হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-০৫

0
4

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“ঠিক তখনি ওর পায়ের ওপর শীতল কিছু অনুভব করতেই,আধো-আলো ছায়াতে নিচে তাকাতেই ফোন নিচে ফেলে দিয়ে আর্তচি*ৎ**কার দিয়ে বললো,’ওমা গো ও বাবা গো সাপ সাপ সাপ….”

“নাদিয়া গতকাল রাতে দিগন্ত কে ফোন করে জানিয়েছে,যে ওরা চলনবিলে ঘুরতে যাবে।এটা শুনে দিগন্তও সেখানে যেতে চেয়েছে।নাদিয়া মনে মনে এটাই চেয়েছিলো।তাই খুশি হয়ে ‘হ্যা’ বলে দিয়েছে।”

“রাতে যখন নাদিয়া দিগন্তের সাথে প্রেমালাপে ব্যস্ত,তখনই
নাদিয়া হঠাৎ ভ**য় পেয়ে,দিগন্তের ফোন কেটে দিয়ে ফোন নিচে ফেলে দেয়।তারপর দিগন্ত ২-৩বার কল করেছে, কিন্তুু নাদিয়া রিসিভ করেনি।দিগন্ত ভেবেছে, নাদিয়া হয়তো কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে গেছে।নাদিয়া মাঝে মাঝে এমনটা করে।তাই দিগন্তও ঘুমিয়ে পড়েছে।”

“সকাল ৮টার দিকে নির্জন দিগন্তকে ফোন দিলো।দিগন্ত নাদিয়ার সাথে ঘুরতে যাবে,তাই অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে।আর এখন ঘুমঘুম চোখে দিগন্ত কল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই,নির্জন বললো,’দিগন্ত আজ কাজের প্রেশার কম।তাই ভাবছি, সন্ধ্যার পর একটু হাতিরঝিল গিয়ে ঘুরে আসবো।তোর তো বিকাল ৫টায় অফিস টাইম শেষ হয়ে যায়।তুই কি যাবি?”

“দিগন্ত হাই তুলে ঘুমঘুম চোখজোড়া হাত দিয়ে আলতো করে কচলে বললো,’নারে আজ কে যেতে পারব না।আজ দুপুর ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জের চলনবিলে নাদিয়ার সাথে ঘুরতে যাবো।আজ আমাদের প্রথম ডে**ট বলে কথা।তাছাড়া ওই হাতিরঝিলে গিয়ে রাস্তার ঢালে ঘাসের ওপর বসে থাকা এতোগুলো জুটির রোমান্টিক সিন দেখলে, আমার কেমন কেমন ফিল হয়।তুই তো আবার এগুলো কেয়ার করিস না।তাই তুই একাই ঘুরতে যা।”

“নির্জন মৃদুস্বরে বললো,’ওহহ।”

“দিগন্ত চোখজোড়া কচলে আবারও বলে উঠলো, ‘তবে ডে**টে গিয়েও শান্তি পাবো না,নিধি আর তোহাও যাবে।কি যে বিরক্ত লাগছে!গার্লফ্রেন্ডের সাথে একান্তে শান্তি মতো সময়টাও কাটাতে পারবো না।আমার হানি টা আমার মন টাই বোঝে না।”

“নির্জন ফোনের ওপাশ থেকে ভ্রু জোড়া কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, ‘এর মানে তোরা মোট ৪জন যাচ্ছিস?”

“নির্জন এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেই,হুশে এলো দিগন্ত।তৎক্ষণাৎ জিহ্বায় কা**মড় দিয়ে ভাবলো,’ইশশ নিজের মাথা দিয়ে নিজেরই ফুটবল খেলতে ইচ্ছে করছে।নিজেকে কয়েকটা উদ্ভট টাইপ গা**লি দিয়ে বললো,’দোস্ত প্রচন্ড ঘুমে ছিলাম তো;তুই তো জানিস আমি ঘুমের মধ্যে উল্টাপাল্টা কতো কথা বলি।ইয়ে মানে…আমরা ৪জন যাবো না,শুধু ২জন যাবো।কি হয়েছে বলতো,ওই যে ৩-৪দিন আগে তুই নিধির সাথে যেই ঘটনা ঘটিয়েছিস সেটাই মাথার মধ্যে ঘুরছিলো;তাই ভুলে বলে ফেলেছি।”

“নির্জন কোনরকমে হাসি আটকে রেখে বললো,’যারা ঘুমের ঘোরে কথা বলে,পরবর্তী তে তারা কি বলেছে সেটা মনে রাখাতো দূরের কথা;বলতেও পারে না যে তারা কি বলেছিলো।তুই তো দেখছি গড়গড় করে সব বলে দিলি।সত্যি তোর মেধা খুব প্রখর।আচ্ছা তোর কথা বিশ্বাস করলাম।কিন্তুু অনেকদিন যাবৎ আমারও একটু দূরে ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে।বিশেষ করে নদীর আশে-পাশে ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে।”

“দিগন্ত বললো,’তো বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ঘুরে আয়।তাহলেই তো হয়।”

“নির্জন ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,’ইডিয়ট কোথাকার!বুড়িগঙ্গা নদীর পঁচা পানিতে তোকে চু**বিয়ে মা**রবো।”

“দিগন্ত শুকনো ঢোক গিলে ভাবলো,’তাহলে কি ও আমাদের সাথে ঘুরতে যেতে চাইছে?না না না ওকে ওখানে নিলেই তো হিটলার গিরি শুরু করে দিবে।নাদিয়া এবং নিধির কোনো ক্ষ**তি হোক এমন কিছু আমি চাই না।কিন্তুু কিভাবে ওকে না করি?ওহ আইডিয়া পেয়েছি, ওকে মিথ্যা বলবো।’ভেবে গলা খাঁকারি দিয়ে নাক টেনে বললো,’দোস্ত এইমাত্র কপালে হাত দিয়ে দেখলাম তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকেও মনে হয় বেশি।কেমন যেন জ্বর জ্বর ভাব।ভাবছি আজকের ডে**টে যাওয়া ক্যান্সেল করে দিবো।”

“নির্জন একটু অবাক হওয়ার ভঙ্গিমা করে ঠোঁট টিপে হেসে বললো,’সে কি এতো অল্প সময়ের মধ্যে তোর জ্বরও এসে পড়লো।আচ্ছা ওয়েট কর আমি এক্ষুনি তোর বাসায় আসছি।আজ আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নেবো।এমনিতেও আইটি ফার্মে কাজ নিয়ে এতো বাঁধা-ধরা নিয়ম নেই।আমি তোর বাসায় আসছি।আর আন্টিকে বলবি, আমার জন্য বিরিয়ানি রান্না করতে।আমি এসে বিরিয়ানি খাবো আর সারাদিন তোর সেবা-যত্ন করবো।সুখে-দুঃখে বন্ধুই তো বন্ধুর পাশে থাকে তাই না?”

“দিগন্ত বুঝে গেছে, যে নির্জনের মতো ধূর্তবাজ লোক ওর পিছু ছাড়বে না।খামোখা কতগুলো মিথ্যা বুলি খরচ করলো।আর আজ যদি সত্যি নাদিয়ার সাথে ঘুরতে যাওয়া না হয়,তাহলে নাদিয়া নিশ্চিত ব্রেকআপ করে দেবে;যেই গোমড়ামুখো মেয়ে।তাছাড়া আমারও তো ওর সাথে সময় কাটাতে ইচ্ছে করে।ধুর..আচ্ছা ওকে বুঝিয়ে বলি সবকিছু।আজ আমার সব শক্তি খরচ করে হলেও ওকে আটকে রাখবো।’ভেবে বললো,’দোস্ত আসলে এতক্ষণ তোর সাথে মজা করছিলাম হিহিহি।আমার শরীর টা ভালো আছে।আর ঘুরতেও যাবো।তবে আমাদের মধ্যে তুই কাবাব মে হাড্ডি হলে, নাদিয়া খুব রাগ করবে।”

” নির্জন মুচকি হেসে বললো,’ডোন্ট ওয়ারি;আমি তোদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবো।আমি শুধু নদীর অপরিসীম সৌন্দর্য উপভোগ করতে যাবো।আর হ্যা,নিধি এবং ওর বোন ও যাবে তাই না?দ্যাখ আমার সাথে একদম মিথ্যা কথা বলার চেষ্টা করবিনা।”

“দিগন্ত আমতা আমতা করে বললো,’ইয়ে মানে..হুমম ওরাও যাবে।কিন্তুু প্লিজ দোস্ত তোর দু’টো পায়ে ধরি, তুই নিধির সাথে গতবারের মতো কিছু করিস না।তুই আমায় কথা দে, তুই ওর সাথে গতবারের মতো উল্টাপাল্টা কিছু করবিনা।আর আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথেও কিছু করবিনা।তাহলে আমি চিরকুমার হয়ে যাবো।”

“নির্জন সাবলীল ভাবে উত্তর দিলো,’ওকে আই প্রমিজ ইয়ার।গতবারের মতো এমন কিচ্ছু করবো না।এবার হয়েছে তো?”

“দিগন্ত নির্জনের এতো সহজে রাজি হওয়া দেখে খুব অবাক হলো।পরক্ষণেই ভাবলো,’হয়তো নির্জন ওর ভুল বুঝতে পেরেছে।’ভেবে বললো,’ঠিকাছে তাহলে আজ আমরা সাড়ে ১১ টার দিকে বাইক নিয়ে বের হবো।পৌঁছাতে ৩টার মতো বেজে যাবে।ওরাও ঐ সময়ে বের হবে,এখন রাখছি।”

“নির্জন মুচকি হেসে ফোন রেখে দিলো।”

———–
“এদিকে সকাল ১০টা থেকে শুরু করে প্রায় ১ঘন্টা যাবৎ ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে সাজগোজ করছে নিধি।একবার সেজে আবারও উঠিয়ে ফেলেছে।এদিকে তোহা অনেক আগেই রেডি হয়ে বসে আছে।তোহা চোখজোড়ায় বিরক্তিকর ভাব নিয়ে নিধির কান্ড দেখছে।ঘড়ির কাটায় ১১টা বাজতেই,তোহা আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।গলা টা একটু উচু স্বরে রেখেই বললো,’আপু এই নিয়ে ৫বার সেজেছো, আবার উঠিয়ে ফেলেছো।রাতে বললে সকালে যাবে।তারপর তুমি পুরো সকাল ঘুমিয়ে পার করলে।আর এখন তো সেজেই সময় পার করছো।আমরা কখন যাবো?আর কখন আসবো?প্লিজ এখন এইসব বন্ধ করো।ওখানে তোমাকে কেউ দেখতে আসবে না।”

“নিধি আড়চোখে একবার তোহার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট জোড়ায় হালকা পিংক কালার লিপস্টিক দিয়ে বললো,’তোর গলাটা বেশ বড় হয়ে গেছে দেখছি।বড় বোন কে কিভাবে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয়, সেইসব দেখছি গুলিয়ে খেয়েছিস।নেক্সট টাইম এভাবে কথা বললে,’তোর শখের ওই টকটকে লাল লিপস্টিক দিয়ে আমি ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় পেইন্টিং করবো।অনেক দিন যাবৎ চাঁদ মামার মুখ খানা আঁকতে ইচ্ছে করছে।ভাবছি, তোর লিপস্টিক টা কে রংতুলি হিসাবে ব্যবহার করবো।দারুণ হবে তাই না?”

“নিধির কথা শুনে তোহা খুব ভ**য় পেয়ে গেলো।কিছুদিন আগেই খুব শখ করে লিপস্টিক টা কিনেছে।এইসব ঠুনকো বিষয় নিয়ে নিধি যে ওভার রিয়েক্ট করবে,এটা ও ভাবেনি।অবশ্য নিধির কথা না শুনলেই,তোহার কিছু না কিছু ক্ষ***তি করে।’ভেবেই তোহা নীরব হয়ে গেলো।ঘড়ির কাটায় ১১টা ১৫মিনিট বাজতেই, আগে থেকে ভাড়া করে রাখা ড্রাইভার ফোন করে বললো যে সে নিধির পাঠানো লোকেশনে পৌঁছে গেছে।”

“নিধি ঝটপট করে ওড়না টা পিন দিয়ে সেটআপ করে,মুখে একটু পাউডার দিয়ে তোহা কে বললো,’আমাকে খুব সুন্দর লাগছে তাই না?আজ দেখবি ছেলেরা আমাকে দেখে জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাবে।রাস্তায় ছাই উড়বে ছাই..বুঝেছিস..”

“তোহা মুখে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে উপরে বললো,’দারুণ লাগছে তোমায়,পুরো ক্যাটরিনা কাইফ।সত্যি আজ তোমার রূপের আগুনে ছেলেরা কয়লা হয়ে নিভু নিভু করে জ্বলবে।’বলে মনে মনে বললো,’হরর ফিল্মের সাদা ভূতের মতো লাগছে হুহ।”

“নিধি বললো,’চল চল গাড়ি চলে এসেছে।’বলেই বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হন হন করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।তোহা ও ব্যাগ নিয়ে নিধির পিছু ছুটলো।”

“নিধি নাদিয়াদের বাসার সামনে এসে ওকে ফোন করলো।কিন্তুু নাদিয়া রিসিভ করলো না।নিধি মুখে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে আরও ২বার ফোন করলো।কিন্তুু এইবারও নাদিয়া ফোন ধরলো না।নিধি তো রেগেমেগে ফায়ার হয়ে গেলো।বললো,’এই নাদিয়া কি কোমায় চলে গেলো নাকি?ওকে কতবার করে বললাম, ঘুম থেকে উঠে যেন রেডি হয়ে থাকে।সাড়ে ১১টা বেজে গেছে, এখনও কোনো খবর নেই।’বলেই তোহার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তুই এখানে বসে থাক,আমি এই যাবো আর এই আসবো।’বলে গাড়ি থেকে বের হয়ে নাদিয়ার বাসায় গেলো।”

“নিধি নাদিয়ার বাসায় ঢুকে ওর মা কে সালাম দিয়ে নাদিয়া কোথায় জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন,’নাদিয়া ঘুমাচ্ছে।’
নিধি বেশ অবাক হয়ে নাদিয়ার রুমে গিয়ে দেখলো,নাদিয়া হা করে ঘুমাচ্ছে।সেটা দেখে নিধির রাগ মুহূর্তেই উড়ে গিয়ে মিষ্টি করে হেসে দিলো।নাদিয়ার কাছে গিয়ে ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,’এভাবে হা করে থাকলে মুখের মধ্যে হাতি ঢুকে যাবে তো।”

“নিধির ফিসফিস করে কথাগুলো কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই নাদিয়া চোখজোড়া খুলে আবারও চি**ৎকার করে বললো,’ও মা গো ও বাবা গো সাপ সাপ সাপ..’
এটা শুনে নিধি তড়িৎ গতিতে নাদিয়ার মুখ চেপে ধরে বললো,’ওই পেঁচামুখী আমি সাপ না,আমি নিধি।”

“নিধির কথা শুনে নাদিয়া পিটপিট করে তাকিয়ে ‘উমম’ শব্দ করতে থাকলো।
নিধি বুঝতে পেরে নাদিয়ার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো।নাদিয়ার চেহারায় ভ**য়ার্ত ভাব দেখে নিধি বললো,’কি হয়েছে?এতো ভ**য় পেয়েছিস কেনো?”

“নাদিয়া শুকনো ঢোক গিলে বললো,’গতকাল রাতে আমার সাথে একটা ভ**য়ং**কর ঘটনা ঘটেছে।”

“কি ঘটেছে?”

” গতকাল রাতে বেলকনিতে টুলে বসে আমি যখন দিগন্তর সাথে কথা বলছিলাম,তখন হঠাৎ পায়ের কাছে শীতল কিছুর অনুভব হতেই, তাকিয়ে দেখি একটা সাপের মতো কিছু।তো আমি ভ**য়ে ফোন ফেলে দিয়ে লাফিয়ে উঠে চি**ৎকার দেই।আমার রুমের দরজা বন্ধ ছিলো।তাই বাবা-মা আমার চি**ৎকার শুনতে পায় নি। কয়েক মিনিট পর চোখ খুলে দেখি ওটা সাপ নয়,কেঁচো।পিচ্ছিল কেঁচো টা আমার কাছে না এসে,ফ্লোরে লেপ্টে শুয়ে আছে।আবছা অন্ধকারে ওটা কে দেখে তো আমার গা কেমন ঘিনঘিন করছিলো।তারপর আমি বেলকনির লাইট জ্বালাতেই দেখি, ওটার লেজের সাথে রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে দেওয়া একটা চিরকুট।তো তখন আমার ভ**য় অনেক টা কেটে যায়।আমি
কোনরকমে চিরকুটটি নিয়ে প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে কেঁচো টা অনেক দূরে ফেলে দেই।তারপর চিরকুটের ভাজ খুলতেই দেখি,কাগজের মাঝখানে ইংরেজি বড় অক্ষরে লেখা ‘JUST TRAILER’ বলেই নাদিয়া নিস্তব্ধ হয়ে যায়।”

“নিধির মনে পড়ে যায় সেই র**ক্তমাখা চিঠির কথা।নিধি কাঁপানো স্বরে জিজ্ঞেস করে,’হ্যা রে তোর চিঠিতে কি র**ক্তের ছোপ ছোপ দাগ ছিলো?”

“না তো!কোনো র**ক্তের দাগ ছিলো না।তবে আমার একজন কে খুব সন্দেহ হয়।”

নিধি উত্তেজিত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,’কাকে?’

‘৪-৫দিন আগে আমায় একটা ছেলে প্রপোজ করেছিলো।তার নাম রিপন।তো তার প্রপোজাল আমি এক্সেপ্ট করিনি।আর বলে দিয়েছি, আমার বি এফ আছে।কিন্তুু ছেলেটা কিছুতেই মানতে নারাজ।তারপর আমি ছেলেটা কে আমার মুখস্থ করা কয়েকটা কিউট গা**লি দেওয়ার পর, ছেলেটা আমায় হু**মকি দেয় যে সে এর প্রতিশোধ নিবে।আমার মনে হয় ঐ ছেলেটাই এটা করেছে।”

“নাদিয়ার কথা শুনে নিধির বিশ্বাস হলো।ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,’আচ্ছা এইসব বাদ দে।তোর চোখ দেখে মনে হয় সারারাত ঘুমাস নি।রাস্তায় গাড়িতে ড্রাইভার অপেক্ষা করছে।আমাদের বেশি লেট করা উচিত হবে না।ঝটপট রেডি হয়ে নে।এখন তো প্রায় দুপুর হয়ে গেছে।বাইরে গিয়ে একেবারে লাঞ্চ করবি।তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।আর বাকি ঘুম গাড়িতে বসে ঘুমাবি।”

“নাদিয়া নিধির কথা অনুযায়ী ২০মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে রেডি হলো।তারপর মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলো।”

‘”রাস্তায় খুব বেশি জ্যাম না থাকায় শাঁ শাঁ করে গাড়ি চলছে।নাদিয়া গাড়িতে ওঠার কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে গেছে।”

“নিধি হেডফোনে গান শুনছে..
‘নেশা লাগিলো রে
বাঁকা দু নয়নে নেশা লাগিলো রে..”

“এদিকে তোহার খুব বোরিং লাগছে।তোহা কিছুক্ষণ ফেইসবুক স্ক্রল করে নিধি কে বললো,’আপু নাদিয়া আপু তো ঘুমের রানী হয়ে গেছে।আসো আমরা একটু গল্প করি।”

“নিধি গান বন্ধ করে বললো,’হুম বল।”

“তোহা বললো,’আপু ধরো আজ যদি তুমি তোমার সাইকো প্রেমিক কে পেয়ে যাও,তাহলে কেমন হবে?”

“এই তোর কি এইসব ছাড়া আর কোন প্রশ্ন নেই?সারাদিন আমার অজানা সাইকো প্রেমিকের পেছনে পড়ে থাকিস কেনো হুম? আচ্ছা যেহেতু প্রশ্ন টা করেই ফেলেছিস,তাই বলছি।যদি সত্যি আমার সাইকো প্রেমিকের দেখা পাই, তাহলে আমি তার পেছনে ছেলেদের মতো ঘুরবো আর ফ্লার্ট করবো।চরকির মতো ঘুরে ঘুরে তাকে পটাবো।তারপর যদি একবার পটে যায়,তখনই মিষ্টি মিষ্টি সাহিত্যিক টাইপ কথা বলে তাকে কুপোকাত করে ফেলবো।তারপর দেখবি আমার প্রেমে গড়াগড়ি খেয়ে সে সবসময় আমার সাথে চুইংগামের মতো লেগে থাকবে।”

“কথাগুলো বলে নিধি মন খুলে একটা হাসি দিয়ে তোহাকে বললো,
‘আচ্ছা তোর মনে আছে ৭বছর আগে আমাদের বাসা থেকে প্রায় ৩মিনিট দূরত্বে একটা প্রতিবেশী থাকতো?আঙ্কেল আন্টিকে আমাদের সাথে মিশতে দিতো না।”

‘কে ওই বাদামনি আন্টি?’

‘বাদামনি আন্টি মানে?’

“আরে ওই যে যেই আন্টির বাসায় গেলেই আমাদের শুধু বাদাম খেতে দিতো।আর নিজেও সারাদিন ভাত না খেয়ে বাদাম খেতো।”(হেসে হেসে বললো তোহা।)

” আরে না,আরেক টা প্রতিবেশী।তারা ৭বছর আগেই চলে গেছে তাদের একটা ছেলে আছে।আমার থেকে মনে হয় ৩-৪বছরের বড় হবে।আরে তোরও তো চেনার কথা।ছেলেটার কি যেনো নাম টা..পেটে আসছে তো মুখে আসছে না।যাইহোক তার কথা বাদ দেই;তো ওই আঙ্কেল তার স্ত্রীর বিষয়ে খুব পজেসিভ ছিলো।কিন্তুু আঙ্কেলের আড়ালে আন্টি ঠিকই আমাদের সাথে লুকিয়ে কথা বলতো।তবে আমি ওইরকম ওভার পজেসিভ হাসবেন্ড চাই না।আমার জন্য একটু-আকটু পা**গল হলেই হবে।’তারপর মুখে আবারও মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বললো,’যাকে দেখলেই প্রেম প্রেম ফিল হবে।উফফ… ভেবেই যেনো কেমন কেমন লাগছে।”(বলেই নিধি দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো।)

“তোহা দুষ্ট হেসে বললো,’আপু তুমি দেখি হেব্বি রোমান্টিক।সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের থেকেও বেশি।”

“ইশশ কি যে বলিস!আচ্ছা শোন, আমার বিয়ের পর রোমান্টিকতায় পি এইচ ডি করে এসে তোর ক্লাস নেবো।”

“তোহা লজ্জা পেলো,’যাহ!আপু কি যে বলো না।”

“ইশশ এমন ভাব করছিস,যেনো সারাজীবন চিরকুমারী থাকবি।ঢং দেখে আর বাঁচি না।”

“এভাবে দুই বোন মিলে আরও কিছুক্ষণ মুরগির মতো ঠোকরা-ঠুকরি করতে করতে, সাড়ে ৩ঘন্টা পর সিরাজগঞ্জের চলনবিলে পৌঁছে গেলো।মাঝপথে নিধি,তোহা,নাদিয়া এবং ড্রাইভার একটা ফুড ভ্যালিতে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়েছে।”

—————-
“চলনবিলে পৌঁছাতেই নিধি,তোহা এবং নাদিয়া খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো।নিধি এবং তোহা নদীর পার দিয়ে হাঁটছে।এদিকে নাদিয়া ধীরে ধীরে হাঁটছে আর দিগন্ত কে ম্যাসেজ দিচ্ছে, ‘জান তুমি কই?আমরা এসে পড়েছি।এখন এই জায়গায় হাঁটছি।”(জায়গার নাম লিখে দিলো।)

“নির্জন এবং দিগন্ত আধাঘন্টা আগেই পৌঁছে গেছে।ওরাও ঐ দিক দিয়ে হাঁটছিলো।নাদিয়ার ম্যাসেজ টুং করে ফোনে বেজে উঠতেই,দিগন্তের মুখে প্রাণখোলা হাসি ফুটে উঠলো।দিগন্ত নির্জন কে বললো,’দোস্ত নাদিয়া এদিকেই আছে।আমি ওর সাথে দেখা করতে যাই।বুঝতেই পারছিস, চতুর্থ গার্লফ্রেন্ডের সাথে প্রথম ডে**ট বলে কথা।তুই নদীর সৌন্দর্য উপভোগ কর;আমি গেলাম।”

“নির্জন মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় জানাতেই,দিগন্ত চলে গেলো।”

“এদিকে নিধি এবং তোহা কথা বলছে আর হাঁটছে।হঠাৎ নিধির নাদিয়ার কথা মনে পড়তেই,পেছনে তাকিয়ে দেখলো নাদিয়া নেই।নিধি তো বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।হ্যান্ড ব্যাগ থেকে ফোন বের করে তড়িঘড়ি করে নাদিয়া কে ফোন করতেই,অপরপাশ থেকে কল রিসিভ করে ভীতু স্বরে নাদিয়া বললো,’হুম বল নিধি।”

“নিধি ব্যঙ্গ করে বললো,’হুম বল নিধি…মানে কি?তুই তো আমাদের পেছনে ছিলি।কোথায় তুই?”

“নাদিয়া আমতা আমতা করে বললো,’সরি দোস্ত আসলে আমি দিগন্তের সাথে ঘুরতে এসেছি।”

“হোয়াট?মানে তুই কি আমাদের কে বাদ দিয়ে তোর বি এফের সাথে ঘুরতে এসেছিস?”

“নিধির ‘হোয়াট’ শব্দটি মনে হয় নাদিয়ার কাছে অ্যাটম বো**মার বি**স্ফোরণ হওয়ার মতো মনে হলো।নাদিয়া কানের কাছ থেকে ফোন একটু সরিয়ে বললো,’দোস্ত আমি তোকে জানাই নি যে আজ দিগন্ত আসবে,তুই যদি রেগে যাস তাই।সরি দোস্ত,আসলে আমরা কখনোও একসাথে ঘুরতে বের হইনি।তাই ওকে আমাদের এখানে আসার কথা বলেছি।প্লিজ প্লিজ দোস্ত রাগ করিস না।”

“নিধি নদীর পারে দাঁড়িয়ে নাদিয়ার সাথে কথা বলছে,এদিকে তোহা নদীর পারে ঢেউ খেলানো পানিতে পা ভিজিয়ে হাঁটছে।”

“নিধি রেগে গিয়ে নাদিয়া কে আরও কিছু বলতে যাবে,ঠিক তখনই ওকে পেছন থেকে কেউ ধাক্কা দিয়ে নিধি কে নদীতে ফেলে দিলো।”

“আকস্মিক আ**ক্রমণে নিধি নদীর পানিতে পড়ে গিয়ে কোমরে ভীষণ ব্যথা পেলো।চি**ৎকার করে বললো,’ওরে মাআআ আমার কোমর ভেঙে গেলো গো…।সেই সাথে নিধির হাতে থাকা মোবাইল টাও ছিটকে গিয়ে নদীর পানিতে ডুবে গিয়ে, নদীর নিচে চকচকে বালুকণার ওপর পড়ে রইলো।’সেটা দেখে নিধি আরও জোরে চি**ৎকার দিয়ে বললো, ‘আ আ আমার মোবাইলের ১৪টা বেজে গেলো গো…”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে