#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩৩
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]
“ডার্ক কুইন,আমার সামনে এইমুহূর্তে লজ্জা পাওয়া তোমার শোভা পায় না।”
“I am your husband,so from now on,don’t even think about feeling shy.”
“নির্জনের বলা ইংরেজি বাক্যটি নিধি এক কান দিয়ে শুনে, আরেক কান দিয়ে বের করে দিলো।কারণ, সে এখন অন্যদিকে ফিরে লজ্জা নিবারণ করার চেষ্টা করছে।নির্জন যতই লজ্জা পেতে না বলুক,সেতো নারী।আর লজ্জাই তো নারীর একমাত্র ভূষণ।”
“রিমলেস চশমার আড়ালে থাকা এক জোড়া চোখ যেন শকুনের ন্যায় দৃষ্টি ফেলে রেখেছে,লাজুকলতায় লেপ্টে থাকা রমনীর দিকে।”
“নির্জন আনমনে নিজেকেই প্রশ্ন করলো,
‘কেনো সে লজ্জা পাবে?এখন তো আমরা স্বামী-স্ত্রী।এতদিন তার এইসব ড্রামা সহ্য করেছি।কিন্তুু এখন?ইম্পসিবল।’
ভেবেই বাঁকা হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।তবে এইবার ধীর গতিতে নয়,খুব দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে নিজ বাসস্থানের সামনে এসে থামল।”
“গাড়ি থেকে নেমে নিধির পাশের গেট খুলে দিলো।অতঃপর মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
‘কোলে করে নিবো?নাকি আমার হাতে হাত রেখে হেঁটে যাবে?”
“নিধি মনে মনে ভাবলো,
‘কিছুক্ষণ আগে যেভাবে চুমু দিয়েছে,এখন আবার কোলে?অসম্ভব,এর থেকে হাত ধরে যাবো,সেটাই ভালো হবে।পরে না হয় ফ্রী হয়ে গেলে অগণিত বার কোলে চড়তে পারবো।’
ভেবে আনমনে হাসলো নিধি।’
‘প্রেয়সীর সেই মিষ্টি হাসি নজর এড়ালো না নির্জনের।’
“নিধি নিচুস্বরে বললো,
‘হাত ধরে যাবো।’
“বাঁকা হাসলো নির্জন।সে যেনো এই উত্তর টি জানতো।ভণিতা না করে নিধির হাত ধরলো।বোরকায় আবৃত ভারী ল্যাহেঙ্গাটি এক হাত দিয়ে উঁচিয়ে গাড়ি থেকে নেমে এলো নিধি।তারপর নির্জনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তার বাহু শক্ত করে ধরলো।আচানক প্রিয়তমার এহেন স্পর্শে ঘুমন্ত অনুভূতি গুলো যেন ধীরে ধীরে জাগ্রত হতে শুরু করলো।এক অমীয় ভালো লাগায় রিনরিনিয়ে উঠলো নির্জনের সর্বাঙ্গ।যার প্রতিটি বাঁকে সুমধুর শিহরণের ছাপ স্পষ্ট।
প্রিয়তমার হাত আরও শক্ত করে বাহুর সাথে মিশিয়ে সদর দরজায় পা রাখলো।
মুচকি হেসে ভাবলো,
‘আজ থেকে এখানেই তোমাকে থাকতে হবে নিরুপমা;আমার ডার্ক কুইন।এই চার দেয়ালে তোমার এবং আমার সুখের বসতি গড়বো।আমাকে খুশি রাখলে, আমার সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে তোমায় পূর্ণ করার চেষ্টা করবো।আর যদি কখনো আমার ভালোবাসাকে বিন্দুমাত্র অবহেলা করো,তবে তার পরিণতি হবে অতি ভ**য়ানক।”
“দরজায় লাগিয়ে রাখা তালা খুলে প্রবেশ করলো একজোড়া মানব-মানবী।এই ছন্নছাড়া জীবনে নতুন করে সুখের সন্ধান পেলো নির্জন।যেটা ছিলো তার কাছে অকল্পনীয়।সে সর্বোচ্চ দিয়ে ধরে রাখবে এই রমনীকে,নিজের কাছে নিজে দৃঢ় সংকল্প করলো সে।”
“বাড়িটিতে ঢুকেই অদ্ভুত অনুভূতি হলো নিধির।আলোকিত হল রুমটি কেমন খাঁ খাঁ করছে।মনে হয় কোনো জনমানবহীন আস্তানায় ঢুকে পড়েছে নিধি।নির্জনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
‘আপনার বাসার মেইড এবং সেবিকা কোথায়?’
“নির্জন নিধির বাহু আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘মেইড রান্না করে দুপুরে চলে যায়।আর সেবিকা মায়ের রুমে থাকে।আচ্ছা, তুমি খুব টায়ার্ড হয়ে গেছো জানপাখি।চলো, আগে ফ্রেশ হয়ে নিবে।তারপর সারারাত না হয় আমরা একে-অপরের মনের কথা আদান-প্রদান করবো।’
বলেই নিধির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকলো।তৎক্ষনাৎ বাঁধা দিলো নিধি।মুচকি হেসে বললো,
‘সেকি!শাশুড়ি মায়ের সাথে দেখা করবেন না?সেতো এখানে আসতে পারবে না।চলুন, দু’জনে গিয়ে তার সাথে দেখা করে আসি।নতুন জীবন টা মায়ের দোয়া নিয়ে শুরু করতে চাই।সে হয়তো কথা বলতে পারেনা।মনে মনে দোয়া তো করতেই পারবে।”
“নিধির এহেন কথায় ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে মেজাজ বিগড়ে গেলো নির্জনের।পরক্ষণেই ‘হৃদয়’ ভেতর থেকে বলে উঠলো,
‘উহুম,এখন নয়।এখনও পুরোপুরি মিশে যাওয়া বাকি আছে।কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ।’
” নির্জন তার চোখজোড়া একবার বন্ধ করে, ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলো নিজের রাগকে।কিছুটা সফল হয়ে,নিধির দিকে তাকিয়ে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে শীতল স্বরে বললো,
‘মা রাত ৮টার পর ঘুমিয়ে থাকে।তার মেডিসিনের মধ্যে ঘুমের ঔষুধ অন্যতম।আর একবার তার ঘুম ভে**ঙে গেলে, সারা রাতেও ঘুমাতে পারে না।তাই আজ তার সাথে দেখা বা কথা বলার দরকার নেই।আগামীকাল দেখা করবে।এখন চলো।’
“নিধি নাছোড়বান্দা।সে আবারও বলে উঠলো,
‘ঠিকাছে,তার সাথে কথা বলবো না।দূর থেকে তো দেখতেই পারি,তাই না?’
“নির্জন ভ্রুকুটি করে কিছু একটা ভেবে বললো,
‘ওকে,অ্যাজ ইউর উইশ।’
“সায়রা বেগমের রুমের দরজায় কড়া নাড়তেই,বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো সেবিকার।সে জানে,আজ নির্জনের বিয়ে।কিন্তুু এতো রাতে নির্জন কখনো এই রুমে আসে না।পরক্ষণেই তার ইন্দ্রীয়গুলো সজাগ হলো।ভাবলো,
‘হয়তো নতুন বউকে দেখা করাতে নিয়ে এসেছে।’
“হ্যা,তার ভাবনাই সঠিক হলো।বাইরে থেকে নিধির কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে।সেবিকার মুখে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা ফুটে উঠলো।মনে মনে ভাবলো,
‘যাক,এতদিনে এই বাড়িতে একজন কথা বলার সঙ্গী পেয়েছি।’
ভেবে তড়িৎ গতিতে বিছানা থেকে নেমে ধীর শব্দে দরজা খুলে নিধি কে দেখে খুশির ঝলক ফুটিয়ে বললো,
‘মাশাআল্লাহ।কতো মায়াবী তুমি।মানতে হবে,স্যারের পছন্দ আছে।’
“হায়!সেবিকা হয়তো জানে না,কি কথা বলেছে সে।’
“নির্জন কপাল কুঁচকে বললো,
‘আমি আমার স্ত্রীকে মায়ের সাথে দেখা করানোর জন্য এসেছি।’
“নির্জনের গম্ভীর স্বরে কথা শুনে,মুখমণ্ডল মলিন হয়ে গেলো সেবিকার।সে রুমের ভেতরে গিয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে রইলো।এই মানুষটা কে সে অকারণেই ভয় পায়।”
“নির্জন নিধির হাত ধরে তার মায়ের বিছানার কাছে নিয়ে গিয়ে মৃদুস্বরে বললো,
‘মা কে দেখো।তবে এতটা গভীর ভাবে নয়।’
“নির্জনের এহেন কথায় কর্নপাত করলো না নিধি।সে শয্যাশায়ী অর্ধবয়স্ক রমনীকে দেখলো।চুলগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ পাক ধরেছে।শুষ্ক ঠোঁট জোড়া।তবে চেহারায় এক মায়াবী ছাপ।কিন্তুু ঘুমিয়ে থাকার কারণে পুরোপুরি সৌন্দর্য যেন ফুটে উঠছে না।”
“নিধির এই মুহূর্তে তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।কিন্তুু কিভাবে কথা বলবে সে?শয্যাশায়ী রমনী যে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।”
মনে মনে ভাবলো,
‘আগামীকাল সকালে অনেক কথা বলবে তার শাশুড়ির সাথে।শাশুড়ি মা চোখের ইশারায় কথা বলবে।আর সে মুখ দিয়ে বকবক করবে।’
ভেবে নিঃশব্দে মুচকি হাসলো নিধি।সেই মন ভুলানো হাসির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো এক হিং**স্র মানব।যার মস্তিষ্কে এই মুহূর্তে দুষ্টু পোকাগুলো কিলবিল করছে।তারা বারবার করে বলছে,
‘এভাবে চুপ করে থেকো না।নইলে, খুব তাড়াতাড়ি তাকে হারিয়ে ফেলবে।’
“বি**ষাক্ত পোকা গুলোর সাথে দিব্যশক্তি দিয়ে কথা বললো নির্জন।
মনে মনে বললো,
‘She is only mine.’
———-
“রাত ১টা বেজে ৩মিনিট।
ফুলে সজ্জিত বিছানায় খয়েরী রঙা শাড়ি পড়ে,মাথায় ঘোমটা দিয়ে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে তোহা।শরীরে তার অদ্ভুত কাঁপুনি,মুখে তার লাজুকতার ছাপ বিদ্যমান।গাড়ি থেকে নেমে মাহির সবার সামনে তাকে হাত ধরে নিয়ে এলেও,ফুলসজ্জিত রুমের সামনে এসে তাকে পাঁজা কোলে নিয়ে প্রবেশ করেছে।ঐ সময়টাতে মাহিরের কাজিনরা হৈ-হুল্লোড় করে উঠেছে।সবার মুখে একটাই কথা,
‘আমাদের ডাক্তার ভাই যে এতটা রোমান্টিক আগে তো জানতাম না।বাহ!বাহ!”
“মাহির মুচকি হেসে রসিকতা করে বলেছে,
”এখন তো সবে শুরু।ধীরে ধীরে আরও ভালো ভাবে জানতে পারবে।যদিও তোমাদের সামনে কিছুটা হাইড করে রাখবো, হিহিহি।”
“মাহিরের এহেন কথায় সবার থেকে দ্বিগুণ লজ্জায় মিইয়ে গেলো তোহা।মনে মনে ভাবলো,
‘হায় আল্লাহ!শেষ পর্যন্ত কাজিনদের সামনেও আমায় লজ্জায় ফেললো?এ কার চক্করে পড়লাম আমি!”
“বাসর ঘরে ঢোকার সময় কাজিনরা টাকা নেওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়লো।কিন্তুু মাহিরও কম নয়,সে কিছুতেই টাকা দিবে না।অকপটে বলে দিলো,
‘ওগুলো আগের যুগে ছিলো,এখন ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল বাসর হবে।এইসব ভ**ন্ডামি ছেড়ে এখান থেকে তোমরা চলে যাও।’
“মাহিরের এহেন কথায় ভড়কে গেলো সবাই।একজন মেয়ে কাজিন কটমটিয়ে বললো,
‘ওল্ড অর ডিজিটাল’ কাহিনী তো একই।অতশত বুঝি না,আমাদের টাকা চাই।নইলে ভাবির সাথে আজ আমি ঘুমাবো।’
“মেয়েটির সাথে তাল মিলিয়ে সবাই একই কথা বললো।
বেচারা মাহির টাকার জন্য কিছুতেই এই মধুচন্দ্রিমা হাত ছাড়া করবে না।তাছাড়া অনেক রাত হয়ে গেছে।যত সময় বাড়বে তত লস প্রজেক্ট।অগত্যা আর কাজিনদের সাথে ঝামেলা না করে মাহিরের পকেটে যা ছিলো তাই দিয়ে দিলো।যদিও এতে সবার মন ভরেনি।তবুও যা দিয়েছে,এটা দিয়ে তারা ড্রিংকু পার্টি করবে।’
বলেই হৈ হৈ করে স্থান ত্যাগ করলো।ওরা যেতেই হাফ ছেড়ে বাঁচল মাহির।ঐ মুহুর্তে তোহার লাজুক চেহারাটা দেখার মতো ছিলো।’
কথাগুলো ভেবে মুচকি হাসলো তোহা।কিছুক্ষণ আগে ফ্রেশ হয়েছে সে।মাহির বলেছে,সেও ফ্রেশ হবে,তারপর নামাজ পড়ে নতুন জীবন শুরু করবে।”
“তোহার ভাবনার জগতে কড়া নাড়লো ওর হাতে মাহিরের আলতো স্পর্শ।পুরুষালি শক্ত হাতের আলতো স্পর্শ পেতেই,অচেনা অনুভূতি ঘিরে ধরলো তোহা কে।মাহিরের স্পর্শের সূচনায় কিঞ্চিৎ কম্পন হলো তোহার শরীরে।নিচু স্বরে কিছু বলতে যাবে,তখনই মাহির ঘোমটা সরিয়ে তোহার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
‘এতো নিয়মকানুন মেনে ঘোমটা দেওয়া লাগবে না।আমি তোমায় আগেও অনেকবার দেখেছি।তোমার আপাদমস্তক আমার মুখস্থ হয়ে গেছে।আজ আরও ভালো করে মুখস্থ করবো স্বপ্নচারিনী।’
বলেই ঠোঁট টিপে হাসলো মাহির।”
“মাহিরের এহেন কথায় হকচকিয়ে গেলো তোহা।কোথায় ভেবেছিলো,ওয়াশরুম থেকে এসে নামাজ পড়ার কথা বলবে।কিন্তুু সেটা না বলে,প্রথম দর্শনেই ঠোঁট কা**টা কথা!’
ভেবে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারলো না তোহা।”
“হঠাৎ মাহির তোহার হাতে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,
‘একটু পরে অনেক কিছু ভাবার সময় পাবে,আমিও অনেক কিছু করার সময় পাবো।তার আগে নামাজ টা পড়ে নেই।’
বলেই তোহার হাত ধরে মুচকি হাসলো।”
“বেচারি তোহা ভ্যাবলার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাথা ঝাঁকিয়ে মাহিরের সাথে নামাজ পড়লো।নামাজ শেষে মাহির মোনাজাতে আল্লাহর নিকট দু’জনের কল্যাণকর জীবনের জন্য অনেক বাক্যে প্রার্থনা করলো।
সবকিছু শেষ করে মাহির তোহার হাত ধরে বেলকনিতে নিয়ে গেলো।”
“আজ আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন।মেঘের আড়ালে কয়েকটা তারা দেখা যাচ্ছে।আবার মেঘগুলো তারাগুলো কে কালো ধোঁয়ায় ঢেকে দিচ্ছে।”
“খোলা বেলকনির গ্রীলে ডান হাতের কনুই ভর দিয়ে, চিবুকে হাত রেখে মাহির শীতল স্বরে বললো,
‘জানো স্বপ্নচারিনী,প্রথমবার তোমায় কোথায় দেখেছিলাম?”
“তোহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘কোথায়?’
“হাহাহা..চলনবিলের নদীতে।তুৃমি সাঁতার কাঁটতে পারছিলে না।আমি ওইদিক দিয়ে আরেকটি নৌকায় যাচ্ছিলাম।তখনই তোমাকে এভাবে দেখতে পেয়ে নৌকা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলাম।তারপর দেখি সেখানে পা রাখার মতো জায়গা থাকা শর্তেও তুমি চি**ৎকার করছিলে, হাহাহা..।বিশ্বাস করো, ওই ফানি ব্যাপারটা এখনও ভুলতে পারি না।নিয়নের হালকা আলোয় তোমার চেহারা টা পুরোপুরি দেখতে পারিনি।তবে সেদিনও আমি তোমায় স্পর্শ করেছিলাম।ভেবেছিলাম, হয়তো আর কোনোদিন আমাদের দেখা হবে না।কিন্তুু ভাগ্য আমাদের আবার এক করে দিয়েছে।আমি আবার তোমার দেখা পেলাম,আমার মায়ের মাধ্যমে।তোমাকে দেখতে গিয়ে আমার কিছুটা সন্দেহ হয়েছিলো।যখন তোমায় জিজ্ঞেস করলাম,তখন তোমার উত্তর পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছিলাম।ভেবেছিলাম, আজকের রাতটি জীবনে এলে তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো।আমি তোমার সেই স্বপ্ন পুরুষ.. স্বপ্নচারিনী।সারপ্রাইজ টা কেমন হলো?”
“মাহিরের কথার মাঝে এতক্ষণ গভীর ভাবে ডুবেছিলো তোহা।হা.. করে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে।ওর ভাবনাগুলো যেনো শূন্যে ভাসছে।বারবার একটা কথা মনে দামামার মতো বেজে চলছে,
‘কিভাবে সম্ভব?’
“প্রিয় নারীটির ভাবনাগুলো কিছুটা আঁচ করে মুচকি হাসলো মাহির।তোহার মুখের সামনে তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে চুটকি বাজিয়ে বললো,
‘কোথায় হারিয়ে গেলে তোহা রানী?চলনবিলের সেই নদীতে?হাহাহা।’
“মাহিরের প্রাণোচ্ছল হাসিতে ধ্যান ভা**ঙলো তোহার।মুখে হাসির ঝলক ফুটিয়ে বললো,
‘ভীষণ খুশি হয়েছি।এটা সত্যি সারপ্রাইজ ছিলো।আমিতো সেদিনের কথা ভুলে গিয়েছিলাম।সেই অচেনা মানুষটি আপনি ছিলেন,আর আজ আমি আপনার স্ত্রী?ভাবতেই যেন গা ছমছম করছে।”
“তোহার কথা শুনে দুষ্টু হেসে মাহির হঠাৎ করে তোহা কে কোলে তুলে নিয়ে, কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
‘একটু পর আরও ছমছম করবে স্বপ্নচারিনী।সবে তো শুরু।’
বলেই রুমে প্রবেশ করলো।এদিকে তোহা লজ্জায় সাতরঙা। মাহির তোহার ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিলো,অতঃপর মৃদুস্বরে বললো,
“চুম্বনের রেশ”
চুম্বনের ছোঁয়ায় মেলে,
অন্তরঙ্গ সুরের অনুভূতি,
যেন প্রতিটি স্পর্শে উন্মোচিত হয়,
এক নতুন প্রেমের বিশালতা।
তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলে,
মধুরতার লহর বয়ে যায়,
যেন প্রতিটি চুম্বন দিয়ে,
রচিত হয় এক নতুন সুরের কাব্য।
প্রেমের এই অমৃত সঙ্গমে,
আমরা হারিয়ে যাই একে অপরের মধ্যে,
চুম্বনের সেই জাদুকরী স্পর্শে,
তোমার ভালোবাসার উজ্জ্বল দ্যুতিতে।”
~মেহের~
“মাহির পুরো ঘরটাকে স্বপ্নের মতো সাজিয়ে তুলেছে তোহার জন্য। সারা ঘর জুড়ে সাদা রজনীগন্ধার মালাগুলো এমনভাবে টাঙানো, যেন প্রতিটি কোণ থেকে সুবাস ভেসে আসছে। সিলিং থেকে ঝুলছে সূক্ষ্ম কৃত্রিম ফুলের তোড়া, যা ঘরের মৃদু আলোয় রঙিন ছটায় ঝিলমিল করছে। বিছানার চারপাশে সিল্কের পাতলা পর্দা নেমে এসে সৃষ্টি করেছে এক স্বর্গীয় আভা, যার উপরে রজনীগন্ধা আর লাল গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে আছে ভালোবাসার নীরব সাক্ষী হয়ে। ছোট্ট টেবিলের উপর কয়েকটি সুগন্ধি মোমবাতি জ্বলছে, তাদের মৃদু আলো আর ঘ্রাণে ঘরের পরিবেশকে আরো মোহনীয় করে তুলেছে।”
“মাহির জানে, এই সাজসজ্জা তোহার মনে এক স্বপ্নিল আবেশ এনে দেবে, রজনীগন্ধার সুবাসে মিশে যাবে তাদের ভালবাসার মিষ্টি সুর।”
“কিছুক্ষণ আগে মাহিরের ঠোঁটের মৃদু স্পর্শ এবং ঠোঁট কা**টা কবিতা শুনে, লজ্জায় চোখ বন্ধ করে রেখেছে তোহা।প্রিয়জনের প্রথম স্পর্শ,প্রথম কাছাকাছি এসে কথপোকথন সবকিছুই যেন এক অন্যরকম অনুভূতির জন্ম দেয়।তোহার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।”
“মাহির তোহা কে বিছানায় বসিয়ে ওর মাথা বুকের সাথে মিশিয়ে বললো,
‘সেদিন আমার ইংরেজি কবিতাটা অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছিলো।তুমি হয়তো ভুলে গেছো,কিন্তুু আমার সবকিছু মনে আছে।আমি এখন সেটার বাকি অংশটুকু আবৃত্তি করে শোনাবো,তারপর..
বলেই মাহির মুচকি হেসে আবৃত্তি করলো,
“Hug me
But don’t let go,,
I want you to stay
I want you to know
I need you with me
You make me feel bright,
So just hug me
Right through the night
It’s what I want
Maybe even a kiss,
You make me feel special
I can’t turn away.”
“মাহিরের মুখনিঃসৃত রোমান্টিক কবিতা শুনে, লজ্জায় তার বুকে আরও মিশে গেলো তোহা।”
“তোহা বুকের সাথে এতটা মিশে যাওয়ায় শেষ..মাহির শেষ…
অবাধ্য অনুভূতি গুলোকে হারিয়ে, প্রেয়সীর ঠোঁট জোড়া আবদ্ধ করে নিলো।উ**ন্মাদের ন্যায় ভরিয়ে দিতে থাকলো আদরে।সন্তর্পণে পোষ মানিয়ে রাখা অনুভূতি গুলো খাঁচা ছেড়ে যেনো উড়াল দিলো।নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না তোহা।অবশেষে সেও হার মানল সেই পা**গল করা স্পর্শে।দু’জন যেন দু’জনের হৃদস্পন্দন গভীরভাবে অনুভব করতে থাকল।অবশেষে সীমাহীন ভালোবাসার অমীয় সুধা পান করলো দু’জনে।ডুব দিলো প্রেম সায়রে,হারিয়ে গেলো এক অন্ধকারাচ্ছন্ন মোহে।”
—————
“এদিকে বিয়ে বাড়ি থেকে এসে দিগন্ত নাদিয়া কে রুমে ঢুকতে দেয় নি।বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।বলেছে,
‘সে একটা চমলক্ক সারপ্রাইজ দিবে,অথচ নাদিয়া বেচারি ঘুমে টালমাটাল।কিছুক্ষণ দরজা ধা”ক্কা”ধা””ক্কি করে সাড়াশব্দ না পেয়ে,ড্রয়িং রুমে গিয়ে সোফায় কাত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে নাদিয়া।”
“এদিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কিছু ঠিকঠাক করে পুরো রুমে সূক্ষ্মভাবে চোখ বুলালো দিগন্ত।
দিগন্ত আগেই পরিকল্পনা করেছিলো,তার বন্ধুর মতো সেও আজ বাসর করবে,তবে অন্যভাবে।তাই সে নাদিয়ার আড়ালে আগে থেকে সব জিনিস পত্র খাটের নিচে লুকিয়ে রেখেছিলো।অবশেষে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।সে পুরো রুম সুন্দর করে সাজিয়েছে।
তবে দিগন্তের সাজানোর ধরণই আলাদা।ঘরের প্রতিটি কোণ রঙিন বেলুনে ভরপুর, যেখানে বেলুনগুলো নানা মজার আকারে বাঁধা। কিছু বেলুনে হাসির মুখ আঁকা, কিছুতে আবার কিউট কার্টুন চরিত্রের চেহারা। সিলিং থেকে ঝুলছে বেলুনের ঝালর, যা হাওয়ায় দুলছে। ফুলের জায়গায় দিগন্ত ব্যবহার করেছে কৃত্রিম ফুল, যেগুলো থেকে হঠাৎ হঠাৎ কনফেটি বের হচ্ছে, সব দেখে মনে হয় যেন কোনো কার্টুনি পার্টির মধ্যে ঢুকে পড়েছে। বিছানার চারপাশে জড়িয়ে রাখা আছে রঙিন স্ট্রিং লাইট, যা ঘরের মধ্যে এক হাসির আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। বালিশের উপর রাখা ছোট্ট একটি টেডি বিয়ার, তার হাতে একটি লাল হৃদয়, যেটার গায়ে লেখা,
‘তোমার হাসিই আমার সুখ।’
“পুরো রুম ভালো ভাবে দেখে মুচকি হেসে দিগন্ত দরজা খুলে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখলো নাদিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে।কিন্তুু এই আরামের ঘুম সে কিছুতেই হতে দিবেনা।খুব কষ্ট করেছে সে।তার কষ্টের উশুল তো করেই ছাড়বে।দ্রুত গতিতে নাদিয়ার কাছে গিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে কোলে তুলে নিয়ে, নিজের রুমের দিকে নিয়ে গেলো।
আকস্মিক ঘটনায় ঘুম ভে**ঙে গেলো নাদিয়ার।নিজেকে দিগন্তের কোলে দেখে ঘুম ঘুম স্বরে বললো,
‘একি?হচ্ছে টা কি?রাত-বিরেতে কি শুরু করেছো?নামাও আমায়।’
“দিগন্ত নাদিয়ার গালে চুমু দিয়ে বললো,
‘এত পরিশ্রম কিছুতেই বৃথা যেতে দেবো না।তাড়াতাড়ি চোখ খোলো।’
বলতে বলতে রুমে নিয়ে নাদিয়া কে কোল থেকে নামালো।”
“পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দিগন্তের এই ফানি সাজসজ্জা দেখে, বিস্ময়ে মাথা ঘোরার উপক্রম হলো নাদিয়ার।বিস্ময়ের স্বরে বললো,
‘এটা কি করেছো তুমি?
আমাদের রুম টাকে এভাবে কার্টুনের মতো সাজিয়েছো কেনো?”
“নাদিয়ার এহেন কথায় তেঁতে উঠলো দিগন্ত।ওর হাত ধরে বললো,
‘কোথায় একটু প্রশংসা করবে,সেটা না করে অদ্ভুত প্রশ্ন করছো।এই জন্যই তো তোমাকে নিরামিষভোজী বলি।আচ্ছা শোনো,কিছুদিন পর এমনিতেও আমাদের ঘরে কার্টুন বেবি আসবে।তাই আগেই একটু প্রস্তুুতি নিলাম।কেমন হয়েছে হানি?”
‘নাদিয়া পুরো রুমে সূক্ষ্মভাবে চোখ বুলিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
‘দারুণ হয়েছে,একদম ইউনিক, হাহাহা।’
“দিগন্ত নাদিয়ার হাত আরেকটু জোরে চেপে ধরে বললো,
‘হয়েছে, হাসাহাসি পরে হবে।অনেক রাত হয়ে গেছে,এখন তোমাকে কিছু কথা বলবো,মনোযোগ দিয়ে শুনবে।”
‘হুম বলো।’
“দিগন্ত নাদিয়ার দুই কাঁধে হাত রেখে মিষ্টি স্বরে বললো,
‘চলো, কল্পনা করি, আমরা দু’জনে মিলে একান্তে কোথাও বসে আছি—একটি সুন্দর চাঁদনী রাত, চারপাশে মৃদু বাতাস বইছে, আর দূরে নদীর কলকল ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। আমরা হাত ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি, যেখানে অসংখ্য তারা আমাদের জন্য ঝিলমিল করছে। কিছু সুমিষ্ট কথা আর ভালোবাসায় ভরা হাসির আদান-প্রদান চলছে… কেমন লাগছে?”
” নাদিয়া হা করে তাকিয়ে দিগন্তের কপালে হাত দিয়ে বললো,
‘হ্যা ভালো,কিন্তুু তোমার তো জ্বর আসেনি,হঠাৎ এগুলো বলছো কেনো?’
‘তেঁতে উঠলো দিগন্ত।কটমটিয়ে বললো,
‘মানে?তোমার কি আমার মুখে রোমান্টিক কথা শুনে অবাক লাগছে?”
‘না, ঠিক তা নয়।কিন্তুু তুমি তো সবসময় অন্য কথা বলো।’
‘কি কথা বলি?’
‘ওই যে..অন্য কথা।আচ্ছা, তুমি হঠাৎ এতো সুন্দর করে রুম সাজালে,তো এখন কি করবে?’
‘নতুন করে বাসর করবো।’
‘অ্যা?নতুন করে বাসর মানে?আগে কি করেছো?’
“দিগন্তের কা**টকা**ট জবাব,
‘আগের টা মনের মতো হয় নি।আজ মনের মতো হবে।তাছাড়া ইদানীং দেখছি তুমি আমাকে পাত্তাই দাও না।”
“দিগন্তের এহেন কথায় বিস্ময়ের শেষ সীমানায় পৌঁছালো নাদিয়া।বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,
‘তুমি কি আমার সাথে মজা করছো?আমি তোমাকে পাত্তা দেই না?নাকি তুৃমি আমার কথা কে পাত্তা দাও না?ব্যাপারটা কেমন ফানি হয়ে গেলো না?’
‘কি?আমার তোমাকে জোকার মনে হয়?ওকে দেখাচ্ছি তোমাকে জোকারের জোকারগিরি।’
বলেই নাদিয়ার হাত ধরে টেনে বিছানায় বসিয়ে ওর শরীরে সুড়সুড়ি দিতে থাকল।’
” দিগন্তের আকস্মিক এহেন কান্ডে নাদিয়া হাসতে হাসতে শেষ।এক পর্যায়ে বললো,
‘প্লিজ জানু,আমায় ছাড়ো।আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।’
“দিগন্তের সুড়সুড়ি চলমান।দুষ্টু হেসে বললো,
‘আগে বলো,’আমি তোমার রোমান্টিক স্বামী,আর তুমি আমার নিরামিষ হানি।আমরা এখন কিউট কার্টুন আনার প্রস্তুুতি নিবো।’বললে ছাড়বো।”
“নাদিয়া দিশেহারা হয়ে দিগন্তের বলা কথা গুলো গড়গড় করে বলে দিলো।অবশেষে দিগন্ত নাদিয়াকে ছাড়তেই হাফ ছেড়ে বাঁচল নাদিয়া।তবে সেটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য।পরক্ষণেই নাদিয়ার অধরে অধর মিশিয়ে দিলো দিগন্ত।ব্যাস,এতো কষ্ট তো উশুল করতেই হবে।
বেচারি নাদিয়া বরাবরের মতো এবারেও দিগন্তের গভীর স্পর্শে হার মানলো।
নাদিয়া ধীরে ধীরে দিগন্তের শরীরে আলিঙ্গন করে, তার উষ্ণতা আর নিরাপত্তা খুঁজে পায়। দিগন্ত তার চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়, তার গালের ওপর আলতো চুম্বন করে। তারা একে অপরের বাহুডোরে হারিয়ে যায়, সময় যেন থেমে থাকে তাদের জন্য।”
“মিলনের এই মুহূর্তে তাদের মধ্যে কোন শব্দ নেই, শুধু হৃদয়ের গভীর থেকে বেরিয়ে আসা নিঃশ্বাস আর মৃদু গুঞ্জন। এই রাত্রি, এই ঘর, এই মুহূর্ত—সব কিছু যেন তাদের প্রেমের সাক্ষী হয়ে থাকে, এক চিরন্তন প্রেমের কাহিনী রচনা করে।”
————
“প্রায় ১ঘন্টা যাবৎ নিধির সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে নির্জন।ঘড়িতে বাজে রাত ২টা ৬মিনিট।”
“নির্জন নিধির জন্য একটি অত্যন্ত আভিজাত্যমণ্ডিত রাতের আয়োজন করেছে। পুরো বাসরটি সাজানো হয়েছে কালো রঙের কৃত্রিম গোলাপ দিয়ে, যা একটি গাঢ় ও রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করেছে। গোলাপগুলোর উপরে নরম সোনালী আলো ফেলে থাকা হালকা মোমবাতির আলো চারপাশে এক ধরণের স্নিগ্ধতা এনে দিয়েছে।”
“বাসরের কেন্দ্রস্থলে কালো গোলাপের পাপড়ি দিয়ে বিছানা সাজানো, যা সিল্কের কালো চাদরে মোড়া। বিছানার চারপাশে সুগন্ধি ফুল ও পাতার অঙ্গসজ্জা দেওয়া হয়েছে। নির্জন নিজ হাতে নিধির মাথায় সোনালী ক্রাউন পরিয়ে দিয়েছে, যা স্টোন ও রূপার এক অনবদ্য সম্মিলন। ক্রাউনের নকশা আভিজাত্যপূর্ণ, যে তা নিধির সৌন্দর্যকে আরো প্রাত্যহিক ও রাজকীয় করে তুলেছে।”
“এই এক ঘন্টায় নিধি অনর্গল কথা বললেও,রিমলেস চশমার আড়ালে নির্জন একমনে তাকিয়ে থেকেছে নিধির দিকে।বারংবার বলে ফেলেছে,
‘কালো পোশাক,সোনালী ক্রাউন পরিহিত তোমাকে এখন আঁধার রাতের রানীর মতো লাগছে।তুমি আমার ডার্ক কুইন।”
“নির্জনের প্রশংসায় বারকয়েক মুচকি হেসেছে নিধি।এ সুখ যেন তার স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর।আহ!কত সুখ,কত শান্তি।নিজের ওপর নিজেরই কিঞ্চিৎ ঈর্ষা হলো নিধির।”
‘নির্জনের এই নিখুঁত আয়োজন তার প্রেমের গভীরতা এবং নিধির প্রতি তার শ্রদ্ধার নিদর্শন। এই মুহূর্তটি যেন একটি চিরকালীন প্রেমের প্রতীক, যেখানে কালো রঙের গোলাপ এবং সোনালী ক্রাউন এক অমোঘ রোমান্সের চিত্র তুলে ধরে।’
‘নিধিকে মনের দিক থেকে কিছুটা ফ্রী করে,মাইন্ড কন্ট্রোল করে এক পর্যারে নিধির সর্বাঙ্গে ছুঁয়ে দিতে থাকল নির্জন।’
“নির্জনের এহেন গভীর স্পর্শে ঈষৎ কেঁপে উঠলো নিধি।অতিরিক্ত লজ্জায় কোনোরকমে নিজেকে সংযত করে বললো,
‘আচ্ছা,আপনি সবকিছু কালো রঙের জিনিস দিয়ে সাজিয়েছেন কেনো?
আমার তো লাল গোলাপ পছন্দ।”
“নির্জনের গভীর অনুভূতিতে ব্যাঘাত ঘটালো নিধি।নিধির ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট স্পর্শ করে বললো,
‘কিন্তুু আমার তো কালো গোলাপ আর লাল র**ক্ত পছন্দ।’
” মানে?”
“হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।নিধির গালে ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া দিয়ে বললো,
‘আমার লাল র**ক্তজবা পছন্দ।’
“নিধি স্বাভাবিক স্বরে বললো,
‘ওহ।’
“নির্জনের স্পর্শ আরও গভীর হতে থাকলো।এইবার নিধি তো লজ্জায় পুরোপুরি শেষ।
নিধি কে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে, বিরক্ত হলো নির্জন।চশমা খুলে বালিশের একপাশে রেখে নিধিকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে হাস্কি স্বরে বললো,
“তুমি কি মৃদু কাঁপছ?
পৃথিবীও কি কিছুটা টলছে নাকি?
পোষ মানা নিঃশ্বাস গুলো?
খুব বেশি বেপরোয়া, অবাধ্য, চঞ্চল!
আর আধবোজা চোখের পাতারা?
তির তির করে কাঁপছে!
সে পাতার মর্মরধ্বনি আবার হৃদয়েও বাজছে!
তবে নিশ্চিত কেউ তোমার ঠোঁটের তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত
সে তোমায় লুট করে নিবে, সে তোমায় শেষ করে দিবে…”
“নির্জনের কবিতা শুনে নিধির শরীরের কম্পন যেনো দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেলো।
নির্জন এইবার নিজের রাগ কে তীব্র হতে দিলো না।বিশাল ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে বললো,
‘ওকে, ওকে তুমি আরেকটু স্বাভাবিক হও,তারপর..আচ্ছা আজ তো আমাদের বাসর রাত।আমি তো তোমাকে বেশ কয়েকবার গান শুনিয়েছি।এইবার তুমি শোনাও।হুম,শুরু করো।এখন এটা বলো না যে,গান গাইতেও লজ্জা লাগছে।’
“নির্জনের এহেন কথায় নিধি কিছুটা স্বাভাবিক হলো।ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে মুচকি হেসে, নির্জনের বুকে মাথা রেখে গেয়ে উঠলো,
🎶বাতাসে গুনগুন, এসেছে ফাগুন
বুঝিনি তোমার শুধু ছোঁয়ায় এত যে আগুন..(২)
ও এলোমেলো হয়ে যায় মন, কেন আজ বুঝি না
দাবানল যেন ছড়ালো পার করে সীমানা
শ্বাপদের মতো হানা দেয় এ মনের কামনা
নিজেকেই দেখে লাগে আজ
অচেনা, অচেনা, অচেনা
বাতাসে গুনগুন-🎶
“হায়!কি গান…গান গেয়ে লজ্জায় নিজেই শেষ হতে থাকলো নিধি। নির্জন তার ঠোঁট দিয়ে প্রথমে নিধির কাঁধে আদর করতে শুরু করলো।
তার ঠোঁটের স্পর্শ নিধির গলায় চলে আসে,তার ঘ্রাণে মনোমুগ্ধকর স্নিগ্ধতা তৈরি হয়।যেন প্রতিটি স্পর্শের মাধ্যমে তার অন্তরঙ্গ অনুভূতি প্রকাশ করছে।নির্জনের সাথে নিধিও যেন একই স্পর্শে মত্ত হতে থাকল।নির্জন নিধির কোমরে মৃদু করে জড়িয়ে ধরলো।
দুটি আত্মার সঙ্গমে, যেখানে গহীন সত্তা একে অপরকে অন্তরঙ্গভাবে স্পর্শ করে,
প্রেমের অগ্নিতে ভাসমান এই গভীর মিলনে, সীমাহীন সমর্পণ ঘটলো।
শরীরের গভীরে প্রতিটি সঞ্চালন, একে অপরের অন্তরের অন্ধকারকে আলোকিত করে তুললো।
মিলনের এই গভীর চাহনিতে, সৃষ্টি হয় এক অমর, অদেখা,অন্ধকার বন্ধন।”
———-
“সুমধুর একটি রাত পেরিয়ে ভোর হলো।
নির্জনের আগেই নিধি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।অতঃপর নির্জনের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে,সরাসরি শাশুড়ি মায়ের রুমের সামনে গেলো।কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বুঝলো,হয়তো ঘুমিয়ে আছে।তাই নিধি কিচেনে গেলো।রাতে নির্জন নিধি কে সবকিছু দেখিয়ে দিয়েছে।নিধি নির্জন আর ওর জন্য চা বানালো,নুডলস রান্না করলো।আপাতত আর কিছু খুঁজে পেলো না সে।
হঠাৎ, নির্জন নিধি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে চুমু দিয়ে ঘুমঘুম স্বরে বললো,
‘তুমি কিচেনে এসেছো কেনো ডার্ক কুইন?একটু পর তো মেইড আসবে।’
“নিধি নির্জনের দিকে ফিরে মুচকি হেসে বললো,
‘হ্যা,জানি।কিন্তুু আমার খুব ক্ষুধা লেগেছিলো।তাই সামনে যা পেয়েছি তাই বানিয়ে নিলাম।তাছাড়া এই বাসায় যেহেতু কোনো আয়োজন হবে না,তাই ভাবছি আজ তোহার বৌভাতে আমরা দু’জনে যাবো।ওকে গিয়ে সারপ্রাইজ দিবো।দারুণ হবে তাই না?”
“নিধির মুখে এহেন কথা শুনে নির্জনের ঘুম উবে গেলো।
বাঁকা হেসে বললো,
‘ওকে জানপাখি,তুমি যেমনটা চাও।’
বলেই নিধি কে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।”
“নির্জনের চোখে এক অদ্ভুত উন্মাদনার ঝিলিক।বিয়ের পরদিনই নিধি তার বোনের বাড়ি বৌভাতের অনুষ্ঠানে যেতে চায়, কিন্তুু নির্জন তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।তার মনে ভ**য়ানক সন্দেহ, অন্যরকম এক অধিকারবোধ দেখা দিয়েছে।সে কিছুতেই নিধিকে ছাড়বে না।”
“সকালের খাবারের পর নির্জন নীরবে বসে রইল, চোখেমুখে ক্রোধের ছাপ স্পষ্ট।নিধি যখন ঘরে ঢুকলো,নির্জন মৃদুস্বরে বিড়বিড় করলো,
‘তুৃমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না ডার্ক কুইন।তুমি এখানেই থাকবে।’
বলেই বাঁকা হাসি দিলো।”
“নির্জনের বিড়বিড় করে বলা কথাগুলো নিধির কর্ণকুহরে পৌঁছালো না।”
“নির্জন কিচেনে গিয়ে সরিষার তেলের বোতল খুললো। কিছু পাঁচফোড়ন আর লংকার গুঁড়ো বের করলো। একটি মাঝারি সাইজের পাত্রে এক কাপ সরিষার তেল ঢেলে গরম করতে দিলো।তার মধ্যে একেক করে দিলো ১চামচ পাঁচফোড়ন,৩চামচ লংকার গুঁড়ো,১চামচ লবণের মিশ্রণে তীব্র গন্ধে পুরো কিচেন ভরে উঠলো।”
“নিধি হেঁটে কিচেনের দরজায় এসে দাঁড়ালো। নির্জনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,
‘আপনি কি করছেন নির্জন?’
“নির্জন পেছন ফিরে তাকালো, চোখে তার নিষ্ঠুরতার ছাপ স্পষ্ট।অথচ মুখে মুচকি হাসি ফুটিয়ে অতি স্বাভাবিক স্বরে বললো,
‘তোমার জন্য বিশেষ কিছু বানাচ্ছি, ডার্ক কুইন।গেস করোতো,এটা কি?’
“নিধি একটু এগিয়ে গিয়ে বললো,
‘সরিষার তেল আর পাঁচফোড়নের সুঘ্রাণ বেরিয়ে এলো।কিন্তুু আমার চোখ কেমন জ্বলছে।এর মধ্যে কি শুঁকনো মরিচের গুঁড়ো দিয়েছেন?”
“নির্জনের গম্ভীর উত্তর,
‘হুম।’
“নিধি চোখ জোড়া কঁচলে বললো,
‘আচারে দেওয়ার জন্য গরম করছেন তাই না?জানেন,আচার আমার ভীষণ প্রিয়।কোন আচারে দিবেন?আমের আচারে নাকি অন্য কোনো….
“নিধি কে আর কথা বলতে দিলো না নির্জন।রহস্যময় হাসি দিয়ে হাস্কি ভয়েসে বললো,
‘হিসস..এত কথা বলো কেনো জানপাখি?এই তেলের মিশ্রণ টা আমার সবচেয়ে প্রিয় স্পেশাল আচারে দেওয়া হবে,মাই ডার্ক কুইন।”
বলেই চুলা থেকে পাত্রটি নিয়ে তড়িঘড়ি করে নিধির দিকে ফিরতেই, ঝালমিশ্রিত তপ্ত তেল নিধির হাত এবং পায়ের ওপর পড়ে গেলো।”
“আকস্মিক ঘটনায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিধির মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিলো।”
#চলবে…
#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩৪
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]
“আকস্মিক ঘটনায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিধির মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিলো।”
“ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে নিধির মস্তিষ্ক সচল হতেই, নিধির আর্তনাদ ছড়িয়ে পরে ঘরের চারিদিকে।কিন্তুু নির্জনের চোখে তখনও ভয়ং**কর উ**ন্মাদনা খেলা করছে।নির্জন একজন নীরব সাইকোপ্যাথ,তার প্রেম ভয়ের চাইতেও শক্তিশালী।
কিন্তুু নিধি নির্জনের ভেতরের দা**নবীয় অস্তিত্ব এখনও টের পায়নি।সে তো চোখ জোড়া বন্ধ করে তীব্র আর্তনাদে ব্যস্ত।”
“নিধির হাত-পা তেলে জ্বালিয়ে দেওয়ার পর, নির্জন হঠাৎ ঠান্ডা মাথায় কাজ করা শুরু করলো।ডেভিল হেসে নিধির গালে হাত দিয়ে ভ্রুকুটি করে উত্তেজিত স্বরে বললো,
‘নিরুপমা..নিরুপমা কি হয়েছে তোমার?একি করলাম আমি?খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?ডোন্ট ওয়ারি জানপাখি,এখনই সব ঠিক হয়ে যাবে।’
বলেই নিধিকে পাঁজা কোলে তুলে রুমে নিয়ে গেলো।”
“তপ্ত তেল ডান হাত এবং দুই পায়ের কিছু অংশে ছিঁটকে পড়াতে,প্রবল জ্বালাপোড়ায় বারংবার আর্তনাদ করে উঠছে নিধি।”
“নিধির এই আর্তচি**ৎকারে নির্জনের কিঞ্চিৎ কষ্ট হলেও, ‘মন’ তাকে বুঝ দিলো,
‘সে তোমার।এভাবেই তাকে আগলে রাখতে হবে।তোমাকে আরও শক্ত হতে হবে।মনে রেখো,তুমি যাকে ভালোবাসো,তার শরীর এবং মনের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে তোমার ক্ষমতার মোহর এঁকে দিতে হবে।এখন থেকে এটাই তোমার মূল কাজ হবে।তাকে ক্ষত করার অধিকার যেমন তোমার, তার সেই ক্ষত ঢেকে দেওয়ার অধিকারও তোমার।””
“মনের সাথে শ**য়তানি পরামর্শ করে বাঁকা হাসলো নির্জন।নিধিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে,সে প্রথমে ঠান্ডা পানি দিয়ে নিধির হাত-পায়ের পুড়ে যাওয়া জায়গাগুলো ধুয়ে দিলো। নিধি যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকল, কিন্তু নির্জন তখনো নীরব।সে শুধুমাত্র তার নিজস্ব উপায়ে নিধির যত্ন নিচ্ছে। সে পুড়ে যাওয়া অংশ পরিষ্কার করে, জীবাণুনাশক মলম লাগিয়ে গজ দিয়ে ঢেকে দিলো।”
“নির্জন যতই নিধির সেবা করছে, ততই নিধির ওপর নির্জনের মানসিক নিয়ন্ত্রণ বেড়ে যাচ্ছে। সে একক ভাবে বুঝিয়ে দেয় যে নিধি তাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না, আর এই ঘটনার মধ্য দিয়ে তাদের সম্পর্ক আরও অদ্ভুত এবং তীব্রভাবে বাঁধা পড়ে গেলো আরেকটিবার।”
“নির্জনের প্রাথমিক চিকিৎসায় নিধি কিছুটা স্বস্তি অনুভব করলো।নির্জনের দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
‘থ্যাংক’স নির্জন।’
“নির্জনের মন পুলকিত হলো।নিধির গালে আলতো করে চুমু দিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
‘উহুম,আমি তোমার থেকে থ্যাংকস পাওয়ার যোগ্য নই।আমার কারণে তোমার হাত আর পায়ের এই অবস্থা হয়েছে।এর জন্য আমি শতভাগ দায়ী।আ’ম সরি ডার্ক কুইন।’
‘নির্জনের এহেন কথায় দ্বিগুণ আবেগী হয়ে গেলো নিধি।চোখজোড়া চিক চিক করে উঠলো সহসা।আনমনে ভাবলো,
‘কিভাবে এতো আবেগী হলাম আমি?’
‘ভেবে ম্লান হেসে নির্জনের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো,
‘এই টপিক বাদ দিন প্লিজ।আপনি তো আর ইচ্ছে করে করেন নি।যদি ইচ্ছে করে করতেন,তাহলে অন্য ব্যাপার ছিলো।’
“নির্জন ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করলো,
‘তাহলে কি করতে?’
“নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘তাহলে ওই একই তেলে আপনাকেও পোড়াতাম।’
” নিধির কথায় রহস্যময় হাসি দিলো নির্জন।কিভাবে বলবে সে,যে তার প্রিয়তমাকে নিজের কাছে রাখার জন্য ইচ্ছে করেই ক্ষতি টা করেছে।তবে এখন নয়,সব কিছু ধীরে ধীরে বলবে।”
“এভাবেই কে**টে গেলো একটি সকাল।নিধির অগোচরে নির্জন তার মায়ের রুমে গিয়ে সেবিকাকে কড়া সুরে বলেছে,
নিধির ধারে কাছেও যেনো সে না ঘেঁষে।’
‘সেবিকা এমনিতেই নির্জন কে ভয় পায়,তার ওপর নির্জনের এহেন আচরণে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।তার অন্য কোনো পন্থা থাকলে হয়তো চলে যেতো।কিন্তুু সায়রা বেগমের কাজকর্ম করতে তার ততটা পরিশ্রম হয়না।তাছাড়া চাইলেই সব জায়গায় মনের মতো কাজ খুঁজে পাওয়া যায় না।’
“এদিকে নিধি তার মা-বাবা কে ফোন করে ওর হাতে-পায়ে তেল ছিঁটকে পড়ার কথা বলেছে।তবে নির্জনের বিষয়টি বলেনি।যদি তারা অন্যকিছু ভাবে,তাই বুদ্ধি করে বলেছে,নিজেই রান্না করতে গিয়ে অসাবধানতা বসত
হাতে-পায়ে তেল ছিঁটকে গেছে।
নিজের মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে খুব কষ্ট পেলেন রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগম।তারা নিধি কে মানসিক ভাবে স্বান্তনা দেওয়ার পাশাপাশি এটাও বললেন,তারা আজ নিধিকে দেখতে আসবেন।”
“নিধির সাথে কথপোকথন শেষ করে,তারা তৎক্ষণাৎ তোহার শ্বশুর বাড়িতে বিষয়টি জানিয়ে দিলো।আর এটাও জানিয়ে দিলো,তোহার বৌভাতে তাদের আত্মীয়-স্বজন ঠিক সময় চলে যাবে।”
“সবকিছু শুনে মাহির স্তব্ধ হয়ে গেলো।তবে তোহাকে কিছুই বললো না।
প্রিয় বোনের এতটা অসুস্থতার কথা শুনলে, এই বিশেষ দিনে নিশ্চিত সে মন খারাপ করবে।তার অর্ধাঙ্গিনীর দিকেও তো তাকে খেয়াল রাখতে হবে।”
——–
“দুপুরে মেইড এসে রান্না করে গিয়েছে।নতুন বউ এসেছে জেনে,নিধিকে দেখতে চাইলে,নির্জন তাকেও বলে দিয়েছে,নিধি চাইলেও যেনো তার সাথে কথা না বলে।তার ওয়াইফ অন্য কারো সাথে কথা বলুক এটা তার অপছন্দ।”
“নির্জনের এহেন আচরণে,মেইড মনে মনে নির্জনকে রগচটা, বেয়াদব,অ**সভ্য বলে, আবারও তার কাজে মনযোগ দিয়েছে ।একটু পর তাকে আরও ২ বাসায় একেক করে কাজে যেতে হবে।নির্জন কে মনে মনে খারাপ জানলেও,প্রতিমাসে যখন ঠিক সময়ে বেতন পায়,তখন মনে মনে ভীষণ খুশি হয়।”
“নিধিকে নিজে হাতে খাইয়ে দিয়েছে নির্জন।নির্জনের কাছ থেকে এতটা যত্ন পেয়ে নিধিতো আহ্লাদে আটখানা।তার স্বামীকে কিভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, সেই ভাষাটিও সে হারাতে বসেছে।”
“বিকালের দিকে নিধি কে দেখতে তার বাবা-মা এসেছে।নিধি আগেই নির্জন কে এই বিষয়ে বলে দিয়েছিলো।তাই নির্জনও তার শ্বশুর শাশুড়ির আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে রেখেছিলো।”
“নির্জনের শুনশান বাড়িটি দেখে কিছুটা অস্বস্তি অনুভব হলো তাহমিনা বেগমের।প্রথমে তিনি সায়রা বেগমের সাথে দেখা করলেন।সায়রা বেগম কে দেখে তার ভীষণ মায়া হলো।
তারপর তিনি এবং রফিক মির্জা নিধির সাথে দেখা করলেন।রফিক মির্জার তার মেয়ের পায়ের এহেন দশা দেখে নিমিষেই মুখ চুপসে গিয়েছে।তাহমিনা বেগম নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘তোর পা তো অনেকখানি পুড়ে গিয়েছে।অথচ তুই বলছিস কিছুটা পুড়েছে?’
“মায়ের স্নেহপূর্ণ কথায় মুচকি হাসলো নিধি।অতঃপর বললো,
‘সত্যি বলছি, খুব বেশি পুড়ে যায় নি।নির্জন ইচ্ছে করে পুরো পা ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে।ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।তুমি একদম চিন্তা করো না মা।”
“স্ত্রী,শ্বশুর এবং শাশুড়ির কথপোকথনের মাঝে নাস্তা নিয়ে এলো নির্জন।এই মুহূর্তে নিধির পাশ ঘেঁষে তাহমিনা বেগম এবং রফিক মির্জার মেলোড্রামা দেখে ভীষণ বিরক্ত লাগছে নির্জনের।কিন্তুু এমতাবস্থায় কিছুই করার নেই,কিছুটা সময়ের জন্য তাকে সহ্য করতে হবে।’
ভেবে মুচকি হেসে তাদের কে খাবার খেতে বললো।”
“নির্জনের এহেন আতিথেয়তায় ভীষণ খুশি হলো রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগম।তাদের মনের অন্তরালে জানান দিলো,তাদের মেয়ে স্বামী হিসাবে পারফেক্ট মানুষ কে পেয়েছে।অবশেষে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে তারা নির্জনের বাসা থেকে প্রস্থান করলেন।শ্বশুর-শাশুড়ি চলে যেতেই নির্জন তার চশমাটি তর্জনী দিয়ে ঠিকঠাক করে বললো,
‘উফফ! বিরক্তিকর।যেখানে আমার ডার্ক কুইনের সেবা করার জন্য আমি আছি,সেখানে আপনাদের আসার কি দরকার?যত্তসব আদিক্ষেতা!”
———
“বৌভাতর অনুষ্ঠান কার্য শেষ হওয়ার পর তোহার কিছুটা অস্বস্তি অনুভব হয়।হঠাৎ করে মাথা ঘুরে ওঠে।মাহির রেডি হচ্ছিলো শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য,সেই সাথে তোহাও রেডি হচ্ছিলো।কিন্তুু হঠাৎ এমন হওয়াতে কিছুটা ঘাবড়ে যায় মাহির।তোহার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে চিন্তিত স্বরে বলে উঠলো,
‘কি হলো স্বপ্নচারিনী?তোমাকে এমন লাগছে কেনো?অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে?’
“তোহা চোখজোড়া বন্ধ করে নিজের মাথায় আলতো করে হাত দিয়ে বললো,
‘মাথাটা কেমন ঘুরে উঠলো।আসলে আমি বেশি রাত জাগতে পারি না।গতকাল সারা রাত জেগেছি,আজ আবার এই ভারী পোশাকে সারাদিন থেকেছি,সব মিলিয়ে শরীর খারাপ লাগছে।সমস্যা নেই,এমনি তে আমি ঠিক আছি।”
“তোহার কথা শুনে মাহিরের মুখে দুষ্টু হাসির রেখা ফুটে উঠলো।চোখ পাকিয়ে বললো,
‘ওকে এখন থেকে বেশি রাত জাগতে হবে না।এইতো ২-৩টা পর্যন্ত জেগে থাকলে এনাফ।’
‘মাহিরের এহেন কথা বুঝতে কিছুটা বেগ পেতে হলো তোহার।অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,
‘আমার অসুস্থতার মধ্যেও এইসব কথা?’
” হাহাহা তোমার সাথে বলবো না,তো কার সাথে বলবো?এনিওয়ে,আমি কিন্তুু আমাদের হানিমুন প্ল্যান রেডি করে ফেলেছি।
বলো,বাইরের কোথাও যাবে?নাকি বাংলাদেশে?তবে বাইরে কোথাও যেতে চাইলে কিছুটা সময় লাগবে।”
“তোহা মাথা এদিক-ওদিক নাড়িয়ে বললো,
‘উহুম,বাইরে নয়।বাংলাদেশের ভেতরে যাবো।এই ধরুন,রাঙামাটি, জাফলং,সিলেটের চা-বাগান।”
“মাহির দুষ্টু হেসে বললো,
‘ওকে, তবে আমার একটা শর্ত আছে।’
‘কি শর্ত?’
“বেশি বয়স করে বাবা হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই।তাই হানিমুনে গিয়ে বেবি প্ল্যান করলে কেমন হবে?”
“হায়!মাহিরের এহেন কথা শুনে লজ্জায় মিইয়ে গেলো তোহা।সবে মাত্র এক রাত পেরিয়েছে।আর এখনই বেবি প্ল্যান?’
লাজুক হেসে বললো,
‘এইসব পরে ভাবা যাবে,আগে আমি রেডি হই।তারপর আপনার সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলবো?’
“মাহির তোহার ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,
‘সেকি!সারা রাত এতকিছু করেও তোমার মাথা ঠান্ডা হয়নি?এখন আবার নতুন করে ঠান্ডা করতে চাও?বেশি পানি ব্যবহার করলে যেকোনো সময় নিউমোনিয়া হয়ে যাবে।এমনিতেই সবসময় পেশেন্টের ভীরে অস্থির হয়ে থাকি,তার ওপর তোমার এমন হলে আমার অ””ক্কা যেতে বেশি সময় লাগবে না।”
“তোহা কটমটিয়ে বললো,
‘আপনি থামবেন?সবসময় নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা মাথায় নিয়ে ঘোরে।আমি ওয়াশরুমে গেলাম।আপনি একা একাই ঠোঁট কা**টা কথা বলতে থাকুন।’
বলেই তোহা কোনোরকমে ধীরে ধীরে উঠে মুখ ভেং**চি কে**টে চলে গেলো।”
“মাহির সেদিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বললো,
‘হায়!এই ডাক্তার সাহেব তার বউয়ের লজ্জা ভা**ঙাতে ব্যর্থ হলো।ধুর..এরপর থেকে আরও ভালোভাবে ট্রাই করতে হবে।’ বলেই হো হো করে হেসে উঠলো মাহির।”
———-
“বাংলাদেশে যখন সন্ধ্যা ৬টা,কানাডার টরেন্টো শহরে তখন সকাল ৮টা।
শুভ্র বিছানায় শুয়ে আছে ইহান এবং আফরিন। স্নিগ্ধ শীতের বাতাস জানালা দিয়ে এসে হালকা পর্দাগুলোকে দুলিয়ে দিচ্ছে। বিছানার শুভ্র কম্ফোর্টারের নিচে ইহান আর আফরিন দুষ্টু মিষ্টি কথপোকথনে মগ্ন।”
“ইহানের দুষ্টু চোখে মায়াবী ঝিলিক, আফরিনকে ইশারায় কিছু বলতে চায়। আফরিন জানে, ওর প্রতিটি হাসির আড়ালে কিছু না কিছু শ**য়তানি লুকিয়ে আছে। ইহান হঠাৎ করেই আফরিনের দিকে ঝুঁকে এসে বলে,
“আচ্ছা, যদি আমি এখন তোমার গায়ে হিম শীতল হাত রাখি?কেমন হবে?”
“আফরিন মুচকি হেসে বললো,
‘ইশ!তোমার কি মনে হয়,তুমি ঠান্ডা হাত রাখবে,আর তোমাকে আমি এত সহজে ছেড়ে দেবো?ফ্রিজের বরফ গুলো সব তোমার মাথায় ঢেলে দিবো।এনিওয়ে,সকাল থেকে অনেক রোমান্স করেছি;এখন মূল টপিকে আসি।”
“হুম বলো।”
“আফরিন ইহানের গালে হাত রেখে বললো,
‘আমরা যেহেতু বিয়ে করেছি,তাই আমাদের হানিমুন করা আবশ্যক।কানাডায় তো অনেক জায়গায় ঘুরেছি।তবে বাংলাদেশী মেয়ে হয়েও বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ঘোরা হয়নি।তাই ভাবছিলাম, আমাদের হানিমুন প্ল্যানিং বাংলাদেশে করলে কেমন হয়?’
“আফরিনের কথা শুনে মুহূর্তেই মুখে অন্ধকারের ছায়া দেখা গেলো ইহানের মুখস্রিতে।প্রেমের টানে কতগুলো বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছিলো সে।অবশেষে ব্যর্থ হয়ে তাকে ফিরে আসতে হয়েছে।আবারও সে তার মাতৃভূমিতে যাবে?অসম্ভব।’
ভেবে মলিন স্বরে বললো,
‘কানাডায় আরও অনেক দর্শনীয় স্থান আছে,যেখানে তোমার যাওয়া হয় নি।আমরা না হয়..
” আফরিন ইহানের ঠোঁট জোড়ায় আঙ্গুল ঠেকিয়ে বললো,
‘আমি জানি,তুমি কেনো সেখানে যেতে চাও না।আসল কথা হলো আমরা দু’জনেই একই পথের পথিক।তুমি প্রেমের টানে বাংলাদেশে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছো।আর আমি বাংলাদেশে থেকে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, কানাডায় আমার ফুফুর বাসায় চলে এসেছি।কিন্তুু এখন তো আমরা স্বামী-স্ত্রী।আমাদের মধ্যে কোনো অপূর্ণতা নেই।তবুও কেনো যাবে না?আমি তো ভেবে রেখেছি, ওখানে আমাদের বেবি হবে।তারপর বেবিকে একটু বড় করে আবার কানাডা পাড়ি জমাবো।”
“আফরিনের কথা শুনে কেশে উঠলো ইহান।মুখে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বললো,
‘তাহলে তো আগে থেকেই এইসবের জন্য প্রস্তুুতি নিতে হয়,তাই না?’
“নিজের কথায় নিজেই ফেসে গেলো আফরিন।কটমটিয়ে বললো,
‘এই একদম না।আর না..পরে হবে..কাল রাতে অনেক জ্বালিয়েছো।’
“ইহান হো হো করে হেসে বললো,
‘ওকে,ওকে সুমাইয়া..জাস্ট কিডিং।আমি খুব ভালো ছেলে,এখন কিচ্ছু করবো না।’
বলেই ইহান নরম করে আফরিনের চুলে হাত বুলাতে থাকল আর বললো,
‘জানো, তোমার হাসি আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস।যখন আমি পথহারা পথিকের ন্যায় ঘুরছিলাম।তখন তুমিই ছিলে আমার অজানা পথের পাথেয়।এভাবে সবসময় পাশে থাকবে তো?’
“আফরিন লাজুক হেসে বললো,
‘অবশ্যই থাকব।এই হাত তো ছেড়ে দেওয়ার জন্য ধরিনি জান।’
বলেই ইহানের গালে আলতো করে চুমু দিয়ে,প্রাণ প্রিয় অর্ধাঙ্গের বুকে চোখজোড়া বন্ধ করে মাথা রাখলো।”
———
“অফিস থেকে বাসায় এসে দিগন্ত তার মায়ের সাথে দেখা করে নিজের রুমে এসে দেখলো,নাদিয়া মোবাইলে ভিডিও দেখে হাসাহাসি করছে।দিগন্ত মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো নাদিয়ার দিকে।নাদিয়া কে ভয় দেখানোর জন্য ভাউ..করে উঠতেই, নাদিয়াও চি**ৎকার করে উঠলো।
বুকে বারকয়েক থুথু দিয়ে বললো,
‘এটা কি হলো?একটু হলেই হার্ট অ্যা**টাক করতাম।’
‘হেহেহে বউয়ের সাথে একটু মজা করতে ইচ্ছে হলো,তাই করলাম।আচ্ছা, তোমার থেকে এমন পাঁচফোড়নের সুগন্ধি আসছে কেনো?”
“নাদিয়া মুচকি হেসে বললো,
‘একটু আগে তোমার জন্য নিরামিষ রান্না করেছি তাই।এখন ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হবো।’
বলেই নাদিয়া ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিলে দিগন্ত নাদিয়ার হাত ধরে কাছে টেনে বললো,
‘তুমি নিরামিষ,আর আমি আমিষ।এখন দু’জনে মিলে এক হয়ে গিয়ে না হয় ফ্রেশ হবো।’
” ছিহ!কি কথা!এই তুমি না মাত্র অফিস থেকে এলে?এতটা পথ জার্নি করে এসেও দেখছি তোমার মুখের তেজ কমেনি।”
“দিগন্ত নাদিয়ার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
‘ওই হানি,একদম আমার মুখের তেজ নিয়ে কথা বলবে না।আমার আরও অনেক দিক থেকে তেজ আছে,সেটা তুমি খুব ভালোভাবে জানো,আবার দেখাবো?’
“নাদিয়া জানে,দিগন্তের এই লাগাম ছাড়া কথা চলতেই থাকবে,তাই বুদ্ধি খাটিয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বললো,
‘ওই যে..ওই যে টিকটিকি টিকটিকি..
“নাদিয়ার কথা শুনে দিগন্ত ওর হাত ছেড়ে দিয়ে সিলিং এর দিকে তাকাতেই,নাদিয়া দুষ্টু হেসে দিগন্তের বুকে ধা**ক্কা দিয়ে দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।”
‘নাদিয়ার এহেন কান্ড দেখে দিগন্ত পুরো বোকা বনে গেলো।’
———-
“রাত সাড়ে ৯টা।নির্জনের বুকে মাথা দিয়ে কতশত গল্প জুড়ে দিয়েছে নিধি।ছোটবেলা থেকে কিভাবে দস্যিপনা করেছে,কিভাবে স্কুলের দেয়াল টপকে পালিয়েছে,এইসব বিষয়ে খুব ঘটা করে বর্ণনা দিচ্ছে সে।নিধির এইসব কাহিনী খুব বোরিং লাগছে নির্জনের কাছে।কথা ঘুরানোর জন্য নির্জন বললো,
‘জানপাখি,গতকাল রাত টা কেমন কাটালে,সেই সম্পর্কে তো কিছু বললে না?নাকি হাতে-পায়ে তেল পড়াতে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে আগের দিনে চলে গিয়েছো?”
“নির্জনের এহেন কথায় লজ্জায় মিইয়ে গেলো নিধি।নির্জনের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বললো,
‘প্লিজ আর লজ্জা দিবেন না।আমার আনইজি লাগছে।’
“নিধির এহেন কথায় মুহূর্তেই ক্ষেপে গেলো নির্জন।নিজের রাগ কোনোরকমে নিয়ন্ত্রণ করে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
‘আমি তোমাকে আবারও বলছি,আমার সামনে কোনো লজ্জা পাওয়া চলবে না।আমরা স্বামী-স্ত্রী;
আমাদের মধ্যে সবকিছু হয়েছে।এখনও এতো লজ্জা কিসের,হুম?’
“নির্জনের আকস্মিক রুঢ় স্বরে ভড়কে গেলো নিধি।চোখ পাকিয়ে বললো,
‘অদ্ভুত মানুষ আপনি!যতই আমরা মিলিত হই না কেনো,তাই বলে আমি লজ্জা পাবো না?’
“নিধির এহেন আচরণ সহ্য হলো না নির্জনের।ভ্রুকুটি করে বললো,
‘নাহ!পাবে না।এটা আমার অপছন্দ।আগে যা পেয়েছো,সেটা না হয় ক্ষমা করে দিয়েছি।কিন্তুু এখন সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।”
“নির্জনের কথায় ফের অবাক হলো নিধি।কিন্তুু প্রিয়জনের এহেন মানসিক রোগ ধরতে ব্যর্থ হলো সে।উল্টো করে ভাবলো,
‘বাহ!কত অল্প সময়ে আমাকে আপন করে নিয়েছে সে।আমার লজ্জাকেও সে অপছন্দ করে।এমন একজন ইন্ট্রোভার্ট,পজেসিভ ছেলেকেই তো চেয়েছিলাম।’ভেবে নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘আচ্ছা আপনিতো একজন ইন্ট্রোভার্ট পার্সন।আমি যতটুকু জানি,এরা খুব নিরামিষ টাইপের হয়।তবে কিছু ক্ষেত্রে তারা খুব পজেসিভ হয়,যেমন আপনি।আই লাইক ইট।’
“নিধির কথায় বাঁকা হাসলো নির্জন।
নিধির কপাল থেকে চুল সরিয়ে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,
‘ইন্ট্রোভার্ট ছেলেদের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে,যা হয়তো অনেকেই জানে না।তোমায় বলছি,
“১.ইন্ট্রোভার্ট মানুষ শ্রোতা হিসেবে প্রথম শ্রেণীর হয়ে থাকে।
২.এক সঙ্গে অনেক মানুষের সান্নিধ্য তাদের কাছে ভালো লাগে না।
৩. কাউকে ভালো লাগলে সহসা প্রকাশ করে না।
৪. সহজে কারো সাথে মেশে না। কিন্তু যার সাথে মেশে খুব ভালো ভাবেই মেশে।
৫. ইন্ট্রোভার্টরা আনন্দ করে থাকে এবং তা প্রকাশও করে। মাঝে মাঝে পা**গলামিও করতে পারে। তবে তা শুধু বিশেষ মানুষদের কাছে, বিশেষ সময়। সবার সঙ্গে একদমই নয়।
৬. পছন্দের মানুষকে প্রথম অবস্থায় মনের কথা বলতে রাজ্যের অসঙ্কোচ দেখা দেয়।
৭. কোন কিছু বুঝতে একটু বেশি সময় নেয়।
৮. ভরা মজলিসে বক্তৃতা দেয়া মানে সাঁতরে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেয়া।
৯. অতিরিক্ত মানুষের মনযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে অপছন্দ করে।
১০.তাদের কাছে বই পড়ার চেয়ে আনন্দের আর কিছুই হতে পারে না।
১১. নিজেকে অন্যের জায়গায় রেখে ভাবতে অন্তর্মুখীদের জুড়ি নেই।
১২. ঝগড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে সরি বলে মিটিয়ে ফেলতে চায়।
১৩. রাগের চেয়ে অভিমানের পরিমাণটা বেশিই হয়।যদিও আমি কিছুটা অন্যরকম।
১৪.ভালোবাসলে মন উজাড় করে ভালোবাসে। বন্ধুত্বে জড়ালে টিকিয়ে রাখবার আপ্রাণ চেষ্টা করে।তবে যেকোনো কিছুর নির্দিষ্ট বেড়াজালে পুরোপুরি আবদ্ধ থাকতে বেশি পছন্দ করে।
সবশেষে বলতে চাই- অন্তর্মুখীরা একাকী সময় কা**টাতে ভালোবাসে, তার মানে এই নয় যে তারা অসামাজিক। তারা কথা কম বলে, কিন্তুু ভাবে বেশি। অবশ্য কথা কম বলার জন্য মানুষ বেশির ভাগ সময়েই তাদের লাজুক হিসেবে আখ্যা দেয়। অন্তর্মুখীদের মুখ বন্ধ থাকে কারণ, তাদের ভাবনার ডালপালা ছড়াতে থাকে। সেখানে নতুন নতুন ধারণা তৈরি হয়। মস্তিষ্কের কোষগুলোর মধ্যে সে ধারণাগুলো যেন রেসের ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকে।”
“এইবার বুঝতে পেরেছো ডার্ক কুইন?”
“নির্জনের বিশাল বিবরণ শুনে নিধি তো পুরো হা হয়ে গেলো।ওর ইন্ট্রোভার্ট দের সম্পর্কে এতটা ধারণা ছিলো না।নিধি নিচু স্বরে বললো,
‘আমি তো পুরো এক্সট্রোভার্ট।একদম আপনার বিপরীত।তেলে-জলে কিভাবে মিলে গেলো?’
” নিধির কথা শুনে নির্জন ওর মাথা বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,
‘ডোন্ট ওয়ারি,আমার সাথে থাকতে থাকতে তুমিও আমার মতো হয়ে যাবে জানিপাখি।তবে তার জন্য আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে।তুমি তো জানো,তেলের মধ্যে পানি থাকলে,আগুনের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিলে,চারিদিকে পানিগুলো ছিঁটে গিয়ে অবশেষে শুধু আসল তেল থেকে যায়।তোমাকেও আমি তেমন ভাবে গড়ে নেবো নিরুপমা।তুমি কি রাজি?”
“নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘উহুম,একটুও না।আমি এইরকমই থাকতে চাই।
এতো কম কথা,এতো ভাবনা আমার ভালো লাগেনা।আপনি আপনার মতো থাকবেন,আর আমি আমার মতো।শুধু আমাদের মধ্যে ভালোবাসার গভীরতা অটুট থাকলেই যথেষ্ট।”
বলেই নিধি নির্জনের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বালিশের পাশ থেকে মোবাইল নিয়ে ফেইসবুক স্ক্রল করতে থাকল।”
“নির্জন পাশে থাকা শর্তেও নিধির এহেন আচরণ মানতে পারলো না সে।এটাকেই তো বলে চরম অবহেলা।তবে কি এক দিন আর এক রাতেই পুরনো হয়ে গেলো সে?অসম্ভব!এটা হতে পারে না।এর জন্য তো তাকে দুষ্টু-মিষ্টি শাস্তি পেতেই হবে।’
ভেবে বাঁকা হাসলো নির্জন।”
———–
“দীর্ঘ একটি রাতের পর ঘুম ভে**ঙেছে নিধির।রাতে নিধি ঔষুধ খাওয়ার পর নির্জন তাকে ঘুমিয়ে যেতে বলে।নিধিও সভ্য মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পরে।”
“সকাল ৮টায় ঘুম ভা**ঙে নিধির।আগের থেকে বেশ ভালো লাগছে তার।আড়মোড়া ভে**ঙে মোবাইল হাতে নিয়ে ৮টার এলার্ম বন্ধ করে,সোশ্যাল মিডিয়ায় যখনই ঢুকতে যাবে,তখনই দেখলো আইডি তে লগ ইন হচ্ছে না।নিধি তো বেশ অবাক হয়ে গেলো।বারবার নিজের আইডি লগ ইন করার চেষ্টা করেও পারলো না।অতঃপর সে তার ইউটিউব চ্যানেলে ঢুকে ফের অবাক হলো।সে যতগুলো ভিডিও বানিয়েছিলো,কিছুই নেই।বিস্ময়ে মুখ হা হয়ে গেলো নিধির।ভ্রুকুটি করে একবার নির্জনের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো,সে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।”
“নিধি আবারও ইউটিউব চ্যানেলে গেলো।কিন্তুু কিছুই নেই।এমনকি ফটোর নিচে ক্যাপশনে লেখা,
‘এখানে আর কোনো ভিডিও আপলোড করা হবে না।’
“লেখাগুলো পড়ে কপালে হাত রাখলো নিধি।কত কষ্টের ফলে ১০হাজার সাবস্ক্রাইবার হয়েছে তার।ভিডিও গুলোতে কত শত ভিউ;সব শেষ।তার ওপর ফেইসবুকেও লগ ইন করতে পারছে না।সবকিছু দেখে মাথায় হাত রাখলো নিধি।
না চাইতেও নির্জনের বাহুতে হাত দিয়ে আলতো করে ধা””ক্কা দিয়ে বললো,
‘এই উঠুন,দেখুন না আমার ফোনে কি হয়েছে?ফেইসবুক,ইউটিউব চ্যানেল সব শেষ।”
“নিধির এহেন কথায় পৈ**শাচিক আনন্দ পেলো নির্জন।তবুও চোখজোড়া বন্ধ করে নিধির হাত বুকের মধ্যে আগলে ধরে বিরক্তি স্বরে বললো,
‘উফফ! গতকাল রাতে অফিসের ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল রেডি করে,রাত ৪টার দিকে ঘুমিয়েছি।প্লিজ ডার্ক কুইন ঘুমাতে দাও।”
#চলবে…