#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
“শরীরের অবিচ্ছেদ্য অংশ ‘হৃদয়ের’ কথা শুনে নির্জনের চক্ষুদ্বয় মুহূর্তেই র**ক্তিম বর্ণ ধারণ করলো।”
“নির্জন তার চোখজোড়া কয়েক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ করে আবার তাকালো।তারপর ‘হৃদয়’ কে বললো,’তোমার কথা অনুযায়ী যদি কাজ টা ‘অবচেতন মন’ করে থাকে, তাহলে আমি সারাদিন যেই কাজগুলো করি,যেসব বিষয়ে ভাবি,সেটা না দেখে কেনো শুধু ঐ মেয়েটাকে স্বপ্ন দেখি?”
“হৃদয় খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে উত্তর দিলো,’এটা খুবই সহজ প্রশ্ন করেছো।আমার কথাগুলো একটু মনযোগ দিয়ে শুনলেই বুঝতে পারবে।অবশ্য তুমি এমনিতেও খুব মনযোগী।একবার ভালোভাবে বুঝিয়ে বললে, তুমি সেটা কে মাইন্ডে সেভ করে নাও।যেটা খুব কম সংখ্যক মানুষ পারে।এইজন্য তোমাকে আমি এতটা ভালোবাসি।অবশ্য সব প্রাণীর ‘হৃদয়’ তাদের মালিক কে খুব ভালোবাসে।এখন আসল কথায় আসি।”
“প্রতিটি মানবজাতির মধ্যে ‘হৃদয় এবং মনের’ বাহিরেও একটি ‘অবচেতন মন’ বিদ্যমান।আমরা সারাদিন যা করি,ভাবি তার রেশ আমাদের মস্তিষ্কে কিছুটা থেকে যায়।আর রাতে আমরা সেই অংশগুলোকেই স্বপ্ন রূপে দেখি।কিন্তুু তুমি একটু খেয়াল করে দেখবে, অনেক সময় আমরা আমাদের কাজ এবং ভাবনার বাইরেও ধাপে ধাপে বিভিন্ন ধরনের স্বপ্ন দেখি।’
‘যেমনঃতুমি সারাদিন ফুলের বাগানে ঘুরে মন টা কে ফ্রেশ করেছো এবং ফুল বাগানের সুন্দর ফুল গাছগুলোকে নিয়ে ভেবেছো।অথচ রাতে ঘুমাতে গিয়ে তুমি স্বপ্ন দেখলে,’তুমি একটি গহীন জঙ্গলে দৌড়ে যাচ্ছো,আর তোমার পেছনে ভ**য়া*নক জ”ন্তুুর দল তাড়া করছে।কিন্তুু তোমার পথের সমাপ্তি হয় না,বরং আরও দীর্ঘ হয়।আর তুমি দ্রুত গতিতে দৌঁড়াতেও পারছো না।এক পর্যায়ে পরাজিত হয়ে যখন তোমার ঘুম ভেঙে যাবে,তখন তুমি ভ**য়ে ভ**য়ে ভাববে,’আমি তো সারাদিন ফুল বাগানে ঘুরেছি আর ফুল গুলোকে নিয়ে সুন্দর স্বপ্ন দেখার কথা ভেবেছি।এই ধরনের বিষয়বস্তুু নিয়ে চিন্তাও করিনি। তাহলে আমি এতো ভ**য়ং**কর স্বপ্ন কেনো দেখলাম?’
তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো নির্জন?”
“নির্জন স্থির দৃষ্টিতে তার কল্পনার ‘হৃদয়ের’ দিকে তাকিয়ে বললো,’হুমম বুঝতে পারছি।তারপর?”
“হৃদয় মুচকি হেসে আবারও বলতে শুরু করলো,’এই যে তুমি সারাদিন সুন্দর চিন্তা ভাবনার পরেও, এইরকম ভ**য়ং**কর স্বপ্ন দেখলে,এই কথাগুলো তোমাকে তোমার অজান্তে ‘অবচেতন মন’ ভাবিয়েছে;যেটা তুমি নিজেও জানো না।তবে সে তোমার ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।আর যে কথাগুলো তুমি সারাদিন স্বাভাবিক ভাবে ভাবো,সেগুলো তোমার বেস্টফ্রেন্ড ‘মন’ ভাবায়।যে তোমার সুখে-দুঃখে সর্বদা তোমাকে সঙ্গ দেয়।আশা করি আমার কথাগুলো বুঝতে তোমার অসুবিধা হয় নি।”
“হৃদয়ের কথাগুলো শেষ হতেই,’মন’ বলে উঠলো, ‘এই যে তোমরা কোনো কিছুর সাথে ব্যথা পেয়ে কান্না করো,নিজেদের সুখ-দুঃখের অনুভূতিগুলো অন্যের কাছে প্রকাশ করো।এগুলো সব তোমাদের মস্তিষ্ক নির্ধারণ করে দেয়।তোমরা যখন কোনো কিছুর দ্বারা আ**ঘাত পাও,সেটা সর্বপ্রথম মস্তিষ্কে গিয়ে পৌঁছায়,তারপর মস্তিষ্ক সিগন্যাল দিলে সেটা তোমাদের শরীরে গিয়ে পৌঁছায়,আর শরীর ব্যথার সিগন্যাল দিলে সেটা আমাদের মনে গিয়ে পৌঁছায়।আর তখনই আমরা(মন) তোমাদের সিগন্যাল দিলে,তোমরা কষ্ট অনুভব করে কান্না করো।আর শারীরিক এবং মানসিক ভাবে অতিরিক্ত বিকারগস্ত হওয়ার ফলে তোমাদের #হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ শুরু হয়।”
“নিধি কে নিয়ে এই ভাবনাগুলো উদয় হয়েছে তোমার সাথে ওর প্রথম স্পর্শের অনুভূতি থেকে।পৃথিবীতে চলতে গেলে অনেকের সাথেই আমাদের চামড়ার ঘর্ষণ হয়।তাই বলে যে, সবার প্রতি গভীর ভালো লাগার অনুভূতি জাগ্রত হবে,এইরকম কোনো কথা নেই।এটা যার যার ব্রেইন সেট করে দেয়।তুমি ওকে অনেকবার পরিপাটি বেশে দেখার পরেও, তোমার ওর প্রতি কোনো অনুভূতি জাগ্রত হয় নি।যেখানে একজন পুরুষ একজন নারীর প্রতি তার পরিপাটি রূপ-লাবণ্য দেখে আকৃষ্ট হবে;সেখানে তুমি তার সেই ভ**য়া**র্ত অগোছালো র**ক্তিম মুখমন্ডল দেখে আকৃষ্ট হয়েছো।আর তারপর থেকে তুমি তাকে কোনো ভাবেই ভুলতে পারছো না।বিষয়টি একটু গভীর ভাবে ভেবে দেখো,আসলে তোমার মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে তাকে গ্রহণ করে নিয়েছে।সে একজন সৌভাগ্যবতী নারী,,যে কিনা তোমার মতো সুস্থ স্বাভাবিক,ভদ্র,মেধাবী ছেলেকে বশ করতে পেরেছে।তুমি তার প্রেমে পড়ে গেছো।তুমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছো নির্জন।তোমার অতীতের সকল বি**ষাক্ত স্মৃতি মুছে দিতে খুব তাড়াতাড়ি তার আগমন ঘটবে।তবে এর জন্য তোমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।কারণ আমি তাকে যতটুকু চিনেছি, তার পার্সোনালিটি আর ৫জন সাধারণ নারীদের থেকেও আলাদা।সে তোমার মতো নীরব ঘা**তক নয়।সে বাঘিনীর ন্যায় গ**র্জন করে ওঠে।তাকে বশ করতে হলে,তোমার কিছু চিরাচরিত অভ্যাসগুলো কে সাময়িক সময়ের জন্য বর্জন করতে হবে।”
“সত্যি আমি তোমাকে নিয়ে খুব গর্ববোধ করি নির্জন।তোমার অস্তিত্বে আমার বসবাস,এটা আমার জন্য সবচেয়ে সুখকর বিষয়।”
“হৃদয় এবং মনের মুখে এতক্ষণ জ্ঞানের বাণী শুনে আকস্মিক নির্জনের মুখে মুচকি হাসির ঝলক দেখা গেলো।কৃতজ্ঞতার সহিত বললো,’হৃদয় তুমি যদি না থাকতে, তাহলে তো আমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতো।শুধু থেকে যেতো আমার মাটির নিষ্প্রাণ দেহ।তোমার স্পন্দন ছাড়া যে আমি অচল।সত্যি আমার জীবনে তোমার নিঃস্বার্থ অবদান অনস্বীকার্য।”
“তারপর নির্জন ‘মনের’ দিকে তাকিয়ে বললো,’তুমি আমাকে ছোটবেলা থেকে সবসময় সাপোর্ট করে এসেছো।তোমার সহযোগিতা না পেলে, আমি এতগুলো যুদ্ধে জয়ী হতে পারতাম না।তুমি সমান ভাবে আমার সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে পাশে থেকেছো।জীবনের শেষ নিঃশ্বাসেও তোমাকে এভাবে পাশে চাই।তোমরা দু’জন সবসময় এভাবে আমার পাশে থাকবে তো?”
“মন মুচকি হেসে বললো,’অবশ্যই পাশে থাকব,সবসময় তোমার সাথে মিশে থাকব।’হৃদয় বললো,’আমি তো ন্যানোসেকেন্ডে তোমার বুকে স্পন্দনের সুর তুলি।দিন-রাত ২৪ঘন্টা আমার ওপর দিয়ে অনেক খাটুনি যায়।তাই তুমি এখন আমায় একটা ট্রিট দাও।”
“নির্জন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,’কি ট্রিট দিবো?”
“উমম সারাদিন এই ধুলা বালুময় ঢাকা-শহরের দুর্গন্ধময় বাতাসে আমার হৃদয় টা দূষিত হয়ে যায়।তাই মাঝে মাঝে তোমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।তাই বলছিলাম,আমাকে একটু র**ক্তিম সন্ধ্যার আকাশ থেকে ভেসে আসা দখিনা বাতাস আহার করিয়ে তৃষ্ণা মেটাও।”
“নির্জন মুচকি হেসে বললো,’ওকে আমি এক্ষুনি ছাদে যাচ্ছি।তুমি মন ভরে বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করবে।আর আমি তোমার সুখগুলো গভীরভাবে অনুভব করবো।আফটার অল তোমরা আমার অন্তর্জগতের বেস্টফ্রেন্ড।’বলে নির্জন তার মিটিং সমাপ্ত করে ছাদে চলে গেলো।”
————–
” কে”টে গেলো আরও একটি রাত।আজ শুক্রবার।রাতে রিমঝিম বৃষ্টি হয়েছে।ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।বৃষ্টিরা যেনো আজ ধরণীর বুক ঠান্ডা করার জন্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে।মাঝে মাঝে গুড়ুম গুড়ুম করে বজ্রপাতের তীব্র আওয়াজ কর্নকুহরে ভেসে আসছে।সকাল ৯টার দিকে নিধি এবং তোহা কম্ফোর্টারের ভেতরে ঢুকে জড়সড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে।ঝুম বৃষ্টির সাথে সাথে ওদের ঘুম পাখিরাও যেনো গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন।”
“তাহমিনা বেগম নিধি এবং তোহা কে কয়েকবার ডেকে গেছেন। কিন্তুু মায়ের ডাক শুনে তার দুই মেয়ের ঘুম যেন আরও গভীর হয়েছে।তাহমিনা বেগম সকাল থেকে রান্নাবান্নায় ব্যস্ত।তিনি নিধি এবং তোহা কে হাতে হাতে কাজ করার জন্য ডাকছেন।রফিক মির্জা কাউচে বসে এক হাতে চায়ের কাপ নিয়ে পেপারে নিমগ্ন।”
“তাহমিনা বেগম এইবার রেগে গিয়ে মেয়েদের রুমে গিয়ে,ওদের গায়ে জড়িয়ে থাকা কম্ফোর্টার এক টানে সরিয়ে ফেললেন।কঠোর স্বরে বললেন,’তোরা কি উঠবি?নাকি বিছানায় পানি ঢেলে দিবো?”
“তাহমিনা বেগমের এমন কন্ঠস্বর শুনে তোহা ধরফরিয়ে উঠে বসলো।ও তো ঘুমের তোড়ে ভুলেই গেছিলো যে,আজ বাসায় ওকে দেখতে পাত্রপক্ষ আসবে।নিধি পিটপিট করে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে,আবারও চোখ জোড়া বন্ধ করে বললো,’আমাদের বিছানায় পানি ঢেলে দিলে,তোমাদের বিছানায় গিয়ে ঘুমাবো,সিম্পল ব্যাপার।’বলেই কোলবালিশ জড়িয়ে ধরলো।”
“তাহমিনা বেগম এইবার রেগেমেগে বিছানার ঝাঁটা হাতে নিয়ে বললেন,’উঠবি নাকি আবারও ঝাঁটার বা””রি খাবি?আজ তোহা কে দেখতে পাত্রপক্ষ আসবে।আর তুই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস।নিজের বিয়ে তো ভে”ঙে দিয়েছিস,এখন কি ছোট বোনের বিয়ে টাও ভে”ঙে দিবি?”
“উফফ! মা সকাল টা কি খোঁটার বাণী দিয়ে শুরু করতে চাও?এই নিয়ে ২০+বার বলে ফেলেছো।তুমি কি আমার সত্যিকারের মা নাকি পাশের বাসার ঐ কু”’টনি আন্টি?অবশ্য তোমার চেহারার সাথে আমার কিছুটা মিল আছে।কিন্তুু তোমার আচরণে আমার যথেষ্ট সন্দেহ হয়।”
“তাহমিনা ঝাঁটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বললেন,’নিজে যেদিন মা হবি,সেদিন বুঝবি সন্তানেরা বাবা-মায়ের কথার অবাধ্য হলে তাদের কেমন লাগে।’কথাগুলো বলে হনহন করে রুম থেকে চলে গেলেন।”
“নিজের মায়ের মুখের শেষ লাইনটি মনে হয় নিধির বুকে গিয়ে তীরের মতো বিঁধলো।মুহূর্তেই ঘুম পাখিরা ডানা মেলে উড়ে গেলো।তোহা অনেক আগেই ফ্রেশ হতে চলে গেছে।নিধিও ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর ২বোন কিচেনে গিয়ে চুপচাপ ওদের মায়ের কাজে সাহায্য করলো।”
“বিকালের দিকে পাত্রপক্ষ চলে আসলো।নিধি তোহা কে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে,তবে বেশি গর্জিয়াস না।তোহা খয়েরী রঙের জর্জেট থ্রি-পিস পড়েছে।নিধি খুব সুন্দর করে তোহা কে হিজাব বেঁধে দিয়েছে।ড্রয়িং রুমে অচেনা কয়েকজনের কথা বলার আওয়াজ শুনে তোহার বুক ঢিপঢিপ করছে।এই প্রথম কোনো পাত্রপক্ষ তোহা কে দেখতে আসলো।এর আগে অনেকেই রফিক মির্জার কাছে তোহার বিয়ের ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছিলো।কিন্তুু তিনি নিধির কথা ভেবে নাকচ করে দিয়েছেন।”
“তোহার লজ্জামাখা মুখ দেখে নিধি বললো,’তুই তো দেখছি এখনই লজ্জায় হলুদ হয়ে যাচ্ছিস।পাত্র যখন তোর সাথে আলাদা করে কথা বলবে,তখন কি হবে?”
“উফফ আপু একে তো আমি টেনশনে শেষ,তার ওপর তুমি আরও টেনশন দিচ্ছো।প্রথম প্রথম সবকিছুর অনুভূতি একটু অন্যরকম হয়।”
“হাহাহা আচ্ছা বাদ দে।এখন চল,মা বলেছে তোকে তাদের সামনে নিয়ে যেতে।আমাদের ডাক্তার সাহেব তোর জন্য অপেক্ষা করছে।আহা!নিজেকে কেমন রোগী রোগী ফিল হচ্ছে।’বলেই ফিচেল হাসলো নিধি।”
“তোহা কে পাত্র পক্ষের সামনে নিয়ে যাওয়া হলো।তোহা সোফায় বসে চোখজোড়া ফ্লোরে আবদ্ধ করে রেখেছে।এদিকে শপিংমলের মধ্যে দেখা হওয়া সেই ভদ্র মহিলা,তার স্বামী এবং তাদের ছেলে মাহির এহসান তোহা কে টুকটাক প্রশ্ন করলো।তোহা সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে প্রশ্নগুলোর ঠিকঠাক উত্তর দিলো,তবে চোখ জোড়া এখনও ফ্লোরে নিবদ্ধ।তোহা যখন ড্রয়িং রুমে এসেছে, তখনই মাহির তোহার দিকে একবার তাকিয়েছে।তোহা কে দেখে মাহিরের কেমন যেন খটকা লাগলো।চলনবিলে নদীতে চি**ৎকার করে সাহায্য চাওয়া সেই মানবীর কথা মনে পড়ে গেলো।”
“দুই পরিবার আরও কিছুক্ষণ কথা বললো।তারপর মাহিরের বাবা সজিব এহসান ওদের দু’জনকে আলাদা ভাবে কথা বলার জন্য প্রস্তাব রাখলেন।এটা শুনে তোহার লজ্জায় ম”’রি ম””রি অবস্থা হয়ে গেলো।”
“যথাক্রমে মাহির এবং তোহাকে আলাদা ভাবে কথা বলার জন্য তোহার রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।তোহা বিছানার একপাশে বসে লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।এদিকে মাহির চেয়ারে বসে তোহা কে সূক্ষ্মভাবে দেখে চলেছে।সেদিন সন্ধ্যার আবছা-আলোতে তোহার অবয়ব দেখলেও, চেহারা স্পষ্ট ভাবে দেখা যায় নি।নীরবতা ভে”ঙে মাহির বলে উঠলো,’আমার নাম টা যেহেতু অনেকবার বলা হয়েছে,আশা করি নতুন করে আর নামের সাথে পরিচয় করাতে হবে না।তবে আপনি চাইলে আমায় যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন।আর হ্যা, আমি খুব স্পষ্টবাদী মানুষ।আপনার আগেও আমি ৪জন পাত্রী দেখেছি।তাদের সাথে কোনো কারণে হয়তো বিয়ে ঠিক হয় নি।তবে আমার মায়ের কাছে আপনার বেশ প্রশংসা শুনেছি।তাই আপনাকে দেখার আগ্রহ আমার মনে অনেক আগেই জাগ্রত হয়েছে।আমি শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনছিলাম।আর আমার আপনাকে খুব পছন্দ হয়েছে।আপনি মতামত দিলে আমাদের বিয়েটা হতে পারে।এখন কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।”
“তোহা ফ্লোরে চোখজোড়া নিবদ্ধ রেখে ‘না’ বোধক মাথা নাড়লো।মানে ও কোনো প্রশ্ন করতে চায় না।”
“মাহির কিছুটা অবাক হলো।ওর জানা মতে, এই যুগের মেয়েরা এইসবে এখন লজ্জা পায় না।এর আগেও তো ৪জন কে দেখেছে।তারা তো সমান তালে মাহির কে প্রশ্ন করেছে।তবে এই মেয়ে একদম অন্যরকম।ব্যাপারটা মাহিরের কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগল।”
“মাহির মুচকি হেসে বুকের ওপর দুই হাত ভাজ করে,সরস কন্ঠে বললো,’আপনি যেহেতু প্রশ্ন করবেন না,তাহলে আমি প্রশ্ন করি।’বলেই মাহির তোহার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,’আপনি কি ৭দিন আগে কোথাও ঘুরতে গিয়েছিলেন?আপনাকে প্রথম দেখায় আমার খুব চেনা চেনা লাগছে।তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
“তোহা এইবার মাহিরের দিকে একবার তাকালো।তারপর আবারও চোখজোড়া নিচে নামিয়ে কোমল স্বরে বললো,’৭দিন আগে আমি আর
আমার বড় বোন এবং তার বান্ধবী মিলে সিরাজগঞ্জের চলনবিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম।”
“ব্যাস তোহার মুখনিঃসৃত এতটুকু উক্তি যেনো মাহিরের জন্য যথেষ্ট ছিলো।নিজের অজান্তেই মাহিরের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।ভাবলো,’যাক গুমোট অন্ধকারে সেই অদেখা নারীটি অবশেষে নিজে থেকেই আমার সম্মুখে দৃশ্যমান হলো।’কথাগুলো ভেবে মাহির গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’এই প্রশ্ন টা কেনো করলাম,জানতে চাইবেন না?”
“তোহা এমনিতেই এই সুদর্শন পুরুষটির সামনে লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।সেখানে কেন এই প্রশ্ন করেছে,সেটা জানতে চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।লোকটি এখান থেকে গেলে তোহা হাফ ছেড়ে বাঁচবে।তোহা আবারও ‘না’ বোধক মাথা নাড়লো।”
“মাহির আবারও বিস্মিত হলো।মনে মনে কিছু একটা ভেবে ঠোঁটের কোণা প্রসারিত করে বললো,’ওকে..আমি কি আপনার ফোন নাম্বার পেতে পারি?”
“চলনবিল থেকে এসে নিধি এবং তোহা নতুন ফোন এবং নতুন সিমকার্ড কিনেছে।তোহা মৃদু স্বরে নিজের ফোন নাম্বার টা বললো।মাহির তোহার ফোন নাম্বার তার মোবাইলে ‘স্বপ্ন-চারীনি’ লিখে সেভ করে নিলো।তারপর বসা থেকে দাঁড়িয়ে;তোহার দিকে তাকিয়ে আবারও মুচকি হাসি দিয়ে বললো, ‘বেঁচে থাকলে আমাদের আবার দেখা হবে স্বপ্ন-চারীনি’ বলেই রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে গেলো।”
“মাহিরের মুখে ‘স্বপ্ন-চারীনি’ শব্দ টি শুনে আকস্মিকভাবে তোহার হার্টবিট যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।”
“এদিকে পর্দার আড়াল থেকে নিধি ওদের দু’জনের সব কথা শুনে ফেলেছে।মাহির চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতেই,নিধি আড়ালে চলে গেলো।মাহির রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তোহার কাছে এসে বললো,’কিরে তোহা রানী ডাক্তার সাহেবের মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে তোর মনের মধ্যে কি ডুগডুগি বাজল নাকি?ছেলেটা একবার চাইতেই,ঢ্যাং ঢ্যাং করে ফোন নাম্বারটা দিয়ে দিলি।বুঝি বুঝি সবই বুঝি..ডাক্তার সাহেব কে তোর পছন্দ হয়েছে।এখন বাসর রাতের অপেক্ষায় আছিস।তবে তুই কিন্তুু একটা কথা ভুলে গেছিস,তোর কিন্তুু ৩মাস পর ফাইনাল এক্সাম।ছেলেটা যদি তোকে ফোন করে,তাহলে এই বিষয়ে গুরুত্বের সহিত কথা বলবি।যদি বিয়ের জন্য ৩মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করে তো ভালো।আর যদি অপেক্ষা না করে, তাহলে তোর বড় বোনের ছায়া তোর মাথার ওপর আছে।জানিসই তো বিয়ে ভা”ঙায় আমি কতটা এক্সপার্ট।এখন যাই..গিয়ে শুনে আসি পাত্রপক্ষ কি বললো।’কথাগুলো বলে নিধি চঞ্চলা পায়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।নিধির যাওয়ার পানে তোহা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো।”
——–
“চলনবিল থেকে আসার পর থেকে ৭দিন যাবৎ দিগন্ত নতুন ফোন কিনে,নিয়ম করে নাদিয়া কে ফোন করেছে।অথচ নাদিয়ার ফোন অনবরত সুইচ অফ বলছে।দিগন্ত তো টেনশনে প্রায় শেষ।নাদিয়াদের বাসার সামনে অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার পথে ২-৩দিন ঘুরঘুর করেছে।কিন্তুু নাদিয়ার দেখা পায় নি।এদিকে সেই রাতে নিধি নির্জন কে নদীতে ফেলে দেওয়ায়, তার ফোন টাও নষ্ট হয়ে গেছে।দিগন্ত নির্জনের নতুন ফোনে আজ ২দিন যাবৎ কল দিচ্ছে।কিন্তুু নির্জন ফোন রিসিভ করছেনা।দিগন্ত বেচারা ভাবলো,’বুঝলাম না একদিকে জ**ল্লাদ গার্লফ্রেন্ড, আরেকদিকে গম্ভীর নির্জন দু’জনে মিলে কি আমার সাথে শ”ত্রুতা শুরু করলো নাকি?সবাই আমাকে কেমন ইগনোর করছে।অথচ ইগনোর করার কারণ টাই আমি জানিনা।’ভেবে চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে, কপাল মাসাজ করতে থাকল দিগন্ত।একমনে গেয়ে উঠলো,
‘কেনো পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু
ছেড়ে যাইবা যদি…”
———
“অপরদিকে গতকাল রাতেও নির্জন নিধিকে ধাপে ধাপে কয়েকবার স্বপ্ন দেখেছে।বর্তমানে নিধির স্বপ্নের মধ্যে এসে লাভ টর্চারে নির্জন পা**গল প্রায়।সে ভেবে পায় না এমন একটা দস্যি মেয়ের প্রেমে কিভাবে পড়লো!অফিসে তো কয়েকজন মেয়ে কলিগ তাকে কতো ভদ্র ভাবে প্রপোজ করেছিলো।অথচ নির্জন বুদ্ধিমত্তার সাথে তাদের প্রপোজাল রিজেক্ট করেছে।আর এই দস্যি পা**গলি মেয়ে এক রাতের ধা’ক্কাতেই তাকে বশ করে ফেলেছে।’ভেবে আনমনে হাসলো নির্জন।”
“আজ সন্ধ্যায় ঝুম বৃষ্টির পানি নির্জনের রুমের বেলকনিতে আসায়,নির্জন বেলকনির দরজা আটকাতে গেলে,হঠাৎ ভেতর থেকে ‘মন’ বলে ওঠে,’নির্জন এখনই মোক্ষম সময়।ঝুম বৃষ্টিতে মানব মন ফুরফুরে এবং খুব রোমান্টিক থাকে।তুমি তোমার ডার্ক কুইন কে পটানোর জন্য প্রথম ধাপ অবলম্বন করো।তার উদ্দেশ্যে তোমার মনের মাধুরী মিশিয়ে ঝটপট একটা চিঠি লিখে ফেলো।আর হ্যা, মোট ৩০টি চিঠি লিখবে।১দিনে না পারলে,২দিনে লিখবে।কারণ এই মেয়ে হয়তো একটা চিঠিতে পটবে না।যাইহোক,তাড়াতাড়ি মিশন শুরু করো।”
“মনের এহেন কথায় নির্জনের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।বেলকনির দরজা খোলা রেখে কিছুক্ষণ রিমিঝিমি বৃষ্টির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে,টেবিল থেকে খাতা-কলম নিয়ে,চশমা পড়ে চেয়ারে বসে চোখ জোড়া বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভাবলো।তারপর মুচকি হেসে লিখতে শুরু করলো।
~চিঠি~
“আমার প্রিয় ‘ডার্ক কুইন’ প্রথমেই আমার থেকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা গ্রহণ করো।তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানি না।তবে এই প্রথম কোনো মানবীর উদ্দেশ্যে আমার অপরিপক্ব হাত দিয়ে চিঠি লিখছি।আশা করি তোমার কাছে ততটা খারাপ লাগবে না।যাইহোক,মূল কথা হলো আমি জানি, তুমি খুব চঞ্চল স্বভাবের এবং একটু পা**গলী টাইপের মেয়ে।তবে আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই।আমি সম্পূর্ণ সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ।আজ থেকে আমি তোমার অগভীর হৃদয়ের প্রেমিক পুরুষ।নিজের অজান্তেই তোমাকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি।আমি জানি,চিঠি টা পড়ার সময় তুমি ভাববে,যে এতো সুন্দর করে কে চিঠি লিখলো!আমি লিখেছি ডার্ক কুইন..আমি খুব যত্ন করে চিঠিটি তোমার জন্য হৃদয় উজার করে লিখেছি।প্রতি রাতে আমার স্বপ্নে এসে তুমি আমার সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছো
‘মাই ড্রিমগার্ল’।আমি এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না।তাই চিঠির মাধ্যমে সরাসরি বলছি,’আমি তোমাকে ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি ডার্ক কুইন।তুমি যদি আমার এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা গ্রহণ না করো,তাহলে আমি আবারও তোমাকে চিঠি দেবো,তুমি একদম চিন্তা করো না।ইউ আর অনলি মাইন ডার্ক কুইন।আর হ্যা, এখন থেকে প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব টা একটু কমাবে।তোমার সাথে এখন থেকে আমার মধুর আলাপন হবে।আমি আমাদের মাঝ থেকে প্রতিশোধের দেয়াল ভে”’ঙে ফেলেছি।আমাদের মাঝখানে কোনো ভগ্ন টুকরো কণা কেও আমি সহ্য করবো না।বুঝেছো ডার্ক কুইন?এখন আমার হাত খুব ব্যথা করছে।তাই চিঠিটা এখানেই সমাপ্ত করলাম।আর চিঠিটা যেহেতু ঝুম বৃষ্টিতে রিমঝিম ধারাতে লিখলাম।তাই তোমার জন্য দু’টো গানের লাইন আমার পক্ষ থেকে,আমার কন্ঠস্বর মনের গহীন থেকে উপলব্ধি করো,
“রিমঝিম ধারাতে চায় মন হারাতে
এই ভালোবাসাতে আমাকে ভাসাতে..”
ইতি তোমার হবু ব্যক্তিগত প্রেমিক পুরুষ
‘নির্জন’
#চলবে…
#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
“রিমঝিম এ ধারাতে চায় মন হারাতে
এই ভালোবাসাতে আমাকে ভাসাতে..”
ইতি তোমার হবু ব্যক্তিগত প্রেমিক পুরুষ
‘নির্জন’
“চিঠিটা লিখে নির্জন ২-৩বার বিড়বিড় করে পড়লো।বানান,দাঁড়ি,কমা সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা ভালোভাবে দেখলো।সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ পরে পুরো চিঠিতে তেমন কোনো ভুল খুঁজে পেলো না।নির্জন বানানের দিকে খুব সেন্সিটিভ।সফটওয়্যারে কোনো ডকুমেন্টস রেডি করতে গেলে, সে ঠান্ডা মাথায় বানানগুলো কয়েকবার চেক করে; তারপর ডকুমেন্টস ফুলফিল করে।এইজন্য অফিসে তার বেশ সুনাম।যেকোনো লেখার মধ্যে বানান ভুল হলে,পড়তে খুব আনইজি লাগে।সেই সাথে সেই বিষয়টি পরবর্তীতে অধ্যায়ন করার জন্য,দ্বিতীয়বার আগ্রহ জাগে না।তাই নির্জন স্কুল লাইফ থেকে এই বিষয় গুলো খুব সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করে এসেছে।চিঠিতে আরেকবার চোখ বুলিয়ে, মুচকি হেসে ‘মন’ কে জিজ্ঞেস করলো,’মন চিঠি তো লিখলাম;কিন্তুু কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।কিছু একটা মিসিং মনে হচ্ছে।”
“মন বললো,’আরে… আরে এখানে তো তোমার র”ক্ত মিসিং।তুমি তো এখানে র”ক্তের ফোঁটা গুলো যোগ করোনি।”
“নির্জন চিবুকে হাত দিয়ে একটু ভেবে বললো,’গতবার তো ও আমার শ”’ত্রু ছিলো বলে,পায়ের থেকে র”ক্ত নিয়ে চিঠিতে লাগিয়েছিলাম।এখন তো ও আমার সবচেয়ে প্রিয় নারী,তাহলে এখন কোন জায়গা থেকে র”ক্ত দেবো?”
“মন একটু ভেবে বললো,’আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে,প্রথম চিঠিতে এই নারী পটবে না।তুমি এক কাজ করো,আপাতত হাতের কনুইয়ের উপরের অংশ থেকে কিছুটা কে”’টে দাও।তারপর যদি তার মন বিগলিত না হয়,তাহলে এর পরের চিঠিগুলো তে শরীরের সেন্সিটিভ জায়গা বাদে কিছু কিছু জায়গা থেকে কে””টে র”ক্ত বের করে চিঠিতে মাখিয়ে দিবে।এটাই হবে তোমার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সবচেয়ে সুন্দর বহিঃপ্রকাশ।”
“মনের কথা শেষ হতেই,হঠাৎ ‘হৃদয়’ রেগেমেগে বলে উঠলো,’নির্জন তুমি ‘মনের’ কথা একদম শুনবে না।ও সবসময় শ”’য়””তানি বুদ্ধি মাথায় নিয়ে ঘোরে।তুমি আমার কথা শোনো,সৃষ্টিকর্তা তোমায় এতটা যত্ন করে বানিয়েছে কা””টা”’ছেঁড়া করার জন্য নয়।অন্যের জন্য কেনো নিজের এতো সুন্দর শরীর কে কষ্ট দিবে?তুমি যখন নিজেকে আ””’ঘাত করো,তখন আমার হৃদয়ে খুব ব্যথা অনুভব হয়।সেই সাথে তোমারও তো নিঃশ্বাস গ্রহণ করতে কষ্ট হয়।তবুও কেনো জেনে-বুঝে নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি এমন অবিচার করো?এগুলো সব শ””য়””তানের ধোকা।দয়া করে এই বদঅভ্যাস টি বর্জন করো।নইলে একদিন তোমাকে খুব করে পস্তাতে হবে।তখন এই ‘হৃদয়ের’ কথা প্রতিটি পদে পদে স্মরণ করবে।কিন্তুু ততদিনে আমিও দুর্বল হয়ে যাবো।”
“মন কটমটিয়ে বললো,’নির্জন তুমি আমার সাথে সব কথা শেয়ার করো, তাই ‘হৃদয়’ জেলাস ফিল করে।আমি তোমাকে যেটা করতে বলেছি,সেটা ঝটপট করে ফেলো।তুমিই তো বলো, ছোটবেলা থেকে আমি তোমাকে সাপোর্ট না করলে,তুমি কোনো যুদ্ধে জয়ী হতে পারতে না।তাই আমার কথা শোনো।আর ‘হৃদয়’ তোমাকে চাইলেও ছাড়তে পারবেনা,কারণ সে তোমার শরীরের প্রধান অবিচ্ছেদ্য অংশ।”
“নির্জন ‘হৃদয়’ এবং ‘মনের’ কথাগুলো শুনে ডেভিল হাসি দিয়ে, সবসময়ের মতো এইবারেও ‘মনের’ কথা শুনলো।ড্রয়ার থেকে ধা”রা”লো ছু”’রি বের করে, বাম হাতের কনুইয়ের ওপরের কিঞ্চিৎ অংশ কে””টে চিঠিতে র””ক্তের ছোপ ছোপ দা”গ মেখে দিলো।”
“এটা দেখে ‘হৃদয়’ খুব কষ্ট পেলো।নির্জন তার সুপরামর্শ কখনোই শোনেনা।শুধু স্বার্থের জন্য মুখে মুখে বেস্টফ্রেন্ড বলে।এই পৃথিবীতে সব প্রাণী স্বার্থপর।সবসময় আমাদের ‘হৃদস্পন্দন’ কে ব্যবহার করে অপকর্ম করে বেড়ায়।’ভেবে ‘হৃদয়’ আবারও নিজের কাজ করতে থাকল।যতোই সে নির্জনের ওপর রাগ করে থাকুক,ভালোভাবে স্পন্দন না করলে যে নির্জনের খুব কষ্ট হবে।এটা সে কিছুতেই দেখতে পারবে না।”
———–
“রাত সাড়ে ১০টায় নাদিয়ার হেঁচকি তুলে কান্না করে নাক টেনে কথা বলাতে, দিগন্তের বুকটা মনে হয় ফে””টে যাচ্ছে।আজ ৭দিন পর তার প্রেয়সীর সাথে কথা হচ্ছে।যেখানে দিগন্ত মনের মধ্যে অনেক রাগ,ক্ষো”ভ,আবেগ পুষে রেখেছিলো।ভেবেছিলো,একবার নাদিয়ার সাথে কথা বলতে পারলে,সব অভিমান গুলো বই পড়ার মতো রিডিং পড়ে শোনাবে।কিন্তুু কিছুক্ষণ আগে নাদিয়ার ফোন পেয়ে;রিসিভ করতেই,অপরপাশ থেকে নাদিয়ার কাঁদো কাঁদো কন্ঠে কথাগুলো শুনে,দিগন্তের পুরো পৃথিবী মনে হয় ওলট-পালট হয়ে গেলো।”
“সেদিন সেই অসমাপ্ত ট্যুর থেকে আসার পর মধ্য রাতে নাদিয়ার যখন জ্ঞান ফিরলো,তখনই নাদিয়া ওর মাথার কাছে ওর একমাত্র ফুফু কে দেখতে পায়।তিনি নাদিয়ার মাথায় স্নেহের স্পর্শ দিয়ে হাসি মুখে বললেন,’আলহামদুলিল্লাহ অবশেষে আমার হবু বৌমার জ্ঞান ফিরেছে।আমার ছেলেটা তো কানাডা থেকে কয়েকবার আমাকে ভিডিও কল দিয়ে পা**গল করে ফেলেছে,নাদিয়ার টেনশনে ও এখনও কিছু খাওয়া-দাওয়া করেনি।”
“নাদিয়া তো এটা শুনে বেশ অবাক হলো,পিটপিট করে ফুফুর দিকে তাকিয়ে বললো,’ফুফু আমার কথা ভেবে ইহান ভাইয়া কেনো খাওয়া-দাওয়া করলো না?আর তুমি আমায় হবু বৌমা বললে কেনো?”
“নাদিয়ার ফুফু সেলিনা বেগম বললেন,’শোনো মেয়ের কথা! তোর জন্যই তো সুদূর কানাডা থেকে আমি এসে পড়েছি।ইহানের কিছু কাজ আছে,সেটা হয়ে গেলে ও কিছুদিনের মধ্যেই এখানে চলে আসবে।আর তারপর তোদের দু’জনের ৪হাত এক করতে পারলেই, আমার আর তোর ফুফার শান্তি।এখন তাড়াতাড়ি উঠে একটু লেমন জুস খেয়ে নে।তোর শরীরের দুর্বলতা কে”’টে যাবে।’আর কিছুক্ষণ আগেই আমি তোদের বাসায় এসেছি।তোকে এই অবস্থায় দেখে এতক্ষণ তোর পাশেই বসেছিলাম।এখন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।আমি ফ্রেশ হয়ে ঘুমাবো।আমি যাই।’বলেই সেলিনা বেগম নাদিয়ার মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে রুম থেকে প্রস্থান করলেন।”
“সেলিনা বেগম চলে যাওয়ার পর নাদিয়ার মা ঘরে ঢুকতেই,নাদিয়া কটমটিয়ে বললো,’মা ফুফু এইমাত্র কি বলে গেলো?”
“কি বলে গেলো?”
“আমি নাকি তার হবু বৌমা?ইহান ভাইয়া নাকি আমার চিন্তায় না খেয়ে বসে আছে?এইসব কি শুনছি আমি?ফুফুরা তো সপরিবারে আরও ১৫বছর আগে এই দেশ ছেড়ে কানাডা পাড়ি জমিয়েছে।তাহলে এতোদিন পর এসে এগুলো কি বলছে সে?”
“নাদিয়ার মা ম্লান হেসে মলিন স্বরে বললেন,’আসলে তোদের বিয়ের কথা আমরা আগে থেকেই বলে রেখেছিলাম। এতোদিন শুধু তোর পড়ালেখা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছি।আর ইহানও খুব ভদ্র ছেলে।ও কানাডায় সেটেল এবং ভালো একটা জব ও করে। তাই ও কানাডা থেকে এলে,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোদের বিয়ে টা দিয়ে দিবো।”
“নাদিয়া রেগেমেগে উচ্চস্বরে বলে উঠলো,’এই বিষয়ে তোমাদের আগে আমাকে জানানো উচিত ছিলো মা।”
“দেখ আমরা যদি এই বিষয়ে আগে থেকে তোকে জানাতাম,তাহলে ইহান কে নিয়ে তোর মনের মধ্যে অজানা একটা অনুভূতি সৃষ্টি হতো।আর পড়ালেখা বাদ দিয়ে তোরা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতি।এই বিষয়ে আমি সবকিছু ভালোভাবে জানি।কারণ তোদের এই বয়সে আমিও পড়ালেখা বাদ দিয়ে,তোর বাবার সাথে প্রেম করেছিলাম।আর দেখ,আমি কলেজ টাও টপকাতে পারলাম না।এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে;আমি আর তোর বাবা কখনোই তোর ক্ষেত্রে এমন টা হোক, এটা কিছুতেই চাই নি।তাই তোকে ইহানের বিষয়টি জানাইনি।তবে তুই চাইলে এখন ইহানের সাথে যোগাযোগ করতে পারিস।এখন আর তোকে আমরা বাঁধা দেবো না।বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ে একে-অপরের সম্পর্কে বোঝাপড়া করাটা অতীব জরুরি।”
“নাদিয়া ওর মায়ের মুখে কথাগুলো শুনে কান্না-কাটি করে বললো,’মা আমি কিছুক্ষণের জন্য একা থাকতে চাই।দয়া করে এখন তুমি যাও।আর এখন আমার ক্ষুধা নেই।যখন ক্ষুধা লাগবে, তখন খেয়ে নেবো।প্লিজ আর কথা বাড়িয়ো না মা।”
“নিজের মেয়ের মুখে এহেন কথা শুনে নাদিয়ার মা কিছু একটা ভেবে,সেখান থেকে চলে গেলেন।সেই রাতে নাদিয়ার আর ঘুম হলো না।পরের দিন সকাল ১১টায় ঘুম থেকে উঠে দেখলো, হোয়াটসঅ্যাপে ইহানের নাম্বার থেকে প্রায় ২৫+বার ভিডিও কল দেওয়া হয়েছে।এটা দেখে নাদিয়া তো পুরো থ হয়ে গেলো।হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইলে ইহানের ছবি দেখে নিশ্চিত হয়ে গেলো,ইহান কে নাদিয়ার ফোন নাম্বার ওর মা দিয়েছে।”
“কথাগুলো ভাবতেই, আবারও ইহানের কল এলো।নাদিয়া নিজের রাগ কে কখনোই কন্ট্রোল করতে পারে না।তাই ইহানের নাম্বার দেখে রেগেমেগে ফোন খুব জোরে ফ্লোরে ছু”ড়ে মা””রলো।ব্যাস তৎক্ষনাৎ ফোনের ১৫টা বেজে গেলো।তারপর থেকে টানা ৭দিন নাদিয়া নিজেকে পুরোপুরি ঘর বন্দী করে রেখেছে।পরিবারের কারো সাথে সে কথা বলেনি।নাদিয়া ওর বাবা-মাকে কিভাবে দিগন্তের কথা জানাবে, সেটা ভেবে অস্থির হয়ে আছে।কারণ, এই প্রেম নামক জিনিসটির জন্যই তারা ইহানের বিষয়টি নাদিয়া কে বলেনি।”
“বর্তমানে নাদিয়া ওর বাবা-মায়ের রুম থেকে ওর মায়ের ফোন চুপিচুপি নিয়ে এসে, দিগন্তের সাথে কান্না জড়িত কন্ঠে পুরো ঘটনাটি বললো।”
“অপরদিকে দিগন্তের অবস্থা নাজেহাল প্রায়।নাদিয়ার পারিবারিক সিচুয়েশন টা দিগন্ত খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করছে।সেই সাথে ইহানের কথা শুনে ভেতরে ভেতরে জ্বলে-পু””ড়ে নিঃশ্বেস হয়ে যাচ্ছে।কিন্তুু এই মুহুর্তে তাকে শান্ত থাকতে হবে।নিজের দুর্বলতা গুলো প্রকাশ করলে, নাদিয়া পুরোপুরি ভে””ঙে পড়বে।”
“নির্জনের সাথে ইমিডিয়েট কথা বলে, একটা সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।’ভেবে দিগন্ত তার শুকনো গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’হানি তুমি এভাবে কেঁদো না প্লিজ।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।তুমি কোনো চিন্তা করো না।ঐ আমার একমাত্র শত্রু ব্রিটিশ ইহান আসার আগেই, আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করবো।তবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাকে একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে।আর হ্যা,পারলে ইহানের ফোন নাম্বার টা আমাকে দাও।
আর এখন থেকে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করবে।তোমার শরীর দুর্বল হয়ে গেলে, আমাদের বিয়ের পর রোমান্স করতে কষ্ট হবে তো,তাই না হানি?এখন একটু হাসো প্লিজ।”
“দিগন্তের মুখে স্বান্তনার বাণী গুলো শুনে, নিজের অজান্তেই অনেক দিন পর খিলখিল করে হেসে উঠলো নাদিয়া।ম্লান স্বরে বললো,’আমার ফোনটা তো ভে””ঙে ফেলেছি।আমি ফুফুর কাছ থেকে ইহান ভাইয়ার নাম্বার নিয়ে তোমাকে দিবো।আর হ্যা, এখন রাখছি;মা যদি কোনক্রমে টের পেয়ে যায়,তাহলে অনেক বড় ঝামেলা হয়ে যাবে।আমি সুযোগ বুঝে তোমায় কল দিবো।আর তুমি কিন্তুু ফোন ভুলেও সাইলেন্ট করে ঘুমাবে না।দিনে-রাতে যখন সুযোগ পাবো,তখনই তোমায় ফোন দেবো জান।অনেক ভালোবাসি তোমায় আমার ভালোবাসা;রাখছি।’বলেই কট করে ফোনটা কে””টে দিয়ে বুকের মধ্যে জাপটে ধরে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো নাদিয়া।কতদিন পর মন ভরে প্রিয়জনের কাছে নিজের আবেগগুলো স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ করতে পারলো।’ভেবেই খুশিতে মন টা নেচে উঠলো।তারপর আবারও চুপিচুপি বাবা-মায়ের রুমে ঢুকে,ফোন টা যথাস্থানে রেখে দিলো।”
———-
“রাত ১১টা ১৫মিনিট।বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে।নিধি কম্ফোর্টারের নিচে গিয়ে ফেইসবুক স্ক্রল করছে।বর্তমানে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া কিছু হাস্যকর ভিডিও দেখে, মাঝে মাঝে হাহা হুহু করে হেসে উঠছে।”
“তোহা পড়াশোনা শেষ করে,বই-খাতা গুছিয়ে টেবিলে রাখলো।তখনই তোহার ফোনে অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো।তোহার ফোনে ‘ট্রু কলার’ অ্যাপস থাকার কারণে তোহা নাম্বারটির দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হয়ে গেলো।মুহূর্তের মধ্যই লজ্জায় রংধনু হয়ে গেলো।ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করে একটা নাম ভেসে উঠলো,’মাহির এহসান’।কয়েক সেকেন্ড নামটির দিকে তাকিয়ে থেকে,তোহা কল রিসিভ করে মিহি স্বরে ‘হ্যালো’ বললো।”
“তোহার কোমল কন্ঠস্বর শুনে মাহিরের মন আনন্দে গান গেয়ে উঠলো।মাহিরের মনে সুখ পাখিরা মনে হয় ডানা ঝাপটে উড়তে থাকল।কয়েক সেকেন্ড নীরবতা পালন করে বললো,’চিনতে পেরেছেন আমাকে?”
“পুরুষালি মোহনীয় কন্ঠস্বর শুনে, তোহার মনে অদ্ভুত ভালো লাগার আলোড়ন সৃষ্টি হলো।অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,’হুমম।”
“মাহির বালিশ একটু উচু করে হেলান দিয়ে,অর্ধ-শোয়া অবস্থায় মুচকি হেসে বললো,’কেমন আছেন স্বপ্ন-চারীনি?”
“আবারও ‘স্বপ্ন-চারীনি’ অসম্ভব সুন্দর একটি নাম কর্ণপাত হলো তোহার।কই, এর আগেও তো তোহা কে কয়েকজন ছেলে প্রপোজ করেছে।কেউ তো ওকে এমন সুন্দর একটা উপনামে ডাকেনি!কিন্তুু এই ডাক্তার সাহেব তো প্রথম দর্শনেই তোহা কে অদ্ভুত সুন্দর একটি উপনামে ডেকেছে।’ভেবে তোহা কন্ঠ আরও খাদে নামিয়ে বললো,’খুব ভালো আছি।আপনি?”
” উমম এতক্ষণ একটু কষ্টে ছিলাম,যখন ৪বার রিং হওয়ার পরেও আপনি ফোন রিসিভ করছিলেন না।কিন্তুু পরক্ষণে আপনার মোহনীয় কন্ঠস্বর শুনে, মন টা ফুরফুরে হয়ে গেলো।নাউ আ’ম ভেরি ফাইন স্বপ্ন-চারীনি।”
“উফফ! আবারও সেই নাম।তোহা বক্ষ মাঝে হাত দিয়ে হৃদস্পন্দনের গতিবিধি পরীক্ষা করলো।একটু দ্রুত হার্টবিট হচ্ছে।নাহ!এই লাজুক কন্ঠে তোহা আর কথা বলতে পারবে না।তাই মিহি স্বরে বললো,’অনেক রাত হয়েছে।আমি এখন ঘুমাবো।”
“মাহির বিস্ময়ের স্বরে বললো,’একি আমি তো এখনোও কথাই শুরু করলাম না।তার আগেই ঘুমানোর কথা বলছেন?আপনার কি আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না?”
“তোহা ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে আঞ্চলিক ভাষায় বুলি আওড়ালো,’এই ডাক্তার ব্যাটা… আমনের ওমন মিঠা মিঠা কথার জ্বালায়,আমার কান টা তো পিঁপড়ায় ধরবো।মগা ব্যাটা কি বোঝে না,যে ব্যাটা মাইনষের মিঠা মিঠা কথা হুনলে মাইয়া গো সরম করে!”
“কথাগুলো ভেবে তোহা গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’আমি ফোন টা রাখছি।আপু আর আমি এক রুমে থাকি।এই সময় কথা বলতে দেখলে, আপু খুব রাগ করবে। আপনার সাথে আগামীকাল সুযোগ করে কথা বলবো।শুভ রাত্রি।’বলেই তোহা তড়িৎ গতিতে ফোন টা কে””টে দিয়ে, বুকে হাত দিয়ে হার্টবিট চেক করলো।নাহ!এখন স্বাভাবিক গতিতে হৃদস্পন্দন হচ্ছে।সত্যি প্রথম সবকিছুর অনুভূতি গুলো অন্যরকম হয়;সেটা সুখ হোক কিংবা দুঃখ হোক।”
“অপরদিকে তোহা হঠাৎ করে ফোন কে””টে দেওয়া তে মাহির পুরো বোকা বনে গেলো।সেদিন বেডরুমে তোহার অগোচরে চুপিসারে, তোহার নিচে তাকিয়ে থাকা একটা ছবি তুলে ফোনের ওয়ালপেপারে রেখে দিয়েছে মাহির।স্ক্রিনে ক্লিক করলেই,তোহার লাজে রাঙা স্নিগ্ধ মুখস্রি জ্বলজ্বল করে ভেসে ওঠে মাহিরের ফোনে।মাহির ছবিটির ওপর আলতো করে হাত বুলিয়ে বললো,’এতো লাজুক কেন তুমি?এখনই আমার থেকে দূরে পালাতে চাও।বাসর রাতে এই চার দেয়ালের মধ্যে থেকে কোথায় পালাবে লাজুক লতা?সমস্যা নেই, তোমার হবু ডক্টর হাসবেন্ড তোমার লজ্জা ভা””ঙার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুুতি নিচ্ছে।বি রেডি ফর মাই রোমান্টিক টর্চার স্বপ্ন-চারীনি।”
———
“তোহা হেলেদুলে বেলকনির দরজা আটকাতে গেলো।দরজার সামনে যেতেই দেখলো, ফ্লোরে ভাজ করা একটা চিঠি পড়ে আছে।চিঠিটা বৃষ্টির পানিতে খানিকটা ভিজে গেছে।তোহা খুব অবাক হয়ে আশে-পাশে তাকিয়ে চিঠিটি হাতে নিয়ে,ভাজ খুলতেই ভ”’য়ে ‘ও আপু গো’ বলে চি””ৎকার দিলো।”
“আকস্মিক তোহার চি””ৎকার শুনে ধরফরিয়ে উঠলো নিধি।কন্ঠে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললো,’এই মাইয়া রাইত-বিরাইতে কাউয়ার মতো কা কা করোস ক্যারে?কিতা হইছে তোর?”
“তোহা চি””ৎকার করে চিঠিটি ফ্লোরে ফেলে দিয়েছিলো।
নিধির দিকে ভ””য়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বললো,’আপু এখানে আসো।দেখো ফ্লোরে একটা ভ””য়ং”কর র””ক্তা”ক্ত চিঠি পড়ে আছে।জানি না এটা কে দিয়েছে।”
“তোহার কথা শুনে নিধি তড়িৎ গতিতে বিছানা থেকে নেমে বেলকনিতে গিয়ে দেখলো,অর্ধভাজ করা একটা চিঠি।নিধি চিঠিটি তুলে পুরো ভাজ খুলতেই, ভ””য়ে আ””তকে উঠলো।পুরো চিঠিতে র””ক্তের ছোপ ছোপ দাগ।নিধির মনে পড়ে গেলো সেই র””ক্ত”মাখা চিঠিটির কথা।”
“নিধি মনে কিছুটা সাহস যুগিয়ে পুরো চিঠিতে একবার চোখ বুলিয়ে পড়তে থাকল।এতো সুন্দর নির্ভুল হাতের লেখা দেখে চমকে গেলো নিধি।সেই একইরকম লেখা!সেই একইরকম র””ক্তের ছোপ ছোপ দা”গ।নিধি এইবার আর চিঠি টি নাসারন্ধ্রের কাছে নিলো না।এইরকম অদ্ভুত প্রেমপত্রের শেষে যখন নির্জনের নাম দেখলো।তৎক্ষনাৎ নিধির বুকে মনে হয় হা”তুড়ি দিয়ে কেউ খুব জোরে আ””ঘাত করলো।ভ””য়ে জড়সড় হয়ে গেলো নিধি।”
“চলনবিল থেকে আসার পর নির্জন কে প্রায় ভুলে গিয়েছিলো নিধি।সেই সাথে নির্জনের দেওয়া প্রথম র””ক্ত”মাখা চিঠি,নির্জনের ধাপে ধাপে প্রতিশোধ নেওয়ার কাহিনী সবকিছু ভুলে গুলিয়ে খেয়েছে নিধি।কিন্তুু এতোদিন পর হঠাৎ এমন অদ্ভুত চিঠি পেয়ে, নিধি ওর মাথায় হাত রাখলো।আনমনে প্রশ্ন করলো,’এটা কি সত্যি প্রেমপত্র নাকি হু”’মকি পত্র?”
“এদিকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে শুনশান পিচঢালা রাস্তায় দুই হাত দুই দিকে মেলে, মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে লম্বাচওড়া উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের একজন সুদর্শন পুরুষ।রিমলেস চশমা টি ভেদ করে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির পানি নির্জনের চোখ দু’টোর সাথে বারবার মিলিত হচ্ছে।মুহূর্তের মধ্যে ঘোলাটে হয়ে গেলো চশমাটি।নির্জন চশমাটি খুলে প্যান্টের পকেটে রেখে আবারও দুই হাত মেলে খুব জোরে চি””ৎকার করে বলে উঠলো,
‘ও পৃথিবী আমি উচ্চশব্দ পছন্দ করি না।কিন্তুু নিজের হৃদয় নিংড়ে বলা কথাগুলো সবসময় দারুণ ভাবে উপভোগ করি।যেমন ভাবে আজ উপভোগ করেছে আমার ‘ডার্ক কুইন’।আজ আমি একা দাঁড়িয়ে তোমার আকাশ ভেদ করে আসা বৃষ্টি উপভোগ করছি।কিন্তুু যখন আমার ড্রিমগার্ল আমার বক্ষমাঝে চলে আসবে,তখন আমি তোমার ওই বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা তার ধারে-কাছেও ঘেঁষতে দেবো না।তাই যতো পারো আমাকে ভিজিয়ে নাও।তবে আমার ওপর বজ্রপাত নিক্ষেপ করো না।কারণ আমার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস টা,আমার প্রিয়তমার বক্ষে ত্যাগ করতে চাই।মনে রেখো,সে আমার.. আর শুধুই আমার হবে।যদি সে আমার না হয়,তাহলে কারো হবে না।”
“My Dark Queen was born just for me.She is only,only & only mine forever.”
#চলবে..