হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-৩৫+৩৬

0
9

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩৫
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]

“নিধির এহেন কথায় পৈ**শাচিক আনন্দ পেলো নির্জন।তবুও চোখজোড়া বন্ধ করে নিধির হাত বুকের মধ্যে আগলে ধরে বিরক্তি স্বরে বললো,
‘উফফ! গতকাল রাতে অফিসের ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল রেডি করে,রাত ৪টার দিকে ঘুমিয়েছি।প্লিজ ডার্ক কুইন ঘুমাতে দাও।”

“নিধি থামল না।বার কয়েক নির্জন কে ধা*ক্কা দিলো।”

“এইবার নির্জন সত্যি রেগে গেলো।সারারাত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার পরে, নিধির আতং**কিত চেহারা দেখার জন্য মুখিয়ে ছিলো।অবশেষে সেই সময় এলো।মনে মনে ভাবলো,

‘আমার থেকে ফোন বেশি ইম্পর্ট্যান্ট?এদিকে রাতে আমাকে ইগনোর করে ফোনের দিকে মনযোগ দেওয়াতে যে আমি কষ্ট পেলাম,তার বেলায়?উহুম,ইট’স নট ফেয়ার।এখনই একটা বিহিত করতে হবে।মাইন্ড গেম খেলতে হবে।তার শরীর,মন,হৃদয় জুড়ে শুধু আমার অস্তিত্ব থাকবে;আর কারো নয়।’
ভেবে চোখজোড়া খুলে উঠে বসলো।”

“নিধি মলিন স্বরে বললো,
‘দেখুন না..কি হলো?আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।’

“নির্জন চিন্তিত ভঙ্গিমা করে নিধির কাছ থেকে ফোন নিয়ে ফেইসবুক,ইউটিউবে গিয়ে সবকিছু চেক করে বললো,

‘আমার মনে হয় তোমার আইডি এবং জি মেইল একাউন্ট কেউ হ্যাক করেছে।তুমি কি কাউকে পাসওয়ার্ড দিয়েছিলে?”

“নিধি একটু ভেবে বললো,
‘না তো।কাউকে দেই নি।’

“নির্জন আরেকটু রহস্য করে বললো,
‘ তাহলে এটা তো অসম্ভব।নিশ্চয়ই কাজ টা তোমার পরিচিত কেউ করেছে।হয়তো তুমি তাকে কাছে থেকেও চিনতে পারছো না।’
বলেই নিধির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।”

“নিধি কয়েক মিনিট ভাবনায় বিভোর হলো।কিন্তুু কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না।”

“নিধির করুণ দশা দেখে মনে মনে ভীষণ তৃপ্তি পেলো নির্জন।এটাকেই তো বলে নীরব ঘা**তক।সত্যি ‘মনের’ প্রশংসা না করলেই নয়।’
ভেবে নিধি কে বললো,

‘ওকে,এতো চিন্তা করো না জানপাখি,আমি এইসব বিষয়ে বেশ অভিজ্ঞ।আমাকে আজকের দিনটা সময় দাও,আজকেই তোমার আইডি
ফিরিয়ে আনব।কিন্তুু তার জন্য এখন যা বলবো, তা শুনতে হবে।”

“নির্জনের এহেন কথায় নিধির মুখমন্ডলে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।খুশি হয়ে বললো,
‘হুম, অবশ্যই শুনবো।’

” ওকে,তাহলে বলি?”

“হুম,হুম বলুন।”

” নির্জন মুচকি হেসে নিধির হাত মুঠোবন্দি করে বললো,
‘অফিস থেকে ৪দিন ছুটি নিয়েছি।এই ৪দিন ভুলেও কোথাও যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করবে না।শুধু আমার সাথে সময় কা**টাবে।বেডরুম,কিচেন,ওয়াশরুম সব জায়গায়;ওকে?”

“নির্জনের এহেন কথা শুনে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো নিধি।কয়েক সেকেন্ড পর হাসি থামিয়ে বললো,
‘বেডরুম আর কিচেন না হয় বুঝলাম।কিন্তুু ওয়াশরুম কিভাবে সম্ভব?”

‘নির্জন যেটা বোঝাতে চেয়েছে সেটা বুঝতে পারেনি নিধি।বরং উল্টোটা বুঝেছে।’
ভেবে মন ক্ষুন্ন হলো নির্জনের।নিধি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তড়িৎ গতিতে বিছানা থেকে নেমে, নিধিকে কোলে তুলে নিলো।অতঃপর ওয়াশরুমে নিয়ে দরজা আটকে দিলো।”

“আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেলো নিধি।পিটপিট করে তাকিয়ে বললো,
‘এটা কি হলো?এখানে নিয়ে এলেন কেনো?’

‘নিধির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে ঝরনা ছেড়ে দিলো নির্জন।মুহুর্তেই দু’জনে ভিজে গেলো।’

“নির্জনের এহেন কান্ডে নিধি কিছু বলতে যাবে,তৎক্ষনাৎ নিধির ওষ্ঠদ্বয় সন্তর্পণে আবদ্ধ করে নিলো স্বীয় ওষ্ঠদ্বয়ে।নিধির কোমর আবদ্ধ করে নিলো নিজ বাহুডোরে।ঝরনা থেকে ঝরে পরা পানির গতিবেগের সাথে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল নির্জনের তীব্র ভালোবাসার গতিবেগ।এক পর্যায়ে নিধিও মগ্ন হলো প্রিয় মানুষের সম্মোহনী আহ্বানে।কিছুক্ষণ পর নির্জন নিধিকে ছেড়ে দিলো।ঠোঁট জোড়া তর্জনী দিয়ে মুছে মুচকি হেসে বললো,

‘এভাবে সময় কা**টাবে ডার্ক কুইন।’

‘নির্জনের মোহনীয় স্পর্শে নিধি যেনো ঘায়েল হয়েছিলো।আকস্মিক এভাবে ছেড়ে দিয়ে,কথাগুলো বলায় আরও একবার লজ্জায় মিইয়ে গেলো নিধি।’

“নিধির লজ্জা সহ্য হলো না নির্জনের।মনে মনে আওড়ালো,
‘এখনও লজ্জা?’
প্রিয়তমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বললো,

‘তুমি কি এখনও লজ্জা পাচ্ছো?’

” প্রবল অনুভূতিতে ঠোঁট জোড়া কাঁপতে থাকল নিধির।লাজুক হেসে অস্ফুটস্বরে বললো,
‘হুম।’

“নিধি বলতে না বলতেই আবারও নির্জন ওর ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরলো।ক্ষণ মুহূর্ত সময় কা**টানোর পর আবারও জিজ্ঞেস করলো,
‘এখনও লজ্জা পাচ্ছো?’

‘নির্জনের এহেন আচরণে নিধি এইবার লজ্জা পাওয়া কম,অবাক হলো বেশি।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘লজ্জা পেলে আপনার সমস্যা কি?কতবার
বোঝাবো,লজ্জাই নারীর ভূষণ।’

“নিধির দিকে ঘাড় কাত করে তাকালো নির্জন।চোখজোড়া তার প্রিয়তমার ভেজা শরীরে লেপ্টে থাকা সিল্কের কাপড়ে নিবদ্ধ।অর্ধাঙ্গিনী কে আপাদমস্তক সূক্ষ্মদৃষ্টিতে দেখে,তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো,

“তোমার লজ্জা কেনো?
তাও কি আমার অধিকারহীন?
শরীরে ঢেকে তুমি রাখো যত্নে সেই রহস্যের ঢেউ,
আমি তা ভা**ঙবো, টেনে আনবো লুকিয়ে রাখা প্রতিদিন।

তোমার লজ্জা, তোমার ভয়—
সব কিছুই আমার চাই,
নীরবতার গোপন স্রোতেও আমার প্রতাপ ফুটে রয়…

তোমার লজ্জা, তোমার ভয়,
কেনো আমার চোখের ধাঁধা হয়?
লুকিয়ে রাখো যত্ন করে,
আমি চাই তা খুলে ফেলে দিতে
দেখতে তোমার অনাবৃত ভয়।

তোমার চোখের সেই সঙ্কোচ,
আমার কাছে তা এক নীরব শপথ,
তোমার শরীরে ঢেকে রাখা সমস্ত,
আমার অধিকার, বুঝলে না তা?

“তোমার লজ্জা আমার প্রতিদ্বন্দ্বী,
কেনো তা আমি সহ্য করি?
তুমি কি ভেবেছো, ওই পর্দার আড়ালেই থাকবে?
না, আজ সব খুলে যাবে।

আমি জ্বলে উঠেছি তোমার প্রতিটা সঙ্কোচে,
তোমার লজ্জার রূপে হিং**সার বীজ বুনেছি,
আমার থেকে কিছুই লুকাবে না তুমি,
তোমার লজ্জাও আমার হাতে বন্দী!” ~মেহের~

“নির্জন কবিতা আবৃত্তি করে নিধিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘খুব হিংসা হয় আমার।তুমি যখন লজ্জা পাও,তখন ওই লজ্জাকেও আমার ভীষণ হিংসা হয়।আশা করি এক কথা চতুর্থবার রিপিট করতে হবে না।আর হ্যা,আমি তোমার ড্রেস দিচ্ছি,চেঞ্জ করে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসো।আমাকে ছাড়া তুমি ওয়াশরুমে এতটা সময় কা**টাবে,সেটা আমার অপছন্দ।’
বলেই টাওয়াল জড়িয়ে বেরিয়ে গেলো নির্জন।”

“নির্জনের যাওয়ার পানে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকল নিধি।নির্জনের সব কথাগুলো যেন ওর মাথার ওপর দিয়ে গেলো।লজ্জাকে মানুষ কিভাবে হিংসা করে,সেটা ওর মাথায় এলো না।”

“সকালে খাওয়ার আগে নিধি কিচেনে গিয়ে মেইডের সাথে সাহায্য করতে চাইলো।কিন্তুু মেইড নিধির দিকে এক পলক তাকিয়ে, তেমন কোনো কথা বললো না।নিধি নিজে থেকে কয়েকবার কথা বলতে চেয়েছে,কিন্তুু অপরপক্ষ থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে,মেইড কে ‘একঘেয়ে’ উপাধি দিয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে নির্জনের পাশের চেয়ারে বসলো।”

“নির্জনের দৃষ্টি তখন ইউটিউবের ভিডিওতে নিবদ্ধ।রিমন হ**ত্যার সন্দেহে পুলিশ তার দুইজন কাছের বন্ধু কে ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।কারণ,পুলিশ অনেক তদন্ত করার পর,তাদের ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে দেখেছে,সেদিন রাতে তারা সেই কমিউনিটি সেন্টারের থার্ড ফ্লোরে ছিলো।হতে পারে নিজেদের মধ্যে কলহের জের ধরে রিমন কে তারা প্ল্যান করে মা**র্ডার করেছে।”

“পুলিশের লাঠির উত্তম-মধ্যম খেয়েও রিমনের দুই বন্ধু নিজেদের কথায় অটল থাকল।
তাদের একটাই মুখস্থ বাণী,

‘আমরা খু**ন করিনি।ওইদিন আমরা সেখানে একটা মেয়ের সাথে মিট করতে গিয়েছিলাম।কিন্তুু মেয়েটা না আসাতে ঘুরে-ফিরে চলে এসেছি।রিমনের মৃ**ত্যুর সময় আমরা এটাও জানতাম না যে,রিমন ওই থার্ড ফ্লোরে ছিলো।ওর সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ হয়নি।তাহলে কিভাবে আমরা পূর্ব পরিকল্পিত মা**র্ডার করবো?”

“এস আই রেগে গিয়ে দু’জন কে আরও কয়েকবার প্রহার করে বললেন,
‘এইসব লেইম এক্সকিউজ অন্য কোথাও গিয়ে দিবি।আমরা জেনেছি,তোরা ৩জন খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিলি।আর সেই রাতে ৩জনের লোকেশন একই জায়গায় দেখিয়েছে।পুলিশ কে কি বোকা পেয়েছিস,হ্যা?”

“পুলিশের হাতের শক্ত-পোক্ত আ**ঘাতে ছেলে দু’টি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো।তবুও বিড়বিড় করে একই বুলি আওড়ালো,

‘আমরা খু**ন করিনি।’

“নিজেদের করা কাজগুলো খুব সুন্দর করে গুছিয়ে বললো এস আই রিয়াদ।প্রেস মিডিয়া এখনও সেই হ**ত্যা কান্ড নিয়ে মেতে আছে।যতক্ষণ না আসল অপরাধী ধরা পড়বে,ততক্ষণ প্রেস মিডিয়া পিছু হটবে না।নিত্য নতুন মা**র্ডার,ক্রা**ইম নিয়ে নিউজ তৈরি করা তাদের গুরুদায়িত্ব।’
ভেবে মুচকি হাসলো নির্জন।নিজেকে এই মুহূর্তে বিশ্ব চতুরতার অ্যাওয়ার্ড দিতে পারলে বেস্ট হতো।”

“আকস্মিক নিধি নির্জনের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে রেখে বিরক্তি স্বরে বললো,

‘আপনার বাসার মানুষগুলো এমন একরোখা স্বভাবের কেনো?কিছুক্ষণ আগে মায়ের রুমে গিয়ে ওই সেবিকা আন্টির সাথে কথা বলতে চাইলাম,অথচ উনি আমাকে পাত্তাও দিলো না।উল্টো ব্যস্ততা দেখিয়ে মায়ের জামা-কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
আবার কিছুক্ষণ আগে ওই মেইডের সাথে কথা বলতে চাইলাম,সেও কোনো কথা বললো না।এদিকে শাশুড়ি মা ও কথা বলে না।তাহলে আমি কার সাথে কথা বলবো?”

“নিধির একাধারে বলা কথাগুলো চশমার ফাঁক গলিয়ে তাকিয়ে, খুব মনযোগ দিয়ে শুনলো নির্জন।এই মুহুর্তে তাকে দেখলে মনে হবে,সে বায়োলজির বংশগতির অধ্যায় সম্পর্কে ক্লাস করছে।”
এটা তার খুব প্রিয় অধ্যায় ছিলো।”

“নির্জন কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে,নিধি নির্জনের হাত ধরে বললো,
‘কি হলো?এমন রোবটের মতো তাকিয়ে কি দেখছেন?”

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,
‘তোমাকে দেখছি।মিষ্টি রঙের সালোয়ার-কামিজে তোমায় দারুণ লাগছে ডার্ক কুইন।”

“নির্জনের এহেন মন্তব্যে বোকা বনে গেলো নিধি।কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
‘এই আমি কি বলেছি, আপনি শুনেছেন তো?’

” নির্জন ফের মুচকি হেসে নিধির কোমল হস্ত মুঠোবন্দি করে বললো,
‘হুম,শুনেছি।আসলে এটা যার যার অন্তর্গত স্বভাব।তুমি চাইলেও পরিবর্তন করতে পারবে না।আমার মতে, তুমিও তাদের সাথে ইচ্ছে করে কথা বলতে যেও না।আর মা তো কথা বলতে পারে না।তাই তোমার যখন কথা বলতে মন চাইবে,তখন শুধু আমার সাথে কথা বলবে।তোমার বোরিংনেস কা**টানোর জন্য আমিই এনাফ ডার্ক কুইন।”.

“নিধি মুচকি হেসে বললো,

‘হুম,সেটা ঠিক।তবে আমি ভেবেছি,আপনার অফিস শুরু হলে মায়ের সাথে এবং তোহার সাথে ফোন করে কথা বলবো।এভাবে একা একা বদ্ধ খাঁচায় হুতুম পেঁচার মতো বসে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব।”

“নিধির কথায় নির্জনের চোখ-মুখ নিমিষেই শক্ত হয়ে গেলো।মনে মনে আওড়ালো,

‘খুব ভালো করে তোমায় কথা বলাবো।আমাকে ছেড়ে অন্য ব্যক্তিকে কেনো তুমি মিস করবে?আই হেট ইট,আই অলসো হেট ইট।’
ভেবে ভীষণ কষ্টে মুখমন্ডলে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বললো,
‘ওকে,যেমনটা তুমি চাও।”

————
“কে**টে গেলো ৪দিন।সুখের দিনগুলো হয়তো অচিরেই ফুরিয়ে যায়।নির্জন,নিধি,তোহা,মাহিরের হাসি-খুশির সময়গুলো মনে হয় খুব দ্রুত বেগে ছুটছে।যদিও তোহা বেশ সুখেই দিন কা**টাচ্ছে।কিচেনে দাঁড়িয়ে তোহা মুচকি হেসে সকালের কথা ভাবতে থাকল।”

“সকালে ঘুম থেকে উঠে মাহির তোহার পায়ে সুড়সুড়ি দিয়ে পা**গল করে দিচ্ছিলো।তার একটাই আবদার,তাকে ৪০-৫০বার ‘আই লাভ ইউ’ বলতে হবে।
মাহিরের এই বাচ্চাসুলভ বায়নায় বোকা বনে গেলো তোহা।
এদিকে শাশুড়ি মা ডাকাডাকি শুরু করেছে।তোহা কে দেখতে তার দুঃসম্পর্কের আত্মীয়-স্বজন এসেছে।”

“কিন্তুু মাহির ওকে কিছুতেই ছাড়বে না।একদিকে শাশুড়ির ডাকাডাকি, অপরদিকে স্বামীর অদ্ভুত আবদার।কোনটা রেখে কোনটা শুনবে তোহা?
অবশেষে ৮-১০বার ‘আই লাভ ইউ’ বলে মাহিরের কপালে চুমু দিয়ে যেতে চাইলে,মাহির তোহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে চুমু দিয়ে হাস্কি ভয়েসে বলে উঠলো,

‘সেদিন চেম্বারে টাইটানিক মুভির জ্যাক আর রোজের লিপ কিস সিন শেষ করতে পারিনি,এখন বলি?’

‘হায়!সকাল সকাল আবার কি ড্রামা শুরু করলো।’
ভেবে লজ্জায় মূর্ছা গেলো তোহা।শুকনো ঢোক গিলে বললো,
‘এই মুভি আমি দেখেছি।নতুন করে আর শুনতে হবে না।’

“কে শোনে কার কথা,মাহির তোহাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘আজ আর পালাতে পারবে না।আজ তোমাকে সবকিছু শোনাবো স্বপ্নচারিনী।এই কাহিনী শুনে তুমি যদি একটু রোমান্টিক হও,তাহলে তো আমারই লাভ।’
বলেই দুষ্টু হেসে গড়গড় করে ইংরেজি এবং বাংলা শব্দ মিলিয়ে টাইটানিক মুভির রোমান্টিক সিন গুলো শোনালো।
আর মাঝে মাঝে চুমুর বর্ষন তো আছেই।’
মুভির কাহিনী শেষ করে যখনই মাহির তোহার ঠোঁট জোড়ায় চুমু দিতে যাবে,তখনই দরজায় ঠকঠক শব্দ হলো।ব্যাস,রোমান্সের ১২টা বেজে গেলো।
মাহির ছেড়ে দিলো তোহা কে।দুষ্টু হেসে বললো,

‘রাতে আরেকটা মুভির কাহিনী শোনাবো।এখন যাও তোহা রানী।’

“তোহা মুখ ভেং**চি কে**টে তড়িৎ গতিতে দরজা খুলে দেখলো, ওর শাশুড়ি দাঁড়িয়ে আছে।শাশুড়ি কে দেখে মাথায় ঘোমটা টেনে তার পাশ কা**টিয়ে তড়িৎ গতিতে নিচে চলে গেলো।এখানে বেশিক্ষণ থাকলে নিশ্চিত লজ্জা নামক অক্সিজেনের অভাব হবে।”

———-
“এদিকে সকাল সকাল অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে দিগন্ত।পেছনে দাঁড়িয়ে নাদিয়া বললো,
‘ইদানীং আমার কেমন বমি বমি পায়,মাথা ঘুরায়,কি হলো কে জানে!’

“নাদিয়ার এহেন কথা শুনে দিগন্ত ভ্যাবলার মতো নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘আমি তো তেমন কিছু করিনি।এটা কিভাবে সম্ভব?আমি আরও ভাবলাম,তোমাকে নিয়ে হানিমুনে গিয়ে, একটু হানি টাইপ রাত কা**টিয়ে তারপর না হয়..

“দিগন্তের কথা শুনে নাদিয়া তার মুখ চেপে ধরে বললো,

‘একদম রাবিশ কথা বলবে না।তোমার মনের মধ্যে কি পজিটিভ কথা ঘুরপাক খায় না?মাথা ঘুরালে,আর বমি পেলেই কি সব হয়ে যায়?’

” দিগন্ত নাদিয়ার হাত ঝামটা দিয়ে সরিয়ে বললো,
‘হানি,তুমি কিন্তুু আমাকে উত্তেজিত করছো!’

‘নাদিয়া ঝগড়ুটে সুরে বললো,

‘আমার সামনে থাকলে তো তুমি সবসময় উত্তেজিত হয়ে থাকো।নতুন করে আর কি উত্তেজিত করবো শুনি?’

“নাদিয়ার এহেন বাক্যে দিগন্তের ব্যক্তিত্বে আ**ঘাত লাগল।দুষ্টু হেসে বললো,
‘ঠিকই বলেছো,তুমি খুব নাইস এন্ড অ্যাট্রাক্টিভ।তাই, না চাইতেও উত্তেজিত হয়ে যাই।’
বলেই টাই খুলে বিছানায় ছুড়ে দিয়ে শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করলো।’

“আকস্মিক ঘটনায় নাদিয়ার চোখজোড়া ছানাবড়া হয়ে গেলো।ও বুঝে গেছে, দিগন্তকে এখন আটকানো যাবে না।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো,এই মুহুর্তে দিগন্তের কাছ থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হলো ওয়াশরুম।”

“দিগন্ত শার্ট খুলে যখনই নাদিয়ার নিকট এগিয়ে যাবে,তখনই নাদিয়া মুখ ভেং**চি কে**টে,তড়িৎ গতিতে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।অতঃপর বিজয়ের হাসি দিয়ে বললো,

‘আজ খুব বেশি গরম লাগছে না।তাই এখানে আমি অধিক সময় নিমিষেই পার করতে পারবো।হাহ!তুমি চাইলেও কিছু করতে পারবে না।’

“দিগন্ত দরজার কাছে এসে আলতো করে ধা**ক্কা দিয়ে বললো,
‘হুহ..এখন না হয় ওয়াশরুমে লুকালে,রাতে কোথায় লুকাবে সুন্দরী?তোমাকে সেই দিগন্তের নির্লজ্জ বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে হবে।হুহ,আমি গেলাম।’
বলেই দুষ্টু হেসে আবারও শার্ট আর টাই পড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।”

——-
“বিকালের দিকে তোহা মাহিরের অনুমতি নিয়ে ওর বান্ধবী তানিয়া কে নিয়ে কা**টা বনে গিয়ে ২জোড়া কোয়েল পাখি কিনে এনেছে।”

“শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার পথে তোহা নিধিকে ফোন দিয়ে কোয়েল পাখি কেনার কথা বললে,নিধি আহ্লাদে গদগদ হয়ে তোহা কে এক জোড়া কোয়েল পাখি দিয়ে যেতে বলে।”

“নিধির কথা মতো তোহা নিধির বাসার সামনে এসে ওকে খাঁচা সহ একজোড়া কোয়েল পাখি দিয়ে যায়।ছোট বোন কে এতদিন পর সামনা-সামনি দেখে,নিধি আবেগে তোহাকে জড়িয়ে ধরে।তারপর তোহা কে বাসায় ঢুকতে বললে,তোহা মুচকি হেসে বললো,

” আপু দেরি হয়ে যাবে,আরেকদিন মাহিরকে নিয়ে আসবো।তখন আমরা জমিয়ে আড্ডা দিবো।’
বলেই বিদায় নিয়ে চলে যায়।”

“এদিকে নিধি তো ১জোড়া পাখি পেয়ে ভীষণ খুশি হলো।পাখি নিধির ভীষণ পছন্দ।ছোটবেলায় ছাদের রেলিঙে পাখি বসতে দেখলেই দূর থেকে হাতে তালি দিয়ে,ওদের সাথে কথা বলতে চাইতো।কিন্তুু নিধিকে এভাবে নাচানাচি করতে দেখে পাখি ভয় পেয়ে ফুড়ুৎ করে উড়ে যেতো।’
ছোটবেলার কাহিনী গুলো ভেবে মুচকি হাসলো নিধি।রুমে গিয়ে পাখির খাঁচা খুলে ভেতরে হাত ঢুকিয়ে আলতো করে আদর করতে থাকলো।

” সন্ধ্যায় নির্জন কে ফোন দিয়ে বললো,
‘আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।বাসায় এলে দেখতে পাবেন।”

“নির্জন ভাবলো,
নিধি হয়তো তাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য রোমাঞ্চকর কিছু ভেবে রেখেছে।তাই খুশি মনে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এলো।
কিন্তুু রুমে ঢুকে যখন অনাকাঙ্ক্ষিত সারপ্রাইজ টি দেখতে পেলো,তখন নির্জনের মস্তিষ্কের উগ্র পোকাগুলো ফের কিলবিল করতে শুরু করলো।”

“চোখের সামনে দেখতে পেলো,তার ব্যক্তিগত প্রেয়সী ফ্লোরে বসে খাঁচার ভেতর হাত ঢুকিয়ে পাখিগুলো কে কত সুন্দর করে আদর করছে,আবার ঢং করে কথাও বলছে।সবকিছু দেখে নির্জন ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,

‘কি করছো তুমি?এভাবে এই পাখি দু’টোকে আদর করছো কেনো?’

“পেছন থেকে নির্জনের কন্ঠস্বর শুনে খুশি হয়ে গেলো নিধি।হাসি মুখে বললো,
‘ওহ, আপনি এসে গেছেন!হিহিহি..সারপ্রাইজ।এটাই হলো সারপ্রাইজ।বিকালে তোহা এসে পাখি দু’টো দিয়ে গেছে।কিউট না?বিকাল থেকে এতক্ষণ পর্যন্ত ওদের সাথেই সময় কা**টিয়েছি।”

“বিকাল থেকে এতক্ষণ পর্যন্ত ওদের সাথেই সময় কা**টিয়েছি।’
শেষ বাক্যটি কর্ণগোচর হতেই,নির্জনের ভেতর থেকে হিং**স্র স্বরে ‘মন’ বলে উঠলো,

‘বিকাল থেকে এই ক্ষুদ্র পাখিগুলো কে তোমার প্রিয়তমা তোমার বরাদ্দকৃত মূল্যবান সময় দিয়েছে।বুঝতে পেরেছো,এতক্ষণ সে পাখিগুলোর মাঝে নিজের মন কে আবদ্ধ রেখেছে?সে তোমাকে মিস করেনি।এটাও এক প্রকার অবহেলা।এখনই কিছু করো।পাখি দু’টোকে তোমার ল্যাবরেটরি রুমে নিয়ে গিয়ে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দাও।ওরা তোমার প্রেয়সীর কোমল হাতের আদর লুটে নিয়েছে।”

“মনের কথার বিপরীতে ‘হৃদয়’ বলে উঠলো,

‘ল্যাবরেটরি রুমে নয়।পাখি দু’টোর সাথে তোমার অর্ধাঙ্গিনীকেও শাস্তি দিতে হবে।কারণ, সে তোমার বরাদ্দকৃত আদরগুলো ওদের মাঝে বলিয়ে দিয়েছে।তোমাকে একটা বুদ্ধি শিখিয়ে দিচ্ছি।এসো..
বলেই ‘হৃদয়’ নির্জন কে তার দুষ্টু বুদ্ধি বুঝিয়ে দিলো।”

“হৃদয়ের বুদ্ধি গুলো নির্জনের বেশ মনে ধরলো।কু**টিল হেসে নিধির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ডার্ক কুইন পাখি দু’টো এনে ভালোই করেছো।কোয়েল পাখি আমার ভীষণ পছন্দ।”

“নির্জনের এহেন বাক্য শুনে ভীষণ খুশি হলো নিধি।”

#চলবে…

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩৬
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[পর্বটি রোমান্টিক এবং ভা**য়ো*লেন্স হবে,চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

“হৃদয়ের বুদ্ধিগুলো নির্জনের বেশ মনে ধরলো।কু**টিল হেসে নিধির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ডার্ক কুইন,পাখি দু’টো এনে ভালোই করেছো।কোয়েল পাখি আমার ভীষণ পছন্দ।’

“নির্জনের এহেন বাক্য শুনে ভীষণ খুশি হলো নিধি।”

“খিলখিল করে হেসে বললো,
‘হুম,আমারও ভীষণ পছন্দ।সব ধরণের পাখি আমার বেশ পছন্দ।যাক আপনার পছন্দের সাথে আমার পছন্দের বেশ মিল আছে।”

“নির্জন মুচকি হেসে নিধির গালে আলতো করে স্লাইড করে বললো,

‘মিল থাকাটাই তো স্বাভাবিক।আমরা তো একে-অপরের জন্যই তৈরি হয়েছি, তাই না ডার্ক কুইন?’

“নিধি নির্জনকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘হুম, ঠিক বলেছেন.. হিহিহি।”

“নির্জন নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
‘এখন কি শুধু পাখির দিকে খেয়াল রাখবে?আমার দিকে রাখবে না?আমার শরীর টা খুব ক্লান্ত লাগছে।’

“নির্জনের মুখে এহেন কথা শুনে,নিধি বললো,
‘ওহ সরি,আপনি বসুন।আমি আপনার জন্য ঠান্ডা পানি আনছি।’
বলেই নিধি দ্রুত পায়ে রুম থেকে চলে গেলো।”

“নিধির যাওয়ার পানে তাকিয়ে পৈ**শা*চিক হাসি দিলো নির্জন।
অতঃপর খাঁচায় আবদ্ধ পাখি দু’টোর কাছে গিয়ে,খাঁচার দরজা খুলে, দু’টো পাখির গলা একসাথে চেপে ধরে ঘাড় কাত করে হিং**স্র স্বরে বললো,

‘তোরা তো শেষ।আমার প্রিয়তমার হাতের আদর খাওয়ার শখ চিরতরে মিটিয়ে দিবো।’
বলেই পাখি দু’টোকে ছেড়ে দিয়ে, চশমাটা খুলে টেবিলে রেখে বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়লো নির্জন।”

“পাখি দু’টো কি বুঝলো কে জানে,নির্জন চলে যাওয়ার পর ক্ষুদ্র একজোড়া প্রাণী খাঁচার একপাশে সন্তর্পণে মিশে রইলো।”

“রাতে নির্জন এবং নিধি একসাথে খাওয়া-দাওয়া করলো।নিধি ওর শাশুড়ির রুমে গিয়ে, সায়রা বেগমের পাশে বসে একা একাই অনেক কথা বলেছে।কিন্তুু সায়রা বেগম নিস্তব্ধ,নিশ্চুপ হয়ে শুধু শ্রবণ করেছেন।প্রিয় বৌমার সাথে কিঞ্চিৎ শব্দ করে মনের কথাটুকু বলার সাধ্য তার নেই।”

“রাত সাড়ে ১০টায় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রিমঝিম বৃষ্টির তালে তাল মিলিয়ে হাত দু’টো মেলে দিয়েছে নিধি।প্রেয়সীর অর্ধভেজা হাতে বিন্দু বিন্দু পানির কণা লেপ্টে আছে।সেদিকে হিং**স্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নির্জন।
আকাশের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মনে মনে আওড়ালো,

‘তোমাকে তো বলেছিলাম,আমার প্রেয়সী যখন সম্পূর্ণ আমার হয়ে যাবে,তখন তাকে তুমি ছুঁতে পারবে না।কিন্তুু, তুমি কথা শুনলে না কেনো?এর জন্য তো তোমার শাস্তি পাওয়া উচিত।কিন্তুু কিভাবে দেবো?”

“নির্জনের ভাবনার মধ্যে ‘হৃদয়’ বলে উঠলো,
‘তাকে শাস্তি দেওয়া তোমার সাধ্যের বাইরে।তুমি কি কিছুক্ষণ আগের কথা ভুলে গিয়েছো?তোমার প্রিয় রমনী ওই ক্ষুদ্র পাখি যুগলকে আদর করেছে।তুমি তোমার প্রেয়সীকে শাস্তি না দিয়ে ওই মহাকাশের বৃষ্টি কণাগুলো কে শাস্তি দেওয়ার ভাবনায় বিভোর হয়ে আছো?রিয়েলি, শেইম অন ইউ নির্জন।”

“হৃদয়ের কথায় নির্জনের ভাবনা পরিবর্তিত হলো।কু**টিল হেসে ‘হৃদয়’ কে বললো,
‘মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য থ্যাংকস।এখনই তাকে শাস্তি দেওয়া হবে,ডোন্ট ওয়ারি।’
বলেই নিধির হাত ধরে মুচকি হেসে বললো,

‘ডার্ক কুইন জানো,আমার বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ভালো লাগে। চলো না,ছাদে গিয়ে দু’জনে আজ বৃষ্টিতে ভিজি।সেই সাথে রোমান্টিক কিছু মুহূর্ত উপভোগ করি।”

“নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘হুম, সেটাতো ভিজতেই পারি।বৃষ্টিতে ভিজতে আমিও খুব পছন্দ করি।কিন্তুু ঠান্ডা-জ্বরের সমস্যার কারণে মা কখনোও ভিজতে দেয়নি।তবে আপনার সাথে একটু ভিজতেই পারি।”

“নিধির সম্মতি পেতেই,নির্জন বাঁকা হেসে তৎক্ষনাৎ ওকে কোলে তুলে নিয়ে, ঠোঁট জোড়ায় আলতো কা**মড় দিয়ে বললো,
‘আজ শুধু আকাশের বৃষ্টিতে নয়,আমার বর্ষনেও ভেজাবো তোমার সর্বাঙ্গ।’

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে নিধিকে নামিয়ে দিলো।”

” দু’জনেই দেখলো,ছাদে বৃষ্টি পড়ছে, আর প্রতিটি ফোঁটা ছাদের ফ্লোরে যেনো টুপটাপ শব্দ করে আ**ঘাত করছে। যেন আকাশের বিশাল হৃদয় থেকে ঝরে পড়ছে এই নরম ফোঁটাগুলো, যা ছাদে এসে এক মৃদু ছন্দের সৃষ্টি করছে। ফোঁটাগুলো একে-অপরের সাথে মিলেমিশে ছাদ বেয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ছে। বাতাসে ভেসে আসছে সেই বৃষ্টির ঠান্ডা সুবাস, আর চারপাশে যেন এক শান্ত, নির্মল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির স্পর্শে ছাদের গা ভিজে চকচক করছে, আর প্রতিটি ফোঁটা যেন নীরবে নিজের গল্প বলে যাচ্ছে, মনের এক অদৃশ্য সুরে।”

“কালো রঙের সালোয়ার-কামিজ পরিহিত নিধির শরীর যেন ধীরে ধীরে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেলো।
সেদিকে তাকিয়ে নির্জন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে, বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা কে হিং**সা করে কবিতা আওড়ালো,

“তোমার গায়ে লাগে যে ফোঁটা,
তার কী ভাগ্য!
সে তোমায় ছুঁয়ে যায় অবিরাম,
আমার চেয়ে কাছে আসে প্রতিক্ষণ।
তোমার চুলের মধ্যে হারিয়ে যায় সে,
তোমার ত্বকে মিশে যায় নীরবে,
আর আমি কেবল দূর থেকে দেখি,
কীভাবে সে তোমার সান্নিধ্য পায়।

বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে যদি একবার
তোমায় ছুঁতে পারতাম,
তোমার ঠোঁটের ওপর নিঃশব্দে ঝরে যেতাম,
তোমার স্পর্শে হারিয়ে যেতে চাই,
তোমার পৃথিবীর একটুখানি হতে চাই।” ~মেহের~

“নির্জনের কবিতা আবৃত্তি নিধি এতক্ষণ শুধু মুগ্ধ হয়ে শুনছিলো।নিধির মনে হলো বৃষ্টির সাথে যেন পুরো পৃথিবী নিস্তব্ধ হয়ে গেলো নির্জনের সেই কথাগুলোর মাঝে।মুচকি হেসে নির্জনের শার্টের ৩টি বোতাম একেক করে খুলে,লোমশ বুকে ঠোঁট জোড়া ছুঁইয়ে মৃদুস্বরে বললো,

‘বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে ছুঁয়ে দিতে হবে কেনো?আমি তো আপনার ব্যক্তিগত প্রেয়সী।আমাকে সবদিক থেকে ছোঁয়ার অধিকার আপনার আছে।”

“নিধির সরলতায় আরও একবার দুষ্টু হাসি ফুটে ওঠে নির্জনের উজ্জ্বল শ্যামরঙা মুখস্রিতে।সেতো আকাশ কে বলেছিলো,তার প্রেয়সী তার হয়ে গেলে এই বৃষ্টির পানি তাকেও ছুঁতে পারবে না।অথচ নির্জনের শরীরেও বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু ফোঁটা বিদ্যমান।কেউ কথা রাখেনি।সবাই ছলনাময়ী।’
ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো নির্জন।”

“নির্জনের সেই তপ্ত শ্বাস আঁছড়ে পড়লো নিধির ভেজা কপালে।বৃষ্টির স্নিগ্ধ পরশ এবং প্রিয়তমর তপ্ত নিঃশ্বাস, সবকিছু মিলিয়ে নিধির অনুভূতি গুলো যেনো বেশামাল হতে লাগল।”

“নিজের অবাধ্য অনুভূতিগুলো কে বার কয়েক ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে, নির্জনের মনের ভেতর দৃঢ়ভাবে গেঁথে দিতে চাইলো নিধি।”

“প্রেয়সীর তীব্র আকাঙ্ক্ষা বুঝতে ন্যানো সেকেন্ড বেগ পেতে হলো না নির্জনের।এই মুহূর্তে তার চোখেও গভীর আকাঙ্ক্ষা, আর নিধি সেই চাহনিতে নিজেকে পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছে। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো তাদের গায়ে ঝরে পড়ছে, কিন্তুু তাদের মন যেন একে-অপরের মাঝে ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে।”

“নির্জন এবার আরও কাছে এগিয়ে এসে, নিধির কোমরে নিজের হাত রাখে, বৃষ্টিতে ভেজা কাপড়ের ওপর দিয়ে তার ত্বকের উষ্ণতা অনুভব করে। নিধি কিছুটা কাঁপে, কিন্তুু সেই কাঁপুনিটা বৃষ্টির ঠান্ডা থেকে নয়, বরং নির্জনের স্পর্শে জেগে ওঠা আবেগের কারণে।”

“নির্জনের হাত ধীরে ধীরে নিধির পিঠ বেয়ে নিচে নামে, তার দুটি হাত সালোয়ার-কামিজের ভেজা কাপড়ের উপর দিয়ে নিধির কোমরটা আলতোভাবে জড়িয়ে ধরে। নিধির নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে, সে নির্জনের আরও কাছে চলে আসে, যেনো তাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব আর নেই।”

“নির্জন এবার নিধির কপালে আলতো চুমু খায়, তারপর তার নাকের ডগায় ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। নিধি তার চোখ বন্ধ করে ফেলেছে, যেন পুরো পৃথিবী এই মুহূর্তে তাদের জন্য থেমে আছে। নির্জন এবার নিধির ঠোঁটের খুব কাছাকাছি এসে ফিসফিস করে বলে,

“তোমার ছোঁয়া ছাড়া আমি যেন অসম্পূর্ণ, তোমার গায়ের এই ফোঁটাগুলো আমার থেকে বেশি সৌভাগ্যবান।এই মুহূর্তে এই ফোঁটাগুলো কে আমার ভীষণ হিংসা হচ্ছে।’
বলেই, নির্জন ধীরে ধীরে নিধির ঠোঁটের ওপর বৃষ্টির ফোঁটা গুলো দুই আঙ্গুল দিয়ে মুছে দিয়ে চুমু খায়,তাদের মাঝে থাকা সমস্ত বৃষ্টি যেন সেই মুহূর্তে এক হয়ে যায়, তাদের প্রেমকে আরও গভীর করে তোলে।”

“নির্জন নিধিকে আবারও কোলে তুলে নেয়।অতঃপর প্রেয়সীকে সন্তর্পণে নিচে নিয়ে যায়।ততক্ষণে লজ্জায় কয়েক দফা মিইয়ে গেছে নিধি।প্রেয়সীকে বিছানায় বসিয়ে টাওয়াল দিয়ে আপাদমস্তক মুছে দেয় নির্জন,সেই সাথে দু’জনে নিজেদের ড্রেস ও চেঞ্জ করে নেয়।অতঃপর নিধিকে আবারও জড়িয়ে নেয় নিজের বক্ষগহ্বরে।ধীরে ধীরে একে-অপরের অনুভূতি মিশ্রিত তপ্ত শ্বাস অনুভব করতে থাকে।দু’টি শরীর,দু’টি হৃদয় মিলে মিশে যায় অন্ধকার ভালোবাসার এক তীব্র দহনে।”

——-
“নিস্তব্ধ রাত পেরিয়ে যখন ধরনীতে কিছুটা আলোর রেখা ফুটে উঠবে,তখনই নির্জনের মুখে এক পৈ**শা**চিক আনন্দের ছাপ দেখা গেলো।নির্জনের লোমশ বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে নিধি।ওর শরীর স্বাভাবিক তাপমাত্রার তুলনায় অধিক তপ্ত হয়ে আছে।নিধির নাসারন্ধ্র থেকে বেরিয়ে আসা মাত্রাতিরিক্ত উষ্ণ নিঃশ্বাসে নির্জনের বক্ষগহ্বর আগ্নেয়গিরির লাভার ন্যায় যেন উত্তপ্ত হতে লাগল।তবুও নির্জন তার প্রেয়সীকে কিঞ্চিৎ পরিমাণ সরালো না।বরং বুকের সাথে প্রগাঢ় ভাবে মিশিয়ে নিলো।বার কয়েক মনে মনে আওড়ালো,

‘ইয়েস, আ’ম সাকসেস।’
ভেবেই নিধির তপ্ত কপালে গভীর ভাবে চুমু দিয়ে, ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে তড়িৎ গতিতে বিছানা থেকে নেমে টেবিলের ড্রয়ার থেকে থার্মোমিটার নিয়ে এলো।অতঃপর চেক করে দেখলো, নিধির শরীরের তাপমাত্রা ১০৪° ডিগ্রি ফারেনহাইট।
প্রিয় রমনীর এহেন অসুস্থতায় ভীষণ খুশি হলো নির্জন।তার মনের মধ্যে অদ্ভুত এক আনন্দের জলরাশি বয়ে গেলো।এই আনন্দানুভূতি শুধু তার ‘মন’ আর ‘হৃদয়’ অনুভব করতে পারবে।”

“নিধির চোখের কোণে নোনা জল এবং লালচে মুখস্রি দেখে নির্জনের চোখে-মুখে যখনই খুশির ঝিলিক দেখা গেলো, তখনই ভেতর থেকে ‘মন’ হিং**স্র স্বরে বলে উঠলো,

‘নির্জন তুমি হাসছো?এদিকে তোমার নিরুপমাকে শাস্তি দিতে গিয়ে তুমি নিজেই বোকামি করে ফেলেছো।’

‘নির্জন উত্তেজিত স্বরে বললো,
‘কি বোকামি?’

“মন তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো,
‘তোমার প্রিয় মানবীর পুরো শরীরে জ্বরের মতো উষ্ণ তাপমাত্রা ওতপ্রোতভাবে লেপ্টে রয়েছে,যা তার শরীরের প্রতিটি কোণায় তীব্র অনুভূতির মিশ্রণ সৃষ্টি করেছে।যেটা সৃষ্টি করা শুধু তোমার অধিকার।আমার কথা কি তুমি বুঝতে পেরেছো?”

“মনের কথা বুঝতে পেরেছে নির্জন।মুহূর্তেই চোখ-মুখ কুঁচকে বললো,
‘হুম।ঠিকই তো,এটা তো ভেবে দেখিনি।জ্বরের মতো উষ্ণ তাপমাত্রার সাহস হলো কি করে,আমার ডার্ক কুইন কে স্পর্শ করার?জ্বর কে এখনই শাস্তুি পেতে হবে।’

‘বলেই নিধির কপালে হাতের উল্টো পিঠ ঠেকিয়ে দেখলো,নিধির কপাল অতিরিক্ত তপ্ত হয়ে আছে।নির্জন তৎক্ষণাৎ কিচেনে গিয়ে একটি মাঝারি সাইজের পাত্রে পানি নিয়ে সফট কাপড় দিয়ে নিধির পরিধানরত কাপড় খুলে একে একে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মুছতে শুরু করলো।”

“এদিকে নিধি তো বেহুশ প্রায়।যেখানে ঠান্ডা-জ্বরের ভয়ে বৃষ্টি থেকে সে সবসময় দূরে থাকে,আজ সেই বৃষ্টি যেনো তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো।আর এটাই ছিলো নির্জনের পক্ষ থেকে নিধির প্রাপ্য শাস্তি।যখন নিধি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি বিলাশ করছিলো,তখনই নির্জন ডেভিল হেসে এই পৈ**শা*চিক পরিকল্পনা করে এবং সফলও হয়।”

“এদিকে নির্জন যতই পানি দিয়ে নিধির শরীর মুছিয়ে দিচ্ছে, ততই যেনো শরীরের তাপমাত্রা ক্রমাগত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছিয়ে দেওয়ার পরে কিছুক্ষণ ঠান্ডা হয়ে,আবারও নিধির শরীর পূর্বের ন্যায় তপ্ত হয়ে উঠছে।নির্জন ২-৩বার থার্মোমিটার দিয়ে চেক করে দেখলো, জ্বরের তাপমাত্রা এখনও ১০৪°ডিগ্রি ফারেনহাইট।এইবার মেজাজ বিগড়ে গেলো নির্জনের।”

“ভেতর থেকে ‘মন’ হিং**স্র স্বরে বলে উঠলো,
‘দ্রুত গতিতে ফ্রিজ থেকে বরফ খন্ড এনে তার শরীরে ঘঁষতে থাকো।এটাই জ্বরের জন্য উত্তম শাস্তি হবে।সেই সাথে তোমার প্রেয়সীরও চিরতরে শিক্ষা হয়ে যাবে।”

“মন বলতে না বলতে নির্জন দ্রুত পায়ে ফ্রিজ থেকে বরফ খন্ড এনে নিধির হাত-পায়ে এবং পুুরো শরীরে ঘঁষতে থাকল।আর জ্বরকে বিড়বিড় করে ইচ্ছেমতো বকতে থাকল।এদিকে জ্বরে টালমাটাল নিধির তো কাঁপতে কাঁপতে বেহাল দশা।”

“কিয়ৎক্ষণ পর নির্জন আবিষ্কার করলো নিধির শরীর কিছুটা শীতল হয়েছে।কু**টিল হেসে ‘মন’ কে থ্যাংকস জানিয়ে,ঘুমের ঘোরে নিধিকে কোনোরকমে মেডিসিন খাইয়ে দিলো।কিছুক্ষণ পর কিচেনে গিয়ে রেডিমেট থাই স্যুপ রান্না করে, নিধির মাথা আলতো করে উঁচিয়ে চামচ দিয়ে একটু একটু করে খাইয়ে দিলো।নিধি কিছুটা খাবার বমি করে ফেলে দিলো।সেগুলো খুব সুন্দর করে পরিষ্কার করে, নিধির কপালে হাত দিতেই,আবারও মেজাজ বিগড়ে গেলো নির্জনের।নিধির জ্বর আবারও বেড়েছে।
নির্জন রেগেমেগে মন কে বললো,

‘দেখেছো,বরফ দিয়ে ঘষা-মাজার পরেও সে আমার ডার্ক কুইনের সাথে মিশে আছে?”

“মন কিছু বলতে যাবে,তার আগেই ‘হৃদয়’ বলে উঠলো,

‘রিল্যাক্স নির্জন।এতটা উত্তেজিত হয়ো না।যেহেতু তাকে
মেডিসিন এবং খাবার খাইয়ে দিয়েছো,সেহেতু কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে তার শরীরের তাপমাত্রা কমে আসবে।তবে বরফ দিয়ে তার শরীরে মাসাজ করার বিষয়টি সবচেয়ে ইউনিক হয়েছে।সত্যি, তুমি একজন ইউনিক পারসন।আ’ম প্রাউড অফ ইউ নির্জন।
আর এখন তাকে কম্ফোর্টার দিয়ে ঢেকে দিয়ে,খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরো।তোমার শরীরের উষ্ণতায় ধীরে ধীরে তার শরীরের কম্পন কমে আসবে।আর মেডিসিনের প্রভাবে তার শরীর থেকে ঘাম নির্গত হয়ে,তাপমাত্রা কমে আসবে।”

“হৃদয়ের কথা মতো নির্জন নিধিকে কম্ফোর্টারে ঢেকে দিয়ে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।যেন দুটি শরীরের হাড় এক হওয়া বাকি ছিলো।প্রায় আধা ঘন্টা পর নিধির কম্পন ক্রমাগত হ্রাস পেলো।ধীরে ধীরে বিন্দু বিন্দু ঘাম সৃষ্টি হলো।
নিধির ঘর্মাক্ত কপাল দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো নির্জন।খুশি হয়ে আলতো করে প্রেয়সীর কপাল এবং অধরে চুম্বন করলো।কিছুক্ষণ পর নিধির মাথা বুকের সাথে মিশিয়ে নিজেও ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো।”

———–
“কারো মাঝে দুঃখ,কারো মাঝে সুখ।
নিধির জীবন টা দুর্বিষহ হলেও,খুব সুখে আছে তারই ছোট বোন তোহা।তোহার কাছে মাহির একজন আদর্শবান পুরুষ এবং স্বামী।তোহাকে স্বাধীনতা দেওয়া থেকে শুরু করে ওর ছোট ছোট পছন্দ গুলোর গুরুত্ব দেয় মাহির।শত ব্যস্ততার মাঝেও এখনও প্রতিদিন বিকাল বেলা নিয়ম করে এক ঘন্টা কথা বলে তোহার সাথে।তাদের কথপোকথন দেখলে মনে হবে,তারা এখনও প্রেম করছে।অথচ রাতের বেলা প্রিয়তম অর্ধাঙ্গের সাথে দেখা হবে তোহার।’

‘কথাগুলো ভেবে জানালার পর্দা ভেদ করে আসা সকালে পূর্বাকাশে ওঠা সূর্যরশ্মির দিকে তাকিয়ে, মুচকি হাসলো তোহা।আকস্মিক পেছন থেকে মাহির জড়িয়ে ধরে তোহার ঘাড়ে নাক ঘষে বললো,
‘এমন মিটিমিটি হাসছো কেনো স্বপ্নচারিনী?গতকাল রাতের কথা ভেবে?’

“ব্যাস, শুরু হয়ে গেলো রোমান্স।
তোহা মাহির কে একটু দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো,
‘গতকাল রাতে কি এমন করেছেন, যে সেগুলো ভাবতে হবে?’

“মাহির তোহার গালে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,

‘বুঝেছি, আবার রিপিট করতে হবে।’
বলেই তোহার গলার কাছে আসতে নিলে তোহা মাহিরের মুখ সরিয়ে উত্তেজিত স্বরে বললো,

‘এই না না না..।আমি এমনি অন্য কথা ভাবছিলাম।যাইহোক,অনেক বেলা হয়ে গেছে,আমি এখন উঠে ফ্রেশ হবো।আমার অনেক কাজ আছে।আপনিও ফ্রেশ হয়ে নিন।’
বলেই তোহা উঠতে নিলে,মাহির ওর হাত টান দিয়ে কাছে টেনে বললো,
‘আগে ২২বার চুমু দাও তারপর যেতে দিবো।’

“মাহিরের এহেন আবদারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো তোহা।কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
‘একবার বলেন ২০-৩০বার আই লাভ ইউ বলতে,আবার বলেন ২২বার চুৃমু দিতে; এগুলো কেমন স্বভাব?’

“মাহির ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,
‘তুমি যতগুলো ওয়ার্ড বলবে,চুমুর সংখ্যা তত বাড়বে।’

” মাহিরের কথা শুনে শুকনো ঢোক গিললো তোহা।এই কয়েকদিনে এই ঘাড় ত্যাড়া লোককে ও বেশ চিনে ফেলেছে।সে দমে যাওয়ার পাত্র নয়।তাই হার মানলো তোহা।
অবশেষে তোহা যখনই মাহিরের কপালে চুৃুৃুমু দিতে যাবে,তখনই মাহির তোহার ঠোঁট জোড়ায় আঙ্গুল দিয়ে বললো,
‘এত তাড়াহুড়ো করছো কেনো?আমি
কি এতো ফাস্ট দিতে বলেছি?আগে তোমার জন্য একটা কবিতা শোনাই,তারপর দিও।’
বলেই দুষ্টু হেসে মাহির শুরু করলো,

“স্বপ্নচারিনীর জন্মদিন”

তোমার জন্মদিনে, প্রিয় স্বপ্নচারিনী,
আনন্দে ভরুক দিন, সুখের সুরে বেঁধে;
আমার হৃদয়, শুধুই তোমার প্রেমে,
তোমার হাসির আলোয়, জ্বলুক নতুন চমক।

তোমার চোখের দীপ্তি, প্রেমের দীপের মতো,
প্রতি মুহূর্তে, তোমার সাথে কা**টানো স্বপ্ন;
তোমার সান্নিধ্যে, বাজুক সুখের সুর,
আমার ভালোবাসায়, থাকুক তোমার পুঁজি।

জন্মদিনের এই দিনে, তোমার জন্য প্রার্থনা,
আমার প্রণয়, সজীব করুক চিরকাল;
তোমার দিন হোক রঙিন, সুখের আলোয় ভরা,
তোমার মুখে থাকুক হাসির প্রতিটি রেখা।

এই জন্মদিনে, তুমি চিরকাল সুখী থাকো,
আমার ভালোবাসায়, জীবন রঙিন করে চলো;
স্বপ্নচারিনী, আজকের দিনে, আনন্দের প্রীতি,
তোমার জীবনে আসুক সুখের নিখুঁত স্মৃতি।” ~মেহের~

বলেই মাহির তোহার গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
‘হুম, এইবার তুমি শুরু করো।”

“তোহা কয়েক সেকেন্ড মাহিরের দিকে হা করে তাকিয়ে থেকে বললো,
‘আমি তো নিজেই আমার জন্মদিনের কথা ভুলে গিয়েছিলাম,অথচ আপনি মনে রেখেছেন?এটা সত্যি সারপ্রাইজ ছিলো।আচ্ছা, আমার গিফট কোথায়?”

“মাহির মুচকি হেসে বললো,
‘আগে চুমু দাও, তারপর গিফট দিবো।’

‘তোহা মুচকি হেসে যখনই মাহির কে চুমু দিতে যাবে,ঠিক তখনই তোহার ফোন বেজে উঠলো।’

“মাহির মন খারাপ করে বললো,
‘ধুর. আমার রোমান্টিক সিন এই ফোনটাও সহ্য করতে পারে না।অসহ্য।’

“তোহা সেদিকে কর্ণপাত না করে, ফোনে হাত দিয়ে দেখলো নিধি ফোন করেছে।তোহা হাসি মুখে ফোন রিসিভ করতেই,নিধির দুর্বল কন্ঠস্বর শুনতে পেলো।অপরপাশ থেকে নিধি অসুস্থ স্বরে তার জ্বরের বিষয়টি জানালো।”

“বোনের অসুস্থতার কথা শুনে নিমিষেই মন খারাপ হয়ে গেলো তোহার।নিধিকে কয়েকটি স্বান্তনার বানী শুনিয়ে ফোন রেখে দিয়ে, মাহির কে সবকিছু বললো।”

“সবকিছু শুনে মাহির বললো,
‘এক কাজ করা যায়,তুমি আর আমি গিয়ে আপুকে দেখে আসি।তাছাড়া তুমিও তো যেতে চেয়েছিলে।এই সুযোগে না হয় ঘুরে আসা হবে।সেই সাথে নির্জন ভাইয়ার সাথেও ভালোভাবে পরিচিত হবো।”

“মাহিরের সাথে তোহাও তাল মেলালো।”

“নিধি তোহাকে ওর জ্বরের বিষয়টি বাবা-মাকে জানাতে নিষেধ করেছে।তাহলে তারা শুধু,শুধু টেনশন করবে।তোহাও নিধির কথা মতো ওর বাবা-মাকে বিষয়টি জানায়নি।বিকালের দিকে মাহির এবং তোহা নিধিকে দেখতে এলো।”

“নিধির অসুস্থতার কারণে নির্জন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিধিকে যথাযথ সময় দিয়েছে।সেই সাথে নিধির কষ্ট গুলোও উপভোগ করেছে।আর বেলকনিতে ঝুলিয়ে রাখা পাখিগুলোর কাছে গিয়ে ওদের কয়েকবার ওয়ার্নিং দিয়েছে,যেন কিচিরমিচির না করে।কিন্তুু অবুঝ পাখিগুলোর কিচিরমিচির যেনো আরও দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছিলো।”

“বিকালে হালকা নাস্তা করার পর,তোহা নিধির মাথার কাছে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বিভিন্ন কথপোকথন করছিলো।এদিকে মাহিরও নির্জনের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।মাহির বকবক করলেও, নির্জন বেশিরভাগ সময় নীরব থেকেছে।এতে মাহির কিছু মনে করেনি।”

“এদিকে তোহাকে নিধির মাথায় বারবার হাত বুলিয়ে দেওয়া দেখে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে নির্জনের।মনে মনে আওড়ালো,

‘একে তো আমার ডার্ক কুইন কে পাখিগুলো দিয়ে অন্যায় করেছো, আর এখন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘোর অন্যায় করলে।এর শাস্তি তুৃৃমি এখনই পাবে।’
ভেবে ডেভিল হাসি দিয়ে,তোহা কে বললো,

‘শালিকা, আপনি এই নুডলস খেয়ে নিন।ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো।আমি আপনাদের জন্য কিচেন থেকে চা নিয়ে আসছি।’
বলেই সেখান থেকে চলে গেলো নির্জন।”

“এদিকে তোহা হাসি মুখে নিধির সাথে কথা বলে নুডলস খেয়ে,হাত ধোঁয়ার জন্য বেসিনের সামনে যেতেই স্লিপ কে**টে টাইলসকৃত ফ্লোরে পড়ে গিয়ে চি**ৎকার করে উঠলো,
‘ও মা গো….’

‘তোহার চিৎ**কার শুনে মাহির তাড়াহুড়ো করে ডাইনিং রুমে গিয়ে তোহাকে ফ্লোরে পড়া অবস্থায় দেখে দ্রুত পায়ে ওর কাছে গিয়ে কোমরে হাত বুলিয়ে উত্তেজিত স্বরে বললো,
‘কোথায় ব্যথা পেয়েছো তুৃমি? কিভাবে পড়ে গেলে?’

“কোমরে প্রচন্ড ব্যথা পাওয়াতে তোহা ‘উহঃ’ শব্দ ছাড়া আর কিছুই করতে পারলো না।”

“এদিকে নির্জন কিচেন থেকে চা এর ট্রে হাতে নিয়ে এসে বিস্ময়ের স্বরে বললো,
‘একি!এইসব কিভাবে হলো?’

“মাহির মলিন স্বরে বললো,
‘ভাইয়া,তোহা মনে হয় খুব ব্যথা পেয়েছে।আমি ওকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি।প্লিজ কিছু মনে করবেন না,আমরা আরেকদিন আসবো।’
বলেই তোহা কে কোলে তুলে নিয়ে, সদর দরজা দিয়ে তড়িৎ গতিতে বেরিয়ে গেলো মাহির।”

“এদিকে মাহিরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে নির্জন তো হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললো,

‘ আবার এখানে আসলে এর থেকেও ভ**য়া*বহ শাস্তি দেওয়া হবে।এখন তো সয়াবিন তেল দিয়ে ফ্লোরে ফেলেছি,এরপর পে**ট্রোল দিয়ে আ**গুন ধরিয়ে দিবো।যত্তসব মেলোড্রামা।”

——–
“তোহার এমন চিৎ**কার শুনে, নিধি দুর্বল পায়ে বিছানা থেকে নামতেই,ওর আবার মাথা ঘুরে উঠলো।ও আবারও বিছানায় বসে পড়লো।নির্জন নিধির কাছে এসে ওর এমন অবস্থা দেখে, ওকে শুইয়ে দিয়ে ইনোসেন্ট ফেইস করে তোহার পড়ে যাওয়ার ঘটনা বললো।তোহার এহেন দশার কথা শুনে নিধির মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো।মুখে এবং মনে মনে অনেক দোয়া করলো তোহার জন্য।”

“রাত ৯টায় নিধির জ্বর কিছুটা কমলে,নিধি ঘুমিয়ে পড়ে।নিধি ঘুমিয়ে পড়তেই, নির্জন প্রচুর খুশি হয়ে বেলকনিতে খাঁচায় আবদ্ধ থাকা পাখি দু’টো কে নিয়ে কিচেনে চলে যায়।”

“নির্জন একটি পাখি কে খাঁচা থেকে বের করে,টেবিলে রেখে এক হাতে শক্ত করে সেটার ডানা চেপে ধরে।আগে থেকে যাচাই করে নেওয়া ছু**রিটা যেন তার হাতের সাথে মিশে যায়, ঠান্ডা, ধা**রালো, আর নির্মম।
নির্জন প্রথমে পাখিটার দিকে ঘাড় কাত করে তাকিয়ে, ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত এক বি**কৃত হাসি ফুটিয়ে তোলে। পাখিটার শরীর ছটফট করতে থাকে, কিন্তুু নির্জনের শক্ত হাত থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই।”

“প্রথম কো**পটা সে সরাসরি পাখির গলায় বসায়, কিন্তুু একবারে পুরোপুরি কা**টে না। ছু**রিটা গলার মাঝখানে আটকে যায়, এবং সেই মুহূর্তে পাখিটার আ**র্তনাদ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পাখিটা জোরে ফিসফিস করে চিৎ**কার করে ওঠে, র**ক্তের ধারা ফি**নকি দিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, নির্জনের মুখেও লাগে সেই উষ্ণ র**ক্তের স্পর্শ। তবে সে থামে না—ছু**রিটাকে আরও জোরে চেপে গলা পুরোপুরি কা**টতে শুরু করে। পাখিটার ছোট শরীর ঝাঁকুনি দেয়, কিন্তুু নির্জন তখনও ঠান্ডা, স্থির। গলা কা**টার পরেও পাখিটার শরীর ছটফট করে, যেন মৃ**ত্যু তাকে ছিনিয়ে নিচ্ছে, কিন্তুু নির্জনের সেই পৈ**শা*চিক শান্তি ভা**ঙে না।”

“এরপর সে পাখিটার ডানা দু’টোকে ধরে হ্যাঁচকা টানে আলাদা করতে শুরু করে। প্রথমে একটা ডানার হাড় ভে**ঙে যায়, পাখিটার হাড়ের ফাঁটল শোনা যায়। তারপর মাংস ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে হাড়ের শ্বেত রঙা কাঠামো। আরেকটা ডানাও একইভাবে ছিঁড়ে ফেলে নির্জন, প্রতিটা টানে যেন সে আরও র**ক্তা*ক্ত করতে চায় পাখিটার দেহ। মেঝেতে পড়ে থাকা র**ক্তের ছিঁটা ধীরে ধীরে ঘন হয়ে মিশে যায়, গা শিরশির করা ধাতব গন্ধে কিচেন ভরে ওঠে।”

“এরপর সে পাখিটার পা দুটো ধরে ছু**রি চালাতে শুরু করে, কিন্তুু এবার সে কা**টে না, বরং ছু**রিটা নিয়ে ত্বকের নিচে আলতো করে কে**টে র**ক্ত বের করে দেয়। পাখিটার শরীর তখনও ঝাঁকুনি দিয়ে উঠছে, যেন জীবনের শেষ মুহূর্তেও বাঁচার চেষ্টা করছে। নির্জন এই য**ন্ত্রণা উপভোগ করতে করতে পাখিটার পা দু’টো আস্তে আস্তে মাংস থেকে আলাদা করে। ছু**রি দিয়ে টু*করো টু*করো করে পা কে**টে ফেলে, মাংস,হাড় সব একত্র হয়ে যায়।”

“অতঃপর দ্বিতীয় পাখি টাকে খাঁচা থেকে বের করে প্রথমে সেটার ডানা দু’টোকে এক টানে ছিঁড়ে ফেলে,তারপর পা দু’টোকে মাঝখান থেকে টান মে**রে আলাদা করে ফেলে।অতঃপর ধা**রালো ছু**রি দিয়ে গলাটা ভাগ করে ফেলে।মৃ**ত্যু য**ন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে পাখিটি অনেক আগেই প্রাণ হারায়।নিজের কার্য নিখুঁত ভাবে সম্পন্ন করে পৈ**শা*চিক হাসি দিয়ে নির্জন হিং**স্র স্বরে কবিতা আওড়ালো,

“র**ক্তমাখা অভিশাপ”

যে পাখি দু’টো, প্রাণের চেয়ে প্রিয় ছিলো,
আজ তোমরা আমার হাতে, র**ক্তে চুবানো;
প্রেমের নামে ম**রেছে, আজকের এই রাত,
ম**রেছো তোমরা, আর র**ক্তের চিহ্ন রেখে গেছো।

তোমাদের শিহরণ, আমার ঘুম ভা**ঙালো,
প্রিয়তমার জন্য, আজ তোমরা জীবন বিলালে;
হিং**স্রতা আমার, তোমাদের কপালে,
মৃ**ত্যু তোমাদের, অভিশাপের য**ন্ত্রণা পায়।

অভিশাপ এখন, তোমাদের ভোরের আলো,
আমি কা**টছি তোমাদের, হিং*সার কলঙ্কে;
প্রেমের নীলে, আজ আমি নিক্ষেপ করেছি,
তোমাদের র**ক্তে, ভরিয়ে দিয়েছি হিং*সা।

অন্ধকারে, র**ক্তের খেলা কেমন নিষ্ঠুর,
মৃ**ত্যু হয়ে, তোমরা একাকার;
তোমাদের মৃ**ত্যুর স্বরে, শুনি হিং*সার গান,
এটাই নির্জনের, চিরন্তন প্রতিশোধের মান। ~মেহের~

#চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে