হৃদয়ে রক্তক্ষরণ পর্ব-০৪

0
46

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নির্জন তৎক্ষনাৎ বাইক স্টার্ট দিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।”

“এদিকে তোহা নিধির হাঁটুতে বোতল থেকে হাতে পানি নিয়ে মাসাজ করে দিচ্ছে।আর বলছে,’আপু এখনও কি খুব কষ্ট হচ্ছে?হসপিটালে নিয়ে যাবো?”

“নিধির হাঁটুর চামড়া কিছুটা এবড়ো-থেবড়ো হয়ে গেছে।তোহা ঠান্ডা পানি ঢেলে মাসাজ করার পর কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে।নিধি কপাল কুঁচকে বললো,’নাহ!হসপিটালে যেতে হবে না। খুব বেশি সমস্যা হয় নি।আমি বাসায় যাবো।”

“নিধি চলন্ত সিড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার ফলে ওর গাউন ভেদ করে হাঁটু থেকে কিছুটা র**ক্ত বের হচ্ছিলো।তোহা দ্রুত পায়ে সিড়ি থেকে নেমে নিধি কে ধরে উত্তেজিত কন্ঠে বারবার বলছিলো,’আপু কোথায় ব্যথা পেয়েছো?খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার?’বলেই এলোমেলো দৃষ্টি দিয়ে সবাইকে বললো,’আপনাদের কারো কাছে ঠান্ডা পানি হবে?”

“তোহাকে ভীরের মধ্যে থেকে একজন ভদ্র মহিলা এসে এক বোতল পানি এগিয়ে দিয়ে বললেন,’এটা দিয়ে মাসাজ করে দিতে, তাহলে জ্বালাপোড়া কমবে।তোহাও তাই করলো।ভদ্র মহিলা খুব নিবিড় ভাবে তোহা কে পর্যবেক্ষণ করলেন।ভাবলেন,’মেয়েটার মুখস্রি কতোটা স্নিগ্ধ।বোনের জন্য কতো টান।দেখলেই মন টা ভরে যাচ্ছে।আমার বড় বোন কে ও তো আমি খুব ভালোবাসতাম,কিন্তুু ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৩বছর আগেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছে।’ভেবেই তার নেত্রকোণায় খানিকটা জল চলে এলো।”

“আশে-পাশের সবাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে করতে সেখান থেকে চলে গেলো।থেকে গেলেন শুধু বয়স্ক ভদ্র মহিলাটি।তিনি তোহার কাছে এসে বললেন,’মামনি আমাকে তোমাদের বাড়ির ঠিকানা দাও, আমি তোমাদের পৌঁছে দিয়ে আসি।আমি গাড়ি নিয়ে এসেছি।”

“ভদ্রমহিলার কথা শুনে তোহা প্রথমে একটু অবাক হয়ে,পরক্ষণেই সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বাসার ঠিকানা বললো।তারপর বললো, ‘আন্টি সমস্যা নেই আমরা উবার ডেকে চলে যাবো।’বলেই তোহা নিধির কাঁধের নিচে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে নিধিকে দাঁড়াতে সাহায্য করলো।”

“উনি আবার বললেন,’তোমাদের বাসা থেকে আমাদের বাসা ৭-৮মিনিটের দূরত্ব।কি অদ্ভুত ব্যাপার!এতোটা কাছাকাছি থেকেও আমরা একে-অপরকে চিনিনা।অবশ্য ঢাকা-শহরে কাছাকাছি ২ ইউনিটের প্রতিবেশীও একে-অপরকে চেনে না।সেখানে এটা তো অনেক দূরের বিষয়।যাইহোক, আমি এখানে একাই শপিং করতে এসেছি।তোমরা আমার সাথে গেলে আমারও খুব ভালো লাগবে।”

“নিধি মহিলাটির দিকে একবার তাকিয়ে তোহা কে বললো,’উনি যেহেতু এতো করে বলছে,তাহলে চল আমরা আন্টির সাথেই যাই।’নিধির কথা শুনে তোহা ও রাজি হয়ে গেলো।”

“যাত্রাপথে গাড়িতে বসে মহিলাটি নিধি এবং তোহার সাথে খোশমেজাজে অনেক গল্প করলেন।হাঁটুতে অতিরিক্ত ব্যথার কারণে নিধি তেমন একটা কথা বলতে পারেনি।তবে তোহার সাথে অল্প সময়ে মহিলাটির বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে।নিধিদের বাড়ির সামনে আসতেই নিধি এবং তোহা একসাথে গাড়ি থামাতে বললো।ড্রাইভার গাড়ি থামাতেই নিধি মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বললো,’থ্যাংক ইউ সো মাচ আন্টি।আপনার সাথে কথা বলে খুব ভালো লেগেছে।এটা আমাদের বাসা।আপনি আমাদের বাসায় আসলে খুব খুশি হবো।প্লিজ আসুন আন্টি।”

“অপরপাশ থেকে তোহা বললো,’আমারও আপনার সাথে কথা বলে খুব ভালো লেগেছে।আমাদের বাসায় আসুন আন্টি।”

“মহিলাটি মিষ্টি করে হাসি উপহার দিয়ে বললেন,’এখন না মামনি।তবে ওয়াদা করছি ইনশাআল্লাহ আরেকদিন অবশ্যই আসবো।তবে একটা কথা,তোমাদের বাবা বা মায়ের ফোন নাম্বার টা কি দেওয়া যাবে?”

“বাবা-মায়ের ফোন নাম্বার চাওয়াতে নিধি এবং তোহা একে-অপরের দিকে তাকালো।নিধি ভাবলো,’এই রে এই মহিলা টা কি তার ছেলের জন্য আমাকে পছন্দ করেছে নাকি?একটু আগেই তো বললো,’তার নাকি একটাই ছেলে,সে নাকি ডক্টর।’আবারও একটা বিয়ে ভাঙতে হবে?ইশশ কেনো যে তার মিষ্টি কথা শুনে গাড়িতে উঠতে গেলাম?এই প্যারাময় জীবন আর আমার ভালো লাগে না।ওগো সাইকো প্রেমিক ধরা দাও আমার কাছে।যাকে আমি এতোদিন মনে মনে খুঁজছি, তুমি যদি সেই হও,এটা আমি বুঝে গেলেই তোমার গলায় ঝুলে পড়বো।”

“মহিলাটি বললো,’কি হলো মামনি?আচ্ছা মায়ের নাম্বার দিতে হবে না।তোমার বাবার নাম্বার টা দাও।”

‘কেনো আন্টি?বাবার নাম্বার লাগবে কেনো?'(আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলো তোহা।)

“এমা এটা কোনো কথা হলো?তোমাদের বাসায় দাওয়াত দিলে,যোগাযোগ করেই তো আসবো।তাছাড়া হুট করে তো আর কারো বাসায় যাওয়া যায় না।তোমার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলেই যাবো।তোমার বাবার ফোন নাম্বার টা দাও।”

“নিধি ভাবলো,’এখন কথা প্যাঁচালে মহিলা নির্ঘাত আমাদের দু’জনকে ফ্রী তে বে**য়াদব উপাধি দিয়ে দিবে।আর কষ্টও পাবে।যেহেতু মহিলা টি আমাদের এতো বড় উপকার করেছে, তাই নাম্বার টি দেওয়াই যায়।তার ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিলে আমার বিখ্যাত সুপার-ডুপার মুখস্থ ড্রামা তো রেডি আছে।’ভেবে নিধি ওর বাবার নাম এবং নাম্বার টি বললো।ভদ্র মহিলা তার ফোনে নাম্বারটি সেভ করে নিলো।তারপর আরো কয়েক সেকেন্ড কথা বলে সেখান থেকে চলে গেলো।”

“তোহা বললো,’আপু গো এবার কি হবে?”

“ডোন্ট ওয়ারি ম্যায় হুঁ না?”

————
“কেটে গেলো ৩দিন।এই ৩দিনে নিধির হাঁটু কিছুটা ঠিক হয়েছে।অবাক করা বিষয় হলো নিধি এবং তোহা একবারও ভাবে নি যে কাজ টা কেউ ইচ্ছে করে করেছে।ওরা সেদিন নিজেদের কথার মধ্যে এতোটাই মত্ত হয়েছিলো যে এই ধরনের চিন্তা ওদের মাথায় আসেনি।নিধি এবং তোহা ভেবেছে,’ হয়তো সেদিন চলন্ত সিড়ি দিয়ে ওরা নিচে নামার সময় অন্য কেউ উঠতে গিয়ে অসাবধানতা বসত নিধির সাথে ধাক্কা লাগার কারণে নিধি পড়ে যায়।ইট ওয়াস জাস্ট আ অ্যাক্সিডেন্ট।’এইসব ভেবেই সেদিনের ঘটনা ভুলে যায় নিধি এবং তোহা।”

“এদিকে রাতে রফিক মির্জা ড্রয়িং রুমে নিধি এবং তোহা কে ডাকেন।রফিক মির্জার সাথে তাহমিনা বেগমও সোফায় বসেছিলো।যেখানে অন্যান্য মায়েরা মেয়েদের সাথে খুব ফ্রী থাকে।সেখানে তাহমিনা বেগম পুরোটাই বিপরীত। উনি নীরব দৃষ্টিতে তার স্বামী এবং মেয়েদের কাহিনী দেখতে থাকেন।তবে তিনি সবার খুব যত্ন করেন।সাংসারিক কাজ নিজে হাতে সামলান।নিধি এবং তোহা কে টুকটাক রান্না-বান্না শিখিয়েছে।”

“নিধি এবং তোহা ড্রয়িং রুমে আসতেই,রফিক মির্জা গম্ভীর কন্ঠে ওদের দু’জনকে সোফায় বসতে বললেন।ওরা সোফায় বসতেই রফিক মির্জা নিধির দিকে তাকিয়ে বললেন,’শখ করে তোমার নাম রেখেছিলাম নিরুপমা।তুমি আমাদের প্রথম সন্তান।তাই প্রথম সবকিছুর অনুভূতিই অন্যরকম থাকে।তোমার জন্মের পর আমাদের অন্যরকম এক ভালো লাগার অনুভূতি হয়েছিলো।কিন্তুু কালের পরিক্রমায় তোমার দস্যিপনা তোমাকে পরিবর্তন করে দিয়েছে।যাইহোক, আমি চাই না তোহা ও সেই পথে পা বাড়াক।তোমাকে আমি অপশন দিয়েছিলাম,তোমার কাউকে পছন্দ হলে আমাকে নির্দ্বিধায় বলতে পারো।পাত্র তোমার যোগ্যসম্পন্ন হলে আমি অবশ্যই মেনে নেবো।কিন্তুু তুমি সেটাও করলেনা।একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব গুলো মাছি তাড়ানোর মতো ভেঙে দিলে।শেষের প্রস্তাব টাও পিছিয়ে গেলো।এখন ঘরের বড় মেয়ের বিয়ের কথা চিন্তা করে তো আর আমি ছোট মেয়ের ওপর অবিচার করতে পারি না।এতোটা স্বার্থপর বাবা আমি নই।আর ঘরের বড় মেয়ে কে রেখে ছোট মেয়েকে আগে বিয়ে দেওয়ার জন্য সমাজ এবং আত্মীয়-স্বজন কি বললো না বললো তাতে আমার কিছু যায়-আসে না।আমার কথার কোনো নড়চড় হবে না।তাছাড়া তোহারও বিয়ের বয়স হয়েছে।তাই আমি তোহা কে বিয়ে দিতে চাই।ওর একটা সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে।আর যে প্রস্তাব টি দিয়েছে।তাকে তোমরা দু’জনেই চেনো।”

“নিধি এবং তোহা বিস্ময়ের দৃষ্টিতে একে-অপরের দিকে তাকালো।”

“রফিক মির্জা একগ্লাস পানি খেয়ে,গ্লাসটি টি-টেবিলে রেখে ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন,’৩দিন আগে শপিংমলে নিরুপমার অ্যাক্সিডেন্ট হওয়ার পর যে ভদ্রমহিলা তোমাদের সাহায্য করেছিলো,তিনি এই প্রস্তাব টি দিয়েছেন।তোমাদের মা ও তার সাথে কথা বলেছে।আর আমি তার স্বামীর সাথে কথা বলেছি।প্রথমে তারা তোহা আমাদের ছোট মেয়ে হিসাবে প্রস্তাব দিতে একটু ইতস্তত বোধ করছিলো। কিন্তুু আমি তাদের অভয় দিয়েছি।কারণ, আমি এক ভুল বারবার করতে চাই না।আগামী শুক্রবার তারা সপরিবারে তোহা কে দেখতে আসবে।’বলেই তোহার দিকে এগিয়ে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,’আশা করি তুমি তোমার বড় বোনের মতো আমার অবাধ্য সন্তান হবে না।তুমি আমার ভালো মেয়ে হয়ে থাকবে।আমার এই একটি অনুরোধ রেখো।আর হ্যা, বিয়ের পর তারা তোমাকে পড়াশোনাও করাবে বলেছে।দোয়া করো যেনো সম্বন্ধ টা ফাইনাল হয়।”

“তোহা ওর ভদ্র এবং গম্ভীর স্বভাবের বাবাকে খুব ভ**য় পায়,আবার খুব ভালোও বাসে।তার কথার দ্বিমত ও কিছুতেই করবে না।এমনিতেই আপুর এহেন পা**গলামি কান্ডে বাবা অনেক টা রেগে আছে।তবে এই মুহূর্তে তোহা বিয়ে করতে চায় না।কারণ ৩মাস পর ওর ফাইনাল এক্সাম।বিয়ে করলে পড়াশোনায় ফোকাস কমে যাবে।তবুও বাবার মন রাখতে তোহা ভদ্রতার সহিত ‘হ্যা’ বোধক মাথা নাড়লো।রফিক মির্জা তার ছোট মেয়ের সম্মতি পেয়ে মৃদুস্বরে হেসে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন।তাহমিনা বেগমও তার স্বামীর পেছনে চলে গেলেন।”

“রুমের মধ্যে তোহা একা একা পায়চারি করছে আর হাঁটছে। নিধি হেডফোন কানে লাগিয়ে গান শুনছে,
“পা**গল মন মন রে
মন কেনো এতো কথা বলে…”

“কিছুক্ষণ পর নিধি লক্ষ্য করলো তোহা রুমে চক্কর দিচ্ছে আর বিড়বিড় করছে।নিধি গান বন্ধ করে তোহা কে বললো,’ওই মাইয়া খরগোশের মতো মুখ নেড়ে কি বলিস?”

“তোহা চিন্তিত মুখ নিয়ে বিছানায় বসে বললো,’আপু রে সামনে আমার ফাইনাল এক্সাম।এর মধ্যে যদি বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়, তাহলে আমার পড়াশোনা সব গোল্লায় যাবে।তুমি তো জানো আমি বিভিন্ন দিকে ফোকাস করতে পারি না।”

“তাহলে তখন বাবার কথায় ঢ্যাং ঢ্যাং করে রাজি হয়ে গেলি কেনো?আমার মতো প্রতিবাদী হলেই তো পারতি?এখন বসে পান খা।এখান থেকে যাহ!”

“তোহা নিধির হাত ধরে বললো,’আপু এতোগুলো বিয়ে ভাঙার জন্য বাবা তোমার ওপর প্রচন্ড রেগে আছে,তার ওপর আমি যদি এখন রাজি না হই।তাহলে এই বাসায় বি**স্ফো**রণ ঘটবে।জানো তো বাবা যতোটা শান্ত, ততোটাই রাগী।তাই আর কি….

” ওহহ বুঝেছি এর মানে এই বিয়েটা তুই ভাঙতে চাস তাই তো?”(ডেভিল হাসি দিয়ে বললো নিধি)

“হুমম আপু বিয়েটা ভাঙতে চাই।আমার মনে হয় না পাত্র পক্ষ ৩মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।তবে ৩মাস অপেক্ষা করলে ভাঙবো না।”

“ওকে ওকে আগে তোকে দেখতে আসুক।তারপর যদি দেখি মতের অমিল হচ্ছে। তাহলে তোর এই কিউট বুদ্ধিমতী,অভিজ্ঞ বোনটি তো আছেই।তুই এখন বসে বসে মুড়ি খা।আর নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাল গুলো মুখস্থ কর।আমি এখন ঘুমাবো,আর এখানে পড়বি না।ডাইনিং রুমে গিয়ে পড় যাহ।আর হ্যা, আগামীকাল তোকে ইংরেজি নিয়ে কিছু ঝাকানাকা টিপস দিবো।”

“তোহা ভদ্র মেয়ের মতো বই-খাতা নিয়ে রুম ত্যাগ করলো।”

———
“সকালে আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে নিধি বেলকনিতে যেতেই দেখলো,’বেলকনির ফ্লোরে একটা চিরকুট পড়ে আছে।নিধি হাই তুলে একটু অবাক হয়ে ভাবলো,’এই সাত-সকালে কার আবার প্রেম জাগলো!নিশ্চয়ই এটা আমার বা তোহার জন্য প্রেমপত্র হবে।’ভেবে চিরকুট টি উঠিয়ে ভাজ খুলতেই ভ**য়ে আ**তকে উঠলো নিধি।বুকে বার কয়েক থু থু দিয়ে চিরকুট টি দেখলো।সাদা চিরকুট টির চারিদিকে র**ক্তের ছোপছোপ দাগ।কাগজের মাঝখানে লেখা ‘বি রেডি ফর মাই নেক্সট স্পেশাল পানিশমেন্ট ডার্ক কুইন।”

“এই চিঠির আগা-মাথা কিছুই বুঝলো না নিধি।শুধু ভাবলো,’নিশ্চয়ই আমার কোনো শত্রু এটা করেছে।কিন্তুু আমার জানা মতে কোনো শত্রু আমার নেই।তবে কি ওই রিজেক্ট করা পাত্রগুলোর মধ্যে কেউ?নাকি এই চিঠিটা কেউ তোহার উদ্দেশ্যে লিখেছে!বাবারে কি ভ**য়ানক চিঠি।মনে হচ্ছে তাজা র**ক্ত।’ভেবে নিধি চিঠির কাছে নাসারন্ধ্র নিতেই আরও একবার আ**তকে উঠে বললো,’সত্যি এটা র**ক্ত।’ বলেই শুকনো ঢোক গিলে চিঠিটি দুমড়ে-মুচড়ে বাইরে ফেলে দিলো।পুরোটা দিন নিধি আজগুবি টাইপের কথা ভেবে কাটালো।কিন্তুু এতো ভাবনার পরেও ফলাফল শূন্য।”

“তোহা বিষয়টি লক্ষ করে বললো,’কিরে আপু আজ এতো চুপচাপ কেনো?বেলকনিতে ও যাও নি।অন্যান্য দিন তো দোলনায় বসে গান শোনো।আজ তো একটাও পা**গলু টাইপ গান শুনলেনা।কি হয়েছে তোমার?আমাকে বলো।”

“নিধি তোহার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবলো,’আমি যদি তোহা কে সকালের ঘটনা টা বলি, তাহলে বেচারির ভ**য়ে রাতের খুব হারাম হয়ে যাবে।আরেকদিন দেখি,এমন চিঠি আরেকবার পেলে বাবা কে জানাবো।’ভেবে তোহা কে বললো,’তেমন কিছু হয় নি।মুড সুয়িং আর কি!”

“তোহা বুঝতে পেরেছে নিধির কোনো কারণে মন খারাপ। কিন্তুু ওর এই চঞ্চল বোনটির মন খারাপ ও কিছুতেই মেনে নিতে পারবে না।কি করা যায় ভাবতে থাকলো।হঠাৎ ওর মাথায় আইডিয়া এলো।দুই আঙ্গুল দিয়ে চুটকি বাজিয়ে বললো,’আপু তুমি তো বলেছিলে ৩দিন পর বাবা-মা কে বলে আমাকে চলনবিলে ঘুরতে নিয়ে যাবে।কিন্তুু সেখানে ৪দিন হয়ে গেলো।প্লিজ আপু বাবা-মা কে বলো।আমার খুব ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে।সামনে পরীক্ষা, আমি তো চাইলেই আর ঘুরতে যেতে পারবো না।”

“তোহার কথাগুলো নিধির খুব মনে ধরলো।ভাবলো,’সত্যিই তো ঘরে বসে এভাবে বোরিং না হয়ে ঘুরতে গেলে দারুণ হবে।আর মন টাও ফুরফুরে হয়ে যাবে।মন কে রিফ্রেশ রাখার জন্য ঘুরতে যাওয়ার মতো ভালো আইডিয়া আর নেই।’ভেবে বললো,’ওকে আমরা একা যাবো না।নাদিয়া কে ও সঙ্গে নিয়ে যাবো।”

“ওকে আপু নাদিয়া আপু গেলে তো আরও মজা হবে।আপু যেই মজার মজার কথা বলে।এখন শুধু বাবা-মা রাজি হলেই হলো।”

“নিধি ম্লান হেসে বললো, ‘,হুমম।”

———–
“রাতে ডিনার করার সময় নিধি গলা খাঁকারি দিয়ে রফিক মির্জা কে বললো,’বাবা তোহার এই সম্বন্ধটা যদি ফাইনাল হয়,তাহলে তোহা কে তো কয়েকদিন পর বিয়ে দিয়ে দিবে।তাই ভাবছিলাম, ওকে নিয়ে আগামীকাল সিরাজগঞ্জের চলনবিলে ঘুরতে যাবো।ওখানে আমার এক ফ্রেন্ড আছে।ওদের পরিচিত জায়গা।ও আমাদের ঘোরাবে,আমরা রাত ৯টার মধ্যে এসে পড়বো।”

“রফিক মির্জা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,’রাত-বিরেতে মেয়েদের বাড়ির বাইরে থাকা বেমানান। ভদ্র ঘরের সন্তান রা রাত-বিরেতে ঘুরতে যায় না।’রফিক মির্জার সাথে তাহমিনা বেগমও তাল মিলিয়ে বললেন,’তোর বাবা ঠিকই বলেছে,দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে রাত-বিরেতে বাইরে থাকবি এটা অনুচিত।এখন যা দিন-কাল পড়েছে,খবরের পত্রিকা খুললেই হাজারো মেয়ের সম্ভ্রমহানির ঘটনা চোখে পড়ে।আর এতো দূরে না গিয়ে, তার থেকে ভালো হয় তোরা আশে-পাশে কোথাও ঘুরে আয়।”

“নিধি তোহা কে কনুই দিয়ে গুতা দিতেই তোহা হাফ গ্লাস পানি খেয়ে বললো,’মা আমাদের বাসা থেকে চলনবিলে যেতে মাত্র কয়েক ঘন্টা লাগবে।আচ্ছা আমরা সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবো।প্লিজ মা না করো না।আমার এই আবদার টা রাখো।”

“রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগম দু’জনে চোখাচোখি করলেন।হয়তো দু’জন দু’জনের চোখের ভাষা পড়তে চাইছে।নীরবতা ভেঙে রফিক মির্জা বললেন,’ঠিকাছে যাবে।কিন্তুু সন্ধ্যার আগে নয় বিকালের মধ্যে চলে আসবে।শুনেছি চলনবিলে সন্ধ্যার পর বখাটেদের উৎপাত বেড়ে যায়।কখন কি অঘটন ঘটে যায় বলা তো যায় না।”

“নিধি এবং তোহা খুশি তে টইটম্বুর হয়ে খাওয়াদাওয়া করে চলে গেলো।”

” রুমে গিয়ে দু’জনেই ২টা করে ড্রেস নিয়ে নিলো।কারণ ওরা চলনবিলে ডুব সাঁতারের প্ল্যান করেছে।তাই এক্সট্রা ড্রেস লাগবে।নিধি ব্যাগে ২টা ফল কাটার ধারালো ছু**রি নিয়েছে।ওরা সেখানে গিয়ে পিকনিক করবে।তাছাড়া বিপদ-আপদেও লাগতে পারে।নিধি নাদিয়া কে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে আগামীকাল সকালে যেনো রেডি থাকে।
রাতে দুই বোন সেখানে গিয়ে কি কি করবে সেগুলো নিয়ে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো।রাত টা যেনো ওদের কাটছেই না।এদিকে ওদের জন্য যে সেখানে কি সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে সেটা ওদের কল্পনারও বাইরে।”

“এদিকে বেলকনি থেকে ভেসে আসা দখিনা বতাস গায়ে মেখে দিগন্তের সাথে দুষ্টু-মিষ্টি প্রেমের গল্প করছে নাদিয়া। ঠিক তখনি ওর পায়ের ওপর শীতল কিছু অনুভব করতেই,আধো-আলো ছায়াতে নিচে তাকাতেই ফোন নিচে ফেলে দিয়ে আর্তচি*ৎ**কার দিয়ে বললো,’ওমা গো ও বাবা গো সাপ সাপ সাপ….”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে