি পায়ের ওপর পা তুলে বসে বললো,

‘এই ব্ল্যাক টি-শার্টে কেমন লাগছে আমাকে?’

“নির্জনের দিকে তাকিয়ে নিধি ঘৃণা ভরা মন নিয়ে বললো,

‘বি**শ্রী।’

“নিধির জবাব পেয়ে নির্জন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘হুম জানি,এখন তোমাকে বেঁধে রেখেছি তো,তাই অভিমান করে বলছো,আমার অভিমানী বউ।তবে তোমাকে কিন্তু পিংক কালার থ্রি পিসে দারুণ লাগছে।যদিও ঘামে ভিজে গিয়েছো।নো প্রবলেম, একটু পর দু’জনেই শাওয়ার নিবো।’
বলেই বাঁকা হাসলো নির্জন।”

“নির্জনের ইঙ্গিত বুঝতে দেরি হলো না নিধির।এতক্ষণে ও পুরোপুরি বুঝে গেলো,যে এতদিন নিজের অজান্তে ও একজন বি**কৃত মস্তিষ্কের মানুষের সাথে সংসার
করেছে।যার বাহ্যিক দিক থেকে ঠান্ডা মস্তিষ্কের আচরণ ছিলো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
এই মুহূর্তে এই লোকটির সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না নিধির।তবুও ঘৃণা ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

‘আপনি পশুর চেয়েও অধম।’

“ব্যাস,নির্জনের উগ্র মস্তিষ্ক নাড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিধির এই একটি বাক্যই যথেষ্ট ছিলো।
নির্জন নিধির গালে আলতো করে চুমু দিয়ে মুচকি হেসে বললো,

‘আমি যাবো আর আসবো।’

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।নিধি চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে রইলো দরজার দিকে।ওর মস্তিষ্ক যেন ধীরে ধীরে অচল হয়ে আসছে।”

“কিছুক্ষণ পর হাতে খাতা এবং কলম নিয়ে, ফিরে এসে নির্জন মুচকি হেসে নিধির মুখোমুখি বসে বললো,

“আজ একটা পরীক্ষা হবে।এটাকে বলা হয়,’রোমান্টিক সারপ্রাইজ টেস্ট’।মানে ‘সারপ্রাইজ এক্সাম’।যেটা এখন তুমি দিবে।হাহাহা..এমন পরীক্ষার নাম এই প্রথম শুনলে,তাই না?আমি জানি,আসলে আমার সবকিছুই তোমার কাছে সারপ্রাইজ,অ্যাম আই রাইট জানপাখি?”

“নিধি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে নির্জনের দিকে।মনে হয় সে পণ করেছে,সে আর কথা বলবে না।
কিন্তু, নির্জন কে অবহেলা করা অসম্ভব।নিধির অসহায় মুখ-ভঙ্গিমা দেখে,নির্জন তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললো,

‘অনেক টাইম ওয়েস্ট করেছি।এখন পরীক্ষা শুরু হবে।’

বলেই চশমাটি তর্জনী দিয়ে ঠিকঠাক করে,আদর্শ শিক্ষকের ন্যায় শুরু করলো,

“এখানে মোট ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।একটি রোমান্টিক বড় প্রশ্ন,বাগধারা,শূন্যস্থান পূরণ,এক কথায় প্রকাশ,সমার্থক
শব্দ এবং পত্র লিখন=৩০নম্বর
এর মৌখিক পরীক্ষা হবে।
২৫নম্বর পেলে, A+ পাবে।আর এর চেয়ে বেশি নম্বর পেলে, গোল্ডেন A+ পাবে।আর মার্ক অনুযায়ী রোমান্স হবে। A+ অথবা, গোল্ডেন A+পেলে, রোমান্সে খুব বেশি গভীরতা থাকবে না।তুমিও স্বাধীনতা পাবে।আর যদি নম্বর কম পাও,তাহলে গভীর রোমান্সের জন্য প্রস্তুত হও।’
বলে ডেভিল হাসলো নির্জন।”

“অতঃপর,নির্জন নিধির ঠোঁট জোড়ায় গভীর ভাবে চুম্বন করলো।কয়েক সেকেন্ড পর একটু জোরে বা**ইট করতেই কেঁপে উঠলো নিধি।নির্জন নিধি কে ছেড়ে দিয়ে নিধির ঠোঁট জোড়ায় তর্জনী দিয়ে বললো,

‘ইশশ! কিছুটা কে**টে গিয়ে র**ক্ত বের হচ্ছে।এই মুহূর্তে তোমার কোমল ওষ্ঠদ্বয়ে মিশে থাকা র**ক্তকণিকা গুলো কেও আমার খুব হিংসা হচ্ছে..উফফ!’

বলেই নিধির ঠোঁট জোড়া আবার আকড়ে ধরলো।ন্যানো সেকেন্ড পর নিধি কে ছেড়ে বাঁকা হেসে বললো,

‘র**ক্তকণিকা গুলো কে আমি গ্রাস করে নিয়েছি।এইবার শুধু আমার ছোঁয়া তোমার ঠোঁটে মিশে আছে ডার্ক কুইন।’

বলে নিধির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো নির্জন। এমন ভাবে হাসলো,মনে হলো সে যেন নিষ্পাপ শিশু।”

“নিধি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে নির্জনের কর্মকান্ড দেখতে থাকলো।এই মুহূর্তে ও চাইলেও কিছু করতে পারবে না।কারণ,সামনে বসে থাকা সুদর্শন অথচ হিং**স্র মানব টি ওকে চেয়ারের সাথে মোটা রশির শক্ত বাঁধনে জড়িয়ে রেখেছে।”

“নির্জন চেয়ারে বসে দুই উরুর ওপর খাতা রেখে,কালো রঙের কলমটি ঠোঁটের কোণায় স্পর্শ করে কিছু একটা ভাবলো।তারপর খুব নিচু স্বরে বিড়বিড় করে কিছু বললো।অতঃপর নিধির দিকে তাকিয়ে,চোখ টিপে, বাঁকা হেসে সাদা পৃষ্ঠায় কিছু লিখতে থাকল।আর নিধি সেদিকে নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল।ওর মনে এখন কোনো প্রশ্ন জাগছে না।নিধি যেনো একটা মূর্তির ন্যায় মেরুদন্ড সোজা করে বসে আছে।”

“প্রায় ২০মিনিট পর নির্জন নিধির দিকে খাতাটি এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘এখানে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিয়েছি।৩০ মিনিটের মধ্যে এগুলো মুখস্থ করে আমার কাছে মৌখিক উত্তর দিবে।আমি জানি,তোমার মুখস্থ বিদ্যা খুব ভালো।যেহেতু দীর্ঘসময় পড়াশোনা থেকে দূরে থাকার কারণে তোমার মস্তিষ্কে মরিচীকা পড়ে গেছে,তাই মুখস্থ করতে ৩০মিনিট সময় দিলাম।নইলে, ১৫মিনিট সময় দিতাম।নাও এইবার ঝটপট মুখস্থ করে আমাকে পড়া দাও।মনে করবে, এই মুহূর্তে আমি তোমার ‘লাভ অফ টিচার’।আর আমার কথা না শুনলে কি করবো বুঝতেই পারছো।’

বলেই নির্জন নিধির সামনে খাতা ধরলো।নিধি খাতার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন এবং উত্তর দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো।মলিন দৃষ্টিতে একবার নির্জনের দিকে তাকিয়ে,খাতার দিকে নজর দিয়ে মনে মনে কিছুক্ষণ পড়তে থাকল।
এই মুহূর্তে নির্জনের কথা শোনা ছাড়া কোনো উপায় নেই।নইলে সে আবারও ঝাঁপিয়ে পড়বে।এটা নিধি কোনোভাবে চায় না।’

“এদিকে নিধির দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে নির্জন।মনে হয় কোনো ছোট বাচ্চা কে সে লাঠি সামনে নিয়ে পড়তে বসিয়েছে। আজ যেভাবে হোক পড়া তাকে দিতেই হবে।’
ঠিক ৩০ মিনিট পর খাতা টা সরিয়ে ফেললো নির্জন।আদেশের স্বরে প্রশ্ন করলো,

১|’ডার্ক কুইনের প্রতি নির্জনের ভালোবাসা মোট কত প্রকার?ও কি কি?

“নিধি ভয়ার্ত স্বরে বললো,’চ..চা..চার প্রকার।”

“নির্জন নিধির ঠোঁট যুগলে তর্জনী দিয়ে বললো,

‘হুঁশশ.. একদম তোতলাবে না।আমি যেভাবে স্পষ্ট ভাষায় প্রশ্ন করেছি,সেভাবে স্পষ্ট ভাষায় উত্তর দিবে।নইলে আবারও রোমান্টিক ট**র্চার শুরু হবে।যেখানে আগে-পরে থাকবে বিভিন্ন ভ**য়ং**কর,থ্রিলিং কাহিনী..হাহাহা।হুম, এইবার স্পষ্ট ভাষায় উত্তর দাও।’

“নিধি শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,

‘ডার্ক কুইনের প্রতি নির্জনের ভালোবাসা মোট ৪প্রকার।যথাঃ
১.নিঃস্বার্থ ভালোবাসা,
২.হিং**স্র ভালোবাসা,
৩.অতিরিক্ত রোমান্টিক ভালোবাসা’
বলেই থেমে গেলো নিধি।

“নির্জন নিজের চিবুকে আঙ্গুল রেখে নিধির দিকে একটু ঝুঁকে হাস্কি ভয়েসে বললো,

‘আরেক টা বলো নি ডার্ক কুইন।আবার শুরু করবো নাকি?”

“নির্জনের সাইলেন্ট কিলার টাইপ কথায় আঁতকে উঠলো নিধি।কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,

‘নাম্বার ৪.ভ**য়ং*কর ভালোবাসা।”

“নির্জন এইবার গাঢ় স্বরে বললো,
‘এইবার বাগধারা গুলো বলে ফেলো এবং সেগুলো দিয়ে বাক্য গঠন করো।”

“নিধি করুণ স্বরে বলতে থাকল,

২|রোমান্টিক বাগধারা-

১.অরণ্যে রোদনঃনিষ্ফল আবেদন/বৃথা চেষ্টা=আমি নির্জনের কাছ থেকে পালানোর জন্য ‘বৃথা চেষ্টা’ কখনোই করব না।

২.অন্ধিসন্ধিঃফাঁকফোকর/গোপন তথ্য=আজ আমি এই রহস্যময় বাড়িটি তে যেসব ‘গোপন তথ্য’ পাবো,সেগুলো আমি এবং সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত কেউ জানবে না।

৩.অন্ধের যষ্ঠি/অন্ধের নড়িঃএকমাত্র অবলম্বন=এই পৃথিবীতে আমার বেঁচে থাকার ‘একমাত্র অবলম্বন’ হলো,আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি নির্জন।

৪.অগড়ম-বগড়মঃপা**গলের প্রলাপ=আমার ভালোবাসার মানুষ নির্জন কে নিয়ে যারা নেতিবাচক সমালোচনা করবে,ধরে নেবো সেটা ‘পা**গলের প্রলাপ।’

৫.আকাশ কুসুমঃঅবাস্তব=আমার সাথে যেসব রহস্যময় ঘটনা ঘটেছে,সেগুলো স্বপ্ন অথবা ‘অবাস্তব’ মনে হলেও,নিঃসন্দেহে সত্যি ঘটনা।”

৬.ঠোঁট কা**টাঃবেহায়া=নির্জনের ভালোবাসার ধূম্রজালে আটকে থাকার জন্য আমি বারবার ‘বেহায়া’ হতে চাই।

৭.ইলশে গুঁড়িঃগুড়ি গুড়ি বৃষ্টি=আমি কখনোই চাই না,আকাশ ভেদ করে আসা ‘গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি’ আমাকে স্পর্শ করুক।

৮.খাল কে**টে কুমির আনাঃবিপদ ডেকে আনা=নির্জনের ভালোবাসার দিকে নজর দেওয়া, আর ‘বিপদ ডেকে আনা’ একই ব্যাপার।

৯.জিলাপির প্যাঁচঃকুটিলতা=নির্জন হলো সুস্থ-স্বাভাবিক একজন প্রেমিক পুরুষ।তার মধ্যে কোনো ‘কুটিলতা’ নেই।

১০.টুপ ভুজঙ্গঃনেশায় বিভোর=ডার্ক কুইন তার সবচেয়ে প্রিয়তম স্বামী নির্জনের মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসার ‘নেশায় বিভোর’ হয়ে থাকতে চায়।”

“নিধির কাছ থেকে ঠিকঠাক উত্তর পেয়ে খুশি হলো নির্জন।মুচকি হেসে বললো,

‘ব্রিলিয়ান্ট গার্ল।’হুম,এইবার পরের প্রশ্নের উত্তর দাও।’

“নিধি নির্জনের দিকে ক্লান্ত চাহনি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো,

৩|রোমান্টিক শূন্যস্থান পূরন-

১.আমি নির্জনের সবচেয়ে প্রিয় মানবী____বলছি।
=ডার্ক কুইন
২.সে আমার শরীরের____মিশে আছে।
=রন্ধ্রে রন্ধ্রে
৩.তাকে ছাড়া আমার জীবন____।
=অকল্পনীয়
৪.তার বুকে মাথা রেখে আমি_____
শায়িত হতে চাই।
=চিরনিদ্রায়
৫.নির্জনের অনুপস্থিতিতে প্রতি ন্যানো সেকেন্ডে আমার______হয়।
=হৃদয়ে র**ক্তক্ষরণ

” নির্জন মুচকি হেসে বললো,

‘বাহ!এইবার ৪নাম্বার প্রশ্নের উত্তর দাও সোনা।’

“নিধি বাধ্য মেয়ের মত বলতে শুরু করলো,

৪|রোমান্টিক এক কথায় প্রকাশ-

১.নিধিকে ভালোবাসে যে জন=নিধির্জন।
২.যে নারী অন্য কারো প্রতি আসক্ত হয় না=অনন্যা
৩.যে নারী ভালোবাসা কম বোঝে=পাষাণী
৪.যে প্রেম কথাটা বোঝে না=পা**গল
৫.যে নারী আঁধার রাতে আলো ছড়ায়=ডার্ক কুইন।

“নির্জন এইবার নিধির গালে চুৃুমু দিয়ে বললো,

‘গুড,এইবার ৫ নাম্বার প্রশ্নের উত্তর বলো নিরুপমা।’

“নিধি আবারও বাধ্য মেয়ের মতো বলতে শুরু করলো,

৫|রোমান্টিক সমার্থক শব্দ
প্রদত্ত শব্দ —– সমার্থক শব্দ
১.ভালোবাসা—-প্রণয়,মমতা,প্রীতি
২.নির্জন —– নিভৃত,জনশূন্য
৩.নিরুপমা —–অতুলনীয়া
৪.অতিশয়—–অতিমাত্রা,পরম,খুব
৫.হৃদয়ে র**ক্তক্ষরণ—–অন্তঃকরণে র**ক্তহ্রাস”

“নির্জন এইবার হাতে তালি বাজিয়ে বললো,

‘গুড,এক্সিলেন্ট।এইবার একটা রোমান্টিক পত্র শোনাও ডার্ক কুইন।’

“নিধি নির্জনের দিকে ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁত কিড়মিড় করে বলতে থাকল,

৬|রোমান্টিক পত্র লিখন।
মনে করো,তোমার স্বামী তোমার অহেতুক অবহেলায় কষ্ট পেয়ে,তোমার সাথে অভিমান করেছে।তার অভিমান ভা**ঙানোর জন্য, তার উদ্দেশ্যে তুমি একখানা রোমান্টিক পত্র লিখো।(ঠিকানা লিখতে হবে না।)

বলেই নিধি নির্জনের দিকে ক্লান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তৃষ্ণার্ত গলায় বলে উঠলো,

‘প্রাণের চেয়ে প্রিয় স্বামী,
আপনি কেমন আছেন?মন বলছে, আপনি বিষন্নতায় ভুগছেন।আমি আপনাকে জেনে-বুঝে অনেক অবহেলা করেছি এবং নিজের অজান্তেই অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।অনুগ্রহ করে আপনি আমায় ক্ষমা করে দিন।এমন ভুল আমি আর কখনো করব না।আমি আপনার নিকট ওয়াদা করছি।আপনি আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় স্বামী।আমি আপনার অপরিসীম ভালোবাসায় বারংবার সিক্ত হতে চাই।আপনার হাত আমি কখনোও ছাড়বো না।আপনার মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা ত্যাগ করার থেকে,মৃ**ত্যু শ্রেয়।দিবসে,রজনীতে,ইহকালে,পরকালে সব জায়গায় আপনাকে চাই।আপনিই তো আমার সকল সুখের মূল।ওগো আমার ‘হৃদস্পন্দন’ দয়া করে আপনি আর আমার সাথে রাগ করে থাকবেন না।আপনার হৃদয়ে ক্ষ**ত করে আমি সুখে থাকতে পারব না।আপনার বক্ষগহ্বরে যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য,প্রতিমুহূর্তে আমার হৃদয়ে র**ক্তক্ষরণ হচ্ছে।আসুন, আমরা সকল মান-অভিমান ভুলে আবারও মিলিত হয়ে যাই।
আশা করি,আপনি আমার হৃদয় নিংরানো পত্রের উত্তর খুব তাড়াতাড়ি দিবেন।পরিশেষে সর্বদা আপনার সুস্থতা এবং আমার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা কামনা করছি।

ইতি আপনার অতিশয় প্রিয়
ডার্ক কুইন।”

“নিধির চিঠি পড়া শেষ হতেই নির্জন বাঁকা হেসে,মুহূর্তেই নিধির ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠদ্বয়ে আবদ্ধ করলো।কয়েক সেকেন্ড পর নিধি কে ছেড়ে দিয়ে নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাস্কি ভয়েসে বললো,

‘ক্ষমা করে দিয়েছি ডার্ক কুইন।আশা করি, গভীর চুম্বনের মাধ্যমে উত্তর টা পেয়ে গেছো।তোমার ভ**য়ার্ত র**ক্তিম চেহারা দেখে,এতক্ষণ নিজেকে কন্ট্রোল রাখা দায় হয়ে পড়েছে।তাই তোমার বাকি চিঠির উত্তর প্র্যাক্টিক্যালি দিবো।তুমি কি প্রস্তুত ডার্ক কুইন?’

“ওহ..জানপাখি কংগ্রাচুলেশন,তুমি সাড়ে ২৯ নম্বর পেয়েছো এবং গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছো।হাফ নম্বর কম পেয়েছো,কারণ তুমি প্রথম প্রশ্নে চার নম্বর উত্তর দিতে দেরি করেছো+তোতলামো করেছো।যাইহোক, এখন আমি আমার কথা রাখবো।এখন আমাদের মধ্যে দুষ্টু-মিষ্টি আদুরে রোমান্স হবে,যেমন টা ফুলসজ্জা রাতে তুমি আমায় আর আমি তোমায় করেছিলাম।তবে, তার আগে আমি তোমার উদ্দেশ্যে একটি কবিতা বলতে চাই।’
বলেই নির্জন শুরু করলো,

“অন্ধকারের প্রেম”

প্রেমের অন্ধকার পথে, যেখানে রাতের ছায়া গভীর,
দুটি হৃদয় মিশে যায়, একটি ভয়**ঙ্কর মর্মমূলে।
ভালোবাসার এই গভীর রাতে, যেখানে আলো নেই,
দুটি আত্মার মিলন, ভয়**ঙ্কর এক অগ্নির সৃজন।

প্রেমের শিকল পরানো, অন্ধকারের বন্ধনে,
একে অপরের মাঝে গাঢ়, অব্যক্ত আকর্ষণ।
শরীরের ছোঁয়ায়, চিরন্তন অসীমের ভয়,
মিলনের এই ক্ষণে, হৃদয় ফেটে যায় ভয়ের তাণ্ডবে।

চোখের গভীরে লুকানো, এক অন্ধকার কাহিনী,
মিলনের এই র**ক্তাক্ত পথে, প্রেমের শক্তি তীব্র ও নিষ্ঠুর।
প্রেমের এই অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ, যেখানে শান্তি নেই,
অন্ধকারে মিলিত হয় দুই হৃদয়, এক অমর ও ভ**য়ঙ্কর সত্যের উন্মোচনে।” ~মেহের~

#চলবে…

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪৪
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]

“অন্ধকারে মিলিত হয় দুই হৃদয়,এক
অমর ও ভয়**ঙ্কর সত্যের উন্মোচনে।”

“নির্জনের এহেন কবিতা শুনে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো নিধি।ভীতু দৃষ্টিতে নির্জনের দিকে তাকালো।”

“নিধির ভ**য়ার্ত চাহনি লক্ষ্য করে ভীষণ খুশি হলো নির্জন।এটাই তো সে চেয়েছিলো।নিধি তাকে ভয় পাবে,তার কথা মতো চলবে।যাক,অবশেষে সে সফলতার একটি ধাপ অতিক্রম করতে পেরেছে।”

কথাগুলো ভেবে নিধির হাতের বাঁধন খুলতে খুলতে বললো,

‘উমম,এখন ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসবে।তারপর আমরা ভালোবাসার সুন্দর একটি মুহূর্ত কা**টাবো ডার্ক কুইন।আজ থেকে আমরা নতুন জীবন শুরু করবো।যে জীবনে কোনো তৃতীয় ব্যক্তির পদার্পণ ঘটবে না,হোক সে তোমার আপন বা পর।আমি যদি সবকিছু মেনে চলতে পারি,আশা করি তুমিও পারবে।’
বলতে বলতে হাতের বাঁধন খুলে দিতেই,নিধি হিং**স্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে, নির্জনের বুক বরাবর দুই হাত দিয়ে ধা**ক্কা দিয়ে,দাঁড়াতে চাইলো।কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, ওর পা তখনও চেয়ারের সাথে বাঁধা ছিলো।
নিধির ধা**ক্কাতে কিছুটা সরে গিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।
হাত দিয়ে চুলগুলো উল্টিয়ে বললো,

‘বাহ!আমার বউয়ের দেখি খুব তেজ!হুম,এমনই তো আমি চেয়েছিলাম।’
বলেই বাঁকা হাসল নির্জন।অতঃপর নিধির কাছে এসে দুই হাত ওর কাঁধের ওপর রেখে আবারও বসিয়ে দিয়ে,তড়িৎ গতিতে বেঁধে দিতে দিতে বললো,

‘নিজেকে খুব চালাক ভাবো তুমি?কি ভেবেছিলে,তোমার ওই নরম হাত দিয়ে আমাকে ধা**ক্কা দিবে,আর আমি পড়ে যাবো,সেই সুযোগে তুমি পালিয়ে যাবে?হাহাহা..শেইম অন ইউ নিরুপমা।ওপস..সরি,নিরুপমা নাম টা তো তোমার বাবার পছন্দের ছিলো, তাই না?নো, নো, নো..এই নামে তোমাকে আমি ডাকব না।অন্যের ইউজ করা নামে তোমাকে ডাকব কেনো?তোমাকে আমি ‘নিরু’ বলে ডাকব।আমার নিরু,আমার জানপাখি,আমার ডার্ক কুইন।
আর হ্যা,আমি কিন্তু বুকে একটু ব্যথা পেয়েছি।কিছুক্ষণ পর আদর করে দিবে, ওকে?এখন তোমাকে আমার অতীতের কিছু ঘটনা শোনাবো।তারপর আমরা ভালোবাসার সুন্দর একটি মুহূর্ত কা**টাবো।তখন তোমার এই ধা**ক্কা দেওয়াতে কোনো কাজ হবে না,ডার্ক কুইন।’

বলেই চেয়ার টেনে নিধির মুখোমুখি বসলো নির্জন।”

“নিধি উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

‘আপনার কোনো অতীত ইতিহাস আমি শুনবো না।আপনি একজন বি**কৃত মস্তিষ্কের লোক।আমারই ভুল হয়েছে আপনাকে ভালোবাসা।বাবার পছন্দ করা পাত্রকে বিয়ে করলে,আজ আমার এই দিন দেখতে হতো না।’
বলেই নির্জনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির উপেক্ষা করে মুখ ঘুরিয়ে নিলো নিধি।”

“নিধির এহেন কথা শুনে, চোখজোড়া বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ড একা একা বিড়বিড় করলো নির্জন।কয়েক সেকেন্ড পর টেবিলের ড্রয়ারে থাকা একটা মাঝারি সাইজের ধা**রালো ছু**রি বের করে নিধির হাতের তালুতে আলতো করে দিলো এক টান।নির্জনের আকস্মিক আ**ক্রমণে চি**ৎকার করে উঠলো নিধি।
নিধির চি**ৎকার শুনে, দুই কান চেপে ধরলো নির্জন।র**ক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলতে থাকল,

‘চুপ..চুপ একদম চুপ.. উচ্চস্বরে কথা বলবে না।আমার কানে সমস্যা হয়।’

“নির্জন বলার পরেও নিধি থামল না।বরং আরও জোরে চি**ৎকার করে উঠলো।এদিকে নিধির হাত থেকে ফিনকি দিয়ে র**ক্ত বেরিয়ে টপ টপ করে ফ্লোরে পড়ছে।সেটা দেখে নির্জন টেবিলে থাকা সেলোটেপ দিয়ে নিধির মুখে পেঁচিয়ে দিলো,যেন চি**ৎকার করতে না পারে।
তারপর নিধির গালে হাত রেখে উত্তেজিত স্বরে বললো,

‘খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?আমার সাথে এমন ব্যবহার না করলেই তো পারো।একটু অপেক্ষা করো, এখনই তোমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।’
বলেই কাভার্ড খুলে ফাস্ট এইড বক্স এনে,সন্তর্পণে নিধির বাঁধা হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে মুচকি হেসে বললো,

‘উহুম,এখন আর চাইলেও কথা বলতে পারবে না নিরু।আমার অতীত ইতিহাস শুনবে,তারপর তুমি আর আমি নতুনভাবে ভালোবাসার প্রহর কা**টাবো।ভেবেছিলাম,তোমার সাথে সুন্দর সময় কা**টিয়ে তারপর আমার অতীত জীবনের কথা বলবো,কিন্তু তুমি দেখি বন্দী পাখির মতো ছটফট করছো।তাই তোমাকে একটু শান্ত করে দিলাম।’
বলেই নির্জন মাথা নিচু করে শুরু করলো,

[অতীত]
“তখন আমার বয়স ছিলো ৮বছর।আমার বাবার নাম সাজিদ খান,আর মায়ের নয়না।বাবা মাকে ভালোবেসে ‘সুনয়না’ বলে ডাকত।আমার জন্ম হওয়ার পর,মা তার নামের সাথে মিলিয়ে আমার নাম রেখেছিলো ‘নির্জন’। মা-বাবা আর আমি,মিলে খুব সুখী পরিবার ছিলাম।আর্থিক দিক থেকেও ভালোই ছিলাম।কারণ,আমার দাদা আমার বাবার নামে তার সম্পত্তি দলিল করে দিয়েছিলো,যেহেতু বাবা তার একমাত্র সন্তান ছিলো।ছোটবেলা থেকে আমি ছিলাম প্রানবন্ত এবং খুব দুষ্টু স্বভাবের।আমাদের জয়েন ফ্যামিলি ছিলো।যতদিন দাদি বেঁচে ছিলো,আমি বেশিরভাগ সময় দাদির সাথেই কা**টাতাম।এক সময় আমরা পুরো পরিবার মিলে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেলাম।সেখানে আমরা প্রতিবছর গিয়ে সুন্দর সময় কা**টাতাম।হঠাৎ দাদি সেখানে গিয়ে বায়না ধরে,যে সে মৃ**ত্যুর আগ পর্যন্ত এখানেই থাকতে চায়।সে আর ঢাকা-শহর যেতে চায় না।বৃদ্ধ মায়ের কথা শুনে,আমার বাবা এবং মা উভয়ে রাজি হয়ে যায়।পরবর্তীতে আমরা ঢাকার বাড়িটি ভাড়া দিয়ে গ্রামের বাড়িতে জীবন-যাপন শুরু করি।”

“আমাকে গ্রামের একটি স্কুলে ভর্তি করা হয়।সেখানে আমার কিছু বন্ধু হয়েছিলো।পড়াশোনা এবং ওদের সাথে হৈ-হুল্লোড় করে আমার সময় কে**টে যেতো।একদিন স্কুল ছুটি হওয়ার পর, আমরা বন্ধুরা মিলে স্কুলের মাঠে ক্রিকেট খেলি।খেলতে খেলতে এক সময় বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়।আমি আর আমার বন্ধুরা কিছুটা পথ একসাথে যাই,তারপর ওরা যে যার বাসায় চলে যায়।আমার বাসা কিছুটা দূরে ছিলো।তাই সেই সন্ধ্যাবেলা আমি হাতে ব্যাট নিয়ে একাই বাড়ি ফিরছিলাম। বাবা তার কিছু কাজের জন্য শহরে গিয়েছিলো।আমার এত দেরি দেখে, মা আমায় খুঁজতে বেরিয়েছিলো।আমাদের বাসার একটু সামনে এগিয়ে রাস্তার পাশে একটি জঙ্গল ছিলো।সেখানে তেমন কেউ যেতো না।আর সন্ধ্যার দিকে সেদিক দিয়ে তেমন কারো যাতায়াত থাকত না।আমি যখন সেই জায়গা দিয়ে যাচ্ছিলাম,
তখন সন্ধ্যার অন্ধকার গাঢ় হয়ে আসছিলো, আর রাস্তার পাশে জঙ্গলের শুনশান পরিবেশে শুধু পাতার মৃদু খসখসানির শব্দ শোনা যাচ্ছিলো।আমি ধীরে ধীরে হাঁটছিলাম, ক্লান্ত শরীরে আর ক্রিকেট খেলার উত্তেজনা মিশ্রিত মনের মধ্যে একটু বিশ্রামের আশায়।কিন্তু,হঠাৎ করেই সেই ভ**য়ং**কর মুহূর্তের সম্মুখীন হলাম।”

“একজন নারী কন্ঠস্বর জঙ্গলের ভেতর থেকে ভেসে আসল।অসহায় আর আত**ঙ্কে ভরা এক চি**ৎকার, যেন কারো বাঁচার আকুতি। আমার মনে একটা ধা**ক্কা লাগল। এই কন্ঠটা তো চেনা! মায়ের কন্ঠ!আমি ব্যাটটা ফেলে ছুটে গেলাম সেই দিকে, ভ*য় আর সন্দেহের মাঝে দৌড়ে দৌড়ে জঙ্গলের গভীরে পৌঁছালাম।”

“সেখানে গিয়ে চোখের সামনে যে দৃশ্য ফুটে উঠল, তা আমাকে হতবাক করে দিলো।আমার মা মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে। আর তার ওপর কিছু অ**মানুষ, অসহায় মায়ের শরীরকে টেনে নিচ্ছে নিষ্ঠুরভাবে, প্রতিটি আ**ঘাতে যেন মায়ের আত্মা ভে**ঙে চুরমা**র হয়ে যাচ্ছে। মা বারবার তাদের হাত থেকে পালানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু সেই পি**শাচেরা তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। মাকে নিঃশব্দে আ**র্তনাদ করতে দেখে আমার মনে হলো, যেন সে জ্বলে পু**ড়ে যাচ্ছিলো।”

“আমার পায়ের তলায় মাটি যেন সরে যাচ্ছিলো,আমি চি**ৎকার করে উঠলাম,

“মা! মা! তুমি কি আছো?”
আমার গলার স্বর ভে**ঙে গিয়েছিলো ভয় আর দুঃখে। কিন্তু সেই চি**ৎকার কোনো ফলাফল আনল না।কারণ, আমার চি**ৎকার মিশে গেলো সেই পি**শাচদের হিং**স্র হাসির মধ্যে।”

“আমার চি**ৎকার এতটা তীব্র ছিলো যে,সেই শব্দ আমার নিজের কানে বাজতে লাগল। হঠাৎ করেই যেন পুরো পৃথিবী থেমে গেলো। মায়ের অসহায় চি**ৎকার আর সেই পি**শাচদের নিস্তব্ধতার মাঝে,আমার কান ধরে এলো। কানে যেন এক ভীষণ শূন্যতা ঘিরে ধরলো। উচ্চ শব্দ আমার মনের ভেতর প্রতিধ্বনি তুলছিলো, যেন কানের ভেতর দিয়ে হঠাৎ এক অজানা বিস্ফোরণ ঘটল।”

“আমি তখনও চি**ৎকার করছিলাম, কিন্তু আমি নিজেই শুনতে পাচ্ছিলাম না।আমার কান থেকে র**ক্ত পড়তে শুরু করলো,অন্ধকারের মধ্যে সেটা আমি অনুভব করতে পারলাম।কিন্তু,মা তখনও নিঃশব্দে কাঁদছে।”

“আমার চি**ৎকারে পুরো জঙ্গলের পরিবেশ যেন স্তব্ধ হয়ে গেলো, কিন্তু সেই ভ**য়ানক ঘটনার কোনো পরিবর্তন হলো না।আমার মা তখনও দা**নবদের নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছিলো, শরীরের প্রতিটি আ**ঘাতে তার নিঃশ্বাস ধীরে ধীরে কমে আসছিলো।পি**শাচের দলগুলো টর্চ লাইটের আলোতে সেগুলো তৃপ্তির সাথে উপভোগ করছিলো।আমার মাথা ঘুরে যাচ্ছিলো, চোখের সামনে সবকিছু ধোঁয়াটে হয়ে উঠছিলো। কানের অসহ্য য**ন্ত্রণায় বুঝতে পারছিলাম না কি ঘটছে, কিন্তু মাকে বাঁচানোর আকুতি আমার সমস্ত শক্তি নিংড়ে নিচ্ছিলো।”

“আমি এগিয়ে যেতে চেয়েছিলাম, দৌড়ে গিয়ে মাকে টেনে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার পা যেন জমে গিয়েছিলো মাটিতে। ভ*য়, হতাশা, আর কান থেকে র**ক্তের ধারা আমাকে আটকে দিলো। সেই না**রকীয় দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে আমি কেবল চি**ৎকার করতে থাকলাম, কিন্তু কণ্ঠরোধ হয়ে আসছিলো। আমার চারপাশের সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো, শুধু মায়ের নিস্তেজ কান্না আর আমার নিজের কানের মধ্যে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল সেই য**ন্ত্রণাময় শব্দ।”

“মায়ের শরীর এক সময় নিথর হয়ে গেলো। পি**শাচেরা তখন নিজেদের কাজ শেষ করে,মায়ের নিস্তেজ শরীরটাকে ছেড়ে চলে যেতে শুরু করলো।আমি তখনও অবশ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম
আমার মায়ের দিকে, বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কি হলো। চারপাশটা যেন হঠাৎ করেই পুরোপুরি অন্ধকারে ঢেকে গেলো, আর আমার মায়ের শরীরটা জঙ্গলের মাটিতে পড়ে রইল, নিস্তেজ, নিথর।”

“আমি ধীরে ধীরে হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়লাম। মায়ের নিথর হাতটা ধরলাম, কিন্তু কোনো সাড়া নেই। তার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছিলো না। চোখের সামনে আমার মায়ের মৃ**ত্যু, আমার নিজের চি**ৎকার আর কান থেকে বয়ে যাওয়া র**ক্তের ধারা, সবকিছু মিলিয়ে আমার ভিতরের সব অনুভূতি যেন স্থির হয়ে গেলো।
সেই রাতের পর থেকে আমি আর উচ্চশব্দ সহ্য করতে পারি না।আমার কান স্থায়ীভাবে ক্ষ*তিগ্রস্ত হয়েছিলো।
শুধু শারীরিক ভাবে নয়,বরং আমার ভেতরটাও গভীরভাবে ক্ষ**ত হয়েছিলো,যা কখনোও সেরে ওঠেনি।”

“জানো,যখন আমি মায়ের নিথর দেহটার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে মায়ের মুখটা নিজের কোলে তুলে নিলাম, কিন্তু মায়ের চোখ দুটো বন্ধ ছিলো, তার ঠোঁটগুলো আর কাঁপছিলো না, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো,তখন আমার বুক ফেটে কান্না আসতে চাইলো, কিন্তু কান থেকে বয়ে যাওয়া র**ক্তের যন্ত্রণায় আমি নিস্তব্ধ হয়ে ছিলাম। মায়ের প্রাণহীন শরীরটা তখনও আমার কোলে, কিন্তু সেই উষ্ণতা আর নেই। মায়ের শরীরটা তখন কিছুটা শীতল, একেবারে নিথর।”

“সেই মুহূর্তে আমার জীবনও যেন থেমে গিয়েছিলো।কারণ,আমার মা আর এই পৃথিবীতে নেই…

“আমি যখন মায়ের নিথর দেহটা নিয়ে অনড় হয়ে বসেছিলাম,কিছুক্ষণ পর জঙ্গলের সেই নীরব অন্ধকারে আশপাশের লোকেরা এক এক করে সেখানে আসে। সবার মুখে অবিশ্বাস আর দুঃখের ছাপ। মায়ের মৃ**ত্যু সংবাদটা যেন মুহূর্তের মধ্যেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।আচ্ছা,আরেকটু আগে আসলে তো মনে হয় আমার মা বেঁচে যেতো, তাই না?”

বলতে বলতে নির্জনের চোখজোড়া নোনাজলে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো।দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করলো,

“ধীরে ধীরে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সবাই জড়ো হতে শুরু করলো। কেউ চি**ৎকার করে কাঁদছে, কেউ অবাক হয়ে সেই ম**র্মান্তিক ঘটনাটা বিশ্বাস করতে পারছিলো না। মায়ের প্রিয় মুখটা যখন সবাই দেখলো, সবাই শোকে হতবাক হয়ে গেলো। তার একটিমাত্র সন্তান, যার জন্য সে সবকিছু করেছিলো, সে সন্তান আজ তার মাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছে।”

“আমার বাবা শহর থেকে ফেরার পর এই খবর শুনে ভে**ঙে পড়লেন। তিনি ছুটে এসে মায়ের নিথর দেহটা দেখে থমকে গেলেন। বিশ্বাস করতে পারছিলেন না,যে তার সুনয়না আর নেই। তিনি কেঁদে উঠলেন, যেন তার হৃদয়ের গভীর থেকে কান্না বেরিয়ে আসছিলো।বাবা বারবার মাকে ‘সুনয়না’ নাম ধরে ডাকার চেষ্টা করলেন, কিন্তু মা আর কোনো সাড়া দিলো না। সন্তান আর স্বামীকে রেখে সুনয়না চিরতরে চলে গেছে। বাবা আর কথা বলতে পারলেন না, শুধু নির্বাক হয়ে বসে রইলেন স্ত্রীর পাশে।”

“মায়ের দাফনের জন্য আত্মীয়রা সব ব্যবস্থা করতে শুরু করল। গ্রামের সবাই মিলে শোকাহত পরিবেশে মায়ের জন্য দোয়া করল।আমি মায়ের পাশে বসে, এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলাম, যেন সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছিলো।কিন্তু সেই দুঃস্বপ্ন থেকে বেরোনোর কোনো পথ নেই। মাকে চিরতরে হারানোর শোক আমাকে ভেতরে ভেতরে পু**ড়িয়ে ফেলছিলো।”

“যখন মায়ের নিথর দেহটা কবরে নামানো হলো,আমার চোখ দিয়ে আর এক ফোঁটা কান্না আসেনি।কারণ, আমার ভিতরের সবকিছু যেন শূন্য হয়ে গিয়েছিলো।আমি শুধু নির্বাকভাবে তাকিয়েছিলাম।আমার মা মাটির নিচে হারিয়ে যাচ্ছিলো, সেই মাটিতে যেখানে তাকে চিরদিনের জন্য ঘুম পাড়ানো হলো। মায়ের কবরের ওপর মাটি চাপা দেওয়া হলো, আর সেই মাটির স্তূপের নিচে মায়ের স্মৃতি, ভালোবাসা, আর এক অসীম শূন্যতা রেখে গেলো।”

“আমার জীবন থেকে মায়ের হাসি, তার যত্ন, আর তার উষ্ণ উপস্থিতি চিরতরে চলে গেলো, আর সেই শূন্যতার ভার নিয়ে আমাকে বাকি জীবন কা**টাতে হলো।”

একাধারে কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিধির দিকে তাকাতেই দেখলো,নিধির চোখজোড়া বেয়ে পানি পড়ছে।প্রথম দিকে নিধি মুখ বাঁধা অবস্থায় ‘উমম’ শব্দ করলেও,নির্জনের মায়ের ভ*য়ং**কর মৃ**ত্যুর কথা শুনে নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। নির্জন সযত্নে সেই পানি মুছে দিয়ে,তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আবার বলতে শুরু করলো,

“মায়ের মৃ**ত্যুর ৭মাস পর,দাদিও পরলোকগমন করলো।সেদিনও আমি কাঁদিনি,হয়তো পাথর হয়ে গিয়েছিলাম।দাদির মৃ**ত্যুর পর,আমার জীবনের আরেকটা বড় ধা**ক্কা আসে। দাদির বিদায়ও আমাকে শোকের সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু শোকের মাঝেই আত্মীয়-স্বজনরা আমার বাবাকে আবার বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। তারা বলতো,

‘সাজিদ একা থাকবে কীভাবে? সংসার চালানো, নির্জনের দেখাশোনা করা,সবকিছু সামলানোর জন্য একজন নারী দরকার।’
প্রথমে বাবা দ্বিধায় ছিলেন, কিন্তু ক্রমাগত চাপ এবং একাকীত্বের কারণে তিনি শেষমেশ রাজি হয়ে গেলেন।”

“কিছুদিনের মধ্যেই আমার বাবার দ্বিতীয় বিয়ে হলো। নতুন মা প্রথম দিকে আমার প্রতি বেশ ভালো ব্যবহার করতো। সে হাসিমুখে কথা বলতো,আমার যত্ন নিতো। কিন্তু দিন যেতে না যেতেই সেই আচরণ বদলে যেতে শুরু করল। বিশেষ করে তখন, যখন আমরা ঢাকায় ফিরে গেলাম। শহরে ফেরার পর থেকে আমার নতুন মা ধীরে ধীরে তার আসল রূপ প্রকাশ করতে শুরু করে।”

“আমি একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে একটু দেরি করে ফেলি।আমি জানতাম যে মা রেগে যাবে, কিন্তু যা অপেক্ষা করছিলো, তা আমার কল্পনাতীত ছিলো। ঘরে ঢুকতেই মা এক বাক্যে আমাকে তিরস্কার করে রুমে আটকে দিলো।আমি কয়েক ঘণ্টা অন্ধকার রুমে বন্দী ছিলাম, বাইরে থেকে দরজা বন্ধ ছিলো। কোনো খাবার নেই, পানিও নেই।আমি ভয়ে শিউরে উঠেছিলাম।অন্ধকার ঘর আমি খুব ভয় পেতাম।সেদিন আমি কাঁপা কাঁপা হাতে দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, মাকে ডাকছিলাম, কিন্তু কোনো সাড়া মিলল না।”

“পরের দিন সকালে,আমার বাবা বাড়ি ফিরে এলে,আমি বাবাকে সবকিছু জানাই। মনে করেছিলাম, বাবা আমাকে রক্ষা করবে। কিন্তু বাবা আবার ব্যবসার কাজে বাইরে যাওয়ার পর মা সেই শাস্তি দ্বিগুণ করে দেয়। এবার আমার ওপর ‘স্পেশাল শাস্তি’ আসে।আমাকে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে দীর্ঘক্ষণ থাকতে হয়, কোনো কথা বলার অনুমতি নেই। শাস্তির শেষে আমি ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ি, কিন্তু মায়ের চোখে কোনো মায়া ছিলো না,ছিলো শুধু হিং**স্রতা।”

“মা সবসময়ই বলত,

‘আমার জিনিসে তোর নোং**রা হাত স্পর্শ করতে পারবে না। নিজের জিনিস নিজেকেই যত্ন করে রাখতে হবে।
আমার কোনো খেলনা বা প্রিয় জিনিস ধরলেই,মা সেটা নিয়ে চলে যেতো।আমি কষ্ট নিয়ে চেয়ে থাকতাম, আর কিছু বলতে পারতাম না। প্রতিবার মায়ের চোখে সেই কঠোর দৃষ্টি, সেই অবজ্ঞা আমার হৃদয় ভে**ঙে দিতো।সেই থেকে ‘অবহেলা’ নামক জিনিস টাকে আমি ভীষণ ঘৃণা করি।”

“আমার জীবনটা তখন একটা নিষ্ঠুর নিয়মের মাঝে বন্দী হয়ে পড়েছিলো। সময় মতো স্কুল থেকে না ফিরলে শাস্তি, বাবার কাছে বিচার দিলেও আরও বড় শাস্তি।মায়ের কোনো জিনিসে স্পর্শ করলেও শাস্তি।শুধু শাস্তি,শাস্তি আর শাস্তি..।তার কারণে আমার ছোট ছোট আনন্দগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকল।”

“জানো,একদিন টিভিতে দেখছিলাম,সৎ মা তার সন্তানের কান মলে দেয়।আমার মাও সেটা দেখে বললো,

“দেখ,দেখ,আমি তোর সৎ মা হই।সারাদিন এত ‘মা, মা’ করিস কেনো?আমি তোর মা নই।যখন আমার সন্তান হবে,সে আমাকে মা বলে ডাকবে।যখন তোর বাবা সামনে থাকবে,তখন আমাকে ‘মা’ বলে ডাকবি।নইলে তোর বাবা আবার কষ্ট পাবে।তোদের বাপ-বেটার ঢং দেখে বাঁচি না বাপু।বলি কি,তোর মায়ের সাথে সেদিন ওই ধ**র্ষক গুলো তোকে মে**রে ফেললেও ভালো হতো।যত্তসব, বোঝা হয়ে আছে আমার ঘাড়ে।’

বলেই কান টা এত জোরে মলে দিলো,খুব ব্যথা পেয়েছিলাম!
জানো,সেদিন ভেবেছিলাম,সৎ মায়েরাও এতটা খারাপ হয়?কই,আমার বন্ধু পরশের সৎ মা তো খুব ভালো ছিলো।পরশ কে কতটা আদর করে খাইয়ে দিতো,ওর যত্ন করতো।আসলে সব সৎ মায়েরা খারাপ হয় না।ওই মহিলার মতো ডাইনীরা খারাপ হয়।”

“ওহ আরেকটা কথা তো তোমাকে বলাই হয়নি,
‘আমাকে যখন দিনের পর দিন অন্ধকার রুমে বন্দী করে রাখা হতো,তখন আমার খুব একা লাগত।খুব কথা বলতে মন চাইতো।তখনই আমি আবিষ্কার করি,আমার ভেতরে ‘মন’ আর ‘হৃদয়’ কথা বলতে পারে।হ্যা,আমার অন্ধকার জগতে ওরাই আমার সঙ্গী হয়।আমি কোনো প্রশ্ন করলেই সাথে সাথে উত্তর পেয়ে যেতাম।আমার সুখ-দুঃখের সাথী ছিলো ওরা।এই পর্যন্ত আমি যতগুলো ভালো কাজ করেছি,সবকিছুতে ‘মন’ আর ‘হৃদয়’ সাহায্য করেছে।”

“আমার যখন ১০বছর বয়স,তখন আমার বাবা হার্ট অ্যা**টাক করে মা**রা যায়।বাবা মা**রা যাওয়ার পর,জানতে পারি,আমার ১০ বছর বয়সে সে আমার জন্য এই বাড়িটি দলিল করে রেখে যান। কিন্তু ওই সম্পত্তি আমার ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে পাওয়া যাবে না।আমার সৎ মা জানত, যে সম্পত্তি পেতে হলে তাকে অপেক্ষা করতে হবে, তবে তার পরিকল্পনা ছিলো অন্যরকম।যদি সে আমাকে পড়াশোনায় মনোযোগী করে তোলে, তবে সে সেই সম্পত্তি পাবে।আমার প্রতি হঠাৎ করেই তার ভালোবাসা উপচে পড়ছিলো।সে আমাকে প্রতিশ্রুতি দেয়, যে সে আমার পড়ালেখায় সাহায্য করবে, আর আমি যদি ভাল ফলাফল করি, তাহলে সেই সম্পত্তি যেন পরবর্তীতে তার নামে লিখে দেই।কারণ,তখন তো আমি নিজেও প্রতিষ্ঠিত হবো।”

“আমি সৎ মায়ের প্রস্তাব মেনে নেই, কিন্তু অজান্তে সে জানে না যে তার উপর এক অন্ধকার চক্রান্ত চলছিলো,হাহাহা।আমার মন এমন কিছু ভেবেছিলো, যা তিনি কখনো কল্পনাও করতে পারেননি।”

“স্কুল জীবনে দিগন্ত আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হলেও, ওকে আমি সব কথা শেয়ার করতাম না।কিছু কথা নিজের মাঝে জমিয়ে রাখতে পছন্দ করতাম।”

“আমি যখন দশম শ্রেণীতে পড়ি, একদিন ২টা ক্লাস মিস দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে,আমার মনে এক ধরনের চাপ অনুভব হয়। বাসায় প্রবেশ করে,আমি অনুভব করি কিছুটা অস্বাভাবিক পরিবেশ।আমার মায়ের রুমের দরজা খোলা এবং ঘরের ভেতর থেকে কিছু অদ্ভুত আওয়াজ আসছে।আমি কিছুটা অবাক হয়ে, এক পা সামনে বাড়িয়ে শুনতে পাই, মায়ের অচেনা কন্ঠের সঙ্গে কারো কথা বলার শব্দ। চুপচাপ পা বাড়িয়ে, সে রুমের দিকেই এগিয়ে যাই।

পরে,যে দৃশ্যটি আমার সামনে ধরা দেয়,তার জন্য আমি অপ্রস্তুত ছিলাম।মা এক অজ্ঞাত পুরুষের সঙ্গে নিষিদ্ধ কাজ করছে।আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে, মায়ের এই অবস্থা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যাই। হঠাৎ, লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে দেখে,হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নেয় এবং তাড়াহুড়ো করে শার্ট হাতে নিয়ে আমাকে ধা**ক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়।আর মা লজ্জায় ফেটে পড়েন এবং দ্রুত চাদর মুড়িয়ে নেন,আমার চোখে চোখ পড়ার ভয়ে।
অথচ তার এহেন দশা দেখে,আমি মনে হয় সেদিন সবচেয়ে বেশি লজ্জা পেয়েছিলাম,ছিহঃ!

“এই দৃশ্যের পর আমার মনে তার জন্য দ্বিগুণ ক্ষোভ ও ঘৃণা জন্ম নেয়। দীর্ঘদিনের দুঃখ, অবহেলা আর অশান্তির পর আমার মনের মধ্যে এক ধরনের প্রতিশোধের ইচ্ছে তৈরি হয়।আমি ভাবতে থাকি,
‘মা, তুমি আমাকে শুধু কষ্টই দিয়েছো।এর বিনিময়ে তোমাকে কঠোর শাস্তি দেবো।’

“আমি কিচেনের দিকে চলে যাই, যেখানে রান্নার তেল রাখা ছিলো। তেলটি হাতে নিয়ে, কিছুক্ষণ ভেবে,চুপি চুপি মায়ের রুমে গিয়ে, তেলটি ফ্লোরে ছড়িয়ে দেই। অন্ধকারের ভেতর,সৎ মায়ের অবজ্ঞা আর সেই ভয়**ঙ্কর মুহূর্তের প্রতিশোধ নিতে আমার চোখে এক নিষ্ঠুর পরিকল্পনার ঝিলিক দেখা দেয়। তেল পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে দিয়ে,আমি নিজের রুমে ফিরে আসি।

আর মা তেল মাখা মেঝে না দেখে,বিছানা থেকে নিচে নামতেই,তার পা পিছলে যায়, এবং সে ফ্লোরে পড়ে যায়। আমি রুম থেকে বেরিয়ে মায়ের দিকে ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে থাকি।আমি দেখেছিলাম, মা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু তার গতি খুবই ধীর।আমি মনে মনে বলেছিলাম,
“এটাই তোমার জন্য উপযুক্ত শাস্তি, মা।”

“মায়ের আহাজারি এবং লজ্জার মধ্যে আমি মনে মনে হাসছিলাম। তার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে, আমার মাঝে এক অদ্ভুত আনন্দ সৃষ্টি হয়, কারণ মা শেষ পর্যন্ত তার শাস্তি পাচ্ছে,যে শাস্তি আমার মন এবং আত্মাকে শান্তি দিয়েছিলো।সেদিন বুঝেছিলাম,কেউ অন্যায় করলে,তাকে যথাযথ শাস্তি দেওয়ার মত আত্মতৃপ্তি এই পৃথিবীতে নেই।”

“মাকে এতটা ছটফট করতে দেখে, আমি আশেপাশের প্রতিবেশীদের ডেকে এনে,তাদের সাহায্যে মা কে হসপিটালে নিয়ে গেলে,ডাক্তার ঘোষণা দেয়,মায়ের কোমর এবং পায়ের হাড়ে প্রচন্ড আ**ঘাত লেগেছে।সুস্থ হতে সময় লাগবে।
ডাক্তারের এহেন কথায় সেদিন আমার খুব মন খারাপ হয়েছিলো।আমি সেদিন শয্যাশায়ী মহিলাটির দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম,

‘তুমি আমার জীবনে এসেছিলে কেবল আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য, মা হওয়ার তোমার কোনো অধিকারই ছিলো না!’

“আমি মাকে চূড়ান্ত শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।তার জন্য একটি নিখুঁত পরিকল্পনা তৈরি করি।আমি ফার্মেসি থেকে একটি ইনজেকশন কিনে এনে মায়ের শরীরে পুশ করি।সেটার নাম হলো,
“ক্লোরোপ্রোমাজিন”, যা স্নায়ু সিস্টেমকে ধীরে ধীরে প্যারালাইজড করে ফেলে। প্রথমে,তিনি কোনো লক্ষণই বুঝতে পারে না। তবে কিছুদিনের মধ্যে, তার হাত-পা অবশ হয়ে যেতে শুরু করে, এবং তার চলাফেরা একেবারে অক্ষম হয়ে পড়ে।

প্রতিদিন আমি তার শরীরে এই ইনজেকশনটি প্রয়োগ করি,এবং ধীরে ধীরে সে অনুভব করে, তার শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাচ্ছে। তার শরীরের প্যারালাইসিসের লক্ষণ বেড়ে যায়,আর এক সময় সে পুরোপুরি প্যারালাইজড হয়ে যায়।সেই সাথে তার বাকশক্তিও লোপ পায়।
তার করুণ দশা দেখে আমি খুব স্বস্তি খুঁজে পেয়েছিলাম।এরপর থেকে আমি সৎ মাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলাম।এবং আমার ক্ষোভ মেটানোর জন্য তাকে এক জীবন্ত দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছিলাম।
তারপর আরও অনেক ঘটনা ঘটে গিয়েছে।আমি নিজের এক আলাদা জগৎ তৈরি করেছি।
তারপর তুমি এলে আমার অন্ধকার জীবনে।এখন নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হয়।
ডার্ক কুইন,আমি সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মানুষ।অথচ তুমি আমাকে বারবার অসুস্থ,মানসিক রোগী বলে অপমান করছো।তাই তো নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারিনি,যার ফলে তুমি শাস্তি পেলে।তবে মায়ের থেকে একটা জিনিস শিখেছি,

‘যেটা আমার,সেটা আমারই,তাতে অন্য কারো স্পর্শ করা উচিত নয়।’
বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু মুছে হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।
তারপর নিধির চোখে-চোখ রেখে বললো,

‘আচ্ছা অতীত কাহিনী তো শুনলে,আরও আছে,তবে ধীরে ধীরে শোনাবো।এখন নিশ্চয়ই তোমার মাথাটা ঠান্ডা হয়েছে।সকাল থেকে যেহেতু খাওয়া হয়নি।তাই এখন বাঁধন খুলে দিচ্ছি।ফ্রেশ হয়ে আমার সাথে খাওয়া-দাওয়া করে, তারপর সবকিছু হবে।’

বলেই বাঁকা হাসল নির্জন।
অতঃপর নিধির হাতের বাঁধন খুলে দিতেই,নিধি তৎক্ষণাৎ টেবিলে থাকা ছু**রি দিয়ে নির্জনের হাতে আ**ঘাত করলো।
নিধির আকস্মিক আ**ক্রমণে হতভম্ব হয়ে গেলো নির্জন।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে