#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ২৯
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]
“ছায়া।”
(ছায়া অন্ধকারের সৃষ্টি, আলো থাকলেও তা আলোকে ঢেকে দেয়।)
“একাধারে ধাঁধা গুলোর উত্তর বলে,অট্টহাসি দিলো নির্জন।চোখে-মুখে হিং**স্রতার ছাপ স্পষ্ট বহমান।নদী থেকে ভেসে আসা ঠান্ডা বাতাস,নির্জনের সেফটি পোশাকের ধারে-কাছেও ঘেঁষতে পারছে না। বর্ষার দেহ গলিত হয়ে বালিতে মিশে যাওয়ার ফলে, তপ্ত হয়ে উঠেছে বালিগুলো।নির্জন একটু এগিয়ে, সেফটি গ্লাভস পরিহিত হাত দিয়ে বালিগুলোর কিছু অংশ খা**মচে উঠালো।উঠানোর সময় খুব জোরে খা**মচে দিলো।এতে মনে হয় ক্ষুদ্র বালুকণা গুলোও ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো।চোখ-মুখ শক্ত করে হাতের মুঠোয় রাখা বালিগুলো একটি কুচকুচে কালো বক্সে ভরলো।এতো নিখুঁত ভাবে মা**র্ডার করেছে,সেটার স্মৃতিচারণ করার জন্য, এই বক্সটি তার বাসায় নিয়ে যাবে।কোনো একদিন হয়তো তার ডার্ক কুইন কেও দেখাবে।ডার্ক কুইন দেখে হয়তো, তার সাথে তাল মিলিয়ে উচ্চস্বরে হেসে উঠবে।আবার হয়তো, খুব ভয় ও পেতে পারে।যদি ভয় পেয়ে যায়,তাহলে ডার্ক কুইনের জন্য স্পেশাল শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।মোট কথা হলো,যে অন্যায় করবে;সেই নির্জনের অন্ধকার আদালতে ভ**য়ানক শাস্তির সম্মুখীন হবে।”
“ভেতর থেকে হঠাৎ করে ‘মন’ বলে উঠলো,
‘এক্কেবারে ঠিক কাজ করেছো।এই ডাস্টবিন কে একদম বালির সাথে মিশিয়ে দিয়েছো।এইবারের মা**র্ডার টা অতি নিখুঁত আর ভ**য়ানক হয়েছে।যেমন টা আগে তুমি করতে।”
“মনের সাথে তাল মিলিয়ে ‘হৃদয়’ বলে উঠলো,
‘মন একদম ঠিক কথা বলেছে।দেখবে, এটা নিয়ে পুলিশ কখনোই তদন্ত করবে না,আর তদন্ত করলেও কিছু পাবে না।কারণ, বর্ষার কাছে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ছিলো না।তার উপর তুৃমি ওকে যেখান থেকে পিক করেছো,সেখানেও কোনো সিসি ক্যামেরা ছিলো না।আর তাছাড়া তোমাদের মধ্যে কোনোরকম কন্ট্রাক্টও হয়নি।নাম্বার ট্র্যাক থেকে শুরু করে কল লিস্ট চেক করলেও পুলিশ তোমাকে খুঁজে পাবে না,হাহাহা..কেয়া বাত হ্যায় নির্জন;জবরদস্ত।কিপ ইট আপ ডিয়ার।
এক কাজ করো, এখন তোমার ব্রিলিয়ান্ট মস্তিষ্ক দিয়ে,ওর অশুভ প্রেতাত্মার জন্য ঝটপট একটি কবিতা বানিয়ে ফেলো।যেহেতু প্রতিটি মা**র্ডারের পর তোমার ভয়ং**কর কবিতা লেখার শখ আছে;তাই এটার জন্যও বানিয়ে ফেলো।তবে যেহেতু এই লা**শের কোনো চিহ্ন নেই;তাই তুমি মুখে মুখে কবিতা আবৃত্তি করো।”
“অপরদিক থেকে পৈ**শাচিক হাসি দিয়ে ‘মন’ বলে উঠলো,
‘ওয়েট,আমি তোমায় হেল্প করছি নির্জন।কবিতাটির সাথে মেয়েটির বিশ্বাসঘাতকতা এবং ভয়ং**কর মৃ**ত্যুর বিষদ সাদৃশ্য থাকতে হবে।তবেই আবিষ্কার হবে পরিপূর্ণ হিং**স্র একটি কবিতা।”
“মন এবং হৃদয়ের ভূয়সী প্রশংসায় হিং**স্র হাসি ফুটে উঠলো নির্জনের মুখে।অকপটে বললো,
‘তোমরা সবসময় একটু বেশি বেশি বলো।আমি এতটাও ব্রিলিয়ান্ট নই।সবকিছুতেই তোমাদের সাহায্য লাগে।আমি তোমাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ।ওয়েট, আমাকে একটু ভাবতে দাও।যেহেতু মুখে আবৃত্তি করবো,তাই একটু থ্রিলার হতে হবে।’
বলেই কালো মেঘে আচ্ছন্ন আকাশের দিকে তাকিয়ে, চিবুকে হাত রেখে ৫মিনিট ভাবলো নির্জন।অতঃপর সেই তপ্ত বালিগুলো আবারও হাতের মুঠোয় নিয়ে ধীরে ধীরে মুঠো খুলে,একটু একটু করে বালি ফেলতে ফেলতে গম্ভীর স্বরে কবিতা আওড়ালো,
“বিশ্বাসঘাতকতার অন্ধকার উন্মোচন”
বিশ্বাসঘাতকতার তীর, ধ্বং**সের এক শকুন,
নির্জনের প্রতিশোধের জোয়ারে,
অন্ধকারের ভ**য়াবহ গাঁথা গুণ।
ভেজানো প্রতিটি পদে, বিষের অমৃত ঝরেছে,
মৃ**ত্যুর সুগন্ধি সঞ্চারিত হয়েছে,
যন্ত্রণার দহন তীব্র বাড়িয়েছে।
অগ্নির গ**র্জনে, ত্বক ও হাড়ের পুড়ন্ত ডালা,
আগুনের তাপে ঝলসে ওঠা, প্রাণের শেষ চিৎকারের খেলা।
ফ্লুরো এসিডের ধারায়, পুরো দেহ দ্রবীভূত হয়ে গেলো,
র**ক্তের চিহ্ন গলে গিয়ে, বালির সাথে মিশে গেলো।
বিশ্বাসঘাতকতার ছায়ায়, ভ**য়াবহ এক র**ক্তপাতের গান,
নির্জনের প্রতিশোধের রাজ্যে, অন্ধকারের করুণ কাঁপন দান।
শরীরের চিহ্ন মুছে গেলো, কেবলই ভ**য়াবহতা রয়ে গেলো,
অত্যাচারের গুহায় লুকিয়ে, মৃ**ত্যু আর কষ্ট শুধুই অবশিষ্ট হয়ে রইলো।”
~মেহের~
“অত্যন্ত তৃপ্তি নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করে বালিগুলো মুঠো থেকে পুরোপুরি ফেলে দিয়ে,মেকি স্বরে
‘বিদায় ডাইনী’ বলে, বক্সটি নিয়ে চলে গেলো নির্জন।”
“গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটে বসতেই,পাশের সিটে তাকিয়ে প্রবল ঘৃণায় চোখ-মুখ কুঁচকে গেলো নির্জনের।
কপালে চার আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললো,
‘ছিহ!এই ডাস্টবিনের ছোঁয়া লেগে আছে আমার পাশের সিটে!তাও আবার খাবারের তেল এবং ওর হাত কা**টা র**ক্ত!ছিহ!’
ইম্পসিবল,এখন গাড়ি কিছুতেই চলবে না।আগে গাড়ির সিট ভালো করে পবিত্র করতে হবে।তারপর গাড়ি চলবে।এই গাড়ির ড্রাইভিং সিট থেকে শুরু করে,ব্যাকসিট,ডিকি সহ সবজায়গায় বসার অধিকার শুধু আমার ডার্ক কুইনের।’
বলেই গেট খুলে বাইরে গিয়ে,গাড়ির ডিকি থেকে সিট পরিষ্কার করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি আনল।”
“নির্জন যেহেতু একজন খুবই হিং*সুটে ব্যক্তি, তাই তার নিজের জিনিসের প্রতি সংবেদনশীলতা অসাধারণ। সে সিটটি কে পরিষ্কার করার জন্য কিছু শক্তিশালী কেমিক্যাল ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিলো।”
“প্রথমে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড
(Hydrogen Peroxide)ব্যবহার করলো।হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড জীবাণু ধ্বংস করার জন্য পরিচিত। এটি বিভিন্ন জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া মে**রে ফেলে, যার ফলে সিট টি জীবাণুমুক্ত হয়।নির্জন হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড সিটের উপরে স্প্রে করে ৫-১০ মিনিট অপেক্ষা করলো। এটি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস ধ্বংস করে।”
“তারপর ব্লিচ (Bleach) ব্যবহার করলো।ব্লিচ জীবাণুনাশক হিসেবে খুবই কার্যকর। এটি শক্তিশালী এবং সমস্ত ধরনের জীবাণু ধ্বংস করতে সক্ষম।
নির্জন ব্লিচ মিশ্রিত পানি সিটে স্প্রে করে এবং নরম কাপড় দিয়ে সিটটি মুছে নেয়। এতে সিটের সকল নোং**রা এবং জীবাণু পরিষ্কার হয়ে যায়।”
“অঃতপর অ্যামোনিয়া(Ammonia) ব্যবহার করলো।অ্যামোনিয়া সিটের উপরে জমে থাকা তৈলাক্ত বা ফ্যাটি দাগ দূর করতে সহায়ক।
অ্যামোনিয়া ব্যবহার করার সময় গ্লাভস পরা জরুরি, কারণ এটি ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
যেহেতু নির্জন আগে থেকেই সেফটি গ্লাভস পরা ছিলো।তাই সে নির্দ্বিধায় অ্যামোনিয়া মিশ্রিত পানি দিয়ে সিটটি স্প্রে করলো,তারপর তেলের দাগ দূর করার জন্য শক্ত ব্রাশ দিয়ে জোরে জোরে ঘঁষলো।মনে হচ্ছে, সে এখন এই সিটের ওপর তার ভয়ং**কর হিং**স্রতা ফলাচ্ছে।”
“তারপর ভিনেগার(Vinegar) ব্যবহার করলো।এটি প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক এবং দুর্গন্ধ দূর করতে সহায়ক।
নির্জন ভিনেগার মিশ্রিত পানি সিটের ওপর স্প্রে করে,১০মিনিট রেখে দেয়।তারপর নরম কাপড় দিয়ে সিটটি নিখুঁত ভাবে মুছে দেয়।”
“তারপর ‘এনজাইম ক্লিনার'(Enzyme Cleaner) ব্যবহার করলো।এনজাইম ক্লিনার প্রোটিন ভিত্তিক দাগ এবং জৈবিক ময়লা পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত হয়।
নির্জন এটি সিটের ওপর রেখে স্প্রে করে ১ঘন্টা রেখে দিলো।ততক্ষণ সে বাইরে নদী থেকে ধেয়ে আসা বাতাসের সুরের সাথে তাল মিলিয়ে,ফুরফুরে মনে এক সময়ের জনপ্রিয় একটি গান গাইলো।
🎶’বাতাসে কান পেতে থাকি,
এই বুঝি ডাকছো তুমি,
আকাশে চোখ মেলে থাকি
এই বুঝি পাঠালে চিঠি..
একবার বলি বারবার বলি
বলি চির লক্ষ বার।
তুমি আমার প্রিয়তমা, তুমি যে আমার..🎶
তারপর ড্রাইভিং সিটে বসে,পাশের সিট টি নরম কাপড় দিয়ে ভালো করে মুছে,রহস্যময় হাসি দিয়ে রাত ৩টা ৫৩মিনিটে গাড়ি স্টার্ট দিলো।”
———–
“ঘূর্ণায়মান তমসাচ্ছন্ন রাত পেরিয়ে কিছুক্ষণ পর সূর্যের আলো ফুটবে..ফুটবে ভাব।এমন সময় বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে থাকা সুশ্রী মানবী টি এক ভয়ং**কর স্বপ্নের জগতে পা রাখলো।যেটা ছিলো তার জন্য আগত বিপদের পূর্বাভাস।”
“ঘুটঘুটে অন্ধকারে অর্ধ-নগ্ন অবস্থায় দুই হাঁটু এক করে, তার ওপর ঘাড় কাত করে,মুখমন্ডল রেখে বসে আছে নারীটি।পরনের কালো শাড়িটি অনেক আগেই শরীর থেকে খুলে,পু*ড়ে ফেলা হয়েছে।তার সামনেই দাউ-দাউ করে আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলে উঠছে।আগুনের র**ক্তিম আভা এবং তীব্র তাপের দহনে নারীটির অর্ধ-নগ্ন শরীর যেনো অগ্নি লাভায় জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠছে।নাসারন্ধ্র থেকে ভারী নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসছে।কপাল থেকে শুরু করে, দরদর করে ঘাম গুলো গলা বেয়ে পড়ছে।”
“সেদিকে হিং**স্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, কালো সানগ্লাস এবং কালো মাস্ক পড়া বলিষ্ঠ দেহি পুরুষটি হো হো করে তৃপ্তির হাসি হেসে উঠলো।অতঃপর কুচকুচে কালো রুমালটি দিয়ে প্রেয়সীর গলার নিচে গড়িয়ে পড়া ঘাম মুছে দিয়ে,হাস্কি ভয়েসে বললো,
‘উহুম..নো নো নো..এই ঘাম কখনোই তোমার বক্ষে পৌঁছাতে পারবে না।আমি বেঁচে থাকতে সেটা অসম্ভব।ওই পবিত্র জায়গাটা শুধু আমার জন্য বরাদ্দ থাকবে।আমার ভালোবাসার বিস্তার ঘটবে তোমার সাম্রাজ্যে।
এই দেখো.. দেখো..তোমার ঘামগুলো কে এই কালো রুমাল টা কেমন ভাবে ছুঁয়ে দিলো।কত বড় সাহস দেখেছো?না না..এটাকেও শাস্তি পেতে হবে।ভয়ং**কর শাস্তি পেতে হবে।আমার জানপাখি কে কেনো ছুঁয়ে দিবে ওওও..?’
বলেই রুমালটি হাত দিয়ে ইচ্ছেমতো কঁচলে, দলা পাকিয়ে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করে,উচ্চশব্দে হো হো করে হেসে উঠলো।”
“সুচতুর পুরুষটির এহেন কান্ডে নারীটির প্রাণ যায় যায় অবস্থা।কারণ, কিছুক্ষণ আগেই তার শরীরের ইঞ্চি ইঞ্চি জায়গায় পুরুষালি স্পর্শের ধা***রালো ছাপ ফেলেছে সে।বলিষ্ঠ মানবের হিং**স্র আ**ক্রমণের তুৃমুল বর্ষণে কিয়ৎক্ষণ আগে জ্ঞান হারিয়েছিলো চঞ্চলা,সুহাসিনী নারীটি।
একেই তো বলে ‘ডার্ক রোমান্স।’যেটা সম্পূর্ণ অনিচ্ছায় হয়।’
কিয়ৎক্ষণ পূর্বের কথা ভেবে, আতং**কে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো মানবী।”
“চোখের নোনা জল ছেড়ে দিয়ে,করুণ স্বরে,মৃদু আর্তনাদ করে, হাত জোর করে বললো,
‘আমাকে ছেড়ে দিন।আমি আর আপনার কাছে থাকব না।দরকার হলে আপনি আমায় কোনো গুপ্ত গুহায় রেখে আসুন।সেখানে না হয়, বন্য পশুদের সাথে জীবন-যাপন করবো।তবুও আপনার সাথে থাকব না..প্লিজ।”
“হিং**স্র থেকে হিং**স্র হয়ে উঠলো পুরুষটি।তার শক্ত হাতের ছোঁয়া দিয়ে নারীটির কোমর চেপে ধরে কাছে টেনে,কোমরে ৫আঙ্গুলের ৫টি ধা**রালো নখের আঁচড় বসিয়ে দিয়ে বললো,
‘হিসসস..চুপ…একদম চুপ।একটুও চেঁচামেচি করবি না।ওহ! সরি..চেঁচামেচি করবে না।তাহলে একটু আগে যা হয়েছিলো,সেটা আবারও রিপিট হবে।ইউ নো ডার্লিং..অনেক দিন পর আমি কিন্তুু বেশ মজা পেয়েছি।তোমার উত্তেজনাপূর্ন তীব্র চি**ৎকার,আমার পিঠে তোমার সূচালো নখের আঁচড়,তোমার সর্বাঙ্গে আমার ধা**রালো দন্তগুলোর ডার্ক বা**ইট, সব মিলিয়ে এক রহস্যময়,ভয়ং**কর,রোমাঞ্চকর অনুভূতি।
আ’ম সো লাকি জানপাখি উম্মা..”
বলেই গভীর চুম্বন এঁকে দিলো ভীতু মানবীর কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে।এ চুম্বন যেনো স্বেচ্ছায় বিষপান করার মত অনুভূত হলো রমনীর নিকট।কারন, কিছুক্ষণ আগে তার ওষ্ঠদ্বয়ের ওপর বয়ে গেছে হিং**স্র ব্যক্তিটির দন্তগুলোর পৈ**শাচিক তান্ডব-লীলা।তার ভাষায় এটাকে বলা হয় ‘ডার্ক রোমান্স।”
“নারীটির কিঞ্চিৎ আর্তনাদে সরে গেলো পুরুষটি।কালো মাস্কের আড়ালে বিভৎ**স হাসি দিয়ে কিছুক্ষণ আগে সন্তর্পণে করে রাখা তপ্ত লোহার শিক টি নারীটির ক্লান্ত, মায়াবী মুখস্রির সামনে ধরে বললো,
‘দেখো জানপাখি,এটা হলো তোমার মৃ**ত্যুর অস্ত্র।আর আমি হলাম তোমার মৃ**ত্যু দূত।দারুণ তাই না?”
বলেই নারীটির কোমল চিবুক বৃদ্ধাঙ্গুল এবং তর্জনী দিয়ে জোরে চেপে ধরে আবার আওড়ালো,
‘তোমার মুখে যদি আবারও চলে যাওয়ার কথা শুনি,তাহলে এই গরম শিক তোমার বক্ষ বিভাজন ভেদ করে বের হবে।অতঃপর তোমার #হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ হবে।সেই র**ক্তের একেকটি ফোঁটা আমার আঁধার রাজ্যের চার দেয়ালে যত্ন করে লেপ্টে দিবো এবং সেগুলোতে প্রতিদিন অসংখ্য চুমুর বর্ষণ বইবে।যেমনটা একটু আগে তোমার সাথে করেছি জানপাখি।”
“আকস্মিক নারীটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে, নিমিষেই প্রতিবাদী রূপ ধারণ করে বললো,
‘আমি তোর এই অন্ধকার নৃ**শংস কারাগারে কখনোও বন্দিনী হয়ে থাকব না।এক্ষুনি চলে যাবো আমি।মে**রে দিবি তো?দেহ!মে**রে দে।তোর এই নরকমুখী যন্ত্রণা থেকে মৃ**ত্যু শ্রেয়।”
“নারীটি বলতেই,তার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরলো যুবকটি।পরিপূর্ণ ভাবে নিজের তৃষ্ণা মিটিয়ে ফিসফিস করে বললো,
‘তবে তাই হোক, মাই ডার্ক কুইন।ইউ আর অনলি,অনলি এন্ড অনলি মাইন..জানপাখি।’
বলেই সদ্য উত্তপ্ত আগুনে গরম করা লোহার শিকটি মানবীর বক্ষ বিভাজনে ঢুকিয়ে দিতেই,শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো নারীটির।”
“অতঃপর শোয়া থেকে উঠে বসে চি**ৎকার করে বলে উঠলো,
‘ না না না.. আমাকে মা**রবি না..আমাকে মা**রবি না..।”
“পাশ থেকে ধরফরিয়ে উঠে বসলো তোহা।সুইচ অন করে ঘর আলোকিত করলো।নিধির এলোমেলো চুলে জড়ানো ভ**য়ার্ত মুখস্রি দেখে,শুকনো ঢোক গিলে বললো,
‘আপু কি হয়েছে?আবার কি কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছো?”
“ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে কয়েক সেকেন্ড চোখ জোড়া বন্ধ করলো নিধি।পরক্ষণেই চোখ জোড়া খুলে তোহার দিকে ভ**য়ার্ত দৃষ্টি ফেলে বললো,
‘নির্জন..নির্জন হবে।হ্যা,ওটা নির্জন হবে।আমাকে ডার্ক কুইন বলে ডেকেছিলো।’
বলেই চোখের কোণায় ভীর হয়ে থাকা নোনা জলগুলোকে চোখ বন্ধ করে, আবারও ভেতরে নিয়ে গেলো।শুকনো ঢোক গিলে আবারও বললো,
“তোহা, সেদিন নির্জন কে নিয়ে একটা ভয়ং**কর স্বপ্ন দেখেছিলাম;আর আজও তাই দেখেছি।কিন্তুু স্বপ্ন দু’টির মধ্যে পার্থক্য হলো,
প্রথম স্বপ্নে আমি নির্জন কে কা**টা গাছের ওপর ধা**ক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম।আর আজকের স্বপ্নে নির্জন আমাকে উত্তপ্ত লোহার শিক দিয়ে কি বিভ**ৎস ভাবে..
আর বলতে পারলো না নিধি।তার পূর্বে অক্ষিদ্বয় ভেদ করে নোনা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।সত্যি খুব পেয়েছে সে।
এক পর্যায়ে হেঁচকি তুলে কান্না করে বললো,
‘জানিস, স্বপ্নের মধ্যে নির্জনের দেওয়া প্রতিটি আ**ঘাত মনে হয় আমি সূক্ষ্ম ভাবে অনুভব করছিলাম।”
“নিধির স্বপ্নের বিবরণ এবং কান্না দেখে, মুহূর্তেই তোহার ঘুম উড়ে গেলো।বিছানা থেকে নেমে, টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি এনে নিধির দিকে এগিয়ে বললো,
‘আপু পানিটুকু খেয়ে নাও প্লিজ।আর এইরকম অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে কান্না করো না প্লিজ।আমিও তো আমার ডাক্তার সাহেব কে নিয়ে কতরকমের স্বপ্ন দেখি।যদিও সেগুলো অন্যরকম,রোমান্টিক।’
বলে নিচের দিকে দৃষ্টি রাখলো তোহা।
পরক্ষণে,নিধির পিঠে আলতো করে হাত বুলিয়ে বললো,
‘সব স্বপ্ন সত্যি হয় না।তোমাকে তো বলেছি,ইবলিশের খালাতো ভাই তোমাদের দু’জনের সুমধুর ভালোবাসা সহ্য করতে পারে না।তাই তোমাকে এমন উদ্ভট স্বপ্ন দেখায়,যেগুলো তুমি কল্পনাও করো না।”
“তোহার কথায় মন ভরলো না নিধির।বিষন্ন মনে তাকিয়ে বললো,
‘সে আমাকে ফোন দেয় না কেনো রে?এই দেখ, আমি তার জন্য ফোন ফুল ভলিউমে দিয়ে রেখেছি।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তোহা।তাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি।সে যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায় তখন কি হবে?”
“এইবার রেগে গেলো তোহা।কটমটিয়ে বললো,
‘আপু তুমি তো খুব স্ট্রং মেয়ে।নির্জন ভাইয়া মাত্র দুই দিন ফোন না দেওয়াতে, এতটা ভে**ঙে পড়লে কিভাবে হবে?হতে পারে, ভাইয়া তোমার ভালোবাসা এবং ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে।সেতো সবার থেকে আলাদা।তার বুদ্ধি গুলোও ইউনিক।অতীতের কাহিনী গুলো কি ভুলে গেছো?”
“তোহার কথায় কিছুটা স্বস্তি পেলো নিধি।ওড়না দিয়ে চোখের পানি এবং মুখের ঘাম মুছে ওয়াশরুমে চলে গেলো।তারপর দুই বোন ফজরের নামাজ পড়লো।
নামাজ পড়ে নিধি আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করলো।কিন্তুু ঘুমাতে পারলো না তোহা।কারণ,সামনে তার পরীক্ষা।তাই সে টেবিলে বসে বইয়ের পাতায় মুখ গুজলো।”
“মাহিরের সাথে দুষ্টু-মিষ্টি প্রেম এবং পরীক্ষার টেনশনে সবকিছু কেমন গুলিয়ে গেছে তোহার।সারাবছর ঘুম না আসলেও,পরীক্ষার সময় পৃথিবীর সব ঘুম পাখিরা চোখের মধ্যে এসে হাজির হয়।তোহা একেকটা প্রশ্নের উত্তর পড়ছে,আর ঘুমের কারণে টলছে।এক পর্যায়ে তোহা পড়তে শুরু করলো,
“নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার স্ত্রীর নাম কি?
*উত্তরঃ স্বপ্নচারিনী..
এমন ভাবে ২-৩বার একই উত্তর বলতে থাকল।
তোহার গুণ গুণ করে বারবার একই কথা বলার কারণে ঘুম উবে গেলো নিধির।পেছনে ফিরে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে বললো,
‘ওই তুই এগুলো কি পড়ছিস?উল্টাপাল্টা কিছু খেয়েছিস নাকি?’
নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার স্ত্রীর নাম স্বপ্নচারিনী নয়।তার নাম লুতফুন্নেসা।হায়!কপাল কি দিন এলো!”
“নিধির এহেন কথায় চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেলো তোহার।সত্যি তো, কিছুক্ষণ আগে কি পড়ছিলো সে!সত্যি এই ডাক্তার সাহেব বারবার ‘স্বপ্নচারিনী’ বলতে বলতে মাথাটা গিলে খেয়েছে।’
ভেবে লাজুক হাসলো তোহা।নিধির কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে সঠিক উত্তর পড়তে থাকল।
ছোট বোন কে লজ্জা পেতে দেখে, নিধিও মুচকি হেসে আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করলো।এক সময় ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো।”
——-
“সকাল ১০টায় তোহার কাছে মাহিরের ফোন এলো।মাহিরের ফোন পেয়ে বরাবরের মতো খুব খুশি হলো তোহা।মুচকি হেসে ফোন রিসিভ করতেই,অপরপাশ থেকে ঘুম ঘুম চোখে মাহির বললো,
‘প্রিয় স্বপ্নচারিনী, কেমন আছো তুমি?’
“হুম খুব ভালো আছি।নাইট ডিউটি করে কখন
ঘুমিয়েছেন?”
“উমম..সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘুমিয়েছি।তোমাকে নিয়ে একটা দুষ্টু-মিষ্টি রোমান্টিক স্বপ্ন দেখছিলাম।যখনই ফাইনাল রাউন্ডে পৌঁছাবো, তখনই আমার ঘুম ভে**ঙে গেলো।মন টাই খারাপ হয়ে গেলো!যখন দেখলাম কিছুই হয়নি।”
“মাহিরের এহেন কথা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হলো তোহার।যখন বুঝলো,তখন হাসবে না লজ্জায় মুখ লুকাবে ভেবে পেলো না।অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,
‘নির্লজ্জ, ঠোঁট কা**টা,বেহায়া পুরুষ।”
“তোহার ভাবনায় জল ঢেলে দিয়ে, মাহির ঘুম ঘুৃৃৃম চোখে ফিসফিস করে বললো,
‘জানো স্বপ্নচারিনী,আমাদের যখন বাসর হবে,তার আগে তোমাকে আমি একটা রোমান্টিক কবিতা শোনাবো।তারপর আমরা রোমান্স করবো।আমি কবিতা টা লিখে রেখেছি।”
“কবিতার কথা শুনে এক্সাইটেড হয়ে গেলো তোহা।উত্তেজিত স্বরে বললো,
‘কি কবিতা লিখেছেন?প্লিজ,প্লিজ বলুন।আমার এখনই শুনতে ইচ্ছে করছে।”
“মাহির কম্ফোর্টারের নিচে গিয়ে মুচকি হেসে বললো,
‘এখন বললে তো আসল মজাটাই থাকবে না।বাসর রাতে বললে বেস্ট ফিলিংস পাবে।”
“তোহা এইবার মেকি স্বরে বললো,
‘না না..প্লিজ এখনই বলুন।আমার এখনই শুনতে ইচ্ছে করছে প্লিইজ।”
“আড়মোড়া দিয়ে মাহির বললো,
‘ওকে,তবে একটা শর্ত আছে।কবিতা শোনার পর ফোন রেখে দিতে পারবে না।”
“তোহার মাথায় এখন কবিতা শোনার ভূত চেপেছে।তাই দ্রুত গতিতে বললো,
‘নাহ!একদমই ফোন কা**টবো না।আপনি বলুন।”
“মাহির কন্ঠ খাদে নামিয়ে মৃদুস্বরে বললো,
“অভিসার”
তোমার ঠোঁটে ঠোঁট মেলালে,
দগ্ধ অগ্নি ছড়িয়ে যায়,
প্রেমের উন্মাদনা বাড়িয়ে,
আমার হৃদয় তেজে ভেসে যায়।
তোমার শরীরের প্রতিটি রেখায়,
একটি বায়ু তরঙ্গ ঘোরে,
চুম্বনের মধুর উত্তাপে,
অন্ধকার রাত কাঁপে-ওড়ে।
প্রতি স্পর্শে, প্রতি চুৃম্বনে,
যেনো আগুনের মতো জ্বলে,
ভালোবাসার এই গাঢ় তাপ,
আমাদের রাতকে সঙ্গীতিত করে তোলে।”
~মেহের~
“শেষ..তোমার জন্য মনের প্রগাঢ় অনুভূতি দিয়ে এই কবিতা আমি লিখেছি।তোমার ঠোঁটে আমার গাঢ় চুম্বন এঁকে দেওয়ার পর ভেবেছিলাম এটা আবৃত্তি করে শোনাবো।এতে করে তুৃমি আরও হটি-নটি হয়ে যাবে।কিন্তুু তোমার তো দেখি একদমই তর সইলো না।”
“মাহিরের রোমান্টিক কবিতা শুনে তোহা আগেই লজ্জায় কুপোকাত।তার ওপর এই টাইপের বেহায়া মার্কা কথা শুনে, বেচারি আর কথা রাখতে পারলো না।টুট টুট..করে ফোন কে**টে দিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে ভাবলো,
‘কোন দুঃখে যে কবিতা শুনতে চেয়েছিলাম।যাহ!আর চাইবো না।আমার শিক্ষা হয়ে গেছে।’
ভেবে বুকে হাত রেখে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেললো তোহা।”
“অপরদিকে তোহা এভাবে ফোন রেখে দেওয়ায় ফিচেল হাসলো মাহির।শরীর থেকে কম্ফোর্টার সরিয়ে ফোনের গ্যালারিতে গিয়ে তোহার মুচকি হাসিমাখা ছবিতে হাত বুলিয়ে বললো,
‘এখন না হয় ফোন রেখে দিলে,সামনা-সামনি তো এগুলোর সুযোগ পাবে না তোহা রানী।তার আগেই তো ফাইনাল রাউন্ড শুরু হয়ে যাবে।’
ভেবে বাঁকা হাসলো মাহির।”
—–
“দুপুরের দিকে দিগন্ত অফিস থেকে বাসায় এসে,সরাসরি রুমে ঢুকতেই দেখলো,নাদিয়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে।তার পুরো মুখস্রিতে বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা লেগে আছে।সেগুলো আবার গড়িয়ে গলার কাছে নেমে এসেছে।দিগন্ত কে রুমে দেখে,মুচকি হাসলো নাদিয়া।খুশি হয়ে কিছু বলতে যাবে,তখনই দিগন্ত টাই টা খুলে মুচকি হেসে নাদিয়ার কাছে গিয়ে, কোমরে হাত দিয়ে কাছে টেনে গাইলো,
🎶Thodi Fursat Bhi Meri Jaan,
Kabhi Baahon Ko Dijiye,
Aaj Ki Raat Maza Husn Ka,
Aankhon Se Lijiye…🎶
“দিগন্তের গান শুনে নাদিয়ার হাসি মুখ টা মুহূর্তেই চুপসে গেলো।কটমটিয়ে বললো,
‘এই তুমি এই গান কোথা থেকে শিখলে?”
“ইশশ!ন্যাকা..কিছু বোঝে না।এই গানের যন্ত্রণায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুকতে পারি না।আর তুমি আসছো প্রশ্ন করতে।এই গানটা তো তোমার গাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তুু তুমি তো নিরামিষ,তাই আমি গেয়ে দিলাম।এখন শাওয়ার নেওয়ার আগে কিছুতো করবোই।”
“অ্যা?একদম নয়।আমার এখনই নিচে যেতে হবে।আজ আমি মায়ের সাথে রান্না করছি।মা আমাকে অন্য শাড়ি পড়া দেখলে,ঠিক অন্য কিছু ভাববে।এখন নয়, রাতে।”
“দিগন্ত ভ্রূকুটি করে বললো,
‘উফফ!তুমি শুধু ঢ্যাং ঢ্যাং করে বড় হয়েছো।তোমার বুদ্ধি এখনও হাঁটুর নিচে।শোনো তোমাকে ফ্রীতে একটা রোমান্টিক বুদ্ধি দেই।
‘তুমি কাভার্ড খুলে দেখো,তোমার জন্য একই রঙের শাড়ি দু’টো করে কিনেছি।এখন এটা পড়ে শাওয়ার নিয়ে,হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে, একই রঙের আরেকটা শাড়ি পড়বে।ব্যাস,কেউ কিচ্ছুটি বুঝবে না।বুদ্ধি টা দারুণ,তাই না হানি?”
“দিগন্তের বুদ্ধির কথা শুনে মুখ হা হয়ে গেলো নাদিয়ার। পিটপিট করে তাকিয়ে বললো,
‘এত বুদ্ধি তোমার মাথায় কিভাবে এলো?এর মানে আগে এক্সপেরিয়েন্স আছে,তাই তো?”
‘এই.. এই একদম নয়।আমি তো রোমান্টিক বই পড়ে এগুলো শিখেছি।আর বাকিটা নির্জন বলেছে।ও আবার এগুলো বেশি শোনে।’
“কি?আমি বিশ্বাস করি না।”
“হকচকিয়ে গেলো দিগন্ত।মৃদু হেসে বললো,
‘আসলে হানি,ঐ যে দৈনিক দিগন্ত পত্রিকা আছে না?
ঐ পত্রিকা পড়েও জেনেছি, হিহিহি।”
“নাদিয়ে কোমরে আঁচল গুজে ঝগড়ুটে সুরে বললো,
“দিগন্ত পত্রিকায় তোমার এই লু**চু কাহিনী লিখে তাই না?আমাকে কি বোকা পেয়েছো,হ্যা?সত্যি করে বলো,কোথা থেকে শিখেছো?”
“একি! এমন একজন লয়াল স্বামীকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া একদম অনুচিত।’
বলেই বিছানা থেকে তোয়ালে আর ট্রাউজার হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের কাছে যেতে যেতে বললো,
‘আচ্ছা, কোমরে এভাবে আঁচল গুজে রাখায় তোমাকে এই মুহূর্তে কার মতো লাগছে জানো?'(কথা ঘুরানোর জন্য)
” কার মতো লাগছে?”
“দিগন্ত নাদিয়া কে একবার আপাদমস্তক দেখে,গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বললো,
‘ন..ন..নোরা ফাতেহির মতো লাগছে।’
বলতে দেরি,ওয়াশরুমের ভেতর ঢুকে দরজা আটকাতে দেরি নেই।”
“দিগন্তের এহেন কান্ডে বোকা বনে গেলো নাদিয়া।ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিজেকে ঘুরে ঘুরে কয়েকবার দেখে আনমনে বলে উঠলো,
“শেষ পর্যন্ত নোরা ফাতেহির সাথে তুলনা করলো?”
———-
“রাত ৯টা।টানা ৩২ মিনিট যাবৎ কান্নারত কন্ঠে একাধারে কথা বলে যাচ্ছে নিধি।অপরপাশ থেকে ফোন লাউডস্পিকারে দিয়ে, নিধির সব অভিমানী কথা ধৈর্যের সহিত শুনছে নির্জন।আর মাঝে মাঝে নীরবে ডেভিল হাসছে।”
“নিধি অভিমানী স্বরে বললো,
‘আপনি এতটা নিষ্ঠুর কিভাবে হলেন?জানেন, আপনাকে ফোনে না পেয়ে আমার কি অবস্থা হয়েছিলো?”
“উফফ!এই নিয়ে তোমাকে ১৭বার বুঝিয়ে বললাম যে,আমার বাটন ফোন টা কিছুদিন আগে পানিতে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়, আর অ্যান্ড্রয়েড ফোন টা সেদিন রাতে ফ্লোরে পড়ে ভে**ঙে গেছিলো।আমি সার্ভিসিং করিয়ে এনেছি।তাছাড়া অন্যের ফোন ধরা বা তাদের থেকে ধার চেয়ে ফোন করা আমার অপছন্দ।ওকে, নেক্সট টাইম থেকে এমন হবে না ডার্ক কুইন। এইবারের মতো ক্ষমা করো জান পাখি।”
“এই নিয়ে অসংখ্য বার দু’জনের মধ্যে একই কথপোকথন হয়ে গেছে।অবশেষে মন গললো নিধির।হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে বললো,
‘হুম নেক্সট টাইম আমার জন্য হলেও,ধার করে ফোন দিবেন।নইলে আমি ভীষণ রাগ করবো।তাছাড়া বিয়ের পর আপনি তো সারাদিন অফিসে থাকবেন।তখন আমার সময় কা**টবে কিভাবে ভেবে দেখেছেন?”
“তুৃৃৃমি চাইলে,আমি হোম অফিস করবো।সারাক্ষণ তোমায় সঙ্গ দিবো।তখন কিন্তুু বিরক্ত হতে পারবে না।”
“নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘উহুম.. একটুও বিরক্ত হবো না।আপনি তো আমার সব।আপনি কাছে থাকলে সেই সময় গুলো আমার খুব ভালো কা**টবে,আমি জানি।তবে আজ আপনাকে নিয়ে খুব খারাপ স্বপ্ন দেখেছি।”
‘কি স্বপ্ন দেখেছো, জানপাখি?’
“নিধি পুরো স্বপ্ন টা নির্জনের কাছে বলতেই,অপরপাশ থেকে ফোন মিউট করে বাঁকা হাসি দিলো নির্জন।ভেতর থেকে ‘মন’ বলে উঠলো,
‘তোমার প্ল্যানগুলোর মধ্যে ৩নাম্বার টা দেখছি তার স্বপ্ন পর্যন্ত চলে গেছে.. হাহাহাহা।”
“মনের সাথে আর কথা বাড়ালো না নির্জন।মুচকি হেসে বললো,
‘দোয়া করবে,এই স্বপ্ন যেনো কখনো সত্যি না হয়।ওকে ডার্ক কুইন?’
‘হুমম।আচ্ছা,মা ডাকছে।তাহলে আমরা আগামীকাল রমনার বটমূলে দেখা করবো, ওকে?’
“হুমম, ওকে ডার্ক কুইন; গুড নাইট।লাভ ইউ আ লট জানপাখি।’
বলে ফোন রাখার আগে তপ্ত স্ক্রিনে গভীর ভাবে চুমু দিলো নির্জন।”
“নির্জনের এহেন চুমুতে নিধির মনে তো খুশি তে লাড্ডু ফুটছে।কট করে ফোনটা কে**টে দিয়ে, লাজুক হাসলো নিধি।ইশ!কি লজ্জা।সামনা-সামনি এগুলোর সম্মুখীন কিভাবে হবে?’
ভেবে আবারও লাজুক হাসলো।”
“অপরদিকে ফোনের স্ক্রিনে চুমু দেওয়ার পর,স্ক্রিনে ঠোঁটের ছাপ দেখে ভ্রুকুটি করে তাকালো নির্জন।কপালে চার আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বিড়বিড় করে বললো,
‘আমার ঠোঁটের উষ্ণ চুৃম্বন শুধু আমার ডার্ক কুইনের কোমল চামড়া পাবে।তুই গ্রহণ করলি কেনো?হ্যা?আনসার মি বা**স্টার্ড।”
#চলবে…
#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩০
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।]
“আমার ঠোঁটের উষ্ণ চুৃম্বন শুধু আমার ডার্ক কুইনের কোমল চামড়া পাবে।তুই গ্রহণ করলি কেনো?হ্যা?আনসার মি বা**স্টার্ড।”
“অপরপক্ষ থেকে কোনো প্রতিত্তোর এলো না।ক্ষেপে গেলো নির্জন।দুই হাত দিয়ে ফোনটা কে খুব জোরে চেপে ধরলো।নিধির সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলায়,ফোনের স্ক্রিন কিছুটা তপ্ত হয়ে গেছে।তার ওপর নির্জন এভাবে চেপে ধরায় ফোনের স্ক্রিনে তার হাত লেগে এলোমেলো ভাবে বিভিন্ন অ্যাপসে যেতে থাকল।এতে নির্জন আরও ক্ষেপে গেলো।
হিং**স্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ফোনের উদ্দেশ্যে ইংরেজি ভাষায় কয়েকটি গা**লি ছুঁড়ে দিলো,
‘You bloody screen stealer!’
‘Damn you, phone! Why do you have to get all the kisses?’
‘এই..উত্তর দিচ্ছিস না কেনো?
তোকে তো আজ শেষ করে ফেলবো রে..’
‘You attention-grabbing piece of junk!’
‘Stupid screen, get out of my way!’
‘You freaking phone, stealing my moments!”
‘কিরে কোনো উত্তর নেই কেনো? ইডিয়ট!’
“অপেক্ষা কর,তোর ব্যবস্থা করছি,বলেই পৈ**শাচিক হাসি দিলো নির্জন।ভেতর থেকে ‘মন’ বলে উঠলো,
‘এই ফোন টা ভীষণ অভদ্র।ও তোমার কোনো রেসপন্স করবে না।ও তোমার সবচেয়ে দামি জিনিস লুটে নিয়েছে।এই মুহূর্তে ওকে ছি**ন্ন-বিচ্ছি**ন্ন করে ফেলো।ওকে তোমার হিং**স্রতার আগুনে ভ”স্ম করে দাও।’
‘ভেতর থেকে ‘হৃদয়’ বলে উঠলো,
‘হুম, ওকে তোমার প্রিয় রুমটি তে নিয়ে গিয়ে স্পেশাল পানিশমেন্ট দাও।যেনো দ্বিতীয়বার এই সাহস না দেখায়।তবে একদম ইউনিক স্টাইলে।তোমার প্রতিটি খু**ন,প্রতিটি ধ্বংস সবকিছু ইউনিক হওয়া চাই।বুঝতে হবে,তুমি ছিলে তোমার ক্লাসে সায়েন্সের টপার।তো এই সম্মান টা তোমায় বজায় রাখতে হবে।বুঝতেই পেরেছো,আমি কি বোঝাতে চেয়েছি!”
“পৈ**শাচিক হাসি দিয়ে নির্জন বললো,
‘আমাকে এক কথা বারবার বোঝাতে হয় না।আমার ব্রেইন যথেষ্ট শার্প।আর সেগুলোর জন্য তোমাদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ।”
“ভেতর থেকে ‘মন’ বলে উঠলো,
‘সত্যি নির্জন, তোমার মতো ভালো মানুষ হয় না।সবসময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।প্রতিটি মানুষ যদি তাদের প্রয়োজনীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি এভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতো,তাহলে সেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলোও আনন্দে জাগ্রত হয়ে উঠতো।এনিওয়ে,অপারেশন শুরু করো।আমরা তোমার সাথে আছি।”
“নির্জন ফোনটা কে আরও জোরে চেপে ধরে, রুম থেকে বের হয়ে প্রথমে তার মায়ের রুমের দিকে গেলো।রুমের দরজা সবসময়ের মতো আজও বন্ধ আছে।কারণ, নির্জন সেবিকা কে আগেই বলে রেখেছে,সে বাসায় এলে তার মায়ের রুমের দরজা যেনো বন্ধ করে দেওয়া হয়।সেদিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,নির্জন তার প্রিয় ১নম্বর কক্ষটি খুলে প্রথমে মুচকি হাসি দিলো।অতঃপর পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো দেখে মুখ-মন্ডল মলিন হয়ে গেলো।এগুলো নির্জনের নিত্যদিনের অভ্যাস।”
“নির্জনের এই কক্ষটি যে কেউ দেখলে নিমিষেই বলবে,এটি একটি ভয়ং**কর,রহস্যময় ল্যাবরেটরি।যেখানে রয়েছে শুধু পৈ**শাচিক পন্থায় বিজ্ঞানের খেলা।গতরাতে এই রুম টিতে নির্জন ডায়নার সেই ‘বালি ভর্তি বক্স’ টেবিলের ওপর এক সাইডে রেখেছিলো।”
“নির্জনের এই রহস্যময় ল্যাবরেটরির ভেতরে আলো খুব কম, শুধুমাত্র কয়েকটি ডিমলাইট জ্বলছে। এই আলোতে সবকিছু রহস্যময় আর ভৌতিক দেখায়। দেয়ালের রং ওপরে গাঢ় ধূসর এবং নিচের দিকে কালো; যা পুরো পরিবেশকে আরও ভীতি,থমথমে এবং রহস্যময় করে তুলেছে।”
“রুমের এক কোণে আয়তাকৃতির বড় একটি টেবিলের ওপর বিভিন্ন ধরণের এসিড, বিষ, আর কেমিক্যাল ভর্তি কাচের জার ও বোতল সারি সারি করে রাখা আছে। কিছু বোতলের গায়ে লেবেল লাগানো—”হাইড্রোক্লোরিক এসিড”, “সালফিউরিক এসিড”, “আর্সেনিক” ইত্যাদি। আর কিছু বোতলে কোনো লেবেল নেই, যেনো সেখানে আরও ভয়ং**কর কিছু লুকিয়ে আছে।”
“নির্জনের যাবতীয় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি এখানে রাখা হয়।তাছাড়া সবচেয়ে ভ**য়ানক এবং পারফেক্ট মা**র্ডারের প্ল্যানগুলো এখানে বসেই ‘মন’ এবং ‘হৃদয়ের’ সাথে মিটিং এর মাধ্যমে সম্পন্ন করে।”
“নির্জন তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার আগে জানে, এই ধরনের ভয়ং**কর এবং বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রণের সঙ্গে কাজ করতে গেলে, তাকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। তাই, সে তার ল্যাবরেটরিতে ঢুকে বিশেষ সেফটি পোশাক পরে নিলো।”
“নির্জন প্রথমে তার শরীরে একটি বিশেষ ধরনের স্যুট পরে, যা কেমিক্যাল রেজিস্ট্যান্ট। এই স্যুটটি একটি শক্তিশালী প্লাস্টিক এবং সিন্থেটিক ফাইবার দিয়ে তৈরি, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক রাসায়নিক গুলোর সংস্পর্শ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারে। স্যুটটি তার পুরো শরীর ঢেকে রাখে, যেনো কোনোভাবেই এসিড বা বিষাক্ত বাষ্প তার চামড়ায় স্পর্শ করতে না পারে।”
“এরপর নির্জন তার হাতে হেভি-ডিউটি গ্লাভস পরে। গ্লাভসগুলো কেমিক্যাল রেজিস্ট্যান্ট রাবার দিয়ে তৈরি, যা হাইড্রোফ্লোরিক এসিড এবং সালফিউরিক এসিডের মতো বিপজ্জনক রাসায়নিকের থেকে তার হাতকে রক্ষা করে। গ্লাভসগুলি তার কব্জি পর্যন্ত ঢেকে রাখে, যাতে এসিড ছিটকে গেলেও তা তার হাতে পৌঁছাতে না পারে।”
“নির্জন তার মুখ এবং চোখকে রক্ষা করার জন্য একটি হেভি-ডিউটি গ্যাস মাস্ক পরে। এই মাস্কটি বিশেষ ধরনের ফিল্টার দিয়ে তৈরি, যা বিষাক্ত বাষ্প এবং ধোঁয়া থেকে তার শ্বাস-প্রশ্বাসকে সুরক্ষিত রাখে। তার চোখকে রক্ষা করার জন্য সে একটি কেমিক্যাল রেজিস্ট্যান্ট গগলস পরে, যা তাকে কোনো ধরনের কেমিক্যাল স্প্ল্যাশ বা ধোঁয়ার আ**ক্রমণ থেকে রক্ষা করে।”
“তারপর পায়ে এক জোড়া অ্যান্টি-স্লিপ বুট পরে, যা কেমিক্যাল রেজিস্ট্যান্ট এবং অত্যন্ত সুরক্ষিত। বুটগুলি তার পা এবং পায়ের আঙ্গুলগুলোকে কেমিক্যালের ছিটে পড়া বা ঝলসে যাওয়ার থেকে রক্ষা করে। বুটের বিশেষ সোল তাকে ল্যাবরেটরির মেঝেতে শক্তভাবে দাঁড়াতে সাহায্য করে, যেনো কোনোভাবে পা পিছলে গিয়ে বিপদের মুখোমুখি না হয়।”
“সবকিছু ঠিকঠাক করে পরার পর তার চোখে এক গভীর পা**গলামী, মুখে এক র**ক্তচক্ষু হাসির ছাপ ফুটে ওঠে। সে জানে, এই সেফটি পোশাক তাকে সকল বিপদ থেকে রক্ষা করবে, এবং তার পরিকল্পনা সফল হবে।তারপর নির্জন হাইড্রোফ্লোরিক এসিড (HF) ১০০ মিলিলিটার নিলো। ”
‘সালফিউরিক এসিড (H₂SO₄)- ব্যাটারি ধ্বংস করার জন্য ৫০ মিলিলিটার নিয়ে রাখল।’
‘অ্যাকোয়া রিজিয়া (Aqua Regia)- ধাতু গলানোর জন্য ৩০ মিলিলিটার এই মিশ্রণ নিলো।’
‘নাইট্রিক এসিড (HNO₃)-ফোনের সার্কিট পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য ২০ মিলিলিটার নিলো।’
‘ডাইমিথাইল সালফোক্সাইড (DMSO)- এসিড দ্রুত ছড়িয়ে দিতে ১০ মিলিলিটার নিলো।”
“নির্জন এই সমস্ত রাসায়নিক একত্রে মিশিয়ে এক বিষাক্ত মিশ্রণ তৈরি করতেই, তার চোখে তৃপ্তির ঝিলিক দেখা গেলো।সে মনে মনে বললো,
‘এই মিশ্রণই হবে আমার প্রতিশোধের একমাত্র হাতিয়ার।হাহাহাহা..”
‘পরিশেষে শুরু হলো ধ্বংসের তাণ্ডব।’
“নির্জন ফোনটিকে একটি কাচের বাক্সে রেখে দিয়ে, চারপাশে রাসায়নিক মিশ্রণ ঢেলে দেয়। ধীরে ধীরে এসিডের বাষ্প ট্যাংকের ভেতরে ভরাট হতে শুরু করে। ফোনের স্ক্রিন গলে যায়, ফোসকা পড়ে ওঠে। স্ক্রিনের কাচ ভে**ঙে পড়ে, যেনো কোনো রোগগ্রস্ত দেহের চামড়া খসে পড়ছে।”
‘তারপর হাইড্রোফ্লোরিক এসিড ফোনের ধাতব অংশগুলো গলিয়ে দেয়।’
‘নাইট্রিক অ্যাসিড সার্কিট বোর্ডকে জ্বালিয়ে দিয়ে সমস্ত বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ করে দেয়।’
‘অ্যাকোয়া রিজিয়া প্লাস্টিকের কেসিং গলিয়ে ফেলে।’
‘ডাইমিথাইল সালফোক্সাইডের প্রভাবে এসিড দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, পুরো ফোনকে এক বিষাক্ত গলিত পদার্থে পরিণত করে।”
“নির্জন তখন ফোনের ওপর রাসায়নিক ঢেলে দেয়ার পাশাপাশি, তার হাতে থাকা ছোট একটি হাতুড়ি দিয়ে ফোনের বাকি অংশগুলোকে টুকরো টুকরো করে ফেলে। তার হাতের প্রতিটি আ**ঘাতে ফোনের ধ্বংসপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। কাচের বাক্সের মধ্য থেকে গলিত ধাতব পদার্থ এবং প্লাস্টিকের টুকরো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার পা**গলামী মন তখন পূর্ণ তৃপ্তিতে ভরপুর।”
“পা**গলামী তৃপ্তি পেয়ে,মুচকি হেসে ‘মন’ কে বললো,
‘ ফোনটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। কেবল কিছু গলিত পদার্থ আর ধোঁয়া বাকি।হাহাহা..’
উচ্চস্বরে হেসে নির্জন তার মনের অস্থিরতা মিটিয়ে নেয়। সে জানে, তার ভালোবাসা কেবল তার ডার্ক কুইনের কাছেই থাকবে, কোন যন্ত্রে নয়। তার মাথায় এক ভয়ং**কর চিন্তা ঘুরতে থাকে—সে তার ভালোবাসাকে যেকোনো কিছুর জন্য রক্ষা করবে, এমনকি পুরো পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিয়ে হলেও।”
“নির্জনের এহেন কান্ডে ‘মন’ এবং ‘হৃদয়’ প্রচুর পরিমাণে বাহবা দিতে থাকে।মন বলে ওঠে,
‘এত ভালো একটি কাজ করলে,সেই খুশিতে এই গলিত ফোনের জন্য একটা ধামাকাদার পৈ**শাচিক এবং ভয়ং**কর কবিতা হয়ে যাক।”
“নির্জন ডেভিল হেসে বললো,
‘ওয়েট বেবস্।জাস্ট ৬ মিনিট ভাবতে দাও।”
“নির্জন কবিতার লাইন গুলো মনে মনে ভেবে, মুখে হিং**স্র হাসি ঝুলিয়ে আবৃত্তি শুরু করলো,
“প্রতিশোধের প্রলয়”
তুই চুরি করিস প্রেয়সীর চুমু,
আজ এসিডে তোর হবে প্রলয় ঘুমু,
তুই কেনো স্পর্শ করলি ওর ঠোঁট?
এখন ম**রবি তুই, গলবে তোর প্রতিটি ফোঁট।
তুই স্ক্রিনের শ**য়তান, তুই পাষাণ,
তোর জন্য আজ এসিডের আয়োজন,
তুই লোভী, তুই করিস প্রেমের ভান,
আজ তুই গলবি, দেখবি কেমন ম**রণযাত্রা প্রাণ।
তোর মুখ গলে যাবে এসিডের বিষে,
তুই দেখবি মৃ**ত্যু, তোর জীবন টা দিবো পিষে,
তুই কে যে তোর এত সাহস হলো?
আমার প্রেমের পথে আসবি,
তোর ধ্বংসগুলো হবে কল্পনায় ছলোছলো।
তুই তোর ছলনায় ছড়িয়ে দিস জ্বালা,
আজ তোর দেহ হবে আগুনে কাঁপা,
তোর প্রতিটি স্পর্শ, তোর প্রতিটি সংকুচিত নিঃশ্বাসে ফাঁপা,
তোর মৃ**ত্যুতে মন খুলে দিবো হাসি,
এসিডে গলিয়ে তুই পাবি তোর ফাঁসি।
তুই তৃষ্ণার্ত, তুই ম**রবি আজ,
তোর ঠোঁটের স্বাদ তুই ভুলে যা,
তুই কে যে, আমার ভালোবাসার চুমু খাবে,
তোর শেষ ঠোঁটের চুমু এসিডেই হবে।
আজ তুই আর প্রেয়সীর চুমু খেতে পারবি না,
তোর ছাই উড়ে যাবে বাতাসে, শূন্যে ভাসবে না,
তুই মিথ্যে প্রেমের সাগর, তোর ধোঁকা মিথ্যে,
তোর জন্য এসিড, তোর জন্য মরণভীত্রে। ”
~মেহের~
“কবিতা আবৃত্তি করে নির্জন ল্যাব থেকে বেরিয়ে আসে, তার চোখে এক অদ্ভুত উজ্জ্বলতা। তার পা**গলামী তাকে আরও অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে তার ভালোবাসা শুধুই তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ডার্ক কুইনের জন্য তার ভালোবাসা, তার পা**গলামী, সবকিছুই এখন আরও ভয়ং**কর, আরও তীব্র। নির্জন জানে, সে তার ভালোবাসার জন্য আরও অনেক কিছু করবে। তার মনোভাব, তার কাজ—সবই এখন এক ভয়ং**কর পথে পরিচালিত হচ্ছে।”
———-
“রাত সাড়ে ১০টায় খাওয়া-দাওয়া করে নাদিয়া নিজের রুমে গিয়ে শোয়ার প্রস্তুুতি নিচ্ছে।আজ সে বাবার বাড়ি আসতে পেরে ভীষণ খুশি।”
“বিকাল থেকে মন ভার করে মুখ গোমড়া করে রেখেছিলো নাদিয়া।নাদিয়ার মিষ্টি মুখ খানা মলিন দেখে, নাদিয়ার শাশুড়ি বুঝতে পারলেন,যে নাদিয়া তার বাবার বাড়ির জন্য মন খারাপ করেছে।বোঝাটাই স্বাভাবিক।কারণ, তিনিও তো নতুন পরিবেশে এসে একই ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন।প্রাণোচ্ছল মেয়েটি খুব কম সময়ে তার মনে জায়গা করে নিয়েছে।”
“সন্ধ্যায় দিগন্ত বাসায় ফিরলে,তিনি নাদিয়াকে নিয়ে ওর বাবার বাড়ি ঘুরে আসতে বললেন।যেহেতু রিমনের মৃ**ত্যুর কারণে রিসিপশন ক্যান্সেল হয়ে গেছে,তাই মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
মায়ের কথা মতো দিগন্ত সন্ধ্যায় নাদিয়াকে নিয়ে ওর বাবার বাড়ি যায়।”
“শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে রাত পর্যন্ত ভদ্রতার সহিত কথপোকথন করে,নাদিয়াকে নিয়ে রুমে যেতেই দিগন্তের মুখ-মন্ডল চুপসে যায়।নাদিয়া যখনই ঘুমানোর প্রস্তুুতি নিবে,তখনই দিগন্ত ওর হাত টেনে কাছে এসে বললো,
“আমি এই সিঙ্গেল বেডে কিভাবে ঘুমাবো?”
“নাদিয়া বিষয়টি বুঝতে পেরে বললো,
‘ঠিক আছে চলো,গেস্ট রুমে যাই।সেখানে দু’জনে আরাম করে ঘুমাতে পারবো।”
“দিগন্ত হিং**সুটে স্বরে বললো,
‘মোটেও না।ওই রুমে ব্রিটিশ ইহান এবং তোমার ফুফু ঘুমিয়েছিলো।সেখানে আমি কখনোই ঘুমাবো না।”
“এইবার রেগে গেলো নাদিয়া।কটমটিয়ে বললো,
‘ওকে, তাহলে তুমি ড্রয়িং রুমে ঘুমাও।আমার এখন খুব ঘুম পাচ্ছে।তোমার সাথে বকবক করার সময় নাই।আর মনে রেখো, এটা আমার বাবার বাড়ি।তুমি বলবে,আর আমি গিলবো,এটা অসম্ভব।”
“দিগন্ত এইবার নাদিয়ার হাত আরও জোরে চেপে ধরে কাছে টেনে বললো,
‘তুমি তো নিরামিষভোজী নারী।তোমার ফিলিংস না থাকলেও, আমার অনেক আছে।নতুন বিয়ে করেছি কি ড্রয়িং রুমে শুয়ে মশা মা**রার জন্য?আর মনে রেখো, এটা আমারও শ্বশুর বাড়ি।তোমাকে এখান থেকে কোলে তুলে নিয়ে যাওয়ার অধিকার আমার আছে।তবে একটা শর্তে ড্রয়িং রুমে শুতে পারি।”
‘কি শর্ত?’
“প্রথমে তুমি সোফার ওপর টান টান হয়ে শুয়ে পড়বে।তারপর তোমার ওপর আমিও শুয়ে পড়বো।ব্যাস, হয়ে গেলো।কি বলোতো হানি,বিয়ের পর থেকে তুলতুলে নরম বালিশ ছাড়া আমার একদম ঘুম হয় না।’
বলে ঠোঁট টিপে হাসলো দিগন্ত।”
“দিগন্তের ঠোঁট কা**টা কথাটি বুঝতে দেরি হলো না নাদিয়ার।নাদিয়া যখনই আঙ্গুল উঁচিয়ে কথা বলতে যাবে,তখনই দিগন্ত ওকে অবাক করে দিয়ে,ওর ঠোঁটে আলতো করে চুৃমু দিয়ে,কোলে তুলে সদর দরজা খুলে বাইরে যেতে নিলে,
পেছন থেকে নাদিয়ার মা ডেকে ওঠেন,
‘একি তোমরা এতো রাতে কোথায় যাচ্ছো?’
“দিগন্ত আকস্মিক এভাবে কোলে নেওয়াতে নাদিয়া যেনো বাকশক্তি হারিয়ে হতভম্ব হয়েছিলো।তার ওপর মায়ের ডাক শুনে লজ্জায় ম””রি ম”””রি অবস্থা।দিগন্তের দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,
‘কোল থেকে নামাও,মা দেখছে।”
“দিগন্ত গা জ্বালানো হাসি দিয়ে নাদিয়া কে কোল থেকে নামিয়ে দিলো।মুচকি হেসে নাদিয়ার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘মা আপনার মেয়েটা না ভীষণ বাচ্চাসুলভ আচরণ করে।দেখুন না!এই রাতে বলছে, ওকে কোলে করে আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে, হাহাহা..।তাই আমিও ওর বায়না পূরণ করছিলাম, হাহাহা।”
“দিগন্তের কথা শুনে নাদিয়ার মা নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘সে কি রে! সন্ধ্যায় তো এলি।আজ রাতটুকু না থেকেই চলে যাবি?এত তাড়াতাড়ি বাবা-মায়ের থেকে মায়া উঠে গেলো?”
“না মা,তেমন কিছুনা।আমি তো এগুলো কিছুই বলিনি।”
“হয়েছে,যা বোঝার বুঝে গিয়েছি।আমাকে আর বোঝাতে হবে না।মেয়ে আমার বিয়ে করে, পর হয়ে গেছে।’
অভিমানী স্বরে বললেন রুনা বেগম।”
“মায়ের মুখে এহেন কথা শুনে নাদিয়া ভড়কে গেলো।দিগন্তের হাত ধরে, কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে নিচু স্বরে বললো,
‘মা কে পেট বানিয়ে মিথ্যা বলে,মায়ের কাছ থেকে আমায় কথা শুনালে কেনো?
দাঁড়াও আজ তো তোমায় স্পেশাল শাস্তি দিবো।বাসায় একবার গিয়ে নেই,তখন মজা বোঝাবো।”
“দিগন্ত বাঁকা হেসে নাদিয়ার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
‘আমিও মজা নিতে চাই হানি।এক কাজ করো,বাসায় গিয়ে তুমি ওই নেভি ব্লু কালার নাইটি টা পড়বে,যেটার সামনে ওপেন লাভ শেপ আছে, হিহিহি।তাহলেই খুব মজা পাবো হানি।”
“দিগন্তের এহেন নির্লজ্জ টাইপ কথায় বোকা বনে গেলো নাদিয়া।”
মুখ থেকে ভাষাগুলো যেনো উধাও হয়ে গেলো।এ কেমন বেহায়া পুরুষ কে বিয়ে করেছে সে?”
———-
“রাত পেরিয়ে সূর্য় রশ্মি উঁকি দিতেই ঘুম ভে**ঙে গেলো তোহার।রাতে নিধি যখন বললো,নির্জনের সাথে রমনার বটমূলে দেখা করতে যাবে।তখনই তোহা একটা প্ল্যান করে ফেলে।আগামীকাল সকালে মাহিরের চেম্বারে গিয়ে দেখা করে তাকে সারপ্রাইজ দিবে।তাই রাতে মাহিরের ফোন রিসিভ করেনি।বেচারা একটু টেনশনে থাকুক।কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি।যখন হসপিটালে তোহা কে দেখবে,তখন ঠিক চমকে যাবে,সাথে বেশ খুশিও হবে।’
‘ভেবে খুব ভোরে উঠে বিড়াল পায়ে কিচেনে গিয়ে যথাযথ নিঃশব্দে মাহিরের প্রিয় চিকেন নুডলস,এবং গুড়া দুধ দিয়ে পায়েস রান্না করলো।টেস্ট ঠিক আছে কিনা সেটা চেক করে,একটু ঠান্ডা করে দুটি বক্সে ভরে নিলো।তারপর কিচেন ক্লিন করে, রুমে গিয়ে পড়তে বসলো।মাঝে মাঝে বইয়ের ভেতর মুখ গুঁজে মুচকি হাসলো।কখন সকাল ১১টা বাজবে,আর কখন সে মাহিরের কাছে যাবে,ভেবে খুশিতে মন আঁকুপাঁকু করে উঠলো।”
———
“সকাল ৯টায় রফিক মির্জা টিভির হেডলাইনের লেখাগুলো মনযোগ দিয়ে পড়ছেন।আর অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যায় প্লাবিত মানুষগুলোর জন্য অনেক দোয়া করছেন।গতকাল তার জমানো কিছু টাকা এবং জামা-কাপড় একটি সংগঠনে দান করে এসেছেন।
ইদানীং হঠাৎ করেই বুকের ব্যথাটা তীব্র বেড়ে যায়।নইলে গত বছরের মতো,তিনিও সবার সাথে যোগ দিয়ে, অসহায় মানুষদের স্ব শরীরে সাহায্য করতে এগিয়ে যেতেন।’
ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রফিক মির্জা।”
“এদিকে নিধি শপিং করতে যাবে এবং তোহা নীলক্ষেত থেকে কিছু বই কিনবে বলে, কলেজ ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার প্রস্তুুতি নিয়েছে।মূলত তোহার ব্যাগে মাহিরের জন্য খাবার নেওয়া হয়েছে।”
“তাহমিনা বেগম ওদের কে বলে দিলেন,এক ঘন্টার মধ্যে যেনো বাসায় চলে আসে।”
“নিধি এবং তোহা মায়ের কথায় সায় জানিয়ে বিদায় নিলো।”
———
“মাহির মাত্রই কিছু রোগী দেখে চায়ের কাপে ঠোঁট ডুবিয়েছে।রাতে কয়েকবার তোহা কে ফোন দিয়েছে।কিন্তুু তোহা ফোন রিসিভ করেনি।তাই মন টা ভীষণ খারাপ এবং বেশ চিন্তিত।তার স্বপ্নচারিনী তো কখনোই তার সাথে এমনটা করেনা।’
ভেবে হাতে ফোন নিয়ে যখনই তোহাকে কল করতে যাবে,তখনই মাহিরের এসিস্ট্যান্ট এসে বললো,
‘স্যার বাইরে একজন মেয়ে এসেছে।”
“কোনো পেশেন্ট?”
” না স্যার,বলছে আপনার পরিচিত।তাকে কি ভেতরে পাঠাবো।”
‘ওকে, পাঠাও।’
“লোকটি রুম থেকে চলে যেতেই,কয়েক সেকেন্ড পর তোহা রুমে প্রবেশ করতেই বিস্ময়ে চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেলো মাহিরের।অবাক চাহনি নিক্ষেপ করে বললো,
‘তুমি এখানে?”
“তোহা দুই হাত দুই দিকে মেলে বললো,
‘হাহাহা..সারপ্রাইজ!এইজন্যই গতকাল রাতে আপনার ফোন ধরিনি।”
‘বলেই এগিয়ে গেলো তোহা।কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে মাহিরের সামনে থাকা টেবিলের ওপরে রেখে, চেইন খুলে দুটি খাবারের বক্স বের করে বললো,
‘এই নিন।হা.. করে তাকিয়ে না থেকে এটা খুলুন।এখানেও সারপ্রাইজ আছে।”
“মাহির এখনও বিস্ময়ের সীমানা পার হতে পারে নি।”
“মাহিরের এমন ভাব-ভঙ্গি দেখে তোহা ঠোঁট টিপে হেসে নিজেই নুডলস এর বক্স খুলে, চামচে উঠিয়ে মাহিরের সামনে ধরে বললো,
‘নিন খেয়ে আমায় উদ্ধার করুন।অলরেডি ঠান্ডা হয়ে গেছে।খুব ভোরে উঠে বানিয়েছি।’
“বিস্ময় কা**টিয়ে,মাহির মুখে মুচকি হাসি ফুটিয়ে বললো,
‘এটা সত্যি; দারুণ সারপ্রাইজ ছিলো।গতকাল থেকে আমার পা**গল প্রায় অবস্থা হয়ে গেছিলো।সকালে কিছুই খাইনি।’
বলেই একটু ঝুঁকে নুডলস মুখে নিয়ে বললো,
‘ওয়াও ইয়াম্মি।তোমার হাতের রান্না তো দারুণ।তুমি তো দেখছি স্বপ্ন-রাঁধুনি।”
“আর কত নাম যে দিবে মাহির!সেটা ভেবেই তোহা অবাক হয়ে গেলো।”
“মাহিরের সত্যি ক্ষুধা লেগেছে।তাই তো পুরো নুডলস খেয়ে নিলো।’
ভেবে মুচকি হাসলো তোহা।তারপর পায়েসের বক্স খুলে বললো,
‘নিন,ঝাল খাবারের পর এইবার মিষ্টি মুখ করুন।’
“মাহির পায়েস দেখে তো আরও খুশি হলো।পায়েসের বাটি সামনে নিয়ে, পরম তৃপ্তিতে চোখ জোড়া বন্ধ করে পায়েস খেতে খেতে বললো,
“একটা কথা বলি স্বপ্নচারিনী?”
‘হুম বলুন।’
“তোমার হাতের মিষ্টি পায়েস খেয়ে,এই মুহূর্তে তোমাকে নিয়ে জাহাজে উঠতে ইচ্ছে করছে।তারপর সূর্যের কিরণ দেখতে দেখতে টাইটানিক মুভির নায়ক জ্যাকের মতো, তোমাকে ডার্ক লিপ কিস করতে ইচ্ছে করছে।”
“মাহিরের এহেন কথায় থতমত খেয়ে গেলো তোহা।ফোনে না হয় সবসময় বলে,তাই বলে সামনা-সামনিও?
নাহ!আর এখানে থাকা যাবে না।”
“তোহার ভাবনার মাঝেই মাহির আবার বললো,
‘তারপর তোমাকে একটি রুমে নিয়ে গিয়ে,ওগুলো করতে ইচ্ছে করছে,আরে ওই যে নায়িকা রোজ টানটান হয়ে শুয়ে ছিলো, আর জ্যাক মিটমিটিয়ে হেসে তার সর্বাঙ্গের পেইন্টিং করছিলো।উফফ!ব্যাপারটা কি দারুণ ছিলো; তাই না?
আচ্ছা,ছবিটা দেখেছো?”
“ব্যাস, এরপর যে মাহির কি বলবে সেটা বোঝা হয়ে গেছে।আর থাকা যাবে না।তোহা এখানে যেটা করতে এসেছিলো সেটা হয়ে গেছে।এখন পাখি ফুরুৎ।’
ভেবে তোহা ব্যাগ নিয়ে,সেখান থেকে বিড়াল পায়ে প্রস্থান করলো।”
“এদিকে মাহির তো টাইটানিক মুভির অর্ধেক রোমান্টিক দৃশ্য বলে ফেলেছে।যখনই তোহার সাড়া শব্দ পেলো না।তখনই তাকিয়ে দেখলো, সামনে এসিস্ট্যান্ট হা করে তাকিয়ে আছে।”
“মাহির ভ্রুকুটি করে করে বললো,
‘মেয়েটা কোথায় গেলো?’
“এসিস্ট্যান্ট বিস্ময়ের স্বরে বললো,
‘স্যার মেয়েটাতো কয়েক মিনিট আগে চলে গেলো।তবে স্যার, আপনি যে টাইটানিক মুভির রোমান্টিক দৃশ্যের এত সুন্দর বর্ণনা দিতে পারেন,সেটা ভেবে খুব অবাক হলাম।সত্যি স্যার,আপনি ভীষণ রোমান্টিক।’
বলেই ঠোঁট টিপে হাসলো এসিস্ট্যান্ট।”
“এসিস্ট্যান্টের মুখনিঃসৃত বাক্যগুলো শুনে কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলো মাহির।’
ভাবলো,
‘যাহ!স্বপ্নচারিনীর জন্য আমার প্রেস্টিজের ফালুদা হয়ে গেলো।”
পরক্ষণেই দেখতে পেলো, টেবিলের ওপর একটি পিংক কালার চার কোণায় ভাজ করা চিরকুট।মাহির বেশ অবাক হয়ে চিরকুট টি খুলে পড়তে যাবে;এমন সময় নতুন পেশেন্ট এসে হাজির।”
“যাহ!বেচারা মাহিরের মুখ টা তখন দেখার মতো ছিলো।
মনে মনে নিজেকেই নিজে ধি””ক্কার দিয়ে বললো,
‘রোমান্টিক কথা বলতে গেলে হবু বউ পালিয়ে যায়।এদিকে রোমান্টিক চিঠি পড়তে গেলে, পেশেন্ট এসে হাজির হয়।ধুর.. ভাল্লাগেনা।”
———-
“রমনার বটমূলে বসে আছে নির্জন আর নিধি। বাতাসে বয়ে যাচ্ছে মিষ্টি মাটির গন্ধ, আর গাছের পাতায় পাতায় খেলা করছে সূর্যের আলো। বটগাছের নিচে ছায়ার মাঝে বসে আছে ওরা দু’জন। সামনে একটি পুকুর, যার শান্ত পানিতে প্রতিফলিত হচ্ছে গাছের ছায়া আর আকাশের নীল রঙ।”
“নির্জন নিধির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
‘তুমি জানো ডার্ক কুইন, এই পুকুরের পানির মতোই তোমার চোখের গভীরতা আমাকে টানে।”
“নিধি একটু লজ্জা পেয়ে পুকুরের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘আর আপনি এই পুকুরের সেই শান্ত পানির মতোই, নির্জন। আমাকে অসীম শান্তি দেওয়ার অন্যতম কারণ।’
” নিধির কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।পুকুরের হালকা ঢেউয়ের আওয়াজে মিশে যায় তার হাসির শব্দ, আর বটগাছের পাতা ধীরে ধীরে বাতাসে দুলতে থাকে, যেনো প্রকৃতিও তাদের প্রেমের সাক্ষী হয়ে আছে।”
“মুখে থাকা মাস্ক খুলে নিধি বললো,
‘আমি আপনাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য এখানে এসেছি নির্জন।’
“নির্জন পাত্তা দিলো না সে কথায়।নিধির দিকে কিছুটা ঝুঁকে বললো,
‘I love you even more Dark Queen.’
‘নিধি মিষ্টি করে হেসে বললো,
‘I love you very much too.’
এখন আমার কথাটা শুনুন।”
“উহুম..আগে আমার হাতে হাত রাখো তারপর শুনবো।’
বলেই নির্জন নিধির দিকে হাত এগিয়ে দিলো।”
“উফফ! কি গভীর অনুভূতি।নিধি লাজুক হেসে নির্জনের হাতে হাত রাখতেই,নির্জন ভ্রূকুটি করে বললো,
‘তোমার অনামিকা আঙ্গুলের চামড়ায় এত গভীর ভাবে লেপ্টে থাকা আংটি টা কি তুমি কিনেছো?”
“সহজ-সরল চঞ্চলমনা নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘নাহ!এটা ফ্রেন্ডশিপ ডে তে নাদিয়া আমায় গিফট করেছিলো।ওকে বলেছিলাম,আমার গোল্ডেন স্টোনের আংটি খুব ভালো লাগে।তাই ও আমাকে সারপ্রাইজ দিয়েছে হিহিহি।”
“নিধির এহেন কথায় নির্জনের মাথার উগ্র পোকা গুলো নিমিষেই কিলবিল করে উঠলো।”
#চলবে…