হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-১৯+২০

0
60

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত]

“তারপর..তারপর তোমাকে সারা জীবনের জন্য আমার শক্ত বাহুডোরে ভালোবাসার শিকল পড়িয়ে আটকে রাখবো ডার্ক কুইন।”

“অপরপাশ থেকে নিধি বলে উঠলো,’কি হলো কথা বলছেন না যে?”

“নির্জন মিউট খুলে মুচকি হেসে বললো,’ভাবছিলাম কিভাবে আমার হবু শ্বশুরের মন জয় করে তোমাকে আমার ভালোবাসার রাজ্যে নিয়ে আসবো।”

“নির্জনের রসিকতায় মুচকি হাসলো নিধি।তারপর আরও কয়েক মিনিট কথা বলে ফোন রেখে দিলো।”

“কে**টে গেলো ৩ দিন।এই ৩দিনে ঘটে গেছে অনেক কিছু।নির্জন রফিক মির্জার সাথে ফোনে সৌজন্যমূলক কথা বলে এবং সাথে কিছু ইমোশনাল কথা যুক্ত করে,যেন তার মন টা আরও নরম হয়।রফিক মির্জা নির্জনের আচরণে মুগ্ধ হয়ে তাকে বাসায় নিমন্ত্রণ করেন।”

“আজ বিকালে নির্জন ফরমাল ড্রেস পড়ে এবং একটি নতুন রিমলেস চশমা পড়ে,নিধিদের বাসার ড্রয়িং রুমে বসে কফি খাচ্ছে আর রফিক মির্জার সাথে কুশলাদি বিনিময় করছে।রফিক মির্জা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা জুড়ে দিয়েছেন।নির্জন আগে থেকে জানতো,তিনি একজন জার্নালিস্ট।তাই সে আগে থেকেই তৈরি হয়ে এসেছে।নির্জন অতীত ইতিহাস থেকে শুরু করে বর্তমানে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর তথ্য গুলো নিয়ে আরও গুরুত্বের সাথে আলোচনা করছে।কেউ দেখলে অকপটে বলে দিবে,এখানে কোনো রাজনৈতিক মিটিং চলছে।তাহমিনা বেগম সোফার এক কোণে বসে নির্জন কে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছেন আর মনে মনে ভাবছেন,’ছেলেটা কে দেখলেই মনে হয় ভদ্রতার একটা প্যাকেজ।সত্যি নিধির পছন্দের তারিফ করতে হয়।”

“এদিকে রফিক মির্জা এবং নির্জনের অতীত ইতিহাসের আলোচনা পর্দার আড়াল থেকে মুখস্থ করছে তোহা।ফাইনাল পরীক্ষায় এই সাধারণ জ্ঞানগুলো খুব কাজে লাগবে।আর সেই সাথে নির্জন কে এতো বকবক করতে দেখে তোহা খুব অবাকও হয়েছে। কারণ ও যতবার নির্জন কে দেখেছে,ততবারই মনে হয়েছে লোকটা গুনে গুনে কথা বলে।শুধু নিধির সাথে প্রেম করার জন্য যেটুকু না বললেই নয়।গোমড়ামুখো মানুষও তো প্রেম করে।’ভেবে তোহা এক দৌড়ে রুমে গিয়ে দেখলো,নিধি হালকা লাল রঙের জর্জেট সালোয়ার-কামিজ পড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিজেকে ঘুরে ঘুরে দেখছে।নিধি কে দেখলে মনে হবে,সে কিছুক্ষণ পর ফ্যাশন শো তে রেড কার্পেটে নজরকারা হাসি দিয়ে কোমর দুলিয়ে হাঁটবে,আর দর্শকদের উদ্দেশ্যে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিবে।’ভেবে ঠোঁট টিপে হাসলো তোহা।”

“পা টিপে রুমে ঢুকে নিধির পেছনে গিয়ে ভাউউউ..করে শব্দ করলো।কিন্তুু অদ্ভুত বিষয় হলো,তোহা এতো জোরে চি**ৎকার করার পরেও নিধি ভয় না পেয়ে,উল্টো তোহার কান ধরে বিছানায় বসালো।তারপর কোমরের দুই পাশে দুই হাত রেখে বললো,’দেখতো,আমাকে কেমন লাগছে?নির্জন আমাকে দেখে পা**গল হবে তো?”

“তোহা অবাক হয়ে বললো,’আপু আমি এতো জোরে ‘ভাউউউ..’করার পরেও তুমি ভয় পেলে না কেনো?”

“তোহার কথায় এইবার বিরক্ত হলো নিধি।তোহার ডান গালে আলতো করে থা**প্পড় দিয়ে বললো,’হাদা কোথাকার,তুই যে আমার পেছনে ছিলি,সেটা আমি আয়নায় দেখেছি।তারপর তুই যে পা টিপে টিপে আমাকে ভয় দেখানোর জন্য এসেছিস; সেটাও দেখেছি।”

“কিন্তুু আপু তুমি তো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ফ্যাশন করতে ব্যস্ত ছিলে;তাহলে?”

“নিধি এইবার হো হো করে হেসে তোহার দুই গাল আলতো করে টিপে দিয়ে বললো,’তোর আপু জাতে মাতাল,তালে একদম ঠিক।কেউ আমাকে কাবু করতে পারবে না বুঝলি?”

“কিন্তুু একজন কাবু করতে পারবে আপু।”

‘কে?’

“আমার সুইট, কিউট এন্ড ইনোসেন্ট নির্জন দুলাভাই।অলরেডি তার কথার সম্মোহনে বাবা-মাকে কাবু করে ফেলেছে।”

“অ্যা কি বললি?আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।বাবা সত্যি এতো তাড়াতাড়ি পটে গেলো?”

“হ্যা আপু;আমি সত্যি বলছি।’বলেই তোহা ড্রয়িং রুমের সব কাহিনী নিধি কে বললো।তোহার মুখে সবকিছু শুনে নিধি তো বেশ অবাক হলো।কারণ নিধি যতটুকু জানে,নির্জন ইন্ট্রোভার্ট টাইপ।খুব কম কথা বলে।গুরুত্বপূর্ণ কথা ছাড়া বেশি কথা বলে না।যদিও সেদিন রেস্টুরেন্টে রুফটপের কর্ণারে দাঁড়িয়ে নিজের এবং তার পরিবার সম্পর্কে অনেক কথা বলেছিলো।তবে সেগুলোও খুব গুরুত্বপূর্ণ টপিক ছিলো।”

“নিধির ভাবনার মাঝেই তাহমিনা বেগম রুমে প্রবেশ করে,নিধি কে ড্রয়িং রুমে যেতে বললেন।ড্রয়িং রুমে যাওয়ার কথা শুনে নিধি তো লজ্জায় কুপোকাত।সেদিন রেস্টুরেন্টে নির্জনের সাথে দেখা করলেও,আজ তার সামনে যেতে লজ্জায় যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে।কেনো এমন হচ্ছে,সেটা নিজেও জানেনা নিধি।”

“তোহা যেনো এতদিন এই সুবর্ণ সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো।মাহির যেদিন তোহা কে দেখতে এসেছিলো,সেদিন নিধি ওকে কম জ্বালায় নি।আজ সেটা শোধবোধ করার সময় এসেছে।’ভেবে তোহা নিধির কাঁধে ধা**ক্কা দিয়ে বললো,’আপু গো তুমি তো দেখছি এখনই লজ্জায় ফালুদা হয়ে যাচ্ছো,ফুলসজ্জার রাত তো এখনও বাকি আছে।সেই সময়ের জন্য লজ্জাটা একটু জমিয়ে রাখো।’বলেই তোহা ঢং করে গেয়ে উঠলো,

🎶ইশারায় শিস দিয়ে
আমাকে ডেকোনা,
কামনার চোখ দিয়ে
আমাকে ডেকো না
লাজে..মরি মরি গো..🎶

“তোহার কন্ঠে এই গান শুনে, নিধি তোহার মাথায় গাট্টা মে**রে কটমটিয়ে বললো,’একবার তোর বিয়েটা হোক,দেখিস সেদিন রাতে আমি কি করি।সকাল বেলা লজ্জায় মুখ দেখাতেও পারবি না হুহহহ…’বলেই দুষ্টু হাসি দিয়ে রুম থেকে প্রস্থান করলো।”

“ড্রয়িংরুমে গিয়ে নির্জনের দিকে তাকাতেই দু’জনে চোখাচোখি হয়ে গেলো।লজ্জায় চোখ নামিয়ে মুচকি হাসলো নিধি।এই মুহূর্তে নিধির মনে হচ্ছে,এই প্রথমবার কোনো পাত্র ওকে দেখতে এসেছে।নির্জন এক পলক নিধির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো; অতঃপর চোখ ঘুরিয়ে রফিক মির্জার দিকে তাকালো।রফিক মির্জা নির্জনের সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বললেন।তারপর হাসি মুখে বললেন,’যেহেতু তোমরা দু’জন দু’জন কে আগে থেকেই চেনো,আশা করি তোমাদের মধ্যে মোটামুটি কথপোকথন হয়ে গেছে।তবুও যেহেতু আনুষ্ঠানিক ভাবে আমার মেয়েকে দেখতে এসেছো,তাই বলছিলাম তোমরা নিজেদের মধ্যে কিছু সময়ের জন্য আলাদা কথা বলো।”

“নির্জন যেনো ঠিক এই সুযোগটার অপেক্ষায় ছিলো।রফিক মির্জার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে ভাবলো,’স্মার্ট জামাইয়ের স্মার্ট শ্বশুর।”

“তোহা নিধি কে নির্জনের সাথে ছাদের দখিনা বাতাসে দাঁড়িয়ে কথা বলার জন্য রিকোয়েস্ট করেছে।কারণ তোহা এখন মাহিরের সাথে প্রেমালাপ করবে।নিধি খুব খুশি হলো।খোলামেলা পরিবেশে নির্জনের সাথে কথা বলতে খুব ভালো লাগবে।সেই সাথে নিধির প্রিয় গাছগুলোর সাথেও নির্জন কে পরিচয় করিয়ে দিবে।”

“ছাদের কর্ণারে প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে নির্জন।দৃষ্টি তার নিধি তে আবদ্ধ।নির্জনের তীক্ষ্ণ চাহনি দিয়ে যেন ভ**স্ম করে দিচ্ছে নিধি কে।নির্জন কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে,নিধি লজ্জায় যেন মূর্ছা যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে নির্জনের নজর থেকে পালিয়ে যেতে।কিন্তুু সে পথ এখন পুরোপুরি বন্ধ।”

“নিধি নির্জনের দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো,সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না।কিন্তুু নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো, ওড়নার পিন খুলে গিয়ে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরে গেছে।নিধি তড়িঘড়ি করে ওড়নার পিন ঠিকঠাক ভাবে লাগিয়ে ভাবলো,’লোকটা কি এইজন্যই এভাবে তাকিয়েছিলো?ছিঃ ছিঃ কিসব ভাবছি আমি?”

“নিধির ভাবুক চেহারা দেখে নির্জন মুচকি হেসে, নিধির দিকে আবারও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল।ও চোখের পাতা যেনো আজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছে, আজ তার প্রিয়তমার ওপর থেকে কিছুতেই পলক ফেলবে না।মন এটা চাইলেও চোখজোড়া যেন এইবার সত্যি হাঁপিয়ে গেছে।নির্জন একবার চোখের পলক ফেলে,আবারও তাকিয়ে রইলো।সেটা দেখে নিধি গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?আমাকে কি দেখতে খারাপ লাগছে?”

“নির্জন প্রতিত্তোর দিলো না।তার দৃষ্টি অনড়।নিধি শুকনো ঢোক গিলে বললো,’আসুন আপনাকে আমার প্রিয় গাছগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।”

“নিধির কথা শুনে বাঁকা হাসলো নির্জন।ভাবলো,’নির্জন খান করবে গাছের সাথে পরিচয়?হাউ ফানি!বাই দ্যা ওয়ে ডার্ক কুইন গাছগুলোকে ‘প্রিয়’ সম্বোধন করলো কেনো?নো নো নো.. আমি ব্যতীত আর কিছুই ওর প্রিয় হতে পারবে না।’কথাগুলো ভাবতেই চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেলো।”

“নির্জনের স্বাভাবিক মুখস্রির পরিবর্তন দেখে চিন্তায় পড়ে গেলো নিধি।আনমনে ভাবলো,’আমি কি কিছু ভুল বললাম?”

“আকস্মিক নির্জন মুচকি হেসে নিধির দিকে একটু এগিয়ে এসে হাস্কি ভয়েসে বললো,’তোমাকে কখনোও নিখুঁত ভাবে দেখা হয় নি।তাই আজ একটু প্রগাঢ় দৃষ্টি দিয়ে দেখে নিলাম।ভ**য়ংকর সুন্দর তুমি ডার্ক কুইন।”

“নির্জনের এহেন কথায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো নিধি। ‘ডার্ক কুইন’ নামটি কর্ণপাত হতেই নিধির মনে যেনো অদ্ভুত এক শিহরণের সৃষ্টি হলো।কিন্তুু এই মুহূর্তে নির্জন কে ওর দুর্বলতা কিছুতেই বুঝতে দিবে না।তাই আড়চোখে তাকিয়ে বললো, ‘সবসময় শুনেছি ‘খুব সুন্দর,অনেক সুন্দর,সবচেয়ে সুন্দর।কিন্তুু এই প্রথম শুনলাম ‘ভ**য়ংকর সুন্দর।’ এমন কথা কখনোও শুনিনি।”

“নিধির কথা শুনে নির্জন এইবার নিধির দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো।নির্জন কে এভাবে কাছে আসতে দেখে অজানা ভয় ঘিরে ধরলো নিধি কে।নির্জন যতো এগিয়ে যাচ্ছে,নিধি তত পিছিয়ে যাচ্ছে।এক পর্যায়ে নিধি ছাদের রেলিঙের সাথে ঠেকে গেলো,তখনই নির্জন নিধির হাত শক্ত করে ধরে কাছে টেনে নিলো।এই মুহূর্তে নিধি এবং নির্জনের মাঝে ১ ইঞ্চি দূরত্ব হবে।প্রেমে পড়ার পর এই প্রথম নির্জন নিধির এতটা কাছে এলো।নিধির বুকের ধুকপুকানি দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেলো।অতিরিক্ত ভয়ে ঈষৎ কেঁপে উঠলো নিধি।এদিকে নির্জন আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে নিধিকে দেখছে।সেটা বুঝতে পেরে প্রবল অনুভূতি এবং অস্বস্তির শেষ পর্যায়ে পৌঁছালো নিধি।ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে নির্জনকে অতিক্রম করে চলে যেতে চাইলো;কিন্তুু পারলো না।কারণ ওর হাত এখনোও নির্জনের শক্ত হাতের মুঠোয় বন্দী হয়ে আছে।”

“নির্জনের জায়গায় এই হাত অন্য কেউ ধরলে হয়তো এতক্ষণে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চড় খেতো।কিন্তুু এই মুহূর্তে নির্জন কে চেয়েও বাঁধা দিতে পারছে না।এভাবে আর কিছুক্ষণ থাকলে নিধির অচেতন হতে বেশি সময় লাগবে না।কোনোক্রমে নিজেকে সামলে নিয়ে,শুকনো ঢোক গিলে বললো,’আমার হাত টা ছাড়ুন প্লিজ।কেউ দেখে ফেললে কেলে**ঙ্কারি হয়ে যাবে।এখানে আমাদের শুধু কথা বলতে পাঠিয়েছে,অন্যকিছু…

“নিধি আর কিছু বলতে পারলো না।তার আগেই ওর ঠোঁট জোড়ায় শক্ত দু’টি আঙ্গুলের স্পর্শ হলো।নির্জন নিধির দিকে একটু ঝুঁকে এসে নেশালো স্বরে বললো,’Can I kiss your lips deeply?”

“নির্জনের মুখে এহেন কথা শুনে নিধির চোখজোড়া রসগোল্লার মতো বড় হয়ে গেলো।ওর মনে পড়ে গেলো,ভোরের সেই দুঃস্বপ্নের কথা।অপরদিকে নির্জন এতোটা কাছে থাকায়,সর্বাঙ্গে মনে হয় শীতল স্রোত ধারা বয়ে গেলো।ইচ্ছে করছে নির্জনের নেশালো ডাকে সাড়া দিতে।কিন্তুু পরক্ষণে কিছু একটা ভেবে নিধির নেত্রকোণায় পানি চলে এলো।”

“নিধির ছলছল আঁখিদ্বয় দেখে নির্জনের মন টা যেন দুমড়ে-মুচড়ে গেলো।তৎক্ষণাৎ নিধির হাত ছেড়ে দিয়ে,দূরত্বে সরে গিয়ে বললো,’আ’ম সরি।”

“নিধি চোখজোড়া বন্ধ করে আবার খুললো।অতঃপর নিজের চোখের পানিকে নিয়ন্ত্রণ করে করুণ স্বরে বললো,’আ’ম এক্সট্রিমলি সরি নির্জন।আমি ওই টিপিকাল প্রেমিকাদের মতো নয়,যে আপনি চাইলেই আমি নিজেকে আপনার কাছে বিলিয়ে দেবো।বিয়ের আগে এটা অসম্ভব।তাছাড়া বাবা-মা যেহেতু আপনাকে পছন্দ করেছে,সেহেতু কিছুদিন পর আমাদের বিয়ে হবে।তখন তো আমি পুরোপুরি আপনারই হবো।তখন না হয়…
লজ্জায় আর কিছু বলতে পারলো না নিধি।তাই মাথা নত করে ঘনঘন শ্বাস ছাড়লো।”

“নিধি কে অবাক করে দিয়ে উচ্চশব্দে হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।মিনি সেকেন্ড পর গম্ভীর স্বরে বললো,’তুমি পরীক্ষায় পাশ করেছো ডার্ক কুইন,কংগ্রাচুলেশন মাই ড্রিম গার্ল।”

“পরীক্ষায় পাশ করেছি মানে?”

“নিধির উত্তেজিত স্বরে প্রশ্ন শুনে নির্জন মৃদু হেসে বললো,’প্রথমত তোমাকে আমি কখনোই টিপিকাল,গায়ে পড়া মেয়েদের নজরে দেখিনি।তুমি আমার কাছে সবচেয়ে স্পেশাল নারী।যে কিনা আমার ছন্নছাড়া, অগোছালো জীবনটা কে কানায় কানায় পূর্ণ করতে পদার্পণ করেছে।তুমি কি ভেবেছিলে,আমি সত্যি তোমায় লিপ কিস করবো?হাহাহা…সম্পূর্ণ ভুল ভেবেছো।আমি তোমাকে পরীক্ষা করছিলাম,যে সত্যি তুমি আমার কথায় রাজি হও কিনা।নারাজ হওয়ার জন্য অনেক থ্যাংকস।তবে যদি রাজি হতে তাহলে…

“তাহলে?তাহলে আপনি কি করতেন?”

“আনমনে হাসলো নির্জন।কঠোর স্বরে বলে উঠলো,’তাহলে তোমাকে ছেড়ে দেবদাস জীবনে পদার্পণ করতাম নিরুপমা।ভেবে নিতাম তুমিও সেই নারীদের মতো,যারা নিজেদের সম্মানের চিন্তা না করে সো কলড বয়ফ্রেন্ডের কাছে কামুকতা মেটানোর জন্য নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দেয়।আজ যদি সত্যি তুমি রাজি হয়ে যেতে,তাহলে তোমার থেকে দূরে গিয়ে তোমাকে ভালোবাসতাম,কিন্তুু কখনো ছুঁয়ে দেখতাম না।কিন্তুু তুমি নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছো ডার্ক কুইন।সত্যি তুমি সবার থেকে অন্যরকম,অসাধারণ।”

“নির্জনের কথাগুলো শুনে নিধি অবাক হয়ে বিজয়ের হাসি দিলো।মনে মনে বললো,’ভাগ্যিস নির্জনের কথায় আমি রাজি হইনি।নইলে আজকের পর থেকে নির্জন বিহীন প্রতিটা দিন আমার ভীষণ কষ্টে কা**টতো।’ভেবে নিধি বললো,’কিছুদিন আগেও ভাবতাম,আমি হয়তো কোনো খারাপ কাজ করেছি,তাই আমার মনের মানুষটি আমার কাছে ধরা দিচ্ছে না।কিন্তুু এখন বুঝতে পারছি, আমি হয়তো নিজের অজান্তেই কোনো ভালো কাজ করেছিলাম।তাই তো আপনার মতো একজন সচ্চরিত্রবান মানুষ কে পেয়েছি।আপনি একদম আমার মনের মতো নির্জন।”

“নিধির কথা শুনে নির্জন আবারও নিধির হাত রেলিঙের সাথে চেপে ধরে বললো,’যদি এখনই একটু আগের চাওয়া কাজ টা করে ফেলি,তখন কি করবে?”

“নিধি মুচকি হেসে দৃঢ়তার সাথে বললো,
‘উহুমম আমি জানি,আমার নির্জন এইরকম কাজ কখনোই করবে না; ১০০%গ্যারান্টি।”

“আমার নির্জন’ নিধির কন্ঠস্বর নিঃসৃত হতেই,নির্জনের ঠোঁটের কোণা কিঞ্চিৎ প্রসারিত হলো।মনে মনে নিজেকেই নিজে বিজয়ের অভ্যর্থনা জানালো।ভেতর থেকে ‘মন’ বাহবার সুরে বললো,’ডার্ক কুইনের মনে নিজেকে দৃঢ় ভাবে গেঁথে নিতে সক্ষম হয়েছো তুমি।ইউ আর আ রিয়েল মাইন্ডগেমার নির্জন।চালিয়ে যাও।”

“নিধির সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে,রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগমের কাছ থেকে বিদায় নিলো নির্জন।”

“এদিকে তোহা এখনও মাহিরের সাথে কথা বলায় মগ্ন।মাহির সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একাধারে রোগী দেখে, বিকালের দিকে তোহা কে এক ঘন্টা সময় দেওয়ার জন্য ফ্রী হয়।আর ওই এক ঘন্টা তোহার সাথে মন খুলে কথা বলে।একজন ব্যস্ত চিকিৎসকের কাছ থেকে এক ঘন্টা সময় যেনো তোহার কাছে লক্ষ কোটি গুণ দামি।তোহার ধারনা ছিলো,ডক্টর রা সাধারণত প্রচুর ব্যস্ত থাকার কারণে পরিবার,স্ত্রী-সন্তানদের সময় দিতে পারে না।কিন্তুু মাহিরের সাথে কথা বলার পর সেই ধারনা যেন নিমিষেই বদলে গেছে;সব ডক্টর এক নয়।”

———–
“কে**টে গেলো আরও ৪ দিন।রাত ৯টায় এয়ারপোর্টে ইহানের বাবা তার জন্য অপেক্ষা করছে।আর এয়ারপোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে নির্জন এবং দিগন্ত।নাদিয়া দিগন্ত কে ইহানের বিডি তে ল্যান্ড করার সময় বলে দিয়েছে।দিগন্ত নির্জন কে ফোন করে বললে,নির্জন তৎক্ষণাৎ দিগন্তের বাসার সামনে এসে দিগন্ত কে নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।”

“ইহান আসতেই,ইহানের বাবা তাকে জড়িয়ে ধরে।নিজের বাবা কে এতদিন পর দেখতে পেয়ে ইহান ও খুব খুশি হয়।দু’জনে কুশলাদি বিনিময় করে এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়।নাদিয়া আগে থেকেই দিগন্তের হোয়াটসঅ্যাপে ইহানের ছবি পাঠিয়েছিলো।তাই এতো মানুষের ভীরেও দিগন্ত ইহান কে চিনে ফেলে।দিগন্ত ইশারা করে নির্জন কে দেখায়।নির্জন বাঁকা হেসে ইশারা করতেই,দিগন্ত এক দৌড়ে ইহানের কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,’বন্ধু সেই কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি।তুই তো বলেছিলি সন্ধ্যায় প্লেন ল্যান্ড করবে।অথচ এতো দেরি হলো কেনো?”

“দিগন্তের এহেন কান্ডে ইহান হতবাক হয়ে,নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,’বন্ধু?কে বন্ধু?কার বন্ধু?আপনার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে।আমি প্রায় ১৫বছর পর বাংলাদেশে এসেছি।এখানে আমার কোনো বন্ধু নেই।”

“ইহানের কথার সাথে তাল মিলিয়ে,ইহানের বাবা বললেন,’ঠিকই তো!আমার জানা মতে,বাংলাদেশে ইহানের কোনো বন্ধু নেই।তোমার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে।”

“দিগন্ত মুচকি হেসে আবারও ইহান কে জড়িয়ে ধরলো।অতঃপর কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদুস্বরে বললো,’আপনার সাথে নাদিয়ার বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবো।তাই একটু সাইডে আসুন।আমি নাদিয়ার হাসবেন্ড।”

“দিগন্তের মুখনিঃসৃত শেষোক্ত বাণী শুনে,ইহানের কানে মনে হয় কেউ ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে দিলো।অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,’হোয়াট?”

“দিগন্ত বাঁকা হেসে বললো,’সাইডে আসুন,তারপর বলছি।”

“বাংলাদেশের মাটিতে তে পা রাখতেই এমন একটি ঝাঁঝালো নিউজ শুনবে,সেটা কল্পনাও করতে পারেনি ইহান।দিগন্ত ইহান কে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,’ফেইসবুকে ৩দিন আগেও তোর সাথে আমার কথা হলো।অথচ তুই এখন আমার সাথে জোকস করছিস?”

“ইহান মলিন স্বরে জোর করে হেসে বললো,’সরি সরি ইয়ার…জাস্ট কিডিং,ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ।আসলে বাবা ওর সাথে আমার ফেইসবুকে পরিচয় হয়েছে।ওকে আমি বিডিতে আসার দিন এবং সময় বলেছিলাম।তাই ও আমার সাথে দেখা করতে এসেছে।আমরা একটু কথা বলে আসছি।জাস্ট ৫ মিনিট।”

“ইহানের বাবা হাসি মুখে বললেন,’তুমি তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে।যাইহোক তোমরা যাও।আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।’বলে তিনি সেখান থেকে প্রস্থান করলেন।”

“নির্জন এয়ারপোর্টের বাইরে রাস্তার এক সাইডে দাঁড়িয়ে,নিধির সাথে চ্যাটিং করছে।নিধি আজ সারাদিন কি কি করলো সবকিছু নির্জন কে বলছে।নির্জন নিধির সাথে আগামীকাল দেখা করার কথা বলছে।নিধি নির্জনের সাথে দেখা করতে রাজি হলো।নিধির সম্মতি পেয়ে নির্জনের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।”

“এদিকে ইহান হাতে একটি কাগজ নিয়ে, চেহারায় ফ্যাকাশে ভাব নিয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সেটা দেখে অন্যদিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসছে দিগন্ত।নিজেকে সামলে, ইহানের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’আমাদের বিয়ের প্রমাণপত্র তো স্বচক্ষে দেখলেন।আর তার চেয়েও বড় একটি নিউজ হলো,নাদিয়া ২ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।আপনি চাইলে সেই রিপোর্টও আপনাকে দেখাতে পারবো।”

“দিগন্তের প্রতিটি কথা যেনো ইহানের হৃদয়ে হাতুড়ির মতো আ**ঘাত হানল।ভাবলো,’তাহলে ২বছর যাবৎ নাদিয়া কে নিয়ে দেখা আমার স্বপ্ন গুলো কি সব মিথ্যা ছিলো?এতদিন আমি কি শুধু মরিচীকার পেছনে ঘুরেছি?”

#চলবে…

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ২০
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“দিগন্তের প্রতিটি কথা যেনো ইহানের হৃদয়ে হাতুড়ির মতো আ**ঘাত হানল।ভাবলো,’তাহলে ২বছর যাবৎ নাদিয়া কে নিয়ে আমার স্বপ্ন গুলো কি সব মিথ্যা ছিলো?এতদিন আমি কি শুধু মরিচীকার পেছনে ঘুরেছি?”

“ইহানের করুণ চেহারায় ভাবুক ভঙ্গিমা দেখে বেশ মজা পেলো দিগন্ত।ইহানের কাঁধে হাত রেখে মলিন স্বরে বললো,’আমি জানি,আপনি নাদিয়া কে খুব ভালোবাসেন।তবে ভালোবাসলেই যে তাকে নিজের করে পেতে হবে এমন কোনো কথা নয়।নাদিয়া আর আমি একে-অপরকে ভীষণ ভালোবাসি।আমাদের প্রেমের সম্পর্ক প্রায় ৭মাস,আর বিয়ের সম্পর্ক সাড়ে ৩মাস।পা**গলী মেয়েটা বিয়ের পরপরই বাচ্চার জন্য ব্যাকুল হয়ে যায়।প্রতি রাতে আমার ওপর যেই পরিমাণে লাভ টর্চার করতো..’বলেই মুচকি হাসলো দিগন্ত।”

“দিগন্তের মুখে এমন নি”র্লজ্জ টাইপ কথা শুনে ইহানের শরীরে যেনো জ্বালা-পোড়া শুরু হয়ে গেলো।তবুও হাত মুষ্টিবদ্ধ করে স্থির দৃষ্টিতে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে ওর কথা শুনতে থাকল।কারণ,তার প্রেয়সী কে যে সে অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে।১বছর আগে যদি নাদিয়া কে ইহান তার মনের কথা জানাতো,তাহলে হয়তো এই দুঃস্বপ্নের মতো দিন টি দেখতে হতো না।’ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ইহান।”

“দিগন্ত ইহান কে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে দেখে আরেকটু ভনিতা করে বললো,’ আমাদের এই দুষ্টু-মিষ্টি ভালোবাসার মাঝখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় ওর বাবা-মা।আমরা তাদের কে সব দিক থেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।কিন্তুু তারা আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে কিছুতেই রাজি ছিলো না।তার অন্যতম কারণ ছিলেন আপনি।
নাদিয়ার কাছ থেকে শুনেছি, আপনার সাথে নাকি আগে থেকেই ওর বিয়ের কথা ঠিকঠাক ছিলো।কিন্তুু আপনাদের দু’জনের মধ্যে কখনোও কথা হয় নি।আর এখন তো নাদিয়া আমার বউ।অথচ ওর পরিবার আপনার সাথে ওকে জোর করে বিয়ে দিতে চাইছে।এখন আপনিই বলুন,জেনে-শুনে আপনি কি একজন সাড়ে ৩মাসের বিবাহিতা এবং ২মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে কে বিয়ে করবেন?”

“দিগন্তের মুখে বিবাহিতা এবং অন্তঃসত্ত্বা দু’টি শব্দ শুনে ইহানের বুকে মনে হয় খুব জোরে কেউ আ**ঘাত করলো।কিন্তুু ইহান চাইলেও সেই আ**ঘাত কাউকে দেখাতে পারবে না।”

“ইহান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’ওকে আপনি যা চান তাই হবে।নাদিয়া কে আমি বিয়ে করব না।তবে আমি নাদিয়ার সাথে আগে কিছু কথা বলবো।”

“দিগন্ত মুচকি হেসে বললো,’সে আপনি বলতেই পারেন;আফটার অল নাদিয়া আপনার র**ক্তের মামাতো বোন।”

“র**ক্তের মামাতো বোন’ কথাটি কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই,নিমিষে ইহানের মলিন মুখ খানা আরও চুপসে গেলো।দু’দিন পর যাকে ‘বউ’ বলে ডাকার কথা,সে কিনা সারাজীবন ‘বোন’ উপাধিতেই থেকে যাবে।’ভেবে আবারও দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’আমি আপনার বিষয়ে নাদিয়ার সাথে কথা বলবো।তারপর আমার মামা-মামির কাছে আপনাদের বিষয় টি বুঝিয়ে বলবো।আশা করি তারা আমার কথা ফেলবে না।”

“আহা কি শান্তির বাণী।ইহানের মুখনিঃসৃত শব্দগুলো শুনে, দিগন্তের অন্তর যেনো বরফের ন্যায় শীতল হয়ে গেলো।খুশিতে টইটম্বুর হয়ে ইহানের দুই হাত মুঠোবন্দী করে বললো,’আপনি যে আমার কত বড় উপকার করলেন,সেটা আপনি নিজেও জানেন না।আমি আপনার কাছে চিরজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।”

“দিগন্তের কথায় ম্লান হাসলো ইহান।ক্লান্ত স্বরে বললো,’বাবা আমার জন্য গাড়িতে অপেক্ষা করছে।আজ আমি আসি।বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে।”

“ইহানের কথায় দিগন্ত সায় জানালো।অতঃপর ইহানের সাথে আরেকবার হ্যান্ডশেক এবং কোলাকুলি করে তাকে বিদায় দিলো।আজ যেনো দিগন্তের ঈদের মতো অনুভূতি হচ্ছে।’ভেবে ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে এক দৌড়ে নির্জনের কাছে চলে গেলো।নির্জন রাস্তায় শাঁ শাঁ করে চলা গাড়িগুলো একমনে দেখছিলো।তখনই দিগন্ত এসে তাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলে,নির্জন রুঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কয়েক কদম পেছনে চলে গেলো।কন্ঠে তেজ নিয়ে বললো,’একবার বলেছিনা,আমার সাথে কখনো ঘেঁষতে আসবি না।এই শরীর শুধুমাত্র একজনের দখলে থাকবে।এই নিয়ে ২বার একই ভুল করলি।তৃতীয় বার যেনো এই কথা বলতে না হয়।”

“নির্জনের এহেন আচরণে থতমত খেয়ে গেলো দিগন্ত।তার মনে পড়ে গেলো,কিছুদিন আগে নির্জনের ওভার রিয়েক্ট এর কথা।কিন্তুু এই মুহূর্তে প্রিয় বন্ধুর সাথে কিছুতেই অভিমান করার মতো বোকামি করবে না দিগন্ত।কারণ আজ তো তার খুশির দিন।নাদিয়ার চিন্তায় এতো রাত নির্ঘুম কা**টানো বিফলে যায় নি।আর এইসব কিছু প্ল্যান করেছে নির্জন।ঘোর বিপদে প্রিয় বন্ধু টি কে পাশে পেয়েছে দিগন্ত।সারাজীবন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেও এই ঋণ শোধ করতে পারবে না।কথায় আছে,’সুখের সঙ্গী সবাই হয়,দুঃখের সঙ্গী কয়জন হয়?’
বিপদের সময় যে পাশে থাকে, সে হচ্ছে প্রকৃত বন্ধু।’ভেবে দিগন্ত হাসি মুখে বললো,’দোস্ত তোর প্ল্যান মতো ইহান কে যা যা বলেছি,সেসব কিছু ইহান বিশ্বাস করেছে আর মেনেও নিয়েছে।সত্যি বন্ধু তোর গভীর বুদ্ধির তারিফ না করে পারি না।থ্যাংক ইউ সো মাচ।জড়িয়ে ধরতে না পারি,হাত তো মেলাতে পারি?”

“দিগন্তের কথা শুনে মুচকি হাসলো নির্জন।বললো,
‘হুম এখন হ্যান্ডশেক করতেই পারিস।কিন্তুু আমার ডার্ক কুইন আমার জীবনে পার্মানেন্ট এন্ট্রি নেওয়ার পর এটাও হবে না।’
বলেই দিগন্তের সাথে নিজে থেকে হাত মেলালো নির্জন।দিগন্ত বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’এই ডার্ক কুইন টা কে রে?কিছুদিন আগেও এই নাম টা বলেছিলি।আমি নিজের চিন্তা করতে গিয়ে,তোকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি।নতুন গার্লফ্রেন্ড হয়েছে নাকি?যার জন্য এতো পা**গলামি করছিস।”

“নির্জন চোখ-মুখ শক্ত করে বললো,’আমার ডার্ক কুইনের নাম শুধু আমি বলবো।তুই ‘নিধি’ বলে ডাকবি।”

“হোয়াট?নিধি?মানে নাদিয়ার বেস্টফ্রেন্ড?কিন্তুু নিধি তো তোর শ**ত্রু ছিলো।এখন শ**ত্রু থেকে প্রেমিকা হয়ে গেলো কিভাবে?এটা কখন,কিভাবে হলো?’বলেই মুহূর্তে হা হয়ে গেলো দিগন্তের মুখ।”

“নির্জন আড়চোখে তাকিয়ে বললো,’চলনবিল থেকে আসার পর হয়েছে।বর্তমানে আমাদের দু’জনের মধ্যে প্রেম চলছে।কিছুদিনের মধ্যে বিয়েও হবে।ওর বাবা-মা বিয়েতে সম্মতি দিয়েছেন।আপাতত এতটুকুই বললাম,আর কিছু জিজ্ঞেস করবি না।যেহেতু তোর নাদিয়ার বিষয়ে আমি কিছু জিজ্ঞেস করি না,সেহেতু আমার ডার্ক কুইনের বিষয়েও তুই কিছু জিজ্ঞেস করবি না।”

“নির্জনের মুখনিঃসৃত কয়েকটি সংক্ষিপ্ত বাক্যে দিগন্ত যা বোঝার বুঝে গেলো।এটাও বুঝে নিলো,নির্জন দিগন্তের থেকে হিংসায় কয়েক ধাপ এগিয়ে।নিধি কে নিয়ে সে প্রচুর পজেসিভ।তবে এটা ভেবে খুব অবাক হলো,নির্জন যেখানে সবসময় বলতো,তার এই ছন্নছাড়া জীবনে কাউকে জড়াতে চায় না,সেখানে নিধি কে কিভাবে ভালোবাসলো!’
যেহেতু নির্জনের রাগ সম্পর্কে দিগন্ত জানে,তাই আর কথা বাড়ালো না।কিছুক্ষণ পর ওরাও এয়ারপোর্ট থেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।”

———
“রাত ১১টা ২০মিনিট।ইহান নাদিয়াদের বাসায় পৌঁছে, তার মা এবং মামা-মামির সাথে কুশলাদি বিনিময় করে নাদিয়ার রুমে গিয়েছে।নাদিয়া কে দিগন্ত আগেই বলেছিলো যে,সে বিয়ের একটা নকল কাবিন নামা বানিয়ে ইহান কে দেখাবে।আর ইহান সেটা দেখে নাদিয়া কে আর বিয়ে করতে চাইবে না।দিগন্ত এটাও বুঝিয়েছে,ভালোবাসার জন্য মানুষ নিজের জীবন টাও দিয়ে দিতে পারে।আর সেখানে এটা তো একটা মিথ্যা কথা।এতটুকু না বললে ইহান নাদিয়া কে বিয়ে করেই ছাড়বে।”

“দিগন্তের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া নাদিয়া সায় জানিয়ে,ইহানের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুুতি নেয়।আর প্রায় ১০মিনিট যাবৎ ইহান এবং নাদিয়া সামনা-সামনি বসে আছে।নাদিয়া বিছানায় বসে আছে, আর ইহান চেয়ারে বসে আছে।ইহান নাদিয়ার রুমে আসার পর থেকে ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এভাবে তাকিয়ে থাকায় নাদিয়ার খুব অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।সেই সাথে যে কথাগুলো সাজিয়েছিলো, সবকিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে।”

“ইহান কে এতটা নীরব থাকতে দেখে নাদিয়া নিজে থেকে বলে উঠলো, ‘কেমন আছেন ভাইয়া?”

“নাদিয়ার মুখে ‘ভাইয়া’ শব্দ টি শুনে হো হো করে হেসে উঠলো ইহান।সে হাসির শব্দ নাদিয়ার কর্ণকুহরে ব্যাঙ্গাত্মক শোনালো।”

“হাসি থামিয়ে ইহান বললো,’যাকে দুই দিন পর ভালোবেসে কিউট নিক নেইমে ডাকার কথা, তাকে ‘ভাইয়া’ বলে ডাকছো?যাক মেনে নিলাম,এটাই হয়তো আমার ভাগ্যে লেখা ছিলো।’বলে আরও কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করলো ইহান।বদ্ধ রুমে ইহানের ভাব-ভঙ্গিমা দেখে যে কেউ বলবে,যে এখানে কোনো গণ্যমান্য মৃ**ত ব্যক্তির আলোচনা করার জন্য শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে।”

“নাদিয়া বেশ বুঝতে পারছে যে,দিগন্ত ইহান কে সবকিছু বলেছে।নইলে তো ইহানের এমন পেঁচার মতো মুখ করে থাকার কথা নয়।শুকনো ঢোক গিলে নাদিয়া বললো,’ভাইয়া আপনাকে হয়তো দিগন্ত সবকিছু বলেছে।আসলে আপনার সম্পর্কে কিছু জানার আগেই আমরা বিয়ে করে ফেলি,তারপর..

“নাদিয়া কে আর কিছু বলতে দিলো না ইহান।র**ক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘তারপর তুমি ২মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যাও তাই না?”

“অন্তঃসত্ত্বা’ কথাটি শুনে চমকে উঠলো নাদিয়া।ফ্যালফ্যাল করে ইহানের দিকে তাকিয়ে বললো,’মানে?”

“ইহান ম্লান হেসে বললো,’জানলাম কিভাবে,এটা ভেবে অবাক হয়েছো তাই না?তোমার স্বামী আমাকে বলেছে।”

“এটা শুনে নাদিয়া যেনো বিস্ময়ের চূড়ায় পৌঁছালো।ভাবলো,’সত্যি দিগন্ত এই কথা বলেছে?কিন্তুু এটা তো কথা ছিলো না।মানে একে তো মিথ্যা বিয়ের নাটক সাজিয়েছে;তার ওপর এখন আমাকে প্রেগন্যান্ট ও বানিয়ে দিলো?হায় কপাল!দাঁড়াও একবার তোমায় সামনে পাই, তখন দেখাবো মজা।আপাতত এই দিকটা আগে ক্লিয়ার করি।”

“নাদিয়ার ভাবনার মাঝেই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইহান বললো,’যাইহোক,তুমি চিন্তা করো না;এই বিয়ে আমি ভে**ঙে দিবো।মামা-মামি কে তোমাদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলবো।আর খুব শীঘ্রই তোমাদের দু’জনের ধুমধাম করে বিয়ে হবে।তবে একটা কথা তোমায় বলবো?”

“নাদিয়া করুণ দৃষ্টিতে ইহানের দিকে তাকালো।ইহান চেয়ার থেকে উঠে,নাদিয়ার দিকে একটু ঝুঁকে এসে মলিন স্বরে বললো,’আমি সত্যি তোমাকে খুব ভালোবেসেছিলাম নাদিয়া।আমার স্বপ্নের রাজ্যে তোমাকে নিয়ে সুখের সংসার সাজিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম,তোমাকে বিয়ে করার পর সেই স্বপ্নগুলো কে বাস্তবে মনের মতো করে সাজাবো।কিন্তুু আমি জানতাম না,যে তুমি শুধু স্বপ্নের রাজ্যেই আমার রানী হয়ে থাকবে।সত্যি আমি জানতাম না।তবে যতদিন বেঁচে থাকব,তোমাকে আমার স্বপ্নের রাজ্যে আমার মিষ্টি রানীর মতো সাজিয়ে রাখবো;আই প্রমিজ।’বলেই রুম থেকে হনহন করে চলে গেলো ইহান।”

“ইহান যখন কথাগুলো বলছিলো,তখন তার চোখ জোড়ায় অশ্রুগুলো চিকচিক করছিলো।পুরুষের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়া বেমানান।তাই হয়তো নিজের অবাধ্য অশ্রুগুলো লুকাতেই,ইহান রুম থেকে দ্রুত পালিয়ে গেলো।’ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নাদিয়া।ইহানের কষ্টে নাদিয়া ও খুব কষ্ট পেয়েছে।নাদিয়ার চোখের কোণে পানি চলে এলো।পরক্ষণে নিজেকে স্বান্তনা দিয়ে
ভাবলো,’আমাকে না পেলে হয়তো ইহান ভাইয়া একক ভাবে কষ্ট পাবে।কিন্তুু দিগন্ত কে না পেলে আমি এবং দিগন্ত দু’জনেই কষ্ট পাবো।আর ভবিষ্যতে তার প্রভাব পড়বে ইহান ভাইয়ার ওপর।একজনের জন্য দু’জন কেনো কষ্ট পাবে?সব কথার এক কথা হলো,আমার দিগন্ত কে যে আমি মৃ**ত্যুর আগ পর্যন্ত নিজের করে পেতে যাচ্ছি, এটাই আমার বাকি জীবনের সবচেয়ে সেরা উপহার।মৃ**ত্যুর পরেও আমি তাকেই চাইবো হুমম।তবে প্রেগন্যান্সির বিষয় নিয়ে মিথ্যা বলার শাস্তি তাকে পেতেই হবে।’বলেই আয়নার সামনে গিয়ে মুখ ভেং**চি কা**টলো নাদিয়া।”

———
“কে**টে গেলো একটি সুখ-দুঃখের রাত।কেউ নির্ঘুম রাত কা**টিয়েছে;কেউ কেউ দীর্ঘদিনের নির্ঘুম রাত কা**টানোর পর সুখের ক্লান্তিতে ঘুমে বিভোর হয়ে, সবচেয়ে সুন্দর রাত্রি কা**টিয়েছে।”

“সকালে নাস্তা করে তাহমিনা বেগমের কাছে নাদিয়াদের বাসায় যাওয়ার কথা বলে,হালকা সেজেগুজে বের হওয়ার প্রস্তুুতি নিচ্ছে নিধি।বাসা থেকে বের হওয়ার আগে তাহমিনা বেগম কে বলেছে,’নাদিয়াদের বাসায় গিয়ে ২-৩ঘন্টা সময় কা**টাবে।তবে দুপুরের মধ্যে এসে পড়বে।”

“নিজের মেয়ের চোখে-মুখে খুশির ঝলক দেখে তাহমিনা বেগমের আর বুঝতে বাকি রইলো না, যে তার মেয়ে নাদিয়াদের বাসায় নয়; নির্জনের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে।যতই হোক,একসময় সেও এই বয়স পার করেছে।
তাহমিনা বেগমের রফিক মির্জার বলা কথাগুলো মনে পড়লো।বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ে একে-অপরের সম্পর্কে জানা-শোনা করা উচিত।তাদের সময় তো এই সুযোগ তাদের হয় নি।তাই বাবা-মা যেমন পাত্র পছন্দ
করেছে,তাকেই বিয়ে করতে হয়েছে।সেই ব্যক্তি ভালো,খারাপ,নেশা**খোর যাইহোক না কেনো।এটাই তখনকার রীতিনীতি ছিলো।তবে নিধি কে তিনি পুরোপুরি ভরসা করলেও,ওকে কিছুতেই একা ছাড়বে না তাহমিনা বেগম।তাই তোহা কেও সাথে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললেন।”

“নিধি ভেবেছিলো,আজ নির্জনের সাথে একা দেখা করবে।অথচ আজ তোহা সাথে যাবে শুনে মন টা একটু খারাপ হলো।পরক্ষণেই ভাবলো,তোহার ও তো বিয়ের আগে হবু স্বামীর সাথে ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করে।বিয়ের পর বেচারা ডাক্তার সাহেব যদি সময় না দেয়,তাহলে এই দিনটির জন্য হারে হারে আফসোস করবে।’ভেবে নিধি হাসিমুখে ‘হ্যা’ সূচক মাথা নাড়লো।কিছুক্ষণ পর দুই বোন রেডি হয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।”

“বাসা থেকে বের হওয়ার আগে নিধি নির্জন কে ফোন দিয়ে আসার কথা জানায়।তারপর তোহা কে মাহির কে বিষয়টি জানাতে বলে।তোহা খুশিতে গদগদ হয়ে মাহির কে ফোন দেয়।কিন্তুু মাহির অপারেশন থিয়েটারে থাকায় ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে।তাই তোহার ফোন ধরতে পারেনি।তোহা আরও কয়েকবার ফোন দেয়।কিন্তুু মাহির লাপাত্তা।তাই তোহা মন খারাপ করে নিধি কে জানালে,নিধি বললো,’মনে হয় খুব ব্যস্ত আছে।তার হসপিটাল থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেন তো বেশি দূরে নয়।সেখানে গিয়ে আবার ট্রাই করিস।তারপরেও যদি না ধরে,তাহলে শাস্তি হিসাবে আজ সারাদিন+রাত তার ফোন রিসিভ করবি না হিহিহি।এখন তাড়াতাড়ি চল।নির্জন কে অপেক্ষা করাতে আমার একদম ভালো লাগে না।’বলেই রুম থেকে দ্রুত পায়ে চলে গেলো।তোহাও চুপসানো মুখ নিয়ে নিধির পিছু ছুটলো।”

———-
“বোটানিক্যাল গার্ডেনের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নির্জন,নিধি এবং তোহা।নিধির সাথে তোহা কে দেখে নির্জন মনে মনে রেগে উড়নচণ্ডী হয়ে আছে।তবুও সেটা চেহারা এবং আচরণে প্রকাশ করলো না।টিকিট কেটে ৩জন ভেতরে প্রবেশ করলো।”

“নির্জন এবং নিধি পাশাপাশি হাঁটছে আর তোহা ওদের পেছনে অসহায় পথিকের মতো বিভিন্ন সুইট কাপলদের দেখছে।আর ধীরে ধীরে হাঁটছে।এই মুহূর্তে মাহির কে খুব মিস করছে তোহা।”

“মন খারাপ করে তোহা পার্স থেকে ফোন বের করে আবারও কল দিলো মাহির কে।মাহির অপারেশন শেষ করে,ড্রেস চেঞ্জ করে মাত্র নিজের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে বসে,টেবিলে থাকা মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো তোহা ফোন করেছে।স্ক্রিনে ‘স্বপ্নচারীনি’ নাম টি জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠতেই মাহিরের মুখে হাসি ফুটলো।কল রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলতেই,অপরপাশ থেকে ক্ষুদ্র শ্বাস ছেড়ে তোহা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো,’এতক্ষণে আপনার ফোন রিসিভ করার সময় হলো?সেই কখন থেকে আপনাকে ফোন করছি।ফোন রিসিভ করেন নি কেনো?”

“তোহার ঝাঁঝালো কন্ঠস্বর শুনে চমকে গেলো মাহির।কারণ তোহা তার সাথে কথা বলার সময় কোমল স্বরে কথা বলে।হঠাৎ কি হলো?’ভেবে মাহির ফোন চেক করে দেখলো,তোহা ১১বার কল করেছে।কিন্তুু মাহির ফোন রিসিভ করতে পারেনি।ভাবলো,’এইজন্যই তো মহারানীর মুখে ধানিলঙ্কার বুলি ফুটেছে।বাহ!শুনতে তো বেশ ভালোই লাগছে।বিয়ের আগেই কেমন একটা গিন্নি গিন্নি ভাব চলে এসেছে।কিন্তুু বিয়ের পর প্রতিদিন এমন ভাবে কথা বললে তো ভালো লাগা ছুটে যাবে।’ভেবে নিজের জিহ্বায় আলতো করে কা**মড় দিলো মাহির।”

“মাহির করুণ স্বরে বললো,’সরি, সরি, আ’ম এক্সট্রিমলি সরি পাখি..আমি অপারেশন থিয়েটারে ছিলাম।আর কেবিনে ফোন সাইলেন্ট করে রেখে গেছিলাম।দ্বিতীয় বার এমন হবে না। নেক্সট টাইম এই ফোনের পাশে একজন এসিস্ট্যান্ট রেখে যাবো,যেনো আমার স্বপ্নচারীনি ফোন করলে সাথে সাথে রিসিভ করে আমাকে দিতে পারে।দরকার হলে অপারেশন করতে করতে কথা বলবো হুমম।'(প্রিয়তমার মাথা ঠান্ডা করার জন্য এতটুকু কথা না বললেই নয়।)

“মাহিরের মুখে এহেন কথা শুনে ভড়কে গেলো তোহা।ভাবলো,’উনি তো ডক্টর।তার কাজটাই তো মানুষের সেবা করা।এইসময় তার ব্যস্ত থাকাটা স্বাভাবিক।আমিও না..খামোখাই রেগে গিয়ে উচ্চস্বরে কথা বললাম।এখন আমার সম্পর্কে উনি কি ভাববে?’ভেবে তোহা শুকনো ঢোক গিলে কোমল স্বরে বললো,’ওহ সরি,আসলে আপনার ব্যস্ততার বিষয়টি আমার একদম খেয়াল ছিলো না।এভাবে কথা বলার জন্য অনেক দুঃখিত।আসলে একটু আগে আমি আর আপু বোটানিক্যাল গার্ডেনে এসেছি।আর আপনার হসপিটাল তো এই জায়গা থেকে বেশি দূরে নয়।তাই দেখা করার জন্য ফোন করেছিলাম।এখন আমরা এখানেই আছি।আপু নির্জন ভাইয়ার সাথে ঘুরছে।আর আমি একা একা হাঁটছি।কিন্তুু আপনি তো খুব ব্যস্ত।”

“তোহার মুখে দেখা করার কথা শুনে মাহির যেনো দিনের বেলা মনে মনে আকাশের চাঁদ হাতে পেলো।খুশি হয়ে বললো,’স্বপনচারিনী তুমি গেটের সামনে অপেক্ষা করো প্লিজ।এখন কোনো পেশেন্ট দেখবো না;আমি ওখানে আসছি।আমার আসতে ৭-৮মিনিট সময় লাগবে।”

“তোহা প্রচন্ড খুশি হয়ে বললো,’ওকে ওকে আমি গেটের সামনে যাচ্ছি,আপনি আসুন।’
ফোন রেখে মিষ্টি করে হাসলো তোহা।ওর মনে যেনো খুশির জোয়ার বয়ে গেলো।”

———-
“হরেক রকমের ফুল গাছ সহ সারি সারি গাছগুলোর দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি নিধি।চোখে মুখে তার অনাবিল হাসি।ঘাসের ওপর বসে ছোট ছোট সবুজ ঘাসগুলো কে আলতো হাতে ছুঁয়ে দিচ্ছে নিধি।তার পাশে ঘাসের ওপর বসে হিং**স্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নির্জন।মনে মনে ভাবছে,’আমার ডার্ক কুইন কেন এই ঘাসগুলো কে আদর করছে?ওই কোমল হাত দিয়ে শুধু আমাকে আদর করবে।উফফ…ডিজগাস্টিং!ইচ্ছে করছে সব ঘাসগুলো কে কু**চিকু**চি করে কে**টে ছিন্নভিন্ন করে ফেলি।”

“নির্জনের গা আরেকটু জ্বালানোর জন্য নিজের অজান্তেই মুচকি হেসে নিধি বলে উঠলো,’আমাকে কেমন লাগছে?আপনার জন্য একটু সেজেছি।”

“নিধির অগোচরে নির্জন কয়েকবার তাকিয়েছে ওর দিকে।সে তো তার ডার্ক কুইন কে মন ভরে দেখতে,অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে এসেছে।নির্জন আশে-পাশে তাকিয়ে দেখলো, তাদের থেকে কিছুটা দূরত্বে কয়েকজন ছেলে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে।আর মিটমিট করে হেসে নিজেদের মধ্যে কথোপকথন করছে।সেটা দেখে মাথা গরম হয়ে গেলো নির্জনের।এই মুহূর্তে নির্জনের কারো ক্ষতি করার ইচ্ছে নেই।কিন্তুু এভাবে চলতে থাকলে নির্জনের ঠান্ডা মস্তিষ্ক গরম হতে বেশি সময় লাগবে না।অবশ্য এর জন্য দায়ী একমাত্র নিধি।নির্জন ওকে ম্যাসেজ করে বোরকা পড়ে আসতে বলেছিলো।কিন্তুু এইবার নিধি তার কথা অমান্য করে হালকা পিংক কালার থ্রি পিস পড়ে এসেছে।হালকা সাজে নিধির মায়াবী মুখস্রি খুব স্নিগ্ধ লাগছে।যেটা নির্জনের কাছে ভ**য়ং**কর সুন্দর।”

“নির্জন সবুজ ঘাসগুলোর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে,ছেলেগুলোর দিকে রুঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ডেভিল হেসে ভাবলো,’তোদের তো কিছু একটা ব্যবস্থা করবোই।আমার হাত থেকে কেউ নিস্তার পাবি না।কত বড় সাহস!আমার ডার্ক কুইনের দিকে বা**জে ভাবে তাকানো।এর জন্য ডার্ক কুইন কেও শাস্তি পেতে হবে;তবে এখন নয়।’ভেবে
নির্জন নিধির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,’এখানে এভাবে আসা তোমার উচিত হয় নি।দ্রুত মাস্ক পড়ে নাও।নইলে ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলো।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে