হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-১৩+১৪

0
64

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“মনে রেখো,সে আমার.. আর শুধুই আমার হবে।যদি সে আমার না হয়,তাহলে কারো হবে না।”
“My Dark Queen was born just for me.She is only,only & only mine forever.”

“একাধারে চি**ৎকার করে কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নির্জন।মনের অজান্তেই তার মুখমন্ডলে মুচকি হাসির ঝলক ফুটে উঠলো।তার অন্যতম কারণ হলো,পৃথিবীকে সে জানিয়ে দিয়েছে,’তার ডার্ক কুইন শুধু,শুধু এবং শুধুই তার।”

“রাত সাড়ে ১২টা।নির্জন শাওয়ার নিয়ে ব্ল্যাক টি-শার্ট এবং ব্ল্যাক ট্রাউজার পরিধান করে বেড়িয়ে এলো।নিধির জন্য প্রথম চিঠি সমাপ্ত করে,আরও ১৪টি চিঠি বিভিন্ন ভাবে সে লিখেছে।কোনোটাতে ৩-৪টা কবিতা,ছন্দ,সাহিত্যিক লাইন,মনের মধ্যে সাজানো বিভিন্ন সুমধুর শব্দচয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাবে চিঠি লিখেছে।বর্তমানে নির্জন ডুমুর ফল খাচ্ছে, আর প্রতিটি চিঠিতে র**ক্তের ছোপ ছোপ দাগ এঁকে দিচ্ছে।র**ক্ত মাখিয়ে চোখ-মুখ কুৃঁচকে তৃপ্তির হাসি দিলো নির্জন।তার প্রিয়তমার জন্য সে যে আরও কত-কত আয়োজন করে রেখেছে,যেটা তার কল্পনারও বাইরে।”

“নির্জন চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে, বুকের ওপর দুই হাত ভাজ করে আনমনে ভাবলো,
‘যখন তুমি আসবে আমার হৃদ মাঝারে,
খুব করে দুই হাত দিয়ে বেঁধে রাখবো তোমায়,
আমার এই শক্ত বাহুডোরে,
ঐ কোমল শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে,
ভালোবাসার গভীর পরশ এঁকে সুখ সায়রে ভাসাবো তোমায়…
কখনো ভুলতে দেবো না তোমায়,
কারণ তোমার প্রতিটি অঙ্গ, ভালোবাসার চিহ্ন মনে করিয়ে দিবে আমায়।’
আমার ডার্ক কুইন আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা..একটু ধৈর্য ধারণ..তারপর…তারপর তুমি শুধু আমার আর আমি শুধুই তোমার।যে তোমার আর আমার মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে, তাকে ছি**ন্ন-বি**চ্ছিন্ন করতে আমি ন্যানো সেকেন্ডও ভাববো না ডার্ক কুইন💖
” Don’t you know?My heart bleeds without you.”

———
“কে**টে গেলো আরও একটি রাত।সারারাত ধরনীতে মুষলধারে বারিধারা বয়ে গেছে।ঢাকার সড়কপথে রিকশাওয়ালারা যাত্রী নিয়ে রাস্তায় কোমর অবধি পানির মধ্যে খুব সন্তর্পনে হেঁটে হেঁটে,রিকশা টেনে নিয়ে যাচ্ছে।২দিন যাবৎ টানা বৃষ্টির কারণে, ঢাকার সড়কপথ নাজেহাল প্রায়।তবে কিছু উঁচু এলাকাতে এখনও পানি ওঠেনি।”

“রাস্তার এক সাইডে দাঁড়িয়ে একের পর এক যাত্রী কে ভাবুক দৃষ্টিতে দেখে চলেছে নিধি।
সে আজ নাদিয়ার বাসায় যাবে বলে বেরিয়েছে।নাদিয়ার ফোন বন্ধ পেয়ে, নিধির খুব চিন্তা হচ্ছিলো।গতকাল রাতে নির্জনের সেই র**ক্তমাখা চিঠি পড়ে, সারা রাতে চোখজোড়া এক করতে পারেনি নিধি এবং তোহা।নির্জনের অদ্ভুত সেই চিঠি ওদের দুই বোনের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।নির্জন যে নিধি কে এভাবে চিঠি লিখে প্রেম নিবেদন করবে,সেটা নিধির কল্পনারও বাইরে ছিলো।নিধি নির্জনকে রেগেমেগে মনে মনে অনেকগুলো নাম দিয়েছিলো,(রসকষহীন,কাটখোট্টা,গম্ভীর, অ্যা**টম বো**ম,গোলা*বা**রুদ, নিরামিষ ইত্যাদি।)কিন্তুু নির্জনের এইরকম অনাকাঙ্ক্ষিত চিঠি পেয়ে,নিধি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।”

“ভোরের দিকে তোহা এবং নিধি ঘুমিয়েছিলো।সকাল ৯টায় নিধির ঘুম ভেঙে গেলো।আসলে মস্তিষ্কে চিন্তা রা ঘুরপাক খেলে,চোখ জোড়া বন্ধ করলেও ঘুম হয়ে ওঠে না।
তাই নিধি ঘুম থেকে উঠে ঝটপট ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করে,তাহমিনা বেগম কে বলে নাদিয়ার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।”

“নিধি নাদিয়াদের বাসায় যেতেই, দেখলো নাদিয়ার ফুফু ডাইনিং টেবিলে খাবার পরিবেশন করছেন আর জহির সাহেব এবং নাদিয়ার মায়ের সাথে গল্প করছেন।সেখানে নাদিয়া কে দেখতে না পেয়ে,নিধি গলা খাঁকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’আসসালামু আলাইকুম আন্টি কেমন আছেন? নাদিয়া কোথায়?”

“নাদিয়ার মা রুনা বেগম সদর দরজার কাছে নিধি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন,’আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি মামনি।তুমি ভেতরে আসো।আর নাদিয়া
তো ঘুমাচ্ছে। যাও ওকে জাগিয়ে কান ধরে এখানে নিয়ে আসো।৭দিন যাবৎ রোবটের মতো মুখ করে থাকে।কারো সাথে ভালোভাবে কথা বলে না।আমি অনেকবার ওকে জিজ্ঞেস করেছি,ওর কি হয়েছে।কিন্তুু মেয়েটা কোনো কিছুই বলে না।দেখো তোমাকে কিছু বলে কি না।”

“রুনা বেগমের কথা শুনে,নিধি চিন্তিত মুখ নিয়ে বললো,’ওকে আন্টি আমি ওর কাছে যাচ্ছি।’বলেই দ্রুত পায়ে নাদিয়ার রুমে গেলো।দরজা ঠেলে রুমে ঢুকতেই দেখলো,নাদিয়া অর্ধ-শোয়া অবস্থায় ফুপিয়ে কাঁদছে।নাদিয়া কে এভাবে কাঁদতে দেখে, নিধির মন বিষন্ন হয়ে গেলো।নিধি তড়িঘড়ি করে নাদিয়ার কাছে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বললো,’কি হলো নাদিয়া এভাবে কাদঁছিস কেনো?আর তোর ফোন সুইচ অফ কেনো?”

“নাদিয়া নিধি কে দেখে প্রথমে ভূ’ত দেখার মতো চমকে গেলো।পরক্ষণেই স্বাভাবিক হয়ে নিধিকে অবাক করে দিয়ে
ওকে জড়িয়ে ধরে, আবারও নাক টেনে কেঁদে উঠলো।”

“নিধি নাদিয়ার পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,’ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে না কেঁদে,কি হয়েছে বলবি তো?”

“নাদিয়া নিধি কে ছেড়ে দিয়ে আসন করে বসে,হেঁচকি তুলে কেঁদে বিগত ৭দিনে ঘটে যাওয়া সবকিছু নিধি কে বললো।সবকিছু শুনে নিধি তো পুরো শকড হয়ে গেলো।নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’দিগন্ত ভাইয়া তো ভালো কোম্পানি তে জব করে।আর তার পরিবারও স্বচ্ছল।তাহলে তুই আন্টি কে প্রেমের বিষয়টি গোপন রেখে এটা বল, যে তোরা দু’জন দু’জন কে পছন্দ করিস।আর ইহান তোকে বিয়ের পর কানাডা নিয়ে যাবে,এটা তোর পছন্দ নয়।তুই এদেশেই থাকবি।’এভাবে বুঝিয়ে বল।”

“নাদিয়া নিধির মাথায় গাট্টা মে**রে বললো,’ঐ তোর মাথা টা গেছে নাকি?মা আমার বয়স পার করে এসেছে।আমি ইনিয়ে-বিনিয়ে মিথ্যা কথা বললাম,আর মা এতো সহজে বিশ্বাস করে নিবে?বোকা নাকি তুই?তারা আমাদের থেকে যেমন বয়সে বড়;তেমন তাদের বুদ্ধিও আমাদের থেকে অনেক প্রখর।”

“নিধি চিবুকে তর্জনী ঠেকিয়ে কিছু একটা ভেবে দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,’একটা জবরদস্ত আইডিয়া পেয়েছি।তুই তোর সেই বিখ্যাত টেকনিক ফলো করে,ইহান বেবির কাছে তোর আর দিগন্ত ভাইয়ার পিকচার পাঠা।তাছাড়া তোদের এমনিতেও তো কাপল পিক আছে।দেখবি ইহান বেপ্পি ওগুলো দেখে ছ্যাকা খেয়ে ব্যাঁকা হয়ে তোর পিছু ছেড়ে দিবে।আইডিয়া টা দারুণ না?”

“নিধির কথা শুনে নাদিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো।এভাবে ও কত মানুষের বিয়ে ভে**ঙে উপকার করেছে।অথচ নিজের বেলাতে এই চমলক্ক বুদ্ধি টা মাথায় আসেনি। নিজেকে নিজেই একবার ধি*ক্কার জানালো নাদিয়া।হাসি মুখে বললো,’এতো কিউট একটা বুদ্ধি দেওয়ার জন্য তোকে আমার পক্ষ থেকে ৪-৫টা সুইট ললিপপ খাওয়াবো বেপ্পি।”

“ললিপপের কথা শুনে নিধির জিহ্বায় জল চলে এলো।সাধারণত মেয়েরা যেখানে তেঁতুল দেখলে লোভ সামলাতে পারে না।সেখানে নিধি রাস্তায় কোনো বাচ্চা কে ললিপপ খেতে দেখলে, লোভ সামলাতে পারে না।খুশিতে টইটম্বুর হয়ে বললো,’ওকে.. ওকে আরও কোনো ঝাকানাকা টিপস লাগলে বলিস।আমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি তে ভরপুর।
নাদিয়ার সাথে কথা বলতে বলতে নিধি ভুলেই গেছিলো যে, ও এখানে কি উদ্দেশ্যে এসেছে।”

“হঠাৎ নিধির নির্জনের কথা মনে পড়তেই, চাঁদ মুখ টা মুহুর্তেই চুপসে এতটুকু হয়ে গেলো।নাদিয়ার দিকে ভ**য়ার্ত চাহনি নিক্ষেপ করে বললো,’দোস্ত নির্জন আমাকে লাভ লেটার দিয়েছে।”

“নাদিয়া নিধির সাথে কথা বলে টি-টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে, সবেমাত্র মুখে দিয়েছিলো।নিধির মুখে এহেন কথা শুনে, নাদিয়ার মুখ থেকে সব পানি নিধির মুখে গিয়ে পড়তেই,হকচকিয়ে উঠলো নিধি।কটমটিয়ে বললো,’এটা কি করলি?তোর বাসি মুখের পানি আমার ওপর ফেললি কেনো?শাঁকচুন্নি, পেঁচামুখী এখন আমার মুখের কি হবে?”

“নাদিয়া হাসি আটকে মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে অস্ফুটস্বরে বললো,’সরি দোস্ত কিভাবে কি হয়ে গেলো বুঝতে পারিনি। তুই ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।আমার একটা কালো রঙের ঝিকিমিকি ফেসওয়াশ আছে,ওটা দিলে তোর মুখমন্ডল চকচক করবে।”

“নাদিয়া বলতেই,নিধি এক দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো।তারপর নাদিয়া কে শপিংমলে নির্জনের ধা”ক্কা দেওয়া,সেই র**ক্ত*মাখা প্রথম চিঠি,চলনবিলে নির্জনের ওকে নদীতে ধা”ক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া,জঙ্গলে নির্জনের ওর পিছু নেওয়া,ছু**রি দিয়ে নির্জনের হাত কে**টে ১৩টা বাজানো,আর গতকাল রাতের সেই প্রেমপত্রের নামে হু**মকি পত্র..সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে নাদিয়া কে বললো।”

“সবকিছু শুনে নাদিয়ার কোমায় যাওয়ার মতো অবস্থা হলো।নাদিয়া কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে বললো,’এতো দেখি বহুরূপী মানুষ!বাবারে কি সাং**ঘাতিক লোক!নির্জন ভাইয়া কে দেখলে তো মনে হয়, ভাজা মাছ বেছে খেতে পারেনা।কি সুন্দর চার চক্ষুওয়ালা ইনোসেন্ট চেহারা।অথচ ভেতরে ভেতরে এই কাহিনী?দিগন্ত ঠিকই বলেছিলো,নির্জন ভাইয়া ভীষণ ডে”ঞ্জারাস টাইপ ছেলে।’বলে নিধি কে বললো,’এখন কি তুই তার চিঠির উত্তর দিবি?নাকি বিষয়টি আঙ্কেল-আন্টি কে জানাবি?”

“নিধি চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,’বাবা-মা কে বললে তারা শুধু শুধু চিন্তা করবে।তবে লোকটা সেদিন চাইলেই, ওই গহীন জঙ্গলে আমার সম্ভ্রমহানি করতে পারতো।কিন্তুু সেটা না করে আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়েছে।তবে আমার প্রতি এতোগুলো টর্চার করার জন্য,ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আমিও তার হাত কে**টে,নদীতে ধা”ক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম।কিন্তুু উনি যে এভাবে আমায় প্রপোজ করবে, সেটা সত্যি ভাবিনি।বুঝতে পারছি না কি করবো।”

“নাদিয়া একটু ভেবে বললো,’আচ্ছা তোর হাত কা**টার জন্য, উনি আবার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নতুন কোনো ফন্দি আঁটে নি তো?যেই ডে”ঞ্জারাস লোক!”

“উমম চিঠি দেখে এমন টা মনে হলো না।দুষ্টুর লিডার আমি,,ওইরকম হলে আমি বুঝে যেতাম।আর লোকটা কে দেখে মনে হয় না, সে এই বিষয়টি নিয়ে মজা করবে।”

“নাদিয়া দুষ্টু হেসে নিধির কাঁধে আলতো করে ধা”ক্কা দিয়ে বললো,’বান্দুপি এর মানে কুছ কুছ হোতা হ্যায়।”

———
“বিকাল ৫টায় অফিস শেষ করে, প্রায় ১ঘন্টা যাবৎ নির্জনের অফিসের সামনের রাস্তার এক সাইডে শঙের মতো দাঁড়িয়ে আছে দিগন্ত।আজ সে পণ করেছে, যেভাবেই হোক নির্জনের সাথে দেখা করবে।নির্জন কেনো তার ফোন রিসিভ করছে না,তার জন্য কড়া জবাবদিহি করতে হবে।’কথাগুলো ভাবতেই,নির্জন অফিসের গেটের বাইরে আসতেই,দিগন্তের চোখে-মুখে খুশির ঝলক দেখা গেলো।তবে তৎক্ষণাৎ সেটা লুকিয়ে ফেললো।খুশিটা বাইরে প্রকাশ না করে,নির্জনের মতো গম্ভীর রূপ ধারণ করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো দিগন্ত।”

“নির্জন গেটের বাইরে আসতেই তার চোখ জোড়া আটকে গেলো, অপরপাশের রাস্তায় রোবটের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকা ফরমাল ড্রেস পরিহিত প্রিয় মানুষটির দিকে।নির্জন ঠোঁটের কোণা হালকা প্রসারিত করে, রাস্তা ক্রস করে দিগন্তের সামনে গিয়ে বললো,’কিরে কেমন আছিস?এখানে এভাবে দাঁড়াশ কাঠির মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?মনে হয় স্কুলের মাঠে দাঁড়িয়ে আরামে দাঁড়ানোর প্রস্তুুতি নিচ্ছিস।”

“দিগন্ত ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,’শা**লা ফোন না ধরে আমার সাথে মজা নিচ্ছিস?কতবার তোকে ফোন দিয়েছি,ধরিস নি কেনো?”

“দিগন্তের কথা শুনে নির্জনের মুখের ভঙ্গিমা পরিবর্তন হয়ে গেলো।সেতো নিধির জন্য চিঠি লেখা এবং অফিসের কাজে এতটাই ব্যস্ত ছিলো, যে নতুন কেনা বাটন মোবাইল ধরার সময় পায় নি।আর নতুন কেনা এন্ড্রয়েড সেটের নাম্বার দিগন্তকে দেয়নি।এর থেকেও সবচেয়ে বড় কথা হলো,নিধির ভাবনায় নির্জন এতোটাই বিভোর হয়েছিলো,যে দিগন্তের কথা তার মস্তিষ্কেই আসেনি।কিন্তুু এই কথা যদি দিগন্ত শোনে ,তাহলে ভীষণ কষ্ট পাবে।”

“একমনে কথাগুলো ভেবে নির্জন কপালে আসা চুল গুলো ডান হাত দিয়ে একপাশে সরিয়ে বললো,
“দোস্ত সরি রে..আসলে আমার বাটন ফোন টা আমি সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম।আর তোকে এন্ড্রয়েড সেটের নাম্বার দিতে ভুলে গেছি।তাই ফোন রিসিভ করতে পারিনি।আর তাছাড়াও একটা ঘটনা ঘটে গেছে।”

“দিগন্ত অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কি ঘটনা?”

“আগে তোর টা বল।আমি জানি,তুই নিশ্চয়ই কিছু বলার জন্য আমার অফিসের সামনে এসেছিস।নাদিয়ার সাথে কিছু হয়েছে?”

“দিগন্ত এইজন্যই নির্জন কে এতটা ভালোবাসে।চেহারা দেখে কিভাবে মনের কথা বুঝে ফেললো;বেস্টফ্রেন্ড বলে কথা।অবশ্য দিগন্ত শত চেষ্টা করেও,এই বহুরূপী মানুষটা কে বুঝতে পারেনা।তবে নির্জন কে মন থেকে খুব ভালোবাসে।”

“দিগন্ত বললো,’চল রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি।”

“আরে হাঁটবো কেনো?আমার বাইক আছে তো।চল বাইকে উঠে বস।তারপর তোর বকবক শুরু কর।’বলেই নির্জন পার্কিং এরিয়া থেকে বাইক নিয়ে আসলে, দু’জনে বাইকে উঠলো।
দিগন্ত নির্জন কে সব কষ্টের কথা খুলে বললো।”

“বেচারা দিগন্তের এই করুণ পরিস্থিতি দেখে, নির্জনের কিছুটা খারাপ লাগল।এই ক্ষেত্রে নির্জন হলে কোনো বি**ভৎ*স প্ল্যান তৈরি করতো।কিন্তুু নির্জনের অদ্ভুত টিপস কখনোই দিগন্ত গ্রহণ করবে না।তাই গম্ভীর কন্ঠে বললো,’তুই এক কাজ কর,নাদিয়ার কাছ থেকে ইহানের নাম্বার নিয়ে ওকে সব বুঝিয়ে বল।তারপর যদি না মানে,তাহলে নাদিয়া রাজি থাকলে পালিয়ে বিয়ে করবি।কয়েকদিন তোদের দু’জনের বাবা-মা কান্নাকাটি করে,তোদের ঘরের বাইরে বের করে দিবে।কিছুদিন গেলে দেখবি,তারা ঠিক মেনে নেবে।বাবা-মায়েরা এমনই হয়।হুম আমি জানি,কাজ টা মোটেও ঠিক হবে না।তাহলে তোদের দু’জনের বাবা-মা খুব কষ্ট পাবে।তবে এ ছাড়া তো কোনো গতি নেই।বাবা-মায়ের সাথে তোর র**ক্তের সম্পর্ক কখনোই ছিন্ন হবে না।কিন্তুু সবচেয়ে প্রিয় কাছের মানুষ টি কে হারিয়ে ফেললে,সারাজীবন আফসোস করলেও তাকে ফিরে পাবি না।তুই আঙ্কেল-আন্টি কে আগে বিষয়টি বুঝিয়ে বল।তারা যদি না মানে,তাহলে ওটাই কর।তবে মনে রাখিস,নাদিয়াকে ভালোভাবে ব্রেইন ওয়াশ করতে হবে।যদি সে না শোনে,তাহলে নেক্সট প্ল্যান তোকে বলবো।”

“দিগন্ত খুশি হয়ে বললো,’এই জন্যই তোর কাছে এসেছি।আমি জানতাম, তুই পারবি আমাকে সঠিক বুদ্ধি দিতে হিহিহি।’দুই বন্ধু কথা বলতে বলতেই নির্জন দিগন্তের বাসার সামনে ব্রেক কষলো।এতে দিগন্তের শরীর কিছুটা নির্জনের ওপর ঝুঁকে পড়তেই,রেগে গেলো নির্জন। মুহূর্তেই তার চোখ জোড়া র**ক্তিম বর্ণ ধারণ করলো।দিগন্ত বাইক থেকে নামতেই,নির্জন হেলমেট খুলে কপালে চার আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে, দিগন্তের শার্টের কলার ধরে ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
‘নেক্সট টাইম আমার শরীরের সাথে ভুল করেও ঘেঁষতে আসবি না।তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।এই শরীর এবং মন শুধু আমার ডার্ক কুইনের দখলে থাকবে,মাইন্ড ইট।’বলেই হেলমেট পড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে,দ্রুত গতিতে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।”

“আকস্মিক ঘটনায় দিগন্ত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।বাচ্চাদের মতো ঠোঁট জোড়া উল্টে বললো,’যাহ!আমি আবার কি করলাম?ও নিজেই তো খুব জোরে ব্রেক কষলো আর ওর পিঠের সাথে আমার শরীরের কিঞ্চিৎ ঘর্ষণ হলো।এতে আমার কি দোষ?আর এই ডার্ক কুইন টা কে?একটু আগে তো বললো, ‘কি যেন একটা ঘটনা ঘটেছে।আমি তো নিজের টা বলতে গিয়ে ওরটাই শুনলাম না।”

———–
“এদিকে রাত ৮টার দিকে ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে,কানে হেডফোন গুজে তোহা মাহিরের সাথে কথা বলছে।মাহির একের পর এক কথা বলে যাচ্ছে, আর তোহা শুধু মুগ্ধ হয়ে শুনে যাচ্ছে।”

“তোহা কে এতো নীরব থাকতে দেখে মাহির বললো,’নিজে থেকে ফোন দিয়েছেন কি আমার বকবক শোনার জন্য?আপনার ভান্ডারে কি কোনো শব্দ নেই?”

“তোহা লাজুক হেসে কোমল স্বরে বললো,’আপনাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।”

“ওম্মা এটা কি শুনলো মাহির!নিজের কান কেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছেনা।নিজের হাতে একটা চি”মটি কে**টে বললো,’কি বললেন?শুনতে পাইনি।আবার বলুন প্লিজ।”

“তোহা বললো,’যখন বলতে শুরু করবো,তখন আপনার ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ এইরকম অবস্থা হবে।তাই বিয়ের আগ পর্যন্ত আপনি বলতে থাকুন;আমি শুনি।”

“মাহির অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’সত্যি তুমি এতো কথা বলতে পারো?
উফফ সরি!তুমি বলে ফেললাম।”

“তোহা মুচকি হেসে মুখ ভেং**চি কে**টে বললো,’হয়েছে হিরোদের মতো এতো ঢং করতে হবে না।আমি জানি,আপনার আমাকে ‘তুমি’ করে বলার জন্য মন
আঁকুপাঁকু করছিলো।বলতে পারেন,আমি আপনার অনেক ছোট।আমি কিছু মনে করবো না।”

“মাহির তোহার সম্মতি পেয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো।মনে মনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই ‘অপরিচিতা’ গল্পের শেষ লাইনটি বললো,’এই তো জায়গা পেয়েছি।”

—–
“তোহা ছাদের এক কোণে কানে হেডফোন গুজে, দাঁড়িয়ে মাহিরের সাথে কথা বলছে আর নিধি ডাইনিং রুম থেকে তোহা কে ডাকতে ডাকতে কন্ঠনালী ফাটিয়ে ফেলছে।বিরক্ত হয়ে নিধি নিজের রুমে ঢুকতেই দেখলো, বেলকনির ফ্লোরে আরেকটা চিঠি পড়ে আছে।নিধির এইবার বুঝতে দেরি হলো না চিঠিটি কার।কাঁপা কাঁপা হাতে নিধি চিঠি নিয়ে ভাজ খুলে, আবারও সেই র**ক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখলো।বক্ষ মাঝে হাত রেখে, শুকনো ঢোক গিলে পুরো চিঠিটা পড়লো।এক পৃষ্ঠার চিঠিতে প্রায় ১৫টি লাইনে ধাপে ধাপে রোমান্টিক কবিতা দিয়ে পূর্ণ করা।আর শেষে একটি ফোন নাম্বার দেওয়া।নিধি বুঝে গেলো, এটা নির্জনের ফোন নাম্বার।”

——-
“নিধিকে চিঠি দিয়ে, নির্জন তার বাসায় এসে ডিম লাইটের র**ক্তিম আলোতে ‘মন’ কে জিজ্ঞেস করলো, ‘মন এটা তো আমার দ্বিতীয় চিঠি।ধরো, ৩০টি চিঠি ডার্ক কুইন কে দিলাম।এরপরেও যদি সে রাজি না হয়,তখন কি করবো?”

“মন তৎক্ষনাৎ দুষ্টু হেসে বললো,’এতোকিছু করার পরেও যদি সে তোমার না হয়;তাহলে তাকে শেষ করে ফেলবে,সিম্পল।”

#চলবে….

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“মন তৎক্ষনাৎ দুষ্টু হেসে বললো,’এতোকিছু করার পরেও যদি সে তোমার না হয়;তাহলে তাকে শেষ করে ফেলবে,সিম্পল।”

“নির্জন ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,’ভালোবাসার মানুষ কে শেষ করে ফেলতে তো আমার হাত কাঁপবে।তুমি মজা করছো আমার সাথে?”

“মন বললো,’একি নির্জন তুমি দেখছি নিধির প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছো।তুমি তো দেখছি প্রতিনিয়ত নিজেকেই ভুলে যাচ্ছো।নিজের প্রতি এতটা কেয়ারলেস হলে,পরবর্তীতে তোমাকেই পস্তাতে হবে।”

“হঠাৎ করে ‘হৃদয়’ কপট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো,’নির্জন তুমি আমার কথা একটু বোঝার চেষ্টা করো।মনের দুষ্টু বুদ্ধিগুলো অগ্রাহ্য করে, ইতিবাচক দিকে ধাবিত হও।সে যদি তোমার না হয়,তাহলে কেনো তাকে শেষ করে ফেলবে?সেও তো তোমার মতোই একজন র**ক্তে মাংসে গড়া মানুষ।তার ভেতরেও একটা মন আছে।আর তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমার তাকে জোর করা উচিত হবে না।ভালোবাসা আসে মন থেকে।আগে তোমার প্রতি তার মনে ভালোবাসা জাগ্রত করো,তারপর দেখো সে কি করে।ধৈর্যের ফল সর্বদা মিষ্টি হয়।”

“এদিকে ‘মন’ ক্ষিপ্ত স্বরে বললো,’নির্জন একদম ওর কথা শুনবে না।তুমি শুধু আমার কথা শুনবে।”

“নির্জন তার দিব্যশক্তি দিয়ে তাকিয়ে ‘হৃদয়’ কে বললো,’আমার কাছে তোমার কথাটা ভালো লেগেছে।আমার মনে হচ্ছে এই ভালো লাগাটা ‘অবচেতন মন’ সৃষ্টি করেছে তাই না?”

“এই প্রথম হৃদয়ের কথায় নির্জন এতটা গুরুত্ব দিলো।হৃদয় খুশি হয়ে, নির্জন কে বিশুদ্ধ ভাবে শ্বাস গ্রহণ করতে সুবিধা করে দিলো।মুচকি হেসে বললো,’হুমম ঠিক ধরেছো।কারণ ‘মন’ তোমাকে আমার কথা কখনোই ভালোভাবে ভাবাবে না।এটা ‘অবচেতন মনের’ কাজ।তবে আমি এটা বলব না যে ‘মন’ সবসময় নেতিবাচক উপদেশ দেয়।তবে মনের মধ্যে শ**য়তানের বসবাস স্থায়ী।”

“নির্জন তার চিবুকে তর্জনী ঠেকিয়ে বললো,’ওকে ডার্ক কুইন কে আমি ৩০ টারও বেশি চিঠি দিবো।দেখবো সে রাজি না হয়ে থাকে কিভাবে।”

“হৃদয় এবং নির্জনের এহেন কথা শুনে ‘মন’ রেগে গিয়ে বললো,’তুমি থাকো তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড ‘হৃদয়’ কে নিয়ে।বিপদে পড়লে প্রথমে তো আমাকেই ডাকো,এখন ‘হৃদয়’ তোমার বেশি আপন হয়ে গেলো তাই না?”

“নির্জন ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,’মন তুমি বড়ই অকৃতজ্ঞ।তুমি কি জানো না,হৃদয়ে স্পন্দন না হলে তুমি আর আমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতাম?তখন কিন্তুু আমরা নিজেদের মধ্যে এতো কথপোকথনও করতে পারতাম না।যাইহোক,হৃদয়ের কথা আমার ভালো লেগেছে।আমি আমার ডার্ক কুইনের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ধৈর্য ধারণ করবো।আমাদের মিটিং এখানেই সমাপ্ত করা হলো।”

——-
“এদিকে নির্জনের দেওয়া ২য় চিঠিটি প্রায় ১ঘন্টা যাবৎ হাতে নিয়ে বসে আছে নিধি।তোহা মাহিরের সাথে দুষ্টু-মিষ্টি কথা বলে এসে নিধি কে এভাবে সোজা হয়ে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেলো।হঠাৎ তোহার চোখ জোড়া আটকে গেলো নিধির হাতের মুঠোয় থাকা ধবধবে সাদা একটি কাগজে।”

“তোহা সেদিকে তাকিয়ে নিধির কাছে গিয়ে বললো,’আপু উনি কি আবারও তোমাকে চিঠি দিয়েছে?”

“তোহার কথায় নিধির ধ্যান ভা**ঙলো।আনমনেই বলে উঠলো,’হুম।”

“এখন কি হবে আপু?এক কাজ করো, চিঠিটা বাবা কে দেখাও।বাবা দেখলে লোকটা কে ডেকে কড়া সুরে কয়েকটি বাক্য শুনিয়ে দিলেই কাজ হয়ে যাবে।এর আগেও তো তোমাদের ক্যাম্পাসে একটা ছেলে তোমায় ৩টা চিঠি দিয়েছিলো।তুমি তো বাবা কে দেখিয়ে তাকে উত্তম-মধ্যম দিয়েছো।চলো বাবার কাছে চিঠি টা দিয়ে আসি।’বলেই তোহা নিধির হাত টান দিলো।কিন্তুু নিধি এক চুল পরিমাণ নড়ল না।আরও শক্ত হয়ে বসলো।”

“তোহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’একি আপু তুমি উঠছো না কেনো?তুমি কি যাবে না?”

“নিধি ফ্লোরে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে বললো,’নাহ!”

“কেনো যাবে না?”

“এমনি যাবো না।লোকটা তো আমার কোনো ক্ষতি করছে না;শুধু চিঠিই দিচ্ছে।ক্যাম্পাসের ঐ ছেলেটার চিঠি পড়তে তো আমার দাঁত ভে**ঙে যাচ্ছিলো।এতো পরিমাণে অগোছালো লেখা,সেই সাথে বানানে প্রচুর ভুল।এই লেখা নিয়ে কিভাবে পাশ করলো কে জানে।যদিও আরেকটা ছেলে খুব সুন্দর করে চিঠি লিখেছিলো।কিন্তুু অতিরিক্ত হাদারাম বলে রিজেক্ট করে দিয়েছি।”

“তোহা বিছানার এক কোণে বসে বললো,’আপু সত্যি করে বলোতো, তুমি কি নির্জন ভাইয়ার প্রেমে পড়ে গেছো?না মানে..তাহলে তো আমার তাকে হবু দুলাভাই ডাকতে হবে।”

“নিধি কটমটিয়ে তোহার কান টেনে বললো,’ডাক্তার সাহেবের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর,বেশি পাকা পাকা কথা বলছিস তাই না?আমি কি একবারও বলেছি,আমি ঐ অ্যাটম বো**ম,গম্ভীর লোকের প্রেমে পড়েছি?তবে লোকটার প্রেম পত্র টি বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে।একদম ইউনিক স্টাইল।পুরো কাগজে র**ক্তের ছোপ ছোপ দাগ, সেই সাথে স্পষ্ট ভাষায় নির্ভুল চিঠি।প্রথমে ভয় লাগলেও এখন ভালোই লাগছে।”

“তোহা দুষ্টু হেসে বললো,’এইবার বুঝেছি।এই জন্যই তো তুমি বাবা কে জানাতে চাওনি।তবে দুলাভাইয়ের চিঠি দেখে মনে হচ্ছে, সে কিছুটা সাইকো টাইপের;যেমন টা তুমি চাও।”

“নিধি নির্জনের সাথে ঘটা পুরনো স্মৃতি ভেবে ঠোঁট টিপে হেসে বললো, ‘একদম ঠিক বলেছিস।চিঠি লেখার ধরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে, সে কিছুটা সাইকো ক্যাটাগরির।তবে মাত্র ২টা চিঠি পেয়ে,এতো সহজে আমি তার কাছে ধরা দেবো না।আরেকটু পিছু ঘুরিয়ে তারপর ভেবে দেখবো।”

“তোহা মুচকি হেসে বললো,’যাক অবশেষে আমার বড় বোন নিধি আপুর মনেও প্রেমের ফুল ফুটলো।সাইকো
দুলাভাইয়ের সাইকো বউ।উফফ.. তোমাদের দু’জন কে দারুণ মানাবে হিহিহি।”

———-
“এদিকে নাদিয়া দিগন্ত কে চুপিচুপি ইহানের ফোন নাম্বার ম্যাসেজ করে দিয়েছে।দিগন্ত ইহানের সেই নাম্বার টিতে অনেকবার কল দেওয়ার চেষ্টা করেছে; কিন্তুু কোনোভাবেই কল যাচ্ছে না।আর নাদিয়ার সাথেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।দিগন্ত দিক-বিদিকশুন্য হয়ে তার মা-বাবার কাছে নাদিয়ার ব্যাপারে সবকিছু খুলে বললো।”

“দিগন্তের মুখে নাদিয়ার বংশপরিচয় সম্পর্কে সবকিছু শুনে, দিগন্তের বাবা-মা হাসি মুখে রাজি হয়ে গেলো।দিগন্ত কে অবাক করে দিয়ে দিগন্তের বাবা রাজ্জাক হাসান বললেন,’আগামী শুক্রবার তিনি নাদিয়াদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবেন।”

“বাবার মুখে এমন অপ্রত্যাশিত বাণী শুনে,দিগন্ত মনে হয় আকাশের চাঁদ হাতে পেলো।মুহূর্তের মধ্যেই তার বিষন্ন চেহারায় মুক্ত হাসির রেখা ফুটে উঠলো।খুশি হয়ে তৎক্ষনাৎ সে তার বাবা কে জড়িয়ে ধরে বললো,’থ্যাংক ইউ,থ্যাংক ইউ,থ্যাংক ইউ সো মাচ বাবা।তুমি আমার বেস্ট বাবা।”

“দিগন্ত কে এতো খুশি হতে দেখে দিগন্তের মা বললেন,’আরে আমার ছেলে তো দেখছি বিয়ের খুশি তে লাফাতে শুরু করেছে।চিন্তা করিস না,নাদিয়াদের বাসায় গিয়ে আমি আর তোর বাবা তাদের কে সবকিছু বুঝিয়ে বলবো।তাছাড়া তুই তো খুব ভালো একটা জব করিস।তোর বংশপরিচয় ওদের থেকে কোনো অংশে কম নয়।তুই এতো টেনশন না করে অফিসের কাজে মন দে।আমরা এইদিক টা দেখছি।”

“দিগন্ত খুশিতে গদগদ হয়ে,দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলো।তারপর নির্জন কে ফোন করলো।নির্জন কল রিসিভ না করায়,ফোনে ম্যাসেজ করে পুরো বিষয়টি বললো।আজ যেনো সব খুশিরা দিগন্তের মাঝে জেগে উঠেছে।”

———–
“সময় চিরবহমান।দেখতে দেখতে কে**টে গেলো ২৮দিন।আগের ২টা চিঠি মিলিয়ে এই কয়দিনে রাত সাড়ে ১১টার দিকে, নির্জন নিধিকে মোট ৩০টি চিরকুট দিয়েছে।আর প্রতিটি চিঠির শেষে নির্জনের ফোন নাম্বার লিখে দিয়েছে।”

“নিধি প্রতিদিন এই সময়ে ফ্রী হয়ে,নির্জনের চিঠির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছে।যখনই নির্জন সেই র**ক্তমাখা অদ্ভুত চিঠি দিতো;নিধি অবাক হয়ে সেই চিঠির প্রতিটি লাইন মনযোগ দিয়ে পড়তো।নিধি নির্জনের চিঠি গুলো সযত্নে রাখার জন্য বেবি পিংক কালার একটা ঝুড়ি কিনেছে।সেটাতেই নির্জনের ৩০টি চিঠি ভাজ করে রাখা আছে।নিধির যখন মন চায়,তখনই একেকটা চিঠির ভাজ খুলে পড়ার টেবিলের ওপর দুই হাত ভর দিয়ে,দুই গালে হাত রেখে মনযোগ দিয়ে পড়ে।ঐ মুহূর্তে নিধি কে দেখলে মনে হবে,সে মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে; আর ফাইনাল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুুতি নিচ্ছে।”

“তোহার মাহিরের সাথে কথপোকথন অনেক টা বৃদ্ধি পেয়েছে।মাহির তোহার কথা অনুযায়ী ৩মাস পর বিয়ের ডেট ঠিক করতে রাজি হয়েছে।মাহিরের রিকোয়েস্টে ওরা দু’জনে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে ইশারায় কথপোকথন করেছে।তোহা লং গাউন এবং হিজাব পড়ে, মুখে মাস্ক পড়েছিলো।মাহির তোহা কে ইশারায় মাস্ক খুলতে বলেছিলো।কিন্তুু তোহা লজ্জায় চোখজোড়া দিয়ে ‘না’ বোধক ইশারা দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেছে।”

“তোহা যে হেসেছে, সেটা ওর চোখ জোড়া দেখেই মাহির বুঝেছে।কারণ মানুষ হাসলে,তার চক্ষুদ্বয় অটোমেটিক প্রসারিত হয়।”

“অপরদিকে,দিগন্তের বাবা-মা নাদিয়াদের বাসায় এই পর্যন্ত ২বার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেছে।কিন্তুু তারা ২বারই নাকচ করে দিয়েছে।আর নাদিয়াকে ওর বাবা-মা অনেক কটু কথা শুনিয়েছে। বেচারি নাদিয়ার চোখের অশ্রু ঝরতে ঝরতে,চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেছে।কিন্তুু এতে নাদিয়ার বাবা-মায়ের মন কিঞ্চিৎ পরিমাণ বিগলিত হয় নি।তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড়।আগামী সপ্তাহে ইহান বাংলাদেশে এলে,৩দিনের মধ্যে ওদের বিয়ের কার্য সম্পন্ন হবে।”

“নাদিয়ার পরিবার ২বার রিজেক্ট করাতে, দিগন্তের বাবা-মা বেঁকে বসেছেন।এতো অপমান তারা কিছুতেই হজম করতে পারছেন না।তাদের ছেলে সব দিক থেকে পার্ফেক্ট। তবুও কেনো তাদের কে ফিরিয়ে দেওয়া হলো?তাই রাজ্জাক হাসান দিগন্ত কে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন,তিনি আর নাদিয়াদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবেন না।”

“সবকিছু শুনে দিগন্ত আজ ৩দিন যাবৎ অফিসে না গিয়ে,না খেয়ে দেবদাসের মতো নিজেকে ঘরবন্দী করে নিয়েছে।নির্জন দিগন্ত কে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে।কিন্তুু নাদিয়া কোনোভাবেই পালাতে রাজি নয়।কারণ ও ওর বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।সন্তান ১টা হোক বা ১০টা হোক,সব সন্তান কে বাবা-মা ছোটবেলা থেকে খুব কষ্ট করে লালন-পালন করে।তাই বাবা-মায়ের মুখে চুনকালি মেখে, নাদিয়া এই কাজ কিছুতেই করতে পারবে না।এই নিয়ে দিগন্তের সাথে নাদিয়ার অনেক কথা কা**টা*কা**টি হয়েছে।কিন্তুু নাদিয়া ওর সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে।”

“দিগন্ত সবকিছু নির্জন কে বলেছে।কিন্তুু নির্জন কিছু একটা ভেবে বলেছে,’যখন ইহান বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখবে,তখন যেনো দিগন্ত নির্জন কে বিষয়টি জানায়।
নির্জনের কথা শুনে,মন ভা**ঙা দিগন্ত কোনো প্রশ্ন না করে মাথা নেড়ে ‘হুম’ শব্দ করে সায় জানিয়েছে।”

————-
“একাধারে ৩০টি চিঠি পাওয়ার পরেও,এখন পর্যন্ত কোনো চিঠির উত্তর দিলো না নিধি।নিধির এহেন কার্যে স্তব্ধ হয়ে গেছে নির্জন।নিধির জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলে, হয়তো এতক্ষণে পটে যেতো।কিন্তুু এ কেমন নিষ্ঠুর হৃদয়ের নারী!’
কথাগুলো একমনে বিড়বিড় করছে নির্জন।হঠাৎ ভেতর থেকে ‘মন’ বলে উঠলো,’আমার কথা তো শুনলে না।এখন আর কি করার, বসে বসে দেবদাস হওয়ার পরিকল্পনা করো হুহ..।”

“মনের কথার পরিপ্রেক্ষিতে নির্জন কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলো।বিড়বিড় করে বললো,’তাহলে এতোদিনের অক্লান্ত সাধনা সব বিফলে চলে গেলো?”

———
“কে**টে গেলো ৫দিন।এই ৫দিন নির্জন নিধিকে চিঠি দেয় নি।কারণ সে অফিসের কাজে ভীষণ ব্যস্ত।অফিস থেকে রাতে দেরি করে বাসায় ফিরে,আবারও ল্যাপটপে কাজে বসতে হতো।তবে নিয়ম করে সে তার ডার্ক কুইন কে প্রতিদিন অসংখ্যবার মনে করেছে।কিন্তুু শুভ্র কাগজে কলমের কালি লেপ্টে দেওয়া হয়নি।”

“এদিকে টানা ৫দিন যাবৎ অধীর আগ্রহে নির্জনের চিঠির অপেক্ষায়, প্রতিদিন রাত সাড়ে ১১টায় বেলকনির দোলনায় বসেছিলো নিধি।কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করার পরেও নির্জনের চিঠির দেখা মেলেনি।নির্জনের চিন্তায় নিধির চেহারায় নেমে এসেছে একরাশ বিষন্নতা।বিষয়টি নজর এড়ায়নি তোহার।”

“তোহা নিধি কে বললো,’আপু তোমার কি কোনো কারণে মন খারাপ?গতকাল রাতে দেখলাম,বেলকনির দোলনায় বসে ঘুমিয়ে গেলে।কি হয়েছে বলোতো?”

“নিধি বিছানায় বসে নির্জনের কথা ভাবছিলো।তোহার এহেন প্রশ্নে নিধি তোহার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’সে কি আমাকে ভুলে গেছে তোহা?সে তো ৫দিন যাবৎ কোনো চিঠি দিচ্ছে না।এতটুকুতেই হাঁপিয়ে গেলো?”

“তোহা কিছু একটা ভেবে বললো,’আপু অলরেডি ৩০টি চিঠি তো দিয়েছে।তাকে আর কতো ঘুরাবে?সবকিছুরই একটা লিমিট থাকে।তুমি তো বলেছো,যে সে প্রতিটি চিঠির নিচে তার ফোন নাম্বার দিয়েছে।তুমি এক কাজ করো,তুমি তাকে ফোন দাও।তারপর তার সাথে তোমার মনে জমে থাকা কথাগুলো বলো।হয়তো এতগুলো চিঠি দেওয়ার পরেও,তোমার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে,সেও অভিমান করেছে।”

“নিধি বসা থেকে হঠাৎ করেই দাঁড়িয়ে গিয়ে তোহাকে জড়িয়ে ধরে বললো,’তুই ঠিক বলেছিস,সে হয়তো আমার সাথে অভিমান করেছে।তাই তো কোনো চিঠি দিচ্ছে না।আমি তাকে এখনই ফোন দিবো।’বলেই ঝুড়ি থেকে একটা চিঠি নিয়ে ভাজ খুলে নির্জনের দেওয়া নাম্বারটিতে ডায়াল করতেই,অপরপাশ থেকে মিষ্টি স্বরে কর্ণকুহরে একটি নারী কন্ঠস্বর ভেসে এলো,’দুঃখিত!এই নাম্বারে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।অনুগ্রহ করে একটু পরে আবার চেষ্টা করুন,ধন্যবাদ।”

“একাধারে ৪বার ডায়াল করার পর, একই কন্ঠস্বর শুনে নিধির কান টা মনে হয় তিক্ত হয়ে গেলো।বিরক্তিতে ভ্রু জোড়া কুঁচকে তোহা কে বললো,’তার ফোন টাও তো বন্ধ।এখন কি করি?কেনো যে এতোদিন ভাব দেখাতে গেলাম!এর আগেই যদি রাজি হয়ে যেতাম,কতো ভালো হতো!ধ্যাত,ভালো লাগেনা।’

“কে**টে গেলো আরও একটি দিন।রাত সাড়ে ১১টায় নিধি বেলকনির দোলনায় নির্জনের চিঠির অপেক্ষায় বসে আছে।মূলত এটা ওর অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।নিধি নির্জনের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবে,এইসব বিষয়ে ভাবছে।তখনই নিধি ফ্লোরে কিছু পড়ার আওয়াজ পেয়ে মুখ তুলে তাকালো।দোলনা থেকে উঠে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।তারপর ফ্লোরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই থমকে গেলো নিধি।আবারও সেই চার কোণায় ভাজ করা চিঠিটি দেখে, খুশিতে আত্মহারা হয়ে নেত্রকোণায় কিছুটা জল চলে এলো নিধির।এ যেন টানা ৫ দিনের প্রতীক্ষার ফল।নিধি ফ্লোরে বসে এমন ভাবে চিঠিটি হাতে নিয়ে বুকের মধ্যে জাপটে ধরলো,যেন সে কতদিনের অনাহারী।”

“নিধি তড়িঘড়ি করে চিঠিটি খুলে র**ক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখে, একবার আলতো করে পুরো চিঠিতে হাত বুলালো।সবার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ একরকম নয়।নির্জনের টা হয়তো সবার থেকে ব্যতিক্রম।নিধি এখন আর এই র**ক্তা*ক্ত চিঠি কে ভয় পায় না।সে এটাতেই অভ্যস্থ হয়ে গেছে।বরং চিঠিতে র**ক্তের ছোপ ছোপ দাগ না থাকলেই,হয়তো নিধি অবাক হয়ে যতো।নিধি চিঠিটি বিড়বিড় করে পড়তে থাকল,

“ডার্ক কুইন..কেমন আছো তুমি?জানো, এই ৫দিন অফিসের কাজের প্রেশারে তোমায় চিঠি লেখার সুযোগ হয়ে ওঠে নি।তবে নিয়ম করে প্রতিদিন তোমায় অসংখ্যবার মনে করেছি।আমার আঁধারের রানী কে আমি কি ভুলে থাকতে পারি?আজ আমার ৩১তম চিঠিতেও কি তোমার উত্তর পাবো না?তুমি আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছো?নাকি বিগত দিনে তোমার সাথে আমার করা কাজগুলোর জন্য প্রতিশোধ নিচ্ছো?তবে তুমি যাই ভাবো না কেনো,আমি কিন্তুু তোমারই আছি আর তোমারই থাকবো।

“তোমার বুকের অন্তঃকরণে
আমার বসবাস,
আমার এই বক্ষগহ্বরে
তুমি আমার শ্বাস,
তোমার অগভীর হৃদ-মাঝারে
চলবে আমার ত্রাস…”

ইতি তোমার পা**গল প্রেমিক পুরুষ
নির্জন
—————
“শেষ..আজ অর্ধ পৃষ্ঠায়, কয়েকটি লাইনে চিঠিটি শেষ হয়ে গেলো।চিঠিতে লেখা ছিলো কয়েকটি প্রশ্ন,কিছু গোছানো বাক্য।শেষে হৃদয় নিংড়ানো কবিতার কয়েকটি লাইন।তবুও নিধি ৭-৮বার চিঠিতে চোখ বুলিয়ে বিড়বিড় করে পড়তে থাকল।এলোমেলো চুলে কান্নারত অবস্থায় নিধিকে এভাবে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে, যদি কেউ পড়তে দেখতো।তাহলে নিশ্চিত নিধির একটা নাম
হয়ে যেতো ‘পাগলনি’।”

“নিধি নির্জনের একটি র**ক্তমাখা চিঠি বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে নাক টেনে গেয়ে উঠলো,

🎶চিঠি লিখেছে প্রেমিক আমার
র**ক্তমাখা হাতে,
বাত্তি জ্বালাইয়া,নিভাইয়া
জোছনা জোছনা রাতে..🎶

“তোহা রুমে এসে দেখলো, নিধি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে গান গাইছে।নিধির গান শুনে তোহার ঠোঁট জোড়া অটোমেটিক ফাঁক হয়ে গেলো।কয়েক সেকেন্ড হা করে তাকিয়ে থেকে বললো,’আপু গো তুৃমি দেখছি এতো সুন্দর গানের ইজ্জত-মান পুরো প্লাস্টিক বানিয়ে দিলে।প্রেমিকের জায়গায় ‘বউ’ হবে,র**ক্তমাখার জায়গায় ‘ভাঙ্গা ভাঙ্গা’ হবে,বাত্তির জায়গায় ‘লন্ঠন’ হবে, আর জোছনার জায়গায় ‘চমকে চমকে’ হবে।কিন্তুু তুমি…

“নিধি তোহার দিকে তেড়ে এসে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,’এই তুই আমার ইমোশনের ১৩টা বাজিয়ে দিলি কেনো?এটা ডিজিটাল যুগ।তাই নিজের ভাষায় ডিজিটাল স্টাইলে গেয়েছি,লাইনের মধ্যে সত্যি কথা তুলে ধরেছি।এতে এতো ভুল ধরার কি আছে?যাইহোক এখান থেকে এখন যা,তোকে আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না।”

“তোহা মন খারাপ করে বললো,’শুনেছি মানুষ প্রেমে পড়লে মন ভালো থাকে,আর সবার সাথে ভালো আচরণ করে।কিন্তুু তুমি দেখি খিটখিটে হয়ে গেছো।”

“ওই বেশি কথা বলবি,তো তোর ডাক্তার সাহেব কে ফোন দিয়ে,পেট বানিয়ে বলবো যে তোর কয়েকটা বি এফ ছিলো।তারা তোকে ছ্যাকা দিয়েছে।তাই তুই ডাক্তার সাহেবের গলায় ঝুলে পড়েছিস।তখন বুঝবি মজা।”

“তোহা রেগে গিয়ে উত্তেজিত স্বরে বললো, ‘আপু?পা**গল হয়ে গেছো?আমার ভালো কথাও তোমার সহ্য হচ্ছে না দেখছি।আসলে তুমিও যেমন,তোমার ওই প্রেমিকও তেমন;দু’জনেই সাইকো।’বলেই আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না তোহা।তড়িৎ গতিতে রুম ত্যাগ করলো।নিধি সেদিকে পিটপিট করে তাকিয়ে মুখ ভেং**চি কা**টলো।”

“নিধি চিঠিতে আরেকবার আলতো করে হাত ছুঁইয়ে বিছানায় ফেলে রাখা ফোন টা হাতে নিয়ে,আবারও নির্জনের নাম্বার টিতে চোখ বুলালো।সে চায় না,আবারও সেই অপ্রত্যাশিত নারী কন্ঠটি ‘সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না’ বলে মন টা ভে**ঙে দিক।”

———
“সোডিয়ামের টিমটিমে আলোতে পিচঢালা রাস্তার পাশ ঘেঁষে এলোমেলো পা ফেলে হেঁটে যাচ্ছে নির্জন।মাঝে মাঝে পা দিয়ে কয়েকটি নুড়িপাথরের টুকরো গুলো কে অদূরে ঠেলে দিচ্ছে।এই মুহূর্তে তাকে দেখলে মনে হবে,প্রতিদ্বন্দ্বীবিহীন সে রাস্তায় ফুটবল খেলার প্র্যাক্টিস করছে।রাস্তা দিয়ে শাঁ শাঁ শব্দ করে অ্যাম্বুলেন্স এবং পুলিশের গাড়ি আসা-যাওয়া করছে।কিছুদিন যাবৎ র**ক্তের ভ্যাপসা গন্ধে এবং স্বাধীন ভাবে বাঁচার আকুতিতে কিছু ভাই-বোনদের গগনবিদারী আ**র্তনাদে ঢাকা-শহর থেকে শুরু করে, বিভিন্ন স্থানে থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।এ যেন ১৫জুলাই নয়,এটা হলো ২৫শে মার্চের কালরাত্রি।রাত থেকে ভারী বৃষ্টি,বাহিরে আন্দোলনের প্রস্তুুতি। এ যেন ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রতিচ্ছবি!”

“নির্জন নিয়নের আলোতে সেদিকে তাকিয়ে ঠাট্টা সুলভ হাসি দিয়ে অকপটে বলে উঠলো,’আমাদের দেশ কি আদৌ স্বাধীন হয়েছিলো?নাকি নামে মাত্র স্বাধীন বাংলাদেশ?”

“নির্জনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ‘মন’ হঠাৎ করে বলে উঠলো,’তুমি শেষে যেটা ভেবেছো সেটাই।”

“মনের কথা শুনে আনমনে হাসলো নির্জন।ভাবলো,’মন তো সত্যি বলেছে।এই স্বাধীন নামক পরাধীন দেশে আমিও তো কখনো স্বাধীনতা পাইনি।ছোটবেলা থেকেই তো পরাধীনতার বেড়াজালে আবদ্ধ থেকেছি আমি।আমার এই ছন্নছাড়া
জীবনে যার আবর্তন হবে,তাকেও তো আমি এভাবে বন্দী…

“আর কিছু বলতে পারলো না নির্জন।তার আগেই কর্ণকুহরে বেজে উঠলো, হাতে থাকা ফোনে ভাইব্রেশনের ঝিমঝিম শব্দ।নির্জন ফোনের দিকে তাকিয়ে হতবিহ্বল হয়ে গেলো।আশ্চর্য হলেও সত্যি, সে ভুল দেখছে না।একটু নিশ্চিত হওয়ার জন্য চোখের চশমাটা খুলে পকেট থেকে শুভ্র রঙা রুমাল বের করে ভালো করে চশমাটি মুছে,চশমা পড়ে আবারও ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করে ভেসে ওঠা নামটির দিকে তাকালো।ফোনে ট্রু কলার অ্যাপস থাকায় নামটি স্পষ্ট ভেসে উঠলো(নিরুপমা ইসলাম নিধি)।নির্জন স্ক্রিনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, নাম টির ওপর হাত বুলিয়ে দিলো।পুরো মুখে অনাবিল হাসি নিয়ে বলে উঠলো,’ডার্ক কুইন।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে