হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-১৫+১৬

0
20

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নির্জন স্ক্রিনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে নামটির ওপর হাত বুলিয়ে দিলো।পুরো মুখে অনাবিল হাসি নিয়ে বলে উঠলো,’ডার্ক কুইন।”

“নির্জন ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বুকে হাত রেখে ‘হৃদয়’ কে বললো,’থ্যাংকস’।
তারপর ফোন রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিতেই,অপরপাশ থেকে আকাঙ্ক্ষিত সেই নারী কন্ঠস্বর ভেসে এলো ‘হ্যালো’।

“নির্জন কোনো উত্তর দিলো না।মোবাইল টি বুকের বাম পাশে ধরে রাখলো।এ যেন কতদিন, কত রাত সাধনার সুমিষ্ট ফলাফল।নির্জনের শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে গেলো।কিন্তুু অপরপক্ষ থেকে সেই কাঙ্ক্ষিত নারীটি রাস্তায় গাড়ির হর্ণের আওয়াজ ছাড়া কিছুই শুনতে পেলো না।”

“নারী কন্ঠ টি বিস্ময়ভরা কন্ঠে আবারও বলে উঠলো, ‘নির্জন।’

“সুমিষ্ট সেই নারী কন্ঠস্বরের রিনরিনিয়ে প্রতিধ্বনি নির্জনের হৃদয়ে যেনো শুভ্র মঞ্জরির ন্যায় দোলা দিয়ে গেলো।এই প্রথম এতো সুমধুর কন্ঠে নিধি নির্জনের নাম ধরে ডাকল।নির্জনের শ্বাস-প্রশ্বাস যেনো দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেলো।মনে মনে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন ছুড়লো,’কি হলো আমার? ”

“নিধি আবারও ডেকে উঠলো,’নির্জন।”

“কর্ণকুহরে প্রিয়তমার কন্ঠস্বর ভেসে আসতেই হুঁশে ফিরলো নির্জন।অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,’ডার্ক কুইন।”

“নির্জনের মুখে এই নিয়ে তৃতীয় বার ‘ডার্ক কুইন’ নামটি শুনলো নিধি।প্রথম বার চলনবিলের জঙ্গলে,দ্বিতীয় বার নিধি যখন নির্জন কে ধা”ক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দিয়েছিলো তখন;আর এখন,এইমুহূর্তে।কিন্তুু তারপর?তারপর সবকিছু অস্পষ্ট শুনতে পেলো নিধি।নির্জনের আবারও ডেকে ওঠা ‘ডার্ক কুইন’ নামটি গাড়ির অতিরিক্ত হর্ণের কারণে স্পষ্ট শুনতে পেলো না নিধি।কিছুটা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,’আপনি কি বলছেন,কিছু বুঝতে পারছি না।মনে হচ্ছে আপনি রাস্তায় আছেন।একটু নিরিবিলি জায়গায় গেলে ভালো হতো।”

“বাতাসের গতিতে গাড়ির শাঁ শাঁ আওয়াজের মধ্যেও ফোন লাউডস্পিকারে থাকায়,নিধির কন্ঠস্বর শুনতে পেলো নির্জন।নিধির মুখে এহেন কথা শুনে নির্জন চোখ-মুখ শক্ত করে গাড়িগুলোর দিকে একবার ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’Disgusting’
পরক্ষণেই নিজেকে নিজে দোষারোপ করে বললো,
‘আমিই তো আমার ডার্ক কুইন কে গাড়ির হর্ণ শুনিয়ে কষ্ট দিচ্ছি।না না এখান থেকে আমাকে দ্রুত যেতে হবে।’বিড়বিড় করে কথাগুলো বলেই নিধির ফোন কে**টে দিয়ে,বাসার উদ্দেশ্যে দৌঁড়াতে থাকল।নির্জন এমন ভাবে দৌঁড়াচ্ছে,রাস্তার আশেপাশের লোকজন ভাবছে,নির্জনের পেছনে হয়তো কোনো ডাকাতদল আছে,আর নির্জন তাদের থেকে প্রাণপনে পালানোর জন্য দৌঁড়াচ্ছে।”

“নির্জন ১০মিনিটের মধ্যে বাসায় পৌঁছে,সরাসরি নিজের রুমে চলে গেলো।এদিকে নিধি তো ফোনের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো।ওর মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কেনো নির্জন ফোন টা কে**টে দিলো?”

“নিধির ভাবনার মাঝেই ওর ফোনে রিংটোন বেজে উঠলো।নিধি নির্জনের নাম্বার দেখে খুশি হয়ে ফোন রিসিভ করতেই, অপরপাশ থেকে পুরুষালি কন্ঠস্বর ভেসে এলো,’সরি সরি ডার্ক কুইন..
আসলে আমি রাস্তায় ছিলাম,তাই গাড়ির শব্দে কথা বলতে সমস্যা হচ্ছিলো;এখন বলুন।”

“নির্জনের মুখে ‘সরি’ কথাটা শুনে চমকে গেলো নিধি।ভাবলো,’যেই লোকের চোখে সেদিন প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব দেখেছিলাম,সে কি না আমায় ‘সরি’ বলছে!প্রেমে পড়লে হয়তো সব পুরুষই চেঞ্জ হয়।’ভেবে মুচকি হাসলো নিধি।’
গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’ইট’স ওকে।বলছিলাম,যে আপনি আমায় ‘তুমি’ করে বলতে পারেন।”

“নিধির মুখে ‘তুমি’ বলার অনুমতি পেয়ে থমকে গেলো নির্জন।বুকের বা পাশে ডান হাত রেখে অনুভব করলো,হার্টবিট ফাস্ট হয়ে গেছে।চশমা টা খুলে বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো,’সামনা-সামনি দেখা হলে বলবো।”

“নিধি ভাবলো,’লোকটা কে যতটা খারাপ ভাবতাম, ততটা খারাপ সে না।যেখানে আমি তাকে আমাকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করতে বললাম,সেখানে সে ভদ্রতা বজায় রাখলো।’
পরক্ষণেই ভাবলো,’ধুর..আমি যে কি ভাবছি, এতটা ভদ্র ও সে নয়।কিছুটা সাইকো টাইপ আছে;যেমন টা আমি চাই।তার ওই হু**মকি মূলক অদ্ভুত চিঠির প্রেমেই তো আমি পড়েছি।’ভেবে লাজুক হাসলো নিধি।
অতঃপর কোমল স্বরে বললো,’আগামীকাল দেখা করবেন?”

“নির্জন ভাবেনি যে নিধি এত তাড়াতাড়ি দেখা করার কথা বলবে।নির্জন অবাক হয়ে বললো,’কোথায়?”

“নিধি একটু ভেবে মুচকি হেসে বললো,’ভূতের বাড়ি’ রেস্টুরেন্টে।”

“হোয়াট?ভূতের বাড়ি রেস্টুরেন্ট?সেটা আবার কোথায়?”

“আরে এটা তো আমাদের বাসার পাশেই।আমি তো ভেবেছিলাম আপনি চেনেন।আচ্ছা আমি আপনাকে ঠিকানা বলছি।’বলেই নিধি রেস্টুরেন্টের ঠিকানা বললো এবং সন্ধ্যার সময় দেখা করার কথা বললো।”

“নির্জন হাসি মুখে বললো,’ওকে বেঁচে থাকলে আগামীকাল সন্ধ্যায় দেখা হবে ডার্ক কুইন।”

“নির্জনের মুখনিঃসৃত সুমিষ্ট বুলি ‘ডার্ক কুইন’ কথাটি যতবার নিধির কর্ণপাত হচ্ছে, ততবারই ওর পুরো শরীর অজানা ভালো লাগায় শিউরে উঠছে।গলায় ঝুলানো ওড়নার শেষাংশ আঙ্গুল দিয়ে পেঁচিয়ে মুচকি হেসে বললো,’ওকে তাহলে রাখছি।”

‘সে কি এখনই?’

‘আগামীকাল না হয় মন খুলে কথা বলবো।'(লাজুক হেসে বললো নিধি)

“নির্জন ঠোঁটের কোণা হালকা প্রসারিত করলো।হাস্কি ভয়েসে বললো,’ওকে ডার্ক কুইন।আই লাভ ইউ।”

“নির্জনের মুখ থেকে আকস্মিক শেষ বাক্যটি শুনে থতমত খেয়ে গেলো নিধি।ওর মন বারবার বলছে, ‘তাড়াতাড়ি ফোন কা**ট,নইলে লজ্জায় শেষ হয়ে যাবি।’
নিধি ভাবতেও পারেনি নির্জন সরাসরি এই কথাটি বলবে।যদিও চিঠিতে অসংখ্যবার বাংলা এবং ইংরেজি দু’টো ভাষায় মনের কথা জানান দিয়েছে।তবুও গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠে সেই কাঙ্ক্ষিত বাণীটি শুনে নিধির মনে কেউ যেন মুগ্ধতার ছোঁয়া দিয়ে গেলো।শুরু হলো এক নব্য প্রেমের সূচনা।’নিধি হঠাৎ করেই ফোন টা কে**টে দিলো।”

“নিধি ফোন কে**টে দিতেই নির্জন কিছুটা অবাক হলো।পরক্ষণেই মনের কাছ থেকে উত্তর পেলো,’তোমার ডার্ক কুইন লজ্জা পেয়েছে।’
মনের এহেন কথায় মৃদু হাসলো নির্জন।মন কে ব্যঙ্গ করে বললো,’খুব তাড়াতাড়ি আমার ড্রিমগার্ল আমার কাছে চলে আসবে।তখন তার সব লজ্জারাও লজ্জা পেয়ে ডানা মেলে উড়ে যাবে।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।’বলেই টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে প্রিয় দু’টি রুমে গিয়ে ১০মিনিট সময় কা**টালো।তারপর ডিনার কমপ্লিট করে সায়রা বেগমের রুমের কাছে গেলো।রুমের দরজায় নক করে বললো,’ভেতরে আসতে পারি?’
সায়রা বেগমের দেখাশোনা করার জন্য যে মধ্যবয়স্ক সেবিকা রাখা হয়েছে,তিনি দ্রুত মাস্ক পড়লেন।অতঃপর নিচু স্বরে বললেন,’জ্বি..জ্বি স্যার আসুন।”

“নির্জন সেবিকাকে এই বাড়িতে প্রবেশ করার পরপরই বলেছিলো,সে যতদিন সায়রা বেগমের সেবা-যত্ন করবে,ততদিন যেন নির্জনের সামনে মুখে মাস্ক পড়ে থাকেন।নির্জনের কথার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি শুধু ‘হ্যা’ বোধক মাথা নাড়িয়েছিলেন।সে জীবিকার তাগিদে এখানে এসেছে।মাস শেষে বেতন পেলেই বাড়িতে সংসার খরচ পাঠাতে পারবে।তাই এতো ঘাটাঘাটি না করে,যেটা বলেছে সেটা মেনে নেওয়াটাই শ্রেয়।”

“নির্জন রুমে ঢুকে সায়রা বেগমের দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকালো।সায়রা বেগম ঘুমে বিভোর হয়ে আছে।নির্জন বিপরীত দিকে থাকা অফ হোয়াইট কালার দেয়ালের দিকে চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’উনি এখন কেমন আছে?”

“স্যার তার প্রেশার একটু লো।মাঝে মাঝে খুব দুর্বল হয়ে যায়।আর ইদানীং খাওয়া-দাওয়ার প্রতিও ভীষণ অনিহা।প্রতিবেলায় অনেক চেষ্টা করে, আমি তাকে অর্ধেক বাটি খাবার খাওয়াতে পারি।নিয়ম করে ভিটামিন যুক্ত ঔষুধ খাওয়ানোর পরেও,সে রুচিহীনতায় ভুগছে।”

“সেবিকার কথাগুলো শুনে আনমনে হাসলো নির্জন। আবারও অফ হোয়াইট কালার দেয়ালে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে দৃঢ় কন্ঠে বললো,’তার অবস্থার অবনতি দেখলে আমায় সাথে সাথে জানাবেন।আমি বাসায় না থাকলে,অবশ্যই ফোন করে জানাবেন।’বলেই সেখান থেকে দ্রুত পা ফেলে চলে গেলো নির্জন।”

“নির্জন রুম থেকে চলে যাওয়ার পর সেবিকা বুকে হাত দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।কিছুক্ষণের জন্য মনে হয় তার দম আটকে আসছিলো।অজানা কারণেই,নির্জন কে দেখলে তার ভীষণ ভয় লাগে।অথচ নির্জনের বাহ্যিক মুখস্রি যথেষ্ট সুদর্শন।”

———–
“এদিকে তপ্ত গরমে এসি অন করে কম্ফোর্টার গায়ে জড়িয়ে মৃদু স্বরে মাহিরের সাথে কথা বলছে তোহা।অপরপাশ থেকে মাহির এতদিনে ঘটে যাওয়া দেশের ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে কিছু চাঞ্চল্যকর কথা বললো।জানালো, খুলনা এবং রংপুর শহর বিজয়ী হয়েছে,কিন্তুু কুমিল্লা এবং সিলেটবাসীর জীবন সংকটাপন্ন।তারপর নিজেদের বিয়ের কথা নিয়ে আলোচনা শুরু করলো।তোহা কিছুক্ষণ পরপর ‘হ্যা,হুম,না’ এগুলো বলছে।”

“নিধি নির্জনের সাথে কথা বলতে বলতে বেলকনিতে চলে গিয়েছিলো। নিধি নির্জনের ফোন কে**টে,নাদিয়ার মায়ের ফোনে কল দিয়ে নাদিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি জেনে ওকে কিছুক্ষণ স্বান্তনা দেয়।তারপর নির্জনের সাথে কথা হওয়ার বিষয়টি শেয়ার করে।
সবকিছু শুনে এতো কষ্টের মধ্যেও নাদিয়া দুষ্টামি করতে ছাড়লো না।দুষ্টু হেসে বললো,’যাক অবশেষে আমার কাঠবিড়ালি,নিরামিষ, হাফ সাইকো টাইপ বান্ধবীর মনেও প্রেমের অনুভূতির উদয় হলো।সত্যি তোদের সাক্ষাৎ হওয়াটা ছিলো যেমন আনকমন,তোদের প্রেমের সূচনা টাও আনকমন হাহাহা।”

“নিধি লাজুক হেসে বললো,’ঠিক বলেছিস।আশা করি আমার এতোদিনের স্বপ্নগুলো বাস্তবে রূপ নিবে।আর হ্যা,তুই একদম চিন্তা করিস না।দিগন্ত ভাইয়ার সাথে তোরই বিয়ে হবে,ওইসব ইহান-টিহান বাদ।আমি আগামীকাল এই বিষয়ে ‘তার’ সাথে কথা বলবো।”

“নাদিয়া ব্যঙ্গ করে বললো,’ওলে বাবালে,আমাল বান্দুপি দেখছি এখনই তার প্রেমিক কে সম্মান করে কথা বলে,আগে তো কতগুলো ডেভিল নিক নেইম ছাড়া কথাই বলতি না।আর এক দিনেই সব চেঞ্জ,স্ট্রেইঞ্জ!”

“নিধি মুচকি হেসে বললো,’আরে তখন তো সে আমার অচেনা,অজানা শত্রু ছিলো।আর এখন তো আমার…হিহিহি।’
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে পরক্ষণেই নিধি গেয়ে উঠলো,

🎶প্রেমে পড়েছে মন প্রেমে পড়েছে
অচেনা এক মানুষ আমায় পা**গল করেছে…

তারপর দু’জন আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলো।”

“বেলকনি থেকে রুমে এসে নিধি দেখলো,এই ভ্যাপসা গরমে তোহা কম্ফোর্টারের নিচে মাথা ঢুকিয়ে ‘হু হ্যা না’ এইরকম শব্দ করছে।নিধি বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত করার জন্য ধীরে ধীরে তোহার আরও কাছে গেলো।অতঃপর সেই একই শব্দ শুনতে পেলো।আর তার সাথে কন্ঠ খাদে নামিয়ে খিলখিল করে হাসির শব্দ।”

“নিধির এইবার বুঝতে দেরি হলো না যে,’তোহা কার সাথে কথা বলছে।ঠোঁট টিপে হেসে তৎক্ষনাৎ নিধি তোহার কম্ফোর্টার সরিয়ে উচ্চস্বরে বললো,’,ভাউউউ…

“আচানক এহেন কাহিনীতে তোহা কান থেকে ফোন ফেলে দিয়ে দিলো এক চি**ৎকার।নিধি দ্রুত তোহার মুখ চেপে ধরে বললো,’আরে এখানে তোর ডাক্তার সাহেব আসেনি।আমি রে..আমি এসেছি।”

“নিধির মুখে দুষ্টু হাসি দেখে তোহা নিধির হাত ঝটকা দিয়ে সরিয়ে,বুকে বার কয়েক থু থু দিলো।শুকনো কন্ঠে বললো,’আপু পানি দাও,পানি খাবো।গলাটা শুকিয়ে গেছে।”

“নিধি বুঝতে পেরেছে,যে তোহা ভীষণ ভয় পেয়েছে। নিধি দ্রুত টেবিলে রাখা এক গ্লাস পানি এনে তোহা কে দিলো।তোহা ঢকঢক করে পানি খেয়ে তৃষ্ণা মিটিয়ে বললো,’আপু এভাবে কেউ কাউকে ভয় দেখায়?আমি কতটা ভয় পেয়েছি জানো?তুৃমি দেখে নিও আমিও তোমাকে এভাবে ভয় দেখাবো।তখন আমার অনুভূতি বুঝবে।”

“হয়েছে তুই আমাকে ভয় দেখাবি,আর আমি ভয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করবো?হুহ..ওগুলো স্বপ্নের মধ্যেই দেখ।আমাকে ভয় দেখানোর আগে ডাক্তার সাহেবের সাথে তোর বিয়ে হয়ে যাবে।তারপর সে তোকে বাসর রাতে ভয় দেখাবে হাহাহা।”

“তোহা দুষ্ট হেসে বললো,’আর তোমার বিয়ে হবে আমার চার চক্ষুওয়ালা নির্জন দুলাভাইয়ের সাথে হিহিহি।”

“নির্জনের কথা বলতেই,নিধির মনে পড়ে গেলো
‘ভূতের বাড়ি’ রেস্টুরেন্টের কথা।নিধি বিছানায় বসে বললো,’তোহা আগামীকাল সন্ধ্যায় নির্জনের সাথে দেখা করবো।”

“তাই নাকি?কোথায় দেখা করবে আপু?”

“ভূতের বাড়ি রেস্টুরেন্টে।”

“অ্যা?পৃথিবীতে কি রেস্টুরেন্টের অভাব পড়েছিলো?ওই কঙ্কালদের ঘরে কেনো দেখা করবে?”

“উফফ তুই ও না..ভীতু নাম্বার ওয়ান।ওগুলো কি আসল কঙ্কাল নাকি!এমনি মানুষের হাতে তৈরি করা ‘কঙ্কালের মাথার খুলি’।আর শোন আমি একা যাবো না;তুইও আমার সাথে যাবি।যেহেতু প্রথম বার মিট করবো,তাই একটু আনইজি ফিল হচ্ছে।নেক্সট টাইম দেখা করার সময় তোকে লাগবেনা।”

“নিধির কথা শুনে তোহা ভ**য়ার্ত কন্ঠে বললো,’না না আমি ওখানে ভুলেও যাবো না।গতবার তোমার আর নাদিয়া আপুর সাথে ওখানে গিয়ে অর্ধেক বেহুশ হয়ে ফিরে এসেছি।আমি বুঝলাম না, তোমার মাথায় এতো ভৌতিক চিন্তা আসে কোথা থেকে?তোমাদের যেহেতু প্রথম মিট হবে,সেহেতু তুমি ভালো কোনো নিরিবিলি রোমান্টিক জায়গা বাছাই করবে।আর তুমি সেটা না করে,ওই ভূতের বাড়িতে দেখা করার কথা বলছো?আচ্ছা নির্জন ভাইয়া রাজি হয়েছে তো?”

“আলবাত রাজি হয়েছে।দেখতে হবে না কার হিরো?”(কাঁধের কাছ থেকে ঢং করে চুল সরিয়ে,ভাব নিয়ে বললো নিধি।)

“তোহা মনে মনে বললো,’হুমম যেমন হাফ সাইকো হিরোইন,তেমন তার হাফ সাইকো হিরো।’
তারপর হাসি মুখে বললো,’আপু আমার না পরশুদিন সাপ্তাহিক এক্সাম আছে।তাই আমার অনেক পড়াশোনা করতে হবে।আমি যেতে পারবো না।তুমি এক কাজ করো নাদিয়া আপু কে নিয়ে যাও।”

“দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠলো নিধি, ‘দেখ গতবার মাহতিমের সাথে দেখা করার সময় তুই গিয়েছিলি,এইবারেও নির্জনের সাথে দেখা করার সময় তুই সাথে যাবি।যদি না যাস,তাহলে তোর নতুন কেনা ফোন টা নিয়ে কমোডে ফেলে দিবো।তারপর হাত দিয়ে কমোড থেকে তুলে এনে, মাহিরের সাথে কথা বলতে হবে।”

“নিধির কথা শুনে তোহা ফ্লোরে ছুঁড়ে মা**রা ফোনটির দিকে একবার অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ফোন টা কমোডে পড়ে থাকার কল্পনা করলো।মুহূর্তেই তোহার নাক-মুখ কুঁচকে এলো।সেটা দেখে বাঁকা হাসলো নিধি।”

“তোহা করুণ স্বরে বললো,’আপু রে এই ভূতুড়ে রেস্টুরেন্টে দেখা না করলে হয় না?”

“তোহার কথায় ফিচেল হাসলো নিধি,
‘না হয় না।কারণ আমাদের দু’জনের ঝগড়ার সূচনা হয়েছে আনকমন জায়গা থেকে,দু’জনের প্রতিশোধ আদান-প্রদান করাও হয়েছে আনকমন জায়গায়,তাই আমাদের প্রেমের সূচনা টাও আনকমন জায়গায় হবে।যেখানে সবাই রমনার বটমূল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পার্কে গিয়ে প্রেমিকের সাথে প্রথম কথপোকথন করে।সেখানে আমাদের প্রথম শব্দচয়ন শুরু হবে ‘ভূতের বাড়ি’ রেস্টুরেন্টে।আমার মতো আমার ভাবনাগুলোও আনকমন বুঝেছিস?”

“তোহা শুকনো ঢোক গিলে ‘হ্যা’ সূচক মাথা নাড়লো।অতঃপর সেই ভূতুড়ে রেস্টুরেন্টে যেতে রাজি হলো তোহা।”

———-
“সন্ধ্যা ৭টা বেজে ১৫মিনিট।’ভূতের বাড়ি’ রেস্টুরেন্টের এক কর্ণারের টেবিলে মেনু কার্ড হাতে নিয়ে মুখোমুখি বসে আছে নির্জন,নিধি এবং তোহা।মেনু কার্ডটি মূলত তোহা হাতে নিয়ে বসে আছে।রেস্টুরেন্টে ঢুকেই কোনোরকমে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে তোহা মেনুকার্ড হাতে নিয়ে,সেদিকেই মুখ গুজে আছে।ওর পাশে এবং সামনে যে দু’জন ব্যক্তি বসে আছে,সেদিকে হুশ নেই।এই ভ**য়াবহ থমথমে পরিবেশ থেকে দ্রুত প্রস্থান করতে পারলে হাফ ছেড়ে বাঁচবে তোহা।”

“নির্জন নিধিদের আগেই রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকেই চারিদিকে তাকালো।রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন হরর মিউজিক সিস্টেম চালু করা আছে।মাঝে মাঝে সেই শব্দ গুলো শুনলে গা ছমছম করে ওঠে।খাওয়ার টেবিল থেকে কিছুটা দূরে সারিবদ্ধ ভাবে কঙ্কালের মাথার খুলি রাখা।সেগুলোর মধ্যে লাল রং থেকে শুরু করে রং বেরঙের আলো জ্বলে উঠছে।কালো পোশাক পরিহিত কয়েকজন ওয়েটার সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে, সবাই কে খাবার পরিবেশন করছে।এই রেস্টুরেন্টে বেশির ভাগ মানুষের আনাগোনা হয়,এই ফ্যান্টাসি গুলোর কারণে।এখানে কিছু দম্পতি তাদের ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ডিনার প্ল্যান করে এসেছে।কিন্তুু কয়েকটি বাচ্চা এইরকম ভূতুড়ে আওয়াজ এবং কঙ্কালের মাথার খুলি দেখে ভয় পেয়ে গগনবিদারী চি**ৎকার দিচ্ছে।বাচ্চাদের চি**ৎকার চেঁচামেচি সহ্য করতে না পেরে, তাদের বাবা-মায়েরা ডিনার প্ল্যান ডিসমিস করে দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করছে।
রেস্টুরেন্ট টি তে তেমন কোনো জাঁকজমকপূর্ণ লাইটিং এর ব্যবস্থা নেই।ডিম লাইটের থেকে কিছুটা বেশি আলো ঝলমল করে জ্বলছে।বলা যায় এটা একটা ‘থ্রিলার ডার্ক প্লেস।’
নির্জন মুচকি হেসে অস্ফুটস্বরে বললো,’চমৎকার;আমার ডার্ক কুইনের চয়েজ সবসময় ইউনিক।”

“নির্জন আসার ৫মিনিট পর সেখানে প্রবেশ করেছে নিধি এবং তোহা।নিধির পাশে তোহা কে দেখে নির্জনের মন খুবই বিষন্ন হয়েছে।সে তার এবং ডার্ক কুইনের মাঝে কখনোই তৃতীয় ব্যক্তিকে সহ্য করবে না।কিন্তুু এখন সাময়িকের জন্য নিজের চিরাচরিত অভ্যাসগুলো কে বর্জন করতে হবে।এটা ‘মন’ এবং ‘হৃদয়ের’ কঠোর নির্দেশ।”

“নীরবতা ভে**ঙে নির্জন বললো,’কেমন আছেন নিরুপমা?”

“নির্জনের মুখনিঃসৃত ‘নিরুপমা’ ডাকটি শুনে বিস্ময়ের শীর্ষে পৌঁছালো নিধি।ভাবলো, ‘এই নামে তো শুধু আমার বাবা আমাকে ডাকে।এছাড়া সবাই তো নিধি বলে ডাকে।যদিও আমার প্রোফাইল থেকে শুরু করে সব জায়গায় আমার পুরো নাম দেওয়া।তবুও হঠাৎ এই নামে উনি কেনো ডাকল?”

“নিধির মুখ ভঙ্গি দেখে নির্জন ওর মনের কথা কিছুটা আঁচ করতে পারলো।মুচকি হেসে বললো,’আপনার এই নাম টা আমার খুব ভালো লেগেছে ‘অতুলনীয়া।’

“নির্জনের মুখে ‘নিরুপমা’ নামটির শব্দার্থ শুনে পিলে চমকালো নিধি।অতঃপর মিষ্টি হেসে বললো,’ধন্যবাদ।”

“নির্জন এবং নিধি কথা বলছে,এদিকে তোহা এখনও কাঁপা কাঁপা হাতে মেনু কার্ডে মুখ গুজে আছে।হঠাৎ ওর মোবাইলে টুংটাং ম্যাসেজের শব্দ হলো।তোহা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখলো, হোয়াটসঅ্যাপে মাহির ম্যাসেজ করেছে।সে রেস্টুরেন্টের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।মাহিরের ম্যাসেজ দেখে তোহার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।তোহা সকালে মাহির কে এখানে আসার কথা ম্যাসেজ করে বলেছিলো।তারপর মাহির তোহার সাথে রেস্টুরেন্টে মিট করার কথা বলেছে।কিন্তুু তোহা রেস্টুরেন্টের বাইরে মিট করতে চেয়েছে।তোহার কথা অনুযায়ী মাহির বাইরে দাঁড়িয়ে তোহার জন্য অপেক্ষা করছে।”

“তোহা নিধির কানের কাছে ফিসফিস করে মাহিরের কথা বললো।তোহা এই অকওয়ার্ড সিচুয়েশনে ওকে একা ফেলে চলে যাবে,ভেবে নিধির মন টা একটু খারাপ হয়ে গেলো।তবুও বোনের হবু স্বামীর কথা ভেবে তোহা কে যাওয়ার অনুমতি দিলো নিধি।তোহা খুশি হয়ে নিধিকে ‘থ্যাংকস’ বলে দ্রুত সেখান থেকে কে**টে পড়লো।তোহার মনে হলো এইমাত্র সিংহের খাঁচা থেকে প্রাণ নিয়ে বেড়িয়েছে।”

“তোহা চলে যাওয়াতে নির্জনের মনে খুশিগুলো যেনো উপচে পড়ছে।তবুও সন্তর্পণে বাহ্যিক ভাবে ঠোঁট জোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করে, নিধির দিকে মেনু কার্ড এগিয়ে দিয়ে বললো,’কি খাবেন আপনি?আমাকে বলুন,আমি ওয়েটার কে বলছি।”

“নিধি মেনু কার্ডে চোখ বুলিয়ে বললো,’তেমন কিছু না;শুধু ১টা কোল্ড কফি,ভ্যানিলা আইসক্রিম আর চিকেন বার্গার।বাই দ্য ওয়ে আপনি কোন কফি পছন্দ করেন?কোল্ড কফি নাকি হট কফি?”

“নিধির এহেন প্রশ্নে নির্জন চারিদিকে একবার সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,নিধির দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ওর চোখে চোখ রেখে ঠোঁটের কোণা প্রসারিত করলো।অতঃপর মৃদু স্বরে বললো,’আমি বরাবরই হট কফি পছন্দ করি ডার্ক কুইন।”

#চলবে….

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“অতঃপর মৃদু স্বরে বললো,’আমি বরাবরই হট কফি পছন্দ করি ডার্ক কুইন।”

“নির্জনের এভাবে চোখে চোখ রেখে উত্তর দেওয়াতে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো নিধি।ভাবলো,’আমি কি প্রশ্ন টা করে ভুল করলাম?নাকি সে উত্তর টা অন্যভাবে দিয়েছে?নাকি আমি ভুল ভাবছি?”

“নিধির ভাবুক চেহারা দেখে অন্যদিকে ফিরে ঠোঁট টিপে হাসলো নির্জন।নিধি কে এভাবে জব্দ করতে পেরে বেশ মজা পেয়েছে নির্জন।”

“নিধি মেনু কার্ডের দিকে চোখ বুলিয়ে ভাবতে থাকল,’ধুর..আমিও না,কি যে উল্টাপাল্টা কথা ভাবি।মানুষের সম্পর্কে নেগেটিভ চিন্তা করতে করতে মনটাই নেগেটিভ হয়ে গেছে।সহজ কথা হলো,আমি যেমন প্রশ্ন করেছি,সে তেমন সহজ ভাষায় উত্তর দিয়েছে।এতটা দুষ্টুও সে নয়।”

“নির্জন ওয়েটার কে ডেকে নিধির কথা অনুযায়ী খাবারের অর্ডার দিলো,সাথে নিজের জন্য হট কফি অর্ডার দিলো।তারপর নিধির দিকে তাকিয়ে বললো,’আরও কিছু অর্ডার দিবেন?এখনও মেনু কার্ড দেখছেন যে?”

“নিধি থতমত খেয়ে মেনু কার্ড রেখে বললো,’না না আর কিছু অর্ডার দিবো না।আমি আবার ডায়েট কন্ট্রোল করি।”

“নিধির মুখে ডায়েট কন্ট্রোলের কথা শুনে,বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল নির্জন।উত্তেজিত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,’আর ইউ সিরিয়াস!তৈলাক্ত খাবার খেয়ে ডায়েট কন্ট্রোল?”

“নির্জনের কথা শুনে নিধি বেশ লজ্জা পেলো।টেবিলের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে বললো,’ওই আর কি মাঝে মাঝে এইসব খেলে কিছু হয় না।”

“নির্জন এইবার মৃদুস্বরে হো হো করে হেসে উঠলো।নিধি এইবার সত্যি বেশ লজ্জা পেলো।নির্জন কে ডায়েট কন্ট্রোলের কথা বলা উচিত হয়নি।ওর এই ভুগিচুগি ডায়েট কন্ট্রোলের কথা শুনে যে কেউ হেসে ফেলবে।’ভেবে নিজেকেই নিজে ধি*ক্কার দিলো নিধি।”

“এদিকে নিধিকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে নির্জনের বেশ রাগ হলো।কিন্তুু এইমুহূর্তে রেগে গেলে হার নিশ্চিত।তাই মনে মনে মুখে এক প্রকার সুপার গ্লু লাগিয়ে নিলো নির্জন।নিধির দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকল।”

“নিধি আজ কালো গাউন এবং কালো হিজাব পড়ে এসেছে।সেটা অবশ্য নির্জনের রিকোয়েস্টে পড়েছে।রাতে নির্জন ম্যাসেজ করে বলেছিলো,নিধি যেনো শপিংমলে পড়ে যাওয়া সেই ব্ল্যাক কালার গাউন এবং ব্ল্যাক হিজাব পড়ে আসে।আর অবশ্যই মুখে মাস্ক পড়ে আসবে।নিধি নির্জনের কথা অনুযায়ী সেভাবে এসেছে।কিছুক্ষণ আগে নিধি মাস্ক খুলে ফেলেছে।”

“আজ নির্জন ডেনিম প্যান্ট এবং ব্ল্যাক কালার ফুল হাতার শার্ট পড়েছে এবং হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ।চকচকে রিমলেস চশমা পরিহিত উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের পুরুষটির শরীরে ব্ল্যাক শার্ট টি বেশ মানিয়েছে।নিধির চোখজোড়া নিজের অজান্তেই মাঝে মাঝে আটকে যাচ্ছে নির্জনের ইনোসেন্ট চেহারার দিকে।নির্জন সেটা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছে।আর ভাবছে,’এভাবে আমাকে লুকিয়ে দেখা আমি একদম পছন্দ করি না ডার্ক কুইন। খুব তাড়াতাড়ি তুমি আমায় সরাসরি দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পারবে।সেই দৃষ্টিতে না থাকবে কোনো জড়তা,আর না থাকবে কোনো লজ্জা।’ভেবে আনমনে হাসলো নির্জন।”

“দু’জনের চোখের আলাপনের মধ্যে ওয়েটার খাবার নিয়ে চলে এলো।ওয়েটার খাবার সার্ভ করতে করতে নিধির দিকে তাকিয়ে সৌজন্যমূলক হাসি দিলো।নিধি কোল্ড কফিতে স্ট্র দিয়ে আলতো হাতে নেড়ে ওয়েটার কে হাসি মুখে বললো,’থ্যাংকস।’ওয়েটার হাসি মুখে বললো,’ওয়েলকাম।”

“নিধিকে এভাবে হাসিমুখে ওয়েটারের সাথে কথা বলতে দেখে,নির্জন এইবার কন্ট্রোললেস হয়ে গেলো।কি করবে..কি করবে ভেবে পেলো না।পরক্ষণেই নিজের জন্য বরাদ্দ করা হট কফির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো নির্জন।আশেপাশে একবার সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।অতঃপর ওয়েটারের দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে,ফুল হাতার শার্ট টি ফোল্ড করে ধোঁয়া ওঠা হট কফির গ্লাস টি আলতো হাতে ফেলে দিলো ওয়েটারের হাতের ওপর।আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেলো ওয়েটার।ধোঁয়া ওঠা গরম কফি হাতের কব্জিতে পড়ায়,তীব্র যন্ত্রণায় আর্তচি**ৎকার করে উঠলো সে।এহেন ঘটনায় নিধিও ভড়কে গেলো।আশেপাশে থাকা সুইট কাপলগুলোও ড্যাবড্যাব করে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।এদিকে নির্জন চশমাটা ঠিকঠাক করে ইনোসেন্ট ফেইস করে ওয়েটারের ঝলসে যাওয়া হাতে জোরে চেপে ধরে বললো,’সরি সরি..আ’ম এক্সট্রিমলি সরি।”

“নির্জন এত জোরে হাত চেপে ধরায় ওয়েটার আরো জোরে চি**ৎকার করে উঠলো।ওয়েটারের আর্তচি**ৎকারে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার সহ বাকি ওয়েটার গুলো সেখানে এসে উপস্থিত হলো।নির্জন তৎক্ষনাৎ ওয়েটারের হাত ছেড়ে দিয়ে অনুনয়ের স্বরে বলতে থাকল,’সরি,সরি,রিয়েলি ভেরি সরি.. আমি সত্যি বুঝতে পারিনি,যে আপনার হাতে গরম কফিটি পড়ে যাবে।আমি তো টেবিলের পাশ থেকে টিস্যু পেপার নিচ্ছিলাম।”

“নির্জনের নমনীয় কন্ঠে এতোবার সরি শুনে ম্যানেজার সহ সবাই বুঝতে পারলো,যে দুর্ঘটনাটি পুরোটাই অনিচ্ছাকৃত ভাবে হয়েছে।তাছাড়া একজন ওয়েটারের সাথে কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে এমন একটা কাজ করবে না এটাই স্বাভাবিক।’ভেবে ম্যানেজার বললো,’ওকে স্যার,আমরা বিষয়টি বুঝতে পেরেছি।এখানে আপনাকে দোষারোপ করা অনুচিত হবে।”

“নির্জন ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার সহিত ম্লান হাসলো।তারপর পকেট থেকে এক হাজার টাকার চকচকে নোট বের করে,ব্যথায় চোখ-মুখ কুঁচকে যাওয়া ওয়েটারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,’টাকাটা গ্রহণ করুণ প্লিজ।ইমিডিয়েট ভালো কোনো ডক্টর দেখিয়ে নিবেন।আর আপনি চাইলে আমি আপনাকে ভালো কোনো ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো,ডোন্ট ওয়ারি।”

“নির্জনের এত নরম স্বরে কথা শুনে ওয়েটার অস্ফুটস্বরে আর্তনাদ করে খুব কষ্ট করে বললো,’না স্যার, আমি নিজেই ভালো ডক্টর দেখিয়ে নিবো।আর আপনার টাকা আপনার কাছে রাখুন প্লিজ।”

“নির্জন কিছুতেই ওয়েটারের কথা শুনলো না।চেহারায় বিষন্নতার ছাপ এঁটে বললো,’অসম্ভব!এই টাকা আমি কিছুতেই রাখতে পারবো না।অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও আমার দ্বারা আপনার ক্ষতি হয়েছে।তাই ক্ষতিপূরণ না হলেও,এই টাকা টা আপনাকে রাখতেই হবে।এটা আমার অনুরোধ।”

“নির্জনের এহেন আবদার ফেলতে পারলো না ওয়েটার।নির্জনের হাত থেকে টাকা নিয়ে প্যান্টের পকেটে ভরলো।ম্যানেজার সহ বাকি ওয়েটার গুলো নির্জনের সৌজন্যমূলক আচরণে খুবই খুশি হলো।সেই সাথে নিধিও মুগ্ধ নয়নে নির্জনের দিকে তাকিয়ে রইলো।অবচেতন মনে ভাবলো,’লোকটা কতটা মহৎ এবং উদার মানসিকতার মানুষ।সত্যি আমি খুব ভাগ্যবতী।’ভেবে লাজুক হাসলো নিধি।”

“সবাই চলে যাওয়ার পর নিধি কোল্ড কফি অর্ধেক টা খেয়ে,নির্জন কে বললো,’আপনার হট কফির তো ২৪টা বেজে গেলো।এক কাজ করুন,আপনি আরেকটা কফি অর্ডার করুন।”

“নির্জন বুকের ওপর দুই হাত ভাজ করে বললো,’অর্ডার করতে হবে না।আপনার খাওয়া বাকি অর্ধেক কোল্ড কফি খেলেই আমার হয়ে যাবে।”

“নির্জনের কথায় হকচকিয়ে গেলো নিধি।বললো,
‘অ্যা?আমি তো এটা এঁটো করে ফেলেছি।তবুও আপনি এটা খাবেন?”

“নির্জন ঠোঁটের কোণা প্রসারিত করলো,মৃদুস্বরে বললো,’তো কি হয়েছে?ভবিষ্যতে তো আপনার সব এঁটো খাবারই আমার খেতে হবে।এখন থেকে না হয় প্র্যাক্টিস করি।”

“নিধি আর কিছু বললো না।গ্লাস থেকে স্ট্র তুলে বললো,’এটা তে আরেক টা স্ট্র ডুবিয়ে খেয়ে ফেলুন।”

“নিধির কথায় বেশ মন খারাপ হলো নির্জনের।তবুও চেহারার বাচন ভঙ্গি স্বাভাবিক রেখে, বাকি অর্ধেক কফি স্ট্র ছাড়াই ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো।এদিকে নিধি চিকেন বার্গারে কা**মড় বসিয়ে, নির্জনের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকল।”

——–
“বাইরের একটি ক্যাফেটেরিয়াতে স্যান্ড উইচ আর পিজ্জা নিয়ে, মুখোমুখি বসে আছে মাহির এবং তোহা।মাহির চামচ দিয়ে পিজ্জা কে**টে তোহা কে বললো,’কি হলো?প্রায় ১৫মিনিট যাবৎ দেখছি গভীর ভাবনায় ডুবে আছো।আমার সাথে ঠিকভাবে কথাও বলছো না।কি হয়েছে বলোতো?”

“তোহা চিন্তিত মুখমণ্ডল নিয়ে বললো,’আসলে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বাবা- মা কে বলেছি,আমার বান্ধবী তানিয়ার কাছ থেকে নোটস আর সাজেশন নিতে যাচ্ছি।আর নিধি আপু আমার সাথে যাবে।এটা শুনে মা-বাবা বিশ্বাস করে,আমাদের বাইরে বের হতে দিয়েছে।এখন বাসায় কি নিয়ে যাবো সেটাই ভাবছি।তানিয়া কে ফোন দিলাম, ও বললো ও নাকি গতকাল ওর নানু বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে।ও ছাড়া আর কারো বাসা আমি চিনিনা।এখন বাসায় যদি নোটস আর সাজেশন নিয়ে যেতে না পারি, তাহলে মায়ের হাতের লাঠির বা**রি থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।”

“তোহার কথা শুনে মাহির উচ্চশব্দে হেসে উঠলো।তোহা বললো,’আরে আরে আস্তে হাসুন।সবাই দেখবে তো।”

“মাহির হাসি থামিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে বললো,’তুমি চোখ থাকতেও অন্ধ।আশেপাশে তাকিয়ে দেখো, ২জোড়া গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড একে অপরের হাত ধরে বসে আছে আর চুপি চুপি কত কথা বলছে।আর তুমি নিরামিষভোজী মেয়ে;চিন্তায় চিন্তায় এতটাই বেখেয়ালি হয়ে গেছো যে,তোমার সামনে একজন হ্যান্ডসাম,অ্যাট্রাক্টিভ সিঙ্গেল প্রোম্যাক্স বসে আছে,সেদিকে তোমার কোনো হুশ নেই।’বলেই মাহির মন খারাপ করে পিজ্জার স্লাইস মুখে দিলো।”

“মাহিরের অভিমানী কন্ঠে কথা শুনে, এতক্ষণে তোহা মাহিরের দিকে তাকিয়ে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলো।নেভি ব্লু কালার ফুল হাতার শার্ট এবং বানানো প্যান্ট পড়েছে মাহির।এক কথায় যাকে বলে ফরমাল ড্রেস।মাহিরের ফর্সা চেহারায় কপালের ডান দিকে একটা পিম্পল উঠেছে।চুলগুলো হালকা কোকড়ানো।তবুও সেগুলোকে জেল দিয়ে লেপ্টে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে সে।ছোট ছোট চাপ দাড়িতে ফর্সা মুখস্রির সৌন্দর্য যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে।এই যে,মাহির মন খারাপ করে গোমড়া মুখে পিজ্জা খাচ্ছে,তবুও তাকে কতো কিউট লাগছে।’ভেবে মুচকি হাসলো তোহা।স্যান্ডউইচ মুখের কাছে নিয়ে বললো,’আপনাকে দেখতে অসাধারণ লাগছে মাহির।আমার তো চোখ ফেরানো দায় হয়ে পড়েছে।তবুও অনেক কষ্টে চোখ দু’টো কে কন্ট্রোল করে স্যান্ডউইচ খাচ্ছি।”

“তোহার এহেন মন্তব্যে মাহিরের মুখে থাকা পিজ্জা মনে হয় গলায় গিয়ে ঠেকলো।হঠাৎ করেই তার কাশি উঠে গেলো।সেটা দেখে তোহা তড়িঘড়ি করে মাহিরের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে,তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিলো।মাহির পানি খেয়ে কয়েক সেকেন্ড পর শান্ত হলো।মাহির কে ঠিকঠাক দেখে, তোহা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজের জায়গায় বসে স্যান্ডউইচ মুখে দিলো।মাহির তোহার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে বললো,’এমন নরম হাতের ছোঁয়া পেলে তো আমি প্রতিদিন খাওয়ার সময় কাশি দিতে রাজি আছি স্বপ্নচারীনি।”

“মাহিরের রসিকতা দেখে তোহা মুখে থাকা স্যান্ডউইচ গোগ্রাসে গিলে,বোতল থেকে পানি খেয়ে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,’উফফ আপনি মাঝে মাঝে এমন এমন কথা বলেন,যে না খেলেও আমার বিষম উঠে যায়।আপনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে,আমি তাকে এভাবেই সাহায্য করতাম।”

“মাহির ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,
‘ওহ রিয়েলি!এভাবে পিঠে হাত বুলিয়ে হেল্প করতে?”

“মাহিরের মুখ ভঙ্গিমায় এহেন কথা শুনে তোহা বুঝে ফেললো,’যে তোহার কথায় মাহির জেলাস ফিল করছে।নম্র ভদ্র মেয়ে তোহা মাহিরকে জেলাসি ফিল করিয়ে কষ্ট দিতে চায় না।তাই চোখজোড়া টেবিলে নিবদ্ধ রেখে বললো,’না মানে এমনি পানি এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করতাম।”

“তোহার লাজুক ভঙ্গিমায়,কোমল স্বরে সহজ স্বীকারোক্তি শুনে মনে অনাবিল আনন্দ পেলো মাহির।তোহার কনিষ্ঠ আঙ্গুলে নিজের কনিষ্ঠ আঙ্গুল ঠেকিয়ে মুচকি হেসে বললো,’তুমি হলে আমার সেই স্বপ্নচারীনি;যাকে আমি আমার বাস্তব জীবনেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রাখতে চাই।”

———–
“এদিকে রুফটপের কর্ণারে দাঁড়িয়ে শরীরে স্নিগ্ধ বাতাস মাখছে নিধি।আশেপাশ থেকে ভেসে আসা অবাধ্য বাতাসে,মাঝে মাঝে ওর হিজাব টা উড়ে যেতে চাইছে।বারবার হিজাব টা হাত দিয়ে ঠিকঠাক করছে নিধি।সেদিকে রুঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ডান হাত মুষ্টিযুদ্ধ করে, নিধির থেকে কিছুটা দূরত্বে রেলিঙে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নির্জন। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নিধি নির্জন কে রেস্টুরেন্টের রুফটপে যাওয়ার কথা বললে,নির্জন ও সায় জানায়।তারপর দু’জনেই রেস্টুরেন্টের সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর রুফটপে চলে আসে।রুফটপে সারি সারি কয়েক টি টেবিল এবং চেয়ার বসানো হয়েছে।পাশেই রং বেরঙের ফুলের টব রাখা হয়েছে।অনেকেই এখানে এসে ডিনার করছে।সাথে মনোরম মুক্ত বাতাস উপভোগ করছে।”

“নিধির দৃষ্টি আকাশের বুকে আটকে আছে।আজ আকাশে ২-৩টা তারা দেখা যাচ্ছে।আরও অনেক তারা হয়তো উঁকি দিয়েছে।কিন্তুু নিধির চোখ জোড়ায় মাত্র ২-৩টি তারা ধরা দিচ্ছে।আজ আকাশের বাতাস টা বেশ বিশুদ্ধ লাগছে।মনে হচ্ছে স্বাধীনতার সুঘ্রাণ ভেসে আসছে।তবে কি আমাদের দেশ আবার স্বাধীন হবে নাকি হলো?’আনমনে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলো নিধি।মুচকি হেসে ভাবলো,এতগুলো শহীদ ভাই-বোনদের তাজা র**ক্ত ঝরানো বিফলে যাবে না।”

“কিয়ৎক্ষণ পর নিধির হাসি মুখ টা চুপসে গেলো।কারণ দূর আকাশে থাকা তারাগুলো কে কিছুক্ষণ পরপর কালো মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে।সেদিকে বিরক্তি ভাব নিয়ে তাকালো নিধি। নির্জনের দিকে তাকিয়ে,আকাশের দিকে আঙ্গুল তুলে অভিমানী স্বরে বললো,’দেখেছেন মেঘগুলো তারাগুলো কে কত ডিস্টার্ব করে?বারবার এসে ঢেকে দিচ্ছে।মন ভরে দেখতেও পারছিনা।”

“নিধিকে এভাবে আকাশের দিকে আঙ্গুল তুলতে দেখে,নির্জনের ক্রোধ গুলো যেনো ঝড়ের গতিতে শো শো করে বেড়ে চলেছে।নিজের অনাকাঙ্ক্ষিত ক্রোধ গুলো কে অনবরত দমিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করছে নির্জন।ভেতর থেকে ‘হৃদয়’ বলে উঠলো,’এখন নয় নির্জন।ধৈর্য ধরো।”

“হৃদয়ের কথা শুনলো নির্জন।কালো মেঘে ঢাকা আকাশের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে গম্ভীর স্বরে বললো,’আমার মনে হয় মেঘগুলো তারাগুলো কে খুব গভীরভাবে ভালোবাসে।তাই সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কে সবার চোখের আড়ালে রাখতে,বারবার এসে তারাগুলো কে কালো ধোঁয়া দিয়ে ঢেকে দেয়।যেমন ভাবে আমিও একদিন আলো থেকে বহুদূরে নিয়ে,আমার আঁধারের রাজ্যে ঢেকে রাখবো তোমায় ডার্ক কুইন।”

“আকস্মিক নির্জনের গম্ভীর কন্ঠে এহেন কথা শুনে নিধি তৎক্ষনাৎ আঙ্গুল নামিয়ে;নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো,’হোয়াট?”

“নিধি কে এভাবে চমকে যেতে দেখে হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।কপালের সামনে আসা ছোট ছোট চুলগুলো ডান হাত দিয়ে এক পাশে সরিয়ে বললো,’আপনাকে কয়েক বাক্যে ‘তুমি’ বলার প্র্যাক্টিস করছিলাম।বলেছিলাম যে,সামনা-সামনি দেখা হলে ‘তুমি’ বলে ডাকব।আপনার ভালো না লাগলে ‘আপনি’ করেই ডাকব।”

“নিধির অজান্তেই ওর মাইন্ড কন্ট্রোল করে ফেলেছে নির্জন।কিন্তুু বোকা নিধি তার কিছুই বুঝলো না।মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,’আপনার মুখে ‘তুমি’ ডাক টা বেশ ভালো লাগে।প্রিয়জনকে ‘তুমি’ ডাকার অনুভূতি টাই আলাদা।তবে আমি আপনাকে ‘আপনি’ সম্বোধন করবো।আমি আপনাতে আবদ্ধ থাকতে চাই নির্জন।”

“নিধির শেষ বাক্যটি নির্জনের কর্ণপাত হতেই,মন ভেতর থেকে বলে উঠলো,’ইউ আর আ গ্রেট মাইন্ডগেমার & বেস্ট লাভার নির্জন।”
“মনের অপরিসীম প্রশংসা শুনে বিজয়ের হাসি হাসলো নির্জন।তারপর নিধি নির্জন কে মাহতিম কে নিয়ে মোট ৯টা বিয়ে কিভাবে ভে**ঙেছে,সবকিছু খুব মজা করে বললো।”

“নিধির এতোগুলো বিয়ে ভা**ঙার কথা শুনে পৈ**শাচিক আনন্দ পেলো নির্জন।পরক্ষণেই মনে হলো,’ডার্ক কুইন যদি এতোগুলো বিয়ে না ভা**ঙতো,তাহলে তো আজ ওকে আমি পেতাম না।অথচ ওকে আমি কতগুলো শাস্তি দিয়েছি।অবশ্য শাস্তি গুলো দেওয়ার পেছনে যথাযথ কারণ ও ছিলো।যাইহোক,আমার হৃদয় উজার করা ভালোবাসা দিয়ে ডার্ক কুইনের সব কষ্ট পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে ভুলিয়ে দেবো।আই প্রমিস মাইসেল্ফ।”

———
“রাত সাড়ে ৮টা।নাদিয়া বিছানায় বসে ডায়েরি তে তার প্রেমকাহিনী লিখতে ব্যস্ত।ও ধরে নিয়েছে,যে ইহানের সাথে ওর বিয়ে হবে।তাই মাঝে মাঝে স্মৃতিচারণ করার জন্য ডায়েরি লিখছে আর টপটপ করে চোখের পানি ফেলছে।”

“হঠাৎ করেই নাদিয়ার মনে হলো,খোলা জানালা থেকে কেউ ওকে দেখছে।নাদিয়া একবার খোলা জানালায় চোখ বুলিয়ে,মনের ভুল ভেবে আবারও ডায়েরি লেখায় মনযোগ দিলো।নাদিয়ার বেড জানালার সাথে দেওয়া হয়েছে,আর জানালার পাশে বসেই খোলা চুলে ডায়েরি লিখছে।মাঝে মাঝে দখিনা বাতাসে অবাদ্ধ চুলগুলো হেলদোল খাচ্ছে।হঠাৎ করেই নাদিয়ার হাত চেপে ধরলো কেউ।”

“নাদিয়া ভয়ে চি**ৎকার করতে যাবে,তখনই জানালার অপরপাশ থেকে চিরচেনা ব্যক্তিটি ওর মুখ চেপে ধরে বললো,’হানি.. হানি ভয় পেয়ো না।আমি তোমার দিগন্ত।প্লিজ প্লিজ নড়াচড়া করবে না।তাহলে মই ভে**ঙে নিচে পড়ে গিয়ে আমি অকালেই অ**ক্কা যাবো।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে