হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-০৭

0
5

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৭
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“এইজন্য বাবা-মায়েদের ইতিবাচক কথা সন্তানদের মেনে চলা উচিত।’কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই যুবকদল তাদের নৌকা থেকে নিধিদের নৌকায় চলে এলো।”

“৪জন তাগড়া যুবক যখন নিধিদের নৌকায় চলে এলো,তখনই নৌকার মাঝি ভ**য়ে ভ**য়ে বললো,’দয়া কইরা আপনারা আমার নৌকার কিছু কইরেন না।এই নৌকাই আমার শ্যাষ সম্বল।তাইলে পোলাপান লইয়া আমার পথে নামতে হইবো।”

“যুবকগুলোর মধ্যে একজন শ**য়*তানি হাসি দিয়ে বললো,’আরে বুড়ো ফা**লতু বকবক না করে চুপ কর।তোর নৌকার কোনো ক্ষ**তি করবো না।শুধু এই সাঁঝের পরীদের সাথে এনজয় করার সময় মাঝে মাঝে একটু দুলে উঠবে।চাইলে আমাদের সাথে তুইও যোগ দিতে পারিস।আমরা কাউকে কিছু বলবো না।”

“নাদিয়া এবং তোহা তো ভ**য়ে কাঁপাকাঁপি শুরু করেছে।ওদের গলা শুকিয়ে মনে হয় কাঠ হয়ে গেছে।কয়েকটি নৌকায় পর্যটক গুলো দূর থেকে মনে হয় সিনেমার শুটিং দেখছে।কেউ এগিয়ে এসে সাহায্য করছে না।বিষয় টা এইরকম হয়েছে যে ‘চাচা যার যার জান বাঁচা।”

“আশেপাশে থাকা নৌকার মাঝি গুলো ঐ স্থান থেকে বৈঠা ঠেলে দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলো।কারণ এখানে এগুলো নিত্যদিনের ঘটনা।এগুলো দেখতে দেখতে তারা অভ্যস্থ হয়ে গেছে।দিনের বেলা জায়গাটি যতটা নিরাপদ,সন্ধ্যার পরে ঠিক ততটাই বি**প*জ্জনক।”

“মাঝি ঠকঠক করে কাঁপছে আর ভাবছে,’কোন দুঃখে যে এই ৩টা মাইয়ারে আমার নৌকায় তুলছিলাম।আল্লাহ আমাগো বাঁচাও।”

“এদিকে নাদিয়া এবং তোহা চি**ৎকার শুরু করে দিয়েছে।নদীর ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে নৌকা অনবরত দুলছে।যুবকদলের মধ্যে লিডার টাইপ একজন ওদের দিকে তাকিয়ে খুব বা**জে ভাবে জিহ্বা নাড়িয়ে বলে উঠলো,’এতো দেখছি ডায়মন্ড, সোনা এবং রূপা সব একসাথে এসেছে!”

“আরেকজন চিবুকে হাত দিয়ে নিধির দিকে নোং**রা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
‘নেতা ২দিন আগে কিন্তুু আপনি একটা ডায়মন্ড কে নিয়ে মজা করেছেন,আজ আমাদের দিন।”

” লিডার ঘাড় এদিক-সেদিক ঘুরিয়ে,হাতের ৫আঙ্গুল ফুটিয়ে বললো,’আব্বে শা**লা তোরা জানিস না আমি বাসি মা**ল মুখে দেই না।আমি মাস্তি করার পর তোরা করবি।আপাতত ওই পেছনের দু’টো সোনা-রূপার সাথে মজা কর।আমি ডায়মন্ডের সাথে মজা নেই।’বলেই নিধির দিকে তাকিয়ে বি**শ্রী হাসি দিয়ে ওর হাত ধরতেই, নিধি তড়িঘড়ি করে একহাত দিয়ে ওর ব্যাগের চেইন খুলে একটা ধা**রালো ছু**রি বের করে ছেলেটার হাতে দিলো এক টান।ছেলেটার হাত থেকে ফিনকি দিয়ে র**ক্ত বের হলো।এদিকে বাকি ৩জন যুবকদল সবেমাত্র নাদিয়া এবং তোহার মুখে স্কচ টেপ লাগাতে যাবে,তখনই তাদের লিডারের আর্তচি**ৎকার শুনে মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট সেদিকে ঘুরিয়ে দেখলো, লোকটির হাত থেকে তাজা র**ক্ত পড়ছে।”

“যুবকদল নিধির দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো,একজন বললো,’শা**লি খুব তেজ তোর তাই না?দ্বারা আজ তোর সব তেজ আর দেমাগ ভে*ঙে গু*ড়িয়ে দিবো।’বলেই তাদের শার্টের পেছন থেকে বড় একটা রা**ম *দা বের করতেই,নিধি,নাদিয়া,তোহা এবং মাঝি খুব ভ**য় পেয়ে গেলো।মাঝি তৎক্ষনাৎ নৌকা আর বৈঠা রেখে নদীতে ঝাঁপ দিলো।যুবকদল রা**ম *দা এগিয়ে নিধি কে যখনই ধরতে যাবে,তখনই নিধি সাপের মতো ফোঁসফোঁস করে চি**ৎকার করে বললো,’নাদিয়া,তোহা তোরাও আমার সাথে নদীতে ঝাঁপ দে।’বলেই ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে পরপর ৩জন মানবী নদীতে ঝাঁপ দিলো।”

“সেটা দেখে ওই ৩জন যুবক রেগেমেগে যখন নদীতে ঝাঁপ দিতে যাবে,তখনই পেছন থেকে কাতর কন্ঠে লিডার টাইপ ছেলেটা বলে উঠলো,’আব্বে শা**লা ওই ৩পাখিরে পরে ধরিস।আগে আমাকে সামলা।দেখ বাঘিনী কিভাবে আমার হাত কে**টেছে।’বলেই আ**র্তনাদ করে উঠলো।যুবকদল তাদের খাইষ্টা নেতার কাছে গেলো।একজন বৈঠা নিয়ে নদীর ওপারে যাওয়ার জন্য চালাতে লাগলো,যেখান থেকে নিধিরা উঠেছে।”

“এদিকে নিধি সাঁতার কাঁটতে পারলেও তোহা তেমন পারে না।নিধি ওকে অনেকবার শেখাতে চেয়েছে।কিন্তুু তোহা শেখেনি।নৌকাটি নদীর এ পার থেকে কিছুটা দূরে ছিলো,তাই নিধি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো, কোনো চলমান নৌকা নেই।নদীর মধ্যেই নিধি তোহার হাত ধরে খুব কষ্ট করে সাঁতার কাঁটছে।এদিকে নাদিয়া প্রচন্ড ভ**য়ে মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে গেছে।তাই ও ধীর গতিতে সাঁতার কাঁটছে।”

“নির্জন এবং দিগন্ত প্রায় ১৫মিনিট যাবৎ নদীর পারে দাঁড়িয়ে নাদিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।কিন্তুু ওদের দেখা না পেয়ে বিরক্ত হয়ে দিগন্ত বললো,’বুঝলাম না!ওরা এতক্ষণে তো এখানে পৌঁছানোর কথা।এখনও আসছে না কেনো?’বলেই মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে নদীর দিকে ধরতেই, দিগন্তের চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেলো।উত্তেজিত হয়ে বললো,’নির্জন দেখ নদীতে ৩টা মেয়ে ভাসছে।২জন সাঁতার কাঁটছে,আরেকজন পারছেনা।আরে আরে ওরা তো দেখছি নিধি,নাদিয়া আর তোহা।ওদের এই অবস্থা হলো কি করে?”

“নির্জন বুকের ওপর দুই হাত ভাজ করে ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিলো,’হয়তো সবই ওদের কর্মের ফল।”

“দোস্ত আমার নাদিয়ার সাঁতার কাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি গেলাম।তুই পারলে নিধি আর তোহাকে সাহায্য কর।’উত্তেজিত স্বরে কথাগুলো বলেই তড়িৎ গতিতে নদীতে ঝাঁপ দিলো দিগন্ত।নির্জন সেদিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণা হালকা প্রসারিত করে, পকেট থেকে বাটন ফোন বের করে খুব মনযোগ দিয়ে সাপের গেমস খেলতে লাগলো।”

———————
“নদীর ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে নিধির তোহাকে এক হাত দিয়ে ধরে রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছে।তোহাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিধির সাথে তাল মিলিয়ে সাঁতার কাঁটার;কিন্তুু অনভিজ্ঞ হওয়ায় পেরে উঠছে না।তার ওপর নদীতে বইছে উথাল-পাতাল ঢেউ।দিগন্ত দ্রুত সাঁতার কেঁটে এসে নাদিয়ার হাত মুঠোয় করে ওকে নদীর পারে উঠতে সাহায্য করলো।নাদিয়া ভ**য়ে এবং নদীর পানি কিছুটা খাওয়ার ফলে সেন্সলেস হয়ে গেছে।দিগন্ত পা**গলের মতো করছে ওর সেন্স ফেরানোর জন্য।নির্জন এখনও সাপ খেলায় ব্যস্ত।তাকে দেখলে মনে হবে সে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত।এখন কারো দিকে তাকানোর সময় নেই।”

“নিধি তোহা কে আর ধরে রাখতে পারলো না।নদীর পারের কিছুটা কাছে এসে ওর হাত ছেড়ে দিলো।নিধির প্রচন্ড হাত ব্যথার কারণে খুব কষ্ট করে সাঁতার কেঁটে নদীর পারে উঠলো।সন্ধ্যার পর চলনবিলের চারিপাশ কিছু টা নির্জন হয়ে যায়।যারা এই বি**প*জ্জনক বিষয়ে ভালোভাবে জানে, তারা এই স্থান সন্ধ্যার আগেই ত্যাগ করে।এর আগেও পর্যটকদের এখানে ছি**নতাই,রা*হা**জানি অনেক কিছুর সম্মুখীন হতে হয়েছে।”

“নিধি ঘনঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে দেখলো,তোহা হাত এদিক-সেদিক ছুঁড়ে নায়িকাদের মতো অনবরত বলছে,’বাঁচাও বাঁচাও..হেল্প হেল্প।”
“তোহার চি**ৎকার শুনে নিধির বুকটা মনে হয় ফেটে যাচ্ছে।হঠাৎ নিধি দেখলো, কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে নির্জন মোবাইলে কিছু একটা করছে।নির্জন কে দেখে ভড়কে গেলো নিধি।অবাক হয়ে ভাবলো,’এই মানুষটা এখানে এভাবে শঙের মতো দাঁড়িয়ে আছে, উনি কি আমাদের চি**ৎকার শুনতে পায় নি?কই আমি তো স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।এর মানে উনিও শুনতে পেয়েছে।তবুও কেনো সাহায্যে করতে গেলো না!উনি মানুষ নাকি অন্য গ্রহের প্রাণী?”

“নিধির ভাবনার মাঝেই আবারও তোহার আর্তচি**ৎকার ভেসে এলো,নিধি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না।কোনো কিছু না ভেবে আবারও ঝাঁপিয়ে পড়লো নদীতে।নিধি সাঁতার কেঁটে তোহার কাছে পৌঁছানোর আগেই,সেখানে আরেকজন পৌছে গেলো।”

“নিধি লোকটিকে দেখে সাঁতার না কেঁটে দাঁড়িয়ে গেলো।এদিকে লোকটি তার পুরুষালি শক্ত হাত দিয়ে তোহার দুই বাহু ধরে ক্ষিপ্ত স্বরে বললো,’এই মেয়ে এখানে তো আপনার গলা পর্যন্ত পানি আছে।আপনি চাইলেই দাঁড়াতে পারেন,তবুও এমন শিং মাছের মতো লাফাচ্ছেন কেনো?আমি আরও কত কষ্ট করে নৌকা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।চেঁচামেচি না করে দাঁড়ান বলছি।”

“লোকটির শক্ত-পোক্ত হাতের স্পর্শ পেয়ে এবং কঠোর স্বরে কথাগুলো শুনে তোহা ভালোভাবে দাঁড়ালো।দেখলো সত্যি ওর গলা সমান পানি আছে।তোহা ভাবলো,’আল্লাহ এর মানে আমি বেঁচে আছি!আল্লাহ এইবারের মতো আমায় বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য তোমায় ধন্যবাদ,শুকরিয়া।’ভেবেই লোকটির দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো,তার গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলানো।আবছা-অন্ধকারে চেহারাটা অস্পষ্ট।তবে দেখে মনে হচ্ছে, তোহার থেকে বেশ লম্বা।তোহা আমতা আমতা করে বললো,’আ আ আসলে আমি খুব ভ**য় পেয়ে গেছিলাম।আমি ভেবেছিলাম এই নদীর পানিতেই হয়তো আমার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হবে।তাই..

“পেছন থেকে নিধি কটমটিয়ে বলে উঠলো,’হ্যা দুষ্টু কোকিলদের কুক কুক করে ডেকে এনে আমাদের বিপদে ফেলে তো এগুলোই ভাববি।আজ যদি নদীর মাঝপথে এই অঘটন ঘটতো,তাহলে ৩জনে সেখানেই ডুবে যেতাম।ভাগ্যিস, নদীর পারের কিছুটা কাছে এসে কাহিনী টা ঘটেছে।এখন নায়িকাদের মতো রং ঢং না করে নদীমাতার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে আমাকে উদ্ধার কর।’বলেই নিধি হনহন করে উঠে গেলো।”

“তোহা অচেনা-অজানা লোকটির দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিধি কে অনুসরণ করে চলে গেলো।লোকটি হতভম্ব হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।ভাবলো,’যাহ বাব্বা এতো কষ্ট করে মেয়েটিকে বাঁচাতে নৌকা থেকে নেমে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেলাম, তবুও একটা থ্যাংকস না দিয়ে হনহন করে চলে গেলো।সত্যি অধিকাংশ নারীজাতি বড়ই অকৃতজ্ঞ।তবে সবাই নয়।”

————-
“নিধি নদীর পারে ওঠার সময় দেখলো, নির্জন নিজের মুখের ওপর মোবাইলের আলো ধরে নিধি এবং তোহার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এই মুহূর্তে রিমলেস চশমা পরিহিত পুরুষ টি কে দেখলে যে কেউ ভাববে,লোকটি হয়তো নদীতে ভেসে আসা দুইজন মানবীকে নিয়ে উপন্যাস লিখবে।সেই উপন্যাসটির নাম হবে,’নদীর বক্ষে একজোড়া পাতিহাঁস’।”

“দিগন্ত নাদিয়ার হাতে-পায়ে মাসাজ করার কিছুক্ষণ পর নাদিয়ার জ্ঞান ফিরেছে।নাদিয়ার জ্ঞান ফিরতেই দিগন্ত খুশিতে আত্মহারা হয়ে যখনই নাদিয়া কে জড়িয়ে ধরতে যাবে,তখনই নাদিয়া পা হেঁচড়ে দূরে সরে গিয়ে অভিমানী কন্ঠে বললো,’খবরদার চরিত্রহীন,মিথ্যাবাদী পুরুষ ভুলেও আমার কাছে আসবেন না।”

“নদিয়ার মুখে এমতাবস্থায় এহেন কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলো দিগন্ত।ভাবলো,’এই মেয়ের কি তেজ!নদীর পানিতে নাকানিচুবানি খেয়েও তেজ কমেনি।এখনও দুপুরের সেই কথা ধরে বসে আছে।আমি তো প্রায় ভুলেই গেছিলাম।সত্যি ঐ গান টার কথাগুলো ঠিক,
“মেয়েদের মন বোঝা,নয় রে নয় সোজা।”

ভেবে দিগন্ত নাদিয়ার দিকে করুণ দৃষ্টি দিয়ে বললো, ‘হানি বিশ্বাস করো আমার কোনো রিলেশন ছিলো না।ওই আফরিন মেয়েটা জাস্ট আমার ইউনিভার্সিটির ক্লাস ফ্রেন্ড ছিলো।ও আমাকে খুব পছন্দ করতো,কিন্তুু আমি পাত্তা দিতাম না।কিন্তুু ও নিজে থেকে এসেই আমার সাথে ঘেঁষতে চাইতো।তখন তোমাকে এতো রিকোয়েস্ট করার পরেও তুমি রাজি হওনি বলে, আমি রেগে গিয়ে ওইসব কথা বলেছি।বিশ্বাস করো হানি তুমি আমার জীবনে প্রথম নারী আর তুমি আমার জীবনে শেষ নারী।’একাধারে এতোগুলো মিথ্যা বাণী শুনিয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস ছাড়লো দিগন্ত।”

“নাদিয়া মুখ ভেং**চি কে**টে বললো,’ইশশ আসছে আমার চরিত্রবান সুপুরুষ..একটা মেয়ে তার সাথে ঘেঁষতে চাইবে,আর উনি সাড়া না দিয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে।এইসব চাপাবাজি অন্য কোথাও গিয়ে ছাড়বেন।এখন এটা বলুন, আমার আগে কয়জনের সাথে প্রেম করেছেন?”

“নাদিয়ার এহেন প্রশ্ন শুনে দিগন্ত বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো।আনমনে ভাবলো,’এই রে এখন কি বলবো?এতোগুলো প্রেমিকার কথা বললে আজ আমার নিশ্চিত গ**র্দান যাবে।ধুর..এই প্যারা আর ভালো লাগে না।”

“নাদিয়া চেঁচিয়ে আবার বলে উঠলো,’কি হলো?কথা বলছেন না কেনো?আবার পেটের মধ্যে মিথ্যার ঝুড়ি সাজাচ্ছেন তাই তো?”

“এটা শুনে দিগন্ত নাদিয়া কে অবাক করে দিয়ে কান ধরে উঠবস করতে থাকলো।আকস্মিক দিগন্তের এহেন কান্ডে ভড়কে গেলো নাদিয়া।চোখের সামনে একজন ২৭বছর বয়সী যুবক কে এভাবে কান ধরে উঠবস করতে দেখে নাদিয়া আর নিজের রাগ কে পুষে রাখতে পারলো না।হো হো করে হেসে উঠলো নাদিয়া।হাসতে হাসতে বললো,’প্লিজ প্লিজ এইবার তো থামো।যাও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।তবে আর কখনোও আমার সামনে অন্য কোনো নারীর নাম মুখেও আনবে না।আমার খুব হিংসা হয়।”

“নাদিয়ার মুখে ‘তুমি’ ডাক শুনে দিগন্ত বুঝে গেলো নাদিয়ার শক্ত মন মমের মতো গলে গেছে।সত্যি নারীরা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে যতোটা কঠোর হতে পারে,আবার সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে মমের মতোই গলে যায়।নারীদের মন বোঝা বড়ই দুষ্কর।”

“কথাগুলো ভেবে দিগন্ত নদীর পারে রাস্তায় থেকে ভেসে আসা সোডিয়ামের মৃদু আলোতে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো,কিছু ছোট ছোট কাশফুল গাছ।দিগন্ত দ্রুত পায়ে সেখানে গিয়ে কয়েকটি কাশফুল গাছ তুলে এনে নাদিয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,’আমার প্রিয় হানি তুমি ব্যতীত আর কখনোও কারো নাম আমি মুখে আনবো না।বিশ্বাস করো তুমি আমার জীবনে প্রথম আর তুমিই শেষ।তুমিহীনা এই জীবন মূল্যহীন।তুমিই আমার সকল সুখের মূল।এখানে তো গোলাপ ফুল নেই, তাই কাশফুল দিয়ে প্রপোজ করছি।দ্বিতীয়বারের মতো আমার হৃদয়ের ক্ষুদ্র ভালোবাসা গ্রহণ করো প্লিজ।আই লাভ ইউ সো সো সো মাচ।”

“নদীর পারে এতো সুন্দর ভাবে আনএক্সপেক্টেড প্রপোজ পেয়ে, নাদিয়া তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো।নাদিয়াও হাঁটু গেড়ে বসে দিগন্তের কাছ থেকে কাশফুল গুলো নিয়ে বললো,’আমিও তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি দিগন্ত।গোলাপ ফুল লাগবেনা।তুৃমি ভালোবেসে আমায় কাশফুল দিয়েছো, এতেই আমি ভীষণ খুশি হয়েছি প্রিয়।”

“দিগন্ত এবং নাদিয়ার এই রোমান্টিক দৃশ্য দেখে পেছন থেকে ‘ইয়াহু..বলে হাত তালি দিয়ে উঠলো নিধি এবং তোহা।ওদের ঠিক পেছনে নির্জন মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নিধি বললো,’ওয়াও এইতো এক জোড়া কবুতর মিলে গেছিস।এখন আমাদের কতোটা ভালো লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না।”

“নাদিয়া ওদের কে দেখে লজ্জা পেয়ে গেলো।লজ্জামাখা হাসি দিয়ে দিগন্ত কে বললো,’আমরা ৩জন পুরো ভিজে গেছি।ভেজা জামা-কাপড় কিভাবে পড়ে থাকবো বুঝতে পারছি না।আমাদের ৩জনের ব্যাগে মোবাইল,জামা-কাপড় সহ অনেক কিছু ছিলো।সবকিছু নদীর পানিতে বিলীন হয়ে গেছে।”

“দিগন্ত একটু ভেবে বললো,’আমিও পুরোপুরি ভিজে গেছি,আমার পকেটে মোবাইল ছিলো সেটাও মনে হয় অ**ক্কা গেছে।।তবে আমার ব্যাগে এক্সট্রা ড্রেস আছে।আমি ওটা পড়ে নেবো।আর তোমাদের জন্য আমি আর নির্জন দোকানে গিয়ে আপাতত চালানোর জন্য জামা-কাপড় আনবো।তোমরা একটু অপেক্ষা করো,আমরা যাবো আর আসবো।’বলে দিগন্ত নির্জন কে নিয়ে চলে গেলো।”

“সোডিয়ামের টিমটিমে আলোতে নদীর পারে বসে আছে ৩জন মানবী।সুবিশাল নদী থেকে ভেসে আসা তীব্র বাতাসে বারবার ৩জনের ভেজা শরীরে রিনরিনিয়ে কাঁপন ধরছে।”

“নীরবতা ভেঙে নিধি তোহা কে বললো,’তোর জন্য আজ সবকিছু হয়েছে।তুই যদি চি**ৎকার করে ঐ বিখ্যাত কাকের গান না গাইতি,তাহলে এই কান্ড ঘটতো না।”

“তোহা কপট রাগ দেখিয়ে বললো,’দেখো আপু খামোখা আমাকে দোষারোপ করবে না।আমি কি জানতাম যে, পেছনে ওই ছ্যাচড়া গুলো আছে?”

” ঐ ছ্যাচড়াগুলো কে তো তুই কুক কুক করে ডেকে এনেছিস।”

“আমি মোটেও ওদের ডেকে আনি নি।ওরা হয়তো প্রথম থেকেই আমাদের ফলো করেছে।”

“মোটেই না।আমি নৌকায় ওঠার পর আশেপাশে তাকিয়ে দেখেছি,ওরা কোথাও ছিলো না।”

“দেখো আপু তখন নদীতে অনেকগুলো নৌকা ছিলো,যেকোনো একটার মধ্যে ওরা ছিলো।”

“সব দোষ তোর।তোর গানের জন্য এগুলো হয়েছে।”

“ইশশ আসছে..সব দোষ তোমার,তুমি যদি নদী ভ্রমন করার জন্য নৌকায় না উঠতে,তাহলে আজ আমাদের এই ঘোর বিপদের সম্মুখীন হতে হতো না।”

“নিধি রেগেমেগে ফায়ার হয়ে বললো,’কিইই সব দোষ আমার?দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা।’বলে যখনই তোহা কে থা**প্পড় দেওয়ার জন্য হাত উঠাতে যাবে,তখনই ওর হাত খপ করে ধরে বসলো নাদিয়া।”

“কন্ঠে ক্রোধ নিয়ে বললো,’তোদের দুই বোনের চুলোচুলি ঢাকায় গিয়ে করবি।না জানি বাবা-মা আমাদের জন্য কতোটা চিন্তা করছে।আর তোরা এখানে মুরগির লড়াই শুরু করে দিয়েছিস।বাবা রে বাবা তোরা দুই বোন দেখছি ঝগড়ায় কেউ কারো থেকে কম না।এখন ঝগড়া বন্ধ করে কিভাবে বাসায় পৌঁছাবো,সেই চিন্তা কর।রাতে তো আর এখানে থাকা সম্ভব না।আর যদি আমার কথা না শুনে আবারও ঝগড়া করিস,তাহলে আমি এই নদীর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়বো বলে দিলাম।”

“নাদিয়ার কঠোর কন্ঠে কথাগুলো শুনে নিধি এবং তোহা দু’জনেই নীরব হয়ে গেলো।”

————
“এদিকে নির্জন এবং দিগন্ত ওদের ৩জনের জন্য ৩টা সিম্পল ড্রেস কিনে নদীর পার ঘেঁষে হাঁটছে।দিগন্ত নির্জন কে বললো,’আচ্ছা তুই নিধিদের সাহায্য করলি না কেনো?আমি কতো করে তোকে বললাম।অথচ তুই এখনও ইগো নিয়ে বসে আছিস।”

“নির্জন কপালের সামনে আসা চুলগুলো হাত দিয়ে একপাশে সরিয়ে বললো,’ওরা নদীর মাঝখানে পড়ে যায় নি,নদীর পারের খুব কাছাকাছি পড়েছে।তাছাড়া দু’জনেই সাঁতার কাঁটছিলো।যদিও নিধির বোন ওর সাথে তাল মেলাতে পারছিলো না,তবুও অবশেষে তো পেরেছে।তাই সাহায্য করার প্রয়োজন মনে করিনি।আর নাদিয়া তো তোর প্রেমিকা,তাই তুই থেমে থাকতে পারিস নি।”

“নির্জনের কাটকাট জবাবে দিগন্ত যা বোঝার বুঝে গেলো।কয়েক সেকেন্ড পর মুচকি হেসে বললো,’দোস্ত তোকে অনেক ধন্যবাদ, এতোগুলো কথা আমাকে শিখিয়ে দেওয়ার জন্য।আজ যদি ঐ কথাগুলো নাদিয়ার কাছে না বলতাম,তাহলে নিশ্চিত আমাদের ব্রেকআপ হয়ে যেতো।তবে শেষ দিকে নাদিয়া যখন আরও ক্ষেপে গিয়েছিলো,তখন আমি বুদ্ধি করে কান ধরে উঠবস করেছি।তারপর ও শান্ত হয়েছে।”

“নির্জন সাধারণত খুব কম হাসে।শুধুু দিগন্তের সাথে মাঝে মাঝে একটু হেসে কথা বলে।তবে যখন নির্জন মুচকি হাসে, তখন দিগন্ত নিজেই ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।আসলে যেই মানুষ গুলো সাধারণত কম হাসে।মাঝে মাঝে তারা হেসে উঠলে দেখতে দারুণ লাগে।তো দিগন্তের মুখে কান ধরে উঠবস করার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।ব্যঙ্গ করে বললো,’সিরিয়াসলি!তুই নাদিয়ার রাগ ভাঙানোর জন্য কান ধরে উঠবস করেছিস?হাউ ফানি ইয়ার!তবে বিয়ের পর বউ রাগ করলে,রাগ ভাঙানোর জন্য ভুলেও এভাবে কান ধরে উঠবস করবি না।”

“তাহলে কিভাবে রাগ ভাঙাবো।”

“নির্জন মুখে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,’ডার্ক রোমান্স করে।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে