হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-৪১+৪২

0
25

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪১
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]

“নির্জনের এই প্রতিশোধের আগুনে যেন লোকটির জীবন ও সব ক্ষমতা ধ্বং**স হয়ে গেলো।”

“নির্জনের অন্ধকার মনের ভেতর উঁকি দেওয়া পি**শাচটা তখন বেরিয়ে এসেছে। পোড়াবাড়ির জানালা থেকে ভা**ঙা কাঁচের প্রতিফলনে চাঁদের আলো ম্লান হয়ে যায়, আর নে**শাখোর লোকটা নিথর হয়ে পড়ে থাকে র***ক্তের স্রোতে। নির্জনের ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠেছে,যেন মৃ**ত্যু তার সবচেয়ে কাছের সঙ্গী।”

“পোড়াবাড়ির চারপাশে কেউ নেই, শুধু বাতাসে মাটি আর পঁচা গন্ধ মিশে আছে। নির্জন জানে, এই জায়গাটা সব রহস্য গিলে ফেলে। লোকটার শরীর ভারী হলেও নির্জনের জন্য তা কোনো বাঁধা নয়।লোকটার হাতের কব্জি,এবং জিহ্বা তার প্যান্টের পকেটে ভরে,ধীর পায়ে সে লোকটাকে টেনে নিয়ে যায় পোড়াবাড়ির পেছনের বাগানে। জায়গাটা অন্ধকারে ডুবে আছে, সেখানে সব সময়েই ধোঁয়াটে পরিবেশ।”

“নির্জন ব্যাগে করে আনা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে দেখলো,পোড়াবাড়ির আশেপাশে কিছু পুরনো গাছের শিকড় বেরিয়ে এসেছে। নির্জন সেই শিকড়ের ফাঁক গুলো দেখে একটা নিখুঁত পরিকল্পনা সাজালো। পুরনো গাছগুলো অনেক দিন ধরে মানুষ দেখেনি, তাই তার আড়ালে কবর দেওয়া হবে নিঃশব্দে।”

“কিন্তু এখানে শেষ নয়। নির্জন জানে,কেবল মাটিচাপা দিলেই হবে না, রহস্যটা আরও গভীর করতে হবে। তাই সে লোকটাকে সেখানে শুইয়ে দিয়ে, মাটি খোঁড়ার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজতে পোড়াবাড়িতে যায়।সেখানে গিয়ে অনেক খুঁজে রান্নাঘরের ভা**ঙা দরজার পাশে ফ্লোরে পড়ে থাকা একটি পুরনো, ভা**ঙা কুড়াল দেখতে পায়। বাড়িটা বহুদিন ধরে পরিত্যক্ত, তাই রান্নাঘরের শিক কেবিনেটের নিচে ধুলোর স্তূপে পড়ে থাকা কুড়ালটা কারও নজরে পড়েনি। নির্জনের হাতের মধ্যে সেটাই নিখুঁত অ**স্ত্র হয়ে ওঠে।”

“কুড়ালের ভা**ঙা ধার হলেও তার জন্য যথেষ্ট। নির্জন বাঁকা হেসে বাগানে চলে যায়।অতঃপর প্রথম আ**ঘাতে মাটি ভেদ করে, যেন কুড়ালটা বহুদিন পরে তার সত্যিকার কাজ করতে শুরু করেছে। প্রতিটা আ**ঘাতের সঙ্গে মাটির স্তর সরতে থাকে, আর নির্জন ঠাণ্ডা মাথায় কুড়াল চালাতে থাকে।ধীরে ধীরে চারদিকে মাটির গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।”

“মাটি খোঁড়ার সময় নির্জনের চোখে তখন অদ্ভুত এক পৈ**শাচিক আগুন জ্বলছে। কুড়ালের প্রতিটা আ**ঘাতের সঙ্গে সঙ্গে সে বিড়বিড় করে চরিত্রহীন লোকটাকে বলছে,

‘তুই ভেবেছিলি, তোর মতো একটা নোং**রা নে**শাখোর আমার বউয়ের দিকে নজর দিবি, আবার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নোং**রামি করবি?আর আমি কিছু করবো না? আমার ডার্ক কুইনের দিকে তাকানোর সাহস তোকে কে দিলো? তোর মতো কুকুরদের জন্যই এই পৃথিবীটা নোং**রা। তুই জানতিস না, আমি যাকে ভালোবাসি, তার জন্য সবকিছু করতে পারি। আজ তোর কু**কর্মের শেষ দিন।’
বলেই আরেকটা আ**ঘাত করে মাটিতে; যেন লোকটার প্রতিটা অপরাধ তার মনে ভাসছে।অতঃপর আবারও বিড়বিড় করে বলতে থাকল,

‘তুই আমার নিরুপমার চোখের দিকে তাকিয়েছিলি, তোর বি**শ্রী চাহনি দিয়ে তার পবিত্রতা নষ্ট করার চেষ্টা করেছিলি। আজ তোর শরীর এই পোড়াবাড়ির নিচে সারা জীবনের জন্য চাপা পড়ে থাকবে, আর কেউ জানবেও না তোর নোং**রা অস্তিত্বের কথা।”

“কথাগুলো বলে, নির্জন কুড়াল চালিয়ে যায়।আর তার ঠোঁটে মুচকি হাসির ঝলক ফুটে ওঠে।সে আবারও বিড়বিড় করে বলে ওঠে,

‘মনে রাখিস,ডার্ক কুইন আমার ছিলো, আমার আছে, আর আমারই থাকবে। তোর মতো নোং**রাদের জন্য ওর জীবনে কোনো জায়গা নেই। তুই মাটিতে মিশে যা, তোর মতো মানুষদের জায়গা কেবল এই মাটির নিচেই।’

“বলেই নির্জন গাছের নিচের মাটি খুঁড়ে, লোকটির শরীরটা সেখানেই রেখে দেয়।তারপর মাটিগুলো দিয়ে সন্তর্পণে লোকটির দেহ ঢেকে দেয়।আর গাছের শিকড়গুলোকে এমনভাবে সাজিয়ে দেয়, যেন কেউ খেয়াল করলে মনে হবে গাছের শিকড়ের ফাঁকে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই।তারপর চারদিকে কিছু শুকনো পাতা ছড়িয়ে দেয়, আর কয়েকটা শিকড় টেনে এনে মাটি ঢেকে দেয়।”

“সব কাজ নিখুঁত ভাবে সম্পন্ন করে প্যান্টের পকেট থেকে শুভ্র রঙা রুমাল বের করে, কপাল ভেদ করে বের হওয়া ঘাম মুছে তৃপ্তির হাসি দিয়ে, ব্যাগ গুছিয়ে শিষ বাজিয়ে গাড়ির নিকট চলে যায়।গাড়িতে উঠে সামনের আয়নায় নিজের মুখমণ্ডল ভালো করে দেখে,চুলগুলো হাত দিয়ে ব্যাক ব্রাশ করার মতো উল্টিয়ে,চশমাটা ঠিকঠাক করে পড়ে,মুচকি হেসে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।”

————-
“এদিকে কিছুক্ষণ আগে তোহার সাথে কথা বলে,মন খারাপ করে বসে আছে নিধি।রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগমকে ফোন করার পর তারা যখন রিসিভ করলো না,তারপর যখন তোহা কে ফোন করার পর,ও ফোন রিসিভ না করায় মন খারাপ করে বসেছিলো নিধি।প্রায় আধাঘন্টা পর তোহা নিধিকে ফোন করে।অবশেষে রফিক মির্জার ডায়াবেটিস বেড়ে গিয়ে অসুস্থ হওয়ার কাহিনী জানতে পেরে মন খারাপ করে ফেলে।আজ ২দিন যাবৎ তার শরীর খারাপের কথা শুনে নিধির মন সংকীর্ণ হয়ে গেলো।নিধি যখন তোহা কে বললো,মা তাকে ফোন করে কেনো জানায়নি,আর তোহাও কেনো জানালো না?’
তখন তোহা উত্তরে বললো,
‘মা এবং আমি তোমাকে কয়েকবার ফোন করেছি,কিন্তু তুমি ফোন রিসিভ করোনি।তাই হয়তো মা রাগ করেছে।”

“তোহার মুখে এহেন কথা শুনে বিস্ময়ের শীর্ষে চলে গেলো নিধি।তোহা কে লাইনে রেখেই ফোনের কন্টাক্ট লিস্টে চেক করে দেখলো,কোনো কল আসেনি।
নিধি তৎক্ষণাৎ তোহাকে বিষয়টি জানালে,তোহাও অবাক হলো।তারপর তোহা ডায়াল লিস্টে গিয়ে স্ক্রিনশট দিয়ে নিধির হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালো।কিন্তুু দুঃখের বিষয় হলো,নিধি সেটাও দেখতে পেলো না।কারণ, তার ফোনে ডাটা নেই।নিধি কে বিয়ে করে এই বাড়িতে নিয়ে আসার আগেই,নির্জন ওয়াইফাই এর লাইন কে**টে দিয়েছে।তারপর নিধিকে সীমিত মেয়াদে ডাটা কিনে দিয়েছে।আর গতকাল রাতে নিধি ঘুমানোর পর ফোনের ভলিউম সাইলেন্ট রেখে ইউটিউবে ভিডিও চালু করে এম বি গুলো শেষ করেছে।যেনো নিধি কিছু জানতে না পারে।”

“নির্জনের পরিকল্পনা অনুযায়ী নিধি কিছু জানতে পারলো না।কিন্তু একসময় না একসময় সত্যিটা সামনে আসবেই।”

“নিধির সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে তোহা ফোন রাখতেই দেখলো,মাহির এসেছে।মাহির রুমে প্রবেশ করতেই তোহা মাহিরের কাছে গিয়ে মলিন স্বরে বললো,
ও সকালে বাবার বাড়ি যাবে,যেহেতু ওর বাবা অসুস্থ।”

“তোহার মলিন মুখস্রি দেখে মনে মনে ভীষণ কষ্ট পেলো মাহির।এই মুহূর্তে প্রিয়তমা স্ত্রীকে স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা মাহিরের জানা নেই।তবুও প্রিয় স্বপ্নচারীনির মন টা কিঞ্চিৎ ভালো করার জন্য, তোহার কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে,ভরসার সহিত বললো,

‘আগামীকাল সকালে নয়,বিকালে তুমি আর আমি একসাথে যাবো।আমিও তো তার ছেলের মতো,তাই না?’

“মাহিরের দায়িত্ববোধ এবং ভালোবাসা মিশ্রিত কথা শুনে, ভীষণ খুশি হলো তোহা।মাহির কে জড়িয়ে ধরে নিচু স্বরে বললো,

‘থ্যাংকস মাহির,আপনি সত্যি খুব ভালো
মানুষ।আশা করি,সারাজীবন এমনই থাকবেন।’

“মাহির মুখে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে তোহার চোখের কার্ণিশে জমে থাকা পানি মুছিয়ে, ওকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাস্কি ভয়েসে আওড়ালো,

“প্রিয়তমা, আলোর পথ”

স্বপ্নচারিনী, দুঃখের ছায়া তবু ভয় কি?
তোমার চোখে এখনো জ্বলে আলোর দ্যুতি।
তোমার হাসিতে মিশে আছে আশার গান,
আমার হাতে হাত রাখো, কা**টবে সব বিরহের টান।

তুমি তো আমার শক্তি, আমার প্রাণ,
তোমার জন্যই তো এ পৃথিবীটা এমন অপার।
দুঃখের মেঘ যতই ঢাকে আকাশ,
তোমার স্পর্শে ঝরে পড়বে শান্তির আশ্বাস।

যে দিন থেমে যায়, তার শেষে তো রাত,
কিন্তু রাতের পরে আসে নতুন প্রভাত।
তোমার বাবার জন্য এই হৃদয় ভরা প্রার্থনা,
সব কিছু হবে ঠিক, দিও তুমি সান্ত্বনা।

প্রিয়তমা, আমার আকাশে তুমি আলোর তারা,
তোমার সাথেই পার করবো যত দিনের ধারা।
তুমি শুধু পাশে থেকো, মুছবে সব বিষাদ,
আমার ভালোবাসায় থাকবে তোমার আশ্রয়, অবসাদ।

তুমি আমায় আলোর পথ দেখাও,
তোমার সঙ্গে থাকলেই পার করবো যা পাও।
স্বপ্নচারিনী, শুধু হাসো, জানি সব হবে ঠিক,
তোমার হাসিতে মিশে আছে আমাদের মুক্তির দিক।”
~মেহের~

“মাহিরের মুখনিঃসৃত কবিতার প্রতিটি শব্দ,প্রতিটি লাইন মুগ্ধ হয়ে শুনলো তোহা।সেও যেনো তার স্বপ্ন পুরুষের সাথে এক অপার অনুভূতির নীল সাগরে তলিয়ে গেলো।”

————
“এদিকে দিগন্তকে গভীর ভাবনায় মগ্ন থাকতে দেখে,বিছানায় বসে পিটপিট করে তাকিয়ে থাকল নাদিয়া।ও ভাবতে থাকল,

‘প্রায় ১ঘন্টা হতে চললো,দিগন্ত ল্যাপটপে কাজ করছে আবার কিছুক্ষণ পর পর কাজ রেখে গালে হাত দিয়ে থম মে**রে বসে আছে।ব্যাপারটা কি?এই লোক তো সুযোগ পেলে আমাকে জ্বালাতে ছাড়ে না।আজ হঠাৎ কি হলো?’

ভেবে বিছানা থেকে নেমে দিগন্তের কাছে গিয়ে,তার কাঁধে হাত রেখে বললো,

‘কি ব্যাপার জানু?তুমি এতো চুপচাপ কেনো?গালে হাত দিয়ে,এতো কি ভাবছো?অফিসের কাজে কোনো প্রবলেম হয়েছে?’

“দিগন্ত ল্যাপটপ বন্ধ করে,ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে বললো,

‘তেমন কিছুনা।নির্জন কে নিয়ে ভাবছিলাম।’

“‘নাদিয়া অবাক হয়ে বললো,

‘হঠাৎ, তাকে নিয়ে কি ভাবছিলে?’

” দিগন্ত মলিন স্বরে বললো,

‘নির্জনের মায়ের দাফন কার্য শেষ করার পর,ওকে আমি স্বান্তনা দেওয়ার জন্য জড়িয়ে ধরতেই, ও আমায় ধা**ক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেছিলো,

‘Don’t touch me.’
তোকে বলেছিলাম,আমাকে ভুলেও স্পর্শ করবি না।আমাকে স্পর্শ করার অধিকার শুধু আমার নিরুপমার।নেক্সট টাইম এমন করলে ভালো হবে না কিন্তু!”

‘কথাগুলো বলেই চলে গিয়েছিলো।জানো,সেদিন ওর সেই বাক্যগুলো আমার হৃদয়ে গিয়ে তীব্র আ**ঘাত করেছিলো।আমি জানি,ও ওর ওয়াইফের প্রতি পজেসিভ।তাই বলে এতটা?ও আমার স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড।সব সময় নীরব থাকলেও,কখনোও আমার সাথে এমন ব্যবহার করে নি।খুব কষ্ট পেয়েছি।নিজেকে বুঝিয়েছি,হয়তো ওর মায়ের আকস্মিক মৃ**ত্যুতে, অতি শোকে খিটখিটে হয়ে গেছে।পরক্ষণেই বারবার আমার মনে একটা প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে,একটা মানুষ ওই পরিস্থিতিতে এই ধরণের আচরণ কিভাবে করতে পারে?তাও আবার সামান্য স্পর্শ করা নিয়ে?”

“দিগন্তের ভাবনায় নিজেও বিভোর হলো নাদিয়া।ওর মনেও অদ্ভুত সব প্রশ্ন হানা দিলো।নির্জন কে আগে থেকেই অন্যরকম লাগে নাদিয়ার কাছে।কিন্তু কখনোও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনি।হয়তো, নাদিয়ার অবচেতন মন নির্জন কে নিয়ে অনেক কথা ভাবলেও, পরক্ষণেই ভুলে গিয়েছে।’
ভেবে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

‘তুমি কিছু মনে করো না,আমার মনে হয় নির্জন ভাইয়া মানসিক ভাবে অসুস্থ।আমি শিউর না।মাঝে মাঝে মনে হয়,নিধির বিষয়ে সে অতিরিক্ত পজেসিভ।নিধি ফোনের মধ্যে সেগুলো হেসে হেসে বললেও,আমার কেমন যেনো লাগে।ওর মতো চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে একজনের বাধ্যগত স্ত্রী হয়ে উঠছে,এটা ভেবে যেমন ভালো লাগছে;তেমনি এই কাহিনী গুলোও কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে।হতে পারে এটা আমার মনের ভুল,আবার নাও হতে পারে।”

“নাদিয়ার চিন্তিত মুখস্রি দেখে দিগন্তের কিছুটা খারাপ লাগল।মনে মনে ভাবলো,

‘এই সময় দুশ্চিন্তা করা উচিত নয়।একজন গর্ভবতী মা কে সবসময় চিন্তামুক্ত থাকতে হয়।এতে তার মন এবং শরীর দু’টোই ভালো থাকে।’

ভেবে দিগন্ত মুচকি হেসে নাদিয়া কে বললো,

‘ধুরো..আমিও না..রোমান্টিক মোমেন্টে কিসব বলি।কতদিন তোমায় কাছে পাই না হানি।এখনও কি জায়গা হবে না?’

“দিগন্তের এহেন কথা শুনে মন পরিবর্তন হয়ে গেলো নাদিয়ার।মুচকি হেসে ‘হ্যা’ সূচক মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।
ব্যাস, দিগন্ত কে আর কে পায়।প্রিয়তমা স্ত্রীর সম্মতি পেতেই তড়িৎ গতিতে গালে টুপ করে চুমু দিয়ে বললো,

‘ইশশ,বৈদ্যুতিক শক লাগল মনে হয়।’

“দিগন্তের কথা শুনে,নাদিয়া লজ্জায় লাল টুকটুকে হওয়ার আগেই নাদিয়ার ওষ্ঠদ্বয় আবদ্ধ করে নেয় দিগন্ত।অবশেষে দু’জনের শরীরেই বয়ে যায় এক রোমাঞ্চকর উ**ন্মা*দনার
তীব্র ঝড়।”

——–
“২দিন যাবৎ নিধিকে ফোনে না পেয়ে,তাহমিনা বেগম নির্জনের ফোনে কল করে রফিক মির্জার অসুস্থতার কথা জানালে,নির্জন তার শাশুড়িকে মোটেভেশনাল বাণী শুনিয়ে আস্বস্ত করে যে, সে নিধি কে নিয়ে আসবে।কিন্তুু মনে মনে নির্জন অন্য পরিকল্পনা করে।”

“নির্জন নিধির বাসার সামনে গাড়ি রেখে, বাজারে যায়।ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য যেসব খাবার দরকার, সেগুলো সব কেনে। ফলমূল, সবুজ শাকসবজি, ডায়াবেটিকস ফ্রেন্ডলি খাবার, ওষুধ সবকিছু খুব যত্নের সঙ্গে নেয়। নিধির বাবার জন্য তার প্রিয় কিছু খাবারও নেয়, তবে এমনভাবে যেন সেটা তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি না করে। নির্জন তার প্রতিটা পদক্ষেপে খুব মনোযোগী, যেন কোনো কিছুই বাদ না যায়।”

“বাজার শেষে নির্জন শ্বশুর বাড়িতে ঢুকতেই, তাহমিনা বেগম দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নিধির কথা জিজ্ঞেস করলে,
‘নির্জন স্বাভাবিক স্বরে উত্তর দেয়,

‘গতকাল রাত থেকে নিরুপমা জ্বরে ভুগছে।আমি কিছুক্ষণ পর চলে যাবো।বাসায় গিয়ে ওর সেবা-যত্ন করতে হবে।’

“নিধি ফোন না ধরাতে তাহমিনা বেগম ওর ওপর রেগেছিলো।কিন্তু, যখনই নিধির অসুস্থতার কথা শুনলো,তখনই তার সব রাগ যেনো নিমিষে চলে গেলো।একদিকে মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে মন বিষন্ন হয়ে গেলো;আরেকদিকে স্বামীর অসুস্থতা,তার সেবা-যত্ন করা, সবকিছু মিলিয়ে তাহমিনা বেগম যেন হিমশিম খাচ্ছে।এই মুহূর্তে তার দুই মেয়ে পাশে থাকলে এতটা কষ্ট হতো না।’
ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো তাহমিনা বেগম।”

“নির্জন নিধির বাবার সামনে গিয়ে ভরসার সহিত বললো,

‘বাবা, চিন্তা করবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আপনার জন্য ভীষণ চিন্তিত ছিলাম।তাই তো নিরুপমা কে অসুস্থ অবস্থায় রেখে, এখানে ছুটে এলাম।’

‘নিজের বড় মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে খুব মন খারাপ হলো রফিক মির্জার।তিনি নিধির খোঁজখবর নিলেন।নির্জনও সাজিয়ে গুছিয়ে শ্বশুর কে সবকিছু বললো।যেন রফিক মির্জা নিশ্চিন্তে থাকে।
সেই রাতে নির্জন একজন আদর্শ জামাইয়ের মতো দায়িত্ব পালন করে,শ্বশুর-শাশুড়ির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজ গন্তব্যে রওনা হলো।’

———-
“নির্জন বাসায় ঢুকে নিজের রুমে যেতেই দেখলো,নিধি রুমে নেই।নিধি কে দেখতে না পেয়ে নির্জন ওয়াশরুম,বেলকনি তে গিয়ে খুঁজলো।কিন্তুু পেলো না।ভাবলো,হয়তো ছাদে গিয়েছে।তাই নির্জন রুম থেকে বেরিয়ে ছাদের দিকে যেতেই দেখতে পেলো, নিধি ওর প্রিয় দুটি রুমের বাইরে মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তালাবদ্ধ দরজা দেখছে।”

“নিধিকে এভাবে তালাবদ্ধ দুটি দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে, নির্জন বড় বড় পা ফেলে নিধির কাছে গিয়ে বললো,

‘এখানে কি করছো তুমি?’

“নিধি অনেকক্ষণ আগেই এখানে এসেছে।এর আগেও কয়েকবার এখানে এসেছিলো।কিন্তুু নির্জন কে এই বিষয়ে কিছু বলেনি।কিছুক্ষণ আগে এই দু’টো রুমের তালা খোলার জন্য, রুমে গিয়ে টেবিলের ড্রয়ার থেকে শুরু করে ম্যাট্রেসের নিচে চাবি খুঁজেছে।কিন্তুু পায়নি।আর পাবেই বা কিভাবে,কারণ চাবিতো নির্জনের কাছে।”

“এতক্ষণ দু’টো রুমের দিকে তাকিয়ে আনমনে কিছু ভাবছিলো নিধি।আকস্মিক নির্জনের কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই ঈষৎ কেঁপে উঠলো নিধি।নির্জনের দিকে তাকিয়ে
ম্লান হেসে বললো,

‘ওহ!আপনি এসে গেছেন,আসলে আমি এই দুটো রুমের তালার চাবি খুঁজছিলাম।এই বাড়িতে আসার পর থেকে দেখছি,এই দু’টো রুম সবসময় তালাবদ্ধ থাকে।তাই ভেতরে কি আছে,সেটা দেখার আগ্রহ জাগল।অবশ্য মেইড কে জিজ্ঞেস করার পর সে বলেছিলো,
আপনি নাকি দু’টো রুমে কাউকে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন।আর আপনি নাকি রুম দু’টো পরিষ্কার করেন।তাই ভাবলাম,এখন আমি যেহেতু এসে পড়েছি,তাই কষ্ট করে আপনার আর কোনো রুম পরিষ্কার করতে হবে না।আমি সবকিছু করবো।এতে আমার সময়ও কে**টে যাবে।”

“নিধির এহেন কথায় নির্জনের মাথার উগ্র পোকাগুলো কিলবিল করে উঠলো।নিধির দিকে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ভাবলো,

‘মেইড কে কঠোর স্বরে নিষেধ করেছিলাম,আমার স্ত্রীর সাথে যেন কথা না বলে।অথচ সে কিনা আমার কথা অগ্রাহ্য করে এতগুলো কথা বলেছে?উহুম,আর নয়,আগামীকাল তার ছুটি হবে।’
ভেবে মুচকি হেসে নিধির কাছে এসে নিজের বাম হাত দিয়ে ওর বাম হাত ধরে কাছে টেনে, নিধির গালে ডান হাত দিয়ে স্লাইড করে বললো,

‘উফফ..এইসব কাজ করে সময় কা**টাতে হবে না ডার্ক কুইন;তোমার সময় কা**টানোর জন্য আমাকে নিয়ে ভাবনাই যথেষ্ট।’
বলেই নিধির দিকে নেশালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ওর গাল থেকে হাত নামিয়ে, ওর কোমরে হাত রাখলো নির্জন।’

“নির্জনের এহেন চাহনি ভীষণ পরিচিত নিধির।কিয়ৎক্ষণের জন্য খুশি হলেও পরক্ষণেই ভাবলো,

‘মায়ের মৃ**ত্যু সবে ৪দিন হবে।এখনোও ভালোভাবে শোক কা**টিয়ে উঠতে পারলাম না,আর এখনই?’

“নিধির ভাবনার মাঝে,নির্জনের স্পর্শ আরও গাঢ় হতে থাকল।নিধি নির্জনের শীতল দৃষ্টির পানে তাকিয়ে ভাবলো,শাশুড়ি মায়ের কথা বলবে।অতঃপর ভাবলো,

‘নাহ!এই মুহূর্তে আমার সঙ্গ তার সবচেয়ে জরুরি।তার এই ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিলে যদি তার মন কিছুটা হলেও ভালো হয়,সেটা তো আমার জন্যই আনন্দের।’
ভেবে আর কথা বাড়ালো না নিধি।নির্জনের প্রতিটি গভীর স্পর্শে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেললো নিধি।আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলতেই নির্জন বাঁকা হেসে নিধিকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে গেলো।”

“নিঃশব্দ রাত। চাঁদের আলো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে, যেন কোনো মিলনের সাক্ষী হতে চায় না। নিধি নির্জনের চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এক অদ্ভুত শূন্যতায় ভরা সেই চোখজোড়া। আজকের রাতটা যেন ভিন্ন;আলাদা এক শিহরণ, এক অজানা শঙ্কা বুকে নিয়ে নিধি তাকে কাছে টানছে। হয়তো সে জানে, হয়তো জানে না…এই মিলনই হবে দুটি শরীর এবং মনের গভীর ভালোবাসার শেষ মিলন।”

“নির্জনের স্পর্শে নিধির শরীর শীতল হয়ে ওঠে, ঠোঁটের মধ্যে মিশে থাকে তীব্র আকাঙ্ক্ষা আর যন্ত্রণার ছায়া। তাদের প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস যেন বাতাসে হারিয়ে যাচ্ছে। চুপচাপ, নিঃশব্দ কিন্তু গভীর। চামড়ার ওপর ছোঁয়ার তীব্রতা বাড়ছে, আর সেই সাথে নিধির হৃদয়ের স্পন্দনও।”

“নির্জন নিধির ঘাড়ে আলতো করে ঠোঁট রাখে। নিধি কেঁপে ওঠে, কিন্তু সে কিছু বলে না। সে জানে না এই স্পর্শের পেছনে লুকিয়ে আছে কি? ভালোবাসা, না কি এক ভ**য়ানক শিকারি খেলা। নির্জনের বাহু শক্তভাবে নিধি আঁকড়ে ধরে, যেন তাকে আর কখনও ছেড়ে দেবে না। কিন্তু সেই বাহুর মধ্যে লুকিয়ে আছে এক ভ**য়ং*কর প্রতিশ্রুতি। আজকের রাতের পর কিছুই আর আগের মতো থাকবে না।”

“তাদের শারীরিক মিলন ছিলো এক মহাকাব্যিক যুদ্ধে পরিণত—তৃষ্ণা, যন্ত্রণা, এবং তীব্র বাসনার মাঝে আটকে থাকা দুটি প্রাণ। এই মুহূর্ত যেন একে-অপরের আত্মার মধ্যে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা, কিন্তু সেই আত্মাগুলো ছিল ভা**ঙা, ধ্বং*সপ্রাপ্ত।”

“মধুর মিলনের শেষে নিধি নির্জনের বুকে মাথা রেখে নিঃশব্দে শুয়ে রইল। তার ভেতরে এক অদ্ভুত শূন্যতা, আর নির্জনের চোখে সেই ভ**য়ং*কর সাইকো রূপের আভাস। এই চোখই তাকে শেষবারের মতো ভালোবাসলো, আবার এই চোখই তাকে ধ্বং**সের পথে নিয়ে যাবে।”

“আকস্মিক নিধিকে অবাক করে দিয়ে, নির্জন আবারও প্রেয়সীর ওষ্ঠযুগল আবদ্ধ করলো।কয়েক সেকেন্ড পর ছেড়ে দিয়ে,প্রিয়তমার অধরে আলতো করে আঙুল স্পর্শ করে হাস্কি ভয়েসে বললো,

“শেষের আগে ছিলো ছোঁয়া,
একটি গল্পে ভরা ভালোবাসার ছায়া।
নিঃশব্দে মিলল দুটি প্রাণ,
তবুও হারিয়ে গেলো কোথায় স্নেহের টান।

আমার চোখে ছিলো অন্যরকম আভা,
তুমি দেখলে, তবুও চুপ রইলো শূন্যতা।
প্রতিটি আলিঙ্গনে লুকিয়ে ছিলো ব্যথা,
একটি শেষ রাত, তারপর আক্ষেপের গাঁথা।

তৃষ্ণায় মিশে গেলো দেহ ও মন,
তবুও আড়ালে ছিলো অন্ধকারের পণ।
শেষের আগে সেই শীতল ঠোঁটের আলতো ছোঁয়া,
তোমার হৃদয়ে রেখে গেলো মৃ**ত্যুর চাওয়া।

এখন রাত পেরিয়ে আসবে ভোর,
তবুও থাকবে না আর কোনো সেতু, না কোনো ভর।
এই মিলন ছিলো এক মিথ্যে স্বপ্নের ছায়া,
শেষের পর আসবে নীরবতার মায়া।”

~মেহের~

#চলবে..

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪২
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌

“এই মিলন ছিলো এক মিথ্যে স্বপ্নের ছায়া,
শেষের পর আসবে নীরবতার মায়া।”

——–
“কে**টে গেলো একটি নিস্তব্ধ রাত্রি।ভোরের আলো ফোঁটার আগেই ঘুম ভে**ঙে গেলো নিধির।আড়মোড়া ভে**ঙে ঘড়িতে সময় দেখলো,এখনও ফজর নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়নি।নিধি ঝটপট বিছানা থেকে নেমে, ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ পড়ে নিলো।মোনাজাতে দুই হাত তুলে বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করলো।কয়েক মিনিট পর নির্জন কেও জাগালো নামাজ পড়ার জন্য।নিধির কথা মতো নির্জনও ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলো।মোনাজাতে মন খুুলে দোয়া করলো তার প্রেয়শীর জন্য।কারণ,এই পৃথিবীতে নিধি ছাড়া তার আপন বলতে কেউ নেই।”

“সকালে নিধি যখন ওর মাকে ফোন দেওয়ার কথা বললো,নির্জন তখন হাসি মুখে ওকে কথা বলতে বলে রুমের বাইরে চলে গেলো।
কিচেনে মেইড সকালের নাস্তা রেডি করছিলো।সেই মুহূর্তে নির্জন সেখানে গিয়ে হাজির হলো।নির্জনের উপস্থিতি টের পেয়ে,মেইড পেছনে তাকিয়ে বললো,

‘কিছু বলবেন স্যার?’

“নির্জন বুকের ওপর দুই হাত ভাজ করে গম্ভীর স্বরে বললো,

‘আপনাকে বলেছিলাম,আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করবেন না,সে বলতে চাইলেও নয়।কিন্তু আপনি আমার কথা অমান্য করেছেন।এনিওয়ে,আগামীকাল এই মাস শেষ হয়ে যাবে,তার আগেই আপনার বেতন টা নিন।’
বলেই নির্জন পকেট থেকে টাকা বের করে মেইডের সামনে এগিয়ে দিলো।”

“নির্জনের এহেন আচরণে হতভম্ব হয়ে গেলো মেইড।নিচু স্বরে শুধালো,

‘আমি আপনার স্ত্রীর সাথে কখনোই আগ বাড়িয়ে কথা বলিনি।সে নিজে থেকে কয়েকবার কথা বলেছে।তাই আমি বাধ্য হয়ে কথা বলেছি।আমার দায়িত্ব হলো,মানুষের বাসায় কাজ করে পরিবারের জন্য দু মুঠো অন্ন জোগানো।আর আপনার স্ত্রীর সাথে কথা বলাতে কি এমন অপরাধ হয়ে গেলো, বুঝলাম না।’

“মেইডের এহেন আচরণে মেজাজ কিছুটা বিগড়ে গেলো নির্জনের।চোখ-মুখ শক্ত করে বললো,

‘আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলার অধিকার একমাত্র তার ব্যক্তিগত মানুষের;আর কারো নয়।আর আপনাকে আমি কোনো কথার কৈফিয়ত দিবো না।অসহায় মানুষের ক্ষ**তি করার ইচ্ছে আমার নেই।তাই ভালো ভাবে বলছি,আজকের পর থেকে আপনাকে আর প্রয়োজন নেই।আপনি আসতে পারেন।’

“‘নির্জনের রুক্ষ আচরণে ভীষণ কষ্ট পেলো মেইড।তার স্বামী পরলোকগমন করার পর থেকে কয়েকটি বাড়িতে কাজ করে সে বাসার ভাড়া সহ,২বাচ্চা নিয়ে সংসার খরচ বহন করে।একটা কাজ ছুটে গেলে আরেকটি কাজ খুঁজতেও তো সময় লাগবে।তাছাড়া চাইলেই তো কেউ তাকে ভরসা করে কাজ দিবে না।এই বাসায় ২বছর যাবৎ সে কাজ করে।আজ কিনা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে নির্জন এমন আচরণ করলো?’
ভেবে চোখ জোড়া পানিতে চিকচিক করে উঠলো।”

“মেইডের অসহায় মুখ ভঙ্গিমা দেখে মনে মনে পৈ**শা*চিক হাসি দিলো নির্জন।খুব ভালো লাগছে তার কাছে।কিছু একটা ভেবে প্যান্টের পকেট থেকে আরও কিছু টাকা বের করে মেইডের সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘হয়তো আপনার অন্য বাসায় কাজ পেতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।তাই, টাকা টা রাখুন।তবুও এই বাড়ির ত্রিসীমানায় যেন আপনাকে না দেখি।’

“মেইড বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো নির্জনের দিকে।”

“নির্জন কিছুটা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

‘কি হলো, রাখুন।’

“মেইড হাত বাড়িয়ে টাকা টা নিতেই, হন হন করে সেখান থেকে চলে গেলো নির্জন।”

“আকস্মিক নির্জনের এহেন আচরণে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো মেইড।তার চোখের পানিগুলোও যেনো মুহূর্তেই শুকিয়ে গেলো।অতঃপর নিজের বাকি রাখা কাজগুলো সম্পূর্ণ করে,বাড়িটির দিকে একবার করুণ দৃষ্টিতে চোখ বুলিয়ে নিঃশব্দে প্রস্থান করলো সে।”

“এদিকে রুমে গিয়ে নিধির অশ্রুভেজা চোখজোড়া দেখে অবাক হয়ে গেলো নির্জন।নিধির কাছে গিয়ে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করতেই,ও বললো,

‘আজ ভোরে বাবাকে হসপিটালে ভর্তি করেছে।মাঝ রাতে বাবার বুকে খুব ব্যথা করছিলো।দিশেহারা হয়ে মা নাকি আপনাকে ফোন করেছিলো।কিন্তু আপনি ফোন রিসিভ করেন নি।তাই মা মাহির কে ফোন করেছে।তারপর মাহির এসে বাবা কে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছে।’
বলেই আবারও হেঁচকি তুলে কান্না করে উঠলো নিধি।”

“নির্জন ভ্রুকু**টি করে বিছানায় বালিশের পাশ থেকে ফোন উঠিয়ে দেখলো, ১৬বার ফোন করেছে তাহমিনা বেগম।কিন্তু ফোন সাইলেন্ট করে রাখার কারণে,রিসিভ করতে পারেনি।’
ভেবে কিছুটা মন ক্ষুন্ন হলো নির্জনের।”

“নির্জন তৎক্ষনাৎ মাহিরের নাম্বারে কল দিলো।কয়েকবার রিং হতেই মাহির ফোন রিসিভ করলো।নির্জন মাহিরের সাথে কথা বলে হসপিটালের ঠিকানা জেনে,কিছুক্ষণ পর নিধি কে নিয়ে রওনা হলো।”

“গাড়িতে ওঠার পর থেকে নিধির কান্নার শুব্দে ভীষণ বিরক্ত হচ্ছিলো নির্জন।তবুও কিছু বলছিলো না।কারণ,তার বাবার অসুস্থতার সময়ও সে এভাবেই কেঁদেছিলো।যদিও তখন তার কাঁধে হাত দিয়ে স্বান্তনা দেওয়ার মতো কেউ ছিলো না।’
ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো নির্জন।”

“হসপিটালের অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অবস্থান করছে তাহমিনা বেগম,নির্জন,নিধি,মাহির,তোহা,দিগন্ত এবং নাদিয়া।তাহমিনা বেগম,মাহির এবং তোহা আগেই এসেছে।মাহির তার শ্বশুরকে হসপিটালে নিয়ে আসা থেকে শুরু করে, চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ যাবতীয় কার্য খুব দায়িত্বের সাথে সম্পন্ন করেছে।তোহা এতক্ষণ তাহমিনা বেগমের মাথা বুকের সাথে মিশিয়ে স্বান্তনা দিচ্ছিলো,

‘তুমি চিন্তা করো না মা।বাবার কিছু হবে না।সে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।’

“কিন্তু তাহমিনা বেগমের ভীত-সন্ত্রস্ত মনে বারবার যেন দুশ্চিন্তা গুলো হানা দিচ্ছিলো।
আজ রাতটা যেন তাহমিনা বেগমের জীবনের সবচেয়ে ভ**য়ং**কর রাত ছিলো। রফিক মির্জা হৃদযন্ত্রের অসুখে ভুগছিলেন। হঠাৎ তার বুকের ব্যথা এত তীব্র হয়ে উঠল যে তিনি কাতরাতে শুরু করলেন। নিধির মা আতঙ্কিত হয়ে কী করবেন বুঝতে পারলেন না, শুধু বারবার বলছিলেন,

“তুমি, একটু সহ্য করো!”

“তিনি নির্জনকে ফোনে না পেয়ে মাহির কে ফোন করেন।মাহির ফোন রিসিভ করতেই,শ্বশুরের এহেন অবস্থা শুনে,তোহা কে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে এসে রফিক মির্জা কে হসপিটালে নিয়ে যায়।”

“গাড়ির ভেতরে তাহমিনা বেগম এবং তোহার কান্নার শব্দ, রফিক মির্জার ব্যথাভরা নিঃশ্বাসের শব্দ, আর মাহিরের কঠোর মনোযোগ, সবকিছু মিলিয়ে যেন পরিবেশটা ভারী হয়ে উঠেছিলো।মাহির বারবার তাদের স্বান্তনা দিচ্ছিলো,

‘অসুস্থ রোগীর সামনে এত শব্দে কান্না করলে তার মনোবল ভে**ঙে যায়।’

“হসপিটালে পৌঁছানোর পর, ডাক্তাররা তড়িঘড়ি করে রফিক মির্জাকে ইমার্জেন্সি রুমে নিয়ে গেলেন।তাহমিনা বেগম এবং তোহার চোখে অশ্রু, আর বুকের ভেতর যেন ঢেউয়ের মতো আবেগ ফেটে পড়ছে। ডা. আয়েশা রহমান, একদল চিকিৎসক নিয়ে রফিক মির্জার অপারেশনের প্রস্তুতি নিলেন। তারা তাঁর জীবন বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেন।অক্সিজেন মাস্ক লাগানো হলো, ইসিজি মেশিনের তারগুলো তাঁর শরীরের সঙ্গে যুক্ত করা হলো, নি:শব্দে তাঁকে ইনজেকশন দেওয়া হলো।”

“ডাক্তাররা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হালকা মাথা নাড়ালেন।
ডা. আয়েশা তাদের ভরসা দিয়ে বলেছিলেন,
“আমরা সব চেষ্টা করবো, কিন্তু…”
বাক্যটা অসমাপ্ত রয়ে গেলো।আল্লাহর এই বান্দার হায়াত এতটুকুই ছিলো।রফিক মির্জা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।”

“অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে,ডাক্তাররা আনুষ্ঠানিকভাবে রফিক মির্জার মৃ**ত্যুর ঘোষণা দিলেন।
“ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।”
নির্জন,মাহির এবং দিগন্তের মৃদু স্বরে উচ্চারিত বাক্যগুলো নিধির কানে যেতে মনে হলো,কথাগুলো ওকে আ**ঘাত করলো।”

“দিগন্ত মন খারাপ করে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।নাদিয়া তাহমিনা বেগম কে জড়িয়ে ধরে তাকে স্বান্তনার বাণী শোনাতে লাগল।ইতোমধ্যে হসপিটালে আত্মীয়-স্বজনে ভরপুর হয়ে গেলো।’

“শ্বশুরের এমন চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যে কতটা কষ্টের, সেটা মাহিরের চোখেও ফুটে উঠল।
মাহির তোহা কে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।এই নরম মনের মেয়েটিকে তো এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ দিয়ে আগলে রাখতে হবে।”

“এদিকে রফিক মির্জার মৃ**ত্যুর সংবাদ শুনে নির্জনের পৈ**শাচিক মন টাও কিছুটা দুঃখ অনুভব করলো।যতই হোক,তিনি নির্জনকে এতিম বলে কখনোও হেয় করেন নি।বরং ভরসা করে নিজের আদরের মেয়েকে তার হাতে তুলে দিয়েছে এবং নিজের ছেলের মতো ভালোবেসেছেন।”

“এদিকে স্বামীর মৃ**ত্যুর কথা কর্ণপাত হতেই,তাহমিনা বেগমের বাকশক্তি যেন লোপ পেয়ে গেলো।তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিলো রফিক মির্জা।শত নীরবতার মাঝেও দিন শেষে এই লোকটির কাছে নিজের মনের কথাগুলো মন খুলে বলতেন।প্রিয় রমনীর গায়ে কখনোও হাত তোলেন নি রফিক মির্জা।কত সততা এবং ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিলো পুরো পরিবার কে।অথচ আজ সেই মানুষ টি তাকে ছেড়ে পরপারে চলে গেলো!”

“নির্জন নিধির পাশে এসে দাঁড়ালো,নিঃশব্দে নিধির কাঁধে হাত রাখল।নির্জন জানে, এই মুহূর্তে কোনো কথাই নিধির কষ্ট কমাতে পারবে না।তবুও নিধির কাঁধে হাত রেখে বললো,

‘নিরুপমা, তোমার বাবার প্রতিটি স্মৃতি, তার ভালোবাসা, তার প্রতিটি আদর এখন তোমার মধ্যে বেঁচে আছে। তিনি হয়তো আমাদের মাঝে শারীরিকভাবে নেই, কিন্তু তার স্মৃতি, তার স্নেহ সবসময় তোমার পাশে থাকবে। তিনি তোমার মাঝেই বেঁচে থাকবেন।”

“নিধি কিছু বলতে পারছে না, কেবল তার চোখের জল ঝরছে। নির্জন আবারও করুণ স্বরে বললো,

‘তুমি একা নও। আমি আছি তোমার পাশে। আমরা একসঙ্গে এই শোক সামলাবো। তুমি শক্ত হও, নিরুপমা। তোমার বাবার স্মৃতিগুলোকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি চাইতেন তুমি সুখী থাকো, শান্তিতে থাকো। তোমাকে হাসতে দেখতে চাইতেন।’

“নির্জন নিধির চোখের পানি মুছে দিয়ে আবারও বললো,

‘তুমি যতবার বাবার কথা ভাববে,ততবার তার সেই হাসিমাখা মুখটাই মনে করো। তিনি চাইতেন তুমি নিজের জীবনে সুখ খুঁজে পাও, কষ্ট নয়। আমি তোমার পাশে আছি সবসময়, তুমি একা নও নিরুপমা।”

“নির্জনে মুখনিঃসৃত ৩বার ‘নিরুপমা’ ডাকটি, নিধির মনের আবেগ যেন দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিলো।এই নামে তো তাকে একটি লোকই ডাকতো,সে হলো ওর বাবা।এখন এত আদুরে গলায় কেউ তাকে এই নামে ডাকবে না।একবারও বলবে না,
‘নিরুপমা,মা তুই কেমন আছিস?’

“ভেবে নিধি নির্জনের দিকে তাকিয়ে চোখ মুছে নিলো। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো, এই শোকের মধ্যে কেউ একজন তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। সে একটু হলেও শক্তি ফিরে পেলো।কিন্তুু স্ট্রেচারে যখন রফিক মির্জার নিথর দেহটি দেখলো,এক মুহূর্তে তার জীবনের সবকিছু থমকে গেলো। বাবার সেই মুখ, সেই শীতল নিথর শরীর, যা আগে কখনও সে দেখেনি, আজ তার সামনে পড়ল। তার শ্বাস আটকে আসছে, সে চি**ৎকার করে উঠল, “বাবা!”

“নিধির মনে ভেসে উঠলো ছোটবেলার সেই সময়গুলো।বাবার সঙ্গে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, তাঁর কাঁধে চড়ে মেলার মাঠে ঘোরা, সেই পরিচিত ডাক,

“নিরুপমা..মা, আয়, বাবার কাছে আয়।”

“বাবার স্নেহমাখা গলা এখন আর শোনা যাবে না। নিধির বুকের ভেতর কষ্টের ঢেউ আছড়ে পড়ল। তার চোখের পানি থামছে না,ও রফিক মির্জার হাতটা ধরে ফিসফিস করে বলতে লাগল,
“বাবা, তুমি এভাবে চলে গেলে কেনো?”

————–
“রফিক মির্জাকে গোসল করানো হলো, ইসলামিক নিয়মে দাফনের জন্য কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে দেওয়া হলো। নিধি এবং তোহা যেন কোনো রকমে নিজেদের ধরে রেখেছে। কবরস্থানে নিয়ে যাওয়ার সময়, যখন নিধি এবং তোহা শেষবারের মতো ওদের বাবার দিকে তাকালো, ওদের বুকটা ফেটে গেলো। বাবার সেই অমায়িক মুখ, যে মুখ ওদের সারাজীবন আগলে রেখেছিলো,সেই শরীর আজ শীতল মাটির নিচে হারিয়ে যাচ্ছে।”

“মাটি দেওয়া শেষ হলে, সবাই মোনাজাত করল। নিধি এবং তোহা ওদের রুমে নামাজ শেষে মনে মনে বাবার জন্য প্রার্থনা করল,
“আল্লাহ, আমার বাবাকে তুমি জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করো,আমিন।”
ওদের চোখের পানি আবারো ঝরে পড়ল। বাবার মৃ**ত্যুর শোক যেন কোনো ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়, সেই কষ্ট ওদের তাড়া করতেই থাকবে।”

“রফিক মির্জার মৃ**ত দেহ হসপিটাল থেকে নিয়ে যাওয়ার সময়, তাহমিনা বেগম জ্ঞান হারিয়েছিলেন।রফিক মির্জাকে মাটি দেওয়ার পর বিকালের দিকে তার জ্ঞান ফিরলে,তিনি নীরব পথিকের ন্যায় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।কারো সাথে কথা বলেন না।নিধি এবং তোহার মনের অবস্থা খারাপ,তাই ওদের আত্মীয়-স্বজন তাহমিনা বেগম কে খাওয়ানোর চেষ্টা করে।কিন্তুু শত চেষ্টার পরেও কেউ তাকে এক লোকমাও মুখে তুলে দিতে সক্ষম হয় নি।”

“অবশেষে দীর্ঘ একটি রাত পেরিয়ে সকাল হলো।রাতে নির্জন,নিধি,তোহা,মাহির এবং ওদের কিছু আত্মীয়-স্বজন নিধিদের বাড়িতে অবস্থান করেছে।নির্জন নিধিকে এবং মাহির তোহাকে অনেক বুঝিয়ে খাইয়ে দিয়েছে।এদিকে সকাল থেকে তাহমিনা বেগম একা একা বিড়বিড় করে উল্টাপাল্টা কথা বলছেন।কখনোও একা একাই কেঁদে উঠছেন,আবার সামনে তাকিয়ে হেসে হেসে কথা বলছেন।”

“তাহমিনা বেগমের এহেন আচরণে সবাই যেন চিন্তিত হয়ে পড়লো।নিধি এবং তোহা ওর মায়ের কাছে গিয়ে বোঝাতে থাকল।কিন্তু তার কোনো পরিবর্তন হলো না।কিছুক্ষণ এভাবে কথা বলে, আবারও তিনি জ্ঞান হারালেন।
তাহমিনা বেগমের আচরণগুলো লক্ষ্য করে মাহির নির্জন কে বললো,
‘মা কে দ্রুত হসপিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’

“মাহিরের কথা শুনে নির্জনও সায় জানালো।অবশেষে তাহমিনা বেগম কে হসপিটালে নেওয়া হলো।”

“তাহমিনা বেগম কে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন, যে তাহমিনা বেগম পিটি-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD) এ ভুগছেন, যা সাধারণত একটি ট্রমাটিক ঘটনার পর দেখা দেয়।”

“চিকিৎসক মাহির কে বলেন,

‘পেশেন্টের অবস্থা গুরুতর। তিনি শোকজনিত কারণে মানসিক চাপের মধ্যে আছেন। আমরা কিছু মনোরোগ চিকিৎসা এবং থেরাপি শুরু করব। তাকে কিছুদিন হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।”

“চিকিৎসকের কথা মত তাহমিনা বেগম কে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়।
হসপিটালে ভর্তি হওয়ার পর, তাহমিনা বেগমের জন্য সাপোর্ট গ্রুপ এবং কাউন্সেলিং সেশন শুরু হয়। প্রথমে তিনি খুব অস্বস্তিতে ছিলেন, কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি তাঁর অনুভূতিগুলি প্রকাশ করতে শুরু করেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য নিয়মিতভাবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আসতেন।”

“এই অবস্থার মধ্যে নিধি তাঁর মায়ের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করে।প্রতিদিন নিয়ম করে তাহমিনা বেগম কে দেখতে আসে।”

“সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাহমিনা বেগম ধীরে ধীরে তাঁর অবস্থার উন্নতি করতে শুরু করেন। চিকিৎসকরা নিধি কে বলেন,

“আপনার মাকে সঠিক সাপোর্ট ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সে এখন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে।”

“তাহমিনা বেগমের এই কঠিন সময়টাতে তার দুই মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়, এবং তিনি অনুভব করেন, যে শোক এবং ক্ষ**তির মধ্যেও ভালোবাসা ও সমর্থনের শক্তি অন্যতম।”

“হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়ার পর তাহমিনা বেগম কে নিধি ওর বাসায় নিয়ে যেতে চায়।কিন্তু নিধি একা বাসায় তাহমিনা বেগমের কোনো বিপদ হলে তৎক্ষনাৎ কিছু করতে পারবে না,তাছাড়া নির্জন ও তো অফিস করে।তাহমিনা বেগম কে একা সামলানো ওর জন্য কষ্ট হয়ে যাবে।তাই মাহিরের মা,মাহির এবং তোহা অনেক বুঝিয়ে তাহমিনা বেগম কে মাহিরের বাসায় নিয়ে যায়।কারণ,সেখানে বেশি মানুষের মধ্যে তাহমিনা বেগম নিজেকে একা মনে করবে না।তোহার শ্বাশুড়ি এবং তোহা তাকে সঙ্গ দিবে।”

———-
“সুখ-দুঃখ মিলিয়ে কে**টে গেলো ৮ দিন।এই কয়েকদিনে নির্জন নিধিকে মানসিক ভাবে সাপোর্ট দিয়েছে।অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় এসে নিধি কে সময় দিয়েছে।যেমন টা নিধি নির্জন কে দিয়েছিলো।নিধি নির্জন কে মেইডের কথা জিজ্ঞেস করলে,নির্জন অকপটে উত্তর দেয়,

‘মেইড শারীরিক অসুস্থতার কারণে কিছুদিন ছুটি নিয়েছে।সুস্থ হলে আবার আসবে।’

“সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে,নিধি সকালের খাবার তৈরি করলো।সেই সাথে ওর মা’য়ের জন্য বিরিয়ানি এবং পায়েস রান্না করলো।কিচেন থেকে বিরিয়ানি এবং পায়েসের সুঘ্রাণ পেয়ে নির্জন কিচেনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘ওয়াও,আজ কে হঠাৎ এগুলো রান্না করলে যে?’

“নিধি ম্লান হেসে বললো,

‘মায়ের সাথে দেখা করতে যাবো।যদিও তোহা আর ওর শাশুড়ি, মায়ের যত্নের ত্রুটি রাখে না;তবুও, মেয়ে হিসাবে আমারও তো একটা দায়িত্ব আছে।’

“মাহিরের বাসায় যাওয়ার কথা শুনে,নির্জনের মাথার উগ্র পোকাগুলো কিলবিল করে উঠলো।নির্জন চোখ-মুখ শক্ত করে বললো,

‘মা তো সুস্থ হয়ে গেছে।এখন তাকে দেখতে যাওয়ার কি দরকার?এতদিন হসপিটালে দেখতে গিয়েছো,কিছু বলিনি।এখন আবার বোনের শ্বশুর বাড়ি গিয়েও দেখতে হবে?এটা কি বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?’

“নির্জনের এহেন কথায় হকচকিয়ে গেলো নিধি।বড় বড় চোখ করে বললো,

‘অদ্ভুত তো!আমি আমার মা কে দেখতে যাবো না?এটা কেমন ধরনের কথা বললেন?তাছাড়া আমি একা যাবো নাকি?আজ তো শুক্রবার, আপনিও আমার সাথে যাবেন।’

“নিধির এহেন কথায় উচ্চস্বরে হেসে উঠলো নির্জন।
নিধির কাছাকাছি এসে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,ওর ডান হাত মুঠোবন্দী করে বললো,

‘এই চার দেয়ালের বাইরে কর্মস্থল ব্যতীত, না আমি কোথাও যাবো,আর না তুমি কোথাও যাবে ডার্ক কুইন।’

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে