#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]
“দিগন্ত ঠোঁট টিপে হেসে আশেপাশে তাকিয়ে নিচু স্বরে বললো,’সুইট,কিউট,ঝাল-টক-মিষ্টি রোমান্স করবো হানি।”
“দিগন্তের এহেন কথায় লজ্জা পেলো নাদিয়া।পরক্ষণেই মুখ ভেং**চি কে**টে বললো,’বাসর রাতে তোমায় টক-ঝাল মিষ্টি শাস্তি দিবো।কেনো দিবো,সেটা বাসর রাতেই বলবো।’বলেই ফোন কে**টে দিলো নাদিয়া।”
“হঠাৎ করে ফোন কে**টে দেওয়ায় দিগন্ত হতভম্ব হয়ে গেলো।ভাবলো,’কি হলো?রোমান্টিক কথায় কি ওর এলার্জি আছে নাকি?মধুর কথা বললেই দেখি তেলাপোকা দেখার মতো লাফিয়ে ওঠে।নাহ,বিষয়টি ভালো করে খতিয়ে দেখতে হবে।নইলে পরবর্তীতে বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ঝামেলা হবে।’ভেবে দুষ্টু হাসলো দিগন্ত।”
———-
“দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো।রাতে নীলাভ ডিম লাইটের মৃদু আলোতে বালিশে হেলান দিয়ে, অর্ধশোয়া অবস্থায় মুঠোফোনে কথা বলছে নিধি এবং নির্জন।আর আজ তোহা কে নিধি বেলকনিতে পাঠিয়ে দিয়েছে।তোহা বেলকনিতে যেতে চায় নি।কারণ বেলকনিতে খুব মশা জ্বালাতন করে।কয়েলের ধোঁয়ার গন্ধ খুব বিশ্রী লাগে তোহার কাছে।কিন্তুু নিধি আজ কিছুতেই বেলকনিতে যাবে না।তাই তোহা কে জোর করে পাঠিয়েছে।”
“তোহা প্রথমে বেলকনিতে না যাওয়ার জন্য পায়চারি করছিলো।কিন্তুু নিধি যখনই বলেছে,ওর কথা না শুনলে তোহার নতুন ফোন বেলকনি থেকে ফেলে দিবে;তখনই তোহা হনহন করে চলে গেছে।তাছাড়া মাহিরের সাথেও তো প্রেমালাপ করতে হবে।ফাইনাল পরীক্ষার আর মাত্র ২১ দিন বাকি আছে।পড়াশোনার প্রেশারে মাহির কে তোহা তেমন ভাবে সময় দিতে পারে না।মাহির বিষয়টি বুঝতে পেরে,তোহা কে শুধু ঘুমানোর আগে ১০মিনিট কথা বলার জন্য অনুরোধ করেছে।এই অনুরোধ কিভাবে ফেলবে তোহা?প্রিয়জনের এতটুকু আবদার রাখাই যায়।তাই ঘুমানোর আগে তোহা বেলকনির দোলনায় বসে মাহির কে ফোন দিলো।”
“এদিকে বিছানায় পা দুলিয়ে নিধি নির্জনের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।নিধি নির্জন কে বললো,’আগামীকাল তো দিগন্ত ভাইয়া এবং নাদিয়ার বিয়ে।আমি নাদিয়া কে একটা সোনার আংটি উপহার দিবো।আপনি কি উপহার দিবেন?”
“নির্জন বললো,’আমি দিগন্ত কে আমার লেখা একটা বই দিবো।কিভাবে নিজের প্রিয়জনকে নিজের আয়ত্তে রাখা যায়;এই টপিক নিয়ে লেখা।আর একটা ব্র্যান্ডের হ্যান্ড ওয়াচ গিফট করবো।”
“নির্জনের কথা শুনে নিধি অবাক হয়ে,অর্ধশোয়া থেকে পুরোপুরি বসে পড়লো।উত্তেজিত স্বরে বললো,’তাই নাকি?আপনি বইও লিখেন?ওয়াও..ইন্টারেস্টিং।তো আপনার লেখা বইয়ের নাম কি?”
“নির্জন বাঁকা হেসে বললো,’বিষাদের ক্রান্তিলগ্নে’।”
“বইয়ের নাম শুনে নিধির খুব পছন্দ হলো।এক্সাইটেড হয়ে বললো,’বইয়ের আরও কোনো কপি আছে?আমাকে দেওয়া যাবে?”
“নির্জন মুচকি হেসে বললো,’উহুম তোমার আর আমার জন্য অন্য আরেকটি বই লিখবো।অলরেডি লেখা শুরু করেছি।তবে নাম টা এখনও ঠিক করিনি।এই বই শুধু তুমি পড়বে আর আমাকেও পড়ে শোনাবে।তবে সেটা বিয়ের পর।ওকে ডার্ক কুইন?”
“খুশি হয়ে গেলো নিধি।হাসিমুখে বললো,’হুম হুম অবশ্যই..আমি তো ভীষণ এক্সাইটেড আপনার লেখা বই পড়ার জন্য।আমার তো এখনই আপনার কাছে উড়ে যেতে ইচ্ছে করছে।আমার যদি পাখির মতো ডানা থাকত,তাহলে আমি ঠিক আপনার কাছে চলে যেতাম।”
“উফফ! কতো সুন্দর করে কথাগুলো বললো ডার্ক কুইন।কথাগুলো যেনো নির্জনের হৃদয়ের গভীরে গিয়ে ভালো লাগার আস্তরণ তৈরি করলো।হাস্কি ভয়েসে বললো,’চলে এসো না ডার্ক কুইন।তুমি আমার কাছে এলে,নির্দ্বিধায় তুমি আমাকে দেখবে আর আমি তোমাকে।তবে স্পর্শ করবো না তোমায়; কথা দিলাম।শুধু মন ভরে গভীর অনুভূতি নিয়ে দেখবো তোমায়।আসবে জানপাখি?আমি তোমার বাসার সামনে আসি?”
“নির্জনের এহেন কথায় আশ্চর্যান্বিত হলো নিধি।ভাবলো,’ওমা! আমি তো এমনি খুশি হয়ে বললাম।সে তো দেখছি পুরোপুরি সিরিয়াস!ধুরো, আমিও না…সবসময় উল্টাপাল্টা কথা বলি।’ভেবে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’নির্জন পা**গল নাকি আপনি?এতো রাতে আমি একা একটা মেয়ে আপনার বাসায় যাবো?তাছাড়া আমাদের বিয়েও হয় নি।কেউ দেখলে কি ভাববে?আর আমি তো এটা মজা করে বললাম।আপনি তো দেখছি সিরিয়াসলি নিয়েছেন হিহিহি।”
“নিধির রসিকতা শুনে চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেলো নির্জনের।কর্কশ স্বরে বললো,’এর মানে তুমি আমার প্রতি সিরিয়াস না তাই তো?সবসময় মজা করে কথা বলো তাই না?আমার অনুভূতি তোমার কাছে মূল্যহীন?এতোগুলো কথা ফিল করে বললাম,সেগুলো তোমার মন ছুঁতে পারেনি?কি হলো কথা বলছো না কেনো?আনসার মি!”
“এই প্রথম নির্জন এতটা রেগে কথা বলায় হকচকিয়ে গেলো নিধি।আনমনে ভাবলো, ‘আমি আবার কি ভুল বললাম?আমি জাস্ট দেখা করার বিষয়টি নিয়ে বুঝালাম।এই লোক তো দেখছি উল্টা বুঝে বসে আছে।’ভেবে শুকনো ঢোক গিলে বললো,’নির্জন আমি কিন্তুু এটা বলি নি।আমি বলেছি যে,এতো রাতে অবিবাহিত একজন মেয়ে অবিবাহিত একজন ছেলের বাসায় যাওয়া অনুচিত।যতই আমরা প্রেম করিনা কেনো।প্রেমের মানে তো আর রুমডেট বাধ্যতামূলক নয় তাই না?আর আপনি আমার সাথে কিছু না করলেও,বাহিরের মানুষ তো সেটা কে অন্য চোখে দেখবে।আমি সেটাই বোঝাতে চেয়েছি।প্লিজ আপনি এতটা রেগে যাবেন না।”
“নিধির কথায় নির্জন কিছুটা স্থির হলো।বাহ্যিক ভাবে সে থেমে গেলেও,মস্তিষ্কের ভয়ং**কর চিন্তা ধারা থেমে থাকে নি।কিন্তুু আপাতত নিজেকে দমিয়ে রাখতে কিছুটা সক্ষম হলো নির্জন।হয়তো নিধি সামনে থাকলে সেটাও হতো না।মস্তিষ্কের নার্ভগুলো হয়তো হিং**স্রতায় সক্রিয় হয়ে উঠতো।”
“দীর্ঘশ্বাস ফেলে নির্জন স্বাভাবিক স্বরে বললো,’ডার্ক কুইন আমি যতটুকু জানি, বিয়েতে সাধারণত বর পক্ষ থেকে টাকা উঠানো,বরের জুতা চুরি করা থেকে শুরু করে বেয়াই-বেয়ানদের মধ্যে অনেক ধরনের আড্ডা হয়।এগুলো আমি পছন্দ করি না।আমি বরপক্ষ হলেও এগুলো থেকে দূরত্ব বজায় রাখবো।আশা করি তুমিও দূরে থাকবে।আর বিয়েতে কোনো গর্জিয়াস সাজ দিবে না।বোরকা আর হিজাব পড়ে আসবে।আর পুরো বিয়েতে মুখে মাস্ক পড়ে থাকবে।শুধু খাওয়ার সময় খুলবে।মনে থাকবে?”
“নিধির প্রতি নির্জন কতটা কেয়ারিং আর পজেসিভ।’ভেবে নিধির মনে প্রজাপতিরা ডানা মেলে উড়তে থাকল।কিন্তুু নাদিয়ার বিয়েতে তো নিধির খুব সাজতে ইচ্ছে করছে;বেস্টফ্রেন্ড বলে কথা!ভাবলো,’বোরকা আর হিজাব পড়ে একটু সাজবো হুমম।এতে নির্জনও খুশি হবে।কিন্তুু এটা এখন বলা যাবে না।এখন এগুলো বললে নির্জন রেগে যেতে পারে।’ভেবে নিধি নিজের কাজে নিজেই অবাক হয়ে ফের ভাবলো,’হায়…আমার মতো খিটখিটে স্বভাবের মেয়ে কিনা আরেকজনের রাগের পরোয়া করছে?ইশশ…আমাকে নিশ্চয়ই নির্জনের প্রেমরোগে ধরেছে।তাই তো আমার মেজাজ আকাশে উঠে গেছে।তার ওপর নির্জনের দুষ্টু-মিষ্টি কথায় বেশ লজ্জাও পাচ্ছি।অবশ্য লজ্জা পাওয়াটাই স্বাভাবিক।কারন,লজ্জা নারীর ভূষণ।’ভেবে কপালে হাতের উল্টো পিঠ ঠেকিয়ে লাজুক হাসলো নিধি।”
“নিধির স্মিত হাসির শব্দ শুনতে পেলো নির্জন।হাস্কি ভয়েসে বললো,’আমার কথা ভেবে হাসছো ডার্ক কুইন?”
“আপনি বুঝলেন কিভাবে?”
“উমম..কারণ,তোমার মাইন্ড এখন আমার কন্ট্রোলে।এনিওয়ে,এখন একটা ডিপলি কিস করো আমার মতো করে।”
“লজ্জায় যেনো বেগুনি হয়ে গেলো নিধি।ফোনের অপরপাশ থেকেই বুকে ধুকপুকানি শুরু হলো।লজ্জায় হাসফাস করতে থাকল নিধি।ঠোঁট কা**মড়ে বললো,’আগামীকাল দেখা হবে নির্জন।আমি এখন ঘুমাবো।”
“নির্জনের মন ক্ষুন্ন হলো।কপট রাগ দেখিয়ে বললো,’সামনা-সামনি তো দিতে বলিনি।আর সেটা আমি চাইও না।ফোনে তো দিতেই পারো।”
“কথা ঘুরাতে চাইলেও নির্জনের কথায় আটকে গেলো নিধি।মৃদুস্বরে বললো,’নির্জন গুড নাইট।প্লিজ রাখি;আমার খুব লজ্জা লাগছে।”
“নির্জন রেগেমেগে কিছু বলতে যাবে,ঠিক তখনই ভেতর থেকে ‘হৃদয়’ বলে উঠলো,’নির্জন স্টপ প্লিজ।তোমার কথা অমান্য করার জন্য তাকে সামনা-সামনি শাস্তুি দিবে।এখন নয়।”
“থেমে গেলো নির্জন।রাগ কন্ট্রোল করার জন্য কপালে চার আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে বাঁকা হেসে, ফোনের অপর পাশ থেকে কয়েকবার ডিপলি কিস করে হাস্কি ভয়েসে বললো,’বিয়ের পর আর কোনো কথা শুনবো না।তখন চাইলেও বাঁধা দিতে পারবে না।গুড নাইট মাই ডার্ক কুইন।লাভ ইউ জানপাখি।’বলেই ফোন কে**টে দিলো নির্জন।”
“নির্জন ফোন রাখতেই বুকে হাত দিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ছাড়লো নিধি।কিছুক্ষণ আগের কথা ভেবে মুচকি হেসে বললো,’ইশশ! নির্জন কতো রোমান্টিক।দেখলে একটুও বোঝা যায় না।এমন একজন কেই তো জীবনে চেয়েছিলাম।উফফ! আমি কতো লাকি।’ভেবে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।কিন্তুু ঘুম পাখিরা আজ কোনোক্রমেই ধরা দিচ্ছে না।তাই নিধি সেই ভুগিচুগি ‘স্লিপিং এক্সারসাইজ’ করে,একসময় ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো।”
———-
“নিধির সাথে কথোপকথন শেষ করে নির্জন ল্যাপটপে কিছু ডকুমেন্টস রেডি করলো।তারপর ফ্রেশ হয়ে,নিধির দেওয়া সেই চিঠিটি নিয়ে বিছানায় অর্ধ-শোয়া অবস্থায় মনযোগ দিয়ে পড়তে থাকল।একসময় চিঠিতে গভীরভাবে চুমু দেওয়ার জন্য ঠোঁট এগিয়ে নিতেই,হঠাৎ করে চিঠির ওপর দিয়ে একটি আরশোলা/তেলাপোকা উড়ে গেলো।”
“নির্জন কটমটিয়ে তাকালো আরশোলাটির দিকে।রুঢ় দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো সে।ভাবলো,’আমি তো কখনোও রুম ক্লিনিং এ কার্পণ্যতা করি নাা।তাহলে এই ইডিয়ট টা কোথা থেকে এলো?’ভাবতেই নির্জনের চোখজোড়া আটকে গেলো জানালায় আবদ্ধ সারি সারি গ্রিলের দিকে। নির্জনের আর বুঝতে বাকি রইলো না,যে আরশোলাটি গ্রিল ভেদ করে এসেছে।”
“আরশোলাটি যেনো গা জ্বালানোর জন্য আরেকটু ভালোভাবে প্রস্তুত হয়ে এসেছে।আরশোলা টি দ্বিতীয় বার চিঠির ওপর পড়তেই,নির্জন সেটাকে খপ করে মুষ্টিবদ্ধ করে পৈ***শাচিক হাসি দিলো।”
“ভেতর থেকে ‘মন’ বলে উঠলো,’বাহ!নির্জন তুমি তো দেখছি আগের ফর্মে ফিরে এসেছো।ওয়াও গুড জব।নাও এইবার নিঁখুত অপারেশন শুরু করো,যেমন টা অতীতে করতে।আমি তোমার সাথে আছি।”
“নির্জন বাঁকা হেসে অতীতে ব্যাক করলো,
‘কলেজের ল্যাবে কেউ যখন ব্যাঙ দ্বি-খণ্ডিত করতে সাহস পেতো না অথবা প্রথম অবস্থায় খুব ভয় পেতো;তখন নির্জন খুব বীরত্বের সাথে ধা**রালো ছু**রি দিয়ে ব্যাঙ কে বিভক্ত করে, সবাইকে অতি নিখুঁত ভাবে তার বর্ণনা দিতো।”
“নির্জনের সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে কলেজের বায়োলজি টিচার সবাইকে বলতো,’দেখো দেখো..ছেলেটা কতো সাহসী।জীবনে চলতে হলে ওর মতো বুকে সাহস নিয়ে চলতে হবে।তোমাদের দ্বারা তো কিচ্ছুটি হবে না,ভীতুর দল কোথাকার!’বলেই নির্জনের কাঁধে চাপড় মে**রে বাহবার সুরে বলতো,’দোয়া করি,তোমার এই অদম্য সাহস এবং প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাও।”
“সত্যি অনেক দূর এগিয়েছে নির্জন।কা**টাকা**টিতে সে দারুণ এক্সপার্ট।”
“অতীতের স্মৃতি গুলো ভেবে নির্জন বাঁকা হেসে, দ্রুত বিছানা ত্যাগ করে টেবিলের ড্রয়ার থেকে ধা**রালো একটি ছোট ছু**রি বের করলো।অতঃপর আরশোলার দিকে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে, বিভ**ৎস হাসি দিয়ে মৃদু স্বরে বললো,’আমার ডার্ক কুইনের চিঠি স্পর্শ করে ভয়ং**কর অপরাধ করেছিস তুই।এর জন্য তোকে ভ**য়ানক শাস্তি পেতে হবে।আচ্ছা তোর বৈজ্ঞানিক নাম টা যেন কি?
ওহ,মনে পড়েছে,’Periplaneta americana’.
আজ তো তোর ৩জোড়া পা, আর ২জোড়া পাখা অচিরেই গায়েব হয়ে যাবে।’বলেই আরশোলাটি কে টেবিলে রেখে ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে ডানা সহ ক্ষুদ্র দেহটি কু**টি কু**টি করে কে**টে ফেললো।
কিন্তুু এটা করেই সে ক্ষান্ত হলো না।হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে,আরশোলার দেহের অতি ক্ষুদ্র অংশগুলো কে হাত দিয়ে ইচ্ছেমতো পিষিয়ে দিলো।যে কেউ দেখলে ভাববে,২-৩টা শুকনো মরিচ হাত দিয়ে পিষিয়ে ভর্তা করেছে নির্জন।’নিজের কার্য নিখুঁত ভাবে সমাপ্ত করে,তৃপ্তির হাসি হাসলো নির্জন।”
————
“এদিকে মাহির তোহা কে একের পর এক ইংরেজি কবিতা শুনিয়ে যাচ্ছে।কবিতার মূল টপিক হলো,
‘Love,Kiss & Hug’
এগুলো শুনে তোহার কানটা লজ্জায় গরম হয়ে যাচ্ছে।কিন্তুু মাহির নাছোড়বান্দা,সে শোনাবেই।তাই তোহাও কান পেতে শুনছে।ফোনের অপরপাশ থেকে মাহিরের মৃদু কন্ঠস্বরে কবিতা শুনে, বারবার শিহরণে রিনরিনিয়ে উঠছে তোহার সর্বাঙ্গ।”
“কবিতা পর্ব শেষ করে মাহির বললো,’স্বপ্নচারিনী আগামীকাল তোমার জন্য একটা গিফট আনব।যেহেতু দিগন্ত ভাইয়া এবং নাদিয়া তাদের বিয়েতে আমাকেও ইনভাইট করেছে,তাই গিফট টা সেখানে গিয়ে দিবো।”
“গিফটের কথা শুনে তোহা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,’সত্যি?ওকে…ওকে আমি অপেক্ষা করবো।ইশশ!খুশি তে আমার তো আজ ঘুমই হবে না।”
“মুচকি হাসলো মাহির।মৃদুস্বরে বললো,’ঘুমাও..ঘুমাও নইলে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে যাবে।এখনই যদি ডার্ক সার্কেল পড়ে যায়;তাহলে ফুলসজ্জা রাতে তো গাল পর্যন্ত ডার্ক সার্কেল পড়ে যাবে।”
“মাহিরের ঠোঁট কা**টা টাইপ কথা শুনে তোহা কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,’বেহায়া পুরুষ।একটুও লজ্জা-সরম নাই।’
বলেই ফোন কে**টে দিলো।”
“মাহির জানতো, তোহা ফোন কে**টে দিবে।কারণ, যখনই মাহির দুষ্টু কথা বলে,তখনই তোহা ফোন কে**টে দেয়।’ভেবে হো হো করে হেসে উঠলো।অতঃপর ফোনের ওয়ালপেপারে থাকা তোহার লাজুক ছবিতে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।প্রিয়তমার লাজে রাঙা মুখস্রি দেখতে দেখতে একসময় ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলো মাহির।”
————-
“রাত ২টা।ঘুম নেই দিগন্তের চোখে।এপাশ-ওপাশ ফিরে মিটিমিটি হেসে একাকার হয়ে যাচ্ছে সে।আগামী রাত্রি আরেকজন রমনী তার পাশে ঘুমাবে, ভেবেই শিরদাঁড়ায় শীতলতার আলোড়ন বয়ে গেলো।ফোন হাতে নিয়ে নাদিয়ার মায়ের ফোনে কল দিতেই,নাদিয়া তৎক্ষণাৎ ফোন রিসিভ করলো।”
“অপরপাশ থেকে দিগন্ত কথা না বলে নিশ্চুপ হয়ে রইলো।কারণ, ফোন টা যদি নাদিয়ার মা রিসিভ করে; তাহলে তো কেল্লাফতে।”
“দিগন্ত কে চুপ থাকতে দেখে নাদিয়া বললো,’ওই কথা বলো না কেনো?”
“নাদিয়ার কন্ঠ পেয়ে বিস্ময়ের স্বরে দিগন্ত বললো,’অ্যা? হানি তুমি ফোন ধরেছো?তুমি জানতে আমি ফোন দিবো?এতো রাতে তুমি ঘুমাও নি কেনো?বাই দ্যা ওয়ে, তুমিও কি আমার মতোই একা বিছানায় ছটফট করছিলে হানি?”
“দিগন্তের নির্লজ্জ টাইপ কথায় লজ্জা পেলো নাদিয়া।সত্যি তো বিয়ের আগের রাতের অনুভূতিগুলোই আলাদা হয়।প্রিয়জন কে নিয়ে বিভিন্ন চিন্তাধারা জল্পনা-কল্পনায় বারংবার উঁকি দেয়।প্রিয় মানুষটির কাছে প্রথম রাতে কিভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবে,তার সাথে বাকি জীবন কিভাবে কা**টাবে;এগুলোই তো ভাবছিলো নাদিয়া।তবুও সেটাকে দমিয়ে রেখে কটমটিয়ে বললো,’এমনি ঘুম আসছিলো না।তাই মায়ের ফোনে সাপ নিয়ে খেলা করছিলাম।”
“দিগন্ত দুষ্টু হেসে নাদিয়া কে একটু জ্বালানোর জন্য বললো,’ওকে হানি ভালো করে সাপের সাথে খেলা করো।আগামীকাল রাত থেকে তো আমার সাথে খেলা করতে করতে,অন্যকিছু করার সময় পাবে না।এখনই শেষ খেলা খেলে নাও।”
“প্রচন্ড লজ্জা আর রাগে উড়নচণ্ডী হয়ে গেলো নাদিয়া।কঠোর স্বরে বললো,’হুম ভালো করে খেলবো তোমার সাথে।তোমার জন্য অনেক বড় শাস্তি অপেক্ষা করছে।আগামী রাত টা আসুক,তারপর ভালো করে খেলবো।
বি রেডি ফর মাই হট পানিশমেন্ট ডার্লিং।’বলেই ফোন রেখে দিলো নাদিয়া।”
“এভাবে ফোন রেখে দেওয়াতে হকচকিয়ে গেলো দিগন্ত।মনে মনে ভাবলো,’ওম্মা এতো দেখছি আমার থেকেও কয়েক ধাপ এগিয়ে।ভালো করে খেলতে চায়।কিন্তুু…কিন্তুু কি শাস্তির কথা বললো?কিসের শাস্তি দিবে?আমি তো কোনো অপরাধ করিনি!আবার চলনবিলের মতো শাস্তি দিবে নাতো?’ভেবে শুকনো ঢোক গিললো দিগন্ত।দুই হাত এক করে মোনাজাত ধরে বললো,’হে আল্লাহ!তুমি আমার হানির মন টা বিশুদ্ধ পানির মতো শীতল করে দাও।যেনো আমার প্রতি তার ভালোবাসা উতলে উতলে পড়ে;আমিন।’বলেই বুকে হাত দিয়ে বললো,’ইশশ! আমার দুষ্টু মন টা কিছুতেই আজ রাতটুকু মেনে নিতে পারছে না।সময় টা সংক্ষিপ্ত হলে কতো ভালোই না হতো।’বলে মুচকি হাসলো দিগন্ত।”
————
“কে**টে গেলো আরো একটি নিস্তব্ধ রাত।প্রতিটি রাতের পর সূর্য রশ্মি কারো জীবনে আঁধারের ঘনঘটা বয়ে আনে,আবার কারো জীবনে উজ্জ্বল আলোর বিকিরণ ছড়ায়।”
“অবশেষে এসে পড়লো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।আজ দিগন্ত এবং নাদিয়ার বিয়ে।গতকাল রাত থেকে ওদের দুই পরিবারের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের আগমন ঘটেছে।সকাল হতে না হতেই বাকিরাও এসে হাজির।নিধি এবং তোহা সকালে একবার এসে নাদিয়াকে হলুদ দিয়ে,পুরো মুখ মাখিয়ে দিয়ে গেছে।”
“এদিকে দিগন্ত কাউকে হলুদ ছোঁয়াতে দেয়নি।সে চায়, বাসর রাতে তার প্রিয়তমা স্ত্রী তাকে প্রথম হলুদ ছোঁয়াবে।তাছাড়াও এইসব রীতিনীতিতে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।সে তো নাদিয়ার সাথে কিভাবে মধুচন্দ্রিমায় মত্ত হবে, সেই চিন্তায় বিভোর।সকাল থেকে নাদিয়া কে ওর মায়ের ফোনে কয়েকবার ফোন করেছে।কিন্তুু নাদিয়া ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে।ঘর ভর্তি আত্মীয়-স্বজনের কিচির-মিচির শব্দে ফোনের কোনো হদিস নেই।সবাই যেনো আজ নাদিয়া কে নিয়ে ব্যস্ত।কাজিন থেকে শুরু করে প্রতিবেশীরাও দুষ্টু-মিষ্টি কথা বলছে নাদিয়ার সাথে।এদিকে নাদিয়া লজ্জায় লাল, নীল,বেগুনি হয়ে যাচ্ছে।এটাই তো স্বাভাবিক।”
———
“রাত ৮টার পর একটি নামিদামি কমিউনিটি সেন্টারের সেকেন্ড ফ্লোরে নির্ধারিত স্থানে এসে সবাই উপস্থিত হলো।কমিউনিটি সেন্টারের চাকচিক্য এবং ঝলমলে উজ্জ্বল পরিবেশ টি মন কেড়ে নিচ্ছে সবার।সেই সাথে প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম ফুলের সুবাসে মুখরিত চারিদিক।বাহারি রঙের লাইট এবং কয়েকটি ক্যামেরার লাইট তাক করে রাখা হয়েছে, দিগন্ত এবং নাদিয়ার জন্য বরাদ্দকৃত স্টেজের দিকে।সবাই অধীর আগ্রহে দিগন্ত এবং নাদিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।”
“এরই মধ্যে নিধি এবং তোহা পার্লার থেকে নাদিয়াকে নিয়ে,কমিউনিটি সেন্টারের সেকেন্ড ফ্লোরে প্রবেশ করলো।এতটুকু সময়ের মধ্যে নিধি যে নাদিয়ার সাথে কত রকমের দুষ্টামি করেছে,সেটা না বললেই নয়।”
“নাদিয়া পড়েছে ধূসর রঙা ভারী কাজের লেহেঙ্গা।সেই সাথে গোল্ডেন কালার দোপাট্টা এবং ম্যাচিং জুয়েলারি আর সেই সাথে গর্জিয়াস সাজ-সজ্জা।কারণ,দিগন্তের খুব ইচ্ছে ফুলসজ্জার পর, ভোরের দিকে নাদিয়া কে নিয়ে শেষ রাতের আকাশে ধোঁয়াশা মেঘের আনাগোনা উপভোগ করবে।সেই সাথে তার ‘মেঘ বালিকা’ কে আদরে আদরে ভরিয়ে দিবে।তাই খুব পছন্দ করে নিজের জন্য ধূসর রঙা এবং গোল্ডেন স্টোনের শেরওয়ানি কিনেছে আর নাদিয়ার জন্য সেইম কালার লেহেঙ্গা কিনেছে।”
“নিধি,নাদিয়া এবং তোহা কমিউনিটি সেন্টারে প্রবেশ করতেই সকল আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে ক্যামেরা ম্যান তাদের ক্যামেরার লাইট তাক করলো ওদের দিকে।নাদিয়ার গর্জিয়াস নববধূর সাজ দেখে মুগ্ধ সবাই।আত্মীয় মহলের প্রশংসায় ভাসছে সে।মুহূর্তের মধ্যেই মুঠোফোন থেকে শুরু করে সবার ক্যামেরা বন্দি হয়ে গেলো নাদিয়া।
নাদিয়া স্টেজে উঠে তার জন্য বরাদ্দকৃত ফুল দিয়ে সজ্জিত চেয়ারে বসলো।তার চোখজোড়া খোলা দরজায় নিবদ্ধ।মনে মনে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় দিগন্ত কে খুঁজছে।মুখ ভরা খোলা হাসি লেপ্টে ভাবছে,’ দিগন্ত কে আজ কেমন লাগবে দেখতে?তারপর আমাকে দেখে দিগন্তের রি-অ্যাকশন কেমন হবে?সে এখনও আসছে না কেনো?উফফ! আস্তো একটা ঢিলা কোম্পানি।”
“নাদিয়ার ভাবনার মাঝেই খোলা দরজায় হৈ চৈ পড়ে গেলো।নাদিয়া সামনে তাকিয়ে দেখলো, দিগন্ত প্রবেশ করেছে।আর তার দুই পাশে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে নির্জন,মাহির এবং দিগন্তের বন্ধু সহ বাকি অফিস কলিগ।”
“দিগন্ত কে দেখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো নাদিয়ার মুখে।আজ ধূসর রঙা শেরওয়ানি,আর পাগড়ি তে দিগন্ত কে মনে হচ্ছে পাঞ্জাব থেকে কোনো হিরো বাংলার মাটিতে পদার্পণ করেছে।এ যেনো তার স্বপ্নে দেখা সেই ‘মেঘরাজ’।সত্যি নাদিয়ার পছন্দ অতি প্রশংসনীয়।”
“দিগন্ত গেটের সামনে আসতেই, হুড়মুড়িয়ে পড়লো নাদিয়ার আত্মীয়-স্বজন।সেই চিরাচরিত প্রথা অর্থাৎ বিশাল অঙ্কের টাকার আবদার তাদের।আবদার পূরণ না করলে ভেতরে ঢুকতে দিবে না।এদিকে এগুলো দেখে তোহাও সামিল হয়েছে তাদের সাথে।সবার এতো আনন্দ দেখে লোভ সামলাতে না পেরে, নিধিও যখনই ওই ভীরের মধ্যে গেলো;ওমনি চোখের সামনে সাদা শার্টের ওপর নেভী ব্লু কালার ব্লেজার পরিহিত উজ্জ্বল শ্যামরঙা সুদর্শন পুরুষ টি কে দেখে থমকে গেলো ওর চোখজোড়া।আজ নির্জন কে দেখতে অন্যরকম লাগছে;পুরো অসাধারণ।”
“এদিকে এতো নারীর ভীরেও নির্জনের নজর আটকে গেলো কালো বোরকা, কালো হিজাব এবং কালো মাস্ক পরিহিত উজ্জ্বল ফর্সা রঙা, মায়াবী চক্ষুদ্বয়ের মানবীর দিকে।ভাবলো,
‘এই তো, দস্যি মেয়েটা আমার সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে।’ভেবে মুচকি হেসে রিমলেস চশমার ফাঁক গলিয়ে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল উঠিয়ে ইশারায় বোঝালো, ‘থ্যাংকস ডার্ক কুইন।”
“নির্জনের সেই চোখের গাঢ় ভাষা বুঝতে সক্ষম হলো নিধি।মুচকি হেসে তর্জনী এবং বৃদ্ধাঙ্গুল একত্র করে বোঝালো,
‘আপনাকে আজ দারুণ লাগছে।”
“প্রেয়সীর ইশারায় প্রশংসা বুঝতে পেরে, ফের মুচকি হাসলো নির্জন।”
———
“এদিকে তোহা আর মাহির তো একে-অপরের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।আজ অদ্ভুত ভাবে দু’জনের ড্রেসআপে মিলে গেছে,যেটা অকল্পনীয়।আজ তোহা নীল রঙের একটি ঝিকিমিকি গাউন এবং ম্যাচিং হিজাব পড়েছে।সেই সাথে গর্জিয়াস সাজ তো আছেই।
এদিকে মাহিরও নীল রঙের পাঞ্জাবি এবং উপরে সাদা কোটি পড়েছে।সেই সাথে হাতে ব্ল্যাক ঘড়ি।কোঁকড়া চুল গুলো জেল দিয়ে কোনোরকমে সেটআপ করেছে।তবুও চওড়া কপালে লেপ্টে আছে কিছু অবাধ্য চুল।মুচকি হাসি দেওয়া পুরুষটির প্রেমে দ্বিতীয় বার পড়লো তোহা।মাহির দুষ্টু হেসে চোখ টিপ মারতেই,লাজুক হেসে মুখ ভেং**চি কা**টলো তোহা।অতঃপর দু’জন দু’জন কে ইশারায় তাদের রূপের প্রশংসা করলো।”
———
“গতকাল নির্জনের শীতল শাসনের ভয়ে নিধির আর এই আনন্দে অংশগ্রহণ করা হলো না।অবশেষে দুই পক্ষের দুষ্টু-মিষ্টি ঝগড়ার পর, সেন্টারের ভেতরে ঢুকতে সক্ষম হলো বরপক্ষ।”
“নিজের জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারের দিকে চোখ যেতেই,দৃষ্টি থমকে গেলো দিগন্তের।প্রিয়তমার দিকে শুকনো ঢোক গিলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ভাবলো,’ওমা এটা কে?এতো দেখছি মেঘের কোলে রোদ!হায় হায়..এখন আমার কি হবে?আমার তো এখনই পা**গল পা**গল লাগছে!নিজেকে কিভাবে সামলাবো আমি?’ভেবে দ্রুত পায়ে স্টেজের দিকে হাঁটতে থাকলো দিগন্ত।এদিকে ক্যামেরা ম্যান দিগন্ত কে একটু পোজ নিতে বলেছিলো।দিগন্ত আড়চোখে সেদিকে তাকিয়ে বললো,’আরে রাখুন আপনার পোজ।আগে আমার বউয়ের সাথে দাঁড়াই,তারপর যত ইচ্ছে পোজ দিবো।’বলেই বড় বড় পা ফেলে নাদিয়ার সামনে চলে গেলো।”
“এদিকে দিগন্তের কাহিনী দেখে হেসে কু**টিকু**টি হলো নাদিয়া।দিগন্ত নাদিয়ার সামনে এসে,পাশের চেয়ারে বসলো।আশেপাশে না তাকিয়ে, সরাসরি ওর হাত ধরে বললো,’এতো দেখছি স্বয়ং হুরপরী!যদিও আটা-ময়দা ছাড়া তোমায় দেখতে হেব্বি লাগে হানি।কিন্তুু আজ আমার তো তোমাকে দেখে সবকিছু কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পড়ছে।অনুষ্ঠান শেষ হতে আর কতক্ষণ লাগবে হানি?”(বাচ্চাদের ন্যায় প্রশ্ন করলো দিগন্ত।)
“আকস্মিক দিগন্তের এহেন কথায় হকচকিয়ে গেলো নাদিয়া।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো, সবার দৃষ্টি ওদের দিকে আবদ্ধ।মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে দিগন্তের দিকে একটু ঝুঁকে, দাঁত কিড়মিড় করে বললো,’আশেপাশে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে জানু।কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ।আর এতো সহজে আমি তোমার হবো না।আগে তোমায় কঠোর শাস্তি দেবো;তারপর ভেবে দেখবো।”
“নাদিয়ার মুখনিঃসৃত বাক্যটি শুনে দিগন্ত উত্তেজিত স্বরে কিছু বলতে যাবে,তখনই নিধি এবং তোহা সেখানে এসে হাজির হলো।তোহা দিগন্ত কে বললো,’ভাইয়া আজ কে না আপনাকে পুরো পাঞ্জাবের হিরোদের মতো লাগছে।’
অপরপাশ থেকে নিধি মুচকি হেসে বললো,’সত্যি ভাইয়া আজ কিন্তুু আপনাকে দেখতে হেব্বি লাগছে,পুরো ঝাক্কাস।আমার বান্ধবী তো চোখ ফেরাতেই পারছে না।আর সেই সাথে আমরাও হিহিহি।”
“নিধির প্রশংসা শুনে দিগন্ত কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।তার মনে পড়ে গেলো নির্জনের সেই শান্ত হু**মকি।নিধি কে নিয়ে কথা বলা কঠোরভাবে বারণ করেছে নির্জন।এদিকে নাদিয়া ও কটমটিয়ে তাকিয়ে আছে।সবকিছু ভেবে অসহায় দিগন্ত অন্য দিকে দৃষ্টি ফেলে ম্লান হাসলো।কিন্তুু কিছুই বললো না।মনে হয় সে নীরবতা পালন করার জন্য ধ্যানে বসেছে।”
“এদিকে নিধির এই উক্তিটি যেনো তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো।স্টেজের একটু দূরে দাঁড়িয়ে র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে সবকিছু শুনছিলো নির্জন।হিং**স্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো দিগন্তের দিকে।দীর্ঘ দিনের মানসিক অবসাদে ক্লান্ত নির্জনের মুখে নিমিষেই পৈ**শাচিক হাসি ফুটে উঠলো।দিগন্তের দিকে ঈর্ষান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে; আপন মনে বিড়বিড় করে বললো,’উত্তর টা না দিয়ে ভালোই করেছিস বন্ধু।’বলেই হাতে থাকা কালো ঘড়িটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কুটিল হাসলো।অতঃপর সবার চোখের আড়ালে বড় বড় পা ফেলে হন হন করে কমিউনিটি সেন্টার থেকে প্রস্থান করলো।”
#চলবে…
#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ২৪
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।]
“অতঃপর সবার চোখের আড়ালে বড় বড় পা ফেলে হন হন করে কমিউনিটি সেন্টার থেকে প্রস্থান করলো।”
“এদিকে দিগন্ত ও নাদিয়ার ফটোশুট শুরু হয়ে গেছে।দিগন্ত যেভাবে পারছে নাদিয়া কে বিভিন্ন পোজ নিতে বলে অসহ্য করে তুলছে,সাথে দুষ্টু কথা তো ফ্রী।সেই সাথে ক্যামেরা ম্যানের দিক-নির্দেশনা তো আছেই।একে একে সব আত্মীয়-স্বজনের মুঠোফোনেও বন্দী হলো দু’জন প্রেমিকযুগল।ওদের দু’জন কে একসাথে দেখে মনে হচ্ছে,
‘সোনায় সোহাগা’।
“তোহা নাদিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে ফটাপট কয়েকটি সেলফি তুললো।তখনই ওর পাশে এসে হাজির হলো মাহির।তোহা মাহির কে দেখতে পায় নি।সেতো সেলফি তে মুখের বিভিন্ন ভঙ্গিমা করায় ব্যস্ত আছে।সেটা লক্ষ্য করে মাহির মুচকি হেসে তোহার কিছুটা কাছে এসে বললো,’এতো সেলফি তুললে ফোনের মেমোরি ভরে যাবে।তখন আমার জায়গা কোথায় হবে স্বপ্নচারিনী?”
“আকস্মিক কর্ণকুহরে পুরুষালি কন্ঠস্বর ভেসে আসতেই ধরফরিয়ে উঠলো তোহা।নাদিয়ার কাছ থেকে সরে গিয়ে মাহিরের দিকে তাকিয়ে ভূত দেখার মতো চমকে গেলো।কারণ, একটু আগেই তোহা মাহির কে খুঁজে হয়রান হয়ে গেছে।অবশেষে নিরাশ মন নিয়ে নাদিয়ার সাথে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়েছিলো।”
“বুকে হাত দিয়ে গাঢ় নিঃশ্বাস ফেলে বললো,’আপনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন?আমি আরও আপনাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে গেছি।যাইহোক, এভাবে হুটহাট পেছনে এসে কেউ ভয় দেখায়?উফফ!”
“মাহির তার হাতে থাকা শপিং ব্যাগ টা উঠিয়ে বললো,’সাইডে আসো,গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।”
“মাহিরের হাতে শপিং ব্যাগ দেখে তোহা খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো।আহ্লাদী সুরে বললো,’আমার জন্য গিফট এনেছেন,তাই তো?”
“হুমম,এখানে নিবে নাকি সাইডে এসে নিবে?”
“তোহা খুশি হয়ে চোখের ইশারায় সম্মতি জানিয়ে, স্টেজ থেকে নিচে নেমে একটা কর্ণারে গেলো।মাহির তোহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে পকেট থেকে ফোন বের করে বললো,’আগে আমার সাথে কয়েকটা পিকচার তোলো।তারপর গিফট দিবো।”
“তোহা ভাবলো,’বিয়ের আগে হবু স্বামীর সাথে একটা স্মৃতি থাকা উচিত।ভবিষ্যতে স্মৃতিচারণ করতে পারবে।’ভেবে সায় জানালো।অতঃপর মাহিরের সাথে মিষ্টি হাসি দিয়ে ক্যামেরায় বন্দী হলো তোহা।”
“মাহির মুচকি হেসে বললো,’দারুণ লাগছে তোমায়।একদম আমার স্বপ্নে রাজকন্যা।এনিওয়ে, ছবি টা কেনো তুললাম জানো?”
“কেনো?”
“মাহির মৃদুস্বরে বললো,’এখন যেমন স্লিম বডি ফিটনেস আছে,বিয়ের পর হয়তো আমার গভীর ছোঁয়ায় পরিবর্তন হয়ে যেতে পারো।আই মিন, ফুলকপির মতো গুলুমুলু হয়ে যেতে পারো।তাই বাচ্চাদের যেনো দেখাতে পারি,যে ওদের মা কতো ফিনফিনে বরবটির মতো রোগা-পাতলা ছিলো হাহাহাহা….।”
“মাহিরের দুষ্টু কথায় ভীষণ লজ্জা পেলো তোহা।এখানে এসেও যে সে ঠোঁট কা**টা টাইপ কথা বলবে,কল্পনাও করতে পারেনি।কটমটিয়ে বললো,’আপনি আর পরিবর্তন হলেন না!আমি গেলাম।’বলেই চলে যেতে নিলে,মাহির খপ করে তোহার হাত ধরলো।”
“এই প্রথম কোনো পুরুষের হাতের গভীর ছোঁয়া পেলো তোহা।অগভীর শিহরণে আচানক শরীর কিঞ্চিৎ কম্পিত হলো।সেটা বুঝতে কষ্ট হলো না মাহিরের।মুচকি হেসে বললো,’গিফট না নিয়েই চলে যাচ্ছো?তুমি তো বড্ড ভীতু তোহা রানী।”
“তোহা রানী’ নতুন নাম।আর কত নামে ডাকবে মাহির?’ঠোঁট কা**মড়ে সেটাই ভাবছে তোহা।
তোহা পেছনে ফিরতেই, মাহির হাত টা ছেড়ে দিলো।স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো তোহা।কম্পিত হাতে মাহিরের হাত থেকে শপিং ব্যাগ গ্রহণ করে লাজুক হেসে বললো,’থ্যাংকস।’বলতে দেরি ছুটতে দেরি নেই।কোনোরকমে সেখান থেকে দৌড়ে চলে গেলো তোহা।মাহির সেদিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে বললো,’স্বপ্নচারিনী একটু বেশিই লাজুক।এই লজ্জা ভা**ঙাতে কতদিন লাগবে আল্লাহ জানে।সমস্যা নেই, আমার ম্যাজিকাল হাতের স্পর্শ পেলেই, সব লজ্জা সুরসুর করে পালিয়ে যাবে।’বলে ফিচেল হাসলো মাহির।”
———
“নিধি নাদিয়ার সাথে কয়েকটা পিকচার তুলেছে।কিন্তুু নাদিয়া ওকে বারবার জিজ্ঞেস করছে,’যে কেনো সেজে আসেনি?’
নিধি বরাবরের মতো একই উত্তর দিয়েছে,’একটু পরে সাজবে।’
“এইবার বিরক্ত হয়ে নাদিয়া বললো,’দেখ একটু পর সবাই খাওয়া-দাওয়া করবে।তারপর বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসবে।তুই কি তখন শঙ সেজে বসে থাকবি?”
“মন বিষন্ন হলো নিধির।অকপটে উত্তর দিলো,
‘আমি এখনই যাবো আর আসবো।১০মিনিট ওয়েট কর বেস্টি।’বলেই নাদিয়ার মেকআপ দেওয়া লাল টুকটুকে গাল টেনে দ্রুত চলে গেলো।”
“৩টি লেডিস ওয়াশরুমের সামনে লম্বা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথিরা।নিধি কিছুক্ষণ সেদিকে ঘুরঘুর করলো।কিন্তুু লম্বা লাইন যেনো কমছে না।”
“নিধি কে এভাবে ঘুরতে দেখে একজন ভদ্র মহিলা ওকে উদ্দেশ্য করে বললো,’মামনি তুমি কি ওয়াশরুমে যাবে?”
“নিধি মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’জ্বি আন্টি।কিন্তুু এই তাল গাছের মতো লম্বা লাইন তো কমছেই না।”
“নিধির কথায় মুচকি হাসলো ভদ্র মহিলা।বুঝলো,মেয়েটা বেশ চঞ্চল।নিধির কাছে এসে বললো,’আমিও কিছুক্ষণ আগে এখানে এসেছিলাম।ভীর কমছিলো না।তখনই একজন ওয়েটার আমাকে এভাবে ঘুরতে দেখে থার্ড ফ্লোরের ডান দিকে শেষের কর্ণারে লেডিস ওয়াশরুম আছে,সেটাতে যেতে বললো।আজ সেখানে কোনো অনুষ্ঠান নেই।তাই, হল পুরো ফাঁকা।তুমি একটু কষ্ট করে সেখানে গেলে, আর অপেক্ষার যন্ত্রণা পোহাতে হবে না।”
“ভদ্র মহিলার কথা শুনে ভীষণ খুশি হলো নিধি।মহিলার হাত ধরে ৫-৬বার ধন্যবাদ দিলো।নিধি যাওয়ার সময়,নিধি কে দেখে তোহা বললো,’আপু কোথায় যাচ্ছো?”
“ওয়াশরুমে যাচ্ছি রে।এখানে অনেক ভীর।থার্ড ফ্লোরের রাইট সাইডে,লাস্ট কর্ণারের লেডিস ওয়াশরুমে যাচ্ছি।ড্রেস চেঞ্জ করবো।তুই যাবি?”
“না আপু তুমি যাও।”
“তোহা বলতে দেরি আছে, নিধির যেতে দেরি নেই। হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে দ্রুত চলে গেলো থার্ড ফ্লোরে।ফাঁকা ওয়াশরুম পেয়ে নিধি উচ্চস্বরে হেসে বললো,’হিহিহি এখানে এখন আমি দর্শকবিহীন বাথরুম সিংগার হবো,আর মনের সুখে ড্রেস চেঞ্জ করবো।”
————–
“কমিউনিটি সেন্টারে বড় বড় পা ফেলে প্রবেশ করতেই সবার নজর আকর্ষণ করলো, গাঢ় ধূসর রঙা শেরওয়ানি পড়া,মাথায় পাগড়ি পড়া যুবকটির দিকে।সবাই বিস্ময়ের দৃষ্টিতে সেদিকে তাকালো।স্টেজ থেকে দিগন্ত এবং নাদিয়ার চোখ জোড়া আটকে গেলো।দিগন্ত হা করে তাকিয়ে বললো,’নির্জন!”
“সবাই নির্জনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও সেদিকে মৃদু দৃষ্টিপাত দিয়ে ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব নিয়ে,তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো নির্জন।তার চোখ জোড়া সবচেয়ে প্রিয় মানবী কে খুঁজতে ব্যস্ত।দিগন্ত আর নির্জন যদি একসাথে কমিউনিটি সেন্টারে প্রবেশ করতো, তাহলে হয়তো এতক্ষণে নাম রটে যেতো ‘এক বধূর দুই স্বামী’।
“দিগন্ত দ্রুত পায়ে নির্জনের কাছে এসে বললো,’নির্জন..এ আমি কি দেখছি?তুই হঠাৎ বরের বেশে সেজেছিস কেনো?তাও আবার সেইম টু সেইম আমার মতো?”
“দিগন্তের দিকে তাকিয়ে চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেলো নির্জনের।চোখে তার রিমলেস চশমা নেই।কঠোর ভঙ্গিতে বললো,’আমার ইচ্ছে হয়েছে,তাই।তোর কাছে কোনো কৈফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই।আর হ্যা,নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য কংগ্রাচুলেশন।’বলেই আশেপাশে চোখ বুলাতে লাগল।”
“আশেপাশে সবাই এতক্ষণে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।সবাই ভেবে নিয়েছে, হয়তো বন্ধুর বিয়েতে মজা করে বন্ধু এমন ভাবে সেজেছে।”
“দিগন্তের বিস্ময়ের দৃষ্টি ছড়িয়ে গেলো নির্জনের আপাদমস্তক।মাহির তোহার পেছনে ঘুরঘুর করছিলো।সেদিকে তাকিয়ে নির্জন বললো,’হ্যালো মি. মাহির।”
“মাহির নির্জনের দিকে তাকিয়ে,তাকে বরের বেশে দেখে হকচকিয়ে গেলো।কাছে এসে মুচকি হেসে বললো,’হাহাহা আপনিও দেখছি আপনার বন্ধুর মতো সেজেছেন।বাহ!দারুণ লাগছে আপনাকে।”
“মাহিরের প্রশংসা শোনার মতো সময় এবং ইচ্ছে কোনোটাই নেই নির্জনের।কাটকাট গলায় বললো,’আপনার হবু স্ত্রী কে একটু জিজ্ঞেস করুন, যে তার বোন কোথায়?”
“মাহির বুঝতে পারলো,নির্জন নিধি কে খুঁজছে।আর তার বিচক্ষণ মস্তিষ্ক এটাও বুঝতে সক্ষম হলো যে,নির্জন নিধি কে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এভাবে সেজেছে।তাই মাহির তোহার কাছে দ্রুত পদে ছুটে গিয়ে,,নির্জন কে দেখালো।তোহা তো নির্জন কে দেখে ছোটখাটো শকড খেলো।”
“মাহির তোহাকে নিধির বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো।”
“তোহা কিছু না ভেবেই নিধির অবস্থান গড়গড় করে বলে দিলো।ওর দৃষ্টি নির্জনের দিকে আবদ্ধ।সেটা লক্ষ্য করে কিঞ্চিৎ ঈর্ষান্বিত হলো মাহির।কপট রাগ দেখিয়ে বললো,’সামনে এইরকম ড্যাশিং পার্সন থাকতে,পর-পুরুষের দিকে তাকানো অনুচিত স্বপ্নচারিনী।”
“আচানক মাহিরের এহেন কথায় হুঁশে ফিরলো তোহা।ও তো নির্জনের এমন বেশ দেখে বিস্ময়ের শীর্ষে চলে গেছে।অতঃপর শুকনো ঢোক গিলে বললো,’সরি, আসলে নির্জন ভাইয়া কে হঠাৎ এই রূপে দেখে,আমি একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।”
“তোহার সহজ স্বীকারোক্তি শুনে খুশি হলো মাহির।মনে মনে ভাবলো,’তুমি সত্যি খুব ভদ্র এবং সরল স্বপ্নচারিনী।’
ভেবে নির্জনের কাছে গিয়ে নিধির অবস্থান বললো।”
“নির্জন মুচকি হেসে মাহির কে ‘থ্যাংকস’ বলে, দ্রুত পায়ে থার্ড ফ্লোরে চলে গেলো।নিধি এতক্ষণে মিষ্টি রঙের লং গাউন এবং ম্যাচিং করে হিজাব পড়ে হালকা মেকআপ,পিংক কালার লিপস্টিক,আইলাইনার,চোখ জোড়ায় গাঢ় কাজল পড়ে পুরো রেডি।ভীষণ সুন্দর লাগছে নিধি কে।কিছুক্ষণ আয়নার দিকে একমনে তাকিয়ে থেকে এপাশ-ওপাশ ফিরে ঢং করলো নিধি।খুশি মনে বললো,’নিধি রে তোকে দেখতে আজ হেব্বি লাগছে।নির্জনের তো মাথা ঘুরান্টি দিবে।যে শর্ত আমায় দিয়েছিলো,সেগুলো ভুলেই যাবে।’
আরও কিছুক্ষণ নিজের প্রশংসা নিজে করে হাসি মুখে ওয়াশরুমের গেট খুলতেই,সামনে থাকা পুরুষটির দিকে তাকিয়ে চোখ জোড়া স্থির হয়ে গেলো নিধির।”
“চরম বিস্ময়ে ঠোঁট জোড়া অটোমেটিক ফাঁক হয়ে গেলো।এতো পুরো দিগন্তের মতো সেজেছে!চেহারা না দেখলে এইমুহূর্তে নিধি নিশ্চিত বলে উঠতো,’দিগন্ত ভাইয়া আপনি এখানে?’
নিজের অদ্ভুত ভাবনা দূরে ঠেলে বিস্ময়ের স্বরে বললো,’নির্জন আপনি এখানে?আর এই সাজে?”
“নিধি কে আর কথা বলতে দিলো না নির্জন।নিধির কাছে এসে ওর হাত ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে গেট আটকে দিলো।অতঃপর মার্বেল টাইলস করা পিচ্ছিল দেয়ালে নিধির পিঠ ঠেকতেই,দুই হাত দুই দিকে মেলে দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে আটকে দিলো নিধি কে।”
“নির্জনের এহেন কাহিনী তে চকিতে তাকালো নিধি।প্রিয় পুরুষের এতটা কাছে থাকায় অটোমেটিক বুকে ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেলো।অজানা ভয়ে হাত-পা যেন অসাড় হয়ে এলো।চাইলেও নড়তে পারছে না নিধি।”
“চক্ষুদ্বয় নিচে রেখে কম্পিত স্বরে শুধালো,’নির্জন এটা লেডিস ওয়াশরুম।এখানে এভাবে নিয়ে আসার কারণ টা কি?”
“তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো নির্জন।নিধির দিকে আপাদমস্তক সূক্ষ্মভাবে তাকালো।মিষ্টি রঙের গাউন টাতে যেন ‘মিষ্টি পরী’ লাগছে নিধি কে।লাল লিপস্টিকে রাঙা ঠোঁট জোড়া দেখে অনেক আগেই নেশা ধরে গেছে মনে।নিধির কপাল নির্জনের ঠোঁটের নিচে পড়ে।চাইলেই ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে ওই ফর্সা ললাটে গভীর চুৃম্বন এঁকে দিতে পারে নির্জন।কিন্তুু এমন ভুল সে এই মুহূর্তে করবে না,যত কষ্টই হোক না কেনো।এটা যে তার নিজের কাছে করা চ্যালেঞ্জ।’
গাঢ় নিঃশ্বাস ছেড়ে নিধির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’চোখে-চোখ রেখে কথা বলো ডার্ক কুইন।”
“নির্জনের গম্ভীর স্বরে হার মানলো নিধি।চোখে চোখ রাখলো নির্জনের।অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,’সরে দাঁড়ান নির্জন।অস্বস্তি লাগছে আমার।”
“নির্জন সরলো না।নিজেকে কন্ট্রোল করে, ভারী নিঃশ্বাস ফেলে আরেকটু ঝুঁকে আসলো নিধির দিকে।প্রিয়তমার এই সজ্জিত রূপ দেখে, গভীর চাহনি দিয়ে সুমধুর কন্ঠে বলে উঠলো,
“তোমার চোখের অন্ধকারে, আমি হারিয়ে যাই গভীর রহস্যের মাঝে,
যেন রাতের গভীরে খুঁজে পাই, অমোঘ প্রেমের পবিত্র প্রার্থনা।
তোমার ঠোঁটের তৃষ্ণা, না মেটানো অশান্তির মতো,
প্রতি চুম্বনে অনুভব করতে চাই, উন্মত্ত আকাঙ্ক্ষার আগুনের লেলিহান।
তোমার পোশাকের ভাঁজ, যেন পুরনো সমাধির ঠান্ডা অন্ধকার,
যেখানে আমাদের প্রেমের প্রতিটি দোলা, শীতল অথচ নিবিড় পরশের মতো।
তোমার স্পর্শের প্রতিটি টান, এক অদৃশ্য শ্বাসযন্ত্রের মতো মন্ত্রমুগ্ধ,
যেমন অন্ধকারের গভীরে ভাসে, হৃদয়ের পবিত্র সুরের কল্পনা।”
~মেহের~
কবিতাটি সম্পন্ন করে আবার সুমধুর সুরে গেয়ে উঠলো,
🎶তোর এক কথায়
আমি রাখবো হাজার বাজি,
তোর ইশারায় আমি মরে
যেতেও রাজি….”🎶
“নির্জনের রহস্যময়, রোমাঞ্চকর কবিতা এবং গান শুনে লজ্জায় কান দিয়ে মনে হয় উষ্ণ ধোঁয়া বের হতে থাকলো নিধির।হৃদস্পন্দনের গতি ক্রমাগত হারে বৃদ্ধি পেলো।বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলো নির্জনের।”
“নির্জনের মনের বিষাক্ত দহন যদি নিধি দেখতো,হয়তো ঐ আগুনে ঝলসে যেতো সে।অথচ একই দহনে পুড়ছে এই চঞ্চলা মানবী।কথায় আছে,’মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না।”
“নিধি মনে মনে ভাবলো,’হায়…এই ওয়াশরুমের মধ্যে আমাদের দু’জন কে কেউ এমন রোমান্টিক সিচুয়েশনে দেখলে, কেলেঙ্কারি হতে সময় লাগবে না।শেষ পর্যন্ত নিউজে রটবে,
‘বাথরুমে প্রেম করতে গিয়ে আটক হলো দুই কপোত-কপোতী।’ছিঃ ছিঃ ছিহ!’ভেবে নির্জনের দিকে ভীতু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো,
‘ নির্জন আমি এই মুহূর্তে আমার সাধ্যের বাইরে গিয়ে এমন কিছু করতে চাই না,যাতে পরবর্তীতে আমাদের দু’জন কে অনুশোচনার ক্রোধানলে পুড়তে হয়।প্লিজ সরে যান।”
“নিধির কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।নির্জনের হাসির আওয়াজ ওয়াশরুমের চার দেয়ালে বা””রি খেয়ে আবার প্রতিধ্বনি হলো।হাস্কি ভয়েসে বললো,
‘নিজেকে নিয়ে এতটা ইনসিকিউরড তুমি!বাহ!যাক বোঝা গেলো,আমার মতো তুমিও একই দহনে দগ্ধ ডার্ক কুইন।এনিওয়ে,আমাকে কেমন লাগছে,সেটা তো বললে না?”
“নির্জনের প্রতি তো আগেই ক্রাশের বস্তা খেয়ে বসে আছে নিধি।কিন্তুু প্রিয় মানুষটি হঠাৎ এতটা কাছে আসায়, ভয়ে আর অনুভূতির দোটানায় বলা হয় নি কিছু।মিনমিনিয়ে বললো,’আপনাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।যাকে বলে মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর।কিন্তুু আপনি দিগ…
” আর বলতে পারলো না নিধি।নির্জন চোখ-মুখ কুঁচকে নিধির ঠোঁট জোড়ায় আঙুল দিয়ে কঠোর স্বরে বললো,
‘এই মুহূর্তে কোনো পর-পুরুষের নাম তোমার মুখে শুনতে চাই না।আর নেক্সট টাইম আমি ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষের প্রতি আকর্ষিত হওয়ার চেষ্টা ভুলক্রমেও করবে না,প্রশংসা তো দূরের কথা।আদার-ওয়াইজ ফলাফল খারাপ হবে।গট ইট।”
“নির্জনের কথাগুলো অতি ভয়ং**কর এবং হিং**স্র শোনালো নিধির কর্ণকুহরে।পিটপিট করে তাকিয়ে বললো,’আপনার কথা কিছু বুঝতে পারলাম না।”
“রাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চোখজোড়া বন্ধ করলো নির্জন।কয়েক সেকেন্ড পর চোখ মেলে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,’এক কথা বারবার রিপিট করা আমার অপছন্দ।যেটা বলেছি,আবার মনে করো।আশা করি বুঝে যাবে।বাই দ্যা ওয়ে, এতো সেজেছো কি আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য?”
“নির্জনের এহেন প্রশ্নে একটু আগের হু**মকিমূলক বাক্যগুলো মাথা থেকে ঝেরে ফেললো নিধি।নিচের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে,লাজুক হেসে বললো,’হুমম.. আপনাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য সেজেছি।”
“প্রচন্ড খুশি হলো নির্জন।মনে মনে বললো,’ইয়েস,আমি পেরেছি তাকে আমার নিয়ন্ত্রণে আবদ্ধ করতে।”
“পরক্ষণেই নিধি বলে উঠলো,’তাছাড়া নাদিয়া খুব রিকোয়েস্ট করছিলো সাজার জন্য।সবাই মিলে কয়েকটা ফটোশুট করবো তাই।বিয়ের এত আনন্দে তো নিজেকে সামিল করতে পারলাম না।তাই সবকিছু মিলিয়ে সেজেছি।খুশি হয়েছেন আপনি?”
“নিধির চোখে-মুখে হাসির ঝলক থাকলেও, নির্জনের বক্ষপিঞ্জরে নেমে এলো এক রাশ বিষন্নতা।প্রচন্ড রাগে-ক্ষোভে-হিং**স্রতায় মাথা টা যেনো ফেটে যাওয়ার উপক্রম হলো।সেগুলো কে দমন করার চেষ্টা করেও পারলো না সে।কঠোর স্বরে নিধি কে কিছু বলতে যাবে,তখনই নিধির ফোনে রিংটোন শুনতে পেলো।সরে গেলো নির্জন।নিধি হাতে থাকা হ্যান্ড ব্যাগ থেকে ফোন নিয়ে দেখলো,তোহা কল করেছে।”
“নিধি শুকনো ঢোক গিলে কল রিসিভ করে বললো,’হ্যা তোহা বল।”
“আপু তুমি কই?এখনও কি ওয়াশরুমে সাজুগুজু করছো?উফফ তুমিও না..সেই একই রকম রয়ে গেলে।গ্রুপ ফটোশুট শুরু হয়ে গেছে।তাড়াতাড়ি এসে পড়ো।তাছাড়া তুমি তো দিগন্ত ভাইয়া এবং নাদিয়া আপুর দুষ্টু-মিষ্টি কাপল ডান্স ও মিস করে ফেললে।যাইহোক,তাড়াতাড়ি নিচে আসো।আর নির্জন ভাইয়া তোমাকে খুঁজেছে।সে কি তোমার সাথে দেখা করেছে?”
“প্রচন্ড লজ্জা পেলো নিধি।ওয়াশরুমে নির্জনের সাথে দেখা হওয়ার কথা বললে,বাসায় গিয়ে নিশ্চিত তোহা মজা করতে ছাড়বে না।তাই কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,’নাহ!আমি আসছি।’বলেই ফোন রেখে দিলো।”
“অপরদিকে নির্জন অন্যদিকে ফিরে নিজের ক্রোধ দমন করার চেষ্টা করছে।নিধি পেছন ফিরে নিচু স্বরে বললো,’আমি নিচে গেলাম।আপনি একটু পরে আসুন।আমাদের একসাথে দেখলে সবাই এটা নিয়ে মজা করবে।’বলেই দ্রুত পায়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচল নিধি।তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে সবার সাথে গ্রুপ ফটো তোলায় মত্ত হলো।”
“এদিকে ক্রোধানলে জর্জরিত নির্জন নিধির যাওয়ার পানে তাকিয়ে কুটিল হাসি দিলো।মনে মনে হরেক রকম পৈ**শাচিক পরিকল্পনা করলো সে।”
———-
“গ্রুপ ফটো তুলে সবাই যার যার মতো খেতে বসেছে।সবার খাওয়ার মাঝামাঝি সময় নির্জন সেখানে হাজির হয়েছে।”
“দিগন্ত নাদিয়া কে একের পর এক লোকমা খাইয়ে দিচ্ছে।বারবার ঠোঁট উল্টে বলছে,’আহারে আমার বউটা বাসর রাতের চিন্তায় চিন্তায় না খেয়ে শুকিয়ে গেছে।চিন্তা করো না বউ,আজ রাতে তোমায় বেশি কষ্ট দিবো না।আমি আবার অনেক দয়ালু।’বলে দুষ্টু হাসলো দিগন্ত।”
“দিগন্তের ঠোঁট কা**টা টাইপ কথা শুনে, খাবার গলায় ঠেকে বিষম উঠলো নাদিয়ার।অনবরত কাশতে লাগল।সেটা দেখে দিগন্ত অস্থির হয়ে নাদিয়া কে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে,তড়িৎ গতিতে পিঠে হাত বুলিয়ে উত্তেজিত স্বরে বললো,’একি কি.. কি.. কি হলো হানি?কতবার বলেছি, অতিরিক্ত চিন্তা করবে না।সবসময় বেশি বেশি ভাবো তুমি।বললাম তো,তোমায় বেশি কষ্ট দিবো না।শুধু একটু কষ্ট দিবো।”
“নাদিয়া এইবার আরও কাশতে শুরু করলো।অতিরিক্ত কাশির কারণে নেত্রকোণায় নোনা জল জমা হলো।দিগন্ত সেটা খেয়াল করে টিস্যু এগিয়ে দিলো।পিঠে হাত বুলিয়ে মৃদুস্বরে বললো,’কেঁদো না হানি,তাহলে তোমার এতগুলো ভারী মেকআপ নষ্ট হয়ে যাবে,সবাই ভাববে আমি একটা পেত্নী বুড়ি বিয়ে করেছি।”
“কয়েক সেকেন্ড পর কাশি থামল নাদিয়ার।কটমটিয়ে বললো,’বাসর রাতে মজা বোঝাবো তোমায়।নির্লজ্জ কোথাকার!”
“নাদিয়ার হু**মকি শুনে, কিছুটা ঘাবড়ে গেলো দিগন্ত।কিন্তুু উপরে সেটা প্রকাশ না করে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’চিন্তা করো না,বাসর রাতে বিড়াল মে**রে হাত নষ্ট করার ইচ্ছে আমার একদমই নেই।আমি শুধু তোমায় অতিরিক্ত আদর করবো হানি।আর আমাকে এত ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।আমি একজন বীরপুরুষ বুঝেছো।আমার বীরত্বের কাহিনী তো দেখলেই।কিভাবে ইহান নামক সাদা মূলার কাছ থেকে তোমাকে ছিনিয়ে আনলাম।’বলেই ডান হাত ভাজ করে মাসল দেখালো দিগন্ত।”
“নাদিয়া ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,’ইশশ আসছে আমার বীরপুরুষ!শুধু একবার একা পাই, তখন বোঝাবো আমি কি!হুহ..”
———
“মাহির,তোহা এবং নিধি এক টেবিলে খেতে বসেছে।নিধি অনেকক্ষণ যাবৎ খেয়াল করছে, ওদের টেবিলের সামনা-সামনি একজন যুবক খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে বিভিন্ন মেয়েদের দিকে নোং**রা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।যুবকটি নিধি এবং তোহার দিকেও কয়েকবার তাকিয়েছে।বিষয়টি নজর এড়ায়নি মাহিরের।এদিকে তোহা তো গোগ্রাসে গিলে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে সে বহুদিনের অনাহারী।মাহির তোহার এহেন কান্ডে মুচকি হেসে একটু ঝুঁকে বললো,’ধীরে ধীরে খাও,তুমি তো দেখছি কেমিক্যাল যুক্ত লিপস্টিক ও খেয়ে ফেলছো।এভাবে খেতে থাকলে পেট খারাপ হতে বেশি সময় লাগবে না, হিহিহি।”
“মাহিরের কথা শুনে লজ্জা পেলো তোহা।তড়িৎ গতিতে টিস্যু দিয়ে ঠোঁট মুছে নিচু স্বরে বললো,’আপনি কি সবসময় আমাকে লজ্জা দেওয়ার ধান্দায় থাকেন?”
” না না.. আমি সবসময় তোমার লজ্জা কমানোর ধান্দায় থাকি।তাই তো এগুলো বলে বলে ফুলসজ্জার আগে তোমার লজ্জা কমানোর চর্চা করাচ্ছি।”
“তোহা রেগেমেগে কিছু বলতে যাবে, ঠিক তখনই সেই ছেলেটি ওয়েটারের দিকে তাকিয়ে নিধি কে উদ্দেশ্য করে বললো,’আরে আরে এই মিষ্টি পরী কে মাত্র এক কাপ দই দিলেন কেনো?দুই কাপ দিন।তাকে দেখেই মনে হচ্ছে সে মিষ্টি খেতে খুব পছন্দ করে,যেমন টা আমিও করি।’বলেই জিহ্বা নাড়িয়ে বিশ্রী ভঙ্গিমা করে কুটিল হাসলো যুবক টি।”
“নিধির মাথা ১০০তে ১০০গরম হয়ে গেলো।নিধি কিছু বলতে যাবে,তখনই তোহা বললো,’এই ছেলে আপনার সমস্যা কি?আপু ১টা দই নিবে বা ২টা নিবে; সেটা আপনি বলার কে?”
“ওয়াও নটি গার্ল,তোমারও আরেকটা লাগবে নাকি?ওয়েটার কে বলবো?”
“ছেলেটার কথায় ক্ষেপে গেলো মাহির।গলা উচিয়ে বলে উঠলো,’হেই প্লে বয়,এখানে কি মেয়েদের সাথে ছ্যাঁচড়ামি করতে এসেছেন?ইডিয়ট।আই সে গেট আউট ফ্রম হেয়ার।”
“যুবকটি নড়লো না।বেহায়ার মতো তোহা আর নিধির দিকে তাকিয়ে রইলো।নিধি মুখ ভেং**চি কে**টে দইয়ের কাপ নিয়ে তড়িৎ গতিতে সেখান থেকে উঠে গেলো।মাহিরের ছেলেটির সাথে কথা বলার মতো রুচি এলো না।তাই তোহা কে ইশারা করে, ওকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বিশ্রী হাসি দিলো যুবকটি।”
“এদিকে কিছুটা দূর থেকে শকুনের ন্যায় সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে ব্রেইনে সেভ করছিলো নির্জন।এখনও কিছুই খায় নি সে।নিধিকে কর্ণারে গিয়ে চামচ দিয়ে দই খেতে দেখে বাঁকা হাসলো।অতঃপর যুবকটির দিকে তাকিয়ে দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বিড়বিড় করে বললো,
‘আজ তো তুই শেষ।”
“ভেতর থেকে ‘মন’ বলে উঠলো,’পুরনো জীবনে ফিরে আসো নির্জন।এটাই তোমার আসল পথ।ওই ভ্রু কা**টা,কানে দুল পড়া,হাতে ট্যাটু আঁকা প্লে বয় কে আজ তুমি নিজের হাতে শেষ করবে,আমি তোমার পাশে আছি।ওদের মতো কিছু নর*পি**শাচদের জন্য আজ বিভিন্ন উন্নত দেশগুলোতেও আমাদের বোনেরা নিরাপদে নেই।নারী দেহ পেলেই কিছু ন**রখাদক হা**য়নাদের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে।পালাক্রমে সম্ভ্রমহানি করেও ওদের মন ভরে না।পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুবলে খুবলে খেয়ে নৃ**শংস যন্ত্রণা দিয়ে মে**রে ফেলে।এদের মতো জা***রদের একমাত্র শাস্তি হলো মৃ**ত্যু।মনে রেখো, এটা তোমার অন্ধকার রাজ্যের ব্যক্তিগত আদালত।এই আদালতে তুমি হলে শক্তিশালী,বিচক্ষণ এবং ভয়ং**কর বিচারক,আর একমাত্র উকিল হলাম আমি।যে এই ধরনের অন্যায় করবে,সেই মৃ**ত্যুর মতো ভ**য়াবহ শাস্তি পাবে।তাছাড়া সে তোমার ব্যক্তিগত প্রেয়সীর দিকে বাঁকা নজর দিয়েছে।তাকে বাঁচিয়ে রাখার মতো ভুল একদমই করবে না।’
অনেক দিন পর মনের কথায় ‘হৃদয়’ ও সায় জানালো।’
বললো,’মন ঠিক কথা বলেছে।তোমার প্রেয়সীর দিকে নোং**রা দৃষ্টিতে তাকানোর ফলে আমার #হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ হচ্ছে।তাকে ধ্বং**স করে ফেলো নির্জন।অনেক দিন যাবৎ তোমার ‘ডার্ক পারফরম্যান্স’ দেখা হয় না।”
“মন এবং হৃদয়ের কথা শুনে ডেভিল হাসলো নির্জন।বিড়বিড় করে বললো,’ঠিক বলেছো।ওকে ফাইন,তোমরা যেহেতু এত করে রিকোয়েস্ট করছো,তাহলে তোমাদের কথা রাখাই যায়।এমনিতেও অনেক দিন যাবৎ শিকার নিয়ে খেলা করা হয় না।হাত টা কে আবার কাজে লাগাতে হবে।”
———–
“নির্জন নিধির কাছে গিয়ে বললো,’একা একা আমাকে ছেড়ে মিষ্টি দই খেতে খারাপ লাগছে না ডার্ক কুইন?”
“নিধি অবাক চাহনি দিয়ে বললো,’একি আপনি এখনও কিছু খান নি?”
“নাহ!তোমার হাতের মিষ্টি দই খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।দাও এইবার দ্রুত খাইয়ে দাও।একটা শুভ কাজে যাবো।প্রিয়তমার হাত থেকে মিষ্টি মুখ না করে গেলে তৃপ্তি পাবো না।”
“নির্জনের কথা শুনে লাজুক হাসলো নিধি।সরল মনে ভাবলো,হয়তো অফিসের কোনো কাজের কথা বলছে।তাই শুভ কাজটির কথা না জিজ্ঞেস করে, পুরো দই নির্জন কে খাইয়ে দিলো।তারপর নির্জন কে খাবার খেতে বললো।’
” নির্জন মুচকি হেসে বললো,’আগে বলো ‘অল দ্যা বেস্ট’।
“মুচকি হাসলো নিধি।অতঃপর বললো,’উইশ ইউ অল দ্যা বেস্ট নির্জন।আমি চাই আপনি আপনার জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে অদম্য সফলতা লাভ করুন।”
“নিধিকে ‘থ্যাংকস’ জানিয়ে,নির্জন খাওয়ার কথা বলে নিধির কাছ থেকে বিদায় নিলো।কমন রুমে গিয়ে ল্যাপটপের ব্যাগ থেকে রিমলেস চশমা টি বের করে, সেটি ঠিকঠাক ভাবে পড়ে,ব্যাগ টি কাঁধে ঝুলিয়ে নিলো।”
“এদিকে যুবকটি একটা সফট ড্রিংকের গ্লাস হাতে নিয়ে একবার চুমুক দিচ্ছে।আর লোভাতুর দৃষ্টিতে বিভিন্ন নারীদের বাহ্যিক পোশাকের ভাজে,স্পর্শকাতর জায়গায় চোখ বুলাচ্ছে।”
“নির্জন হাতে একটা খাবারের প্লেট নিয়ে যুবকটির পাশ কা**টিয়ে যাওয়ার সময়, ইচ্ছে করে যুবকটির ওপর পুরো খাবারের প্লেট ফেলে দিলো।”
“যুবকটি নির্জনের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,’স্কাউন্ড্রেল.. দেখে চলতে পারিস না?”
“নির্জন তর্জনী দিয়ে চশমা টা ঠিকঠাক করে, ইনোসেন্ট মুখ করে বললো,’সরি.. সরি ভাইয়া আমি একদম খেয়াল করিনি।আমি এখনই টিস্যু দিয়ে মুছে দিচ্ছি।’বলেই
টিস্যু দিয়ে যুবকটির শার্ট মুছে দিতে থাকল।যুবক টি বিরক্ত হয়ে নির্জনের কাছ থেকে সরে গিয়ে ওয়েটার কে ডেকে বললো,’ওয়েটার আপনাদের চেঞ্জিং রুম কোনটা?আমি ড্রেস চেঞ্জ করবো।”
“ওয়েটার এসে বিনয়ের সহিত বললো,’স্যার থার্ড ফ্লোরে বাম পাশের শেষ রুমে আমরা ড্রেস চেঞ্জ করি।আপনি সেখানে গিয়ে চেঞ্জ করুন।”
“যুবকটি নির্জনের দিকে একবার বিরক্তিকর চাহনি নিক্ষেপ করে বললো,’ননসেন্স।’
তারপর চলে গেলো ওয়েটারদের চেঞ্জিং রুমে।”
“নির্জন বাঁকা হেসে তার মোবাইল ফোন টা সেকেন্ড ফ্লোরের ওয়াশরুমের ভেন্টিলেটরের কার্ণিশে রেখে, সন্তর্পণে যুবকটির পিছু নিলো।”
“যুবক টি রুমে প্রবেশ করে মাত্র পড়নের শার্ট টি খুলেছে,ঠিক তখনই পেছন থেকে গেট লক করার আওয়াজ পেলো সে।যুবকটি যখনই পেছনে তাকাতে যাবে,ঠিক তখনই যুবকটির পিঠের মাঝ বরাবর সর্বশক্তি দিয়ে লা**থি দিলো নির্জন।আকস্মিক আ**ক্রমণে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে যাওয়ায়, যুবকটি পিঠে এবং বুকে প্রচন্ড ব্যথা পেয়ে যখনই মাথা উঁচিয়ে পেছনে তাকাতে যাবে;তখনই যুবকটির কাছে এসে তার পিঠের ওপর নিজের শরীরের সমস্ত ভার ছেড়ে দিয়ে বসে পড়ল নির্জন।অতঃপর পেছন থেকে যুবকটির চোখে শক্ত করে কালো কাপড় বেঁধে দিলো।কয়েক সেকেন্ড ভ**য়ংকর সুরে সিটি বাজালো নির্জন।মনে হচ্ছে এটা একটা হরর এরিয়া।বিভ**ৎস হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে আওড়ালো,
‘অনেক বড় অন্যায় করেছিস তুই। আজ তোর সাথে খুব মজা করে ‘মৃ**ত্যু খেলা’ খেলবো।’
‘The game of death will begin now..3,2,1..start..
“কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ।”
#চলবে…