হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-২৭+২৮

0
6

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ২৭
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“শরীরের প্রতিটি কনফিগারেশন, চোখের মায়া এবং হৃদয়ের বেদনা, সবকিছু মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো—এই মুহূর্তে অনাবৃত দু’টি দেহের প্রেম যেন আরও গভীর থেকে গভীর হতে থাকল।”

“দীর্ঘ একটি রাত পেরিয়ে জানালার শুভ্র রঙা পর্দা ভেদ করে,সূর্যের তীর্যক রশ্মি ছড়িয়ে পড়লো নাদিয়ার
চোখের পাতায়।ঘুম ভে**ঙে গেলো নাদিয়ার।সকালে ঘুমের মধ্যে এই রশ্মি মনে হয় জ্বালাতন করে নাদিয়াকে।তাই তো সে নিজের রুমে মোটা খয়েরি রঙের পর্দা টানিয়েছিলো।সূর্যের সোনালী আভা খয়েরি রঙা পর্দা ভেদ করে রুমটা আরও গাঢ় খয়েরি করে তুলতো।
বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে, চোখজোড়া খুলে দিগন্তের দিকে তাকাতেই দেখলো,নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে সে।”

“দিগন্তের এভাবে নাক ডাকা দেখে নাদিয়া হাসবে না কাঁদবে, না রাগ করবে, বুঝে উঠতে পারলো না।অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ভাবলো,
‘গতকাল রাতে একটুও ঘুমাতে দাও নি আমায়।রোমান্টিক টর্চার করে শরীরের নাজেহাল অবস্থা করেছো।বেহায়া,নি”র্লজ্জ পুরুষ।আর এখন আরামে নাক ডেকে ঘুমানো হচ্ছে তাই না?দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।রাতে আমাকে জ্বালিয়েছো,এখন আমি তোমায় জ্বালাবো।’
বলেই নাদিয়া আশে-পাশে তাকিয়ে দেখলো, রুমের কর্ণারে টেবিলের সাইডে একটি আয়রন।নাদিয়া কুটিল হেসে সেখানে গিয়ে আয়রনের ক্যাবল সুইচের মধ্যে ঢুকিয়ে,সেটাকে হালকা গরম করলো।তারপর মুখে দুষ্টু হাসি লেপ্টে আয়রন টি দিগন্তের অর্ধ-নগ্ন পিঠে হালকা ছোঁয়াতেই, ধরফরিয়ে উঠে বসলো দিগন্ত।আয়রনের তাপে পিঠের চামড়া মনে হয় পু**ড়ে গেলো।”

” দিগন্ত ভ্রুকুটি করে চি**ৎকার করে উঠলো,
‘ও মাগো ও বাবা গো..আগুন লেগেছে আগুন লেগেছে।”

“নাদিয়া তৎক্ষণাৎ দিগন্তের মুখ চেপে ধরে বললো,
‘ওই আগুন লাগে নি।এটা আয়রনের তাপ।আমি দিয়েছি।’

” মানে?তুমি আমায় এভাবে ছ্যাঁকা দিলে কেনো হানি?কি ক্ষতি করেছি তোমার?”

“নাদিয়া কটমটিয়ে তাকিয়ে, দিগন্তের মুখের সামনে আয়রন ধরে বললো,
‘ওলে লে..কিছু বোঝেনা।ল্যাদা বাবু..একদম সাধু সাজার চেষ্টা করবেনা বলে দিলাম।সারারাত আমার শরীর ব্যথা বানিয়ে এখন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছো,তাই না?এইজন্যই তোমায় শাস্তি দিলাম।”

“হকচকিয়ে গেলো দিগন্ত।আমতা আমতা করে বললো,
‘হায় হায় রে..এতো দেখছি গুন্ডি মেয়ে বিয়ে করে এনেছি।ও আল্লাহ! বাঁচাও আমায়।”

“আবারও মুখ চেপে ধরলো নাদিয়া।তীব্র স্বরে বললো,
‘আরেকটা কথা বললে, মুখের ওপর এটা লাগিয়ে দিবো কিন্তুু।আমার শরীর এখনও বিষের মতো ব্যথা করছে।’
বলেই মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো।”

“দিগন্ত কিছুটা ভীতু সন্ত্রস্ত হয়ে বললো,
‘আমার কোনো দোষ নেই হানি।নির্জন আমাকে বলেছিলো,ভালোবাসার মানুষের রাগ ভা**ঙাতে হলে ডার্ক রোমান্স করতে হয়;তাই করেছি।কিন্তুু এখন থেকে ভদ্র ভাবে সবকিছু হবে হানি।তুমি চাইলে এখনই তার নমুনা দেখাতে পারি।শুরু করি?আমার কিন্তুু মুড অলরেডি চলে এসেছে।এলোমেলো নাইটি টাতে তোমাকে যা লাগছে না।’বলে ঠোঁট টিপে হাসলো দিগন্ত।”

“ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো নাদিয়া।ভাবলো,
‘কি তিঁতা বেহায়া পুরুষ!আয়রনের ছ্যাঁকা খেয়েও মুখ দিয়ে লাগামহীন কথা বের হচ্ছে।’
নাদিয়ার ভাবনার মাঝেই, ওর কপালে,গালে,ঘাড়ে কয়েকটা টুপটাপ চুমু দিলো দিগন্ত।বাঁকা হেসে বললো,
‘হানি,আমার কিন্তুু সত্যি মুড এসে গেছে।তুমি চাইলে প্রমাণ দেখাতে পারি।”

“দিগন্তের কথা শুনে ঝগড়ুটে সুরে যখনই নাদিয়া কিছু বলতে যাবে,তখনই দরজায় কেউ কড়া নাড়লো।সেদিকে তাকিয়ে দিগন্ত বিরক্তির সুরে বললো,
‘যাহ!এখন আবার কে এলো?এখনই প্রমাণ দেখাতে যাচ্ছিলাম,আর মাঝখানে শত্রুপক্ষ কাবাব মে হাড্ডি হলো।ধুর..ভাল্লাগে না।’
বলেই নাদিয়ার হাতে আবারও কয়েকটা চুমু দিলো।তারপর নাদিয়ার বাহু ধরে কাছে টেনে গালে,গলায়,ঘাড়ে আরও গভীরভাবে চুম্বন করলো।”
মুচকি হেসে বললো,
‘একটু পর আবার জমিয়ে বাসর করবো,ওকে হানি।আপাতত রেস্ট করো।”

“নাদিয়া হতভম্ব হয়ে কিছু বলতে যাবে,তখনই দিগন্ত গা জ্বালানো হাসি দিয়ে ঝটপট বিছানা থেকে নেমে, দরজা খুলে দিলো।”

“দরজা খুলতেই দেখলো,দিগন্তের বাবা থমথমে মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকালো দিগন্ত।ভ্রুকুটি করে বললো,
‘বাবা তুমি এখানে?”

“দিগন্ত তোমার দুঃসম্পর্কের চাচাতো ভাই রিমন কে গতকাল রাতে কমিউনিটি সেন্টারের থার্ড ফ্লোরে, ওয়েটারদের চেঞ্জিং রুমে কেউ ভয়ং**কর ভাবে মা**র্ডার করেছে।'(হতাশা মিশ্রিত মুখ মন্ডল নিয়ে ভারিক্কি সুরে কথাগুলো বললেন সজিব চৌধুরী।)

” আ**তংকের ছাপ ফুটে উঠলো দিগন্তের মুখমন্ডলে।বিস্ময়ের স্বরে শুধালো,
‘কিভাবে,কি হয়েছে বাবা?তোমার কথা শুনে মাথা টা হ্যাং হয়ে গেলো।”

“সজিব চৌধুরী অতি সংক্ষেপে সেই নৃ**শংস খু**নের বর্ণনা দিয়ে, মুখমন্ডল বিবর্ণ করে ফেললেন।তার চোখে-মুখে ভেসে উঠছে চিন্তার ছাপ।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
‘এই নৃ**শংস খু**নের ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ার নিউজফিডে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছে।সেই সাথে রিমনের কু”কর্ম গুলোও ভিডিও আকারে ফাঁস হয়ে গেছে।তুমি চেক করলেই দেখতে পাবে।”

“দরজার অপরপাশ থেকে বাবা-ছেলের কথাগুলো শুনে, ভয়ে গায়ে কা**টা দিয়ে উঠলো নাদিয়ার।কি লোমহ**র্ষক ঘটনা!নাদিয়া বালিশের পাশ থেকে ফোন নিয়ে ডাটা অন করে, ফেইসবুকের ভিডিও অপশনে ঢুকতেই তরতাজা নিউজটি চোখের সামনে ভেসে উঠলো।ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় রিমনের কা**টা লা**শের ছবি সহ,অপকর্ম গুলো পুরো ভাইরাল হয়ে গেছে।কমেন্ট বক্সে এসে কেউ বলছে,
‘এই চরিত্রহীন পুরুষ কে এত নৃশং**সভাবে হ**ত্যা করার জন্য কিলার কে ধন্যবাদ।’
‘সেই কমেন্টে কিছু আবেগী মানুষ এসে ‘অ্যাঙ্গরি’ রিয়্যাক্ট দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।কেউ কেউ আবার সহমত প্রকাশ করছে।”

“রিমনের এই ভ**য়াবহ মৃ**ত্যুতে আত্মীয়-স্বজনের মাঝে নেমে এসেছে একরাশ ভয় এবং আতং**কের ছাপ।এমতাবস্থায় কেউ বৌভাতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য আগ্রহী নয়।ছেলেটি খারাপ হলেও,তাদেরই তো আত্মীয়।’গম্ভীর স্বরে কথাগুলো বলে
সেখান থেকে প্রস্থান করলেন সজিব চৌধুরী।”

“দিগন্ত চিন্তিত মুখ নিয়ে রুমে প্রবেশ করতেই,নাদিয়া রিমনের কু”কর্মের ভিডিও থেকে শুরু করে সবকিছু দেখালো।পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে সবকিছু দেখে দিগন্তর মাথা ঘুরে উঠলো।আর দেখতে পারলো না সে।তার মনে বারবার একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে,এত ভ**য়াবহ ভাবেও কেউ কাউকে খু**ন করতে পারে?’
ভেবে ফোন হাতে নিয়ে নির্জন কে কল করলো।”

“নির্জন অফিসের ডেস্কে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।তার মন আজ বেশ ফুরফুরে।দিগন্তের কল পেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত হাসি দিয়ে রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলতেই,
দিগন্ত গড়গড় করে সবকিছু নির্জন কে বললো।
সবকিছু শুনে নির্জন তার কন্ঠস্বর আকাশের চূড়ায় নিয়ে বললো,
‘হাআআ…কি বলিস?তাহলে পুলিশ তো খু**নের ইনভেস্টিগেশন শুরু করে দিয়েছে তাই না?”

“হুমম, পুলিশ তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।কিন্তুু এখন পর্যন্ত তারা কোনো সাক্ষী ও প্রমাণ পায় নি।অপরাধী ভীষণ চতুর।মনে হয় সিরিয়াল কিলার।তুই দেখলে,তোর শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যাবে।কতটা ভয়ং**কর ভাবে হ**ত্যা করেছে রিমন কে।কিন্তুু ওর শরীরে কোনো হাতের ছাপ পাওয়া যায় নি।শুধু একটা চিঠিতে কবিতা লিখে লা**শের পাশে রেখে গেছে।সেটাতেও হাতের কোনো ছাপ নেই।ফরেনসিক রিপোর্ট থেকে ফলাফল শূন্য এসেছে।সবার মনে এখন আতং**ক বিরাজ করছে।আমার মনে হয় না,পুলিশ এতো সহজে এই ভয়ং**কর খু**নি কে ধরতে পারবে।আর আজ আমাদের রিসিপশনের আয়োজন ক্যান্সেল।”

“নির্জন কপালে চার আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললো,
‘হুম আমারও তাই মনে হয়।কিলার কে ধরতে পুলিশের অনেক বেগ পেতে হবে।ওকে আমি ভিডিও গুলো দেখছি।তোর লোমহ**র্ষক বিবরণ শুনেই তো আমার গায়ে কেমন কা**টা দিয়ে উঠছে।তাছাড়া এই অবস্থায় তোদের অনুষ্ঠান ক্যান্সেল করে ভালোই করেছিস।ওকে রাখছি,পরে কথা হবে।”

“এই..এই শোন,তুই একটু সাবধানে থাকিস।এইসব সিরিয়াল কিলার রা পথে ঘাটে রাত-বিরাতে ঘুরে বেড়ায়।তুই রাতে বাইরে বের হবি না।অফিস করে সোজা বাসায় চলে যাবি।”

“কুটিল হেসে নির্জন বললো,
‘এমন ভাবে বলছিস,যেনো তুই আমার বড় ভাই।ওকে চিন্তা করিস না।আমি নিজের খেয়াল রাখবো,রাখছি।’বলেই কট করে ফোন টা কে**টে দিলো।”

———–
“চেয়ারে বসে,পা জোড়া দুলিয়ে ফেইসবুকের নিউজ ফিডে আজকের তরতাজা ভাইরাল ভিডিও টি দেখছে আর পৈ**শাচিক ভঙ্গিমায় হেসে উঠছে নির্জন।এই মুহূর্তে খুব তৃপ্তি পাচ্ছে সে।বিড়বিড় করে বলছে,
‘তবুও মা**র্ডার টা মনের মতো হয়নি।আরও কু**চিকু**চি করে কা**টতে পারলে বেটার হতো।’
ভেবে বিভিন্ন ভিডিও গুলোতে চোখ বুলিয়ে
যেখানে সবাই ‘স্যাড’ রিয়্যাক্ট দিয়েছে অথবা ‘অ্যাঙ্গরি’ রিয়্যাক্ট দিয়েছে,সেখানে নির্জনও বৃদ্ধাঙ্গুল প্রেস করে, মুখে ডেভিল হাসি ঝুলিয়ে তাই দিলো।”

“রিমন খু**নের উদঘাটন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সাংবাদিক সহ সকল পুলিশ সদস্য।সোশ্যাল মিডিয়া প্রবল আতং**কে উত্তাপ প্রায়।এটাই স্বাভাবিক।যখন যেই ট্রেন্ড চালু হয়,সেটা নিয়েই তপ্ত হয় সোশ্যাল মিডিয়ার প্রাঙ্গন।”

“নির্জন একটা ভিডিও তে ক্লিক করে দেখলো,সাংবাদিক রা ঘিরে ধরেছে ওসি রিয়াদ হোসেন কে।নানা রকম প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে তার সম্মুখে।ওসি তার হাতের ইশারা করে সবাইকে আশ্বাস দিয়ে বললেন,
‘অপরাধী যতই চতুর হোক না কেনো,একদিন না একদিন আমাদের খাঁচায় আটক হবেই।আমরা আমাদের গোয়েন্দা ফোর্স এবং পুলিশ ফোর্স নিয়ে সর্বোচ্চ দিয়ে উদঘাটন করার চেষ্টা করবো।মনে রাখবেন,আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়।অপরাধী নিখুঁত ভাবে মা**র্ডার করলেও,আমাদের হাত থেকে বেশিদিন পালিয়ে বাঁচতে পারবে না।আমরা তার যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করবো।’
বলেই তিনি হনহন করে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন।”

“সবকিছু ঠান্ডা মাথায় করার আগে, পাবলিক ফিগার ঠান্ডা করা অতীব জরুরি।সেটাই বুদ্ধিমত্তার সাথে করে দেখালেন ওসি রিয়াদ হোসেন।
সাক্ষী, প্রমাণ না থাকায় বিষয়টি আর জটিল রূপ ধারণ করেছে;সেটাই অনবরত প্রচার করছে সাংবাদিকগণ।”

“সেগুলো দেখে পৈ**শাচিক হাসি দিলো নির্জন।যেন সে খুব মজা পেয়েছে।নিউজফিড অফ করে বিড়বিড় করে আওড়ালো,

“যতই তুমি খোঁজো আমায়,ধরা দেবো না পাখি,
অন্ধকার রাজ্যে বসতি আমার,দেবো তোমায় ফাঁকি।”

~মেহের~

“ফুরফুরে মন নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করে,যখনই ল্যাপটপে চোখ বুলাবে,তখনই ডেস্কের অপরপাশ থেকে মিষ্টি নারী কন্ঠস্বর ভেসে এলো।”

“হ্যালো মি.নির্জন,কেমন আছেন?আজ এতো খুশি খুশি লাগছে যে?”

“বিরক্তিকর চেনা কন্ঠস্বর পেয়ে ভ্রুকুটি করে তাকালো নির্জন।কপাল উঁচিয়ে বললো,
‘আপনি এখানে কেনো বর্ষা?কোনো কাজে এসেছেন?”

“উফফ নির্জন..আমাকে বর্ষা বলবেন না প্লিজ।ডায়না বলে ডাকবেন।আমার প্রিয় মানুষজন আমাকে ডায়না বলে ডাকে।”

“বাঁকা হাসলো নির্জন।মৃদুস্বরে বললো,
‘তা মিস,ডাইনী..উপস সরি,মিস ডায়না আমার এখানে কি কাজ আপনার?”

“ইশশ!ন্যাকা।এমন ভাব করছেন,যেন কিছুই বোঝেন না।আয়নার ওপাশ থেকে আপনার হাসি মুখ দেখে, খবর নিতে এলাম।১বছর যাবৎ আমায় ঘুরিয়ে যাচ্ছেন।এর মধ্যে কত বয়ফ্রেন্ড জুটিয়েছি, একজন কেও আপনার মতো লাগেনি।”

“নির্জন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের মানবীর দিকে।উজ্জ্বল শ্যামরঙা শরীরে ফিনফিনে পাতলা শাড়ি পড়েছে এই নারী।শরীরের স্পর্শকাতর জায়গাগুলো যেনো আরও ফুলে ফেঁপে উঠেছে।দেখে মনে হচ্ছে,যে কোনো পুরুষ কে এক দর্শনে আকর্ষণ করার চেষ্টায় মাঠে নেমেছে এই রমনী।কিন্তুু এই বেহায়া চরিত্রের নারীটির ওপর এই মুহূর্তে ঘৃণা ছাড়া কিছুই আসছে না মনে।”

“নির্জনের অফিসের কলিগ বর্ষা।অফিসের এমডি থেকে শুরু করে সিনিয়র, জুনিয়র পুরুষদের ক্রাশ গার্ল সে।ইতোমধ্যে একজনের সাথে লিভ-ইন রিলেশনশিপে আছে সে।”

“বোকা প্রেমিক টি বিজনেসের কাজে দেশের বাহিরে গেলেই,শুরু হয় তার উত্তেজনাপূর্ণ রঙ্গলীলা।পঁচা পানিতে মাছির মতো ভনভন করা অধিকাংশ পুরুষ জাতির স্বভাব।বর্ষার এহেন কান্ডে মজা পায় সবাই।সুযোগের সৎ ব্যবহার করে লুটে নেয় তার স্বর্বস্ব।সেই নারীটিও যেন তার খায়েশ মিটিয়ে পরম তৃপ্তি পায়।”

“নির্জনের গম্ভীর অ্যাটিটিউড আর স্ট্রং পারসোনালিটির মোহে পড়েছে এই নারী।কিন্তুু সে জানে না,এই মোহে যে একবার পড়বে, তার জীবনে শুরু হবে ভ**য়াবহ তান্ডবলীলা।তার জন্য ধ্বং**স অনিবার্য।গত এক বছরেও ঘুরঘুর করে পাত্তা পায় নি নির্জনের কাছে।সেকেন্ড হ্যান্ড দ্রব্য বরাবরই ঘৃণা করে নির্জন।সেখানে এই রমনী তো কতশত নোং**রা পানিতে গা ভাসিয়েছে।একজনের সাথে স্থায়ী ভাবে রুমডেট করেও, খায়েশ যেন তার ক্রমাগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।পৃথিবীতে পুরুষদের একা দায়ী করলে হবে না।তাদের পরকীয়ার পেছনে সমান ভাবে নারীরাও দায়ী।কারণ তারা আশকারা না দিলে,পুরুষরা তো আর গাছের সাথে প্রেম করবে না।’
ভেবে ভেতর থেকে ‘ছিহ’ শব্দ বেরিয়ে এলো নির্জনের।”

“কিছু বললেন নির্জন?”(ভ্রু কুঞ্চিত করে জিজ্ঞেস করলো বর্ষা)

” নির্জন গম্ভীর স্বরে বললো,
‘আমি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস রেডি করবো মিস বর্ষা।আগামীকাল প্রেজেন্টেশন আছে।সো প্লিজ লিভ নাউ।”

“নির্জনের অবহেলা মানতে পারলো না বর্ষা।মনের মধ্যে জেদ চেপে বসলো।অনেক সহ্য করেছে সে।উজ্জ্বল শ্যাম রঙা এই পুরুষের এতো অ্যাটিটিউড কিসের?অনেক ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছি আমি।ব্যাস,আর নয়।এই মানব কে আমার করেই ছাড়বো।’একমনে পণ করে বাঁকা হাসলো বর্ষা।”

“নির্জনের কিছুটা কাছে এসে,টেবিলের মাউসে থাকা নির্জনের ডান হাতের ওপর তার ঝিকিমিকি রঙের নেইলপালিশ পড়া কোমল হাত রেখে,ঠোঁট কা**মড়ে মোহনীয় স্বরে বললো,
‘নির্জন একবার কি আমার বিষয়টা ভেবে দেখা যায় না?আমি তো নিজেই আপনাকে সুযোগ করে দিচ্ছি।যেখানে আমার রূপে মুগ্ধ সবাই,সেখানে আমি আপনার পেছনে ঘুরছি।এটা তো আপনার সৌভাগ্য।আমি জানি,আমার এই হট ফিগারের প্রেমে আপনিও ঘায়েল।প্লিজ এখন এটা বলবেন না, যে আপনি আমায় পছন্দ করেন না।এই ডায়নাকে একবার বলে দেখুন,নির্দ্বিধায় নিজেকে সপে দিবে আপনার কাছে।আর কাউকে লাগবে না আমার।যে লিভ-ইন রিলেশনশিপে আছি,সেটা ব্রেকআপ করে আপনার কাছে চলে আসবো প্রমিজ।”

“বর্ষা নির্জনের হাতের ওপর এভাবে হাত রাখায় নির্জনের মাথার উগ্র বিধ্বংসী পোকা গুলো অলরেডি কিলবিল করে উঠেছে।কত বড় সাহস!যেখানে ছেলেদের থেকেও নিজের শরীর কে দূরে রাখে নির্জন;,সেখানে এই নোং**রা নারীর নোং**রা হাতের স্পর্শ পেলো?নাহ!অনেক সুযোগ দিয়েছে এই নারীকে।তার বয়ফ্রেন্ড মাথা মোটা হলেও,নির্জন অতি বিচক্ষণ।
বিশ্বাসঘাতক নারীর বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিশোধ নিতে হবে বিশ্বাসঘাতকতা দিয়ে।তবে এইবারের খেলাটা একটু ইউনিক হতে হবে।মজা করে নিঁখুত ভাবে খেলার জন্য, শুনশান জায়গা বেছে নিতে হবে।’
ভাবতেই নির্জনের ‘মন’ আর ‘হৃদয়’ একসাথে বলে উঠলো,
‘এই নি**কৃষ্ট রমনী তোমার হাতে হাত রেখেছে।যেখানে শুধু তোমার প্রেয়সীর স্পর্শ থাকবে।কিন্তুু এই রমনী তোমাকে স্পর্শ করে ভয়ং**কর অপরাধ করেছে।তাকে তুমি নদীর ধারে শাস্তি দিবে।হ্যা,নদীর তীরে,খোলামেলা পরিবেশে এই রমনীর ভয়ং**কর শাস্তি হবে।তোমাকে প্ল্যানগুলো বলে দিচ্ছি।’
বলেই মন এবং হৃদয় তাদের পৈ**শাচিক প্ল্যান সম্পর্কে বললো।প্ল্যানটি নির্জনের ভীষণ মনে ধরলো।অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,,’ওকে,ডান।’

” নির্জনের মুখনিঃসৃত ‘ডান’ কথাটি শুনে, খুশি হয়ে গেলো বর্ষা।লাজুক হেসে বললো,
‘ কোথায়,কখন আসতে হবে?”

“ইশশ!কত উত্তেজিত তুৃমি?সত্যি আমি খুব ভাগ্যবান,যে তোমার মতো সুন্দরী রমনী আমায় ভালোবেসেছে।এতদিন বুঝতে পারিনি,তাই এক্সট্রিমলি সরি ডায়না।”

“নির্জনের মুখে একইসাথে ‘তুমি’ এবং ‘ডায়না’ শুনে ভীষণ খুশি হলো বর্ষা।নির্জনের হাত আরেকটু জোরে চেপে ধরে,ঠোঁট কা**মড়ে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে মেকি স্বরে বললো,
‘আমার আর তর সইছে না নির্জন।দীর্ঘ এক বছরের প্রতীক্ষা আমার।তাহলে আজকেই হয়ে যাক।”

“ছিহ!কি বেহায়া,নি**কৃষ্ট চরিত্রের নারী।সমাজের আনাচে-কানাচে এমন অসংখ্য নারী লুকিয়ে আছে।কেউ চাক্ষুষে ঘুরে বেড়ায় অথবা কেউ পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকে।”

‘ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নির্জন।বাম হাত দিয়ে বর্ষার হাত সন্তর্পণে সরিয়ে মুচকি হেসে বললো,
‘আমারও আর তর সইছে না ডায়না।এতদিন নিজেকে অনেক কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেছি।কিন্তুু আজ আমি ব্যর্থ।
হার মানলাম তোমার কাছে।তোমার ভরা যৌবনের অতল গহ্বরে আমি হারিয়ে যেতে চাই ডায়না।আজ রাতে নদীর তীরে আমাদের নিষিদ্ধ মধুচন্দ্রিমা করতে চাই।তুমি কি রাজি?”

“ভীষণ খুশি হলো বর্ষা।নির্জনের একেকটি কথায় যেন কা**টার মতো শিহরণ বয়ে গেলো বর্ষার সর্বাঙ্গে।হাসি মুখে বললো,
‘ওকে নির্জন।’

“নির্জন মুচকি হেসে কখন,কোথায় আসতে হবে সবকিছু বুঝিয়ে বললো।তারপর বললো,
‘ফোন টা বাসায় রেখে আসবে।ভুলেও কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস আনবে না।বলাতো যায় না,দেয়ালেরও কান আছে।”

“ওকে নির্জন।তোমার এই ভয়ং**কর সুন্দর পারসোনালিটির প্রেমেই তো আমি পড়েছি।’
তারপর নির্জনের সাথে আরও কয়েক মিনিট কথা বলে, চলে গেলো বর্ষা।সেদিকে তাকিয়ে শ**য়তানি হাসি দিলো নির্জন।”

———–
“এদিকে কিছুক্ষণ আগে ঘুম থেকে উঠে, রিমনের লোমহ**র্ষক হ**ত্যাকান্ড দেখে খুব ভয় পেয়ে গেছে নিধি এবং তোহা।ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে বাবা-মায়ের সাথে সেগুলো নিয়েই আলোচনা করছে।খাওয়া-দাওয়া সম্পন্ন করে, টিভিতে নিউজ দেখছেন রফিক মির্জা।আজ সাংবাদিক জীবন থেকে অবসর না নিলে হয়তো,তিনিও কয়েকটি যুক্তিযুক্ত লাইন লিখতেন খবরের পাতায়।”

“তোহা রুমে গিয়ে মাহিরের সাথে সবকিছু শেয়ার করলো।সকালের নিউজ টি মাহিরও দেখেছে।তাই সেও তোহার সাথে একই আলোচনায় মগ্ন হলো।আজ দু’জনের মধ্যে নেই কোনো রোমান্টিক কথপোকথন।দু’জনে দীর্ঘসময় একই ঘটনা বারবার রিপিট করলো।এর অন্যতম কারণ হলো,ছেলেটি দিগন্তের দুঃসম্পর্কের চাচাতো ভাই।নাদিয়া নিধি কে ফোন করে সবকিছু জানিয়েছে।”

” নিধি রিমনের কা**টাছেঁড়া বি**ভৎস শরীর দেখে,অর্ধ কোমায় চলে গেছে।নির্জন কে অনবরত কল করে যাচ্ছে।কিন্তুু এখনও নির্জনের ফোন বন্ধ।”

“বর্ষা চলে যাওয়ার পর নির্জন ফোন অফ করে দিয়েছে।কারণ, তার মাথায় চলছে ভয়ং**কর খু**নের পরিকল্পনা।”

“বিরক্ত এবং কিছুটা চিন্তিত হলো নিধি।ভাবলো,

‘বাসার ঠিকানা টাও জানিনা।নইলে ঠিক তার বাসায় গিয়ে হাজির হতাম;উফফ!আমাকে চিন্তায় রেখে কি সে খুব সুখে আছে?’ভাবতেই হতাশা ফুটে উঠলো নিধির মায়াবী মুখস্রিতে।”

————-
“রাত সাড়ে ১০টা।নদীর তীর থেকে কিছুটা দূরে, কুচকুচে কালো রঙের গাড়ির মধ্যে বসে আছে দুই যুবক-যুবতী।নীরবতা ভে**ঙে নির্জন বললো,
‘তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে ডায়না।বেগুনি রঙের সিল্কের শাড়িতে বেশ মানিয়েছে তোমায়।”

“তোমাকেও খুব হ্যান্ডসাম লাগছে নির্জন।ব্ল্যাক টি-শার্ট, হোয়াইট জিন্স,রিমলেস চশমায় তোমায় অলটাইম হট লাগে।আচ্ছা, প্রায় ১০মিনিট হতে চললো আমরা এখানে আছি।এখনও কি ড্রাইভিং সিটে বসে থাকবো?ব্যাকসিটে যাবে না?”

“বাঁকা হাসলো নির্জন।রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,
‘হুম।অনেকদিন পর গাড়িটি আমি বের করেছি, শুধু তোমার জন্য ডায়না।সাধারণত আমি বাইক নিয়ে ঘুরতে বেশি কম্ফোর্টেবল ফিল করি।বাট তুমি যেহেতু আছো,তাই গাড়ির ব্যাক সিট অতীব জরুরি।কিন্তুু তার আগে আমরা একটা মজার গেইম খেলবো।বলো রাজি?”

“বর্ষা এক্সাইটেড হয়ে বললো,
‘হুমম অবশ্যই রাজি।”

“ওকে।আমি তোমাকে ৩টা ধাঁধা জিজ্ঞেস করবো।যদি ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারো,তাহলে বিভিন্ন ডার্ক স্টাইলে আজ রোমান্স হবে।আর যদি বলতে না পারো, তাহলে নরমাল রোমান্স হবে।”

“হাহাহা.. ওহ নটি বয়।তুমি তো ভীষণ দুষ্টু।চেহারা দেখলে একদমই বোঝা যায় না।ওকে বলো সোনা।”

“১.ধাঁধা
“আমি আগুনের মতো গরম, আবার বরফের মতো শীতল।
আমাকে পান করলে আমি তোমার জীবন নিই,
কিন্তুু, সবাই আমাকে নিয়ে জীবন বাঁচায়। আমি কে?”

২.ধাঁধা
আমার কোনো শরীর নেই, কিন্তুু আমি তোমার জীবন ছুঁয়ে দেখতে পারি।
আমি নীরব, কিন্তুু যখন আসি, তখন সবাই ভয় পায়। আমি কে?”

৩.ধাঁধা
“আমি অন্ধকারের সন্তান, আলোয় দেখা যায় না।
যখন আমি তোমার কাছে আসি, তুমি আর অন্য কিছু দেখতে পাও না। আমি কে?”

“উত্তর গুলো ঝটপট বলো সোনা।”

“নির্জনের এহেন ধাঁধায় বোকা বনে গেলো বর্ষা।সে তো ভেবেছিলো, নির্জন কোনো সহজ রোমান্টিক ধাঁধা বলবে।কিন্তুু এগুলো তার মাথার ওপর দিয়ে গেলো।আমতা আমতা করে বললো,
“আবার বলো সোনা।এতো কঠিন ধাঁধা আমার মাথার ওপর দিয়ে গেলো।”

“নির্জন মুচকি হেসে আবারও বললো।কিন্তুু উত্তর দিতে পারলো না বর্ষা।”

“নির্জন জানতো,এতটা সূক্ষ্ম বুদ্ধি এই রমনীর নেই।’ভেবে কুটিল হেসে বললো,
‘ওকে ফাইন,এইসব বাদ দাও.. এখন আমরা চোর-পুলিশ খেলবো।’
বলেই পকেট থেকে ৪টা ভাজ করা ছোট কুপন বের করলো।বর্ষার সামনে হাত রেখে বললো,
‘এখানে চারটি কুপনে চোর, পুলিশ লেখা আছে।যে পুলিশ পাবে,সে যেকোনো প্রশ্ন করার সুযোগ পাবে।আর যে চোর পাবে,সে সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিবে।”

“বর্ষা মুচকি হেসে বললো,
‘তুমি কতো রোমান্টিক নির্জন।কতকিছুর আয়োজন করেছো আমার জন্য।থ্যাংক ইউ সো মাচ এন্ড লাভ ইউ সো মাচ।’
বলেই একটা কুপন ধরে ভাজ খুলতেই,ভীতু দৃষ্টিতে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘নির্জন.. আমি চোর পেয়েছি।’

‘নির্জন অভিজ্ঞ সম্পন্ন হাসি দিয়ে বললো,
‘আমি পুলিশ পেয়েছি।’
So the game is start now..3,2,1..start…

#চলবে…

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ২৮(ধামাকা পর্ব)
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“নির্জন অভিজ্ঞ সম্পন্ন হাসি দিয়ে বললো,
‘আমি পুলিশ পেয়েছি।’
So the game is start now..3,2,1..start…

“তোমাকে আমি মোট ৩টা সহজ প্রশ্ন করবো।আশা করি সঠিক উত্তর দিবে।”

“১.এই পর্যন্ত কয়জনের সাথে রিলেশন করেছো?

২.কয়জনের সাথে ফ্লার্ট করেছো?

৩.কয়জনের সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছো?”

“নির্জনের এহেন প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলো বর্ষা।সে ভাবতেও পারেনি,নির্জন তাকে এমন প্রশ্ন করবে।
মুখমন্ডল মলিন করে,ভীতু দৃষ্টিতে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘অন্য কোনো প্রশ্ন করো নির্জন।এই মুহূর্তে এগুলো বলে মুড নষ্ট করতে চাই না।”

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,
‘দেখো ডায়না,তুমি আমায় নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করতে পারো।আমি চাই আমাদের মধ্যকার সম্পর্কের সূচনা সত্যের মাধ্যমে শুরু হোক,আর সত্যের মাধ্যমে শেষ হোক।যেখানে কোনো লুকোচুরি থাকবে না।আমি তোমার সাথে এখন যা করবো,সেগুলো করার আগে,তোমার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জানতে চাই।আমিও আমার ব্যক্তিগত কথা তোমায় বলবো।আমার অভ্যাস গুলো সম্পর্কে তোমায় ডিটেইলসে বলবো।এখন তুমি বলো।ডোন্ট ওয়ারি,যেহেতু তোমায় মন থেকে আমার ‘ডার্ক প্যালেসে’ বেঁধে রাখতে চাইছি,তাই তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।”

“নির্জনের কথায় আস্বস্ত হলো বর্ষা।ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে হাসি মুখে বললো,
‘সত্যি নির্জন তুমি খুব ফ্রী মাইন্ডের। সবার থেকে আলাদা।তোমার মতো যদি আমার বাকি বি এফ গুলো আমাকে এভাবে স্বাধীনতা দিতো,তাহলে হয়তো কারো সাথেই আমার ব্রেকআপ হতো না।এনিওয়ে, আমি তোমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিচ্ছি।’

১.এই পর্যন্ত মোট ১৩জনের সাথে রিলেশন করেছি।

২.ফ্লার্ট করেছি ফেইসবুক,ইন্সটাগ্রাম এবং টিকটক মিলিয়ে ১৪০+ ছেলেদের সাথে।তবে বেশিদিন করতাম না।ম্যাসেজে মজা লুটে,টাকা নিয়ে ব্লক করে দিতাম।

৩.সত্যি কথা হলো,আমার বয়ফ্রেন্ডের অগোচরে, ইন্টিমেট হয়েছি ৪জনের সাথে।তবে সবার সাথে ২বার করে।তার বিনিময়ে অনেক টাকাও পেয়েছি।’
বলেই চোখজোড়া নিচু করে ফেললো বর্ষা।”

“শেষের উত্তর শুনে নির্জন ভ্রুকুটি করে বললো,
‘এর মানে ৪জনের সাথে ২রাত করে কাটিয়েছো,অর্থাৎ মোট ৮রাত কাটিয়েছো?”

“হুমম।”

“হাহাহা..ওহ!গুড জব।থ্যাংকস ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন সোনা।”

“নির্জন তোমাকে ভরসা করে সবকিছু বললাম।এর আগে কখনোও কাউকে আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে বলিনি।আমি তোমার প্রতি কতটা সিরিয়াস,নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো।এইবার আমাকে মেনে নিতে তোমার কোনো সমস্যা নেই তো?’
বলেই করুণ দৃষ্টিতে তাকালো বর্ষা।”

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,
‘না সোনা, কোনো সমস্যা নেই।আমিও তোমার প্রতি ডার্ক সিরিয়াস।”

“আচ্ছা নির্জন,তুমি সবসময় সবকিছুতে ‘ডার্ক’ শব্দ টা ইউজ করো কেনো?”

“উমম..ছোটবেলায় অন্ধকার আমি খুব ভয় পেতাম।আলো ছিলো আমার ভীষণ প্রিয়।কিন্তুু একটু বড় হওয়ার পর,কোনো এক অজানা কারণে ধীরে ধীরে অন্ধকার আমার ভীষণ প্রিয় হয়ে উঠলো।আর তারপর থেকেই আলো অপেক্ষা আঁধার আমি বেশি পছন্দ করি।পাখি শিকার থেকে শুরু করে,সবকিছু আমি আঁধার রাতেই করি,এই যেমন আজকেও করবো।”

“মানে?”

“হাহাহাহা… বুঝলে না?আজ রাতে তোমায় শিকার করে, আমার ডার্ক লাইফের সাথে তোমাকে ভালোভাবে পরিচয় করিয়ে দিবো।”

“মিষ্টি হাসলো বর্ষা।কানের কাছ থেকে ছোট ছোট চুল সরিয়ে, অক্ষি যুগল নিচে নামিয়ে লাজুক হেসে মৃদু স্বরে বললো,

‘আমি তোমার ডার্ক রাজ্যের সবচেয়ে সুন্দর কাহিনী হতে চাই নির্জন।যেখানে থাকবে শুধু তুমি,আমি আর আমাদের ‘ডার্ক রোমান্স’ উফফ!”

“বাঁকা হাসলো নির্জন।হাস্কি ভয়েসে বললো,
‘হুম, অবশ্যই ডায়না।তার আগে আমরা এখন আবারও চোর-পুলিশ খেলবো।”

“বোকা বনে গেলো বর্ষা।অস্ফুটস্বরে বললো,
“সে কি, এখনোও খেলবে?এগুলো খুব বোরিং লাগছে জান।প্লিজ ব্যাক সিটে চলো।”

“কই সোনা,আমার তো একটুও বোরিং লাগছে না।ডার্ক রোমান্স করার আগে ভালো করে প্রস্তুুতি নেওয়া দরকার।যেনো তোমার লজ্জা পুরোপুরি ভে**ঙে যায়।আমি চাই না আমার সামনে তোমার ছিটেফোঁটা লজ্জা অবশিষ্ট থাকুক।আমি তোমার সর্বস্ব লুটে নিয়ে,নিজেকে পরিপূর্ণ করতে চাই সোনা।”

“তাই বলে এই বাচ্চাদের খেলা করে?”

“এটাতেই তো মজা সোনা।একটু বড় হওয়ার পর থেকে আমি কানামাছি, চোর-পুলিশ এগুলো খেলতে ভীষণ পছন্দ করি;তবে একটু ইউনিক স্টাইলে।আমি ১০০% গ্যারান্টি দিয়ে বলছি,একটু পর তুমিই বলবে,
‘সারাজীবন যদি এই খেলা খেলতাম,তাহলে সেটাই সবচেয়ে কল্যাণকর হতো।’
যাইহোক, সময় নষ্ট না করে আমরা আরও কিছুক্ষণ খেলি।চলো শুরু করি।’
বলেই নির্জন আবারও চারটা কুপন মুষ্টিবদ্ধ করে, ঝাঁকিয়ে বর্ষার সামনে হাত রাখলো।”

“বর্ষা মুচকি হেসে একটা কুপন তুলে,ভাজ খুলতেই,মন খারাপ করে বললো,
‘নির্জন আমি আবারও চোর পেয়েছি।”

“নির্জন রহস্যময় হাসি দিয়ে,কুপনের ভাজের ওপর কলম দিয়ে ছোট করে ফোটা দেওয়া লাল বিন্দুটির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘আমি পুলিশ পেয়েছি।”

———
“থানায় চতুর্ভুজাকৃতির টেবিলে মুখোমুখি বসে আছে,ওসি রিয়াদ হোসেন,রিমনের বাবা-মা এবং বড় ভাই।আর তাদের সাথে পাশের চেয়ারে বসে আছেন সজিব চৌধুরী।এবং তাদের পাশের চেয়ারে বসে আছে একজন ২৪বছরের তরুণী।চেহারায় তার বিষন্নতা এবং রুক্ষতার ছাপ স্পষ্ট।ফোলা ফোলা চক্ষুদ্বয় দেখেই বোঝা যায়,সে প্রচুর কেঁদেছে।তার কারণ টাও এতক্ষণে সবাই জেনে গেছে।”

“রিমনের পরিবার মাথা নিচু করে অসহায় ভঙ্গিমায় বসে আছে।সজিব চৌধুরী নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে তরুণীর দিকে।মেয়েটির চোখ-মুখের অবস্থা নাজেহাল।কোলে রয়েছে সাড়ে ৫ মাসের ফুটফুটে ছেলে সন্তান।বাচ্চাটি কাঙ্ক্ষিত খাবার টি খাওয়ার জন্য,মায়ের আঁচলে বারবার তার ছোট ছোট হাত দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছে।কিন্তুু এই মুহূর্তে নিশ্চুপ সেই নারী বাচ্চাটিকে খাবার দেওয়ার জন্য অপ্রস্তুত।কারণ, তার দিকে এক জোড়া পুরুষালি চোখ তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।”

“নীরবতা ভে**ঙে মেয়েটিকে রিয়াদ হোসেন বললেন,
‘সবকিছুই তো শুনলাম।আপনাকে রিমন ২ বছর আগে বিয়ে করে,আপনার বাবার বাড়িতে রেখেছে।আর এটাও বলেছে,
‘ভালো চাকরি পেলে আপনাকে তার বাড়িতে নিয়ে আসবে।’
কিন্তুু এখন তো সে আর এই পৃথিবীতে নেই।এখন আপনি কি চাইছেন?”

“তরুণী টি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে,তীব্র স্বরে বললো,
‘আমি.. আমার এবং আমার বাচ্চার অধিকার চাইছি।আমার মা অসুস্থ।বাবা মানুষের ক্ষেতে ফসল ফলিয়ে কোনোরকম দিন আনে দিন খায়।এমতাবস্থায় আমার বাচ্চার ভরনপোষণ চালাতে আমার পরিবার হিমশিম খাচ্ছে।আমি চাই রিমনের বাবা-মা আমাকে এবং তাদের নাতিকে মেনে নিয়ে,তাদের বাসায় আমাদের জায়গা দিক।আমি আমার স্বামীর নেতিবাচক চরিত্র নিয়ে কখনোই কোনো কথা বলবো না।আমি শুধু চাই,আমার বাচ্চা তার ন্যায্য অধীকার যেনো ফিরে পায়।”

“ওসি কিছু বলতে যাবেন,তার আগেই রিমনের মা চেয়ার থেকে উঠে তরুণীর কোল থেকে বাচ্চা টিকে নিজের কোলে নিয়ে বললেন,
‘হ্যা মা,আমি মেনে নিলাম তোমায় এবং আমার নাতি কে।তুমি আমাদের বাসায় চলো বৌমা।আমার ছেলের কু””কর্মের সাজা কেনো তোমরা পাবে?
ওর এতটা অধঃপতনের পেছনে আমরাও সমান ভাবে দায়ী।আমরা যদি ওকে সঠিক সময় শাসন করতাম,তাহলে আমাদের আজ এই ভ**য়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো না।’
বলেই তিনি বাচ্চাটির মুখ-মন্ডলে অসংখ্য চুমু এঁকে দিলেন।”

“রিমনের মায়ের কথায় তার স্বামী এবং সন্তানও সায় জানালো।সেই সাথে সহমত পোষণ করলেন সজিব চৌধুরী।”

“ওসি রিয়াদ হোসেন মুচকি হেসে বললেন,
‘ব্যাস,তাহলে তো সবকিছু মিটেই গেলো।আপনারা এখন নিশ্চিন্তে বাড়ি যেতে পারেন।আপনার ছেলের কেস নিয়ে আমরা সর্বোচ্চ দিয়ে তদন্ত করবো।আশা করি,আপনারা আমাদের ওপর ভরসা হারাবেন না।আরেকটা রিকোয়েস্ট থাকবে,
‘দয়া করে প্রেস-মিডিয়াকে অ্যাভয়েড করে চলুন।এদের বিতর্কিত প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার কারণে,আমরা অনেক সময় আমাদের তদন্ত থেকে মনযোগ হারিয়ে ফেলি।”

“রিয়াদ হোসেনের কথায় সায় জানালেন রিমনের পরিবার।তারপর তারা বিদায় নিয়ে চলে গেলেন নিজ গন্তব্যে।”

———
“বাসার ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে সজিব চৌধুরী সংক্ষেপে তার পরিবারের কাছে আজকের ঘটনা বর্ণনা করলেন।সোফার এক কোণে বসে ঘোমটার আড়ালে নাদিয়া সবকিছু শুনে,মনে মনে বললো,
‘ছিহ! কতটা নি**কৃষ্ট মানুষ সে।সেই খু**নি কে সামনে পেলে, এখন অনেকগুলো ধন্যবাদ জানাতাম।এদের মতো বি”ষাক্ত কীটের আ**ক্রমনে আজ তরুণীরা রাস্তায় পর্দা করে হেঁটে যেতেও ভয় পায়।যত্তসব নর**পি*শাচের দল!”

“নাদিয়ার থেকে কিছুটা দূরত্বে বসেছে দিগন্ত।রুমের মধ্যে সারাক্ষণ ঠোঁট কা**টা কথা বলে নাদিয়া কে জ্বালিয়ে ফেললেও, বাবা-মায়ের সামনে ভদ্রতা বজায় রাখার চেষ্টা করে।”

“চিন্তিত স্বরে দিগন্ত বললো,
‘বাবা প্রথমে রিমনের জন্য আফসোস হলেও,এখন কেনো জানি একটুও আফসোস হচ্ছে না।ওর জন্য এই শাস্তি প্রাপ্য ছিলো।যেমন কর্ম,তেমন ফল।’
দিগন্তের কথায় সহমত পোষণ করলেন তার মা।”

“রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে দিগন্ত এবং নাদিয়া রুমে গেলো।
দিগন্ত মোবাইলে ফেইসবুক স্ক্রল করছে,এমন সময় নাদিয়া ঝগড়ুটে স্বরে বলে উঠলো,
‘দেখেছো,কত নোং**রা পুরুষ?২বছর আগে গোপনে বিয়ে করেও,কতগুলো মেয়ের সাথে পরকীয়া করেছে।আমার তো এখন কোনো পুরুষ জাতিকেই বিশ্বাস হয় না।সব এক রকম চরিত্রহীন!”

“নাদিয়ার এহেন কথায়,তেঁতে উঠলো দিগন্ত।ফোন এক পাশে রেখে,কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
‘সব পুরুষের মধ্যে কিন্তুু আমিও পড়ি, হানি।বুঝে-শুনে কথা বলো।”

“তো আমি কি তোমাকে তাদের থেকে আলাদা করে বলেছি?”(ঝগড়ুটে সুরে বললো নাদিয়া)

“দেখো হানি,একদম আমার ভা**র্জিনিটি নিয়ে কথা বলবে না।আমি পিউর ভা***র্জিন প্রোম্যাক্স।অবশ্য গতকাল রাতে তুমি আমার স্বর্বস্ব কেড়ে নিয়েছো।নইলে, মেডিকেল টেস্ট করে তোমায় রিপোর্ট দেখাতাম হুম..।”

“কি?আমি তোমার সবকিছু কেড়ে নিয়েছি?নাকি তুমি নিয়েছো?এখনও আমার পুরো শরীরের কোমল জায়গা গুলোতে তোমার লাভ বা**ইটের দাগ স্পষ্ট।উফফ!দাগ গুলো এখন কালশিটে বর্ণ ধারণ করেছে।মিথ্যুক কোথাকার!”

“দিগন্ত গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
‘ওগুলো তো ভালোবাসার গভীর চিহ্ন হানি।সামনে আরও করবো।এখন নতুন তো,তাই একটু কম দিয়েছি।’
বলেই অন্যদিকে তাকিয়ে,ঠোঁট টিপে হাসলো দিগন্ত।”

“নাদিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,রুক্ষ স্বরে বললো,
‘লু**চু কোথাকার!মাথার মধ্যে শুধু নেগেটিভ চিন্তার বস্তা নিয়ে ঘোরে।”

“এই..এই দেখো,তুমি কিন্তুু আবারও আমার বিশুদ্ধ ভা**র্জিনিটিতে আ**ঘাত করছো।এটা কে বলা হয়, মানসিক নির্যাতন।এর জন্য আমার আদালতে এখন তোমাকে কঠোরতম শাস্তি পেতে হবে।সেই শাস্তির নাম হচ্ছে
‘হট রোমান্টিক শাস্তি।’
বলেই নাদিয়া কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বিছানায় পড়ে গেলো।”

“এদিকে দিগন্তের ভারিক্কি শরীর নাদিয়ার ওপর ছেড়ে দেওয়ায়, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলো তার।উফফ! উফফ..শব্দ করে বললো,
‘প্লিজ দিগন্ত, আমার উপর থেকে উঠে যাও।আমার নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।”

“কিছুটা সরে গিয়ে,নাদিয়ার বিউটি বোনে গভীর চুম্বন দিয়ে,দিগন্ত দুষ্টু হেসে বললো,
“এখন থেকে প্রতিদিন-রাত মিলিয়ে অসংখ্য বার তোমার এই ৭০কেজি ওজনের ভার সহ্য করতে হবে হানি,এটাই তোমার শাস্তি।’
বলেই নাদিয়ার ঘাড়ে মুখ গুজলো দিগন্ত।ধীরে ধীরে প্রিয় অর্ধাঙ্গিনী কে নিয়ে আবারও প্রেম সায়রে ডুব দিলো।”

“নাদিয়া ফেরাতে পারলো না তার প্রিয়তম কে।কি করে ফেরাবে এই মাতাল করা ভালোবাসার স্পর্শকে?ধীরে ধীরে সেও তার অর্ধাঙ্গের সাথে ভালোবাসার রংমিশেলে তলিয়ে গেলো।”

———-
“বেলকনির দোলনায় মন খারাপ করে বসে আছে নিধি।বিষন্ন মন নিয়ে একটার পর একটা মশা মা**রছে আর নির্জনের ফোনে লাগাতার ফোন করে যাচ্ছে।কিন্তুু অপরপাশ থেকে মিষ্টি স্বরে বারবার ‘সুইচ অফ ‘ বলে ওঠা নারীটির কন্ঠ শুনতে শুনতে মন বিষিয়ে উঠেছে তার।তোহা কয়েকবার নিধির কাছে এসে,ওকে বিভিন্ন ভাবে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।এটাও বুঝিয়েছে,যে

‘নির্জন ভাইয়ার হয়তো ফোন নষ্ট হয়ে গেছে।তাই যোগাযোগ করতে পারেনি।’

“নিধি অভিমানী স্বরে বলেছে,
‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।চাইলেই অন্য কারো ফোন থেকে যোগাযোগ করতে পারতো।”

“নিধির যুক্তিযুক্ত কথায় হার মানলো তোহা।ওর মানসপটে বারবার ভেসে
উঠছে,ফেইসবুকের ভিডিও ক্লিপে দেখা রিমনের বি**ভৎস কা**টা লা**শের চিত্র।শুকনো ঢোক গিলে, তোহা নিজের মন কে কন্ট্রোল করে ভাবলো,
‘নাহ!এই মুহূর্তে মাইন্ড চেঞ্জ না করলে, আমি পা**গল হয়ে যাবো।কি করা যায়,কি করা যায়।
কয়েক সেকেন্ড ভাবতেই, তোহার মাথায় দারুণ একটা আইডিয়া এলো।
ন্যানো সেকেন্ডে পুলকিত হলো তোহার মন।টেবিলে গিয়ে, নিধির কিনে আনা পিংক কালার পেপার দেখে হাসি মুখে বললো,
‘আপু ভালোই করেছে এগুলো কিনে এনে।এখন আমিও আমার প্রিয় প্রেমিক পুরুষ কে চিঠি দিতে পারবো।’
বলে কয়েক মিনিট ভেবে, চেয়ারে বসে কলম নিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখতে শুরু করলো।”

“প্রায় ১৫মিনিটে চিঠি লেখা শেষ করে,কয়েকবার পরীক্ষার খাতা দেখার মতো রিভাইস দিলো।তারপর খুশি মনে নিজের লেখা চিঠি শেষবারের মতো বিড়বিড় করে পড়তে থাকল,

“প্রিয়তম স্বপ্ন পুরুষ ,
আপনার দেওয়া নীল চিরকুট টি পড়ে আমার হৃদয় যেনো কেঁপে উঠলো।আপনি যে ভাষায় আমাকে প্রকাশ করেছেন, তা আমার কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে।আপনি যে আমাকে ‘স্বপ্নচারিনী’ বলে ডাকেন, তাতে আমি নিজেকে যেনো আরও বেশি বিশেষ মনে করি। আপনি আমার জীবনের প্রতিটি স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছেন।আপনার ভালোবাসা আমাকে প্রতিদিন নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়।

আপনার প্রস্তাবের জবাব দেওয়া আমার পক্ষে খুবই সহজ।কারণ, আমি প্রতিটি মুহূর্ত আপনার সঙ্গেই কা**টাতে চাই। আমি চাই, আমরা একসঙ্গে সেই গল্প লিখি, যা একদিন আমাদের সন্তানদের কাছে গর্বের সঙ্গে বলতে পারব।আপনি যে আমাকে জীবনের সহযাত্রী হিসেবে পেতে চান, তা আমার জন্য এক পরম সৌভাগ্য এবং সম্মানের বিষয়।আমি আপনার হাত ধরে সেই স্বপ্নের পথে হাঁটতে চাই প্রিয়তম।যেখানে প্রতিটি দিনই হবে নতুন, প্রতিটি রাতই হবে রঙিন-স্বপ্নময়।

হ্যাঁ, আমি আপনার সঙ্গেই থাকতে চাই, সারা জীবনের জন্য।

আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে আপনার জন্য অপরিসীম ভালোবাসা প্রিয়তম।

আপনার প্রিয় স্বপ্নচারিনী”

——-
“পুরো চিঠিটি পড়ে, হাসি মুখে ভাজ করলো তোহা।আজ মাহিরের নাইট ডিউটি।সে ভীষণ ব্যস্ত থাকবে।তাই সন্ধ্যার দিকে ১৬মিনিট কথা বলেছে তোহার সাথে।এতটুকু কথাই তোহার হৃদ-মাঝারে যথেষ্ট সুখ বয়ে এনেছে।তার প্রেমিক পুরুষ যে এত ব্যস্ততার মাঝেও সময় করে খোঁজ-খবর নেয়,এটাই তো তার কাছে পরম পাওয়া।’
ভেবে,মুচকি হেসে বিছানার এক পাশে শুয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।”

“অপরদিকে নিধি মনম**রা হয়ে কালো মেঘে ছড়ানো গুমট আকাশের দিকে নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।সীমাহীন অভিমানে তার মন ভার হয়ে রয়েছে।”

————-
“এদিকে বর্ষার মুখ-মন্ডল চুপসে গেছে।বিরক্তি-সূচক কন্ঠে বললো,
‘উফফ!নির্জন প্রায় ১ঘন্টা হতে
চললো,আমার সাথে চোর-পুলিশ খেলছো।আর একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছো।আর ভালো লাগছে না।প্লিজ, ব্যাক সিটে চলো জান।একটু পর মাঝ-রাত্রি হয়ে যাবে।’
গোমড়ামুখে কথাগুলো বলেই, নির্জনের দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে বক্ষ বিভাজনে লেপ্টে থাকা শাড়ির আঁচল কিছুটা সরালো।”

“নির্জন সেদিকে আড়চোখে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে বললো,
‘ওয়াও.. ফুটফুটে সুন্দর।’

“নির্জনের সাড়া পেয়ে,মৃদু হেসে ঠোঁট কা**মড়ে, বর্ষা শাড়ির আঁচল আরও কিছুটা সরাতেই বক্ষবন্ধনী স্পষ্ট হয়ে উঠলো।”

“নির্জন সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঘনঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে,হাস্কি ভয়েসে বললো,
‘বুঝেছি ডার্লিং,তোমার আর তর সইছে না।এক কাজ করো, পুরো টা খুলে ফেলো।একটু পর তো এমনিতেও তোমার গায়ে সুতাও থাকবে না।সবকিছু অতি নিখুঁত ভাবে করা হবে সোনা।তবে এই মুহূর্তে আমার নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পড়ছে সুইটহার্ট।তোমার বক্ষগহ্বরের উথাল-পাথাল ঢেউয়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে, সোনা।অবশ্য একটু পর,আমার ডার্ক রোমান্সের তীব্র দহনে পো**ড়াবো তোমায় ডায়না।”

“লাজুক হেসে,বর্ষা ছলাকলা করে বললো,
‘উফফ… নির্জন তুৃমি না খুব দুষ্টু।’

” হাহাহাহা.. ওকে সোনা, একটু পর তুৃমি আর আমি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবো।তার আগে তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।ওয়েট দিচ্ছি।”

“উমম..নির্জন এখন কিন্তুু কোনো খেলা হবে না।”

“নির্জন বাকা হেসে বর্ষার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উত্তেজিত স্বরে বললো,
‘ওকে, ওকে ডান।এখন খেলা অফ।আমার মনে হচ্ছে,দীর্ঘ সময় খেলার ফলে তোমার খুব ক্ষুধা লেগেছে।তাছাড়া একটু পর আমাদের মধ্যে যা হতে চলেছে,তার জন্য তোমার অনেক এনার্জি লাগবে সোনা।নইলে আমার ডার্ক রোমান্সের ধক সামলাতে পারবে না;ওয়েট সোনা।’
বলেই নির্জন ব্যাক সিট থেকে একটা ব্যাগ এনে, দুই উরুর ওপর রেখে পর্যায়ক্রমে ৬টি
খাবারের বাটি বের করে,মুচকি হেসে বললো,

‘এখানে আসার আগে এই খাবার গুলো আমি নিজের হাতে বানিয়েছি সোনা;শুধু তোমার জন্য প্রিন্সেস ডায়না।”

“বর্ষা বিস্ময়ের শেষ সীমানায় পৌঁছে গিয়ে বললো,
‘হোয়াট আ সারপ্রাইজ জান!তুমি আমার জন্য এত কষ্ট করে খাবার বানিয়েছো?রিয়েলি ইউ আর আ পারফেক্ট পার্সন ফর মাই লাইফ জান।”

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,
‘হুম সোনা,আমি নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে এগুলো তোমার জন্য বানিয়েছি।এখানে ৬ পদের খাবার আছে,
১.চিকেন ফ্রাইড রাইস,২.ক্রিম রোল,৩.গরুর মাংসের কাবাব,৪.ভেজিটেবল স্যুপ,৫.চিজ পাস্তা,৬.ফলের সালাদ।

“৬ রকমের খাবারে ৬ রকমের বিশেষ উপাদান মিশ্রিত আছে।সেই সাথে এগুলোর সাথে মিশে আছে আমার শীতল ঠোঁটের
‘হট এন্ড ডার্ক কিস।’
বলেই নির্জন প্রথমে ডান হাতে একটা হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে,একটি বাটি খুলে,চামচ দিয়ে চিকেন ফ্রাইড রাইস উঠিয়ে বর্ষার মুখের সামনে ধরতেই,বর্ষা হাসি মুখে খেয়ে নিলো।চোখ বন্ধ করে বললো,
‘ওয়াও ইয়াম্মি জান।তোমার হাতে তো পুরো জাদু আছে।সত্যি বিয়ের পর আমার আর কষ্ট করে রান্না করতে হবে না, হিহিহি।
আচ্ছা,তুমি খাবে না?”

“উহুম.. আমি খেয়ে এসেছি।তুৃমি খাও সোনা।’
বলেই আরেক চামচ ফ্রাইড রাইস দিলো।”

“বর্ষা তৃপ্তির সহিত সেটা খেলো।কয়েক সেকেন্ড পর তার মনে হলো,গলাটা কেমন যেনো ধরে আসছে।’
বর্ষা অস্ফুটস্বরে বললো,
‘গলাটা কেমন চিনচিন করে ধরে আসছে নির্জন।’

“নির্জন পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘কি বলোতো সোনা,এই বিশেষ উপাদানের মধ্যে চিংড়ি যোগ করেছি।হয়তো, এটাতে তোমার এলার্জি আছে।আচ্ছা বাদ দাও, বাকি খাবার গুলো একটু পরে খাওয়াবো।এখন তোমাকে আমার স্পেশাল হাত দিয়ে সাজিয়ে দিবো।আমি কিন্তুু দারুণ সাজাতে পারি।ইউটিউবে ভিডিও দেখে শিখেছি।তোমাকে দিয়ে ফার্স্ট ট্রাই করবো।’
বলেই খাবারের বাটিগুলো সরিয়ে ব্যাকসিট থেকে আরেকটি ব্যাগ এনে,ভেতর থেকে লিপস্টিক, আইলাইনার এবং নেইলপলিশ বের করলো।”

“বর্ষা তো খুব খুশি হয়ে গেলো।ভাবলো,
‘একের পর এক সারপ্রাইজ দিচ্ছে নির্জন।এমন একজনকেই তো সে জীবনে চেয়েছিলো।’
খুশি হয়ে বললো,
‘আই লাভ ইউ সো মাচ নির্জন।’
বলেই হ্যান্ড ব্যাগ থেকে টিস্যু দিয়ে নিজের ঠোঁট জোড়া মুছে বললো,
‘দাও..তোমার মনের মাধুরী মিশিয়ে আমাকে সাজিয়ে দাও নির্জন।”

“নির্জন মুচকি হেসে,প্রথমে বর্ষার ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতেই,ঠোঁট জ্বলে উঠলো তার।ধীরে ধীরে মনে হচ্ছে ঠোঁট অসাড় হয়ে গেলো।’
মৃদুস্বরে বললো,
“নির্জন এটা কোন ব্র্যান্ডের লিপস্টিক?কোনো সুঘ্রাণ নেই কেনো?আর আমার কেমন যেনো লাগছে।”

“সোনা, এটা হচ্ছে ‘Dark Brand’ এর লিপস্টিক।এগুলো সবই একই ব্র্যান্ডের।আর এগুলো সব আমি নিজে হাতে তোমার জন্য স্পেশাল ভাবে তৈরি করেছি।কোনো সুগন্ধি ইউজ করিনি,তাই স্মেল নেই।সবগুলো ভেজাল মুক্ত কসমেটিকস।’
বলে বাঁকা হাসলো নির্জন।”

“অতঃপর দ্রুত গতিতে বর্ষার নখে থাকা সবুজ রঙের নেইলপলিশের ওপর,মনযোগ দিয়ে কালো রঙের নেইলপলিশ দিতে থাকল।”

“নেইলপলিশ নখে লাগতেই, বর্ষার মনে হলো ওর আঙ্গুল গুলো অনুভূতিহীন হয়ে গেছে।
চোখ-মুখ কুঁচকে বললো,
‘নির্জন.. আমার আঙ্গুল আর হাত কেমন যেনো অসাড় হয়ে আসছে।”

“নির্জন কোনো কথা না বলে,
দ্রুত গতিতে আইলাইনারের ক্যাপ খুলে, বর্ষার দিকে ঝুঁকে এসে, গ্লাভস পড়া হাত দিয়ে চোখে আইলাইনার দিয়ে পৈ**শাচিক হাসি দিয়ে বললো,
‘এইবার আসল মজা শুরু হবে সোনা।”

“নির্জন বলতে দেরি,সেগুলোর কার্যক্রম শুরু হতে দেরি নেই।বর্ষার শরীর ধীরে ধীরে বি**ষাক্ত যন্ত্রণায় পুরো চামড়া অনুভূতি শূন্য হতে থাকল।কথা বলতে পারছে না সে।”

“নির্জনের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।চোখ দিয়ে টপটপ করে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।আহ! কি যন্ত্রণা!চি**ৎকার করে বলতে পারছে না সে।”

“নির্জন শ**য়তানি হাসি দিয়ে, ব্যাগ থেকে আরেকটা হ্যান্ড গ্লাভস বের করে বাম হাতে পরে নিলো।অতঃপর বর্ষার দিকে হিং**স্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
‘কেমন উপভোগ করছো সোনা?ডার্ক রোমান্স করবে না?চলো না, ব্যাক সিটে গিয়ে দু’জনে ডার্ক স্টাইলে ডান্স করি।’
বলেই শক্ত করে চোয়াল চেপে ধরলো বর্ষার।কন্ঠে প্রবল তেজ নিয়ে বললো,

“আরে শা**লি, মা***, বে**,প**তিতা তুই ভাবলি কি করে,যে এই নির্জন খান তোর সাথে ‘Dancing Car’ খেলায় মেতে উঠবে?হ্যা?ভাবলি কি করে?এই..অ্যাই..এই কথা বল খা***- মা**.. তোকে তো আমি আজ ধ্বংস করে ফেলবো রে।তুই আমার শরীরে স্পর্শ করেছিস।তোর এই হাত আমি ছি**ন্ন-ভিন্ন করে দিবো শা**লি।’
বলেই ব্যাক সিট থেকে মাঝারি সাইজের ধা**রালো চা**পাতি এনে, বর্ষার ডান হাতে দিলো এক টান।”

“বর্ষা অনেক আগেই স্থির হয়ে গিয়েছিলো।আচানক হাতে চা**পাতির আ**ঘাত পাওয়ায়,প্রবল যন্ত্রণায় কিছুটা কুঁকড়ে উঠলো সে।কিন্তুু মুখ থেকে আওয়াজ বের হলো না।আহ! কি কষ্ট।উফফ! কি ব্যথা।”

“পৈ**শাচিক হাসলো নির্জন।বর্ষার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“এই চরিত্রহীনা বে**, মা**,বারো ভা**তারি শোন,তোর এই কসমেটিকসে কি মিশিয়েছি জানিস?হাহাহা.. বিষ মিশিয়েছি,বিষ..।ওকে,তোকে ডিটেইলসে বলছি শোন..

এই লিপস্টিকে মেশানো আছে “টেট্রোডোটক্সিন”—
এটি একটি ভয়**ঙ্কর বিষ, যা পাফারফিশ থেকে পাওয়া যায়। এই বিষ নার্ভ সিস্টেমকে ধ্বংস করে,ধীরে ধীরে শরীরকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে তোলে।ঠোঁটে লাগানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই তোর অনুভূতি হারিয়ে যেতে শুরু করলো,তোর ঠোঁটের চারপাশে অসহ্য চুলকানি এবং জ্বালা শুরু হলো।’

তারপর এই আইলাইনারে মেশানো ছিলো “রাইসিন”, যা ক্যাস্টর বিন থেকে উৎপাদিত। রাইসিন এমন এক বিষ, যা শরীরের কোষগুলোকে ধ্বংস করে। এটি তোর চোখের চারপাশে তীব্র জ্বলন সৃষ্টি করেছে এবং চোখের স্নায়ুগুলোতে ধীরে ধীরে জ্বালা করতে থাকে। তোর চোখের সামনে সবকিছু ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে উঠলো, এবং সে অসহ্য ব্যথায় কাঁপতে থাকলি তুই খা**** মা**।

হাহাহা.. এই দেখ ‘নেইলপলিশ’। এই নেইলপলিশে মেশানো ছিলো “ডাইমিথাইলমারকারি”
একটি শক্তিশালী নিউরোটক্সিন,যা সরাসরি মস্তিষ্কের কোষে আক্রমণ করে।এটি চামড়ার ভেতর দিয়ে শোষিত হয়ে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং তোর মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে। নেইলপলিশ লাগানোর পরপরই তোর হাতের আঙ্গুল গুলো অসাড় হয়ে গেলো এবং তুই অনুভব করতে শুরু করলি মস্তিষ্কে ধা**রালো ছু**রির মতো ব্যথা।”

“হাহাহাহা…।
গ**র্জন করে হেসে,বর্ষার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে,অকথ্য ভাষায় গা**লাগা**লি করতে থাকল নির্জন।”

“এদিকে বর্ষা ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিলো, তার পুরো শরীর কাঁপছিলো, চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছিলো, ঠোঁট ফেটে যাচ্ছিলো, এবং আঙ্গুলের নখগুলো কালো হয়ে যাচ্ছিলো।
নির্জন তার সামনে বসে কুটিল হেসে,তার তীব্র যন্ত্রণার প্রতিটি মুহূর্ত, নিদারুণ ভাবে উপভোগ করছিলো।”

“বর্ষা যখন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে যাচ্ছিলো,তখনই নির্জন সেই খাবারের বাটিগুলো এনে বর্ষার চোয়াল শক্ত করে ধরে, মুখ হা করিয়ে,
এক এক করে সব খাবার গুলো মুখে ঢুকাতে থাকল।অনুভূতি শূন্য বর্ষা একের পর এক খাবার আপনা-আপনি গিলতে থাকল।”

“খাওয়ানো শেষে নির্জন পৈ**শাচিক হাসি দিয়ে, ব্যাক সিট থেকে আরেকটি ব্যাগ এনে
সেফটি পোশাকের প্রস্তুুতি নিলো।”

“বর্ষার শরীরে এসিড নিক্ষেপ করার আগে, নির্জন একটি পূর্ণ সেফটি পোশাক পরিধান করলো;যা তাকে এসিডের তীব্র প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখবে।”

“প্রথমে নির্জন একটি কেমিক্যাল-প্রুফ স্যুট পরিধান করে, যা শক্তিশালী পলিমার দ্বারা তৈরি।স্যুটটি সম্পূর্ণভাবে সীলমোহর করা থাকে, কোনো ফাঁক নেই, এবং এসিডের তীব্র প্রভাব থেকে সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষা প্রদান করে। স্যুটের বাইরের স্তরটি বিশেষভাবে তৈরিকৃত, যা এসিডের ক্ষতিকর প্রভাব রোধ করে।”

“রিমলেস চশমাটি খুলে,নির্জন হেলমেট পড়লো।যা একটি শক্ত পলিকার্বোনেট হেলমেট। যা মুখ ও মাথাকে সুরক্ষা প্রদান করে।হেলমেটের ভেতরের লেন্স এন্টি-ফগ প্রযুক্তির সাথে প্রস্তুুত করা হয়,যাতে নির্জন পরিষ্কারভাবে দেখতে পারে এবং কোনো ঝামেলা ছাড়াই কাজ করতে পারে।”

“স্পেশাল হ্যান্ড গ্লাভস পড়লো।যা এসিড-প্রতিরোধী গ্লাভস হিসাবে পরিধান করা হয়।এটি হাত কে এসিডের প্রভাব থেকে রক্ষা করে।গ্লাভসগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী এবং কেমিক্যালের ক্ষতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধী।”

“তারপর বুটস পড়লো।যা ভারী ধাতব এবং কেমিক্যাল-প্রুফ বুটস, যা পায়ের সুরক্ষা প্রদান করে এবং এটি স্লিপ-প্রুফ সোল দিয়ে তৈরি।”

“তারপর গাড়ি থেকে বের হয়ে বর্ষা কে টেনে-হিঁচড়ে নামালো।অতঃপর নদীর দূরবর্তী স্থানে শুকনো বালিতে টান টান করে ওর দেহ ধা**ক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
তারপর সেখানে হাটু গেড়ে বসে হিং**স্র হাসি দিয়ে, বাঘের ন্যায় গ**র্জন করে বললো,

“প্রথম পদ:চিকেন ফ্রাইড রাইস – এটাতে কি ছিলো জানিস?
হাহাহা..বিষ..
“হেমোক্রোমেটোসিস”
(অতিরিক্ত আয়রন), যা র**ক্তে আয়রনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং অঙ্গগুলোকে ধ্বংস করে।”

“দ্বিতীয় পদ: ক্রীমরোল –এটাতে ছিলো
বিষ: “এক্সক্লোরাইড”
যা দ্রুত র**ক্তের সঞ্চালন বন্ধ করে দেয়।”

“তৃতীয় পদ: ভেজিটেবল স্যুপ –
বিষ: “সায়ানাইড”
যা হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বন্ধ করে দেয়।এতে শরীরের কোষগুলো দ্রুত ধ্বংস হয়।”

“চতুর্থ পদ: গরুর মাংসের কাবাব –
বিষ: “পারাথিওন”
যা শ্বাসকষ্ট এবং ত্বকের পচন সৃষ্টি করে।”

“পঞ্চম পদ:চিজ পাস্তা –
বিষ: “অরগানোফসফেট”
যা স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে।”

“ষষ্ঠ পদ: ফলের সালাদ –
বিষ: “অ্যাসেনিক”
যা মা**রাত্মকভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলোর ক্ষতি করে।”

“হাহাহা.. আমার কতো বুদ্ধি তাই না?তুই আমার শরীরে স্পর্শ করে অনেক বড় অপরাধ করেছিস।আমার শরীরের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে মিশে থাকবে শুধু আমার ডার্ক কুইনের গভীর স্পর্শ।তোর মতো ডাইনী,নোং**রা,নর্দমার কীটের নয়।এই বে**, মা**,কু***, শু***..বুঝেছিস তুই?বুঝেছিস?”

“বর্ষা অনেক আগেই নিথর,নিস্তব্ধ,নিশ্চল হয়ে গেছে।সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই নির্জনের।সেতো তার ভয়ং**কর,হিং**স্র পরিকল্পনা সম্পূর্ণ করতে ব্যস্ত।”

“নির্জন বর্ষার দিকে হিং**স্র শকুনের ন্যায় তাকিয়ে বললো,
‘এখন তোকে এক্সট্রা ভাবে স্পেশাল শাস্তি দেওয়া হবে।তোর উত্তেজনা পূর্ণ অঙ্গ গুলোর খায়েশ চিরতরে মিটিয়ে দিবো।’
বলেই নির্জন বর্ষার গায়ে আগে থেকে এনে রাখা, এক বোতল পেট্রোল ঢেলে দিয়াশলাই ঘঁষে ওর শরীরে ছুঁড়ে মা**রতেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো।’
সেটা দেখে হো হো করে উচ্চস্বরে তৃপ্তির হাসি দিলো নির্জন।অতঃপর আগুনের
তাপ ২৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বর্ষার শরীরের ত্বক, মাংস, এবং হাড়কে দ্রুত জ্বালিয়ে দিলো।তীব্র আগুনের তাপে, ওর শরীরের নরম ত্বক গলে গেলো এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো উন্মুক্ত হয়ে গেলো।”

“হাহাহাহা…গ**র্জন করে হেসে উঠলো নির্জন।”

“আগুনে পোড়ানোর পরেও নির্জন ক্ষান্ত হলো না।তারপর, বর্ষার বেঁচে থাকা অংশে ফ্লুরো হাইড্রোক্লোরিক এসিড ঢেলে দিলো।
এসিড শরীরের প্রতিটি অংশকে দ্রবীভূত করলো। ত্বক প্রথমে পঁচে যেতে থাকল, তারপর পেশি, হাড় এবং অন্যান্য উপাদানগুলো ধীরে ধীরে তরল হয়ে যেতে থাকল।এসিডের তীব্র প্রভাব ত্বককে গলিয়ে দিলো, র**ক্তনালীগুলো কে পো**ড়ালো, এবং শরীরের কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট রাখল না।”

“এসিড নিক্ষেপের জন্য নির্জন যথেষ্ট পরিমাণ এসিড ব্যবহার করলো।যাতে শরীরের সমস্ত অংশ দ্রবীভূত হয়ে যায়। নির্জন ফ্লুরো হাইড্রোক্লোরিক এসিডের প্রভাব নিশ্চিত করার জন্য প্রায় ৫ লিটার এসিড ব্যবহার করলো,যাতে বর্ষার কঙ্কালসার শরীর বালির সাথে পুরোপুরি মিশে যায়।ফলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে সে।”

“This is the fulfilled, perfect terrible plan, perfect crime, perfect murder, and perfect serial killer (Psycho)”

“অবশেষে নির্জন তার মনের সাধ পরিপূর্ণ ভাবে মিটিয়ে,আবারও পৈ**শাচিক হাসি দিয়ে,হুং**কার দিয়ে বলে উঠলো,
‘ওহে চরিত্রহীনা,নির্বোধ নারী..
তোকে মে**রে অনেক দিন পর আমি সবচেয়ে তৃপ্তি পেলাম।
আমি জানতাম,তোর মতো জঘন্য পঁচা নর্দমার কীট,প**তিতা আমার বিচক্ষণ মস্তিষ্কে আবিষ্কার করা ধাঁধার উত্তর কখনো দিতে পারবে না।
এখন উত্তর গুলো শোন,

১.ধাঁধা-
“আমি আগুনের মতো গরম, আবার বরফের মতো শীতল।
আমাকে পান করলে আমি তোমার জীবন নিই,
কিন্তু সবাই আমাকে নিয়ে জীবন বাঁচায়। আমি কে?”

*উত্তর:
“জল।”
(এখানে ধাঁধার মধ্যে জলকে বোঝানো হয়েছে—জল গরম হতে পারে, আবার শীতলও হতে পারে। অতিরিক্ত পান করলে মৃ**ত্যু হতে পারে, কিন্তু পানি ছাড়া জীবনধারণ অসম্ভব।)

২.ধাঁধা-
“আমার কোনো শরীর নেই, কিন্তুু আমি তোমার জীবন ছুঁয়ে দেখতে পারি।
আমি নীরব, কিন্তুু যখন আসি, তখন সবাই ভয় পায়। আমি কে?”

*উত্তর:
“মৃ**ত্যু।”
(মৃ**ত্যু কোনো শরীর ধারণ করে না, কিন্তুু সবাইকে ছুঁয়ে যায়।এটা নীরব ভাবে আসে, কিন্তুু এর আগমনে ভয় হয়।)

৩.ধাঁধা-
“আমি অন্ধকারের সন্তান, আলোয় দেখা যায় না।
যখন আমি তোমার কাছে আসি, তুমি আর অন্য কিছু দেখতে পাও না। আমি কে?”

*উত্তর:
“ছায়া।”
(ছায়া অন্ধকারের সৃষ্টি, আলো থাকলেও তা আলোকে ঢেকে দেয়।)

[ধাঁধা + উত্তর:~মেহের আফরোজ]

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে